#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৩
কে*টে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা দিন। দিনটা শুক্রবার বিধায় মুহিব ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়েছে। সকাল নয়টা বাজে তখন, আব্দুর রহমান সাহেব এক কাপ চা চাওয়ায় অনামিকা শ্বশুরকে চা বানিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় মেরিনা বেগম সেদিকেই আসছেন দেখে ফোনের রেকর্ডার অন করে ফোন উল্টো করে তাক এর ওপর রাখে কারণ সে জানে প্রতিবারের মতোই উনি এসে কথা শোনাবেন। এই কয়েকদিনে কয়েকটা রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছে সে।
মেরিনা বেগম রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়।
” এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা না বানিয়ে এ বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।”
” আমি চলে যাওয়ার পর কি করবেন?”
” সেটা তোমার ভাবতে হবে না। তুমি শুধু বেরিয়ে যাও। পাঁচদিন বেশি সময় নিয়েছো অসুস্থ বলে। এখন তো দিব্যি সুস্থ আছো। আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না তোমাকে এই বাড়িতে জাস্ট আর সহ্য হচ্ছে না আমার। আমার চোখের সামনে তোমাকে দেখলেই গা জ্ব*লে যাচ্ছে আমার। তুমি কি বিশ্বাস করছো না যে তুমি এখান থেকে না গেলে আর বেশি পন্ডিতি দেখালে আমি মুহিবের ক্ষ*তি করে দেব?”
অনামিকা হঠাৎ খেয়াল করে মেরিনা বেগমের পিছনে মুহিব দাঁড়িয়ে আছে। অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন এলো সে! ভেতরের দিকে থাকায় মুহিবকে দেখতে পায় নি সে। দরজার দিকে সরে আসায় মুহিবকে দেখে সে। মুহিব এখনও তার মায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। অনামিকা মুহিবের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মেরিনা বেগমের দিকে তাকায়।
” মা আমি আপনার ছেলেকে কখনো ছাড়ব না আর আপনি ওর কিছু করতেও পারবেন না। ওর ওপর আপনার কালোজা*দুর যেটুকু প্রভাব ছিল তা কে*টে গিয়েছে। আমার ওপরের প্রভাব ও প্রায় শেষ। আপনার ইচ্ছে পূরণ হলো না মা।”
” কালোজা*দু!”
মুহিবের মুখ থেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথাটি বেরিয়ে আসে। পিছনেই মুহিবের গলা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যায় মেরিনা বেগম।
” ম ম মুহিব তুই এখানে!”
মেরিনা বেগমের মুখে ভয়ের আভা স্পষ্ট। এই মেয়েটা ইচ্ছে করে তাকে ফাঁসিয়ে দিল! কি বলে পরিস্থিতি সামলে নিবে সে!
” তুমি কালোজা*দু করেছো আমাদের আলাদা করতে এটা কি সত্য মা?
” কি বলছিস বাবা! আমি এক সময় চাইতাম তোদের আলাদা করতে কিন্তু এখন তো চাই না। আমি চাই তোরা একসাথে থাক বাবা।”
” আমি সব শুনেছি মা, আর মিথ্যা বলতে হবে না। কি দোষ করেছে অনু তোমার কাছে বলো তো?”
মেরিনা বেগম রাগে ফুসছেন। এই মেয়ে কি তবে তাকে ভয় পায় নি! মুহিবকে সব বলে দিয়েছে? খুব সাহস দেখিয়ে ফেলেছে সে।
মাকে চুপ থাকতে দেখে মুহিব আবার প্রশ্ন করে,
” তুমি অনুর সাথে থাকতে চাও না তাই না? কারণগুলো যেন কি কি? অনুর বাবা-মা নেই, ওর বাড়ি থেকে কিছু আসে না এবাড়িতে, অনু মা হতে পারবে না, ওর গায়ের রঙ শ্যামলা এগুলো কারণ? তবে শুনে রাখো মা আমি এসব জেনেও অনুকে ভালোবাসি, প্রচন্ড ভালোবাসি।!”
অনামিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে মুহিবের কথা শুনছে। চোখ তার টলমল করছে। একটা পুরুষ কোন নারীকে এভাবেও ভালোবাসতে পারে!
” জেনেই যেহেতু গিয়েছিস তাহলে আমার কথাও শুনে রাখ তোকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে। তোর জীবনে হয় আমি থাকব নয়তো তোর বউ থাকবে।”
” এটাই তোমার শেষ কথা?”
” হ্যাঁ এটাই আমার শেষ কথা।”
” তুমি যেহেতু আমার বউকে সহ্যই করতে পারো না, চোখের সামনে এলে খারাপ লাগে তাহলে তো বলতে হয় আমার বউ এখানে থাকবে না।”
মুহিবের কথা শুনে অনামিকা চমকে যায়। মুহিব শেষে এটা কি বলল! অনামিকা এক পলকে মুহিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেরিনা বেগমের মুখ আনন্দে চিকচিক করতে থাকে। অবশেষে তার ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে!
অনামিকা আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
” আ আমি এখানে থাকতে পারব না মানে? কি বলছ তুমি মুহিব?”
” আমি ঠিকই বলছি অনু, তুমি এখানে থাকবে না। ”
” কিন্তু আমি তো কিছুই করি নি। তুমি জানো মা কি করেছে?”
