#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৪
২৬.
“যে নেই তার উপর অভিমান করা অর্থহীন।” নিজের মনকে এমন বুঝ দিয়েই তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লাম। রাহিয়ান ভাইয়া আঁড়চোখে তাকালেন। হয়তো মনের আবেগে বলে ফেলা কথা গুলোতে আমার মনের ক্ষ/ত স্থান গুলো পূনরায় ক্ষ/ত-বি/ক্ষ/ত হওয়ার আগাম বার্তা পেয়েছেন। তাই নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করে তুলতেই আমাকে কিছু বলতে চান তিনি। কিছু বোঝাতে চান যাতে আমার ক্ষ/ত স্থানের ঘা শুঁকিয়ে যেতে পারে। তবে, সেই সুযোগ আমি তাকে দিলাম না। মা-কে নিয়ে ভাবা আমার অভ্যাস। আর মায়ের স্মৃতি গুলোকে ভেবে ক/ষ্ট পেয়ে কাঁদার পেছনে বাবাকে নিজের মতো আগলে রাখা আমার দায়িত্ব।
মা নেই বলে নিধি হারিয়ে যায়নি। নিজেকে হারাতেও দেয়নি। বরং আরও শক্ত হয়ে বাঁচতে শিখেছে। কেবল হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া নিধির অভ্যাস হয়নি সেই হোঁচটের আ/ঘা/ত নিয়ে আবারও উঠে দাঁড়াতে শিখেছে। তাই এই মুহুর্তে রাহিয়ান ভাইয়া মায়ের ব্যাপারে আমাকে আলাদা করে “ক/ষ্ট পেও না,সবাইকেই তো একদিন ওপারে হিসাব দিতে যেতে হবে ব্লা ব্লা” এগুলো বললে আবারও যে আমার পুরনো ক্ষ/ত/তে আ/ঘা/ত পড়বে। মাকে ভেবে বাবাকে সামলাতে গিয়ে আমায় আবারও হোঁচট খেতে হবে। আবারও ভাবতে হবে। ক/ষ্ট পেতে হবে।
—-” নিধি.. প্লিজ তুমি….”
আমি হাত উঠিয়ে উনার কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিলাম। উনার কথাতে বাঁধা পড়ায় উনি থমকে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমতাআমতা করে আবারও কিছু বলতে নিলে আমি শক্ত গলায় বললাম,
—-” তেমন কিছুই হয়নি ভাইয়া। যা হওয়ার তাই হয়েছে। তার অভিমানের পাল্লা এতটা ভারী ছিলো যে সে আর কোনো পিছুটান রাখতে পারেনি! কেবল একা একা গুমরে ম/রে/ছে। হয়তো কখনো তার কাছের মানুষ টাকেও বুঝতে দেয়নি। লোকে বলে আমি নাকি অপ/য়া! জন্মের সময় মা-কে খেয়েছি!”
—-” হোয়াট!! আব… তুমি…”
—-” হু! তবে আমি লোকের কথায় কান দিয়ে চলিনা। এমনকি তাদের কানাঘুঁষাও আমার কানে তুলিনা। সমাজের এই মানুষ গুলো কে আমি এক চোখে দেখলে অন্য চোখে উপরে তাকাই। কেননা, মায়ের চলে যাওয়ার পেছনে তো কয়েক ঘন্টা আগে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতক শিশুটির কোনো হাত ছিলো না তাই না? যা করেছেন সবটা উপরওয়ালা উনার ইচ্ছে তে করেছেন। মায়ের যা ভবিতব্য ছিলো মায়ের সাথে ঠিক তাই ঘটেছে। এখানে বিশেষ নিধির কোনো হাত ছিলো না! তবে অতীত কে আঁকড়ে আর কতদিন? এবার যে আমায় বাবাকে ভালো রাখার সময় এসেছে। বাবাকে আগলে বাঁচার সময় এসেছে। এমন নয় যে আমি ছোট থেকে বাবাকে আগলে রাখতে চেষ্টা করিনি, বাবাকে ভালো রাখতে চেষ্টা করিনি! করেছি। সব ধরনের চেষ্টাই আমি করেছি বিশ্বাস করুন! কিন্তু কোথাও না কোথাও এসে ঠিকই অসহায় হয়ে পড়তাম। মাকে ছাড়া বাবার একাকিত্ব সারাদিন দূর করতে পারলেও সেই রাত টুকু… যখন বাবা একা থাকতো! সেই সময় টুকু আর নিধি কিছু করতে পারতো না! সেই সময় টুকুই আমার বাবাকে আরও পি/ষে নিয়েছে।”
