মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-৪৫+৪৬

0
1018

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_45

সোফার হাতলে বাহুর মধ্যে গ্রন্থি ঠেকিয়ে বেশ দাম্ভিকতার সাথে বসে আছে নাহিদ।তার কঠিন দৃষ্টি সামনের মানুষটির দিকে।নাঈম মাহমুদ নিজেও ছেলেকে একই ভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফিরিয়ে দিচ্ছেন।যেনো দৃষ্টি যুদ্ধ চলছে।জুবায়ের আহমেদ দুজনের দৃষ্টি যুদ্ধ দেখে গলা পরিষ্কার করে নম্র ভাবে নাঈম মাহমুদ এর উদ্দেশ্যে বললেন

-“স্যার প্লিজ চা নিন।”

জুবায়ের আহমেদের কথায় তার পাশে বসা সাবা খানম ক্ষিপ্ত চোখে তাকালেন। এই মানুষগুলোকে এত সম্মান দেখানোর কি আছে? তার তো মন চাইছে এই দুটোকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে। শুধুমাত্র আরজু তার হাত পা বেঁধে ফেলেছে।

নাঈম মাহমুদ খানিকটা হেসে বললেন
-” স্যার বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না বেয়াই সাহেব। বাচ্চাদের বদৌলতে আমরা এটা সুন্দর সম্পর্কে আছি।”

জুবায়ের আহমেদ মেকি হাসলেন।নাহিদের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সে মুখটা শক্ত করে রেখেছে।সুদর্শন ছেলেটার এই রাগান্বিত মুখশ্রী আসলেই ভয়ংকর।তিনি জানেন নাহিদের তার বাবার সাথে ভালো সম্পর্ক নেই।কেনো সেটা তার জানা নেই।বিষয়টা তাকে সাবা জানিয়েছে।নাহিদ সম্পর্কিত সকল তথ্য সাবা আরো কয়েক বছর আগেই নিয়েছে।

জুবায়ের আহমেদ বলতে শুরু করলেন
-” আরজু আমার নিজের মেয়ে না হলেও তাকে আমরা মেয়ের মতোই ভালোবেসেছি। ওর বিয়ে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন অনেক ছিল। কিন্তু সবকিছু এভাবে হবে আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। আমাদের জন্য এটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।তবু দিন শেষে ওরা যদি সুখে থাকে তাহলে আমাদের আর বাধা দেওয়ার কিছু নেই।তোমরা নিজেদের জীবনের পথ নিজেরাই বেছে নিয়েছো।কিন্তু পূর্বের সব আমি ভুলতে পারলেও আমার স্ত্রী হয়তো ভুলতে পারবে না।এতে আমি তাকে দোষারোপ করতেও পারিনা।

তোমরা নিজেরা বিয়ে করে নিয়েছো।এই বিয়ে আমাদের মানতে কষ্ট হলেও আরজুর জন্য আমরা সবটাই হজম করে নিয়েছি।দিন শেষে মেয়েটা ভালো থাকুক।তোমার অনুরোধে আমরা বিয়েটা আপাদত গোপন করলেও, আমাদের মেয়েটাকে এই ভাবে তোমার হাতে তুলে দিতে পারিনা।অন্তত সাবা রাজি না।কোন ভরসায় তোমার হাতে মেয়েকে তুলে দেই বলো?সত্যি বলতে তোমার উপর আমরা ভরসা করতে পারছি না।তাছাড়া তোমার কোনো গার্ডিয়ান ছাড়া মেয়ে কি করে বিদায় করি?

আমরা ইনডিসিশনে ভুগছিলাম।কিন্তু গতকাল তোমার বাবা আমাকে কল করে নিজে আরজুকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেন।আর আজ নিজে এসে আরজুকে সসম্মানে নিয়ে যেতে এসেছেন।একমাত্র তোমার বাবার ভরসায় আমরা আরজুকে যেতে দিচ্ছি।তোমার কাছে একটাই অনুরোধ নাহিদ, আমাদের মেয়েটা ভীষণ সংবেদনশীল।অল্পতেই নেতিয়ে পড়ে।তাকে কখনো কষ্ট দিয়ো না।পূর্বের ভুল গুলো রিপিট করো না।আমি চাইনা আরজু তোমার অন্য সত্তাটা দেখুক।মেয়েটা মানতে পারবে না।ভেঙে পড়বে।মেয়েটা তোমার শান্ত রূপ দেখে তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। তাকে একজন পলিটিশিয়ানের ঘৃণ্য রূপটা কখনো দেখতে দিও না।মেয়েটা সহ্য করতে পারবো না।আমরা চাইনা আরজু ওই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হোক।সে যেই স্বপ্নের রাজ্যে আছে তাকে সেখানেই থাকতে দাও।”

নাহিদ এতক্ষণ যাবত বেশ মনোযোগ দিয়ে সব কথাই শুনছিলো।তিক্ত হলেও কথা গুলো সত্যি।আরজুর কাছ থাকে দূরে থাকার অনেক গুলো কারণের মধ্যে এটাও একটা অন্যতম কারণ ছিলো।নাহিদ ছোট করে শ্বাস ফেলে শান্ত সুরে বললো

-” আপনি আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন। আমি কখনোই আরজুর অসম্মান করব না।”

সাবা খানম কড়া গলায় বললেন
-“আমার মেয়েটা যদি কখনো কষ্ট পায় কিংবা তার কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি তোমাকে ছাড়বো না। আমার হাত থেকে সবসময় পার পেয়ে যাবে ভেবনা।আরজুর ব্যাপারে আমি ঠিক কতটা কঠোর হতে পারি সেটা তোমার ধারণা নেই।আরজুর বাবা মা নেই বলে তাকে একা ভাববার ভুল করবে না।তুমি আরজুকে বোকা বানাতে পারবে কিন্তু আমাকে না। বোকা মেয়েটা যদি একবার বুঝতে পারতো নিজে থেকে কতো ভয়ংকর আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে তাহলে কোনোদিন এই কাজ করতে পারতো না।নিজ হাতে নিজের জীবনটা নষ্ট করছে। শুধুমাত্র ওর জন্যই তোমার মত একটা মানুষকে সহ্য আমি করছি।তবুও আমার মেয়েটার গায়ে যদি ফুলের টোকা অব্দি লাগে তাহলে তোমাকে ঘুন করতেও দ্বিধা বোধ করবো না।কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রেখো।”

