#তোমতে_আমাতে
পার্ট ১২
লেখা আশিকা জামান
মাঝেমাঝে ওকে আমি একদম বুঝতে পারি না। এইতো সেদিন ঘুমানোর সময় আমি মাঝখানে কোলবালিশ দেয়ায় কি রাগটাই না করলো।
বলে কিনা,
— তোমার বাবা মা ঘুমানোর সময় কি মাঝখানে কোলবালিশ দেয়?
— নাহ, ওদের মাঝেতো ভালবাসা আছে। আমাদেরতো আর তা নয়। তাই আরকি!
রাগে গজগজ করতে করতে শুয়ে পড়লো।
এরপর থেকে প্রতিদিন আসে আমাকে পড়াতে আর রাতে চলে যায়। কিন্তু আচরণ দেখে মনে হয় যেন সব ঠিক।
যথেষ্ট সময় নিয়ে ধৈর্য্য সহকারে আমাকে পড়ায়। আমার পাশে ও থাকলেই চলে সেটা যেভাবেই হোক।
প্রেমিক হিসেবে না হয়ে বন্ধু হিসেবে থাকুক। তবুও থাকুক।ভালবাসি নাইবা শুনলাম, ভালোবাসতেতো কোন বাধা নেই!
আদৃতা আসবো,
দরজায় নেহাৎ ভদ্র কায়দায় টোকা পড়লো। এটা আমার ভাইয়া ছাড়া আর কেহ নয়।
— আসো ভিতরে আসো।
কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। অসুস্থতার সময় কাছের মানুষদের বড্ড প্রয়োজন। পাশে থাকলেই যেন রোগ অর্ধেক ভ্যানিশ হয়ে যায়।
ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে আমার পাশে এসে বসলো।
আমি শুয়া থেকে উঠলে যাচ্ছিলাম।
আমার দুই হাত কাধ ধরে আবার শোয়াই দিলো।
— ভালোইতো জ্বর বাধিয়েছিস।
কপালে হাত দিতে দিতে ভাইয়া বললো।
এমা কিছুইতো খাস নাই। এই ফলগুলো এইভাবে ফেলে রাখসিস কেন। মা দেখতে পেলে রাগ করবে খুব।
নে খেয়ে নে।
আমার মুখে টুকরো করা আপেল তুলে দিতে লাগলো।
— আমি খাবোনা। প্লিজ দিও না বমি আসতেছে..
ওয়াক ওয়াক..
ভাইয়া আমাকে ধরে ওয়াশরুমের বেসিনের কাছে নিয়ে গেল। বমি করে দিয়ে একটু শান্তি লাগছিলো।
ফ্রেশ হয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।
— ভাইয়া আমার মাথা ব্যাথা করছে খুব।
— আচ্ছা আমি ম্যাসেজ করে দেই। ভালো লাগবে।
— উঁহু আমি এখন রেস্ট নিবো তুমি রুমে যাও। আর টেনশন করোনা।
— ওষুধ খেয়েছিস?
— ৫ দিন পর এক্সাম আর এই সময় কি জ্বর বাধালিরে মা। কি আর বলবো তোকে?
মা কখন এসেছে খেয়ালই করিনি।
— মা এ আবার নতুন কি? সব এক্সামের আগে আমার জ্বর আসবে এটাইতো হয়ে আসছে।
মা আমার পাশে বসতে চাইলো কিন্তু এখন বসলে আবার জোড় করে খাওয়াবে।
নাহ আমি এখন কিছুতেই খেতে পারবোনা।
— আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তোমরা এখন যাও।
মা আর ভাইয়া চলে গেল।
আমি হয়তবা ঘুমিয়েছিলাম কিছুক্ষন। জ্বরের ঘোরে পাগলামি করার স্বভাব আছে আমার। আবুলতাবুল কিছু করি আর বলেও ফেলি। রাতে আমার খুব জ্বর হলো। চোখখুলে ইমনকে দেখতে পেলাম। ওর হাতে খাওয়ার বাটি।
— আদি উঠ তাড়াতাড়ি একটু খেয়ে নাও । না খেলে শরীর খারাপ আরো বেশী হবে।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর হাত থেকে স্যুপের বাটিটা পড়ে যেতে লাগলো। ও তাড়াতাড়ি করে বাটিটা সাইড টেবিলে রাখলো। আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম আবার ও টাল সামলাতে না পেরে আমার উপর পড়ে গেল। কিছুক্ষন এভাবেই আমার উপরে ও শুয়ে থাকলো। দুজনের বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে চলেছে । ক্রমাগত চলছে ঘড়ির কাটার মত নিজস্ব গতিতে নিজস্ব ছন্দে অবিরাম। তারপর ও আবার উঠে যেতে লাগলে আবার ওর পিঠ দুই হাতে জড়িয়ে ধরলাম।
এবার ও আর উঠার চেষ্টা করলোনা আমার দুই গালে হাত রাখলো আলতো করে।
ওর নিঃশ্বাসে আমার গায়ে পড়ছে আর প্রতিবার এক উষ্ণ অনুভুতির জন্ম দিচ্ছে ।
কিছুটা সামলে নিয়ে ও বললো,
— আদি তোমার গাতো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে?
