মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0
1069

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_47

সারা দিনের ব্যাস্ততা শেষে এই সন্ধায় মাত্রই বাসায় ফিরলো রামিম।দুপুরে আজ খাওয়ার সময় অব্দি পায়নি।খিদায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।বাসার ফিরেই দুইবার দরজায় নক করলো।কিন্তু কেউ খুলছে না।রামিমের চিন্তা বাড়তে থাকলো।মা তো এই সময় বাসায় থাকার কথা।তাহলে কোনো সমস্যা হলো কিনা কে জানে?রামিম নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।দ্রুত মায়ের রুমে প্রবেশ করে দেখলো তিনি বিছানায় শুয়ে আছে।এই অসময়ে ঘুমাতে দেখে রামিম চিন্তায় পড়ে গেল।রামিম মায়ের পাশে বসে কোমল সুরে ডাকলো।কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না।রামিম মায়ের হাত ধরতেই বুঝতে পারলো গায়ে ভীষণ জ্বর।মায়ের মাথায় পরম আদরে হাত বুলিয়ে ডাকলো রামিম।আঞ্জুমান আরা পিট পিট চোখে তাকালেন।মুচকি হেসে ধিরো গলায় বললেন

-” এসেছিস বাবা?আমার চোখ লেগে গেছিলো।”

রামিম মলিন মুখে বললো
-” তোমার গায়ে জ্বর আমাকে কল করে জানলেনা কেনো?কয়েকদিন যাবত দেখছি তোমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।একটু কষ্ট করে উঠো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।”

আঞ্জুমান আরা মলিন হেসে ছেলের চিবুকে হাত রেখে বললেন
-” তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো?সামান্য জ্বর।ঔষদ খেয়েছি ঠিক হয়ে যাবে।”

-” কিছু ঠিক হবে না।চলো মা।অসুস্থতাকে অবহেলা করা মোটেও ঠিক না।”

-” তুই বেশি ভাবছিস।ওয়েদার চেঞ্জ হচ্ছে তাই একটু সর্দি, কাশি, জ্বর হয়েই থাকে।অল্প কিছুতে হাইপার হওয়া ঠিক না।”

রামিম মায়ের পাশে শুয়ে মায়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নিলো।সেখানে বেশ যত্ন সহকারে আলতো স্পর্শে চুমু খেয়ে বললো
-” হাইপার হবোনা কেনো বলো? তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?”

আঞ্জুমান আরা তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন
-” আমি কি চিরোজীবন তোর পাশে থাকবো বল?একদিন তো ঠিক তোর বাবা কাছে যেতে হবে।নিজেকে সব সময় সকল অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখবি।তাহলে দেখবি কখনোই ভেঙে পড়বি না।”

রামিম মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে দু ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বললো
-” এমন প্রস্তুতি আমি কখনোই রাখতে চাইনা মা।তুমি ছাড়া আমি নীড় হারা পথিক হয়ে যাবো।সারা জীবন আমার মাথায় ছায়া হয়ে থেকো।”

আঞ্জুমান আরা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তার কিছু হলে ছেলেটা কি করে থাকবে? নিঃসঙ্গতায় আবার হারিয়ে না যায়।তবে তার বিশ্বাস একদিন তার ছেলে জীবনে অনেক ভালো কিছু করবে।তার এই পরিশ্রম নিশ্চই বৃথা যাবে না।

_________________
পিট পিট চোখে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ভাঙলো আরজুর।চোখ খুলে মাথার উপর আভিজাত্যে ঘেরা ভীষণ সুন্দর ঝাড়বাতি চোখে পড়লো।আরজু কপাল কুঁচকে বা পাশে তাকিয়ে দেখলো বিশাল বড়ো কাচের জানালা।ভারী পর্দার কারণে সেখান থেকে সূর্যের আলো খুব একটা রুমে প্রবেশ করতে পারছে না।আরজু লাফ দিয়ে উঠে বসলো।কয়েক সেকেন্ড সে বুঝতেই পারলো না কোথায় আছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর মনে পড়লো সে বর্তমানে তার নেতা সাহেবের বাসায় আছে।আরজু ঘুরে পাশে তাকাতেই দেখলো পাশে নেতা সাহেব নেই।আরজু সামনের দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ বড়ো হয়ে গেলো।সকাল সাড়ে দশটা বাজে।প্রথম দিন শশুরবাড়ি এসে এতো বেলা অব্দি ঘুমিয়েছে সে?খালামণি ঠিক বলে,তাকে দিয়ে সংসার হবে না।আরজু দ্রুত বিছানা থেকে নামতেই পাশের ছোট্ট টেবিলে একটা কাগজ দেখতে পেলো।কৌতহল বসতো সেটা খুলতেই কিছু লেখা দেখতে পেলো

-“আমার জীবনের অন্যান্য সকালের চাইতে আজকের সকালটা একদম ভিন্ন।ছোট বেলায় মায়ের মুখে পরীর গল্প শুনে যখন বায়না করতাম আমাকে একটা পরী এনে দিতে, তখন মাম্মা বলতো কোনো একদিন ঘুম ভাঙলে দেখবো আমার পরী আমার পাশেই আছে।আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে হবে। মাম্মার এই কথাটা প্রায় ভুলেই গেছিলাম।আজ হঠাৎ মনে পড়লো।তাই তোমাকে বললাম।একজন নেতার সহধর্মিণী হওয়ার দরুন আজ থেকে তোমার সেক্রিফিজ এর খাতা ওপেন হলো।আমাদের প্রথম মিষ্টি সকালটা এক সাথে উপভোগ করার ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না।দায়িত্বের কাছে আমি দায়বদ্ধ।আমার জন্য অপেক্ষা করো না আরজু।কিছু প্রয়োজন হলে সুমিকে বলবে।
আরেকটা কথা,মাম্মা বলতো ঘুমন্ত পরীকে কখনো ডাকতে নেই।তাই আমিও সেই দুঃসাহস দেখাই নি।”

লেখাটা পড়ে আরজু ভীষণ লজ্জা পেলো।সারা শরীরে অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে গেলো।মুচকি হেসে চিঠিটা সযত্নে রেখে দিলো।এটা তার নেতা সাহেবের দেওয়া প্রথম চিরকুট। সে তো কত শত চিঠি লিখেছে নেতা সাহেব কে। কিন্তু এই নির্দয় লোকটা কোন রিপ্লাই করেনি।

আরজু ফ্রেস হয়ে নিচে নামতেই সুমি এগিয়ে আসলো।মিষ্টি হেসে আরজুর উদ্দেশে বললো
-“গুড মর্নিং ভাবী।আপনার ঘুম ভালো হয়েছে?”

আরজুর ভীষণ লজ্জা পেলো।ইসস!!মেয়েটা কি ভাবছে?
আরজু আমতা আমতা করে বললো
-” তোমার ভাইজান কখন বেরিয়েছেন?”

-” ভাইজান তো সেই ভোরে বেরিয়েছে।আপনাকে ডাকতে মানা করলো।আপনি উঠলে নাস্তা দিতে বলে গেছে।আপনার কিছু লাগলে আমাকে বলবেন ভাবী।ভাইজান আপনার সেবায় আমাকে নিয়োজিত করেছেন।”

আরজু মিষ্টি হেসে বললো
-” আমার সেবার প্রয়োজন নেই সুমি।তুমি আশেপাশে থাকলেই আমার ভালো লাগে।”

সুমি আরজুর কথায় ভীষণ খুশি হয়ে বললো
-“জানেন ভাবী এতদিন এই বাড়িটা কেমন নির্জীব,নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে ছিলো। এখন আপনি এসেছেন সব কিছুতে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।এই বিশাল বাড়িতে মানুষ মাত্রই তিন চার জন।ভাইজান তো সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু ভাইজানের কি সুমত হলো যে আপনাকে নিয়ে আসলো।সবাই এতদিন বলেও ভাইজানকে বিয়ে করাতে পারলো না।কিন্তু হঠাৎ কোত্থেকে আপনাকে বিয়ে করে ফেললো।আচ্ছা ভাইজান আপনার মতো হুর পরী কোথায় খুঁজে পাইলো?”
আরজু দুষ্ট হেসে সুমির দিকে ঝুঁকে বললো

-” তোমার ভাইজান না,বরং আমি তোমার ভাইজানকে খুঁজে বের করেছি।”

সুমি অবাক হয়ে বললো
-“মানে?”

-” মানে তোমার মাথা।”

সুমি হেসে বললো
-” সে যাই হোক আপনি এসেছেন এতেই আমি খুশি।”

আরজু নাস্তা করতে করতে সুমির উদ্দেশে বললো
-” তোমার ভাইজান কখন আসবে সুমি?”

-” ভাইজানের আসার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই।কখনো অনেক রাত করে ফিরে।মাঝে মাঝে দুই তিন দিন ফিরেও না।পার্টি অফিসেই থাকে।আবার হুট হাট ঢাকার বাইরেও মিটিংয়ে চলে যায়।পড়ে আমি নিউজের মাধ্যেমে জানতে পারি।কাজের মাঝে থাকলে ভাইজানের কোনো দিকে হুস থাকে না।খাওয়া দাওয়া নিয়েও অনেক অবহেলা করে।কত রাত না ঘুমিয়ে কাজের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন।ভয়ে আমি কিছুই বলতে পারিনা।যা ভয়ংকর রাগ তার।অনেক রেগে গেলে মনে হয় হিংস্র বাঘ দাড়িয়ে আছে।”

আরজু অবাক হয় সুমির কথা শুনছিল। নেতা সাহেব এতো অগোছালো জীবন যাপন করেন?আর রাগ!!! কই সে তো মানুষটাকে শান্তই দেখছে।আরজুকে ভাবতে দেখে সুমি বললো

-“এতো দিন ভাইজানের কোনো পিছুটান ছিলো না ভাবী।তাকে বাধা দেওয়ার বা ভালো মন্দ বলার কেউ ছিলো না।ভাইজান কখনোই অন্যের পরামর্শে চলে না।নিজের মনে ইচ্ছা মতোই চলে।সে এতদিন একাকী,নিঃসঙ্গ ছিলো।কিন্তু এখন আপনি এসে গেছেন।আমার বিশ্বাস ভাইজান ধীরে সুস্থে ডিসিপ্লিনে এসে পড়বে।”