নাহিদ শান্ত হয়ে গম্ভীর সুরে সাবা খানমের উদ্দেশ্য বললো
-“আপনি একদম ঠিক বলেছেন, আরজু জেনে বুঝে ভয়ংকর আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে।সেই আগুনের উত্তাপ তাকে সহ্য করতেই হবে।কিন্তু তাকে দগ্ধ হতে দেবো না।নিজের জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তাকে আগলে রাখবো।”

সাবা খানম রাগী চোখে নাহিদের দিকে তাকালো।এই ছেলেকে তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না।আরজু এমন একটা কাজ না করলে তিনি কখনোই আরজুকে এই ছেলের হাতে তুলে দিতো না।আরজুর এই চরম বোকামির জন্য তিনি কখনই তাকে মাফ করবেন না।

নাঈম মাহমুদ জানেন ছেলের মেজাজ সম্পর্কে। এতসব কঠিন আর তিক্ত কথার পরেও যে ছেলে এখনো শান্ত আছে এতেই তিনি অবাক হয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু ছেলের কোনো বিশ্বাস নেই। কখন পরিস্থিতি বিগড়ে দেয়।

তাই পরিস্থিতির সামাল দিতে নাঈম মাহমুদ বললেন
-” আমার ছেলেকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।আপনাদের নিরাশ করবে না।আচ্ছা!!আমার বৌমা কোথায় বেয়াই সাহেব।তাকে দেখার জন্য আমি তীর্থের কাকের মতো বসে আছি।পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আরো অনেক আগেই তাকে ঘরের লক্ষী করে নিয়ে যেতাম।আমার মরহুম বাবার ভীষণ পছন্দ ছিলো আরজুকে।নিজের নাতির জন্য নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছেন।কিন্তু ভাগ্য তখন সহায় ছিলো না।বার বার তাকে ফিরে যেতে হয়েছে।কিন্তু আজ দেখুন তার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে কিন্তু সেটা দেখার জন্য মানুষটা বেছে নেই।”

জুবায়ের আহমেদ অবনীকে ডাকলেন।অবনি তখন দরজার পেছনে দাড়িয়ে ছিলো।বাবার ডাকে আঁতকে উঠল।ঘরে এতো জরুরী মিটিং চলছে আর সেটা সে শুনবে না সেটা তো হয়না।দরজায় কান পাতার বিশেষ গুণ তার রয়েছে।কিন্তু অবনি তাদের অনেক কথার মানে বুঝতে পারলো না।কিছু একটা তো আছে যা সে জানে না।আম্মু নাহিদ জীজুর উপর কেনো এতো ক্ষিপ্ত ঠিক বুঝা গেলো না।চিন্তিত ভঙ্গিতে সে আরজুকে ডাকতে গেলো।

লাল জামদানি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আরজু। এতো লজ্জা এর আগে তার কখনোই লাগেনি।সামনের মানুষটির উৎসুক দৃষ্টি তাকে আরো অসস্তিতে ফেলে দিল।নাঈম মাহমুদ আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-” মাশাআল্লাহ। আমার বৌমার চাঁদ মুখখানা দেখে আমার ছেলের জীবনের সকল ছোট বড় ভুল মাফ করে দিলাম। জীবনে প্রথম আমার ছেলের কোন কাজে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট হয়েছি। গড ব্লেস ইউ।”

নাঈম মাহমুদের কথায় আরজু ভীষণ লজ্জা পেলো।কিন্তু নাহিদ যেনো ভীষণ বিরক্ত হলো।”আমার ছেলে” “আমার ছেলে” বলে কি জাহির করতে চায়?ভীষণ দায়িত্বশীল বাবা উনি? নাকি ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসেন? এসব নাটক নাহিদের একদম ভালো লাগছে না।

আরজু নিজের রুমে বসে লাগেজ গুছাচ্ছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁছে।জারা কপাল কুঁচকে আরজুর দিকে তাকিয়ে আছে।সাবিহা আর রিমি মন খারাপ করে সোফায় বসে আছে।একটু আগেই তারা এসেছে।শুভ আর ফুয়াদ তার কল রিসিভ করছে না।আর রামিম তো নিজের কাজে ব্যাস্ত।তার পাশেই অবনি অ্যাপল চিবুচ্ছে আর আরজুর কান্না দেখছে।আরজুর নাক টানার শব্দে বিরক্ত হয়ে বললো

-” আপু এমন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছো কেন?তোমাকে দেখতে খুবই বিচ্ছিরি লাগছে।এই অবস্থায় নাহিদ জিজু দেখলেই দৌড়ে পালিয়ে যাবে।”

আরজু কঠিন চোখে অবনির দিকে তাকালো।অবনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আপেল খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জারা বিরক্ত হয়ে বললো

-” এমন নাটক শুরু করছিস কেন?আমি শুটিং ফেলে তোর ড্রামা দেখতে এসেছি?সাবিহা একে ড্রামা বন্ধ করতে বল।”

আরজু নাক টেনে বললো
-” আমার কান্না তোর কাছে ড্রামা মনে হচ্ছে?তোদের সবাইকে ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝছিস না?”

জারা বিরক্ত হয়ে বললো
-” ইসস!! এমন ভাব করছে যেনো তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে বিদায় করছে।”

সাবিহা মলিন মুখে বললো
-” আহা !! জারা মেয়েটার সাথে এমন করিস না।আরজু তো ভয়ে কাদঁছে?”

রিমি নাকের সাথে চশমা খানিকটা এটে দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললো
-” কিসের ভয়?”

সাবিহা আফসোসের সুরে বললো
-“বেচারি আরজু নিজের ভার্জিনিটি লুজ এর ভয়ে কাদঁছে।আহা!!! এতদিনের সামলে রাখা সতীত্ব আজ গেলো বলে।”

সাবিহার কথায় রুমে হাসির রোল পড়লো।আরজু হতবম্ব হয়ে সকলের এই হাসি দেখছে। ছি!!!! কি বিভৎস হাসি।
জারা হাসতে হাসতে বললো

-” তোর মনে হয় এই আবাল সেই ভয়ে কাদঁছে? এই ভয়ংকর মহিলা দেখবি নাহিদ স্যার এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই মাইয়া না,নাহিদ স্যার ডেঞ্জার জোনে আছে। এ মাইয়া ভার্জিনিটি লুস করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

সাবিহা মুচকি হেসে বললো
-” ওমন হ্যান্ডসাম জামাই থাকলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।”

আরজু চোখ বড় বড় করে হা করে তাকিয়ে আছে। কান্নার কথা তো ভুলেই গেছে। আরজু দাতে দাঁত চেপে বললো
-“ছি!!নির্লজ্জের দলেরা। পাশে যে একটা টিনেজার বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে খবর আছে তোদের?”

