#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_68
বেশ কিছুদিন আগের কথা।আরজু তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে।বরাবই সে বাবা মায়ের অতি আদরের আহ্লাদী মেয়ে।তার উপর সে খালামনির চোখের মণি।পৃথিবীতে ঠিক যতোটা সুখ থাকলে কোনো দুঃখ মানুষকে ছুঁয়ে যেতে পারেনা ঠিক ততটাই সুখের নীড় ছিলো আরজুর।বাবা মা আর একমাত্র মেয়ে আরজু।বেশ সাজানো গোছানো সংসার।বাবা মা দুজনই বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ছিলেন।প্রণয়ের শুরুটা সেখান থেকেই।পরবর্তীতে একই অফিসে দুজন কর্মরত ছিলো।বাবা মা দুজনই কর্মজীবী হলেও আরজুর প্রতি তারা ছিলেন বেশ যত্নশীল।বাড়ির কাছাকাছি খালামনির বাসা হওয়ায় আরজুর অবাধ যাতায়াত ছিলো সেখানে।খালামণি আর খালুজান অসম্ভব ভালোবাসে তাকে।অবনি তখন সবে ক্লাস থ্রীতে পড়ে।দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে।বেশ আনন্দেই কাটছিলো আরজুর জীবন।অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো।
কিন্তু সেই গল্পের মোড় এভাবে পাল্টে যাবে সেটা কেউ ধারণা করতে পারেনি।সেদিন বাবা মা দুজনেরই একটা প্রজেক্টের কাজে শহরের বাইরে সিলেট যেতে হয়েছে।আরজু তখন তার খালামণির বাসায় চলে গেলো।বাবা মা কোনো কাজে শহরের বাইরে গেলে আরজুকে তার খালামণি বাসায় রেখে নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।আরজু খালামণিকে পেয়ে ভীষণ খুশি।তাদের তিনদিন পর ফিরে আসার কথা থাকলেও কাজ শেষ হওয়ার দরুন পরদিন রাতেই রওনা হয়।সেদিন রাতেও বাবা কল করে বলছিলো ভোরের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।আরজু খুশি মনে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চলে গেছিলো।কিন্তু খুব ভোরে খালামনির ডাকে তার ঘুম ভেঙে যায়।পিটপিট চোখে তাকিয়ে খালামনির অশ্রুসিক্ত ,অস্থির,অশান্ত মুখ দেখে আরজুর বুক কেপে উঠে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন বিপদের আভাস পেয়ে যায় কিশোরী মন। আরজু যখন হসপিটালে পৌঁছায় ততক্ষণে মেয়েটা কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।বাবা মায়ের এক্সিডেন্টের কথা শুনেই মেয়েটা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেছিল।হৃদস্পন্দন থমকে গেছিলো কয়েক মুহূর্তের জন্য।সেটাই ছিল আরজুর জীবনের সবচাইতে বিভৎস সকাল।মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে বাবা মায়ের সুস্থতা কামনা করে গেছে মেয়েটা।
হসপিটালে পৌঁছেই জানতে পারলো তার বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন।সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত।তবে ডক্টরের মুখে তার মা স্পট ডেথ কথাটা শুনে আরজুর শিরা উপশিরা যেনো রক্তশূন্য হয়ে পড়ল।চঞ্চল মেয়েটা মুহূর্তেই কেমন থমকে গেছিলো।শুভ্র ,কোমল আদুরে মুখটায় তখন বিষাদের নীল রঙের ছেয়ে গেছে। তার স্বপ্নের পৃথিবী যেনো এক মুহূর্তেই ধুলিৎসায় হয়ে পড়েছিল।কয়েক ঘন্টা আগেই তো তার মা হাসি মুখে আরজুকে দুষ্টুমি করতে মানা করলো।ফিরে এসে তাকে তার পছন্দের ভিডিও গেম কিনে দেওয়ার প্রমিজ করলো।আর এখন তার মা কেমন নিথর হয়ে পড়ে আছে। রক্তে ভেজা মায়ের দেহটাকে বুকে জড়িয়ে শুধু চোখের পানি ফেলেছিলো মেয়েটা।মায়ের হাতে খাবার না খেলে যে তার তৃপ্তি আসে না।কে খাইয়ে দিবে তাকে?কে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে?আরজুর হাজারো আবদার কে ধৈর্য ধরে শুনবে?আরজুর মায়ের থেতলে যাওয়া রক্তাক্ত হাতের অসংখ্য চুমু খেয়েছিলো সেদিন। এর পর যে এই হাতে চুমু খাওয়ার সুযোগ হবেনা।এটা ভেবেই বুকের মধ্যে ভয়ানক কাপন ধরেছিল।
কিন্তু আরজুর জন্য যে আরো ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করছিল।তার শেষ সম্বল বাবাও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাকে এতিম করে চিরদিনের জন্য চলে গেছিলো।আরজু একই দিনে বাবা মাকে হারিয়ে মুহূর্তেই এতিম হয়ে পড়েছিল।সেই বিভৎস দৃশ্য মনে পড়লে আরজু আঁতকে উঠে।একটা হাসিখুশি পরিবার চোখের পলকেই ধ্বংস হয়ে গেলো।বাবা মায়ের মৃত্যু আরজুর কিশোরী মনে তীব্র আঘাত হানে।খালামণি আরজুকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আরজু তখন ছিলো মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত।সারাদিন নিজেকে রুমে বন্ধী করে রাখে। কারো সাথেই কোনো কথা বলেনা।সেই মুহূর্তে বাইরে কি হচ্ছিল আরজু কিছুই জানে না।সে তো নিজের মধ্যেই ছিলনা।চঞ্চল মেয়েটার এই নির্বাক,স্থির রূপ সাবা খানমকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছিলো।তিনি আরজুকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকেন।কিন্তু আরজু যেনো নিজেকে সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।ঠিক তখনই প্রকৃত বন্ধুর মত শুভ আরজুর পাশে দাঁড়ায়। আরজুকে স্বাভাবিক করার কাজে লেগে পড়ে।আরজুকে একপ্রকার জোর করে বাড়ির বাইরে বের করে।আবার নিয়মিত স্কুলের নিয়ে যেতে থাকে।সকলের চেষ্টায় আরজু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।কিন্তু যেই শূন্যতা তার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে সেটা কিছুতেই পূরণ করা সম্ভব ছিল না।
লিভিং রুমের বড়ো নরম সোফায় স্থির হয়ে বসে আছে আরজু। চোখে মুখে তীব্র ক্লান্তি।রিমি আরজুর পাশেই বসে আরজুর বহু চেপে ধরে রেখেছে।এই দুর্বল শরীর নিয়ে যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে মেয়েটার।
আরজু ভাবতেই পারছেনা তার জীবনের সেই বিভৎস অতীতের পেছনে সেই মানুষটা আছে যাকে ছাড়া আরজু নিজের অস্তিত্বকে কল্পনা করতে পারে না।সেই মানুষটাকে নিয়ে সে নতুন সপ্ন সাজিয়েছে যে তার পূর্বের স্বপ্নের দুনিয়া উজাড় করে দিয়েছে।আরজু কিছুই ভাবতে পারছে না।আরজু মনে প্রাণে চায় এই সব মিথ্যা হোক।যেই হাতে তার বাবা মায়ের রক্ত লেগে আছে সেই হাত আরজু শক্ত করে কি করে ধরবে?
