#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_43
স্নিগ্ধ সকালে একফালি রোদ চোখে মুখে পড়তেই নাহিদের ঘুম ভেংগে গেল।নাহিদ চোখ মুখ কুঁচকে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো।সামনেই একটা ছায়া ভারী পর্দা সরিয়ে নিয়েছে।বিরক্তিতে চোখ কচলে নাহিদ বললো
-” সকাল সকাল ডিস্টার্ব করছিস কেনো?”
আসফি কাছে এসে নাহিদের গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে বললো
-“উঠ শালা।রাতে আমার ঘুম হারাম করে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছিস।”
নাহিদ আড়মোড়া ভেঙে উঠে চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো
-“যা কাজ দিয়েছি করেছিস?”
-“করেছি মানে? সেই ভোরে উঠে তোর কাজের জন্য বেড়িয়েছি।সব রেডি তুই উঠ।”
নাহিদ দ্রুত উঠে পড়লো।ফ্রেস হয়ে দ্রুত কাজে লেগে পড়লো।নাহিদের রুমে কয়েকজন লোক কিছু ফার্নিচার সেট করতে লাগলো।একটা ভীষণ সুন্দর কারুকাজ করা ভ্যানিটি রুমের জানালার পাশে সেট করলো নাহিদ।তার প্রিয়তমা এই স্থানে দাড়িয়ে যখন তৈরি হবে, দমকা হাওয়ার দল সেই পরীর রেশমি ঘন চুলে হামলে পড়বে।তার পরী সেই হামলায় এলোমেলো হওয়া কেশ কোমল হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করবে।ইসস!! সত্যি সব কেমন সপ্ন স্বপ্ন লাগছে। নাহিদ মনে মনে ভীষণ এক্সাইটেড হলেও আসফির সামনে সেটা প্রকাশ করছে না।এটাই তার স্বভাব। কখনোই নিজের মনের অবস্থা কাউকে বুঝতে দেয়না।
নাহিদ কাভার্ড এর এক পাশ থেকে সব কাপড় সরিয়ে ফেলছে। আসফি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।অবশেষে এই রসকষহীন প্রাণী সেটেল হচ্ছে।এমনটাই তো সে চেয়ে এসেছে।নাহিদের এই খাপছাড়া জীবনে একটা শক্ত পিছুটান থাকুক।যার তাগিদে ছেলেটা ঘরমুখী হবে।কাজের মাঝে নিজেকে এতটাই ডুবিয়ে রেখেছে যে ঠিক মত খাওয়াদাওয়া অব্দি করে না।নিজের যত্ন করে না। এবার একজন মানুষ আসছে।যে এই মেয়রকে শাসন করবে।
নাহিদ যতই নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখুক নিজেকে গম্ভীর আর অনুভূতি শূন্য প্রকাশ করুক, আরজুর ব্যাপার আসলে ছেলেটা দুর্বল হয়ে পড়ে।এতো গুলো বছর নিজের অনুভূতি থেকে পালিয়ে বেরিয়েছে।কিন্তু আজ ছেলেটি চোখে মুখে সুখের অভা ছড়িয়ে পড়েছে।চাইলেও এটা আসফির সামনে লুকাতে পারবে না।
নাহিদ নিজ হাতেই রুমটাকে গুছিয়ে নিচ্ছে। আসফির দিকে চোখ পড়তেই দেখলো সে মুচকি হাসছে।নাহিদ কাজে মনোযোগ দিয়ে বললো
-“বেকুবের মতো হাসছিস কেনো?”