জারা বললো
-” আরে আজ কাল ক্লাস সিক্সের বাচ্চারাও তিন চারটা বয়ফ্রেন্ড পাল্টায়।সেখানে অবনি এইচ এস সি ক্যান্ডিডেট।”

অবনি হেসে বললো
-” আমি তিন চারটা বয়ফ্রেন্ড পাল্টাইনি আপু কিন্তু অনেকগুলা ক্রাশ খেয়েছি। বর্তমানে একজন সিনিয়র এর উপর গুরুতর ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। আপুকে বিদায় করলেই আমার সিরিয়াল এসে পড়বে। আমি তো সেই খুশি।”

আরজু সবার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বললো
-” আজকে আমি চলে যাচ্ছি তোদের কি একটুও খারাপ লাগছে না। কোথায় আমার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদবি তা না মজা নিচ্ছিস?”

জারা মুখ ভেংচে বললো
-” যেখানে বিয়েতে রোস্টেই খেতে পারলাম না সেখানে তোর বিদায়ে কাঁদবো কেনো?”

আরজু ঠোঁট উল্টে বললো
-” আমার চাইতে রোস্ট তোর কাছে বড় হয়ে গেল?যা সব আমার বাসা থেকে বের হো।”

অবনি আবার আপেলে কামড় বসিয়ে বললো
-” একটু পরেই দেখা যাবে কে বাসা থেকে বের হয়।”
_________________
সাবা খানম নিজের রুমে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।আরজু ধীরে ধীরে রুমের দরজা খুলে সাবা খানমের পায়ের কাছে বসলো।সাবা খানম আরজুর দিকে তাকালেন না।আরজু দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।বিদায় জিনিসটা এতটা পীড়া দায়ক সেটা আরজু আগে উপলব্ধি করতে পারেনি।সামনের গম্ভীর মানুষটা তার মায়ের চাইতেও বেশি আপন।এই মানুষটার কাছ থেকে কোনোদিন দূরে থাকতে হবে সেটা ভাবতেও পারেনি।মেয়েদের এই কঠিন বাস্তবতাকে নীরবেই মেনে নিতে হয়।কিন্তু আরজুর এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে।আরজু সাবা খানমের কোলে মাথা ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। এই কোলে শুয়ে কতোদিন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে।কষ্ট পেলে এই কোলে মাথা রেখে অশ্রু ঝরিয়েছে।আর আজ নাকি সেই কোল ছেড়ে চলে যেতে হবে।আরজু কাপা কাপা গলায় বললো

-” আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে খালামণি।তোমার কাছথেকে এই ভাবে দূরে যেতে হবে জানলে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না। যাদের সাথে এতগুলো বসন্ত কাটিয়েছি তাদের ছেড়ে কি করে থাকবো খালামণি? আমি তো সারা জীবন এই কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকতে চাই।”

সাবা খানম গম্ভীর মুখে বারান্দার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে আছেন।কঠিন গলায় বললেন
-” এটাই বাস্তবতা।প্রত্যেকটা মেয়েকে সেটা মেনে নিতে হয়।”

-“তবে আমি কেন মানতে পারছি না। নেতা সাহেবের সাথে থাকার আনন্দের চাইতে তোমাদের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কষ্টটা অনেক বেশি হচ্ছে।আমাকে এতো কেনো ভালোবাসলে যে তোমাদের ছেড়ে যেতে আজ আমার বুক ছিরে যাচ্ছে?”

সাবা খানম শক্ত গলায় বললেন
-” তোর জীবনটাকে আমি সহজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই নিজের হাতে এই কঠিন জীবনটাকে বেছে নিয়েছিস। আমি জানি জীবনের একটা পর্যায়ের এসে তুই ভীষণ আফসোস করবি। তবু মনেপ্রাণে চাই এই আফসোসটা যেন তোর জীবনে না আসে। একজন পলিটিশিয়ানের স্ত্রী হওয়া খুব একটা সহজ না।একজন পলিটিশিয়ান চাইলেই স্বাভাবিক লাইফ লিড করতে পারেনা।তোর মতো ইমোশনাল মেয়ে কি করে প্রত্যেকটা বিষয় ট্যাকেল দিবে আমি জানিনা। তাছাড়া এই ছেলেটাকে আমি কোনদিনও বিশ্বাস করতে পারবো না।আমি বলবো তুই একজন ভুল মানুষকে চুজ করেছিস।”

আরজু খালামণি কথায় আরো কাদতে লাগলো।আসলেই খালামণিকে সে ভীষণ কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সাবা খানম আবার বললেন

-” জীবনের এই ভুল ডিসিশন এর জন্য তোকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না।তবে আমি মনে প্রাণে চাই তুই সুখী হ। জীবনে যদি কোনদিন মনে হয় তুই ভুল ডিসিশন নিয়েছিস তাহলে কোন দ্বিধা ছাড়া চলে আসবি। এ বাড়ির দরজা সারা জীবন তোর জন্য খোলা থাকবে।”

জুবায়ের আহমেদ রুমে ঢুকে দেখলেন আরজু কান্না করছে।আর সাবা গম্ভীর মুখে বাইরে তাকিয়ে আছে।জুবায়ের আহমেদ আরজুকে যাওয়ার তাগাদা দিলো।আরজু সাবা খানমের দুই হাতে বেশ কয়কটা চুমু খেয়ে নিলো।এই মানুষটার শরীর থেকে কেমন মা মা গন্ধ আসে।আরজু জোরে নিঃশ্বাস টেনে সেই গন্ধ নিজের শরীরে মাখিয়ে নিলো।
আরজুর বিদায় বেলা অবনি আর আরজুর বান্ধুবিরা নিজেদের সামলাতে পারলো না।আরজুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।আরজু সবাইকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলছে।আরজু গাড়িতে উঠার আগে একবার বারান্দায় তাকালো।সেই ছোট থেকে এই বাড়িতে বড়ো হয়েছে। কতো হাসি কান্নার সাক্ষী এই বাড়ী।আরজু মনে মনে খালামণিকে খুঁজলো।খালামণি তাকে বিদায় দিতে নিচে আসেনি।কিন্তু আরজু জানে পর্দার আড়ালে তার খালামণি ঠিক দাড়িয়ে আছে।

আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে নাঈম মাহমুদ বললেন
-” তোমাকে এখান থেকেই বিদায় দিতে হচ্ছে মা।কিন্তু খুব শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা করতে আসবো আমি।”

আরজুকে গাড়িতে তুলে নাহিদ নাঈম মাহমুদের গাড়ির সামনে আসলো।নাঈম মাহমুদ গম্ভীর দৃষ্টি ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নাহিদ প্যান্টের দুই পকেটে হাত রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো।আর বললো

-“আপনাকে বলেছিলাম আমার পেছনে স্পাই লাগানো বন্ধ করতে। আমি যে মেয়েকে বিয়ে করেছি সেটা আরজু এটা আপনি আরো আগেই জেনেছেন তাই না? আপনি শুধুমাত্র আমার অ্যাকশনের অপেক্ষা করছিলেন।”

নাঈম মাহমুদ মুচকি হেসে বললেন
-” তুমি যে আরজুর পিছন কখনোই ছাড়োনি সেটা অনেক আগে থেকেই জানি। তবে এইভাবে হুট করে আরজুকে বিয়ে করে ফেলবে সেই ধারণা ছিল না।কিন্তু জীবনে প্রথম তোমার কোন কাজ আমার পছন্দ হয়েছে। অন্তত নিজের স্ত্রীর জন্য হলেও এসব রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসো। না হলে তোমার জন্য ভবিষ্যতে মেয়েটাকে অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।”

নাহিদ গম্ভীর স্বরে বললো
-” আমার স্ত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। নিবরাস নাহিদ তার স্ত্রীর নিরাপত্তা কিভাবে দিতে হবে সেটা খুব ভালো করেই জানে।”

-” তোমার এই একরোখা স্বভাবের জন্যই একদিন এই মেয়েটাকে তুমি হারাবে।”

নাহিদ নাঈম মাহমুদের আরো কাছাকাছি চলে আসলো।তার কানের কাছে নিচু স্বরে বললো
-“আমার জীবনে আরজু এসেছেন নিজ ইচ্ছায়। সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ আরজুর নেই। আমি না চাইলে আরজু কখনই আমার জীবন থেকে বের হতে পারবে না।”

নাহিদ আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালো না।নিজের গাড়িতে এসে বসলো।আরজুর দিকে আড়চোখে তাকালো।আরজু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁছে।লাল শাড়িতে আরজুকে আজ বউ বউ লাগছে।কান্নার ফলে নাক মুখ লালচে হয়ে আছে। সৃষ্টিকর্তা কি সকল সৌন্দর্য আর মায়া এই মেয়েটার মাঝেই ঢেলে দিয়েছিল?নাহিদ আবারও এই কান্নারত মেয়েটার প্রেমে পড়লো।আরজু কোনোদিন তার বউ হয়ে তার পাশে বসবে এটা কল্পনা পর্যন্ত করেনি।এই পবিত্র মেয়েটার পবিত্রতা কি তার জীবনের সকল অপবিত্রতাকে ঢেকে দিবে?

রাতের আধারে নির্জন রাস্তায় চলছে গাড়ি।গাড়িতে থাকা নর নারী ভীষণ নিস্তব্দ হয়ে বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।কিন্তু মনে হাজারো অনুভূতিরা তোলপাড় সৃষ্টি করছে।কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারছে না।এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের মাঝে।সেই দেয়াল ভেঙে কেউ বেরুতে পারছে না।নিস্তব্দতা কাটাতে নাহিদ মিউজিক প্লেয়ার অন করলো।আর সেখানে বেজে উঠলো একটা মিউজিক।আরজুর বিষণ্ণ মুখটা মুহূর্তেই লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।আড়চোখে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ ড্রাইভিংয়ের ব্যাস্ত।মানুষটা এই গানে মাধ্যেমে কি নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করছে?আরজু নাহিদের মনের কথা কখনোই বুঝতে পাড়ে না।তবে আরজুর মনে হচ্ছে এই গানটা তার নেতা সাহেব তাকেই ডেডিকেট করে প্লে করেছে।

🎷🎻এহসাস কি জো যুবাণ বান গায়ে
এহসাস কি জো যুবাণ বান গায়ে
দিল মে মেরে মেহমান বান গায়ে

আপন কি তারীফ মে কেয়া কাহে
আপ হামারি জান বান গায়ে
আপ হামারি জান বান গায়ে 🎷🎻

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_46

নিস্তব্দ রাত।কিন্তু শহরের চওড়া রাস্তা গুলো এখনো ব্যাস্ত।সবাই ব্যাস্ত নগরীতে ছুটে চলছে অবিরাম।হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় আরজু চমকে উঠে।সামনে তাকিয়ে দেখে নাহিদের বাড়ির সামনে গাড়ি থেমেছে।আরজু এতক্ষণ হাজারো চিন্তায় ডুবে ছিলো।বাবা মা চলে যাবার পর খালামণিকে সব সময় পাশে পেয়েছে। খালুজান বরাবর বন্ধুর মত তার সাথে মিশেছে।নিজের আপন ভাই বোন না থাকলেও অবনির জন্য কখনো সেই অভাব বোধ করেনি।আর শুভ!! শুভ ছিলো তার মুখের হাসির অন্যতম কারণ।এই ছেলেটার জন্য আরজু কখনোই মন খারাপ করে বসে থাকতে পারেনি।অদ্ভুদ সব কাণ্ড ঘটিয়ে তাকে হাসিয়েই ছাড়বে।আজ সবাইকে ছেড়ে এক অজানা জগতে ছুটে চলছে।সেই জগৎ তাকে কি ভাবে গ্রহন করবে আরজুর জানা নেই।ভীষণ ভয় হচ্ছে আরজুর।পারবে তো পাশের মানুষটির যোগ্য হয়ে উঠতে?

