প্রিয়তমা প্রজাপতি পর্ব-০৩

0
245

#প্রিয়তমা_প্রজাপতি🩷 [পর্ব-০৩]
~আফিয়া আফরিন

অনিন্দিতা ক্লাস বাদ দিয়ে সোজা মিফানদের বাড়ি এসে হাজির হলো। মিফানের বাড়াবাড়ি আর মোটেও সহ্য করা যাচ্ছে না। একের পর এক মেসেজ দিয়েই চলছে, বারবার তার এক কথা; আমি তোমাকে ভালোবাসি!
অনিন্দিতা মিফানের কাণ্ডকারখানায় আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে। একে তো বয়সে সে মিফানের থেকে বয়সে বড় তার ওপর আবার নিজের চাচাতো বোন; এসবে আবার কখনো সম্পর্ক হয় নাকি? ফ্যামিলির সবাই শুনলে কি মনে করবে? ছোট বড়, কাজিনদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা এগুলো বাস্তবে মেনে নেবে কেউ? তাই মিফান অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার আগেই, তাকে হাল ধরে সব সামলাতে হবে‌। নিজেদের ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিতে চেয়েছিল অনিন্দিতা। কিন্তু, মিফান দের বাড়ি এসেছে ওকে একটু ভয় দেখাতে। আজকে যদি অনিন্দিতার কথা মিফান না বুঝে, তাহলে ওকে বললে; তোর বাড়িতে সবাইকে কিন্তু সবকিছু জানিয়ে দিবো।
অনিন্দিতা বাড়ি এসে মিফানকে পেল না। ছোট কাকি মাকে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন, ‘ছেলে বড় হয়েছে এখন কোথায় যায় বা না যায় তার খোঁজখবর কি আমাদের দিয়ে যায় বল? সারাদিন সাইকেল একটা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি বড় চিন্তায় আছি। কি হবে, কি করবে, আল্লাহ ভালো জানে!’

অনিন্দিতা মনে মনে বিড়বিড় করল, ‘তোমার ছেলের ভবিষ্যৎ বর্তমান দুটোই গোল্লায় গেছে।’
কিন্তু মুখে বলল, ‘এখনো বাচ্চা মানুষ তো, দেখো আরেকটু বড় হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ঠিক হলেই তো শান্তি। তা তোর কি খবর রে অনু? এদিকে বোধ হয় একদম আসিস না? কতদিন দেখিনা তোকে! আজ হঠাৎ কি মনে করে ছোট কাকিমাকে মনে পড়লো? অবনী টা বাড়িতেই আছে, তবুও এই মুখো হয় না ভুল করেও। মিফান সেই দিন আনিসা আর আনিকাকে নিয়ে এলো, পাঁচ মিনিট বসতে না বসতেই আবার নিয়ে চলে গেল।’

‘আপুর বাচ্চা দুটো খুব যন্ত্রণা করে, ওদের নিয়ে সহজে কোথাও বের হতে চায় না। আর আমার পড়াশোনার এত চাপ, আমি দু’দণ্ড বিশ্রাম নেওয়ার সময় পর্যন্ত পাইনা! আর এখানে কি আসবো বলো? আজকে এলাম, সময় করে। অনেকদিন দেখা হয় না তো তোমাদের সাথে। আর তুমি ও তো যাও না।’

‘আমার ও সময় হয় না রে মা।’

‘আচ্ছা ছোট কাকিমা থাকো, আজকে উঠি আমি। আর শোনো, মিফান বাড়ি ফিরলে বলে দিও তো ওর সাথে আমি দেখা করতে চাইছি।’

‘কোথায় যাচ্ছিস তুই এখন?’ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে শুধালেন ছোটোকাকিমা।

বেলুনের মতো চুপসে যাওয়া কন্ঠে অনিন্দিতা জবাব দিল, ‘বাড়ি ফিরে যাচ্ছি তো।’

‘আমার বাড়িতে এসেছিস নিজের মর্জিতে, আর ফিরে যাবি আমার মর্জিতে। সেই কতদিন পর এসে মেয়ে চাই যাই যাই করছে। দুপুরে না খেয়ে চলে যাবি?’

‘অনেকদিন আসবো গো! আজ উঠি?’

