#তোমাতে_আমাতে
লেখা আশিকা
পার্ট ০৯
একপা এক পা করে আমি আর ইমন অনেক কাছে এসেছিলাম। কিন্তু একটা জড়তা আমার আর ওর মাঝে ছিলো। আমি জানি এই দেয়াল ভাঙ্গা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। সম্পর্কটা ওই বন্ধুত্ব পর্যন্তই ছিলো।
এভাবেই তিনমাস কেটে যায়। বাবাই এই তিনমাসে একদম সুস্থ হয়ে যায়। সেদিন বাবাই আর মামনীর দেশে ফেরার দিন ছিলো। ইমন সেদিন দ্বিতীয়বারের মত আমাকে জড়িয়ে ধরে চরম খুশিতে।
আমরা সবাই ওনাদের রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট এ যাই। সেদিন দ্বিতীয়বারের মত আমি ওদের বাসায় যাই আর বাবাই এর ইচ্ছাতে আমি ওখানে থেকে যাই। মা, বাবা, ভাইয়া বাসায় চলে যায়। মামনী আর বাবাই টায়ার্ড ছিলো তাই ওনাদের রেস্ট করতে দিয়ে আমি রুমে আসি। ইমন তখন ফোনে যেন কার সাথে কথা বলছিলো। আমাকে দেখে ফোনটা রেখে দিলো। আর হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলো।
ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো তবুও আমি চুপ করে থাকলাম।
— তুমি কখন আসছো?
— এইতো এখনি। তুমি কার সাথে যেন কথা বলছিলে, কথা শেষ?
— হুম….
শেষ….।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস আমার কান পর্যন্ত এসেই থেমে গেল।
আমি চুপ হয়ে গেলাম।
— আদি তুমি এরকম পাপেটের মত বসে আছো কেন?
— একটা সত্যি কথা বলবো,
তোমাকে না আমার মাঝে মাঝে বড় অচেনা লাগে।
ও আমার এই কথা শুনে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
আমার অসহ্য লাগছে?
আচ্ছা আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি?
হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— কাইন্ডলি আমাকে একটু কফি করে দিতে পারবে? না থাক তুমি বরং রহিমা খালাকে বলো সেই করে দিবে।
আমি নিঃশব্দে ওখান থেকে চলে আসলাম।
একটুপর কফি বানিয়ে নিয়াসলাম।
কফির মগটা এগিয়ে দিতেই ইমন আমার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— তোমার মগ কোথায়?
— উহু আমি খাবো না। তুমি খাও।
— আচ্ছা আমিও খাবোনা। নাও ধরো…??
— কি পাগলামো হচ্ছে? মাত্রইতো তুমি খেতে চাইলে..
আর আমিতো এই টাইমে কফি খাইনা।
— উঁহু এইটা আমার কাছে অভদ্রতা লাগবে। তুমি কি আমার কফির মগে একটু চুমু দিবে?
আমার কান ভারী হয়ে আসছে ও এইটা কি বললো।
আমি লজ্জা পেয়ে নিচে তাকালাম।
— আদি এতেই তুমি এত লজ্জা পেলে? আমিতো অন্য কোথাও চুমু দিতে বলিনি। তোমাকে লজ্জা পেলে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।
আমি ওর থেকে কফির মগটা নিয়ে চুমুক দিতে লাগলাম।
একটুপর ইমন আমার হাত থেকে মগটা কেড়ে নিয়ে গেল।
— এইটা কি হলো?
— কি হলো মানে!! তুমিতো পুরাই শেষ করে ফেলতেছো। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো এইটা তুমি আগে কফিতে মুখ লাগাবা তারপর আমি মুখ লাগবো । আরেকটু হলেতো তুমি ইচ্ছাটাই মাটি করে দিতে।
— ওহ আচ্ছা। তাহলে আপনি আপনার ইচ্ছা পুরুন করুন।
ইমন কফি খেতে খেতস আমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেই।
— উঁহু তুমি আমার পাশের বসে থাকবে আপাতত এটাও আমার একটা ইচ্ছা।
আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুই বলছিনা…
— আদি তোমার আমাকে ভয় করছেনা?