-” দেখছি।মেয়র নিবরাস নাহিদকে প্রেমিক হিসেবে দুর্দান্ত লাগছে।”
নাহিদ বাঁকা হেসে বললো
-” আমি আর প্রেমিক? ওয়ার্ডটা আমার সাথে ঠিক যায়না।”
-“আমার চোখে দেখা আসল প্রেমিক তো তুই।এতবছর ধরে একজনের প্রেমে স্টেবল আছিস।অথচ তার কাছে কোনো প্রত্যাশা রাখিসনি।ভালোবাসার আবদার নিয়ে কখনো মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতে যাসনি।মেয়েটাকে বলিসনি পর্যন্ত।তোর মত অদ্ভুদ ভাবে যত্ন নিয়ে আমি নিজেও ভালোবাসতে পারিনি।দুর থেকে ভালোবাসাকে কি করে আগলে রাখতে হয় সেটা তোর কাছথেকে শিখেছি।আমার এখনো মনে আছে সেদিনের কথা। কিশোরী আরজু ভাবী কে কয়টা ছেলে ডিস্টার্ব করত,একদিন তো ভাবির ফ্রেন্ড শুভকে অনেক মারধর করলো।খবর পেয়ে সেদিন পাগলের মতো ছুটে গেলি। আমরা সবাইও তোর পিছনে ছুটলাম।সেদিন ছেলে গুলোকে কি বেদম পিটিয়েছিলাম আমরা।আর তুই সেই ছেলেটার হাত ভেঙে দিলি যে আরজু ভাবীকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছিলো। আজও ছেলেটার হাত ঠিক হয়নি।আরজু ভাবী সেদিনও তোকে খেয়াল করতে পারেনি।শুভকে কোলে নিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিল।বোকা বাচ্চা ভাবী আমার দেখতেই পেলো না তার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে এক ছাত্রনেতা কেমন হিংস্র হয়ে উঠলো।আরজু ভাবীর কান্নারত মুখখানা দেখে তুই কতটা উন্মাদ হয়ে সেই ছেলেটাকে পিটিয়েছিলি,সেটা মনে পড়লে গা শিউরে উঠে আমার।সেদিন আমি প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছি,আমাদের ছাত্রনেতা যে পলিটিক্স ছাড়া কিছুই বুঝেনা সেই ছেলেটা একটা বাচ্চা মেয়েকে গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে।তার কঠিন হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি ঝরে পড়েছে।”
নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বারান্দার কাচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে টাউজারের পকেটে হাত গুঁজে দিল।এক দৃষ্টিতে সুইমিংপুলের দিকে তাকিয়ে বললো
-” আমি কি ঠিক করছি আসফি? আরজুকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে তার জীবনটা নষ্ট করছি নাতো?”
আসফি নাহিদের কাধে হাত রেখে নরম সুরে বললো
-” মোটেও না।ভুলে যাসনা আরজু ভাবী তোর প্রতি ভীষণ দুর্বল।মেয়েটা তোকে ভালোবেসে তোর হাত ধরেছে।তুই মোটেও ফোর্স করিসনি।সৃষ্টিকর্তা নিজে তোদের ভাগ্যে এক হওয়া লিখে রেখেছে।নাহলে যেই মেয়ের কাছথেকে তুই এতো গুলো বছর দূরে দূরে থাকলি সেই মেয়েটাই দুর থেকে তোকে গভীর ভাবে ভালোবেসে বসে আছে।এটা ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই না।”
নাহিদ আর কিছুই বললো না।মনে মনে ভাবতে লাগলো গতকালের কথা।নাহিদ যখন আরজুকে প্রশ্ন করেছিলো তার সাথে আসবে কিনা? আরজু বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে বলেছিলো
-” আমি অবশ্যই আপনার সাথে যেতে চাই।কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সাথে থাকার ইচ্ছা কার হয়না বলুন? কিন্তু আমি খালামণিকে আর কষ্ট দিতে চাই না।আমি চাই খালামনির সম্মতিতে আপনার রাজ্যে পদার্পণ করতে।”
আরজু আর কিছুই বলেনি।নাহিদ নিজেও কোনো প্রশ্ন করেনি।জুবায়ের আহমেদ পরিস্থিতি সামলে নিলেন।আজকের নাহিদকে দেখে তার মনে অদৃশ্য ভরসার সৃষ্টি হচ্ছে।তার সামনে বসা ছেলেটার ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি ভালো করেই জানে।তাদের প্রত্যেককে খুন করে গুম করে দিতে এক মিনিটও লাগবে না।তার এক ধমকে জুবায়ের আহমেদ নিজেও ভরকে যাবে।সেদিন সাবা যেই ভাবে ছেলেটার গায়ে হাত তুললো অন্য কেউ হলে হয়তো সাবার লাশ পাওয়া যেতো।কিন্তু ছেলেটা নিজের কোনো ক্ষমতার প্রয়োগ করছে না।বরং সুশৃংখল ও শালীন ভাবে তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে আরজুকে নিয়ে যেতে চাইছে।জুবায়ের আহমেদ অনেক কিছু ভেবে নাহিদকে শান্ত সুরে বললেন