‘কোন ওঠা উঠি নাই। চুপচাপ বসে থাক। কি খাবি বলতো? তোর জন্য বিশেষ কি রান্না করা যায়? ও তোর তো চিংড়ি মাছের মালাইকারি পছন্দের, আমি রান্না করছি তুই কিছুক্ষণ বস।’
অনিন্দিতা আর বাঁধা দিয়েও পারল না। এসেছিল মিফানকে শাসাতে, তা তো হলোই না উল্টো তাকে বউ আদর করা হচ্ছে!

আধা ঘন্টার মাথায় মিফান বাড়ি ফিরে এলো। অনিন্দিতা কে দেখে বিন্দু পরিমান অবাকও হলো না। যেন, আজ ওর এই বাড়িতে আসার কথা ছিল। জগ থেকে ক্লাসে পানি ঢেলে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে অনিন্দিতাকে বলল, ‘বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়িতে চলে এসেছো? লোকে জানলে কি বলবে? বলবে, নির্লজ্জ বউ! তোমাকে কেউ এসব বললে আমার কষ্ট হবে না?’

‘মিফান, তুই ভুলে যাস না আমি এই মুহূর্তে তোর বাড়িতেই বসে আছি।’

‘না আমি ভুলে যাইনি, তুমি এই মুহূর্তে তোমার শ্বশুর বাড়িতে বসে আছো।’

‘বাড়াবাড়ি করতে মানা করেছি তোকে। ছোট কাকিমাকে বলে দেবো সব?’

‘তোমার যা ইচ্ছে হয় করতে পারো। তোমার যদি মনে হয়, এসব করে তুমি তোমার ভালোবাসা থেকে আমায় দমাতে পারবে; তাহলে আগেই আমি বলে দেই সেটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল মানে ভুল, একেবারেই ভুল। বললাম না তখন, তোমার প্রতি ভালোবাসাটা কিন্তু আজকালকার নয় যে মুহূর্তেই সেটা নিঃশ্বেস হয়ে যাবে। আমি তোমাকে অনেক দিন আগে থেকে ভালবাসি, ভালোবাসি বুঝতে না শেখার আগে থেকে তোমায় ভালবাসি প্রজাপতি!’

অনিন্দিতা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘উফফফ, তুই জানিস এসবের জন্য আমাদের ফ্যামিলি ভুগবে। এসব কারণে আমি তোর কথাটা কাউকে বলতেও পারছি না। এসব শুনে যদি দুই ফ্যামিলির মধ্যে কোন বিবাদ সৃষ্টি হয়, যদি সম্পর্ক নষ্ট হয়? আমি এটা কখনোই চাইনা মিফান। একটা পরিবার, পরিবারের মানুষজন সব একসাথে থাকুক, মিলেমিশে থাকুক, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকুক এটাই আমি চাই।’

‘তোমার চাওয়ার গুরুত্ব আছে আর আমার চাওয়ার কোন গুরুত্ব নেই? তুমি এত কিছু একসাথে চাইছো, আর আমি যে শুধুমাত্র তোমাকে চাইছি সেটা বুঝতে পারছো না তুমি? তোমার সব চাওয়া পূরণ হবে, আর আমার চাওয়া কি বানের জলে ভাসতে ভাসতে এসেছে?’

অনিন্দিতা বুঝলো এই মুহূর্তে মিফানকে কিছু বলে লাভ নেই। মাথায় লাভ লাভ লাভেরিয়ার ভূত চেপেছে। থাক, অনিন্দিতাই না হয় পাত্তা দিবে না। একতরফা তো আর ভালোবাসা টিকে না। সে ভালো না বাসলে, মিফান আর কতোকাল একলা ভালোবাসবে?
অনিন্দিতা ওষ্ঠ্যদ্বয়ে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘তোকে আমি পিচ্চি বাচ্চা বলে ডাকি কি জন্য জানিস মিফান? তুই শুধু বাইরের দিকটাই বুঝিস বা দেখিস, ভিতরের দিকটা কিন্তু কখনো দেখিস নাই। যদি একটু ভালো করে খতিয়ে দেখতিস, তাহলে কিন্তু বুঝতিস যে একজনের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে। তাও, দীর্ঘদিনের; এই ধর চার বছরের বেশি। তোর কি মনে, আমার সেই চার বছরের ভালোবাসা বাদ দিয়ে আমি তোকে ভালোবাসবো?’

