#দুইমুখী
#শেষ_পর্ব
#লেখক:ঐশি
–আম্মুকে আর একবার দেখবো ,আর একবার ।নিয়ে যাবো আমাদের সাথে ।আমি যাবো না তোমার সাথে ।(তাসফিয়া)
কিন্তু গাড়ি থামে না ।চলছে তার মতো ই ।ফাহিম ভাবছে হোক না সব কিছু আগের মতো ।সুখী থাকুক প্রিয় মানুষ ।কত দূরে নিয়ে যাবো এই স্বপ্ন গুলো থাক না অপূর্ন ।তাসফিয়া কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায় ।ফাহিম ভাবছে সত্য কথা তো বলতে পেরেছে এটাই শান্তি ।হয়তো আজকেই হবে তাদের সুখী জীবনের শুরু ।হয়তো আর কখনই দেখা হবে না,,,।এই রাতেও যেনো ঘুম নেই ফাহিমের ।কি ভেবেচিলো আর কি হলো এটা ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে ।কিন্তু সে নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে ।অন্য দিকে আজ রাতেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত শাকিল ।প্রীতির কোনো কথা ই সে শুনবে না ।প্রীতি তার বাবা মাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে তবে পারেনি ।বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে,এখন শুধু সময়ের পালা কখন হবে সেই শুভ সময় ।চারদিকে মানুষের আনা গোনা আর আনন্দের উল্লাস ।তবুও যেনো যার জন্য এতো আয়োজন সে ই চুপ রয়ে গেলো ।অনেক কিছুর পরও কোনো কিছুর সমীকরন মিলাতে পারছে না ।প্রীতি নিজেই ভাবছে সে একটা দুইমুখী মানুষ ।সাপ যেমন দুইমুখী হয় সেও তেমন ই ।তা না হলে একবার বিয়ে হওয়া সত্তেও সে আবার শাকিলকে বিয়ে করছে ?আর সেই নিষ্পাপ মেয়েটার আর্তনাদ বার বার তার চোখে ভেসে উঠছে ।বিয়ে শুরু হওয়ার আগে সবাই যেমন আনন্দে ছিলো এখন সে তেমন নেই ।কারন প্রীতি তো এসবের কিছুতে তাই তার মত নেই ।সে এখনও ফাহিম নামক ছেলেটিকেই ভালোবাসে ।প্রীতিকে এক প্রকার জোড় করেই বিয়ের আসরে বসানো হয় ।সে চুপ করেই বসে আছে ঠিক ই অনবরত তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।হঠাৎ শোনা গেলো কোনো সমস্যার কথা ।বিয়েটা ভেঙে গেছে ,কারন সবার মুখে একটাই কথা ছিলো শাকিল একটা ধর্ষক ।প্রীতি এই কথা শোনা মাত্র ই সেখান থেকে উঠেই চলে যায় শাকিল এর কাছে ।যেয়েই একদম মুখে থুথু ছুড়ে দেয় ।শাকিল মাথা নিচুঁ করেই আছে ।পিছন থেকে প্রীতির বাবা বলে উঠলো কি কারনে ওকে ধরে নিচ্ছেন ?
–আপনার মেয়ে নিজেই তো মামলা করেছে ।সমাজে এমন পশু অনেক আছে ।আমরা তাকে ধরতেই পারতাম না ।আপনার মেয়ের সাথে যেটা হয়েছে সেটার কোনো প্রমান ই পাচ্ছিলাম না ।শুধু একটা চিঠি পেয়েছিলাম ওখানে কিন্তু কার হাতের লেখা বুঝতে পারিনি ।গতকাল ই শাকিল এর আরেক প্রেমিকা সুসাইড করেছে ।তার কাছে এই হাতের লেখার চিঠি পেয়েছি ।হয়তো ও যেদিন আপনার মেয়ের সাথে এমন করবে ঐ দিন ই সে এই চিঠিটা ঐ মেয়েকে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু ভুল বসতো সেটা ফেলে আসে ।আর বাকি কাজ টা তো একদম স্পষ্ট ই হয়ে গেলো,,(পুলিশ)
চারদিকে মানুষজন চুপ করে রয়েছে ।প্রীতি শাকিলকে চর মেরেছে চিৎকার করে বলছিলো,তুই জানোয়ার,তোর শিক্ষা যেনো আল্লাহ ই করে ।এখন কি জন্য এখানে এসেছিস ?