শুভ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে অনেক কিছু ভাবছে।সেদিন আংকেল আন্টির এক্সিডেন্টের বিষয়ে সব জানলেও কে বা কার দ্বারা হয়েছে সেই বিষয়ে কিছুই জানেনা।তখন তাদের বয়স কতো বা ছিলো?এসব ঘেঁটে দেখার বিষয় কখনোই তাদের মাথায় আসেনি।শুভ আরজুর দিকে তাকালো।আরজুকে সে যতটুকু চেনে, যদি নাহিদ ভাই সত্যি এসবের জন্য দায়ী হয় তবে আরজু সেটা মানতে পারবে না।মেয়েটা একদম ভেঙে পড়বে।যেমনটা অনেক বছর আগে বাবা মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল।আরজু ভীষণ ইমোশনাল মেয়ে।আর বাবা মায়ের প্রতি আরজুর ইমোশন অন্য লেভেলের।শুভর ভয় হচ্ছে।ভীষণ ভয়।মেয়েটা কোনো ভুল সিদ্বান্ত না নিয়ে নেয়?শুভ উঠে এসে আরজুর পাশে বসে আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-” আরজু তুই এখন বড়ো হয়েছিস।অনেক কিছু বুঝতে শিখেছিস।বিয়ের ডিসিশন যেমন ইমোশনাল হয়ে তাড়াহুড়া করে নিয়েছিস ,আমি চাইনা আজকেও তেমন কিছু কর।সব কিছুর সত্যততা যাচাই করে দেখ।উল্টাপাল্টা কিছু ভাবিস না।”
আরজু থমথমে গলায় বললো
-” আমি কিছুই ভাবছি না।আমি আগে তার সাথে কথা বলতে চাই।”
ক্লান্তিতে আরজু চোখ বুজে নিলো।নেত্রকোনা থেকে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।ভেসে উঠলো হসপিটালের বেডে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় থাকা বাবা দেহখানি।মুখে অক্সিজেন মা্ক পড়া অবস্থায় জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছেন।বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।আরজুকে দেখে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে মেয়ের মাথায় অনেক কষ্টে হাত বুলিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলেছিলেন
-“ম…. মাই প্রিন্সেস।পাপা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।”
কিশোরী আরজু নিজেকে সামলাতে না পেরে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিল।অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরিয়ে ছিলো সেদিন।বির বির করে কতো কিছু বলেছিলো।কিন্তু আরজুর সব কথা শোনার সময় যে বাবার ছিলনা।সেই শেষ বার বাবার বুকে মাথা রেখেছিল।তারপর..তারপর।
আরজু আর ভাবতে পারছে না।ঠিক তখনই সদর দরজা দিয়ে হড়বড় করে প্রবেশ করলো নাহিদ।সাইফুল তাকে জানিয়েছে আরজুর অসুস্থতার কথা।নাহিদ মিটিং মাঝখানে ফেলেই ছুটে এসেছে প্রিয়তমার কাছে।বাসায় ঢুকেই নাহিদের চোখ পড়লো বিধ্বস্ত, ক্লান্ত,দুর্বল আরজু দিকে।যার মাথায় ব্যান্ডেজ।হাতের কয়েক জায়গায় ছিলে গেছে।আরজুর চোখের পাতার নিচে নিটোল দুটি ডাগর চোখ কেমন রক্তিম হয়ে ফুলে আছে।নাহিদের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসলো।এই মেয়েটার ভেজা চোখে তাকালে নাহিদের পুরো দুনিয়া অন্ধকার মনে হয়।নাহিদ একপ্রকার দৌড়ে আরজুর কাছে আসলো।ফ্লোরে দুই হাঁটু ভাঁজ করে আরজুর মুখটা আঁজলা ভরে কপালের ব্যান্ডেজে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বললো
-” তুমি ঠিক আছো আরজু?এসব কি করে হলো?”