এটুকু বলেই থেমে গেলাম আমি। গলাটা কাঁপছে আমার। আর কিছু বলতে পারছি না! উনি অসহায় মুখে আমার পানে তাকিয়েই ছিলেন। আমি থামতেই মুখে কৃত্রিম হাসি রটালেন। হাত থেকে ঔষধের বক্স পাশে রেখে আমার পাশে বসলেন। পাশে রাখা পানির গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন। মৃদুস্বরে বলে উঠলেন,
—-” আঙ্কেলের কিছুই হবেনা নিধি। আঙ্কেল একদম সুস্থ হয়ে খুব জলদিই ফিরে আসবে তোমার কাছে। আর দেখো আঙ্কেলের তো তেমন কিছুই হয়নি! স..সামান্য একটা কিডনিতে প্রবলেম দেখা গিয়েছে! এ..এটুকুই ব্যাস! ভালো ট্রিটমেন্ট পেলে এক মাসও লাগবে না আঙ্কেলের ঠিক হতে। দেখে নিও।”
তার নির্লিপ্ত কণ্ঠে আমি শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। বাবার রোগটাকে সম্পূর্ন ভাবে উপেক্ষা করে “বাবা জলদি ঠিক হয়ে যাবে!” সেই আশায় বুক ভাসালাম। কে-ই বা কি করতে পারবে? যা করার তো ঐ উপরওয়ালা করবেন। এবার নিশ্চয়ই তিনি আর নিধিকে একা করার ফন্দি করবেন না। বাবা কে ঠিক সুস্থ করে খুব শীঘ্রই নিধির কাছে ফিরিয়ে দিবেন।
—-” ছোট সাহেব আসবো?”
পেছন থেকে লিয়ার গলা পেতেই চমকে উঠলাম আমি। উনি ঘাড় ফিরিয়ে লিয়াকে খাবারের ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চটজলদি উঠে দাঁড়ালেন। গলা খাঁকারি দিয়ে পেটের কাছ থেকে কুঁচকে যাওয়া টি-শার্ট টেনে সোজা করতে করতে বললেন,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ আয়।”
লিয়া হাসি মুখে ঢুকে এলো ভেতরে। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
—-” আপু আপনার শরীর এখন কেমন লাগছে? একটু উঠে বসে খাবারটা খেতে পারবেন তো? নাকি ক/ষ্ট হবে?”
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। ক্লান্তস্বরে বললাম,
—-” না সমস্যা নেই। পারবো।”
লিয়া খাবারের ট্রে টা পাশে রাখতে রাখতে বলল,
—-” আচ্ছা, তাহলে আমি আপনাকে উঠে বসতে সাহায্য করি?”
—-” হু।”
আমার জবাব লিয়ার কান অব্দি পৌঁছানোর পূর্বেই ঝড়ের বেগে সামনে এসে দাঁড়ালেন রাহিয়ান ভাইয়া।
লিয়া তাকে প্রশ্ন করার আগেই তার উত্তর তৈরী,
—-” সাবধানে ধরে উঠাবি…ওর শরীর ঠিক নেই কিন্তু।”
উনার কথায় লিয়ার রিয়াকশন শূন্য। আমি ভাবলাম মাইরি একখানা রিয়াকশন দিবে লিয়া। কিন্তু না, আমাকে অবাক করে দিয়ে লিয়া মুখ টিপে হাসলো। ওর হাসিতে যোগ হলো আরও দুজন। আদ্রিতা আপু আর রিম্মি আপু।
রাহিয়ান ভাইয়া পেছন ফিরে তাদের দাঁড়িয়ে হাসতে দেখে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলেন নিজেও। একহাত তুলে মাথা চুলকে গলা খাঁকারি দিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলেই বাঁধ সাধলেন আদ্রিতা আপু। মিটমিট করে হাসছে সে। আমাকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে রাহিয়ান ভাইয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। রসিকতা করে বলল,
—-” তা এতোই যখন দুঃশ্চিতা হচ্ছে মশাই, তো নিজে ধরে বসালেই তো পারো?”
রাহিয়ান ভাইয়ার হঠাৎই কাশি উঠে গেলো। কাশতে কাশতে আঁড়চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আদ্রিতা আপুর দিকে তাকালো। আদ্রিতা আপু আবারও হেসে ফেললো। রিম্মি আপু আমার পাশে এসে বসলো সেই প্রথমেই। আমাকে উঠে বসতে সাহায্য করে বলল,
—-” এই বাড়িতে রিম্মির দিন শেষ এখন নিধির বাংলাদেশ। কি বলো বউমনি?”