আরজু গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়লো। নেতা সাহেবের বাবা এই বাসায় কেনো থাকে না? তার পরিবার থাকতেও সে কেনো এমন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন?মানুষটা সম্পর্কে অনেক কিছুই তার অজানা।মানুষটার মন বুঝতে গেলে তার সম্পর্কে সবটা জানতে হবে।
_______________
সকাল সকাল রিমি ভার্সিটিতে পৌঁছেই সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচের বেঞ্চে শুভকে দেখতে পেলো।কিছু একটা ভেবে সামনে এগুতেই থমকে দাড়িয়ে পড়লো।শুভ সিগারেটের ধোওয়া উড়াচ্ছে।সুন্দর মুখটায় বিষণ্ণতার ছাপ।রিমির বুকটা ছেত করে উঠলো।শুভকে এইভাবে সকলের সমুখে বসে সিগারেট টানতে দেখেনি।সব সময় শুভ কোনো টঙ দোকানে লুকিয়ে চুরিয়ে খেতো।কোনো ভাবে পরিচিত কেউ দেখে নিলে ভীষণ লজ্জা পেয়ে সিগারেট ফেলে দিত।সেই ছেলেটা আজ ক্যাম্পাসে সবার সামনে বসে নির্দ্বিধায় এই কাজ করছে।যেনো এই সমাজ,পৃথিবীর কোনো চিন্তা তার মাঝে নেই।শুভ আরজুকে এতো গভীর ভাবে ভালোবেসেছে অথচ তারা কেউ বিষয়টা বুঝতে পারলো না।শুভর ভালোবাসার কাছে নিজের অনুভূতি টুকু ভীষণ ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে।

রিমি শুভর পাশে সন্তর্পনে বসে পড়লো।শুভ গম্ভীর মুখে আড়চোখে রিমির দিকে তাকালো।সেই মলিন দৃষ্টি রিমির হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললো।সেই চঞ্চন, উচ্ছ্বাসিত মুখখানা কোথাও ঢাকা পড়ে গেছে। রিমি গলা পরিষ্কার করে চোখের চশমা ঠিক করে বললো

-” তুই এই জায়গায় বসে এইসব বা* ছাল টানছিস?আর আমি তোকে কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি।তোর নোটস আমি রেডি করে ব্যাগে নিয়ে ঘুরছি।এই নে ধর।”

বলেই রিমি ব্যাগ থেকে নোটস বের করে শুভকে দিলো।শুভ চুপচাপ সেটা নিয়ে নিলো।রিমি আবার বললো
-” তুই ঠিক আছিস শুভ?”

শুভ চোখ মুখ কুঁচকে রিমির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“অবশ্যই ঠিক আছি।ঠিক থাকবো না কেনো?”

-” না মানে আরজু?”

-” আমার সাথে একদম ফাজলামো করতে আসবি না রিমি। তোরা কি ভাবছিস আরজুকে ছাড়া আমি চলতে পারিনা?”

রিমি শান্ত সরে বললো
-” তোকে ভীষণ অস্বাভাবিক লাগছে শুভ।”

শুভ কিছুটা নরম হলো।রিমির দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো
-” আমি স্বাভাবিক কি করে থাকি?তোকে না জানিয়ে কেউ যদি তোর সবচাইতে পছন্দের কিছু নিয়ে যায়,যেটা ছাড়া তুই বাচার কথা কল্পনাও করিসনি তখন কি আসলেই স্বাভাবিক থাকা সম্ভব?”

রিমি হতবম্ব হয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজুর জন্য শুভর ভালোবাসা এতটাই প্রখর ছিলো? কোথাও না কোথাও রিমির অসম্ভব খারাপ লাগা কাজ করছে।শুভর এই অমূল্য ভালোবাসা পাবার সুযোগ সে কেনো পেলো না?
____________
এই বিশাল বাড়িতে সারাটা দিন আরজুর ভালই কেটেছে।ঘুরে ঘুরে সে সব কিছু দেখেছে।আভিজাত্যে ঘেরা এই বাড়িটার প্রতিটি কোনায় কেমন যেনো নিস্তব্দতা বিরাজ করে।সুমি ছাড়াও আরো দুজন লোক এই বাসায় থাকে।একজন সেইফ ও অন্যজন এই বাসার দারোয়ান।তাছাড়াও বাড়ির চারপাশে সিকিউরিটিতে ঘেরা।বাইরের জায়গায় জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো।আরজু ভেবে পায়না এতো সিকিউরিটির ব্যবস্থা কেনো করে রেখেছে।নেতা সাহেবের মতো কিউট আর জনদরদী মানুষের কেউ ক্ষতি কেনো করতে চাইবে?

সন্ধার পর আরজু সুমিংপলের পাসে বসে চা খেতে খেতে সুমির সাথে অনেক্ষন গল্প করেছে।প্রাণোচ্ছল মেয়েটা আরজুকে পেয়ে আরো চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা।আরজুর ঘুমে প্রায় ঢুলু ঢুলু অবস্থা।তবুও দুচোখ খুলে রাখার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।নেতা সাহেবকে বেশ কয়বার কল করেছে কিন্তু ধরছে না।আরজুর মনে এক রাশ অভিমান জমা হতে লাগলো।সকল সেক্রিফাজ কি আজ থেকেই শুরু হতে হবে?মানুষটা আসলেই একটা পাথর।নতুন বউ বাড়িতে রেখে দিব্যি কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। এমন হাজার কথা ভাবতে ভাবতে আরজু এক সময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো।

রাত প্রায় একটার দিকে নাহিদ বাসায় আসলো।সুমিকে জিজ্ঞেস করলো
-” তোর ভাবী কোথায়?”

-“ভাবী তো রুমে ভাইজান।”

-” রাতে খেয়েছে তোর ভাবী?”

-” না ভাইজান।আমি এতো করে বললাম কিন্তু খেলোই না।”

-” তোকে না বলে গেলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতে মানা করতে?”

-” ভাইজান বউরা এমনি হয়।দিন শেষে স্বামীকে পাশে বসিয়ে দেখে শুনে খাওয়াতে চায়।ভাবী আজ সেই সন্ধ্যা থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

নাহিদ মুচকি হেসে পাঞ্জাবীর হাতা কনুই অব্দি তুলতে তুলতে বললো
-” তোর ভাবী বর্তমান যুগের স্মার্ট মেয়ে।পতিব্রতা টাইপ কিছু তার সাথে ঠিক যায়না।”

-“আপনি তাহলে ভুল জানেন ভাইজান।ভাবীকে আমি যতটুকু জেনেছি তিনি ভীষণ লক্ষী বউ হবে।তিনি আধুনিক যুগের হলেও তার মনটা নাইনটিসের মেয়েদের মতো।তার মধ্যে স্বামী ভক্তি,শ্রদ্ধা এই বিষয় গুলো আছে।”

নাহিদ মুচকি হেসে বললো
-” তুই তো একদিনেই পেকে গেছিস।একদিন ভাবীর সঙ্গ পেয়েই এই অবস্থা?সামনে কি হয় কে জানে?”

সুমি খিল খিল করে হেসে বললো
-“ভাইজান আপনি সঠিক মানুষকে জীবনসঙ্গী করেছেন। ভাবি এত রূপবতী হয়েও তার মধ্যে কোন রূপের অহংকার নেই।মানুষটা ভীষণ সহজ সরল প্রকৃতির। কতো সহজে আমাকে আপন করে নিয়েছে।আপনার ভাগ্যটা ভীষণ ভালো এমন বউ পেয়েছেন।”

-” কিন্তু তোর ভাবীর ভাগ্যটা বড়ো খারাপ।আমার মত এমন পাষাণ একজন মানুষ পেয়েছে।”

কথাটা বলেই নাহিদ উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।সুমির উজ্জ্বল মুখটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে পড়লো।মানুষ হন্যে হয়ে অর্থ আর ক্ষমতার পেছনে ছুটে।কিন্তু দিন শেষে মানুষ গুলো নিজের আপন মানুষ গুলোর থেকে দূরে সরে যায়। এক জীবনে সব কিছু কেনো পাওয়া যায়না?

নাহিদ রুমে প্রবেশ করতেই হৃদয়ে দমকা হাওয়া বয়ে গেলো।তার নিষ্প্রাণ,নির্জন ঘরে আজ এক লাস্যময়ী নারীর বাস। এই ঘরের হাজারো দামী সম্পদের উজ্জ্বলতাকে মুহূর্তেই ফিকে মনে হচ্ছে।কারণ বিছানায় শোয়া তার সব চাইতে দামী সম্পদের উজ্জ্বলতার কাছে সব কিছুই ফিকে।তার প্রিয়তমা স্ত্রী গভীর নিদ্রায় মগ্ন।মুহূর্তেই নাহিদের নজর পরলো আরজুর গৌরবর্ণ চরণ দুটিতে।কালো পায়জামা বেশ খানিকটা উপরে উঠে গেছে।সেখানে থাকা বাদামি তিলটা যেনো সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে।নাহিদ দৃষ্টি সরিয়ে হাতের ঘড়ি ঘুলে টেবিলের উপর রাখলো।নিশব্দদে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো।

ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আরজুর পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো।আরজুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এই উজ্জ্বল পবিত্র মুখখানা দেখে মুহূর্তেই সারা দিনের ক্লান্তি ভুলে গেলো।আগেও বহুবার রাতে আরজুর বাসার সামনে অপেক্ষা করতো একটিবার প্রিয়তমার মুখখানা দেখার জন্য।আরজুর ভার্সিটির সামনেও কতবার গেছে তার হিসাব নেই।দুর থেকেই প্রিয়তমাকে দেখে মনকে শান্ত করেছে।আর আজ ভাগ্য সেই প্রিয়সীকে তার ঘরের বউ করে নিয়ে আসলো।তার বউ।আসলেই বিশ্বাস হচ্ছেনা সেই বাসন্তী শাড়ি পরা কিশোরী মেয়েটা আজ তার বউ।

নাহিদ আলতো হাতে আরজুর কোমল ফর্সা গাল ছুঁয়ে দিলো।মুহূর্তেই নাহিদের পিঠ বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।নাহিদ চোখ বুজে সেই শীতলতা অনুভব করলো।মনের মাঝে হাজারো উষ্ণ অনুভূতির সঞ্চার হতে লাগলো।এই মেয়েটা তার কঠিন হৃদয়কে মুহূর্তেই শান্ত করার ক্ষমতা রাখে।দুর থেকে এক কিশোরীকে দেখে নিবরাস নাহিদ ভালোবাসার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি।

নাহিদ আরজুর চুলে আলতো স্পর্শ করে ডাকতে লাগলো।আরজু পিট পিট করে তাকিয়ে নাহিদকে দেখে আবার চোখ বুজে ফেললো।আরজুর এই বাচ্চামতে নাহিদ মুচকি হাসলো।আবার ডাকলো আরজুকে।এইবার আরজু এক লাফে উঠে বসলো।নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো
-“কয়টা বাজে?”