–কি জন্য আবার আপনার বাবার অর্থ সম্পওি ,,,সব প্রমান নিয়েই এসেছি ।(পুলিশ)
গতকাল ফেসবুক এ সুসাইডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ।সবার ই একটাই কথা এমন পশুর মৃত্যু চাই ।কিন্তু প্রীতি সে তো কিছু ই করেনি ?কেনো ই বা সে এমন পরিস্থিতির শিকার হবে ?সমাজের মানুষ গুলোও এখন যেনে যাবে ।সমাজ তাকে কখনই মেনে নেবে না ।বিয়ের এই চুপ থাকার মাঝেও কেউ একজন পিছন থেকে বলে উঠলো “ধর্ষিতা” ।প্রীতি অনবরত কাদঁছে ,এখন তার বাবা মাও চুপ রয়েছে ।শাকিলের ক্রাস ফায়ার ওয়ারন্ট করা হয়েছে ।প্রীতি কি করবে এখন ?বিয়ের মজলিস সব খালি হয়ে গেলো ।
—
মাঝ পথে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় কি করবে ফাহিম বুঝে উঠতে পারে না ।ভাবনায় সে এখনো ডুবে আছে ।এই গভীর রাতেও সুধু প্রীতির কথাই শুধু মনে পড়ছে ।প্রীতির কান্না দেখে তার বাবা কাছে এলো ।কাছে এসে বললো,,
–সময় টা এখন ই,,(একটু হেসে)
প্রীতি কোনো কথা না বলেই ।গাড়ি নিয়ে তার বাবা মা এর সাথে দ্রুত রওনা দিলো ।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা কখন মিলবে তাদের দুজনের ভালোবাসা ।রাতে রাস্তা খালি থাকায় দ্রুত গাড়ি চলছে ।গন্তব্যে পৌছে চলে গেলো বাসায় ।যেয়েই দেখলো ফাহিম উপরের এক পাশের বাসার রুম থেকে বের হচ্ছে ।প্রীতি কাদতে কদতে বললো,,
–এই তুমি ঐখানে কি করো ?বউ রেখে অন্য ঘরে যাও ?ছি: ছি: ,,,তুমিও শেষ পর্যন্ত এমন করলে ?এতো দূর থেকে আসলাম আর তুমি কি না ,,(কাদতে কদতে প্রীতি)
–আরে তেমন কিছু না,,(ফাহিম)
–মিথ্যা কেনো বলো ?নিজের চোখেই তো দেখলাম,,(প্রীতি)
–ভুল দেখেছো ,,সে ওখানেই থাকে ওর বান্ধুবির বাসা ঐটা আমি যখন থাকি না তখন সে ওখানেই থাকে ।আর আজকে তার আম্মুকে ফেলে এসেছি তাই সে আর আমার সাথে থাকবে না ।বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখো যাও,,(ফাহিম)
–দরকার নেই,,,
–তুমি এখানে কেনো ?বিয়ে করেই এসে পড়েছো ?কাল ই হানিমুন যাবে তাই এই রাতটা এখানে থাকবে নাকি ?শাকিল কোথায় দেখছি না যে,,(ফাহিম)
প্রীতি কোনো কিছু না বলে ফাহিম এর হাত ধরে ছাদঁ এ গেলো ।প্রীতি ফাহিমের হাতটা শক্ত করে ধরতে চেয়েছিলো কিন্তু ফাহিম ছেড়ে দিয়েছিলো ।হঠাৎ প্রীতি বলতে শুরু করলো,,,
–তোমার সাথে তিন মাস দেখা করিনি ।যেদিন তোমার সাথে দেখা করার কথা সেদিন যাচ্ছিলাম তোমার কাছেই কিন্তু সেদিন শাকিল নামক পশু আমাকে ক্লোরোফ্রম দিয়ে অচেতন করে ফেলে ।তার মুখে রোমাল ছিলো তাই চিনতে পারিনি ।তবে পুলিশ তাকে ঠিক ই ধরেছে তবে সেটা আজ ই ।সে জন্যই তোমার সাথে তিন মাস কথা বলিনি ।ভেবেছিলাম মরে যাবো কিন্তু পারিনি ।বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নেই ।আমাকে সমাজ মেনে নেবে না তাই কাউকে জানাই নি ।বাবা মা জানতো ।এখন তুমি ফিরিয়ে দিলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই ।আমি সত্যি ই তোমাকে ভালোবাসি ফাহিম,,,(প্রীতি)