পাশের মানুষটিকে সে ভীষণ ভালোবাসে।কেনো বাসে আরজুর জানা নেই।মানুষটিকে দেখে আরজু হৃদয় টান অনুভব করেছে।হৃদয়ে অদ্ভুদ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।এমনটা আগে কখনোই কোনো পুরুষকে দেখে হয়নি।হয়তো সৃষ্টিকর্তা এই মানুষটার সাথেই তার ভাগ্য লিখে রেখেছিল।তাইতো আরজু মানুষটার প্রেমে এতটা উন্মাদ হয়ে উঠেছে।মানুষটি আজ তার সবচাইতে আপন।মানুষটির সাথে সে এই দুনিয়ার সব চাইতে সুন্দর,মধুর আর পবিত্র সম্পর্ককে জড়িয়ে আছে।কিন্তু মজার বিষয় এই মানুষটি সম্পর্কে আরজু তেমন কিছুই জানে না।এমনকি আরজু আজ প্রথম নিজের শশুরকে দেখেছে।নাহিদের নিজের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে পাবলিকের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই।কিন্তু নাহিদ বরাবর নিজের পার্সোনাল লাইফ সবার আড়ালে রাখতে পছন্দ করে।তাইতো বাকি সবার মত আরজু নিজেই মানুষটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না।

আরজুর ধ্যান ভাঙে নাহিদের ডাকে। নাহিদ তার সামনে দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে।আরজু এক পলক সেদিকে তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।সামনের বাড়িটি আগে একবার দেখলেও আজ রাতের আধারে ঝলমলে আলোর খেলায় বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।সদর দরজায় আসতেই আরজু দেখলো সুমি আর আসফি দাড়িয়ে আছে।আরজুকে দেখেই আসফি লম্বা করে সালাম দিলো।এতে আরজু ভীষণ লজ্জা পেলো।

-” ওয়েলকাম ভাবী। আপনাকে নিবরাস নাহিদের জগতে স্বাগতম। এই বাঘকে কাবু করার জন্য ফাইনালি বাঘিনীর আগমন ঘটলো।”

আরজু ফিক করে হেসে উঠলো।নাহিদের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখলো আসফির দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে।আরজু নিজের হাসি থামিয়ে দিলো।
আসফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো

-“তোর ওই আগ্নিগিরি দৃষ্টি আমার দিকে ফেলে লাভ নেই। বর্তমানে আমাদের ভাবি এসে গেছে। তোকে জ্বলন্ত লাভা থেকে ভেজা বেড়াল বানাতে বেশি দিন লাগবে না।”

নাহিদ আড়চোখে আরজুর দিকে তাকিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বললো
-” নিবরাস নাহিদকে বশ করা এতো সহজ না।”

আরজু মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁট কামড়ে বির বির করে বললো
-“আপনাকে তো আমি আমার প্রমের জোয়ারে ভাসিয়ে কোথায় নিয়ে যাবো আপনি ভাবতেও পারবেন না নেতা সাহেব।”
__________________
বসার ঘরে বসে আছে আরজু।সুমি এক গাদা মিষ্টান্ন আরজুর সামনে সাজিয়ে ফেলেছে।আরজুর দিকে কালো জাম এর বাটি এগিয়ে বললো

-” ভাবিজান একটু মিষ্টি মুখ করেন।আজ থেকে আপনি এই বাসায় থাকবেন ভাবতেই আমার কিযে খুশি লাগতেছে বলে বুঝাতে পারবো না।”

আরজু সামান্য মিষ্টি মুখে তুলে বললো
-” আমিও ভীষণ খুশি তোমাকে পেয়ে সুমি।তুমি দেখতেও মিষ্টি, তোমার কথাও তেমন মিষ্টি।”

আসফি কৌতুক সুরে বললো
-“কিন্তু ভাবী আপনার সাহেবের কথা ভীষণ তেতো। সচরাচর বেশি কথা বলে না কিন্তু যা বলে একদম জ্বালিয়ে ফেলে।”

আরজু আড়চোখে ডানপাশে তাকালো।তার নেতা সাহেব একটু দূরে বড়ো করিডোরের সামনে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।দৃষ্টি তার বাইরে।বাম পকেটে এক হাত গুজে রেখে মাথা হেলিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছে।আরজু মুচকি হাসলো।মেয়েদের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন আপন মানুষদের ফেলে আসার কষ্টের মাঝেও মনের গভীরে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে নতুন পথ চলার আনন্দ মনকে বিমোহিত করে।আরজুর ঠিক তেমন অনুভূতি হচ্ছে।ভালোবাসার অদ্ভুদ মায়ায় আরজু আসলেই ফেঁসে গেছে।এই মায়া ভেদ করা অসম্ভব।

আরজু দৃষ্টি সরিয়ে আসফির দিকে তাকালো।বেশ প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ আসফি।মানুষটিকে যতবার দেখেছে মুখে এই প্রাণোচ্ছ হাসি দেখেছে।আরজু আসফিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-” ভাইয়া আপনার জীবনে কোনো বাঘিনী আসেনি?”

আসফি মুচকি হাসলো।বললো
-” আমার জীবনে শুধু বাঘিনী না একটা বাঘিনীর সরদার আছে।সে বড়ো নির্দয় বাঘিনী।যার আমার মতো অধমের জন্য কোন মায়া দয়া নেই।”

আসফির কথায় আরজুর কৌতহল বাড়লো।সে জিজ্ঞেস করলো
-” কেনো ভাইয়া? আর সে কোথায়? তাকে নিয়ে আসতেন?”

-” কি ভাবে আনি ভাবী? সে তো সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে বসে আছে।”

-” মানে? ”

-“আমার বাঘিনীর নাম নুসাইবা।আমার দুই ব্যাচ জুনিয়র। প্রেমটা শুরু হয়েছিল ভার্সিটি লাইফ থেকে। হঠাৎ একদিন এই মেয়েটাকে দেখে প্রেমে পরে গেছিলাম। তখন সারা ভার্সিটিতেই আমরা বেশ পরিচিত। আমিও তখন নাহিদের সাথে পলিটিক্সের সাথে যুক্ত ছিলাম। যেখানে আমাদের দেখে বাকি সবাই ভয়ে থাকতো। অথচ আমি এই মেয়েটার সামনে গেলে থর থর করে কাপতাম। নুসাইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে আমি কখনোই মাথা উঁচু করে তাকাতে পারতাম না।মেয়েটা যেন এক দৃষ্টি ফেলেই আমাকে বারবার খুন করে ফেলতো।নাহিদ, সাদ,লিজা,অনিক সবাই খুব মজা নিতো বিষয়টা নিয়ে। ওদের জোরাজোরিতে খুব সাহস করে একদিন প্রপোজ করে ফেলেছিলাম।সেদিন মেয়েটা কষিয়ে আমার গালে থাপ্পর মেরে বসেছিলো।”

আরজু অবাক হয়ে আসফির কথা শুনছিলো।আরজু উত্তেজিত হয়ে বললো
-“ও মাই গড। আপনার মত একজন মানুষের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল? তাহলে আপনাদের সম্পর্কটা কি করে হলো ভাইয়া?”