-“বিয়ে যেহেতু করেই নিয়েছো সেখানে আমাদের আরজুকে বাঁধা দেয়ার কিছু নেই।তোমাকে আমরা বিন্দু পরিমাণ ট্রাস্ট করতে পারছি না।কারণটা তুমি ভালো করেই জানো।তবে কেনো যেনো মনে হচ্ছে তোমাকে একটা সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।আরজু আমাদের মেয়ের চাইতে কোনো অংশে কম না।ওকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবেসেছি।সাবা আরজুর প্রতি বেশ সেনসিটিভ।আরজুর হুট করেই জীবনের এতো বড়ো সিদ্বান্ত নেয়াটা সাবা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পড়ছে না।মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কিছুই ভেবে রেখেছে।আরজু এমন একজনকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়েছে যাকে সাবা তিল পরিমাণ বিশ্বাস করতে পারে না।যাকে প্রচন্ড ঘৃনা করে।আজ আরজুকে তুমি এই ভাবে নিয়ে গেলে সাবা ভীষণ কষ্ট পাবে।হয়তো অভিমান করে আরজুর সাথে কোনো কথাই বলবে না।এতে আরজু নিজেও সস্তি পাবে না।
সময় অনেক ক্ষতকে সরিয়ে তুলে।আমি জানি তোমার ক্ষমতা আর অধিকার দুটোই আছে আরজুকে নিয়ে যাওয়ার।তবুও বলবো তুমি দুটো দিন সময় নাও।আমি সাবাকে বুজিয়ে বলার চেষ্টা করবো।আমি চাইনা আরজু মনোকষ্ট নিয়ে নতুন জীবন শুরু করুক।”
নাহিদ সম্মতি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।বাসার নিচে নেমে গাড়িতে উঠার আগে নাহিদ একবার আরজুর বারান্দায় তাকালো।দেখলো আরজু বারান্দায় দাড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রাতের নিকষ কালো আঁধারের কারণে প্রিয়তমার মুখখানা স্পষ্ট নয়।কিন্তু চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় প্রিয়তমার গালে মুক্তার মতো কিছু ঝলমল করছে।নাহিদ বুজলো তার প্রিয়তমা অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
নাহিদের মনটা একরাশ বেদনায় ঝরঝরিত হলো।আজ আরজুকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু শূন্য হতে যেতে হচ্ছে। আরজুর অবস্থান চিন্তা করে নাহিদ আরজুকে জোর করেনি।নাহিদ কখনোই আরজুকে কোনো কিছু করতে জোর করেনি।আজ যদি সে আগের সেই একরোখা,রাগী নাহিদ হতো তবে আরজুকে হয়তো তুলে নিয়ে যেতো। কারো মতামতের পরোয়া করতো না।কিন্তু সেই নাহিদ থেকে আজ বর্তমান নাহিদ হওয়ার পেছনে এক মাত্র কারণ ছিলো তার প্রিয়তমা।নাহিদ কয়েক পলক আরজুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়িতে বসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।গাড়িতে বসেই সে আসফিকে দিয়ে ঘরের কিছু ফার্নিচার আর আরজুর জন্য বেশ কিছু শপিং করতে বললো।নাহিদের বিশ্বাস আরজু খুব জলদি তার কাছে থাকবে।জুবায়ের আহমেদ যথেষ্ট বুদ্ধিমান ব্যাক্তি।তিনি নিশ্চই অকারণে নাহিদকে আশ্বাস দেয়নি।
******************
জাহিদ সকাল সকাল তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।পাশেই তার ছোট বোন জেরিন নাস্তা করছে।অন্য পাশে নীতি বসে টোস্টে কামড় বসাচ্ছে।নীতি তার চাচাতো বোন।তারা সমবয়সী।ভীষণ স্মার্ট আর সাস্থ্য সচেতন সে।দেখতে মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দর।নিজেকে মেনটেইন করে রাখতে বেশ ভালোবাসে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ একটিভ।কিন্তু মেয়েটার মধ্যে প্রচুর অহংকার।সেটা রূপের নাকি প্রতিপত্তির সেটা জাহিদ জানে না।
জেরিন একপ্রকার নাক মুখ দিয়ে খাবার গিলছে।এই মেয়ে মোটেও স্বাস্থ্য সচেতন না।সারাদিন ফাস্টফুড আইটেম খেতে বেশ পছন্দ করে।তবে এতো খাবার কোথায় যায় জাহিদের জানা নেই। পাট কাঠির মতো চিকন। জাহিদ হেসে জেরিনকে বললো
-” তোর এই অবস্থা কেনো?বুলেটের গতিতে দৌড়াচ্ছি কেনো?”