আরজু ফ্যালফ্যাল করে নাহিদের পানে চেয়ে রইলো।যেই চমৎকার পুরুষটি তার সামান্য অশ্রু দেখে এতটা বেসামাল হয়ে পড়ে সে কি করে আরজুর সারা জীবনের কান্নার কারণ হতে পারে?নাহিদ আবার বললো
-” তুমি এতো বেখেয়ালি কেনো? নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই তোমার।”
আরজু তখনও নিস্তব হয়ে নাহিদকে দেখছে।আরজুর নিরবতা নাহিদের ভেতরে তীব্র ভয় সঞ্চার করছে। হঠাৎ কি হলো আরজুর? এতটা বিক্ষিপ্ত কেনো দেখাচ্ছে মেয়েটাকে?
রিমি শুকনো ঢোক গিললো।শুভর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
-” শুভ চল আমরা বাগানে হেঁটে আসি।ওরা কথা বলুক।”
শুভ একবার নাহিদ আর একবার আরজুর দিকে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
আরজুর ফ্যাকাসে মুখ দেখে নাহিদ আরজুকে জড়িয়ে ধরলো।আরজু যেনো নিষ্প্রাণ হয়ে স্থির ভাবে বসে আছে।নাহিদ আরজুর কাধে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো
-” আমার বউটা কি কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছে?এতো শান্ত আরজুকে একদম ভালো লাগছে না।বলো কি হয়েছে?আমি সব ঠিক করে দিবো।”
আরজু থমথমে গলায় বললো
-” আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো।সেটার সঠিক আর সংক্ষিপ্ত জবাব দেবেন।”
নাহিদ খানিকটা চিন্তিত ভঙ্গিতে আরজুর দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজু নিজেকে সামলে ভাঙ্গা গলায় বললো
-” আমার মাম্মি পাপার মৃত্যুর জন্য কি আপনি দায়ী?”
নাহিদের মনে হলো কেউ তাকে উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ফেলে দিয়েছে।যেখানে কোনো কূল কিনারা নেই।আরজুর করা কঠিন প্রশ্নে নাহিদের বক্ষে দুরু দুরু কম্পন সৃষ্টি হলো।আরজু আবারো একই প্রশ্ন করলো।নাহিদ মেঝেতে স্থির দষ্টিতে মাথা নত করে রইলো।আরজুর হৃদস্পন্দন বেড়েই চলছে।মন বলছে একবার নেতা সাহেব বলুক সব মিথ্যে।কিন্তু আরজুর সচল মস্তিষ্ক নাহিদকে অপরাধীর ন্যায় নত হওয়া দেখে অস্থির হয়ে উঠেছে।আরজু অস্থির হয়ে বললো
-” আমি আপনার জবাবের জন্য অপেক্ষা করছি।”
নাহিদ স্থির হয়ে গেছে আরজুর সেই প্রশ্নে।আরজু জবাবের জন্য অপেক্ষারত বুঝতে পেরে নাহিদ মাথা উপর নিচ করে নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।আরজু সেই জবাব বুঝতে পেরে সাথে সাথেই চোখ বুজে নিলো।উপরের পাটির দাত চেপে ধরলো নিচের নরম ওষ্ঠে।আখি যুগল দিয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্র।এই একটা জবাব আরজুকে ভেতর থেকে গুড়িয়ে দিলো মুহূর্তেই।আরজু আবার জিজ্ঞেস করলো
-“এতো কিছুর পরও কয়েক বছর আগে আমার বাসায় আপনার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলো? মানে আপনি আমার সম্পর্কে আগে থেকেই সবটা জানতেন।”
নাহিদ চোখ তুলে আরজুর দিকে তাকালো।যেই চোখে নাহিদ আকাশচুম্বী ভালোবাসা দেখতে পেত সেই চোখে আজ বিষাদ,অবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছে।নাহিদ আরজুর কোমল হাতে নিজের রুক্ষ হাত রেখে শান্ত হয়ে বললো
-” আরজু আমি…..!”
-” হ্যাঁ বা না?”
আরজুর সেই কঠিন গলা শুনে নাহিদের বুক কাপছে।এতো বছর ঠিক যেই ভয় পেয়েছে আজ তা সত্যি হয়ে তার সামনে দাড়িয়েছে।কি জবাব দিবে নাহিদ? কি করে বুঝাবে আরজুকে?মুহূর্তেই নাহিদের দুচোখ ভরে উঠলো।আরজুর দিকে তাকিয়ে বললো
-” হ্যাঁ। কিন্তু আমি…”
আরজুর হাত তুলে নাহিদকে থামিয়ে দিল।দুচোখ ভারী হয়ে আসলো আরজুর।শক্ত গলায় বললো
-“তার মানে আপনি এতো দিন আমাকে চরম বোকা বানিয়েছেন।আমাকে না চেনার ভান করেছেন, ভালোবাসার নাটক করেছেন।এই বিয়ে,এই সম্পর্ক সবটাই একটা ধোঁকা?আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন?”