নাহিদ ঘড়িতে সময় দেখে বললো
-” দেড়টা বাজে।”

আরজু হাই তুলতে তুলতে বললো
-” আপনাদের এখানে রাত শুরু হয় দেড়টায় জানতাম না তো?”

আরজুর এই খোঁচাটা নাহিদ বেশ বুঝতে পড়লো।আরজুকে একদম বউ বউ লাগছে। ট্রিপিকাল বাঙালি বউ।নাহিদ মুচকি হেসে বললো

-” নিবরাস নাহিদের রাজ্যে এমন অনেক কিছুই হয়।ধীরে ধীরে জানতে পারবে। এখন উঠে ফ্রেস হয়ে নাও।রাতে না খেয়ে কেনো ঘুমিয়েছো?আমার জন্য মোটেও অপেক্ষা করবে না।আমার আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে।তোমাকে নিজের যত্ন নিজেই করতে হবে। একজন নেতার বউকে মোটেও দুর্বল হলে চলবে না।”

-” মাঝে মাঝে অপেক্ষা মধুর হয়।”

নাহিদ দাড়িয়ে সামনের চুল ব্যাকব্রাশ করতে করতে বললো
-“সেই মধু কখন বিষ হয়ে শিরা উপসরায় দৌড়াবে বুঝতেই পারবে না।”

আরজুর মেজাজ খারাপ হলো।এই মানুষটা কি রোমান্টিকতার কিছুই বুঝে না?খালি নেগেটিভ কথা বার্তা।এমন নিরামিষ বর নিয়ে কি করে দিন কাটবে তার?ভেবেই ঠোঁট ফুলালো আরজু।নাহিদ বলে উঠলো

-” ঠোঁট ফুলিয়ে বসে না থেকে জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো।”

আরজু ফ্রেস হতে চলে গেলো।নাহিদ হেসে বললো
-” পাগলী বউ আমার।”

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_48

সকাল থেকেই আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে।যে কোনো সময় তুমুল বর্ষণের সম্ভবনা রয়েছে।সাবা খানম তারার সাথে সকালের নাস্তা তৈরি করতে ব্যাস্ত।তিনি বার বার ঘড়িতে সময় দেখছেন।নাস্তা রেডি করে তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে তারাকে উদ্দেশ্য করে বললেন

-” তারা জলদি আরজু আর অবনীকে ডেকে তুল।আমার আজ ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে।জলদি নাস্তা শেষ করে বেরুতে হবে।”

কথাটা বলে নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।আরজুকে কোথায় পাবে? মেয়েটা তো এই বাড়িতে নেই।তারা মলিন চোখে সাবা খানমের দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজুর শূন্যতা প্রতিটি দেয়াল অনুভব করতে পারছে।বাড়িটা কেমন খা খা করছে।
সাবা খানম দ্রুত হাত মুছে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলেন।প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর নিয়মকে প্রত্যেক মা বাবাকে হাসি মুখে মেনে নিতে হয়।আরজু তো তার মেয়েই।সেই গাল ফোলা মায়াবতী মেয়েটা যাকে এতো ভালোবেসে আগলে রেখেছে সে আজ অন্যের ঘরে চলে গেছে।বোন আর বোনজামাই মারা যাওয়ার পর এই মায়বী পরীটাকে বুকে তুলে নিয়েছিলেন।মা বাবাকে মনে করে কিশোরী আরজু যখন ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতো তখন যেনো তার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হতো।এই রূপবতী মেয়েটার ভাগ্য তার রূপের মতো এতো সুন্দর কেনো হলনা?তাইতো অতি যত্নে আরজুকে নিজের কাছে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন।

জুবায়ের আহমেদ তখনও ঘুমিয়ে আছেন।সাবা খানম টেবিল থেকে ফোনটা হাতে তুলে আরজুর নম্বর বের করে কল দিবেন কিনা ভাবতে লাগলেন।আরজুর প্রতি তার অভিমানের পাল্লা এখনো ভারী হয়ে আছে। গত দুইদিন আরজু তাকে বেশ কয়বার কল করেছে।কিন্তু তিনি অভিমান করে রিসিভ করেননি।তবে এখন আরজুর গলা শুনতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটা ভালো আছে তো?নাহিদ আরজুকে কোনো কষ্ট দিচ্ছে নাতো? আরজুর পাশে নাহিদকে তিনি একদমই মানতে পড়ছে না।পুরনো ঘা কেমন তাজা হয়ে উঠে।আরজুকে তিনি থামাতে পারেনি।কিন্তু আরজুর কোনো ক্ষতি তিনি হতে দিবে না।

এইসব ভাবনার মাঝেই শাড়ির আঁচলে টান পড়ায় চমকে পাশে তাকালেন।জুবায়ের আহমেদ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সাবা খানম বিরক্ত হয়ে বললেন

-” সকাল সকাল আচল ধরে টানাটানি করছ কেন?”

জুবায়ের আহমেদ মুচকি হেসে বললেন
-” সকাল সকাল বউয়ের আঁচল ধরে টানার মানে বোঝো না?”

-” ঘুম থেকে ওঠার আগেই ফাজলামো শুরু করেছ?”

-” এটা কে ফাজলামো না বউ, রোমান্টিজম বলে।”

সাবা খানম চোখ মুখ কুঁচকে বললেন
-“এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল তবুও তোমার রোমান্স শেষ হয়না।”

জুবায়ের আহমেদ দুষ্টু হেসে বললেন
-” কি যে বলোনা? আমরা চাইলে কিন্তু অবনীর জন্য একটা ভাইয়ের প্ল্যান করতে পারি।”

সাবা খানম একটানে আচল ছুটিয়ে জুবায়ের আহমেদের পিঠে কিল ঘুষি মারতে লাগলেন।আর বলতে লাগলেন
-“অসভ্য লোক। তোমার সাথে আমি আর সংসারই করবো না।”

জুবায়ের আহমেদ সাবা খানমকে ঝাপটে ধরে বললেন
-“কোন এক সময় এই অসভ্য লোকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন ম্যাডাম।”

সাবা খানম ভীষণ লজ্জা পেলেন।মানুষটা তাকে সব সময় লজ্জা দিতে মুখিয়ে থাকে।তখনই আকস্মিক ভাবে রুমের ভেতরে ঢুকে পরলো অবণী।বাবা মাকে এই অবস্থায় দেখে চোখে হাত দিয়ে বললো

-“সরি সরি তোমাদের রোমান্সের টাইমে এসে পড়লাম।”

সাবা খানম দ্রুত উঠে দাঁড়ালেন। কঠিন দৃষ্টি ফেললেন জুবায়ের আহমেদের দিকে।তার পর গম্ভীর স্বরে অবনীকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“দরজায় নক না করে কারো রুমে ঢোকাটা ব্যাড ম্যানার্স অবনী।নেক্সট টাইম যেনো এমনটা না হয়।”

-” আমি কি জানি নাকি তোমরা সকাল সকাল দরজা খুলে রোমান্স করছো।”

অবনীর কথায় সাবা খানম রাগি চোখে অবণীর দিকে তাকালেন। অবণী মিন মিন করে বাবার উদ্দেশে বললো
-” পাপা আমার টাকা লাগবে দিয়ে দাও আমি চলে যাই। কারো অগ্নি দৃষ্টি দেখে ভৎস হতে চাইনা।”

জুবায়ের আহমেদ হেসে বললেন
-” এদিকে আসো মাই প্রিন্সেস। তোমাকে সকল দৃষ্টি থেকে পাপা রক্ষা করবো।”

সাবা খানম রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।অসভ্য বাবার অসভ্য মেয়ে। অবণী বাবার পাশে বসে দুষ্টু হেসে বললো
-“এই অগ্নিকন্যাকে কিভাবে পটিয়েছিলে পাপা? আমাদের জন্য একটা শান্ত,কোমল মা খুঁজতে পারলে না?”

জুবায়ের আহমেদ হেসে বললেন
-“এটাকে বলে অপজিট অ্যাটট্রাকশন।আমি শান্ত মানুষ এই অগ্নিকন্যা কে দেখেই কুপোকাত হয়ে গেছিলাম।”

অবণী মনে মনে হেসে বললো
-” হুম!! তার মানে আমার সাথেও হচ্ছে অপজিট অ্যাটট্রাকশন।আমি অশান্ত কন্যা ওই রোবট মানবকে দেখে কুপোকাত হয়েছি।”

____________________
আরজু পিট পিট চোখে ঘুম থেকে উঠে আসে পাশে চোখ বুলালো।হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো বড়ো ড্রেসিং টেবিলের সামনে। শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন পুরুষটি পাঞ্জাবীর হাতা কনুই অব্দি তুলতে ব্যাস্ত।আরজু সম্মোহন দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখতে লাগলো।সপ্ন পুরুষকে বাস্তবে পেয়ে আরজুর মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো সবটাই সপ্ন।নাহিদ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে মিররের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো
-” গুড মর্নিং আরজু।”

আরজু চমকে গেলো।তার দিকে না তাকিয়ে ও কি করে বুজলো সে উঠেছে?পেছনেও চোখ আছে নাকি? আরজু মুচকি হেসে বললো

-” গুড মর্নিং।”

নাহিদ ড্রয়ার থেকে কিছু কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে বললো
-” ফ্রেস হয়ে আসো আরজু।এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।তার পর আমাকে বের হতে হবে।আর তুমি ক্লাস রেগুলার করছো না কেনো? স্টাডি নিয়ে কখনো কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না।”

আরজু খানিকটা লজ্জা পেলো।যেখানে তার আগে উঠে মানুষটাকে জাগানোর কথা সেখানে সে উজবুকের মতো ঘুমাচ্ছিল।আরজু নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ওয়াসরুমে গেলো।ফ্রেস হয়ে আসতেই দেখলো নাহিদ একটা ফাইলে মুখ গুজে বসে আছে।আরজুকে বের হতে দেখে নাহিদ উঠে দাড়ালো।আর নাস্তা করতে নিচে চলে আসলো।খেতে বসে দেখলো নাহিদ বেশ দ্রুত খাচ্ছে।আরজু একটু চিন্তা করে জিজ্ঞেস করলো

-” আপনার কি অনেক তাড়া আছে নেতা সাহেব?এতো দ্রুত কেনো খাচ্ছেন?”