কথাটা বলে খটখট শব্দ করে হেসে উঠলো রিম্মি আপু। তাদের এই উল্টোপাল্টা জোক্সে কেন জানিনা আমার মোটেই হাসি পাচ্ছে না। কেননা, আমি তাদের কথার আগাগোড়া কিছুই ধরতে পারছিনা। হঠাৎ রাহিয়ান ভাইয়া ধমকে উঠলেন রিম্মি আপুকে। বকার সুরে বললেন,
—-” কান লাল করে অনেক দিন হলো চড় খাসনা আমার হাতে। এবার মনে হচ্ছে খাওয়ার সময় এসে গেছে।”
রিম্মি আপু হাসতে হাসতেই হাসি কন্ট্রোল করে নিলো। আদ্রিতা আপু মুখ টিপে হেসে এবার বেশ সহজ গলায় বলল,
—-” আচ্ছা অনেক হয়েছে। এবার তুমি যাও আর তোমার ভাইকে একবার কল করে কথা বলে নাও! তোমাকে খুঁজছিলো কথা বলবে বলে!”
—-” ওকে যাচ্ছি। তুমি এখানের কাজ শেষ করে একটু নীচে এসো। কিছু কথা আছে তোমার সাথে।”
আদ্রিতা আপু মাথা ঝাকালো। রাহিয়ান ভাইয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েও আবার পেছন ফিরে তাকালো। বলল,
—-” আচ্ছা বউমনি, তোমাকে কি আবির কল করেছিলো?”
“বউমনি” উনার মুখে এই ডাকটা শুনতেই আমার চোখ দুটো ডিম্বাকৃতির আকার নিলো! ঝামেলায় ঝামেলায় তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি আদ্রিতা আপুকে উনার বউ ভেবে বসে আছি! অদ্ভুত! কেউ নিজের বউকে বউমনি বলে ডাকে? হাউ ডিজগাস্টিং!
আদ্রিতা আপু মৃদু হেসে জবাব দিলো,
—-” আবির কাল আসবে এখানে। তোমার উপর
মা/রাত্মক ক্ষে/পে আছে। তোমাকে নাকি পঞ্চাশ বারের উপরে কল করে ফেলেছে কিন্তু তুমি ওর কলই তুলোনি!”
রাহিয়ান ভাইয়া ফ্যাকাশে মুখে জবাব দিলেন,
—-” এতো ঝামেলার পরে কখন সময় পেলাম বলো? কাল থেকে তো আমার ফোনই গায়েব।”
রিম্মি আপু বলল,
—-” তোমার ফোন ফাহিম ভাইয়ের কাছে। নিয়ে নিও!”
আদ্রিতা আপু বলল,
—-” এমন হলে হবে? বেচারাও তো নিধির ব্যাপার টা নিয়ে বেজায় টেনশনে আছে। তুমি একটা কল করে নিলেও পারতে।”
—-” আবির কে?”
মনের প্রশ্ন মুখে এসে বাইরে চলে আসবে নিজেও বুঝতে পারিনি। খানিকক্ষণের জন্য ভড়কে গিয়ে জিভ কাটলাম। যদিও কেউ দেখেনি। সবার দৃষ্টি এখন আমাতে নিবদ্ধ। রাহিয়ান ভাইয়া অলস ভঙ্গিতে বললেন,
—-” আরফান।”
এদের এতো এতো নাম কেন? কেউ দেখি একটা নামে মোটেই খুশি নয়! যদিও তাদের বলেই না কি লাভ? আমি নিজেই তো দু-দুটো নাম চেপে বসে আছি।”
—-” আরফান ভাইয়া?”
—-” হু। আরফান আবির।”
আমি বোকা হেসে বললাম,
—-” নাইস নেইম!”
আমার হাসিতে উনার অলস ভঙ্গিমা কেটে গেলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট গলায় বললেন,
—-” ইট’স নরমাল। নাইস-ফাইস কিছুনা!”
কথাটা বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন। উনার হঠাৎ অলস ভঙ্গিমা ছেড়ে স্পষ্ট ভঙ্গিমাতে আমি আবারও খানিক ভড়কে গেলাম।
২৭.