আমি লজ্জাজনিত ভঙ্গীতে একটা মুচকি হাসি পেলাম।
জানিনা এই কথাতে লজ্জা পাওয়ার কিছু আছে কিনা! যাই হোক আমি লজ্জা ভয় সব সীমা আজকে মনে হয় ছাড়িয়েই ছাড়বো।
— এই হাসছো কেন? গায়ে জ্বর নিয়ে এইভাবে কেউ হাসে
— হুম হাসেতো তুমি না কিচ্ছু বুঝো না। ধুর ওইটাতো প্রেমের জ্বর । এই ডাক্তার তুমি আমার প্রেমের জ্বরটা ছাড়িয়ে দিবে।
আমার কথা শুনে ও বড় বড় চোখে তাকালো।
আমি ওর শার্ট এর কলার ধরে ঝুকাতে ঝুকাতে বললাম,
— দাওনা জ্বরটা সারিয়ে। এই দেবে বলোনা!
প্লিজ বলোনা।
বড্ড নির্লিপ্ত গলায় বললো
— হুম দিবো। শুধু তুমি একটু খেয়ে নাও। স্যুপটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছেতো।
— উহু।
— কি উহু??
— ছিঃ কি বাজে। আমি স্যুপ খাবোনা।
আমিতো আজকে অন্য কিছু খাবো।
আর অবশ্যই স্পেশাল!
— আচ্ছা কি খাবা আমাকে বলো। আমি এখনি নিয়াসছি।
— ও তাই আমি চুমো খাবো।
— হুয়াট??
ইমন লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে পড়লো।
— এই তুমি ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে কেন?
সামান্য চুমোইতো খেতে চেয়েছি। জানোতো আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে সব বলে?
কিভাবে তাদের বিএফ কিসসি করে! হুয়াট অ্যা ফিলিংস্!!
এ্যা এ্যা এ্যা……..
— আরে কাঁদছো কেন?
— তা কি করবো!
আফসোস আমার এই এক্সপেরিয়েন্সটা হলোনা।
— আর ইউ সিরিয়াস?
তুমি এইগুলা কি উল্টাপাল্টা বলছ। জ্বরে তোমার মাথা গেছে।
আমি ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে আমার মুখের কাছে এনে ফেললাম।
— একটা কিসসি দাও না। একটা কিসসি দিলে কি হয়। একটু ভালোবাসলে কি ক্ষতি হয়।
— আচ্ছা দিব। আগে তুমি খেয়ে নাও।
— না আমি খাবোনা।
— তাহলে আমি আর আসবোনা। এখনি গেলাম।
ইমন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে লাগলো।
— ইমন! আমি খাবো ঠিক আছে।
— দ্যাটস লাইক এ্যা গুড
গার্ল।
ও আমার পাশে এসে বসলো। তারপর আমার মুখে চামচ দিয়ে স্যুপ খাওয়াতে লাগলো।
— উফ আমি আর খাবো না। ভাল্লাগছেনা। ইয়াক কি বাজে খেতে…
— খাও এইতো শেষ। আরেকবার হা করো।
— হা
আচ্ছা তোমার চোখগুলো এতো নীল কেন? তুমি একদম বোঝোনা তোমার নীল চোখের প্রেমে আমি পাগল হয়ে আছি। লাভ ইউ ইমু।
— পাকনামো রেখে খাওতো এবার।
— না খেয়েছি। এইবার কিন্তু চুমো!!
আমি ঠোট বাকিয়ে একদম ওর ঠোটের কাছে নিয়ে আসলাম।
ওর আর আমি খুব কাছে। দুজনের নিঃশ্বাস গাড় হয়ে আসছে।
ও বাটিটা একহাত দিয়ে পিছনে রেখে দিলো।
তারপর দুইহাত দিয়ে আমার দুই গাল শক্ত করে ধরলো।
— ইমু তোমার ঠোটগুলো এতো সুন্দর কেন? আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
ও আমার ঠোটে একটা আংগুল রেখে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
— চুপ। কথা বলোনা।
— ইয়াক থু। বমি পাচ্ছে..