আরজুর মুখে নেতা সাহেব শুনে নাহিদ মুচকি হাসলো।আরজু তাকে এই নামে সম্মোধন করে সেটা তার অনেক আগে থেকেই জানা।তবে আজ সরাসরি শুনে বেশ ভালো লাগলো।এমন করে কখনো কেউ তাকে ডাকেনি। নাহিদ নরম সুরে বললো

-“সচরাচর আমি এই ভাবেই খাই।আসলে দ্রুত খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে।”

আরজু আড়চোখে নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো
-” খালামণি বলে খারাপ অভ্যাসগুলো ঝেড়ে ফেলাই ভালো।সে যত পুরনো অভ্যাসই হোকনা কেনো।”

-“ঠিক বলেন।কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই খারাপ অভ্যাস থাকা মন্দ না।”

আরজু আর কিছুই বললো না।খালামণি বলতো কারো বাজে অভ্যাসকে বলে কয়ে শুধরানো কঠিন।সেগুলো এমন ভাবে পরিবর্তন করতে হয় যাতে সেই মানুষটা নিজেই টের না পায়।এই লোককে এক দিনে ঠিক করা পসিবল না।তার এই বাজে অভ্যাস গুলোকে ধীরে ধীরে চেঞ্জ করতে হবে।

নাস্তা শেষে নাহিদ আরজুর দিকে একটা ক্রেডিট কার্ড এগিয়ে বললো
-” এই কার্ডটা রাখো আরজু।”

আরজু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।নাহিদ গম্ভীর সুরে বললো
-“তোমার কিছু প্রয়োজন হলে কার্ড ইউজ করে কিনে নিও।এই মুহূর্তে আমার কাছে কেস নেই।”

নাহিদের বলার ধরনে আরজুর বেশ হাসি পেলো।কিন্তু নিজেকে সংযত করে বললো
-“আমার কিছু প্রয়োজন নেই।মাসের শুরুতেই খালামণি আমার একাউন্টে টাকা সেন্ড করে দেয়।”

নাহিদ আরজুর কাছাকাছি এসে দাড়ালো।আরজু খানিকটা চমকে গেলো।নাহিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো।নাহিদ আরজুর হাত ধরে তাতে কার্ডটা গুজে দিয়ে শান্ত সরে বললো

-“বিয়ের পর থেকে বউয়ের সকল দায়িত্ব থাকে স্বামীর উপর।তার প্রয়োজন অপ্রয়জন সবটার দেখার দায়িত্ব স্বামীর।তাছাড়া প্রত্যেক পুরুষ অর্থ উপর্জন করে নিজের প্রিয় মানুষদের জন্য।তারা খরচ না করলে এই অর্থের মূল্য কি আদো থাকবে?”

আরজু শুকনো ঢোক গিললো।মানুষটা এতো কাছে যে আরজু ঠিক মতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।আরজুর ঘন নিঃশ্বাস নাহিদ বুকে আঁচড়ে পড়ছে।নাহিদ মুচকি হেসে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো।আর বললো

-“আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে।কয়দিন যাবত ভীষণ ব্যাস্ততায় কাটছে।আমি জানি বিষয়টা তুমি বুজবে।অন্য সব স্বামীদের মতো সপ্তাহ খানেক ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসা আমার পক্ষে পসিবল না।তুমি অবশ্যই ডিনার সেরে ফেলবে।আমার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।”
আরজু মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।নাহিদ একবার ভাবলো আরজুর কপালে আলতো চুমু খাবে কিনা?কিন্তু জড়তার জন্য সেটা করলো না।আরজুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আরজুর বেশ মন খারাপ হলো।মানুষটা কি ভালো করে বিদায় দিতে পারলো না?বিয়ের আগে ঠিক চুমু খেতে পেরেছে কিন্তু এখন এমন ভাব করছে যেনো চুমু কি জিনিস এই লোক জানেই না।অসভ্য লোক একটা।

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আরজু রুমে চলে আসলো।বিছানার পাশে নাহিদের টিশার্ট পরে আছে।আরজু সেটা তুলে নাকে গুজে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো।মাতাল করা সুবাস।একজন পুরুষের গায়ের সুভাস এই ভাবে কোনো নারী হৃদয়ে সুখের দোলা দিয়ে পারে আরজুর জানা ছিলো না।আরজু মুচকি হেসে টিশার্টে চুমু খেলো।হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই আরজু আঁতকে উঠল।দরজায় নাহিদ দাড়িয়ে আছে।তার দিকে বিস্ময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।ভীষণ লজ্জায় আরজু হতবম্ব হয়ে পড়লো।নেতা সাহেব আবার ফিরে এলেন কেনো?হাতে থাকা টিশার্ট টা পেছনে লুকিয়ে ফেললো আরজু।নাহিদ রুমে ঢুকে টেবিল থেকে একটা ফাইল নিয়ে আরজুর মুখোমুখি দাড়ালো।আরজুর মন চাইছে এক দৌড়ে এই বাড়ি ছেড়ে পালাতে।এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে আরজুর মুখ লাল হয়ে গেলো।লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো।আরজু ভীষণ কান্না পাচ্ছে।মানুষটা কি ভাবছে কে জানে?
আরজুর এই লাজুক মুখখানা দেখে নাহিদের বুকে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।দুর থেকে এই হাসি বহুবার দেখলেও এতটা কাছাকাছি দাড়িয়ে দেখার সৌভাগ্য আজ হয়েছে।নিজের মনের অদম্য ইচ্ছা পূরণ করতে আরজুর চিবুকে আলতো স্পর্শ করে মুখটা উপরে তুলে নিলো।আরজু টলমল চোখে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ মুচকি হেসে আরজুর কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে দিলো।পরম আবেশে আরজু চোখ বুজে নিলো।তার সারা দেহ মৃদু কেঁপে উঠলো।নাহিদ আরজুর কানে ফিসফিসিয়ে বললো

-“রূপবতী মেয়েদের জন্য লজ্জা পাওয়া নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।এই ভাবে লজ্জা পেয়ে কোনো পুরুষের হৃদয়ে আঘাত করা ঠিক না।”

আরজুর মনে হলো বুকে কেউ ঢোল পিটাচ্ছে।নাহিদের ওষ্ঠের উষ্ণ স্পর্শ আরজুর বুকে ঝড় তুলে দিয়েছে।আরজু ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।আরজুর অস্থিরতা দেখে নাহিদ ঠোঁট টিপে হাসলো।আরজুকে আর অসস্তিতে না ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।আরজু চোখ খুলে নাহিদকে আর পেলো না।কিন্তু আরজুর ঠোঁটে বিস্তর হাসির রেখা ফুটে উঠলো।মানুষটাকে যতোটা নিরামিষ ভেবেছে তেমনটা না।
________________
ভর দুপুরে কাজ শেষ করে বাসায় পৌঁছালো লামিয়া।কিন্তু বাসার দরজায় পৌঁছেই বসার ঘরে একজনকে বসে থাকতে দেখে মেজাজ খারাপ হলো।লামিসা লামিয়াকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে বললো
-“দেখো আপু চাচু আমার জন্য কতো সুন্দর ড্রেস এনেছে।তোমার জন্যও অনেক কিছু এনেছে।”

লামিয়া ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-” চুপ চাপ এই ড্রেস তাকে ফিরিয়ে দে।খবরদার এইসবে হাত দিবিনা।”

লামিসা কাদো কাদো মুখ করে বললো
-” তুমি সব সময় এমন করো।এই ড্রেস আমি কিছুতেই দেবো না।”

বলেই দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।লামিয়া ভীষণ রেগে তার চাচার সামনে দাড়িয়ে বললো
-” এই বাসায় কেনো এসেছেন?আর এইসব কেনো এনেছেন?”

লামিয়ার চাচা পান চিবুতে চিবুতে মুচকি হেসে বললো
-” গুরুজনের দেখলে সালাম দিতে হয়।”

-” আপনাকে সালাম দেওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।এইসব নিয়ে বেরিয়ে যান।”

লোকটা ভাবলেশহীন ভাবে আরাম করে বসে বললেন
-” এমন করিস কেন মাইয়া? যা আনছি চুপ চাপ নিয়া নে।খুশি হইয়া দিছি।”

লামিয়া প্রচন্ড রেগে বললো
-“আমাদের জন্য আপনার কিছু করার প্রয়োজন নেই।আর এইসব আপনি দিয়েছেন না কে দিয়েছে ভালো করেই জানা আছে।আপনার পেছনে থেকে যে আপনাকে দিয়ে এইসব করতে বাধ্য করছে তাকে বলে দিবেন কারো দয়া আমি চাই না।আমার প্রতি দয়া দেখলেই নিজেকে পাপ মুক্ত করতে পারবে না।”

লোকটি এইবার উঠে দাড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন
-” মাইয়া মানুষের এতো তেজ ভালো না।উনি কতো প্রভাবশালী লোক জানিস?”

-” উনি যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।তার ভয়ে আপনি কাপতে পারেন আমি না।আমার বাবার গ্রামের ভিটে মাটি আত্মসাৎ করে আমাদের ঘর ছাড়া করেছেন।আবার কয়দিন পরই ওই লোকের ধোলাই খেয়ে সেই সম্পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন।ওই লোকের হাতে ধোলাই খাওয়ার আগে নিজের ভুল বুঝে আসতেন,তবে আপনাকে যথাযথ সম্মান দিতাম।কিন্তু আপনি ওই লোকের ভয়ে এইসব করেছেন।তাই আমার কাছথেকে এর চাইতে ভালো ব্যাবহার কখনোই পাবেননা।”

প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হলেও নিজের রাগ গিলে নিয়ে অর্ধবয়সী লোকটি বললেন
-” তুই দিন দিন বেয়াদব হইয়া যাইতাছস।লোকটা তোরে ভালা জীবন দিতে চাইতাছে আর তুই থু মাইরা সেই সুযোগ পায়ে ফালাইতেছস?”