মধ্যরাতে জ্ব/র ছেড়েছে আমার। রাতে রিম্মি আপু শুয়েছিলো আমার সাথে। তখন খাওয়া দাওয়ার পরে ঔষধ খেয়ে শুতেই শরীর আবারও নিস্তেজ হয়ে এসেছিলো। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ভ/য়ং/ক/র ঘুম হানা দিলো আমার দু-চোখের পাতায়। আবারও সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে গেলাম। মাঝরাতে যখন জ্ব/র ছেড়েছে তখন কয়েক মিনিটের জন্য ঘুমটা ভাঙলেও ক্লান্তিতে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘড়িতে সময় এখন ৮ টা ১০। ঘুম ভাঙলো ঠিক ৭ টায়। উঠে মিনিট দশেক পুরো রুমে পায়চারি করলাম। শরীর এখন বেশ চাঙ্গা তাই শুধু উরাধুরা দৌড়াদৌড়ি করতে ইচ্ছে করছে। ভাবলাম ব্যালকনিতে গিয়ে ভাঙা গলায় কতক্ষণ চেঁচাই। পরক্ষণেই মনে হলো, “নিধি এটা তোর বাড়ি নয়!” তাই আপন মনেই আবার দমে গেলাম। রিম্মি আপু বেশ আয়েস করে ঘুমচ্ছে। নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় তার মুখটা মৃদু হা হয়ে যাচ্ছে। আবার যখন ভেতরে টেনে নিচ্ছে তখন আবার মুখটা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে আপুর শ্বাস নেওয়া দেওয়ার পর্যবেক্ষন চালালাম কতক্ষণ। অতঃপর নিজের এমন বেহুদা কাজে নিজেই বিরক্ত হয়ে নিঃশব্দে পা টিপেটিপে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। আশেপাশে সর্তক নজর দিচ্ছি, মুলত ছাদের সিঁড়ি খুঁজছি। ঠিক কোন পাশ থেকে এগোলে ছাদের হদিশ পাবো? হঠাৎ বাম পাশে চোখ পড়তেই রাহিয়ান ভাইয়ার রুমের অর্ধেক খোলা দরজাটা দেখতে পেলাম। আমার কপালের মাঝখানে কতেক চিন্তাদের আনাগোনা শুরু হতেই মনে মনে বলে উঠলাম,
—-” এতো সকালে উনি রুম ছেড়ে কোথায় গেলেন?”
মনের এ ভাবনাকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে আমি আবারও মনে মনে বুলি আওড়ালাম,
—-” হয়তো বেরিয়েছেন!”
—-” নিধি? এতো সকালে! কি গো শরীরে জ্ব/র কেমন এখন?”
পেছন থেকে হাওয়ায় ভেসে আদ্রিতা আপুর গলা পেতেই থমকে গেলাম আমি। মুখে মিষ্টি হাসি জুড়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে বললাম,
—-” জ্ব/র ছেড়েছে সেই মধ্যরাতে। আমার আবার অসুস্থতা বেশি কাবু করতে পারেনা! এই হঠাৎ চলে আসবে আবার হঠাৎ চলে যাবে।”
আদ্রিতা আপু অমায়িক হেসে বলল,
—-” সুস্থ হয়ে গিয়েছো সেটাই আলহামদুলিল্লাহ। এখন চলো নিচে চলো, তোমায় ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি!”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। আদ্রিতা আপুর সাথে হাঁটার পথেই আবারও একবার তাকালাম রাহিয়ান ভাইয়া খোলা দরজার দিকে। মনের মধ্যে নেচে বেড়ানো প্রশ্ন টা আদ্রিতা আপুকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কিনা ভাবতে ভাবতেই জিজ্ঞেস করে বসলাম,
—-” আপু, রাহিয়ান ভাইয়া এতো সকালে কোথাও বেরিয়েছেন বুঝি?”
আদ্রিতা আপু যেতে যেতে পেছন মুড়ে উনার দরজার দিকে একবার তাকিয়ে মথা নাড়লো। বলল,
—-” হু। এতো সকাল কি বলছো? রাহিয়ান তো সেই ভোরে উঠে।”
—-” ভোরে উঠে? কেন?”
—-” তার লাইফে রুলসের কোনো শেষ আছে? সারাক্ষণ তার লাইফ চার্ট মেইনটেইন করা। ভোর সকালে উঠে কি করে জানিনা তবে সাড়ে ছয়টার দিকে জগিংয়ের জন্য বের হয় রোজ।”
—-” এতো ভোরে?”
—-” হু। আর জানো একদিনও মিস হবেনা। একদম টাইমলি রোজ বের হবে।”
—-” রোজ! মনে করো কখনো শরীর খারাপ হলেও মিস হবে না?”
আদ্রিতা আপু আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। না সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-” একদম নয়! রুলস উজ রুলস! আমি বলিনা। রাহিয়ান বলে!”
#চলবে_____________
#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৫
২৮.
—-” চা না কফি?”
আমি পানির বোতলটা হাতে নিয়ে খুলতে খুলতে বললাম,
—-” কনফিউজড!”
আদ্রিতা আপু মুচকি হাসলেন। চুলোর উপর কফির জন্য পানি চাপিয়ে বললেন,
—-” আমাকে নিয়েও কি নিধি একটু আধটু কনফিউজড?”
আমি আঁড়চোখে তাকালাম। মৃদুস্বরে বললাম,
—-” আমি ভেবেছিলাম তুমি রাহিয়ান ভাইয়ার বউ!”
আদ্রিতা আপু এবার বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো। পানিতে বলক উঠতেই নামাতে নামাতে বললেন,
—-” আমি হলাম হিমাদ্র সাহেবের বউ। রাহিয়ানের বড় চাচার দুই মাত্র ছেলের একমাত্র বউ। শুধু তারই বউ কিন্তু হু। আর বাকি সবার বউমনি। তোমার রাহিয়ান ভাইয়ারও। বুঝলে?”