জেরিন দ্রুত খাবার গিলে বললো
-“ভাইয়া মজা নিবে না।আমার ফোনের অ্যালার্ম তুমি চেঞ্জ করেছো তাইনা? আমি তোমার জন্য আধা ঘণ্টা লেট।”
জাহিদ প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে বললো
-“সামনে পরীক্ষা রেখে তুই রাত দুইটায় অনলাইনে ঘুরিস।তোর মাথা ফাটাইনি এটাই বেশি।”
নীতি খেতে খেতে বললো
-” আমাদের প্রোফাইলে রাত দুটোয় তোকে স্টক করতে বলেছে কে?”
-“বাড়ির মেয়েদের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না? তোরা কি সুপথে না কুপথে চলছিস সেটা তো জানতে হবে।”
জেরিন কপট রাগ দেখিয়ে বললো
-” একদম ফালতু কথা বলবে না।তোমার খবর আমি জানিনা ভেবেছো? এক সিনিয়র মেয়ের পেছনে ফেবিকলের মতো লেগে আছো।কিন্তু আফসোস ওই মেয়ে তোমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।”
জেরিনের কথায় নীতি হেসে উঠলো।
জাহিদ হা হয়ে জেরিনের দিকে তাকালো।এই মেয়ে ভবিষ্যতের ভালো ডিটেকটিভ হতে পারবে।সবার গোপন বিষয় সম্পর্কে এই মেয়ে সবার আগে জানতে পারে। নীতি হেসে বললো
-“মেয়েটাকে দেখতে হবে তো। আমাদের চকলেট বয় কে পাত্তা দিচ্ছে না ভাববার বিষয়।”
তখনই জাহিদের মা টেবিলে এসে বসলেন।তার সারা গায়ে আভিজাত্যের ছোঁয়া বিদ্যমান। গায়ে জড়ানো দামী মসলিন শাড়ি যা তার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নারীটির মুখে রয়েছে গাম্ভীর্যতা।জাহিদ চোখ গরম করে জেরিনকে হুশিয়ারি দিয়ে দিলো।মাকে কিছু বললে খবর আছে।জেরিন মুখ ভেংচে খাওয়ায় মন দিলো।জাহিদের মা বললেন
-” জেরিন ঠিক মতো খাও।ক্লাসে লেট হলে সমস্যা নেই।দরকার পড়লে তোমার জন্য আবার ক্লাস রিপিট করবে।”
জেরিন খাওয়া শেষ করে দ্রুত চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে বললো
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই মম।আমি রুলস মোতালেব চলতে চাই।আমার জন্য রুলস বদলে যাক তেমনটা চাইনা। ওকে আসি মম।”
বলেই মায়ের গালে আলতো চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো।সানজিদা মাহমুদ মুচকি হেসে জাহিদকে বললেন
-” আমার রাজপুত্রর কি অবস্থা?মমকে আজকাল একদম সময় দাওনা।”
জাহিদ হেসে বললো
-” তেমন কিছু না মম।নতুন ভার্সিটি, নতুন বন্ধুবান্ধব নিয়ে একটু ব্যাস্ত।”
নীতি বিরবির করে বললো
-” বন্ধু না ছাই।এক মেয়ের পেছনে ইফটিজারের মতো ঘুরতে ব্যাস্ত।”
জাহিদ নীতিকে চোখ রাঙালো। সানজিদা মাহমুদ গম্ভীর মুখে বললেন
-” হুম গুড।তবে বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই ক্লাস মেনটেইন করবে। লো ক্লাসের কারো সাথে মিশতে যেওনা।তোমার স্ট্যাটাসের সাথে বিষয়টা মানানসই হবে না।”
জাহিদ মায়ের কোথায় খানিকটা অসন্তুষ্ট হলো।তার মায়ের এই একটা বিষয় জাহিদ ভীষণ অপছন্দ করে।তখন নীতি আর মায়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পায়না।
****************
সাবা খানম নাস্তা রেডি করে সবাইকে ডাকলেন।আরজু ভয়ে ভয়ে টেবিলে পৌঁছালো।সাবা খানমের মুখটা তখনও থমথমে।আরজু তারার দিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটা মুখ মলিন করে তাকিয়ে আছে। মানে সকাল থেকে বেশ কয়টা ঝাড়ি খেয়েছে সে।সাবা খানম সকলকে নাস্তা সার্ভ করছেন।জুবায়ের আহমেদ নিজেও সাবা খানমের মুড বুঝতে পারছে না।আরজু নাস্তা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।খাবার তার গলা দিয়ে নামছে না। অনেকক্ষন নীরবতার পর সাবা খানম অবনীকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“অবনি বলে দিস, কেউ যদি ভেবে থাকে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেই লেখাপড়া চাঙে তুলে ঘুরবে তাহলে যেনো ভুলে যায়।এমনটা হলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