মিফান একই সুর কন্ঠে রেখে বলল, ‘তোমার সম্পর্কে সকল খোঁজখবর আমি। তুমি কি কর, ইভেন তুমি কয়টার সময় খাও, কয়টায় গোসলে যাও, কখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে গান গাও, সেটাও আমি আমার নজরে রাখি। তাই আমার সাথে এসব চাপাবাজি করে লাভ হবে না। মিফান তার দায়িত্ববোধে সব সময় সদা জাগ্রত, সে জানে তার প্রজাপতিকে কিভাবে আগলে রাখতে হয়!’

বিরক্তিতে আপনা আপনি ভুল জোড়া কিঞ্চিত কুঁচকে এলো অনিন্দিতার। বাকি সময়টুকু সে আর কোন কথাই বলল না। শুধু মনে মনে মিফানকে একশো রকমের গালিগালাজ করলো।
‘খবিশ, খাটাস, বদমাইশ, অভদ্র, অসভ্য, টিকটিকি, তেলাপোকা, হাঁটুর বয়সী একটা ছেলের দেমাগ কতো!’ প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে বলল অনিন্দিতা।
.
.
মিফানের কথা শুনে এক আকাশ পরিমাণ বিরক্তি এসে ভর করেছে, অনিন্দিতার উপর। এরমধ্যে ছোট কাকিমা খেতে ডাকল‌। অনিন্দিতার খাওয়ার ইচ্ছে মরে গিয়েছিল কিন্তু কাকিমা যেহেতু কষ্ট করে রান্না করেছে, তার সেই কষ্ট তার আকাইম্মা এর ছেলের জন্য জলে ভেসে যেতে দেওয়া যাবে না।
অগত্যা অনিন্দিতাকে উঠতে হলো। খেতে বসতেই মিফান এলো হাত কচলাতে কচলাতে।
মিফান মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘মা এটা কিন্তু আমার বউ, আই মিন ছোট্ট বেলার বউ‌। ভালো করে আমার ছোট্টবেলার বউকে আদর যত্ন কর কেমন!’

ছোটোকাকিমা হাসলেন। মিফানের কথা শুনে আকস্মিক ভাবে কাঁশতে লাগল অনিন্দিতা। ছোটোকাকিমা উঠে পানি দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন, ‘ইশ, কেউ হয়তো নাম নিয়েছে মেয়েটার।’

মিফান কপাল চাপড়ে মনে মনে বলল, ‘আমার প্রজাপতির নাম অসময় কে নেয় রে? তার সাহস দেখে আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমার অনুমতি ছাড়া আমার প্রজাপতির নাম মুখে এনে, তার কাঁশ বাঁধিয়ে দিয়ে চোখ মুখ লাল করা হচ্ছে?’
পরক্ষণেই মনে হলো, সে নিজেই তো অনিন্দিতার নাম বারবার মনে করছে। তাহলে নিজেকেই গালি দিলো? আশ্চর্য!

মিফান মাকে বলল, ‘মা ওকে ছেড়ে দাও। ওর কাছাকাছি কেউ একজন ওর নামটা নিজের হৃদয়ের সাথে লেপ্টে রেখেছে। সর্বক্ষণ তার মনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে তো, তাই এত ঘুরতে ঘুরতে আর কি….!’
অনিন্দিতা আগুন চোখে তাকাতেই মিফান থেমে গেল। ছোট কাকিমা মিফানের কথার তেমন কোন গুরুত্ব দিলেন না।
উল্টো মিফান কে বললেন, ‘তুই খেতে বসছিস না যে?’

‘আমার খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে মা। একটা ডায়নী, ছলনাময়ী নারী তোমার ছেলেকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’

তিনি রেগে বললেন, ‘ধুর যত বাজে কথা।’

অনিন্দিতা খাওয়া শেষ করে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না। ছোট কাকিমা অনেকবার করে আজকের দিনটা খেতে যেতে বলেছিল, কিন্তু সে নারাজ! আগের সময় হলে থাকা যেত, কিন্তু আজকাল মিফানের যন্ত্রণায় টেকা দায়। কথা নেই বার্তা নাই হুট করে চোখের সামনে উদয় হয়ে, শুধু ভালোবাসা আর বিয়ের কথা বলতে থাকে।
ছোট কাকিমা অনিন্দিতাকে বললেন, ‘দাঁড়া একা একা যাবি না এই ভর দুপুরে। মিফানকে বলছি, ও তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।’

‘লাগবে না ছোট কাকিমা। এখন আর ওকে বিরক্ত না করি, আমি একাই চলে যেতে পারবো। এখান থেকে এখানে!’