নাহিদের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসলো।আরজুর চোয়ালে আলতো স্পর্শ করে বললো
-” তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আরজু।এমন কিছুই না।আমি তোমাকে কোনো ধোঁকা দেইনি।আমার অনুভূতিতে কোনো মিথ্যা ছিলো না।”
আরজু ভেজা চোখে নাহিদের দিকে তাকিয়ে শান্ত সুরে বললো
-” কোনটা ভুল?আপনার জন্য আমি এক দিনের মধ্যে বাবা মা দুজনকে হারিয়েছি।তাদের রক্তাক্ত থেতলে যাওয়া দেহ আমাকে আজও স্বস্তিতে বাঁচতে দেয়না।আপনার সামান্য বেখেয়ালি জন্য আজ আমি এতিম।যেই মানুষটার হাতে আমার বাবা মায়ের রক্ত লেগে আছে সেই মানুষটাকে আমি মনে প্রাণে ভালোবেসেছি?আর সেই মানুষটাই আমার সাথে কতো দক্ষ অভিনয় করে গেছে।”
নাহিদ কোনো মতে নিজের উগলে আসা কান্নাকে দমিয়ে বললো
-” আরজু ইটস জাস্ট অ্যাক্সিডেন্ট। আমি ইন্টেনশনালি কিছুই করিনি। এমন কিছু হবে আমি জানতাম না। সেদিনের পরিস্থিতি সম্পূর্ন অন্যরকম ছিল।লেট মি এক্সপ্লেইন।”
আরজু এবার ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।রেগে বললো
-“জাস্ট এক্সিডেন্ট?আপনি জানেন এই জাস্ট এক্সিডেন্ট আমার জীবনটাকে কতটা এলোমেলো করে দিয়েছে?আমার পুরো পরিবারকে এক সেকেন্ডের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে?কি এক্সপ্লেইন করবেন আপনি?এতো সবের পরও আপনি থেমে থাকেননি।আমাকে পাওয়ার জেদ চেপে ধরলেন।বিয়ের প্রস্তাব অব্দি পাঠালেন?অথচ ভার্সিটিতে আমাকে না চেনার দারুন অভিনয় করে গেছেন। দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়ে এসেছেন।আমার অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন।সব সত্যি আমার কাছে সূক্ষ ভাবে লুকিয়েছেন।আর আমি অন্ধের মত আপনাকে বিশ্বাস করে গেছি।সবাই ঠিক বলে।আমি ইমোশনাল ফুল।তাইতো আমাকে খুব সহজেই বোকা বানিয়েছেন।কেনো করেছেন এমন?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি?আপনার এই মিথ্যার জালে আমাকে কেনো জড়ালেন?মিথ্যা ভালোবাসা, মিথ্যা সংসারের স্বপ্ন কেন দেখালেন?”
-” আমি তোমাকে কোনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখাইনি আরজু।আমার ভালোবাসা,অনুভূতি সবটাই সত্যি।তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছি।কিন্তু..”
-“তাহলে বিয়ের দিন সত্যিটা কেনো জানালেন না?”
-” তোমাকে হারাবার ভয়ে।আমার মনে তোমাকে পাবার তীব্র আকাঙ্খা আর লোভ সৃষ্টি হয়েছিল।তাই সত্যিটা বলতে পারিনি।”
-” আপনি কি ভেবেছেন মিথ্যা দিয়ে সবকিছু ঢেকে ফেলতে পারবেন?আপনার মতো উচ্চবিত্ত পরিবারের করোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা,জেদ হয়ে আমি আরজু কখনই থাকতে চাইনা।যেই সম্পর্কের শুরুটাই প্রতারণা, মিথ্যা,ছল চাতুরী তে গড়া সেই সম্পর্কে কখনোই ভালোবাসা থাকতে পারেনা।”
নাহিদ আরজুর দুহাত চেপে ধরে ভাঙ্গা গলায় বললো
-” আমার জন্য তোমার যা ক্ষতি হয়েছে সেটা পূরণ করা কখনোই সম্ভব না।ক্ষমা চাওয়ার কোনো মুখ আমার নেই।এই একটা অপরাধবোধ আমাকে সারাজীবন তাড়া করে বেরিয়েছে।আমি নিজেকে কখনই ক্ষমা করতে পারিনি।তোমার সামনে দাড়ালেই নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হতো।এই অপরাধবোধের জন্যই আমি বিয়ের পর তোমার সাথে সহজ হতে পারছিলাম না।কিন্তু আমি নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি।আমার অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য তুমি আমাকে যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব।”
আরজু ডান হাতের পিঠে নিজের অশ্রু মুছে নিলো।থমথমে গলায় বললো
-” শাস্তি তো আপনাকে অবশ্যই দেবো।নিঃসঙ্গতা,একাকীত্বের চাইতে বড়ো শাস্তি আর কিছুই হতে পারেনা।আপনাকে আমি সেই শাস্তিটাই দিলাম।আরজুর ভালোবাসা দেখেছেন।কিন্তু হৃদয় ভাঙ্গা আরজুর কঠোরতা দেখেননি।আরজু যেমন ভালোবাসতে জানে।প্রতারক,বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদীদের তেমন ঘৃণা করতেও জানে।”
আরজু বসা থেকে উঠে দাড়ালো।সামনে আগাতেই পেছন থেকে কেউ তার হাত ধরে থামালো।আরজু পেছন ফিরে দেখলো নাহিদ তখনও মেঝেতে হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।সেই অবস্থাতেই এক হতে আরজুর হাত ধরে কম্পণরত গলায় বললো
-” এতো বড়ো শাস্তি আমাকে দিওনা আরজু।আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।তোমাকে পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারবো না।”
আরজু কঠিন সুরে বললো
-” আপনাকে দেখলেই আমার বাবা মায়ের হত্যাকারী মনে হচ্ছে।একজন প্রতারক,বিশ্বাসঘাতক মনে হচ্ছে।এই অবস্থায় আপনার সাথে থাকা আর বিষ পান করা সমান।আপনি কি চান আমি সেই বিষ প্রতিনিয়ত পান করি?”
নাহিদ নিস্তব্দ হয়ে আরজুর হাত ছেড়ে দিল।নিজের প্রিয়তমকে বিষ পান করানোর মতো শাস্তি কি করে দিতে পাড়ে?তাকে এই ভাবে শাস্তি না দিয়ে বুকে ছুরি চালিয়ে দিতো। নাহিদ উফ!! শব্দ পর্যন্ত করতো না।কিন্তু আরজু তার মেরুদন্ড ভেঙে চলে যাচ্ছে। এবার নাহিদ উঠে দাঁড়াবে কি করে?