-“নুসাইবা সেদিন থাপ্পড় মেরে বলেছিল “যেদিন আমার সামনে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে,ভয়ে হাত পা কাঁপবে না সেদিন এসে প্রপোজ করো।” সেদিনের পর থেকে টানা ছয় মাস আমি ওর সামনে যাইনি। নানাভাবে নিজেকে শক্ত করলাম প্রস্তুত করলাম ওর সামনে দাঁড়ানোর। এন্ড ফাইনালি কনফিডেন্ট এর সাথে তাকে প্রপোজ করলাম।”

আরজু অবাক হয়ে বললো
-” সেদিন কি একসেপ্ট করেছিল ভাইয়া?”

আসফি হেসে বললো
-” সেদিনও এটা থাপ্পড় খেয়ে ছিলাম এত দেরি করে প্রপোজ করার কারণে। আসলে নুসাইবাও আমাকে পছন্দ করত। কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি। তারপর থেকেই বেশ কয়েক বছর আমরা চুটিয়ে প্রেম করলাম।তবে মেয়েটা ভীষণ শক্ত প্রকৃতির।একদম নাহিদের ফিমেল ভার্সন বলতে পারেন। কয়েক বছর পর নুসাইবা লন্ডনের একটা ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পায়।আমার একবার মনে হয়েছে ওকে যেতে মানা করে দিবো।কারণ ওকে একদিন না দেখলেও আমার অবস্থা নাজেহাল।কিন্তু মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষকে দূরে যেতে দিতে হয়।এই কঠিন হৃদয়ের মেয়েটা এয়ারপোর্ট এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।তারপর আর কি? আমরা লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপে আছি।”

আরজু বিমোহিত হয়ে সব ঘটনা শুনছিল।আরজু মুখে তৃপ্তির হাসি হেসে বললো
-” আপনার কথা শুনে তো আমার আপুকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। শি ইজ ভেরি লাকি।আপনার মতো একজন ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে।”

-“বাট ইউ আর ভেরি আনলাকি।কারণ আমার মতো একজন অনুভূতিহীন আর কঠিন হৃদয়ের কাউকে পেয়েছো।”
কথাটা শুনে আরজু চমকে পাশে তাকালো।আরজুর উজ্জ্বল মুখে প্রগঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাহিদ।আরজু ব্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। আসফি হেসে বললো

-“তোর ওই কঠিন হৃদয় ঠিক কোন জায়গায় মোমের মতো গলে যায় সেটা আমার ভালই জানা আছে।”

নাহিদ কথা ঘুরাতে বললো
-” এতক্ষণ ধরে এত সুন্দর স্টোরি শোনালি কিন্তু স্টোরির মূল টুইস্ট টাই তো বললি না।”

নাহিদের কথায় আসফি মুচকি হাসলো।নাহিদ বললো
-“এই লোককে ব্যাচেলর ভেবে ভুল করো না। নুসাইবার লন্ডন যাওয়ার আগের দিন মেয়েটা সন্ধার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে আমার বাসায় এসে হাজির। আসফিকে ডেকে বলেছিলো যাবার আগে বিয়ে করে যেতে চায়।এই ব্যাটা সেদিন খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলো।কি আর করার সেদিন রাতেই দুটোকে বিয়ে করিয়ে দিলাম।”

আসফি বললো
-” আসলে ভাবী ওর বাবা এতো দ্রুত মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি ছিলো না।আর আমি নিজেও তখন স্টুডেন্ট।তাই সবার আড়ালেই কাজটা সারতে হলো।তবে আমার বাঘিনী এই বছরই দেশে আসছে।আমার অপেক্ষার প্রহর শেষের দিকে।এইবার ধুমধাম করে লাল বেনারসি পরিয়ে ওকে আমার ঘরে তুলব।”

আরজু হাসলো।আসলেই ভালোবাসার অনুভূতি এতটাই মিষ্টি হয়।বহু দূরে থাকলেও মনের দূরত্ব কখনোই সৃষ্টি হয়না।

*********
নাহিদ আসফিকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।সুমিকে দিয়ে আরো আগেই আরজুকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।দরজার সামনে আসতেই নাহিদ দাড়ালো।আজ থেকে এই ঘরটা শুধু তার একার না।সর্বোচ্চ অধিকার নিয়ে একজন এই ঘরের মালিকানাধীন হয়েছে।আর সেই মালিকিন তার স্বপ্নের রানী।নাহিদ মৃদু হাসলো।এক হাতে পেছনের চুল গুলোতে হাত বুলালো।হালকা কাশি দিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো।কিন্তু রুমে ঢুকতেই তার চোখ ছানাবড়া অবস্থা।নাহিদ হা করে একবার রুমের দিকে তাকালো আবার আরজুর দিকে।আরজু গুটিসুটি হয়ে বিছানার সাইডে বসে আছে।নাহিদ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললো

-” এই কাজ নিশ্চই আসফি বাঁদরের।ওকে পেলে খবর নিয়ে ছাড়বো।”

নাহিদের উপস্থিতিতে আরজু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
মূলত এই রুমে ঢুকেই আরজু অসস্তিতে পড়ে গেছিলো।সারা রুমে নানান ফুল দিয়ে সাজানো।ফুলের সুবাসে সারা ঘর মৌ মৌ করছে।সামনের বড়ো ব্যালকনিতে রংবেরংয়ের আলো জ্বলজ্বল করছে।আরজু ব্যালকনিতে আসতেই দেখলো মূলত সুইমিংপুলে আলো জ্বলছে।হালকা নীলচে আলোয় সুইমিংপুলের সচ্ছ পানি টলমল করছে।সারা রুমে চোখ বুলিয়ে আরজু ভীষণ লজ্জা পেলো।পর মুহূর্তেই নিজেকে প্রশ্ন করলে “আজ কি তাদের বাসর রাত!!”