‘আমার কথার উপর কথা বলবি না অনু।’
অনিন্দিতা থম মেরে গেল। এখন আবার মিফান আসবে তার পিছু পিছু। উফফফ, যেই যন্ত্রণা কাটাতে চায় সেই যন্ত্রণা উল্টো কোলের মধ্যে এসে বসে থাকে।

এর সাথে হেঁটে হেঁটেই বাড়ির পর্যন্ত এলো অনিন্দিতা। অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করল, রাস্তায় মিফান একটা কথাও বলে নাই। অনিন্দিতা একটু ভয়ে ভয়ে ছিল এই ব্যাপারটা নিয়ে, কিন্তু মিফান এর চুপচাপ থাকার দিকটা তাকে ভাবাচ্ছিল। অনিন্দিতা নিজে থেকেও কোন কথা বলে নাই। কি লাভ কথা বলে? অযথা কথার পিঠে কথা বাড়বে। আর এই কথার মাধ্যমে মায়া মমতা তৈরি হয়। আর অনিন্দিতার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এখন, মিফান নামক এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া!
বাড়ির গেটে এসেও অনিন্দিতা মিফানকে ভালো-মন্দ কিছু বলল না। মুল গেট পেরিয়ে যেই ভিতরে যাবে তখন মিফান পিছু ডাকলো। অনিন্দিতা ওর দিকে তাকাতেই মিফান বলল, ‘আমি মজনুর মত উম্মাদ প্রেমিক হবো! আমি তোমায় ভালবাসে নিজের অস্তিত্ব হারাবো! আমি তোমায় ভালোবেসে যুদ্ধে জয়ী হব! তুমি শুধু কথাগুলো পরপর মিলিয়ে নিও।’

সেই দিন এটাই ছিল মিফানের শেষ কথা। এরপর টানা দুটো দিন কেটে গেল। কিন্তু মিফানের সাথে ভুল করে হলেও অনিন্দিতার একবারের জন্য ও দেখা হলো না। অনিন্দিতা আরেক দফা অবাক হলো, কিন্তু নিজে থেকে কোন খোঁজ খবর নিল না। খোঁজ হয়তো ছেলে ঘাড়ে চড়ে বসবে। তারচেয়ে থাক, সে নিজের মতো ভালো থাক।
অনিন্দিতা এসব বলে নিজেকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এই চেষ্টায় সে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। মনের মধ্যে একটা খুঁতখুঁতে চিন্তা ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে, মিফানের একটা খোঁজ নেওয়া উচিত তার। আর কিছু না হোক, ছোটো ভাই তো। বড়ো বোন হিসেবে ভাইয়ের একটা খোঁজ তো নেওয়া যেতেই পারে! কিন্তু এখানেও সমস্যা ছিল, অনিন্দিতা কিছুতেই নিজেকে মিফানের বড় বোন হিসেবে দাবি করতে পারছি না।
মাথার মধ্যে অদৃশ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। নিজের মনে বিড়বিড় করল কিছুক্ষণ।
‘আল্লাহ! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? এ কোন দোটানায় ফেললে তুমি আমায়? মিফান….. মিফানটা আমায় পাগল করেই ছাড়বে। অসভ্য ছেলে একটা! এতদিন তো খুব পিছে পিছে ঘুরতো, আর এখন কোন পাত্তা নেই? অন্তত একটাবার দেখা করে যাবে তো!’

বিক্ষিপ্ত মন মেজাজ নিয়েই পরদিন ক্লাসে গেল অনিন্দিতা। ক্লাসেও মন ছিল না, প্রতিটা ক্লাসে লেকচারারের ধমক খেয়ে গেছে ক্রমাগত। শেষের ক্লাসটা স্কিপ করে গেল, ভাবলো একবার মিফানদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে।
ক্যাম্পাস গেটেই তার বিক্ষিপ্ত মন মেজাজ এর অবসান ঘটলো। মিফান দাঁড়িয়ে আছে। এখন কি মিফান কে দেখে তার এড়িয়ে যাওয়া উচিত?

মিফানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে দিলেই মিফান অনিন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাঁটুতে হাত রেখে নিচু হয়ে বলে, ‘প্রজাপতি শোনো….!’

‘এরকম হাঁপাচ্ছিস কি জন্য?’

‘দৌঁড়ে এসেছি তো এই জন্য। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবে আমাকে?’

‘কি?’