খালামণি কথায় আরজু অবাক হয়ে জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকালো।তিনি মুচকি হেসে সামান্য মাথা ঝাকালেন।আরজু সেদিকে তাকিয়েই ঠোঁট উল্টে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।সেই কান্না কষ্টের নাকি সুখের অবনি ঠাহর করতে পারলো না।শুধু বুঝতে পারলো তার আরজু আপু খুব জলদি তার নেতা সাহেবের কাছে চলে যাবে।তার মা নীরব সম্মতি প্রকাশ করেছে।অবনির দু চোখ মুহূর্তেই ভিজে উঠলো।আরজু আপুকে ছাড়া থাকবে কি করে?পরমুহুর্তে নিজেকে সামলালো।দিন শেষে আরজু আপু নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাচ্ছে।এই খুশিতে ওই নিশান ব্যাটাকে একটা জোরসে চুমু খেতে মন চাইছে।এই সিটির মেয়র তার দুলাভাই।ইসস!! দারুন হবে ব্যাপারটা।”
#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_44
ভার্সিটিতে ঢুকতেই আজ আরজুর কেমন অদ্ভুত লাগছে।সচরাচর শুভর সাথে আসা হয়।কিন্তু দুদিন যাবত শুভ তার কোনো কল রিসিভ করছে না।শুভর এই এড়িয়ে চলা আরজুর কোমল হৃদয়ে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে।আরজু দীর্ঘশ্বাস ফেললো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ঠান্ডা কিছু গলায় ঢালতে হবে।তাই ক্যান্টিনে চলে আসলো।ক্যান্টিনের দরজায় আসতেই দূরের চেয়ারে শুভকে দেখতে পেলো।পেছন থেকেই আরজু বেশ ভালো করে বুঝে গেলো এটা শুভ।পাশে রামিম,সাবিহা আর ফুয়াদ বসে আছে।আরজু শুভর মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে।পাগলটা নিশ্চই ভীষণ ক্ষেপে আছে।আরজু ধীরো পায়ে টেবিলের কাছে পৌঁছালো।ফুয়াদ তখন কিছু একটা বলছিলো।আরজুকে দেখে থেমে গেলো।
শুভ পেছনে না ফিরেও বুঝতে পারলো পেছনের মানুষটি কে।এতো বছরে আরজুর গায়ের পারফিউম শুভর মুখস্ত হয়ে গেছে।শুভ নিচের ওষ্ঠ দাঁত দিয়ে চেপে ধরে নিজেকে সামলালো।শুভ হাতের আধ খাওয়া চায়ের কাপ টেবিলে রাখলো।আরজু ঠিক শুভর পাশেই চেয়ারে এসে বসে পড়েছে।শুভ তার দৃষ্টি আশেপাশে বুলালো।চোখ জোড়া ভীষণ জ্বলছে।আরজুর দিকে সে তাকাবে না।বুকের তাজা ক্ষততে এখনো রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।আরজুর দিকে তাকানোর মতো কঠিন কাজ শুভ করতে চায়না।
আরজু থমকে শুভর দিকে তাকিয়ে রইলো।চঞ্চল, শুভ্র মুখখানা মলিন হয়ে আছে।চোখের নিচে কেমন কালো হয়ে গেছে।আরজুর বুকটা ধক করে উঠল।শুভর মলিন মুখটা আরজুর বুকে তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি করছে।শুভর খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে সারা মুখ ভর্তি।মনে হচ্ছে কতদিন ধরে শেভ করে না।আরজুর চোখ পড়লো শুভর ঠোঁটের কোনে।হালকা কালচে হয়ে আছে।আরজু বুঝতে পারলো না এটা কিসের দাগ।শুভকে এতটা বিধ্বস্ত অবস্থায় আগে কখনো দেখেনি আরজু।আরজু শুকনো ঢোক গিলে শুভর চিবুকে যেই স্পর্শ করতে যাবে ওমনি শুভ দাড়িয়ে গেলো।টেবিল থেকে ব্যাগ নিয়ে কাধে তুলে নিলো।আর গম্ভীর স্বরে রামিমের উদ্দেশে বললো
-” আমার কাজ আছে। আজ ক্লাস করবো না।তুই আমার জন্য নোটস কপি করে রাখিস।”