আমি বমি করার মত করে মুখ ভেটকাতে লাগলাম।
নিজেকে সামলে নিয়ে ও আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। অনেক কষ্টে বমি করলাম নাক দিয়ে মুখ দিয়ে। মাথা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। নাক গলা পুরা জ্বলে যাচ্চি। আমি বমি করতে করতে পরে যাচ্ছিলাম। ও আমার কোমড়ে শক্ত করে ধরে পিছনে দাঁড়ায় ছিল। আমাকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে যায়। আমি ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি। ও আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
আবেশে আমার চোখ জুড়িয়ে আসে। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি।
ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে। পাখিদের কলকাকলিতে ভোরের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চোখটা খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে। সকালটাকে উপভোগ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। শরীরটা ভালো লাগছে বোধ হয় জ্বর সেরে গেছে। আমি নড়েচড়ে উঠতেই ইমন চমকে উঠলো। আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। আর ও কপালে হাত দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে।
— এখন কেমন লাগছে? তোমার কিছু লাগবে। পানি খাবে?
ওর কথাগুলো আমার কানে বাজছে। আচ্ছা ও কি রাতে ঘুমো ও নি। এভাবেই বসে ছিল।
অদ্ভুত ভালোলাগা মনটাকে ছেয়ে যাচ্ছে।
ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
— তুমি ঘুমাও নাই।
ও আমার দিকে মুচকি হাসলো
— নাহ..
— কেন?
— কেন আবার সারারাত জেগে পাগলের পাগলামি সহ্য করলাম। ঘুমিয়ে গেলে যদি অন্য কারো সাথে এইগুলা করে তাহলেই আমার মান সম্মানের আর বাকি কিছু থাকবেনা।
ওর ওই পাগলামি কথা শুনে রাতের কথা মনে হয়ে গেল। ছিঃ আমি বিস্মিত আর সাথে সীমাহীন লজ্জিত। এই মুখ ওরে আমি দেখাই কেমনে!!
ছিঃ কি লজ্জা!
কি লজ্জা!
আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে যেতে লাগলাম।
ও আমার হাত খপ করে ধরে ফেললো।
অন্যদিকে তাকিয়েই বললাম,
— হাতটা ছাড়ো প্লিজ।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— হুম তারমানে জ্বর আসোলেই ছেড়েছে। সরি প্রেমের জ্বর..
আচ্ছা আমিকি তোমার প্রেমের জ্বর ছাড়িয়ে দিতে পারি? মানে এখনো কি কিঞ্চিৎ পরিমাণ অবশিষ্ট আছে?
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আল্লাহ আমারে বাচাও।
— কি হলো মুখটা অন্য দিকে ঘুরাই রাখছো কেন?
নাহ মানে কিস করবো কোথায়? না আমিতো আবার কিস করতে পারি না আফসোসের অন্ত নাই তোমার। ফ্রেন্ড এর বি এফ রা তো এক্সপার্ট কিসার। আচ্ছা শোন এক্সপার্ট না হলেও অন্তত ট্রাই করে দেখতে পারি। খুব বেশি খারাপ লাগবে না। ভালোও লাগতে পারে অন্তত একটা চান্স নিতেই পারো।
আমি কোন কথা বলছিলাম না। সহসাই ও আমার কানের কাছে মুখ নিলো আমার প্রচণ্ড শিরশিরানি লাগছিলো।
দুই কানে দুইটা কামড় বসিয়ে দিলো।
আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম। নিজেকে সামলে নিয়ে ওকে প্রশ্ন করলাম,
— এইটা কি হলো?
— লাভ বাইটস। কেন কম হয়ে গেছে অন্য কোথাও দিবো?
— অসভ্য একটা। তোমার মুখে কোন লাগাম নেই। প্লিজ চুপ করো।
— ও আচ্ছা আমি অসভ্য। আর তুমি যখন রাতের বেলা চুমো চুমো করে আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলে ওইটা সভ্যতা। তাই নাহ!
— অসম্ভব আমি এইটা করতেই পারি না। বানিয়ে বানিয়ে বলবানা।
— হুম এখন আমি বললেতো সব বানিয়ে বলাই হবে।
আচ্ছা সত্যি কি সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
আমি আমার হাতটা ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালালাম।
চলবে।।