আমি জিভ কেটে কপালে হাত চাপলাম। আদ্রিতা আপুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে তার মুখের ভঙ্গিমা দেখে সোজা হয়ে বসলাম। আমতাআমতা করে বললাম,
—-” আম রিয়েলি সরি আপু.. থুরি বউমনি! আসলে সেদিন তোমায় হঠাৎ দেখার পর কারোর না কারোর বউ বলেই মনে হচ্ছিলো। আর তারউপর আমরা রাহিয়ান ভাইয়ারই রুমে ছিলাম। তাই এমনটা ভেবে ফেলেছি। আরও একটা সিক্রেট কি জানো?”
বউমনি আমার দিকে প্রশ্ন সূচক মুখ করে তাকাতেই আমি আবারও বলতে লাগলাম,
—-” তুমি এতোই সুন্দরী যে আমি ভাবছিলাম, বাই এনি চান্স আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে নির্ঘাত আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম!”
কথাটা বলা মাত্রই বউমনি হাসতে লাগলো। তার হাসি দেখে এবার আমিও ফিক করে হেসে দিলাম। বলতে সমস্যা নেই, বউমনি সত্যিই ভীষণ সুন্দরী!
বউমনি নাক ডলে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। অর্থাৎ হাসতে হাসতে তার দম ফুরিয়ে এসেছে। অতঃপর কফি,মিল্ক আর পানি সবকিছু একত্রে কফিমেকারে ঢেলে দিতে দিতে বলল,
—-” আমার বিয়ে হয় আরও চার বছর আগে। এদেশে নয় আমেরিকাতে হয়। আমার শশুড়-শাশুড়ি কিন্তু সব ওখানেই থাকেন। কেবল আমার সোয়ামিজি-ই ওখানে থাকতে পারলেন না। আসলে সে ছোট-মাকে ভীষণ ভালোবাসে তাই বাবা-মাকে ছেড়েই গত তিন বছর ধরে ছোট-মার কাছেই থাকছেন। আর তিনি যেহেতু আমার সোয়ামি সেই সূত্রে আমাকেও তাকেই সঙ্গ দিতে হচ্ছে।”
—-” তাই নাকি? বড়-খালামনির বড়ঝা আমেরিকাতে থাকেন? বাবা কি হাইফাই ব্যাপার গো তোমাদের! আমি তো বাপু বাপের জন্মে কখনো আমেরিকায় যায়নি। আর কখনো যাওয়ার স্বপ্নও দেখি না! কারন কখনো তো যাওয়াই হবে না। অযথা স্বপ্ন দেখে কি লাভ বলো?”
বউমনি সরু চোখে তাকালো। বলল,
—-” যাওয়া হবে না কি বলছো? তুমি ইচ্ছে করলেই যেতে পারো? আজকাল বিদেশ যাওয়া আহামরি কিছুনা।”
কথা কিন্তু বাস্তব। সত্যি দিন দিন দুনিয়াটা খুব সহজ হয়ে উঠছে। আজকাল কঠিন বলে আর কিছু হয় নাকি?
—-” সে দেখা যাবেক্ষন! তারপর বলো? তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেজ্ঞম্যারেজ?”
আমার প্রশ্নে বউমনি লজ্জা পেয়ে গেলো। কানের পাশে চুল গুঁজতে গুঁজতে বলল,
—-” লাভ ম্যারেজ।”
“লাভ ম্যারেজ” শুনতেই আমার মনটা নেচে উঠলো খুশিতে। আমি হাতের উপর ভর করেই কেবিনেটের উপর বেশ আয়েস করে করলাম। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললাম,
—-” রিয়েলি! তাহলে বলো তোমাদের লাভস্টোরি? আমি শুনবো।”
বউমনি আমার কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। আমি তার হাসিকে পাশে চাপিয়ে আবারও বললাম,
—-” জলদি বলো?”
” নিধি আপু আপনার ফোন বাজছে।”
উপর তালা থেকে লিয়ার কন্ঠ পেতেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার। এমন একটা মোমেন্টে কেউ কল দেয়? বেটার নির্ঘাত কোনো টাইমিং সেন্স নেই। ধপ করে কেবিনেট থেকে নেমে বউমনির দিকে তাকালাম। বউমনি মুচকি হাসছে। আমি অসহায় মুখে তাকাতে বউমনি বলে উঠলো,
—-” আগে কথা বলে এসো। তারপর না হয় আমাদের লাভস্টোরি তোমায় শুনাবো। জলদি এসো কেমন? কফি কিন্তু রেডি।”
আমি চোখ ঝাপটে মাথা দুলালাম। উপরের উঠে আসতে আসতে মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, “কার কল হবে? হৃদের?”