বলেই শুভ সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো।ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে শুভ সোজা হাঁটতে লাগলো।সামনের সব কিছুই ঝাপসা লাগছে।শুভ খেয়াল করলো তার গাল বেয়ে তরল কিছু নেমে যাচ্ছে।শুভ দ্রুত হাতের উল্টো পিঠে সেই তরল পদার্থ মুছে নিলো।তার সামনে দিয়েই যাচ্ছিল জাহিদ।শুভকে দেখে দ্রুত সালাম দিলো।কিন্তু শুভ কোনো জবাব দিলো না।হয়তো তার কান অব্দি পৌঁছায় নি।জাহিদ অবাক হয়ে শুভর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।সিনিওর ভাই হিসেবে শুভকে জাহিদের ভীষণ পছন্দ।সবসময় হাসি খুশি থাকা মানুষটির মুখ জুড়ে ছিল বিষাদের ছায়া।মূলত “বন্ধু মহলের” প্রত্যেকেই তার ভীষণ পছন্দ।এক একটা কিউট এর ডিব্বা।তবে সবার মাঝে একজনকে তার বিশেষ পছন্দ।বিশেষে চাইতেও বিশেষ।
************
ক্যান্টিনের নির্দিষ্ট টেবিলেই বন্ধু মহলের আড্ডা চলে।চলে হৈ হুল্লোর।কিন্তু আজ সেই টেবিল শান্ত।আরজু মাথা নিচু করে বসে আছে।চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে কোলে পড়ছে। আরজুর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।শুভ চলে যাওয়ার পর পর ফুয়াদ বেরিয়ে পড়েছে।আরজু স্তব্ধ হয়ে শুধু মাত্র দেখেছে।ফুয়াদ ও তার সাথে অভিমান করে বসে আছে?আরজুর এখন সব কিছুই বিষাদ লাগছে।সাবিহা আরজুকে এই ভাবে কাদতে দেখে অস্থির হলো। আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-” মন খারাপ করিস না।একটু সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আরজু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো
-” সবাই আমাকে এই ভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছে কেনো?আমি কি জঘন্য কোনো অপরাধ করেছি?”
রামিম আরজুর দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে শান্ত সরে বললো
-” তুই ভুল করেছিস নাকি ঠিক সেটা নিয়ে যাচাই বাছাই করতে যাবো না।তোর মন যেটা গভীর ভাবে চাইতো তুই সেটাই করেছিস।মনের কাছে মস্তিষ্কের হেরে যাওয়াটা আশীর্বাদ সরুপ।তোর মতো এই আশির্বাদ সবার জীবনে আসে না।”
কথাটা বলে রামিম আড়চোখে সাবিহার দিকে তাকালো।সাবিহা রামিমের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
রামিম আবার বললো
-” আমাদের এই গ্রুপে তোকে সবাই সব চাইতে ভীতু বলে জানে।কিন্তু আসল কথা হলো তুই সবচাইতে সাহসী।নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস কেউ দেখতে পারেনি।দিনের পর দিন মানুষটির পাশে থেকেও তাকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস কেউ দেখায়নি।পাওয়া না পাওয়ার হিসাবটাই সবার আগে সবাই কষেছে।তাই শুধু নীরবে ভালোবেসেছে।মুখ ফুটে বলার সাহস টুকু দেখাতে পারেনি।মন আর মস্তিষ্ককে সাথে যুদ্ধ করে মন বার বার হেরেছে। কিন্তু তুই সাহস করে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছিস।এতো দূরত্বের মাঝেও এমন একজন মানুষকে নিজের ভালোবাসা বক্ত করেছিস যার সামনে দাড়ানোর সাহস আমরা দেখাতে পারবো না।একটা দুর্লভ,অসম্ভব ভালোবাসাকে নিজের করে নিতে পারার মতো মেয়েটা আর যাই হোক দুর্বল না।তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস। এখন তোর ডিসিশনে কে খুশি হলো কে দুঃখ পেলো সেটা হিসাব করতে যাসনা। শুধু মনে রাখিস ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার ভাগ্যটা সবার থাকে না, কিন্তু সেই ভাগ্য তুই নিজে ক্রিয়েট করে নিতে পেরেছিস। তাই পারিপার্শ্বিক চিন্তাকে সাইডে রেখে নিজের নতুন জীবন শুরু কর।”