নাহিদকে দেখে আরজু উঠে দাড়ালো।এতো কথা বলা আরজু আজ কেমন চুপসে গেছে।কি বলবে কি না বলবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।তার কথার ভান্ডার যেনো এই মানুষটির সামনে আসলেই ফুরিয়ে যায়।নাহিদ কাবার্ড এর দিকে এগিয়ে গেলো।সেখান থেকে একটা টিশার্ট আর টাউজার নিয়ে আরজুর উদ্দেশে বললো

-“অনেকক্ষণ যাবত শাড়িতে আছো নিশ্চই আনকমফোর্টেবল লাগছে। এখানে তোমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষ রাখা আছে।আর যা বাকি আছে কাল কারো সাথে যেয়ে শপিং করে নিয়ে এসো।আসলে মেয়েদের জিনিস সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই।আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।তারপর তুমি যেও।”

আরজু মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।নাহিদ চলে গেলে আরজু দেখলো নাহিদ কাভার্ড এর একপাশ তার জন্য বরাদ্দ রেখেছে।আরজু মুচকি হাসলো।এতো কিছু কিনে রেখেছেন তার নেতা সাহেব?আরজু একটা টিশার্ট আর প্লাজো নিয়ে পেছনে ঘুরতেই দম আটকে আসবার জোগাড়।আরজু পিট পিট করে সামনের মানুষটিকে দেখতে লাগলো।নাহিদ ভেজা চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুমে থেকে বেরিয়ে আসছে।গায়ে একটা নীল রঙের টিশার্ট।আরজু বরাবর এই মানুষটিকে সাদা পাঞ্জাবি আর ব্যাকব্রাশ করা চুলে বেশ পরিপাটি অবস্থায় দেখে এসেছে।কিন্তু আজ!!! একফালি ভেজা এলোমেলো চুল কপাল ঢেকে রেখেছে।কানের কাছের ভেজা চুল বেয়ে শিশির বিন্দুর মতো জল বেয়ে পড়ছে।এই এলোমেলো নাহিদকে দেখে আরজু বেসামাল হয়ে পড়ছে।কোনো পুরুষও এই ভাবে নিজের শুভ্রতা ছড়িয়ে কোনো নারীকে অশান্ত করতে পড়ে আরজুর বোধগম্য ছিলো না।আরজু মনে হচ্ছে তার হৃদযন্ত্র অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে।কেমন ধক ধক শব্দ হচ্ছে।এই শব্দ নিশ্চই এই নীরব, নিস্তব্দ ঘরে নেতা সাহেব অব্দি পৌঁছে যাচ্ছে।সে মনে আওরালো

-“কুল আরজু কুল।জামাইয়ের কিউটনেসে আবার অজ্ঞান হয়ে যাসনা।তাহলে মান সম্মান কিচ্ছু থাকবে না।জামাইটা তো তোরই।সারা জীবন এমন অস্বাভাবিক অনুভূতির অভ্যাস করে নে।কারণ এই মানুষটা তোকে আজীবন এমন ঝটকা দিয়ে যাবে।”

নাহিদ আরজুর সামনে এসে কপাল কুচকে তাকালো।আরজু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নাহিদ কপাল খানিকটা চুলকে বললো

-“একদিনেই দেখে শেষ করবে নাকি? সারা জীবন পড়ে আছে দেখার জন্য। এখন বরং ফ্রেস হয়ে আসো।”

নাহিদের কথায় আরজু বেশ লজ্জা পেলো।তাই আর কিছু না বলে দ্রুত ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ল।দরজা বন্ধ করে মনে মনে নিজেকে গালি দিল।জারা ঠিক বলে।আসলেই তার নজর বেহায়া।ভীষণ বেহায়া।
আরজু ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখলো নাহিদ কোথাও নেই।আরজু আসে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো নাহিদ সুইমিংপুলের পাশে একটা চেয়ারে বসে মনের আনন্দে সিগারেটে ধোওয়া উড়াচ্ছে।আরজুর ইচ্ছে হলো এই মুহূর্তে নাহিদের হাত থেকে সিগারেটটি পানিতে ছুড়ে মারতে।কিন্তু নিজেকে সংযত করে নিলো।যেই ওষ্ঠে শুধুমাত্র তার স্পর্শ করার অধিকার সেখানে সিগারেট কেন ছুঁয়ে দিচ্ছে?

নাহিদের সিগারেট খাওয়া শেষ হলে ধীরে ধীরে নাহিদের পাশের চেয়ারে এসে বসলো আরজু।নাহিদ তির্যক দৃষ্টিতে আরজুকে পর্যবেক্ষণ করলো।ভেজা চুলে কি স্নিগ্ধ লাগছে তার বউটাকে।আরজুকে এই ভাবে বহু বার কল্পনা করেছে সে।কিন্তু তার অর্ধাঙ্গীকে কল্পনার চাইতেও বেশি মোহনীয় লাগছে।নাহিদ নিজের দৃষ্টি সংযত করে সামনে তাকালো।আরজু মুচকি হেসে বললো

-“এই জায়গাটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

নাহিদ সুইমিংপুলে দৃষ্টি রেখে বললো
-” ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো আমার বেডরুমের পাশে এমন একটা সুইমিংপুল থাকবে।দাদাজান সেই ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মাম্মা রাজি হয়নি।তার ভয় ছিলো আমি যদি পানিতে পরে যাই।কিংবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে।তাই সেটা তখন সম্ভব হয়নি।”

আরজু নাহিদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-” তিনি এই বিয়ে সম্পর্কে জানেন?”