রুমে ঢুকে দেখলাম বিছানা ফাঁকা পড়ে আছে। রিম্মি আপু হয়তো আমার ফোনের টোনেই উঠে পড়েছে। ইশশ, কি বাজে ব্যাপার। বেচারি কত আরামে ঘুমচ্ছিলো…
আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিছানার উপর আমার ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি বিরক্তি ভরা চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে তুলে নিতে হৃদের নামটা দেখে আরও একরাশ বিরক্তি চেপে বসলো আমার শরীর মন জুড়ে। হাজারও বিরক্তি আর অভিমান পাশে রেখেই ফোনটা কানে তুললাম আমি,
—-” লক্ষি? কেমন আছো তুমি? আঙ্কেল এখন কেমন আছে?”
আমি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিলাম। বুক ভরে নিঃশ্বাস আসতেই টলমল চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। এই মানুষ টা সত্যি সত্যি আমায় ভালোবাসে তো? বাবার অসুস্থতা আজ দু’দিন ধরে আর সেটা হৃদ জানা সত্যেও আজ দু’দিন বাদে কল করে জানতে চাচ্ছে যে বাবা কেমন আছে? কি করে পারছে এতোটা নি/ষ্ঠু/র হতে?
আমি চোখ থেকে জল গড়াতে দিলাম না। ঢোক গিলে কান্না গুলো একপ্রকার গিলেই নিলাম। কঠিন স্বরে বললাম,
—-” এই মুহুর্তে তোমার কলটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো হৃদ।”
হৃদ থমকালো বুঝি। অসহায় কন্ঠে বলতে লাগলো,
—-” আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে নিধু! আমি চেয়েও তোমায় একমিনিটের জন্য কল দিতে পারছিনা। বিশ্বাস করো আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে! ফ্যামিলির কারোর সাথেই আমি কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। লাস্ট ফিফটিন ডেস যাবৎ। এখন তুমিই বলো না আমি কি করবো?”
—-” কি এমন ব্যস্ততা তোমার?”
হৃদ আবারও থমকালো। আমতাআমতা করে বলল,
—-” প..পড়াশোনার চাপ। ফাইনাল চলছে তুমি তো জানো?”
—-” মিথ্যে বলছো তুমি।”
আমার শক্ত কথায় হৃদ বারবার দমে যেতে লাগলো। আমি আবারও বলে উঠলাম,
—-” কল দিতে চাচ্ছো না ইট’স ওকে হৃদ। আমার তাতে বিন্দু মাত্র সমস্যা নেই। আমি তোমায় কল দিলে তুমি কল তুলো না সেটাও ঠিকাছে। কিন্তু তাই বলে মিথ্যে বলতে হবে? তুমি আমায় মিথ্যে বলছো আমি তো ভাবতেও পারছিনা! তুমি বলছো তোমার নাকি ফাইনাল চলছে? কেবল কি তোমারই ফাইনাল চলছে? কই রাহিয়ান ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না, তোমার বন্ধু ইরহাম ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না! সেতু আপু, রুবিনা আপু, সাদি ভাইয়া এদের কারোরই তো ফাইনাল চলছে তবে তোমার একার কি করে ফাইনাল চলে? জবাব দাও?”
হৃদ থতমত খেয়ে কলটা কেটে দিলো। আমি ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম! হৃদের ব্যাপার টা যে কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার। ও জানে আমি মিথ্যে একদম সহ্য করতে পারিনা তবুও কেন মিথ্যে বলছে? কি এমন দরকার পড়লো যে ওকে মিথ্যে বলতে হচ্ছে?
গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি ফোনটার দিকে না তাকিয়েই উঠে বসলাম। টেনে বার কয়েক বড় বড় দম ফেলে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালালাম। উদ্দেশ্য কলটাকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করা। কিন্তু হাতে গোনা দশ সেকেন্ডের বেশিও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না! হৃদের নামটা এবার না পড়েই কানে তুললাম ফোনটা। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে উঠলাম,
—-” তুমি যদি আবারও ভেবে থাকো আমায় মিথ্যে বুলি দিয়ে ভোলাবে তাহলে ভালোতে থেকেই কল টা কেটে দাও প্লিজ! অন্যথা তুমি আর কখনো আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার মুখ অব্দি দেখতে পাবেনা!”
—-” হাউ কিউট! একদম আপনি সোজা থেকে তুমি তে? বিলিভ মি নীলাদ্রিতা আমি আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এই একটা চিমটি কাটবে আমায়?”
থতমত খেয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলাম আমি! এটা কে? নাম্বারটায় চোখ বুলালে চিনতে পারলাম না! কিন্তু ভয়েস টা…. আরে ইয়ার এটা তো সেই অপরিচিত লোকটা!