অনামিকাকে আর কথা বলতে না দিয়ে মেরিনা বেগম মুহিবের দিকে এগিয়ে এসে মুহিবের হাত ধরে বলে,
” তোর বউ আমার সংসারের জন্য অলক্ষী, তুই ওকে বের করে দে মুহিব।”
মুহিব আস্তে করে হাত ছাড়িয়ে নেয়। মুচকি হেসে অনামিকাকে বলে,
” অনু তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে তুলে রাখো। আজকেই বের হতে হবে। আমার মা যেহেতু চায় না তাহলে তুমি এ বাড়িতে থাকবে না।”
” তুমি তো আমাকে ভালোবাসো!”
” হ্যাঁ ভালোবাসি বলেই তোমাকে হারাতে পারব না তাই তো বলছি আজ থেকে আমরা আলাদা থাকব।”
অনামিকা এবার দ্বিতীয়বারের মতো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” আমরা!”
” হ্যাঁ আমরা, তুমি কি ভেবেছো তোমাকে একা ছাড়ব আমি?”
” না মানে….”
” আর একটাও কথা নয় তুমি এখন বাবাকে চা দিয়ে রুমে যাও। গিয়ে খুব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ব্যাগে গুছিয়ে নাও। খাবারের চিন্তা করতে হবে না আপাতত বাহিরেই খেয়ে নেব। আগামীকাল এসে রুমের জিনিসগুলো নিয়ে যাব। বাসারও চিন্তা করতে হবে না। আমার কলিগ যে বাসায় থাকে ওখানে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হবে ওখানেই চলে যাব। আমি এখনই যোগাযোগ করে নিচ্ছি। তুমি যাও তাড়াতাড়ি যাও।”
মেরিনা বেগম এবার ক্ষেপে যান। শেষমেশ কি না ছেলেও তার হাতের বাহিরে চলে গেল! মুহিবের নিজের মায়ের সব গহনা নেওয়ার পর মুহিবের নামে থাকা সব সম্পত্তি নিতে তিনি এতদিন মুহিবের সাথে নিজের ছেলের মত আচরণ করেছেন। মুহিব যেহেতু কালো*জাদু করে বশ করে রাখার বিষয়টা বুঝেই গিয়েছে তাই আর আটকে রেখে লাভ ও নেই।
” আজ যদি তুই ও তোর বউয়ের সাথে বেরিয়ে যাস তাহলে মনে রাখিস আর কোনদিন ও এ বাড়িতে আর ফিরে আসতে পারবি না। আজ যদি বেরিয়ে যাস তাহলে চিরকালের মতো এ বাড়ির দরজা তোর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।”
” বাড়ি যদিও আপনার না তবুও আপনার কথা মাথায় রাখব। এই তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যেতে বলেছি না আমি?”
অনামিকাকে কথাটা বলতেই অনামিকা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে ওঠে,
” তুমি প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো। ”
মেরিনা বেগম আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যান। মুহিব অনামিকার দিকে তাকাতেই সেও চায়ের কাপ নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মুহিব ও অনামিকার পিছু পিছু বাবার কাছে যায়। অনামিকা আব্দুর রহমানকে চা দিয়ে রুমে চলে যায়। মুহিব গিয়ে বাবার পাশে বসে।
” বাবা…..”
মুহিবের কথা শেষ না করতে দিয়েই বলে ওঠে, ” আমি সব শুনেছি মুহিব।”
” এখন বলো তো বাবা এভাবে কি থাকা যায়? বাবা জানো অনামিকাকে তাড়ানোর জন্য কুফরি করতে পিছপা হয় নি। বিয়ে ভাঙার জন্য কি কি না করেছে! অনামিকার বউ ওরনাতে পুতুলে কি অবস্থা করা এটা অনামিকা দেখেই নি। আমি সেদিন ওর বান্ধববীর আর ওর মেসেজ দেখে অনেক কিছু জেনে যাই কিন্তু অনামিকাকে বুঝতে দেই নি৷ ওরনা আমি খুঁজে পাই ছাদে বড় গাছের টবের নিচে। ওটা আমি পুড়িয়ে দিয়েছি।”
” আমি চাই তোরা দুজন ভালো থাক, সেটা যেখানেই থাকিস না কেন!”
” আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি বাবা, এখানে আর থাকব না। এখানে থাকলে মা আরও কোন ক্ষতি করে দেবে। মা এতকিছু করল একদম বোকার মতো। ছোট কিছু কারণে এতকিছু করা মানায় না।”
” তোরা দূরেই থাক বাবা, তবুও ভালো থাক।”
” বাবা আমি আগামীকাল এসে তোমাকে নিয়ে যাব। তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।”
” আমাকে মাঝেমাঝে নিয়ে যাস বাবা তোদের সাথে কিছু সময় কাটাবো। তোরা দুজন নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নে। তোর মা একদিন ঠিক বুঝবে সে কত বড় ভুল করল! অনু মায়ের পাশে এখন যেমন আছিস বাবা, এরকম সবসময় থাকিস। ওর তো নিজের বলতে আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে তুই ছাড়া।”
” দোয়া কোরো বাবা আমাদের জন্য।”
” সবসময় আমার দোয়া তোদের জন্য থাকবে।”
অনামিকা আর মুহিব বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। হয়তো কালো ছায়া থেকে এবার দুজনে একটু ভালো থাকতে পারবে যেখানে শুধু তারা আর তাদের ভালোবাসা থাকবে। দুজনের বেরিয়ে যায় শুরু করে জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
চলবে…..