নাহিদ দূরে আকাশের দিকে দৃষ্টি ফেলে বললো
-” হয়তো জানেন।ওখান থেকে নিশ্চই দেখছেন।”

আরজু হতবম্ব হয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো।মানুষটির চোখে মুখে বিষাদের ছায়ায় ঢেকে গেছে।আরজু মাথা নিচু করে নিলো।বললো
-“আই এম সরি।আসলে আমি জানতাম না।”

নাহিদ আরজুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি ফেলে বলতে লাগলো
-” ইটস ওকে আরজু।তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানো না।সেই ছোটবেলা থেকে দেখেছি দাদাজান সব সময় মানুষের বিপদে পাশে দাড়িয়েছে।তাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।দাদী কমপ্লেইন করতেন পরিবারের প্রতি তার মনোযোগ নেই।কিন্তু পরিবারে কোনো বিপদ হলে ওই মানুষটা কেমন ঝাঁপিয়ে পড়তো। আমাকে তিনি ভীষণ ভালোবাসতেন।সব সময় তার কাছাকাছি থেকে পলিটিক্সের প্রতি একটা আসক্তি তৈরি হয় আমার।সেই ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করার।আর তার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতার।যেই ক্ষমতা একজন পল্ট্রিশিয়ানের হাতে থাকে সেটা অন্য কারো হাতে সচরাচর থাকে না। তাই আমিও ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েছি।দাদাজান আমাকে আগেই জানিয়েছেন রাজনীতি এতো সহজ হবে না। পলিটিক্স এর এই উজ্জ্বল সচ্ছলতার পেছনে গভীর অন্ধকার লুকিয়ে আছে। পলিটিক্সে কখনো হান্ড্রেড পারসেন সততার সাথে থাকা সম্ভব হয়না। হাজারো মানুষের সাথে ডিল করতে গেলে কখনো ভালো, কখনো খারাপ হতে হয়।অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়।নিজস্ব জীবন বলতে কিছুই থাকে না।আট দশজনের মত স্বাভাবিক জীবন আমার থাকবে না।দায়িত্বের ভিড়ে অনেক সময় আপন মানুষ গুলোকে ভুলে থাকতে হবে।আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত হয়েই রাজনীতিতে নেমেছি।পলিটিক্স আমার প্যাশন।”

নাহিদ কয়েক মুহূর্ত থামলো।আরজুর দিকে তাকিয়ে বললো
-” তুমি জেনে বুঝে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছো আরজু।আমি আমার এই ক্রিটিকাল লাইফে কাউকে জড়াতে চাইনি। কারো লাইফ এতো কমপ্লিকেট করতে চাইনি।কিন্তু দেখো আমার অন্ধকার জীবনে কেমন করে তুমি এসে পড়লে। তুমি আমার লাইফটাকে যতটা সহজ ভাবো আমার লাইফটা ঠিক তার চাইতে অনেক বেশি জটিল। আমার মত কঠিন মানুষের সাথে চলাটা তোমার জন্য সহজ হবে না। নিজের আবেগ অনুভূতিগুলোকে চোখের সামনে মরে যেতে দেখলে হয়তো এক সময় তুমিও ভেঙ্গে পড়বে।তখন আমার মত মানুষের সাথে থাকাটা তোমার জন্য দুর্বিষহ বিষয় লাগবে। একটা সময় হয়তো ভালোবাসা আবেগ সবটাই ফুরিয়ে আসবে।”

আরজু মনোযোগ দিয়ে নাহিদের কথাগুলো শুনছিল। আজ প্রথম নাহিদকে এতক্ষণ কথা বলতে শুনলো। সচরাচর মানুষটা এক দুই কথায় কনভারসেশন শেষ করে। আরজু মুচকি হেসে নাহিদের চোখের দিকে দৃষ্টি ফেলে বললো

-” ভালোবাসা সম্পর্কে আপনার মনে হয় তেমন কোন আইডিয়া নেই। ভালোবাসার তাগিদের মানুষ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রাস্তায় পর্যন্ত নামতে পারে।অনেক কঠিন পথ ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে পাড় করা যায়। কঠিন থেকে কঠিন হৃদয়ও ভালোবাসার পরশে গোলাপের নেয় নেতিয়ে পড়ে। আমার মনে হয় কোন একদিন আপনার কঠিন হৃদয় ও কোমল হতে বাধ্য হবে।”

নাহিদ কিঞ্চিৎ হেসে দূরের আকাশে তাকিয়ে মনে মনে বললো
-” আমার কঠিন হৃদয় তো তোমার প্রেমে পড়ে বহু আগেই তুলোর নেয় কোমল হয়ে গেছে আরজু।তোমার প্রেমে পড়েই অশান্ত নাহিদ আজ শান্ত, স্থির হয়েছে।তোমার প্রেমে পড়ে ভীষণ সাহসী, নির্ভয়ে চলা নাহিদ আজ ভীষণ ভীতু হয়ে পড়েছে।সেই ভয় তোমাকে পেয়েও হারাবার।সে ভয় তোমার নিরাপত্তার। শত্রুপক্ষ নজর থেকে তোমাকে সর্বক্ষণ দূরে রাখার প্রচেষ্টা চলে এই ভীতু নাহিদের।শেষে পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে চলতে পারবো কিনা জানিনা।আমার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই আরজু। আমার এই অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে কখনোই জড়াতে চায়নি।কিন্তু ভাগ্য আজ তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গী করেছে।তোমার এই ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা আদো আমার আছে আরজু?”

নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“তুমি যেয়ে ঘুমিয়ে পরো আরজু।”

-” আপনি ঘুমাবেন না।”

নাহিদ হেসে বললো
-” তুমি যাও আমি আসছি।”

রাতের নির্জন প্রহরে শুয়ে আছে এক জোড়া দম্পতি।তাদের মাঝে দুই হাত দুরত্ব।রাত গভীর হলেও কারো চোখে ঘুম নেই।তাদের মাঝের এই দূরত্ব কেউ ভাঙতে পারছে না।কেমন অসস্তি হচ্ছে।জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের পাশে শুয়ে আরজু অসস্তিতে ছট ফট করছে।নাহিদ বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো

-” তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো আরজু। এই সুপুরুষ মাঝরাতে তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে না এতোটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো। নিবরাস নাহিদের নারীর শরীরের প্রতি লোভ কখনোই ছিল না।”

আরজু লজ্জায় চোখ চোখ বন্ধ করে মনে মনে বির বির করে বললো

-” এই আরজু আপনাকে সব রকম অধিকার দিয়েছে। আপনার সকল স্পর্শ কেই এই আরজু স্বাগতম জানায়।আমি আপনার ভালোবাসার আহ্বানের অধীর অপেক্ষায় থাকবো নেতা সাহেব।”