—-” হ্যালো… হ্যা…লো? হ্যালো? নীলাদ্রিতাআআআ….”
ফোনটা পূনরায় কানে উঠাতে উঠাতে উনার চেঁচানো কন্ঠ কানের পর্দায় এসে বারি খেতেই আমি ঝাঁঝ মেশানো গলায় বলে উঠলাম,
—-” ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন?”
কথাটা বলতেই ওপাশ থেকে কাশির শব্দ ভেসে আসলো। কাশতে কাশতে বেচারা কিছু বলতে নিলেই আমি আবারও অ/গ্নিমূ/র্তি রূপ নিয়ে বললাম,
—-” যক্ষা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র নীলাদ্রিতার নাম্বার নয়। নেক্সট টাইম আমাকে কল করার আগে অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্রে কল করে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে আসবেন।”
এটুকু বলেই কল টা উনার মুখের উপরই কেটে দিলাম আমি। হৃদের রা/গ টা অপরিচিত মানুষ টার উপরই পুরালাম। কি করবো? লোকটা মাঝেমধ্যে কই থেকে যে উদয় হয় আর আমাকে জ্বা/লি/য়ে মা/রে কে জানে?
ক্ষিধেয় যেন পেটের মধ্যে ইঁদুরের পঞ্চম বি/শ্বযু/দ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে! না, আর এখানে বসে থেকে এদের সাথে ঝ/গ/ড়া করে বকাবকি করা চলবে না। আগে জরুরি ভিত্তিতে কিছু খাওয়া দরকার। নীচে তো বউমনি অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি বরং নীচেই চলে যাই। ফোনটা পাশে রেখে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবারও কল আসলো অপরিচিত লোকটার। বেটার শিক্ষা হবে না জীবনে! এবার তো উনাকে বকা দিয়ে উনার পুরো গুষ্ঠি পরিবার উদ্ধার করবো। হাতে তুলে ফোনটা কানে চেপে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওপাশ থেকে তার মোহনীয় স্বরটা জাদু ছড়ালো আমার চারিপাশে। সাথে কিছু মন জুড়ানো বাক্য,
—-” তুমি, বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড
অখণ্ড প্রকৃতির প্রশমন~
তুমি, নিপুণ হাতে গড়ে তোলা
অবুঝ মনের সবুজ বাগিচা |
তুমি, ছোট্ট শিশুর প্রাণচঞ্চল
অবিকল মায়াবী হাসি ~~
তুমি,তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা
জৈষ্ঠ্যের রসালো ফল।
তুমি, তুমি প্রেয়সী আমার প্রেয়সী।”
🥀 প্রেয়সী (অংশবিশেষ) 🥀
২৯.
ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে মাথার গিলু অব্দি গুলিয়ে ফেলছি আমি! তবুও বুঝে উঠতে পারছিনা কে এই আজনাবি। ফাল্গুন মাস। চারপাশের সমস্ত গাছপালা তার শরীরটাকে উজাড় করে তার শরীরের প্রত্যেকটা পাতা ঝড়িয়ে দিচ্ছে। কতটা সুন্দর সেই মনোরম দৃশ্য। এসব অহেতুক ভাবনা বাদ দিয়েই মন ডুবালাম প্রকৃতিতে। গার্ডেনটা শুকনো পাতা গুলো দিয়ে ভরে আছে। আমি তার মধ্যে দিয়েই হাঁটছি। সময় টা এখন খুব সম্ভবত ৪টা কিংবা ৫ টা। ঘন্টা দুয়েক আগেই দুপুরের খাবার খাওয়া হলো। খেয়ে দেয়ে ঘন্টাখানিক রেস্ট নিয়েই বের হয়ে এলাম এখানে ৷ এ-বাড়িতে আসা মাত্রই এই গার্ডেনটা নিয়ে আমার খুব কৌতুহল। কখন এখানে আসবো আর কখন ঘুরেফিরে সবটা দেখবো সেই ভাবনাতেই আঁটকে ছিলাম।
—-” নিধি? কি করছো এখানে একা একা?”
পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকাতে দেখলাম আরফান ভাইয়া ওরফে আবির ভাইয়া দাঁড়িয়ে। আমি স্মিত হেসে জবাব দিলাম,
—-‘ জ্বী। এই তো তেমন কিছুই না ঘুরেফিরে দেখছিলাম সব।”
উনিও হাসলেন আমার ন্যায়। বড় বড় ধাপ ফেলে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখতে দেখতে বললেন,
—-” আন্টিদের গার্ডেনটা বরাবরই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার ভীষণ পছন্দের!”
—-” সত্যিই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার তো সবটা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে আসছে বারবার। আমি তো তখন থেকে এটাই ভাবছি যে কারোর বাড়ির গার্ডেন কি করে এতোটা সুন্দর হতে পারে?”