লামিয়া অংগুল তুলে বললো
-” ওই লোকের কোনো সাহায্য আমার চাই না।নিজে ঘা দিয়ে আবার মলম লাগাতে এসেছে? চাইনা আমার কিছু।”

বলেই লামিয়া লামিসার রুমে চলে গেল।সেখান থেকে জোর করে লামিয়ার হাত থেকে ড্রেস এনে চাচার হাতে ধড়িয়ে দিলো।লোকটা বিরক্ত হয়ে সে সব নিয়ে চলে গেলো।কিন্তু ভুল করে একটা চিরকুট ফেলে গেলো।লামিয়া সেটা খেয়াল করতেই খুলে দেখলো সেখানে লেখা
-” এক পাপী বড়ো ভাইয়ের পক্ষে থেকে ছোট বোন দুটির জন্য ছোট্ট উপহার।এই ভাইটাকে মাফ করে উপহার গুলো গ্রহণ করো বোন।”

লামিয়া চিরকুটটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো।নিজের রুমে এসে চুপ চাপ বসে রইলো। দুচোখ তার অশ্রুতে ভিজে গেলো।এই মানুষ গুলো তার এই দুর্বিষহ জীবনের জন্য দায়ী।লামিয়া নিজেকে শান্ত করে ছোট বোনের কাছে গেলো।লামিসা বিছানায় মুখ গুজে কাদঁছে।লামিয়া বোনের মাথায় হাত বুলাতে গেলে লামিসা হাত ঝেড়ে ফেলে দিল।লামিয়া বুজলো ছোট্ট বোনটা বেশ রেগে আছে।তাই আবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো

-” আমার উপর রেগে আছিস?তোকে কতবার বলেছি এই লোকের দেওয়া কিছু না নিতে?”

লামিসা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো
-” সে আমাদের চাচু হয়।পর কেউ না।কতদিন ধরে এমন একটা ড্রেস কিনার সখ ছিলো।”

লামিয়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। লামিসার মতো সে কেনো কাদতে পারে না? সে কেনো কেঁদে কারো কাছে অভিযোগ করতে পারে না?লামিয়া কাপা গলায় বললো

-” যেই মানুষ গুলো বিপদের দিনে তোকে আরো বিপদের দিকে থেলে দেয় তারা কখনো আপন হয়না।তোর বোনটার সামর্থ অল্প হতে পারে কিন্তু আত্মমর্যাদা অনেক বেশি। কারো দয়া নিয়ে বাঁচতে চাইনা।নিজে পরিশ্রম করে তোর ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে চাই।তোর জন্য অত দামী ড্রেস কিনে না দিতে পারলেও নিজের সামর্থের সর্বোচ্চটা তোকে কিনে দিবো।তবুও রেগে থাকবি?”

লামিসা তখনও বিছানায় মুখ গুজে আছে।লামিয়া মাথা নিচু করে দুফোঁটা অশ্রু ফেলে বললো
-” আমি তোর কোনো ইচ্ছাই পূরণ করতে পারছি না।তোকে ভালো লাইফ দিতে পারছি না।আমি আসলেই ব্যার্থ।”

লামিসা এইবার মুখ তুলে তাকালো।বোনের চোখে অশ্রু দেখে তার কোমল হৃদয় হু হু করে উঠলো। দ্রুত উঠে বড়ো বোনের চোখের অশ্রু মুছে বললো
-” সরি আপু আর এমন করবো না।তুমি প্লিজ কেঁদোনা।তাহলে আমিও কেঁদে দিবো।”

লামিয়া বোনকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরলো।এই পৃথিবীতে তার এই বোনটা ছাড়া আপন কেউ নেই।বাবা মা মারা যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনদের বাস্তব চেহারা তার দেখা হয়েছে।সবাই বড্ডো স্বার্থপর।
_____________
নাহিদ একটা মিটিং শেষ করে নিজের রুমে এসে বসলো।আসিফ এসে জানালো পার্টির কিছু ছেলেরা এসেছে দেখা করতে।নাহিদ তাদের আসতে বললো।ছেলেগুলো আসলে নাহিদ তাদের উদ্দেশ্য বললো
-” খায়রুল আপডেট বল।”

-” ভাই পাশের এলাকায় কয়দিন আগে যেই মেয়েটার রেপ অ্যান্ড মার্ডার কেসের বিষয়ে বলেছেন সেটার ইনভেস্টিগেশন করেছি।কাজটা বিরোধী দলের লিয়াকত আলীর বনপো করেছে।শালা বর্তমানে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গেছে।কাজটা করতে লিয়াকত আলী সাহায্য করেছে।”

নাহিদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নিচের ঠোঁটে আলতো হাত বুলালো।সামনের ছেলেটার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো
-“তোকে কি করতে হবে সেটা তো জানিসই।আকাশ পাতাল যেখানেই লুকিয়ে থাকুক বের কর শালাকে।তার পর কি করতে হবে আমি বুজবো।”

ছেলেটা একটু চিন্তিত হয়ে বললো
-” ভাই লিয়াকত আলী বেশ পাওয়ারফুল আর ভয়ংকর লোক। শু*য়ো*রের বাচ্চা ক্ষমতায় না থাকলেও চরকি ঘুরিয়ে চলছে।সরাসরি ওর বোনপোর দিকে হাত দেওয়া ঠিক হবে?”

নাহিদ চেয়ার দুলিয়ে বললো
-” ওর মতো দুর্নীতিবাজ স্ক্রাউন্ডেলকে নাহিদ ভয় পায়না।ওর মতো সস্তা নেতাকে কি করে রাস্তায় নামতে হয় আমার ভালো করেই জানে আছে।”

ছেলেটা মুচকি হাসলো।নাহিদ ভাই যে কেমন ধড়িবাজ লোক সেটা ভালো করেই জানা আছে।এই লোক ভাই ও তার দাদাজানকে বহু বছর আগে থেকেই টার্গেট করে ক্ষতি করতে চাইছে।কিন্তু পারে উঠেনি।

নাহিদ চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে।লিয়াকত আলী একজন অসৎ,দুর্নীতিবাজ নেতা।বহুদিন যাবত বিরোধী দলের এমপি পদে নিয়োজিত আছে।এই লোকটাকে নাহিদ চাইলেই এক নিমিষেই শেষ করে ফেলতে পারে।কিন্তু নাহিদ চায় এই লোকটার যোগ্য শাস্তি হোক।এতো সহজে এই লোকের মৃত্যু হোক নাহিদ চায়না।এই লোকটা বহু মানুষের সম্পদ লুটপাট করেছে।দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।তাছাড়া এই মানুষটার তার জীবনের কালো অধ্যায়ের সূচনাকারি।লোকটাকে সে এতো সহজে ছাড়বে না।ঠিক সময় মতো ছাই দিয়ে ধরবে।
_________________
নাঈম মাহমুদ বিকেলে ছাদে বসে চা খেতে খেতে প্রকৃতি দেখছেন।মনটা তার বেশ ফুরফুরে।নাহিদকে নিয়ে তিনি এতদিন ভীষণ চিন্তায় ছিলেন।ছেলেটা সারাদিন বাইরে বাইরে ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়।রাজনীতির এই নোংরা খেলা রুখতে যেয়ে ছেলেটা নিজেও সেই কাদার ছিটেফোঁটা গায়ে মেখে ফেলছে।তার অশান্ত রাগী ছেলেটা সবার সামনে শান্ত থাকলেও ভেতরে তার কঠিন রূপটা সম্পর্কে তিনি অবগত।এই ছেলেকে থামানোর কোনো পথ তার জানা ছিলনা।কিন্তু আরজুকে দেখে তার অশান্ত হৃদয় শান্ত হয়েছে।এই একটা মেয়েই পারবে তার ছেলেকে এসব থেকে দূরে রাখতে।সেই কিশোরী আরজুর প্রেমে পড়ে তখনই তার ছেলেটা শান্ত হয়ে গেছে।আর বর্তমানে মেয়েটা তার ছেলের বউ।আর মেয়েটা নাহিদের প্রতি ভীষণ দুর্বল।তার মানে এই মেয়েটা চাইলে নাহিদকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলার ক্ষমতা রাখে। নাঈম মাহমুদ নিজেই জানেনা এই মিরাকেল কি করে হলো।দূরে থাকলেও নাহিদকে তিনি সব সময় চোখে চোখে রেখেছেন।নাহিদ আরজুর কাছ থেকে সব সময় দূরেই থেকেছে।দুর থেকে আরজুকে আগলে রেখেছে।তার পরও আরজু কি করে নাহিদের প্রতি এতটা আকৃষ্ট হয়েছে সেটা বুঝতে পারছেনা।হয়তো এটাই সৃষ্টিকর্তার খেলা।নিয়তি আসলে এই দুজনকে বহু আগেই এক ডোরে বেধে রেখেছিল।তাইতো এতো বাধা বিপত্তির পরও এরা আজ স্বামী স্ত্রী।

দুর থেকে নাঈম মাহমুদকে মুচকি হাসতে দেখলো জেরিন।ছাদে হাঁটতে এসে বাবাকে হাসতে দেখে কৌতুহলী মন নিয়ে বাবার সামনে দাড়ালো।আর বললো
-“ও এম জি।আমার গম্ভীর পাপা আজ মুচকি মুচকি হাসছে।ঘটনা কি?”

নাঈম মাহমুদ চঞ্চল মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
-” হাসছি একটা বিশেষ কারণে।”

-” কি কারণ?”

-” ভাইকে ডেকে আনো।তোমাদের একটা টপ সিক্রেট শেয়ার করবো।”

-” রিয়েলি পাপা।”

জেরিন দৌড়ে তার ভাইকে টেনে নিয়ে আসলো। নাঈম মাহমুদ ফিসফিসিয়ে বললো
-” তোমাদের কাছে এখন যা শেয়ার করবো সেটা একদম সিক্রেট রাখতে হবে।”

দুই ভাই বোন উৎসুক হয়ে বাবার কথায় সম্মতি প্রকাশ করলো। নাঈম মাহমুদ বললেন
-” তোমাদের প্রিয় ভাইজান বিয়ে করে ফেলেছে।”

দুই ভাই বোন অবাক হয়ে বাবার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।তারপর চিৎকার করে বললো
-‘ কি???”