আরজু মনোযোগ দিয়ে রামিমের কথা শুনছিলো।আরজু ভেবেছে রামিম নিজের আর সাবিহার বিষয় নিয়ে কথাগুলো বলেছে।কিন্তু রামিমের কথার মূল বিষয়টি ধরতে পারেনি।তবে এটা বুজলো রামিম তার সিদ্ধান্তকে পজিটিভ ভাবে নিয়েছে।সাবিহা অসহায় দৃষ্টিতে রামিমের কথা গুলো শুনছিল। রামিমের বলা প্রতিটি কথার তাৎপর্য সাবিহা বুঝতে পারছে।সবাই তার ভালো বন্ধু।পরিস্থিতি এমন যে না শুভকে দোষারোপ করা যাচ্ছে না আরজুকে।সবাই যেনো যার যার অবস্থানে ঠিক।
রামিমের আজ শুভর প্রতি খানিকটা অভিমান হলো।রামিম আর সাবিহার মধ্যে স্ট্যাটাস এর পার্থক্য আছে।যার কারণে রামিম চাইলেও সাবিহাকে নিজের জীবনে জড়াতে পারে না।বাবার পরীকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই তার কাছে।কিন্তু শুভ আর আরজুর মধ্যের তেমন কোনো স্ট্যাটাস পার্থক্য নেই। দুজনেই একটা মধ্যবিত্ত স্ট্যান্ডার ফ্যামিলি বিলং করে।ছোটবেলা থেকে এক সাথে বড়ো হয়েছে তারা।নিজেদের জেনেছে,বুঝেছে।আরজু কেমন চটপটে, অশান্ত সেটা শুভ ভালো করেই জানে।শুভ নিজেও সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করে এসেছে। নিজের মনের হাল আকার, ইঙ্গিতেও আরজুকে বোঝায় নি।আরজু যেহেতু শুভর অনুভূতি বুঝতে পারছিলো না,তখন শুভর আরজুকে খোলাখুলি সবটা বলা প্রয়োজন ছিল। রামিমের বিশ্বাস নাহিদ স্যার আরজুর জীবনে আসার পূর্বেই যদি শুভ নিজেকে মেলে ধরতো, আরজু কোনো দিন শুভকে ফিরিয়ে দিতো না।শুভকে নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে শুরু করতো।মনের কুঠিরে শুভর জন্য ভালোবাসার বীজ বপন করতো।
*********
খানিকক্ষণ পর জারা আসলো।আরজুর ফোলা ফোলা লাল চোখ দেখে অস্থির হয়ে বললো
-” তোর অবস্থা কেন? আবার কেঁদেছিস নাকি?মুখটা এমন রেড চেরি হয়ে আছে কেনো?”
আরজু কিছুই বললো না।সাবিহা জারাকে সবটা বলতেই জারা শুভর উপর ভীষণ রেগে বললো
-” ওই শালার মাথায় সমস্যা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে মাথায় একটা বাড়ি মারলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে।এই বেকুব আরজু এমন কি করে ফেলেছে?সামান্য একটু বিয়েই তো করেছে।চিকেন রোস্ট খেতে পারেনি বলে এতো রাগের কি আছে? আমিও তো খাইতে পারিনাই।এই আরজু, নেতা জিজুকে বলে ওই দুই খাদককে আচ্ছা মতো চিকেন রোস্ট খাওয়াতে বলবি।যাতে ওই ছাগল দুটোর পেট ফেটে যায়। বাই দ্যা ওয়ে আমাকেও একটু ট্রিট দিতে ভুলিস না যেনো?”
জারার কথায় রামিম,সাবিহা দুজনেই হেসে উঠলো।আরজু নিজেও মুচকি হাসলো।আরজু নাক টেনে বললো
-” রিমির কি হয়েছে বলতো?দু দিন যাবত ভার্সিটিতে আসছে না কেনো? ও কি অসুস্থ?”
সাবিহা স্যান্ডউইচে কামড় বসাতে বসাতে বললো
-” আজকে সকালে কল করেছিলাম বললো তো আসবে।কিন্তু এখনো এলো না।”
রিমি আসলো ক্লাস শুরু হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে।চুপচাপ থাকা কিউট চশমা পড়া মেয়েটার মুখ খানাও মলিন।রিমি তাদের দেখে সামান্য হাসার চেষ্টা করেছে।কিন্তু তার মিথ্যা হাসি তাদের ধরতে সময় লাগলো না।রিমি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে শুভকে খুঁজলো।কিন্তু শুভ বা ফুয়াদ কাউকে দেখতে পেলো না। জারা রিমিকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেয়ে বললো
-” তোরও কি কাঙ্গালী ভোজ খেতে না পারার জন্য মন খারাপ নাকি?”