আরজু আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালো না।দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় সুমি তাকে আটকালো।মেয়েটা কাদতে কাদতে বললো
-” ভাবী এই ভাবে বাড়ি ছেড়ে যাবেন না।ভাইজান ভীষণ কষ্ট পাবে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কতো ভুল বুঝাবুঝি হয়।তাই বলে বাড়ি ছেড়ে কেউ চলে যায়? এটা আপনার ঘর,আপনার সংসার।আপনি না থাকলে সব যে শূন্য হয়ে পড়বে।”
আরজু মলিন হাসলো।যেই হাসিতে রয়েছে তীব্র বিষাদের ছাপ।আরজু এক পলক পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে বললো
-” আমিও সব কিছু আমার ভেবেছিলাম।কিন্তু এই ঘর,সংসার কিছুই আমার নয় সুমি।সবটাই আমার ভ্রম ছিলো।আজ সেই ভ্রম কেটে গেলো।যেই ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে এই বাড়িতে এসেছিলাম আজ দেখি সেই ভালোবাসা ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যে,ছলনা।আর বিশ্বাস হচ্ছে কাচের মতো।একবার ফাটল দেখা দিলে আর জোড়া লাগানো যায়না।তোমার ভাইজান আমার সেই বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি টাই যে ভীষণ নড়বড়ে।তোমার ভাইজান দারুন অভিনয় করে গেছে আমার সাথে।জীবনে প্রথম আমার নিজের সিদ্ধান্তে ভীষণ আফসোস হচ্ছে।আসি সুমি।ভালো থেকো।”
আরজু দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো।আরজুকে বেরিয়ে আসতে দেখে শুভ আর রিমিও এগিয়ে আসলো।আরজুর থমথমে মুখ দেখে শুভ ভয় পেয়ে গেলো।এই মেয়ে নির্ঘাত কোনো ঝামেলা করেছে। আরজুর এই সাংঘাতিক রাগকে শুভ নিজেও ভয় পায়।সবসময় হাসি খুশি থাকা মানুষ গুলোর অভিমান হয় ভয়ঙ্কর।
আরজু কঠিন সুরে বললো
-” আমাকে বাসায় নিয়ে চল শুভ।”
-” মানে? আরজু প্লিজ পাগলামি করিস না।মাথা ঠাণ্ডা করে সিদ্বান্ত নে।এমন রাগের মাথায় কিছু করিস না।।স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ককে এই ভাবে নষ্ট করা যায় না।সব কিছু ছেলে খেলা পেয়েছিস?”
আরজু ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো
-“কিসের সম্পর্ক? যেই সম্পর্কের মধ্যে সামান্য তম সত্যতা নেই সেই সম্পর্কের জোরে থাকতে বলছিস?যেখানে আমার ভালোবাসা,বিশ্বাসকে দিনের পর দিন মিথ্যার আড়ালে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে সেই সম্পর্কের কথা বলছিস?চাইনা এমন সম্পর্ক।কোনো বিশ্বাসঘাতক, প্রতারককে আমার জীবনে জায়গা দিতে চাই না।”
রিমি হতবম্ব হয়ে আরজুর দিকে তাকিয়ে রইলো।এই কঠোর আরজুকে তো কখনোই দেখা হয়নি তার।চঞ্চল, ইমোশনাল,আহ্লাদী আরজুকে দেখেই অভ্যস্ত।যেই মেয়েটার চোখে মুখে মায়া উপচে পড়তো সেই চোখে আজ প্রথম সাংঘাতিক ক্রোধ দেখতে পেলো।
রাগে আরজু রীতিমতো কাপছে।শুভ আর কিছুই বললো না।এই মুহূর্তে আরজু প্রচন্ড ট্রমার মধ্যে আছে।তাই সঠিক,ভুল কোনো কিছুই অনুধাবন করতে পারছে না।এই ক্রোদের আগুনে ফেটে পড়া আরজুকে বেশি ঘাটালোনা শুভ।চুপচাপ আরজুকে নিয়ে রওনা দিলো।
____________
অফিস থেকে একপ্রকার দৌড়ে আসলেন সাবা খানম।আরজু আহত অবস্থায় বাসায় এসেছে শুনেই তিনি অস্থির হয়ে পড়েছেন।বাসায় এসেই আরজুকে থমথমে অবস্থায় সোফায় বসা দেখতে পেলেন।জুবায়ের আহমেদ তখনও অফিসের পোশাকে আরজুর সামনে চিন্তিত হয়ে বসে আছে।হয়তো মাত্রই এসেছেন।সাবা খানমকে দেখে আরজু রাগান্বিত চোখে তাকালো। সাবা খানমের গলা শুকিয়ে আসলো।এমন কঠিন দৃষ্টি কেনো ফেলছে? তিনি আরজুর পাশে বসে পড়লেন।আরজুর কপালের ব্যান্ডেজ দেখে অস্থির হয়ে বললেন
-” কি করে হলো এসব?নাহিদ কিছু করেছে?”
আরজু শক্ত গলায় বললো
-” নেতা সাহেবকে তুমি এতো অপছন্দ কেনো করো?”
সাবা খানম চমকে গেলেন।থতমত খেয়ে বললেন
-” সেটা তো আগেই বলেছি।নেতা ফেতা আমার পছন্দ না।”
-” শুধু মাত্র পলিটিশিয়ান বলে অপছন্দ নাকি অন্য কিছু খালামণি?”
সাবা খানম কি বলবে বুঝতে পারছেন না।মেয়েটাকে আজ অন্য রকম লাগছে।তিনি একবার জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন
-” অন্য কিছু কি?”
-” তুমিও আমাকে মিথ্যা বলেছ খালামণি? সব সত্যি আমার কাছে লুকিয়েছ?”
-” কি বলছিস? কিসের মিথ্যা?”