‘গত দুইদিন যে তোমায় একটুও বিরক্ত করি নাই, তাতে কি তোমার আমার কথা মনে পড়েছে? একটু অন্য রকম ভাবে।’

‘মানে কি বোঝাতে চাইছিস? তোর সাথে আমার এরপর মাস দেখা হয় নাই এমনও অনেক দিন চলে গেছে মিফান। মাঝখানে দুইদিন দেখা না হওয়াতে আমার তোর কথা অন্যরকম ভাবে মনে করার কি আছে?’

‘এখনকার ব্যাপার আর আগেরকার ব্যাপার তো আলাদা তাই না?’

‘আলাদা কেন হবে? এখন কি তোর সাথে আমার সম্পর্ক বদলে গেছে? তুই আগেও যেমন আমার চাচাতো ভাই ছিলি, ভবিষ্যতেও থাকবি। ভালোবাসা-বাসির সম্পর্ক কখনো সম্ভব না! কেন ভালোবাসিস তুই?’

‘তুমি উপযুক্ত দুইটা কারণ দেখাও আমাকে ভালো না বাসার, আমি তোমাকে দশটা কারণ দেখাতে পারবো ভালোবাসার!’

‘প্রথমত তুই আমার ছোটো, দ্বিতীয়ত তুই আমার চাচাতো ভাই। তোর আর আমার মধ্যে ভালোবাসার কোন সম্পর্ক স্থাপন হলে, দুই ফ্যামিলিতে অনেক ক্রাইসিস হবে।’

‘ব্যাস এইটুকু? এখন আমি তোমাকে ভালোবাসার দশটা কারণ দেখাই?
প্রথমত আমি তোমাকে ভালোবাসি।
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে ভালবাসি।
তৃতীয়তঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
চতুর্থতেও আমি তোমাকে ভালবাসি।
পঞ্চমে তুমি আমার প্রজাপতি, তোমার অদৃশ্য দুটি পাখনা মেলে ডানা ঝাপটানির মুহূর্তটা আমাকে মুগ্ধ করে।
ষষ্ঠতে তোমায় না দেখলে আমার সেই দিনটা শূন্যতায়, অন্ধকারে কেটে যায়। তাই তোমাকে ভালোবাসি।
সপ্তমে, তোমাকে ভালোবেসে থাকতে পারিনা বলে তোমাকে ভালোবাসি।
অষ্টমে, তোমাকে খুব যত্ন করে আগলে রাখবো বলে ভালোবাসি।
নবমে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
দশমে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
একটানা এতগুলো কথা বলে থামল মিফান। অনিন্দিতা এখানে বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পেল না।
অনিন্দিতা বলল, ‘কিন্তু তোকে আমি ভালোবাসি না মিফান। আই হেইট ইউ! আর আমার ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেল।’

‘এতগুলো কারণ দেখানোর পরও তুমি আমাকে ভালোবাসবে না?’

‘না। তোকে ভালো না বাসার আরেকটা কারণ কি জানিস?’

‘কি?’

‘ধর আমাদের বিয়ে-শাদি হলো…!’

‘আচ্ছা, ধরলাম এই ব্যাপারটা। আর ছাড়ব না কিন্তু। তুমি নিজের মুখেই স্বীকার করেছ।’

অনিন্দিতার তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো, ‘আগে আমার পুরো কথা শোন।’

‘আচ্ছা বলো।’

‘তুই আমি দুজনেই ফর্সা। ধর বিয়ের পর আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হলো, তারাও হবে ইংরেজ ব্রিটিশদের মতো ফর্সা। একদম সাদা ধবধবে। ইংরেজরা যেরকম বাঙালিদের ওপর শাসন করেছে, তারাও যদি স্বৈরাচারী হয়ে মা-বাবার উপর ইংরেজদের মতো শাসন চালায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে না?’

মিফান অনিন্দিতার কথা শুনে বিষ্মিত হলো, অবাক হলো। অবাক কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এতদূর এগিয়ে গেছো? একেবারে বাচ্চাকাচ্চার কথা পর্যন্ত ভেবে ফেলেছ? ও মাই গড! আমি এখনো ব্যাকডেটেড রয়ে গেলাম। তারমানে, ইনডাইরেক্টলি তুমি রাজি তাই না!’
অনিন্দিতা বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল মিফানের দিকে। এই ছেলেকে কি বোঝাতে গেল, আর এই ছেলে কি বুঝে নিলো?
মিফান নিজের বুকেই থাবা মেরে বলল, ‘উফফফ মাম্মা, তুমি জিইত্যা গেছোও!’
.
.
.
চলবে…..!
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]