রিমি কিছুই বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।জারা বিরক্ত হয়ে বির বির করতে করতে বললো
-” সব কাঙালের দল নিয়ে ঘুরতেছি।আমার ভবিষ্যত জামাইর পকেট ফাঁকা করতে এরা এক মিনিটও ভাববে না।”
ক্লাস শেষ করে যে যার যার মতো বাসায় ফিরতে লাগলো।জারা ভার্সিটি গেট থেকে বের হতেই জাহিদের মুখোমুখি হল।জাহিদ পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে ছিলো।জারা জানে এই বদমাশ তার জন্যই দাড়িয়ে আছে।জারা দেখে জাহিদ মিষ্টি হাসি হেসে বললো
-“কি অবাক কান্ড!! আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল। দেখেছেন ডেসটিনি আমাদের বারবার মিলিয়ে দিচ্ছে।”
জারা বুকে দুহাত গুজে দাড়িয়ে মাথা সামান্য হেলিয়ে ভাব নিয়ে বললো
-” ডেসটিনি!!আচ্ছা এই ডেসটিনি কে লিখছে? তুমি?”
-” আমি লিখলে আপনি এতক্ষনে আমার বাহুডোরে থাকতেন।”
জাহিদের কথায় জারা থতমত খেয়ে যায়।এই ছেলে চরম অসভ্য। মনের মধ্যে হঠাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো তার।জারা বেশ ঝাজালো ভাবে বললো
-” এই সিটির সবচাইতে পাওয়ারফুল লোকের সাথে আমার উঠাবসা আছে।এক বার তার কানে তোমার মতো ফাজিলের নাম ঢুকিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে।পিটিয়ে হার গোর ভেঙে দিবে।”
জাহিদ জারার খানিকটা কাছে এসে দাড়ালো।জাহিদের গায়ের কড়া পারফিউমের গ্রান জারার নাকে আসতে লাগলো।জারা চোখ বুজে আবার নিঃশ্বাস নিলো।কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম এইটা?জাহিদ জারার কাছাকাছি এসে ফিসফিসিয়ে বললো
-“আপনার ওই পাওয়ারফুল লোকদের আমি পকেটে নিয়ে ঘুরি।তবে একটা কথা জানেন? আমার সামান্যতম আঘাত লাগলে আপনি নিজেই ক্ষতবিক্ষত হবেন।কেনো হবেন সেটা নিজেই খুঁজে বের করুন।”
জারা হা করে জাহিদের কথা শুনছে।এই ছেলের মধ্যে কি কোনো ভয় নেই?
*****************
রাত তখন প্রায় আটটা।আরজু দের বাসার ডোরবেল বাজতেই অবনি দরজা খুলে দিলো।সামনের মানুষটির মিষ্টি মুচকি হাসি দেখে অবনি বিমোহিত হলো।সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটির উজ্জ্বল লোমশ হাতে রোলেক্স ওয়াচ।পাঞ্জাবীর হাতা পেশীবহুল বাহুর কনুই অব্দি ভাঁজ করা।অবনি হেসে বললো
-“জিজু আপনি ভুল প্রফেশনে চলে এসেছেন। আপনাকে তো সিনেমার পর্দায় মানাতো।একদম ড্যাসিং হিরো।”
নাহিদ হালকা হেসে নিজের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বললো
-“শালীকা তো দেখি আমার বউয়ের চাইতে এক ধাপ উপরে। বউ ব্ল্যাকমেইল করে আর শালীকা ফ্লার্ট।”
অবনি ফিক করে হেসে ফেললো।আর বললো
-” আপুর এই অদম্য সাহসিকতার জন্য সরকারের পক্ষ হতে পুরস্কৃত করা প্রয়োজন।”
-” পুরস্কৃত হবে কিনা জানিনা, তবে এই দুঃসাহসের জন্য আজকে তোমার আপুকে নিয়ে আমার রাজ্যে পাড়ি জমবো।”
অবনি হাসলো।বাসায় প্রবেশ করে বসার ঘরের দিকে যেতেই নাহিদ থমকে গেলো।হাসি হাসি মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।এই মানুষটিকে নাহিদ এই জায়গায় মোটেও আশা করেনি।তিনি আরজুদের বাসায় কেনো এসেছেন?