-” হুস!! আস্তে।এই বিষয়ে এখন বাসায় কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।সময় হলে সবাইকে জানাবো।তোমাদের শ্রদ্ধাভাইজান এই মুহূর্তে বিষয়টা পাবলিক করতে চাচ্ছে না।”

জেরিন বললো
-“বড়ো ভাইয়া কাকে বিয়ে করেছে? কবে বিয়ে করেছে?আমাদের জানালো না কেনো?আমি তার একমাত্র বোন হয়েও কিছু জানলাম না।”

নাঈম মাহমুদ হেসে বললেন
-“এইসব প্রশ্ন তোমাদের ভাইকে জিজ্ঞেস করো।”

বলেই তিনি মুচকি হাসলেন।এইবার তার এই চটপটে মেয়ে প্রশ্ন করে নাহিদের মাথা খাবে।জেরিন বললো
-” অবশ্যই করবো।আমাকে না জানিয়ে বড়ো ভাইয়া এতো বড়ো ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো? আমি ভাইয়ার বিয়ের জন্য কতো কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলাম সব ভেস্তে গেলো।”

জেরিনের ছোট ভাই তার মাথায় থাপ্পর মেরে বললো
-” বেকুব একটা।তোর প্ল্যানের গুল্লি মারি।এইদিকে এতো কিছু হলো সেই চিন্তা নেই উনি প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ার চিন্তায় কাদতেছে।”

জেরিন রেগে বললো
-” ছোট ভাইয়া খবরদার মাথায় মারবে না।এমনি আমি পরা মনে রাখতে পারি না।তোমার জন্য একদিন আমার মেমোরি লস হয়ে যাবে।”

-” হলে ভালো হবে।তোকে রাস্তায় ফেলে আসবো।বলবো তুই রাস্তার মেয়ে।”

-” ভাইয়া ভালো হবেনা কিন্তু বলে দিলাম।”

নাঈম মাহমুদ দুজনকে ধমকে উঠলেন।আর বললেন
-” তোমাদের ঝগড়া নিচে যেয়ে করো।”

জেরিন উঠে বললো
-” আমি এক্ষনি ভাইয়ার বাসায় যাবো।ভাইয়ার তো খবর করে ছাড়বো।এক মাত্র বোনকে ছাড়া কি করে বিয়ে করে নিলো জবাব দিতেই হবে।”

বলেই জেরিন নিচে চলে গেলো।নাঈম মাহমুদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন
-” কি তুমি যাবে না?”

-“আমার যাওয়া কি ঠিক হবে?”

-” অবশ্যই।তোমার ভাই হয়।যাবেনা কেনো?আর কেউ না জানুক আমিতো জানি তুমি তোমার ভাইকে কতটা ভালোবাসো।তোমার ভাই রাগী হতে পারে কিন্তু মানুষটা ভালো।”

-” তুমি ভাইয়াকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসো তাইনা?কিন্তু কখনো ভাইয়াকে বুঝতে দাওনা কেনো?”

নাঈম মাহমুদ মলিন হেসে বললেন
-” তোমার ভাইয়ের চোখে আমি অপরাধী।তাই আমি হাজার ভালোবাসা দেখালেও কাছে অবান্তর লাগবে।তাই দুর থেকে ভালবাসাই শ্রেয়।”

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_49

চারদিকে আঁধার নেমেছে।আরজু সুইমিংপুলের পাশে চেয়ারে বসে এক দৃষ্টিতে পুলের নীলাভ জলের পানে তাকিয়ে আছে।এই পুলে তার এখনো নামা হয়নি।অনেক পুলে নামলেও এই পুল তাকে সবচাইতে বেশি আকৃষ্ট করেছে।বেডরুমের পাশে খোলা ব্যালকনিতে পুল এমনটা তো তার কল্পনাতেও আসেনি।এই দারুন আইডিয়াটা তার নেতা সাহেবের মাথায় আসলো কি করে?আসলেই নেতা সাহেব বেশ সৌখিন,রুচিশীল মানুষ।আরজুর ভাবনার মাঝেই তার ফোনে কল আসলো।ফোনের স্ক্রিনে নামটা দেখে আরজু চমকে উঠলো।নেতা সাহেব সচরাচর তাকে কল করে না।আজ কেনো করলো?আরজু কল রিসিভ করেই সালাম দিলো। নাহিদও সালামের জবাব দিয়ে বললো

-” কি করছো আরজু?”

-” কিছু না পুলের পাশে বসে আছি।”

নাহিদ মুচকি হাসলো।বললো
-” এই জায়গাটা তোমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাই না?”

আরজু হেসে বললো
-” হুম ভীষণ ভালো লেগেছে।”

নাহিদ মনে মনে ভাবলো “যাক তার মেহনত কাজে দিয়েছে।এই বাড়ির কাজ চলা কালীন নাহিদ সেই কিশোরী রূপবতী মেয়েটাকে মাথায় রেখে এই রুমের সব কিছু করিয়েছে।নাহিদ তখন সেই কিশোরীর প্রেমে মজে তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন অব্দি করেছিলো।তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাদ তখন হেসে বলেছিল

-” আরজু তো তোকে চেনেই না।অথচ তুই ওকে নিয়ে ভবিষ্যতে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিস?যদি ও তোকে রিজেক্ট করে দেয়?”

নাহিদ বাঁকা হেসে বললো
-“পরীটা আমার ফিলিংস বুজলে ভালো, নাহলে তুলে নিয়ে আসবো।এই নাহিদের বউ একমাত্র আরজুই হবে।না বলার কোনো অপসন নেই।”

সাদ হেসে বললো
-” মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যে রাজনীতির মাঠে নেমে যদি তাদের উপর ক্ষমতার জোর দেখাস তবে ভালো রাজনীতিবীদ হবি কি করে?”

নাহিদ হেসে বলেছিল
-“সবাই আর আমার পরীটা তো এক না।আরজু নামক কিশোরী এই অশান্ত নাহিদের ভালোবাসা।অন্য সবার উপর আমার কোনো অধিকার নেই আছে দায়িত্ব।কিন্তু আরজুর উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।ভালোবাসার অধিকার।সামাজিক রীতিনীতির যেই বৈধতা প্রয়োজন সেই অধিকার নাহয় কয়কবছর পর নিয়ে নিবো।বর্তমানে আমার
ফোকাস শুধু পলিটিক্সে।পরীটা ততদিনে বড়ো হোক।”

তারুণ্যের তেজি ঘোড়ার নেয় নাহিদ তখন বেশ অশান্ত আর অস্থির।রাজনীতির মাঠে সে তখন উত্তাল প্রতিযোগী।একমাত্র এই মেয়েটার ক্ষেত্রেই নাহিদ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।সেই কিশোরী মেয়েটাকে প্রেম নিবেদন করে অসস্তিতে ফেলতে চায়নি।তাছাড়া সেই সময়টায় নাহিদ নিজেই পলিটিক্স নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।অন্য সবার মত প্রেম করার সময় বা সুযোগ কোনোটাই তার হয়ে উঠেনি।রিজেকশনের চিন্তা সে কখনোই করেনি।নাহিদ ভেবেই রেখেছিল সেই কিশোরী যৌবনে পদার্পণ করলেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবে।আর সেই কিশোরীর না বলার কোনো রাস্তাই সে রাখবে না।নাহিদ দুর থেকেই আরজুর প্রতি নজর রেখেছে।তাইতো আরজুর মতো রূপবতী মেয়েটার সামনে কোনো ছেলে দাড়ানোর সুযোগ পায়নি।এতো মায়াবী মেয়েটার পিছু অন্য কোনো ছেলে নেওয়ার সুযোগ পায়নি।নাহিদ সব রাস্তাই বন্ধ করে রেখেছিল।

নাহিদ কখনোই আরজুর প্রেমে পড়ে উত্তাল প্রেমিকের নেয় প্রেমিকার পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়নি।বরং আরজুকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে ভেবে রেখেছিলো।সঠিক সময় এই মায়া পরীটাকে শুধু ঘরে তুলার পালা।তখন সে নিজের ক্যারিয়ারের পিছনে দৌরেছে।কারণ তার বিশ্বাস ছিলো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আরজুকে সে এমনি পেয়ে যাবে।কিন্তু পরবর্তীতে সময় আর পরিস্থতি এতটাই বদলে গেছে যে আরজুকে জীবনসঙ্গী করার চিন্তাটা তাকে মুছে ফেলতে হয়েছে।আরজুকে দুর থেকে শুধু ভালোবেসে গেছে।কিশোরী আরজু যুবতী হওয়ার পরও তার সামনে ভালোবাসার আহ্বান নিয়ে দারায়নি।কিন্তু ভাগ্য তাকে এমন চমক দেবে কে জানত?

আরজুর ডাকে নাহিদ ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসলো।আরজু বললো
-” আপনি খেয়েছেন?”

-” না সময় পাইনি।মিটিংয়ে ব্যাস্ত ছিলাম।মাত্রই ফ্রি হলাম।”

আরজু অবাক হয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নিলো।ঠিক সন্ধ্যে সাতটা বাজে।আরজু হতবম্ব হয়ে বললো
-” সেই সকালে নাস্তা করে বেরিয়েছেন আর এখনো লাঞ্চ করেননি? এমন কি কাজ আপনার?না খেয়ে কিসের কাজ?এই ভাবে তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।যান এক্ষনি লাঞ্চ করুন।”

নাহিদের বুকের মাঝে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।আজ বহু বছর পর কেউ তাকে এই ভাবে খাওয়ার জন্য ধমক দিচ্ছে।নাহিদ হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললো
-” আমি এক্ষনি বের হচ্ছি আরজু।বাসায় এসে একেবারে তোমার সাথে ডিনার করবো।ঠিক আছে?”

আরজু ভীষণ খুশি হয়ে বললো
-” হুম।আসুন আমি অপেক্ষা করবো।”

কল কেটে নাহিদ আসিফকে ডেকে বললো
-” আসিফ গাড়ি বের করো।বাসায় যাবো।”

আসিফ কাচুমাচু করে বললো
-“আসলে স্যার আমাদের এমপি স্যার আপনাকে আজ রাতে তার অফিসে দেখা করতে বলেছে।”

নাহিদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললো
-” এই বিষয়ে আমাকে ইনফর্ম করনি কেনো?”

-” স্যার আপনি মিটিংয়ে ব্যাস্ত ছিলেন তাই।মাত্রই তো ফ্রি হলেন।”

-” হুম।”

বলেই নাহিদ মাথা ঝাঁকালো। আজও হয়তো আরজু কে দেওয়া কথা রাখা হবে না।মানুষ এক জীবনে সব কেনো পায়না? নাহিদ ক্ষমতা,অর্থ এমনকি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পেলেও একই সাথে অনেক কিছু হারিয়েছে।নিজের ব্যাস্ত লাইফকে ছুটি দিয়ে আরজুকে নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু সে চাইলেই পারেনা।নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

-“ঠিক আছে গাড়ি বের করো আসিফ।”
_____________
নাহিদের সাথে কথা শেষ করেই আরজু রুমে আসলো।আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো।ব্রাউন একটা লং কামিজের সাথে কালো গেবাডিং প্যান্ট পরা।আরজু চুল আঁচড়ে নিলো।নেতা সাহেব হয়তো ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।তখনই সুমি হন্তদন্ত হয়ে আরজুর রুমে এসে বললো

-” ভাবী জলদি নিচে আসেন।”

আরজু খানিকটা চমকে উঠে বললো
-” কি হয়েছে সুমি?এমন হাপাচ্ছ কেনো?”