-” মাম্মা পাপার গাড়ি দুর্ঘটনার পেছনে যেই মানুষটা ছিলো সেটা নেতা সাহেব ছিলেন।আর এই সত্যিটা আমার কাছে কেনো গোপন করলে?”
সাবা খানম শিউরে উঠলো।এই কঠিন সত্যির মুখোমুখি আরজুকে তিনি কখনোই করতে চায়নি।তাহলে কি করে জানলো আরজু?আরজু আবার বললো
-” তুমি জানতে আমি ওই মানুষটার প্রতি দুর্বল তবে কেনো বলনি সব?”
সাবা খানম চুপসে গেলেন।নিচু স্বরে বললেন
-“আমি চেয়েছিলাম তোকে আটকাতে।কিন্তু পারিনি।তোকে সব বলে পুনরায় সেই ট্রমার মধ্যে ফেলতে চাইনি।তাই তো তোকে রওশান এর সাথে মিট করতে পাঠিয়েছিলাম।যাতে তোর মাথা থেকে নাহিদের ভূত নেমে যায়।কিন্তু তুই কি করেছিলি?এই কারণেই আমি তোদের বিয়েটা মানতে পারিনি।কিন্তু নাহিদের প্রতি তোর দুর্বলতা দেখে সেটা মানতে বাধ্য হয়েছি।তবে সারাক্ষণ ভয় হতো তুই ভালো আছিস কিনা? কিন্তু তোকে নাহিদের সাথে এতো সুখী দেখে আমি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম।তোর সুখ ছাড়া আর কিছুই চাইনি আমি।”
আরজু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ভুল তার।সে মানুষ চিনতে ভুল করেছে। একজন বিশ্বাসঘাতক কখনোই কাউকে ভালবাসতে পারে না। এতদিন যা ছিল তবে কি সবটাই অভিনয় ছিল?আরজুর মনে হচ্ছে সে নাহিদকে কখনো বুঝতেই পারেনি। মানুষটা কখন সত্যি বলেছে আর কখন মিথ্যা কিছুই আরজু বুঝতে পারছে না।
___________
অন্ধকারাচ্ছন্ন কামরায় একের পর এক সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে নাহিদ।তার নিঃসঙ্গ জীবনে ভোরের আলো হয়ে এসেছিলো আরজু।আর আজ আবার তাকে সেই নিঃসঙ্গতার আধারে ভাসিয়ে দিয়ে পাষাণের মতো চলে গেলো।একবার ভাবলো না নাহিদ কি করে বাঁচবে?এতো নিষ্ঠুর আচরণ কেনো করলো মানুষটা?তার ভালোবাসা চোখে পড়লো না।সবটাই মিথ্যা মনে হচ্ছে?
হঠাৎ ঘরে আলো জ্বলে উঠলো।নাহিদ আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো আসফি এসেছে।নাহিদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলো না।আসফি দেখলো সারা ঘরের ফ্লোরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ।সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরে নিঃশ্বাস ফেলা যাচ্ছে না।পাশের টেবিলে পড়ে থাকা প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে নিজেও ধোঁয়া উড়তে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল আসফি।আর কৌতুক সুরে বললো
-” যাহ শালা! বউয়ের বিরহে পুরো ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিকদের মতো বিরহ পালন করতে বসে গেছিস? নিবরাস নাহিদকে এসব মানায়?বউয়ের হাত পা বেঁধে একটু আদর সোহাগ করলেই আইসক্রিমের মত গলে যেত।”
নাহিদ কোনো জবাব দিলো না। আসফি দেখলো নাহিদের বিধ্বস্ত মুখখানা।দুচোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।নিতান্তই পুরুষ বলে হয়তো চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না।তাছাড়া সেটা নাহিদের ব্যাক্তিত্বের সাথেও যায়না। আসফি কিছুক্ষণ পর শান্ত সুরে বললো
-” আরজুকে বিষয়টা কে জানিয়েছে জানিস?”
নাহিদ শান্ত সুরে বললো
-” ধারণা করতে পারছি।”
-” ওই শালাকে জীবিত কেনো রেখেছিস?অনেক আগেই ওকে জেন্ত পুতে ফেলা প্রয়োজন ছিল।আরজুকে তোর সবটা বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন।মেয়েটা তোকে ভুল বুঝেছে।”
-“কি বুঝাবো বল? সে তো আমাকে প্রতারক, বিশ্বাসঘাতকের ট্যাগ আগেই দিয়ে দিলো।আর কতো দিন এই অপরাধের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে বলতে পারিস?আমার ভালোবাসা আজ তার কাছে সাজানো নাটক মনে হচ্ছে।”
-” এই ভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।তোর আরজুকে সবটা বুজিয়ে বলতে হবে।সেদিন কি পরিস্থিতি ছিল সবটা এক্সপ্লেইন কর।”
-” সে কিছুই শুনতে চায়না।আসলে আমার জন্য এই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো।পরোক্ষ ভাবে আমিই তো সেই মানুষগুলোর মৃত্যুর জন্য দায়ী।আমার জন্য দুই দুটির পরিবার ধ্বংস হয়ে পড়েছে।এতদিন লামিয়ার চোখে অপরাধী ছিলাম।আজ থেকে আরজুর চোখে ও অপরাধী হয়ে থাকবো।”
-” এই একটা বিষয় নিয়ে তুই অনেক বছর হীনমন্যতায় ভুগেছিস।আর কতো? তাছাড়া তুই নিজের জীবনে আরজুকে টেনে নিয়ে আসিস নি।ও নিজ ইচ্ছায়, সজ্ঞানে তোর জীবন এসেছে।তাহলে তোকে একা দোষারোপ করছে কেনো?”
-” আরজু ভীষণ অভিমানী।ওর এই সাংঘাতিক অভিমান ভাঙ্গা আমার জন্য বেশ কঠিন হবে।আদো ভাঙতে পারবো কিনা কে জানে?”