আরফান ভাইয়া আমার পেছনের দিকে সুইমিংপুলটার দিকে ইশারা করে বলল,
—-” সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এই যে সুইমিংপুলটা।”
আমি সুইমিংপুলের নীল পানিতে তাকিয়ে বললাম,
—-” একদমই তাই।”
—-” তারপর বলো, বাবা এখন কেমন আছেন? কথা হয়েছে বাবার সাথে?”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
—-” বড় খালামনির সাথে কথা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বাবা আগের থেকে বেটার। আজ রাতে বাবার লাস্ট মেজর অপারেশন টা হবে। ডক্টর বলেছেন অপারেশন সাকসেসফুলি হতেই বাবা ঠিক আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে।”
—-” গ্রেট নিউজ। সত্যি বলতে তোমার বাবাকে নিয়ে সেদিন থেকেই ভীষণ টেনশনে ছিলাম! ভেবেছিলাম তোমার নাম্বারটা নিয়ে নিবো। মাঝেমধ্যে কল করে না হয় তোমার বাবার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিলাম?”
আমি আঁড়চোখে আরফান ভাইয়ের মুখের এক্সপ্রেশন দেখলাম। নাহ্, স্বাভাবিকই আছেন। কোনো রকম
শ/য়/তা/নি ছাপ নেই মুখে। আর থাকারও কথা নয়। কেননা সে রাহিয়ান ভাইয়ারই তো ফ্রেন্ড।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
—-” হ্যাঁ নিশ্চয়ই।”
আমার সহমত পেতেই উনি ফোন বের করে আমার সামনে ধরলেন। মুখের হাসিটা খানিক প্রশস্ত করে বললেন,
—-” এই নাও এটায় তোমার নাম্বারটা তুলে একটা মিসড্ কল দিয়ে রাখো!”
আমি ঘাড়টা হালকা কাত করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবারও বলে উঠলন তিনি,
—-” তোমার ফোন নেই সাথে?”
আমি আমার শূন্য হাতের দিকে একনজর তাকিয়ে বললাম,
—-” না রুমে রেখে এসেছি।”
আমার জবাবে উনি হতাশ কন্ঠে বললেন,
—-” ওকে নো প্রবলেম। আমার নাম্বারের লাস্ট টু ডিজিট হলো সিক্স, নাইন। সেভ করে নিও?”
আমি জোরপূর্বক হেসে মাথা দুলালাম। ফোনটা উনার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,
—-” সেদিন আপনি আর রাহিয়ান ভাইয়া বাবার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। তার জন্য আপনাকে বিশেষ একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু পরে তো আপনার আর দেখাই মিলল না!”
আরফান ভাই স্মিত হেসে বললেন,
—-” ধন্যবাদ দিলে তো আমি শুনছি না!”
আমি উনার কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে বোকা গলায় প্রশ্ন করলাম,
—-” জ্বী… মানে?”
আমার প্রশ্নের জবাবে আরফান ভাই মুচকি হাসলেন। মাথা চুলকে মিনমিনে গলায় বললেন,
—-” তোমায় দেখলেই আমার মনটা উৎসাহ নিয়ে বলে উঠে তোমার হাতের রান্নার সাধ অসাধারণ হবে। আর আমি একদিন তোমার হাতের রান্নার সাধ নিতে চাই। প্লিজ, না করো না।”
আমি শুঁকনো মুখে তাকালাম। গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”
—-” ফ্রী-ই আছো না? চলো না সামনের রোডটা একটু হেঁটে আসি?”
—-” অ্যা?”
—-” সামনের রোডে কিছুদূর যেতেই একটা টি-স্টল আছে… চলো যা….”
আরফান ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কোত্থেকে উদয় হলেন রাহিয়ান ভাইয়া। কোনো কথা বার্তা না বলেই আমার হাতটা টেনে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলেন। প্রথম দফায় উনার মুখটাও দেখতে পেলাম না। পরক্ষণেই উনার রা/গা/ন্বি/ত মুখটা দেখে ভড়কে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম। আরফান ভাই হা করে দাঁড়িয়ে আছেন। রাহিয়ান ভাইয়া আরও দুই কদম এগোতে পেছন থেকে আরফান ভাইয়া ডেকে উঠলেন,
—-” রাফিদ, নিধিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
রাহিয়ান ভাইয়া জবাব দিলেননা আরফান ভাইয়ার কথার। আরফান ভাইয়ার মতো আমারও একই প্রশ্ন! আমাকে নিয়ে উনি এভাবে করে কোথায় যাচ্ছেন?
কিন্তু উনার আ/গ্নে/য়/গি/রি/র মতো জলজল করা মুখটার দিকে তাকিয়ে আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না আমি।
#চলবে____________________