-“ভাবী!!ছোট ভাইজান আর আপা আসছে।”

আরজু কপাল কুঁচকে বললো
-“ওরা কারা?”

সুমি হেসে বললো
-” আরে ভাবী আপনার দেবর আর ননদ আসছে।”

আরজু চিন্তায় পড়ে গেলো।নেতা সাহেব তো বলেছিলো কাউকে বিয়ের বিষয়ে জানায়নি।তাহলে ওরা জানলো কি করে?আরজু নিশ্চিত হওয়ার জন্য বললো
-” ওরা কি আমার বিষয়ে জানে?”

সুমি মিষ্টি হেসে বললো
-” আপা আর ভাইজান খোঁজ খবর নিয়েই আসছে। এসেই আপনাকে খুঁজছে।”

আরজু ফ্রেস হয়ে নিচে নামলো।নিচে নামতেই দেখলো সোফায় আরাম করে বসে আছে মিষ্টি একটা মেয়ে।আরজুকে দেখেই জেরিন হা করে তাকিয়ে রইলো।আর অবাক হয়ে বললো
-” ওহ মাই গুডনেস।তুমি আমার ভাবী?”

আরজু মুচকি হেসে সম্মতি প্রকাশ করলো।সামনে দাড়ানো মিষ্টি পিচ্ছি মেয়েটাকে আরজুর বেশ লাগছে।মেয়েটার মুখের আদল অনেকটাই নেতা সাহেবের মতো।কেমন কৌতুহলী চোখে তাকে দেখছে। জেরিন অবাক চোখে আরজুর কাছে এসে বললো

-” ক্যান আই টাচ্ ইওর চিক?”

আরজুর হাসি পেলো।কিন্তু সেটা সংযত করে নিলো।মেয়েটা আসলেই অনেক কিউট।শুধু শুধু আরজু চিন্তা করছিলো।আরজু হেসে বললো
-” হোয়াই নট?”

জেরিন কোমল স্পর্শে আরজুর ফর্সা গালে ছুঁয়ে বললো
-“ইউ আর সো বিউটিফুল ভাবী। আই সও এ বিউটি লাইক ইউ ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম ইন মাই লাইফ।”

আরজু হেসে ফেললো।মেয়েটার কথার ধরন বলে দিচ্ছে মেয়েটা সহজ সরল।আরজু জেরিনের ফর্সা গাল টেনে দিয়ে বললো
-” তুমিও ভীষণ প্রেটি ননদীনী।সো কিউট।”

জেরিন হেসে ফেললো বললো
-” আমি ভাবতেই পারিনি বড়ো ভাইয়া এমন হুট করে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবে।তবে এখন বুঝতে পারছি ভাইয়া তো তোমার মতো হুর পরী দেখেই পিছলে গেছে।তাইতো জলদি ধরে বেধে বিয়ে করে ফেলেছে।”

আরজু মেকি হেসে মনে মনে বললো
-” কে যে কাকে ধরে বেধে বিয়ে করেছে সেটা জানলে আরো চমকে যাবে ছোট ননদী।তোমার ভাই পিছলেছে কিনা জানিনা?কিন্তু আমিতো সেই কবেই পিছলে পুরো ডুবে গেছি।কিন্তু তোমার ভাইয়ের সে সব দেখার সময় কই?”

জেরিন আবার প্রশ্ন করলো
-” ভাবী তোমাদের লাভ ম্যারেজ ছিলো?”

আরজু মাথা নেরে না জানালো।কারণ বিয়েটা তার জন্য লাভ ম্যারেজ হলেও নেতা সাহেবের জন্য ছিলো না।জেরিন বিজ্ঞদের মতো ভেবে বললো
-” তার মানে নিশ্চই ভাইয়া তোমাকে দেখেই বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে?”

আরজু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তাই বললো
-” তোমার ভাইয়া আসলে তার কাছ থেকে জেনে নিও।আচ্ছা আমার দেবর নাকি এসেছে সে কোথায়?”

-“ছোট ভাইয়ার কল আসতে বাইরে আছে।এক্ষনি এসে পড়বে।”

কয়েক মুহূর্ত পরই একজনকে ভেতরে আসতে দেখে আরজু চমকে গেলো।সামনের মানুষটাও বেশ চমকে আরজুর দিকে তাকালো।আরজু চরম অবাক হয়ে মুখ ফস্কে বলে ফেললো
-” জাহিদ??”

জাহিদ নিজেও আরজুকে দেখে অবাক হয়েছে।তার মানে নাহিদ ভাইয়া আরজু আপুকে বিয়ে করেছে?এদের মধ্যে কানেকশন হলো কি করে?কিন্তু জাহিদ তো তাদের ভার্সিটির আশেপাশেও তার ভাইকে দেখেনি।তবে কি ভাইয়া সেদিন ভার্সিটিতে এসে আরজু ভাবীকে দেখে পছন্দ করেছেন?কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব?এতো অল্প সময়ে কাউকে দেখে বিয়ের মত সিদ্বান্ত নেয়ার মানুষ নিবরাস নাহিদ না।তাহলে আসল ঘটনা কি?

আরজুর মুখে জাহিদের নাম শুনে জেরিন বললো
-” ভাবী তুমি ছোট ভাইয়াকে চেনো?”

আরজু মাথা উপর নিচ নামিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।জেরিন অবাক হয়ে বললো
-” ভাইয়া তুমিও ভাবীকে চেনো?”

জাহিদ বললো
-“হে চিনি।আমার সিনিয়র।”

জেরিন চিন্তায় পড়ে গেলো।জাহিদের পাশাপাশি দাড়িয়ে জাহিদের কানে ফিসফিস করে বললো
-” আস্তাগফিরুল্লাহ।ছোট ভাইয়া কোনো ভাবে ভাবীই সেই সিনিওর আপু নাতো যার পেছনে তুমি মজনু হয়ে ঘুরছো?দুই ভাই এক মেয়ের পেছনে পরো নিতো?”

জাহিদ বিরক্ত হয়ে বললো
-” আরে না বেকুব।আমার নজর কখনোই ভাবীর উপর পড়েনি।আমার নজর তো ভাবীর বেস্ট ফ্রেন্ডের উপর।”

জেরিন অবাক হয়ে বললো
-” সিরিয়াসলি? ভাবির বেস্ট ফ্রেন্ড?দুই ভাই দুই বেস্ট ফ্রেন্ডকে বউ করে আনবে?বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং হবে।”

জাহিদ জেরিনের মাথায় থাপ্পর বসিয়ে বললো
-” তোর এই ছোট্ট মাথায় বেশি চাপ নিসনা?পড়ে মাথা ফেটে যাবে।”

জেরিন রেগে বললো
-” রাগে না তোমার থাপ্পড়ে আমার মাথা একদিন ঠিক ফাটবে।”

জেরিন আরজুর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে এক দৃষ্টিতে আরজুর দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজু এতে খানিকটা বিব্রত হলো।তাই মেকি হেসে বললো
-” আমার সম্পর্কে কি করে জানলে? তোমার ভাইয়া নিশ্চই বলেনি?”

-” উফফ ভাবী!! তুমি আসলেই অনেক ইন্টেলিজেন্ট।”

জেরিন আরজুর পাশে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো
-” তোমাকে একটা সিক্রেট বলি ভাবী।তোমার বিষয়ে আমাদের পাপা বলেছে।আমি আর ভাইয়া মাম্মা কে না জানিয়েই চলে এসেছি।”

আরজু অবাক হয়ে বললো
-” তোমাদের মাম্মা?”

-” হুম মাম্মা!! মাম্মা কে তোমার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।আসলে ভাইয়ার সাথে মাম্মার তেমন ভাব নেই।দুজই দুজনকে এড়িয়ে চলে।”

আরজু ঘটনার কিছুই বুজলো না।নেতা সাহেব বলেছেন তার মা মারা গেছেন।কিন্তু জেরিন বলছে অন্য কিছু।জাহিদ হয়তো আরজুর মনের দ্বিধা দ্বন্দ বুঝতে পেরেছে।তাই হালকা কাশি দিয়ে বললো

-” আমাদের মাম্মা নাহিদ ভাইয়ার জন্মদাত্রী নন। আমাদের মাম্মা পাপার সেকেন্ড ওয়াইফ।”

আরজু এতক্ষনে বিষয়টা বুঝতে পারলো।অনেকক্ষণ গল্প করার পরও নাহিদের আসার কোনো নাম নেই।আরজু বার বার ঘড়িতে সময় দেখছে।এতো সময়ের মাঝে তো নেতা সাহেবের চলে আসার কথা।আরজুর মনটা ব্যাকুল হতে শুরু করলো।জেরিন নাহিদের নম্বরে বার বার কল করলো।কিন্তু নাহিদ তুললো না।নাহিদ মাত্রই মিটিং শেষ করে গাড়িতে বসেছে।জেরিনের এতো কল দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো।নাহিদ কল ব্যাক করতেই জেরিন রেগে বললো

-” কেনো কল করেছ।দরকার নেই কল করার।থাকো তোমার কাজ নিয়ে।”

নাহিদ চোখ বুজে দুই আঙুল কপালে ঘষতে লাগলো।প্রচন্ড মাথা ধরে আছে তার।তবুও ছোট বোনের অভিমান কমাতে বললো
-” এমন রেগে আছিস কেনো?”

-” রাগ করবো না?আমার ভাই কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে বসে আছে।আমাকে অব্দি জানালো না।আমি তো তার কিছুই না।”

নাহিদ ফট করে চোখ খুলে তাকালো।কিছু একটা ভেবে বললো
-” এই খবর তোদের নাঈম মাহমুদ জানিয়েছে তাই না?”

-” ছি!! ভাইয়া এই ভাবে বলছো কেনো?সে তোমারও পাপা।”

-” তুই বেশি পেকে গেছিস?”

-” পাকার কি দেখলে?অবশ্য তোমার উপর যতো রাগ অভিমান ছিলো সেটা একদম নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেছে।”

নাহিদ বাঁকা হেসে বললো
-“কেমন দেখলি ভাবীকে?পছন্দ হয়েছে?”

জেরিন অবাক হয়ে গেলো।তার ভাই বুজলো কি করে যে ভাবীকে দেখতে এসেছে?জেরিন বললো
-” ফাটাফাটি ভাইয়া।এই রূপসী ভাবীর সন্ধান পেলে কি করে?”