নাহিদ আবার সিগারেটে টান দিয়ে ধোওয়া উড়ালো।আজ চেয়েও আরজুকে সে আটকাতে পারেনি।আরজুর চোখে তার জন্য যেই ঘৃনা দেখেছে সেটা নাহিদ কিছুতেই ভুলতে পারছেন।এমন একটা দিন তার সামনে এসে দাঁড়াবে সেটা নাহিদ জানতো,কিন্তু এতো বাজে ভাবে আসবে সেটা জানতো না।সাদমান মানুষটা তার জীবনে একটা অভিশাপ।কিন্তু এবার আর নাহিদ কোনো ছাড় দেবে না।আজকের এই পরিস্থিতির জন্য সাদমান দায়ী।বহুবছর আগে সবাই যা জেনেছে বুঝেছে সবটাই ভুল ছিলো। সাদমানকে এবার কোনো গডফাদার বাঁচাতে পারবে না।তার গডফাদারকে এইবার নাহিদ দেখে নিবে।নাহিদের চুপ থাকাকে যদি তারা নাহিদের দুর্বলতা ভেবে থাকে তবে চরম ভুল করবে।
#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_69
নাহিদ বরাবরই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন,সুশীল ব্যাক্তিত্ব,বিবেকবান,বিচক্ষণ,গভীর চিন্তাধারা সম্পন্ন মানুষ।বাবার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়ন হলেও দাদাজান আর চাচার সাথে ছিলো তার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক।নাহিদের মধ্যে একজন লিডারের সকল গুণাগুণ দেখে দাদাজান ভীষণ খুশি ছিলেন।দুই ছেলেকে পলিটিক্সের দিকে আগ্রহী করতে না পারলেও নাতির প্রতি তার ছিলো অগাধ বিশ্বাস।তার ফলশ্রুতিতেই নাহিদ বেশ অল্প বয়স থেকেই পলিটিক্সের ধাপগুলো ধরে নিতে পেরেছে। আসফি তার বাল্যকালের বন্ধু।দুজন একসাথেই একই ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নেয়।এই একজনকে সে নিজের অনুভূতি বিনা দ্বিধায় বলতে পারে।সেখানে নাহিদ আর আসফির আরো অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব হয়।এক বিশাল গ্যাং তৈরি হয়।নাহিদ বরাবর দাপটের সাথেই চলেছে।তার এই ভিন্ন ব্যাক্তিত্ব তখন অনেক মেয়েকেই আকৃষ্ট করে।সুদর্শন,আভিজাত্যে ঘেরা ছাত্রনেতার প্রতি সব মেয়েদেরই প্রবল দুর্বলতা ছিল।কিন্তু নাহিদ তখন এই প্রেম,ভালোবাসার মতো ঝঞ্জালে না পড়ে নিজের ক্যারিয়ারের ফোকাস করতে ব্যাস্ত ছিল।
নাহিদ একদিন খেয়াল করলো তাদের ক্লাসের একটা ছেলে বেশ চুপচাপ থাকে। কারো সাথেই তেমন মেশে না।পরনের মলিন জমা কাপড়ের সাথে সাথে তার মুখেও কেমন বিষণ্ণতা।কৌতহল বসত একদিন ছেলেটার সাথে কথা বলে।প্রথমে ছেলেটা বেশ সংকোচ বোধ করলেও নাহিদের বন্ধুসুলভ ব্যাবহারে খানিকটা সহজ হয়।নাহিদ জানতে পারে ছেলেটার বাবা মা নেই।চাচার বাসায় থেকেই লেখা পড়া করছে।চাচী তাকে তেমন পছন্দ করেনা।ফলে নানা ভাবেই ছেলেটা অত্যাচারিত হয়।নাহিদের ভীষণ খারাপ লাগে ছেলেটার জন্য।সে উচ্চবিত্ত পরিবারে বড়ো হলেও কেনো যেনো মানুষের দুঃখ,কষ্ট নাহিদকে অনেক বেশি প্রভাবিত করতো।কঠিন ব্যাক্তিত্বের ভেতরে নাহিদের যে একটা অতি কোমল সত্তা বিদ্যমান ছিল।
নাহিদ কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব করে নেয়।নিজের পাশাপাশি রাখে।ছেলেটাও নাহিদের সান্নিধ্য পেয়ে কিছুদিনের মধ্যেই নিজের বেশভূষা বদলে ফেলে। চলন বলনেও এসেছে স্মার্টনেস।তাদের মধ্যে একটা শক্ত বন্ধনের তৈরি হতে থাকে।নাহিদ ছেলেটাকে রাজনীতিতে পদার্পণ করায়।নিজের সকল কাজ ছেলেটাকে স্বাচ্ছন্দে সপে দেয়।একসময় যেই ছেলেটার দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না সেই ছেলেকে সকলেই এক নামে চিনতে শুরু করে।সাদমান শেখ।নাহিদ আর বাকি বন্ধুরা তাকে সিড নাকেই ডাকতো।সকলেই সিড কে নাহিদের ডান হাত বলতো।নাহিদের ছত্রছায়ায় সিড রাজনীতির খুঁটিনাটি সবটাই জানতে শুরু করে।নাহিদ, আসফি আর সিড এদের বন্ধুত্বের গল্প তখন সকলের মুখে মুখে।একটা সময় আসফি রাজনীতির রাস্তা থেকে সরে “ল” তে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়।সেই সময়টায় সিড এর সাথে নাহিদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ়ো হয়।নাহিদ সাদমান কে প্রচন্ড বিশ্বাস করতো।নিজের ভাইয়ের চোখেই দেখতো।