আমি চমকে ওর দিকে তাকাই।
— খামোকা ভয় কেন লাগবে। তোমার হাত ধরে আমার জনমানশুন্যহীন, নির্জন, নিস্তব্ধ, দুর্গম যায়গায় যেতেও ভয় করবেনা।
ইমন কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আদি আমি না খুব খারাপ জানোতো, তুমি আমাকে এতটা প্রায়োরিটি দিও না কেমন।
আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম।
— এমন কথা আর একদিন ও বলবানা।
একদম আনমনা হয়ে ও আমার দিকে তাকালো। চোখে অশ্রু টলটল করছে।
আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় চাইছে ওকে আরেকবার জড়িয়ে ধরতে। আমি পারছিনা নিজেকে সামলাতে। এর কিছুক্ষন পর নিজেকে আমি ইমনের বুকে আবিষ্কার করলাম। ও কেন বুঝেনা ভালবাসি আমি। কেন আমার ভালবাসাটা এত বোবা। আমি পারছিনা নিজেকে সামলাতে । পারছিনা নির্বাক থাকতে ।
ও আমাকে বুকে জড়িয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ওর শরীরের স্মেল টা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
আরো গভীরের যাওয়ার আস্কারাতে ব্যাকুল হয়ে আছে ক্ষুধার্ত হৃদয়।
ইমন সহসাই আমার গালদুটো উপরে তুলে ধরলো। কয়েকটা উষ্ণ নিঃ শ্বাস আমার গায়ে পড়তেই আমার শ্বাস প্রশ্বাস গভীর আর ঘণ হতে লাগলো। হৃৎপিন্ডটা যেন ঘড়ীর কাটার মত প্রতিটা মূহূর্তের হিসেব নিকেশ করতেই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
আমার গালে কয়েকটা দাড়ির খোঁচা দিতেই আমি কেকিয়ে উঠলাম। ইমন চমকে আমার দিকে তাকাতেই আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। সাথে সাথে ও বিছানায় পড়ে গেলো আর আমার কোমড় জড়িয়ে ধরাতে আমি ওর উপরে পড়ে গেলাম। আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। চোখে মুখে দুষ্টুমি খেলা করছিলো। ও আমার নাকে নাক ঘষতে লাগলো। আমি উঠে চলে যেতে লাগলে আবার আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। এবার আমার উপরে উঠে এলো। হৃৎপিন্ডের ধুকপুকুনিটা বেড়েই চলেছে। আমার হাতের তালুর সাথে ওর হাত, আংগুলের ফাঁকে আংগুল ঢুকিয়ে দিলো। কপালের চুলগুলো বারবার আমার মুখে পড়ছিলো। ও একহাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে আবার আমার কপালে চুমু দিলো। আমি ওর ঠোটের ছোঁয়ায় কেপে উঠলাম।
ও ওর ঠোট আমার দুচোখের পাতায় ছোঁয়াতেই আমি ওর কপালে চুমু একে দিলাম। ও অদ্ভুত মুগ্ধতায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আমি ঘোর লাগানো কন্ঠে বলতে লাগলাম,
— আই লাভ ইউ। লাভ ইউ সো মাচ ইমু।
এই কথাটা ইমনের কান পর্যন্ত যেতেই ও আমাকে ঝটকানা দিয়ে ছেড়ে দিলো।
আমি ওর হাত ধরতেই ঝটকানা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে দিলো।
অগ্নিচোখে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো,
— এই কি বললা তুমি?
— কোনটা ইমু?
ও রাগে ফেটে পড়লো।
— সেট আপ জাস্ট সেট আপ। হাউ ডেয়ার ইউ?
আমার হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে নামালো।
— তোমার সাহস কি করে হলো এই নামে ডাকার? আমি এই নাম শুনতে চাই নাহ্। শুনতে চাই নাহ্।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা এই সামান্য কারনে কেউ এইভাবে রিএক্ট করতে পারে।
এক অন্য ইমনকে যেন প্রথমবার দেখছি।
আমার মাথায় হাত দিয়ে গুতা দিয়ে আবার ও বলতে থাকে,
— মাই নেইম ইজ ইমন চৌধুরী। মাথায় ঢুকিয়ে নাও..
প্লিজ গো আউট..
আগামী একঘন্টার মধ্যে তুমি আমার রুমে আসবে না। গেট লস্ট।
আমি হতবিহ্বল হয়ে ওর মুখের দিকে তাকাই থাকলাম। কিন্তু না ওর নীলচোখে আজ কোন ভালো বাসার সাগর আমি দেখতে পেলাম না। সেখানে আজ ক্রোধ নামক এক ভয়ংকর শয়তান বাস করে। এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানে ওর ক্রোধের মাত্রা আরোও দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়া।
আমি একসেকেন্ড ও ওখানে ওয়েট না করে ড্রয়িংরুম চলে আসলাম। খুব কান্না পাচ্ছে আজকে যে আমার হিসেবের খাতায় বড্ড গরমিল দেখা যাচ্ছে। চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে এতো তফাৎ হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষুনি বাসায় চলে যাই। কিন্তু কি করে যাবো বাসায় কি বলবো। কিছু বলার মুখ আমার নেই। কান্না থামাতে পারছিলাম না তাই ওয়াশরুমে গিয়ে কান্না করলাম অনেক্ষন। ওখানে কেউ দেখে ফেললে আবার একটা সিনক্রিয়েট হবে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে আসতেই দেখি মামনী আমাকে ডাকছেন ডিনার করার জন্য। ইমন ও দেখি টেবিলে বসে আছে। আমার গলা দিয়ে খাবার নামছেনা।
মামনীতো আমার দিকে তাকাই বলেই ফেললো,
— আদৃতা মা আমার খাচ্ছো না কেন ঠিক করে? খাবার মজা হয় নাই?
— নাহ মজা হইছে। কিন্তু আজকে আমার বমি বমি পাচ্ছে খাওয়ার রুচি নাই একদম। এখন জোড় করে খেতে গেলে বমি আসবে।
বাবাই ইমনের দিকে তাকাই বলবো,
— এইরকম চুপচাপ কেন তুমি? কিছু বলো..
— বাবা খাবার সময় কথা বলা আমার প্রছন্দ না তুমি সেটা জানো। আজকে কি নতুন করে অভ্যাস চেঞ্জ করবো।
বাবা চুপ হয়ে গেল ওর কথা শুনে। ইমন উঠে চলে গেল।
বাবা আর মা ইমনের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো।
খাওয়া শেষে আমি বাবাই আর মামনীর সাথে গল্প করলাম অনেক্ষন। এর মাঝে একবারের জন্যও ও আমাদের সামনে আসলো না। তারপর আমাকে ঘুমুতে বলে ওনারাও উঠে পড়লো।
আমি ডিসিশন নিয়েই ফেলেছি যে ওর রুমে যাবোনা তাই ফোনে স্ক্রিনে স্ক্রলিং করতে লাগলাম। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিলো। আমি ওখানেই যেন কখন ঘুমিয়ে পড়ি।
চলবে…