নাহিদ মুচকি হেসে বললো
-” আকাশ থেকে টপকে সোজা আমার কাছে এসে পড়েছে।আমার জন্যই হয়তো আল্লাহ পাঠিয়েছে।”

জেরিন হেসে উঠলো।পরক্ষণে মন খারাপ করে বললো
-” ভাইয়া এখন তো তোমার জীবনে মিষ্টি ভাবী এসে পড়েছে।অন্তত এখন এতো রাত অব্দি বাইরে থেকো না।এই ভাবে কাজের মাঝে ডুবে থেকো না।আমরা তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে এসেছি।ভাবী ভেতরে ভেতরে অনেক ছটফট করছিলো।তোমার অপেক্ষায় বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছিলো।ভাবীকে দেখে যতটুকু বুজেছি সে বেশ নরম মনের মানুষ।তাকে আগলে রেখো ভাইয়া।সে মোটেও অবহেলা ডিজার্ভ করেনা।”

নাহিদের বুকটা ভার হয়ে আসলো।সবাই তাকে বেশ কঠোর মনে করলেও আরজুর ব্যাপারে নাহিদ বেশ ইমোশনাল।নাহিদ প্রায় রাত বারোটার দিকে বাসায় পৌঁছালো।বাসায় পৌঁছেই দেখলো আরজু সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে।নাহিদের বেশ খারাপ লাগলো।বউটা তার অপেক্ষা করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।নাহিদ পাঞ্জাবীর হাতা কনুই অব্দি তুলে আরজুর পাশে বসলো।মায়াবী মুখটায় বিষণ্ণতার ছায়া।এই বিষণ্ণতার কারণ সে নিজেই।নাহিদ তো আরজুকে এই কারণেই নিজের জীবন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছে।কিন্তু পাগলীটা তো বুজলই না।

নাহিদ আলতো স্পর্শে আরজুর মুখের এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।মুহূর্তেই তার নজর পড়ল আরজুর নরম কোমল ওষ্ঠ জোড়ায়।এই ওষ্ঠের নেশায় সে বহু আগেই পড়েছে।সেদিন সাজেকে নেশায় বুদ আরজুকে দেখে নাহিদের নিজেরই টালমাটাল অবস্থা হয়েছিলো।আরজু যখন তাকে প্রথম চুমু খেলো নাহিদ কয়েক মুহূর্তের জন্য ব্লাঙ্ক হয়ে পড়েছিল।সেই মুহূর্তে সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি।বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে একটু স্পর্শ করার জন্য উন্মাদ হয়ে পড়েছিলো।বোকা বউটা সেই রাতের কথা সম্পূর্ণ মনে করতে পারেনি।সেদিন অনুভূতির উত্তাপে আরজু নিজের গায়ের টপসটা অব্দি খুলে ফেলেছিলো।আরজুকে এক ঝলক সেই ভাবে দেখে কোথাও না কোথাও তার পুরুষ মনে কামুকতার জন্ম হয়েছিলো।কিন্তু আরজুর মুখে “ভালোবাসি নেতা সাহেব” শব্দটা শুনে নাহিদের হুস ফিরে।ভালোবাসা শব্দটিকে কলঙ্কিত করার মতো গর্হিত অপরাধ সে করেনি।কারণ আরজু নাহয় সেঞ্চ নেই তার তো আছে।সে আরজুকে নিজের কাছথেকে দূরে সরিয়ে দেয়।রুমের লাইট অফ করে আরজুকে টপস পরিয়ে আরজুকে তার রুমে নিয়ে যায়।কিন্তু মেয়েটা তখনও নাহিদকে ঝাপটে ধরে রেখেছিলো।নাহিদ আরজুর কপালে চুমু খেয়ে সেদিন বলেছিলো

-” আপনি হয়তো আমার ভাগ্যে নেই আরজু।আজ বেহুস হয়ে আপনি নিজের মনের কথা বলছেন।তবে প্রমিজ করছি, যদি কোনোদিন সম্পূর্ন সজ্ঞানে নিজের অনুভূতি আমার সামনে বক্তো করতে পারেন আমি আপনাকে ফিরিয়ে দেবো না।”

অতীত ভেবে নাহিদ বাঁকা চোখে হাসলো।সে আসলেই তার প্রমিজ রেখেছে।সে আরজুকে সেদিন আসলেই ফেরাতে পারেনি।নাহিদ আলতো স্পর্শে আরজুর ছোট্ট কোমল দেহটাকে কোলে তুলে নিলো।একদম নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো।রুমে এসে আরজুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আর নিজে চলে গেলো ফ্রেস হতে।আরজু পিট পিট করে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।মানুষটা নিজের এই অদ্ভুত সত্তাকে সবসময় লুকিয়ে রাখে।এই মানুষটা উপর থেকে যতোটা কঠিন ভেতর থেকে ততটাই নরম।
________________
সকাল সকাল লাইব্রেরীতে বসে আছে রিমি।মূলত শুভর অপেক্ষা করছে।আজকাল শুভ ঠিক মতো ক্লাস করছে না।আজ রিমি একটা টপিক নিয়ে ডিসকাস করতে শুভকে আসতে বলেছে।কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছে শুভ এখনো আছে না।রিমি গভীর চিন্তায় বিভোর।শুভ এই ভাবে চললে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করবে।ওকে যেভাবেই হোক স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।ভাবনার মাঝেই রিমি দেখলো শুভ এসেছে।কাধের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।রিমির বুকটা ধুক ধুক করছে।শুভকে যখনই দেখে তখনই তার এমন ফিল হয়।শুভ বিরক্ত হয়ে বললো
-” যা ডিসকাস করার শর্টকাটে কর।আমার আবার বেরুতে হবে।”

রিমির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। আজও শুভ ক্লাস করবে না? তাই বললো
-” আজ ক্লাস করবি না?”

শুভ কপাল চুলকে বললো
-” না।”

রিমির বেশ রাগ লাগছে।এই ভাবে নিজেকে অন্ধকারে কেনো থেকে দিচ্ছে শুভ? খানিকটা রেগে রিমি বললো
-” আজ ক্লাস না করে কোথাও যেতে পারবি না।সামনে ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম। এখন থেকে সিরিয়াস না হলে রেজাল্ট খারাপ করবি।”

-” যেখানে আমার জীবনটাই এলোমেলো সেখানে রেজাল্ট দিয়ে কি করবো?”

-” একদম ফালতু কথা বলবি না।জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।”

শুভ মলিন মুখে বললো
-” আমার জীবন সেখানেই থেমে গেছে যেখানে আরজু আমাকে ফেলে দূরে সরে গেছে।”

রিমির খানিকটা রেগে বললো
-” আরজু তোকে ফেলে কোথাও যায়নি।সে এতো বছর যে ভাবে ছিলো সে ভাবেই আছে।বরং তুই ওর জন্য থেমে আছিস।আরজুর লাইফে তুই আগেও বন্ধু হিসেবে ছিলি আজও আছিস।”

শুভ বিরক্ত হয়ে উঠে যেতে চাইলে রিমি হাত ধরে আটকে নিলো। জোর করে বসিয়ে বললো
-“আমাকে রাগ দেখবি না।চুপ চাপ নোট খাতা বের কর।”

শুভ অবাক হয়ে রিমির দিকে তাকালো।সব সময় শান্ত থাকা মেয়েটা আজ কেমন রেগে তাকে সাসাচ্ছে।শুভ মুচকি হেসে বললো
-” তুই তো দিন দিন ঝাঁসির রানী হয়ে যাচ্ছিস।”

রিমি চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আর মনে মনে বললো
-” তোকে স্বাভাবিক লাইফে ফিরিয়ে আনতে আমার যা হওয়ার প্রয়োজন তাই হবো।”

__________________
সকালে নিশান বাইকে করে অফিসে যাচ্ছিল।রাস্তার মধ্যেই বার বার তার ফোন বায়ব্রের হচ্ছে।বিরক্ত হয়ে বাইক পাশে থামিয়ে কল রিসিভ করলো। অপর পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো।
-” এই কোথায় আপনি?”

নিশান চিন্তায় পড়ে গেলো।কে এই মেয়ে এমন ভাবে কথা বলছে যেনো তার কাছের কেউ।নিশান স্বাভাবিক ভাবেই বললো
-” কে বলছেন?”

-” কে মানে আমাকে চেনেন না?”

-” না।কে আপনি?পরিচয় দিন।”

মেয়েটা লাজুক সরে বললো
-” আমার একটাই পরিচয়।আমি আপনার বউ।নিজের বউকে চিনতে পারছেন না।কি আজব লোক আপনি?”

নিশান থতমত খেয়ে গেল।বলে কি?নিশান খানিকটা রেগে বললো
-” আপনি আমার সাথে মজা করছেন?”

-” আরে ধুর!! জামাইর সাথে কি কেউ মজা করে।জামাইর সাথে রোমাঞ্চ করে।”

নিশান এমনি আজ অফিসের জন্য লেট হয়ে পড়েছে।তার উপর এই উটকো ঝামেলা।তাই প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললো
-” আমার অফিসের জন্য লেট হচ্ছে।আপনার ফালতু বক বক শোনার সময় নেই।”

-” আপনি তো একটা রসকষ হীন লোক।বউকে কি করে আদর করতে হয়ে সেটাই জানেন না।”

নিশান রেগে বললো
-“আমি বউকে আদর করতে জানি নাকি জানিনা ,সেটা আমার বউই ভালো বুঝবে আপনাকে বুঝতে হবে না।”

বলেই নিশান কল কেটে অফিসের উদ্দেশ্য চলে গেলো।ওপর দিকে অবনি হাসতে হাসতে তার বান্ধবী সুরভীর কোলে ঢলে পড়লো। সুরভী নিজেও খিল খিল করে হাসছে।
-” তুই এই লোকটাকে এমন ডিস্টার্ব করছিস কেনো?”

-” আরে ওই রোবট মানবকে ডিস্টার্ব না করলে আমার পেটের ভাত হজম হয়না।সেদিন রিমি আপুর উপস!! সরি ননদীর জন্মদিনে যেয়ে ননদীনির কাছ থেকে উনার নম্বর নিয়ে এসেছি।”

সুরুভি চিন্তিত হয়ে বললো
-” তুই কি আসলেই ওই ভাইয়াটার প্রেমে পড়েছিস?উনি কিন্তু তোর অনেক সিনিয়র।”

-” এইজ ডাজন্ট ম্যাটার।আমি তো রোবট মানবকে জ্বালিয়ে যেই তৃপ্তি পাই সেটা অন্য কাউকে করে পাবো না।সারা জীবন জ্বালানোর জন্য হলেও আমার তাকে চাই।”

সুরভী হেসে বললো
-” তাহলে প্রপোজ করে ফেল।”

অবণী লাজুক ভঙ্গিতে হেসে বললো
-” সময় হোক বলবো।”