ফাহিম একদম চুপ ।প্রীতি কোনো সারা পাচ্ছিলো না ,ভেবেছিলো হয়তো ফাহিম তাকে মেনে নেবে না ।নেবে ই বা কেনো তার পরিবারও মানবে না এমন ধর্ষিতাকে ।ফাহিম চুপ হয়েই রইলো ,যখন ফিরে আসবো তখন ই সে বলে উঠলো,,
–দুনিয়ার সব কিছু কি শরীর দিয়ে হয় ?আমি জানি না তোমাকে কতটা ভালোবাসি ।তবে তোমাকে হারালে যে আমি কতটা একা হয়ে যাবো সেটা হয়তো বুঝাতে পারবো না ।তোমার সাথে যা হয়েছে অনেক খারাপ হয়েছে ।তবুও তোমাকে হারাতে পারবো না ।আমি এখনও সেই ঠান্ডা হাত গুলো ধরে হাটতে চাই ।আমি চাই তোমাকেই ,,,,(ফাহিম)
আমি ফাহিম দুজনের মাঝেই এখন নিরবতা ।তবুও কান্না করে প্রীতি বলতে লাগলো,,
–এই ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করবে ?(প্রীতি)
–শরীর দেখে প্রেম করলে তো কবেই করতে পারতাম ।আমি চাই একজন ভালো মনের মানুষ ।তুমি যদি ভাবো যে তুমি অপবিত্র তবে আমার ভালোবাসার স্পর্ষেই না হয় হলে পবিত্র,,,হারাতে পারবো না কখনই,,,(ফাহিম)
প্রীতি কোনো কথা না বলেই ফাহিমকে জড়িয়ে ধরেছে ।দুজনেই কান্না করছে ।
—
ফাহিম যেয়ে তাসফিয়াকে নিয়ে আসলো ।কিন্তু সে কোনো ভাবেই আসে না ,তার একটাই কথা”আম্মু না আসলে যাবো না” ।ফাহিম তবুও ঘরে নিয়ে আসতেই দেখে তাসফিয়া দেখে যে তার আম্মু বসে আছে ।তাসফিয়া কোনো কথা না বলেই জড়িয়ে ধরলো প্রীতিকে ।সারা রাত আর ঘুমাতে পারেনি প্রীতি ।তাসফিয়া একটার পর একটা কথা বলেই চলেছে,প্রীতিরও বিরক্তি নেই ।
সকালে উঠে তাসফিয়া তার আম্মুকে নিয়ে টিভি দেখছে ।হঠাৎ টিভিতে ভেসে উঠলো,,”ব্রেকিং নিউজ,শাকিল নামক এক ধর্ষক ও তিন মেয়েকে অপহরন করার কারনে জনসম্মুখে ক্রস ফায়ার করেছে পুলিশ এর একটি দল” ।প্রীতি যেনো একটু শান্তি পেলো ।পেছনে ফাহিমও ছিলো,,।প্রীতি তাকে দেখেই বলে উঠলো,,
–আমি তো তোমাকে কিছু ই দিতে পারলাম না ,,(প্রীতি)
–ভালোবাসা দিচ্ছো এতেই হবে আর কিছুই লাগবে না,,(ফাহিম)
সারাদিন ঘুরেছে তারা,সকলের মুখেই ভালোবাসা পাওয়ার হাসি ।দুজনের মাঝখানে হাত ধরে হাটছিলো তাসফিয়া ।সে বল উঠলো,,
–বাবা,আম্মুর দিকে তাকায় থাকো কেনো ?আমি কি দেখতে একটুও সুন্দর না ?(তাসফিয়া)
এই কথা বলেই তাসফিয়া কাদঁতে শুরু করলো ।প্রীতি তাকে আদর করে বললো,,
–আমার মেয়েটাই বেশি সুন্দর ,,(প্রীতি)
আজও তাদের মুখে পূর্নতার হাসি,,,
“”””সমাপ্ত”””