অনেক সময় অর্থ আর ক্ষমতা মানুষের মধ্যেকার সরলতাকে নষ্ট করে দেয়।মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে অহংকার,লোভ লালোসা।অভাবের সংসার থেকে উঠে আসা ছেলেটা হঠাৎ অর্থ,ক্ষমতা খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে নিজের সততা সামলাতে পারেনি।সেই সহজ সরল সাদমানের মধ্যে তখন অদৃশ্য লোভ সৃষ্টি হয়।দ্রুত অর্থ উপার্জন আর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার নেশা তাকে পেয়ে বসে।সকলের মুখে নাহিদের জয় জয়গান একটা সময় সাদমানের বুকে বিষের কাটার মতো বিধতে থাকে।নাহিদের ক্ষমতা, আভিজাত্যের উপর তীব্র ঈর্ষা জন্ম নে।সবটাই যে সে নিজের জন্য চায়।নাহিদ হয়ে উঠে সাদমানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।পার্টির নেতারা সব সময় নাহিদকেই গুরুত্ব দিয়েছে।যেটা সাদমান একটা সময় মানতে পারছিল না।
তবে সেদিন রাস্তায় স্কুল ড্রেস পরা রাগিণী এক মায়াবী কন্যাকে দেখে তার বুকে তোলপাড় শুরু হয়।নিতান্তই একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে সাদমানের মনে হয়েছে অর্থ আর ক্ষমতাকে এই মেয়ের জন্য নিমিষেই পায়ে পিষিয়ে ফেলা যায়।এই মায়াবী জীবনে থাকলে আর কিছুই চাইনা।
কিন্তু সেদিকেও নাহিদের আধিপত্য। যেই নাহিদকে কখনোই কোনো নারীর প্রতি আগ্রহ বা আসক্ত হতে দেখেনি সে কিনা হঠাৎ তার পছন্দের মেয়েটির প্রতি আগেই আসক্ত হয়ে পড়েছিলো?এই মেয়েটাকে নাকি নাহিদের আগেই মন দিয়ে বসে আছে।সেদিন সাদমানের ক্রোধ যেনো আকাশচুম্বী হয়ে গেল।নাহিদের সামনে খুব ভালোবাসা,বিশ্বস্ততা দেখালেও অন্তরে জমা ছিলো বিষ।যেটা নাহিদ ধরতে সক্ষম ছিল না।সাদমানের এই দ্বৈত সত্তাকে বিরোধী দলের লোকেরা কাজে লাগায়।সাদমানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা পাওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করে।আর সাদমান সেটা মুহূর্তেই লুফে নেয়।সাদমান কে দিয়ে তারা নাহিদকে পার্টি থেকে সরাতে চেয়েছে।আর সেই জায়গায় সাদমান কে বসিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছেন।সাদমান সকলের আড়ালে পার্টির গোপন তথ্য বিরোধী দলের কাছে পাচার করতে থাকে।নাহিদ যতক্ষণে সাদমানের নিকৃষ্ট চেহারা দেখতে পেরেছে ততক্ষণে হয়তো অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।
_________________
সাবা খানম আরজুর রুমের প্রবেশ করলেন।এই ভোর দুপুরেও সারা ঘরে অন্ধকার ছেয়ে আছে।তিনি সামনে এগিয়ে বারান্দায় ভারী কটন সরিয়ে দিতেই রুমে সোনালী আলোয় ঝলমল করে তুললো।তীক্ষ্ণ আলোর ঝটা চোখে পড়তেই আরজু চোখ কুচকে কাথা মুড়ি দিয়ে উল্টপাশে ঘুরে গেলো।সাবা খানম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।অতীতে যেই অন্ধকারে ঢলে পরেছিল মেয়েটা আজ আবার সেই পথেই হাঁটছে।তিনি আরজু পাশে বসে সিল্কি ঝলমলে চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। জোর করে কাথা সরিয়ে দেখলেন মেয়েটার মায়াবী চোখ জোড়া অসম্ভব ফুলে লাল হয়ে আছে।দীর্ঘক্ষণ কান্নার ফলেই এমনটা হয়েছে।সাবা খানমের ভেতরে ভেতরে ভীষণ অপরাধ বোধ হচ্ছে।নাহিদের বিষয়ে আরজুকে আরো আগেই বলা প্রয়োজন ছিল।মেয়েটা নাহিদের সাথে ইমোশনালি অ্যাটাচ হয়ে গেছে।চাইলেও কখনো নাহিদকে ভুলতে পারবে না।তাইতো এতটা কষ্ট পাচ্ছে।তিনি শান্ত হয়ে বললেন
-“আমি কি আমার আরজুকে এই ভাবে ভেঙে পড়তে দেখতে চেয়েছি?আমার মেয়েটা কি এতো দুর্বল?”
আরজু সাবা খানমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।চোখের কার্নিশ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু।আরজু কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
-“আমার সাথে কেনো এমন হলো খালামণি? জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের প্রতি আমি তীব্র ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছি,তাকে অসম্ভব ভালোবেসেছি আর সেই মানুষটা আমার সাথে দিনের পর দিন অভিনয় করে গেলো?আমি মানুষটার মিথ্যাচার কেনো বুঝতে পারলাম না?”
-” আরজু আমি তোকে কখনোই কোনো কিছুতে বাধা দেইনি।তুই যখন নাহিদকে বিয়ে করে নিলি আমি সেটা কিছুতেই মানতে পারিনি ।আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।তোকে সব সত্যি বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই এইভাবে ভেঙে পরবি ভেবে বলার সাহস পায়নি।এমনকি নাহিদকে এখনো মন থেকে মেনে নেইনি।কিন্তু আমার কেনো যেনো মনে হয়েছে ছেলেটা তোকে সত্যি ভালোবাসে।তাতে কোনো অভিনয় নেই।”
আরজু করুন সুরে বললো
-“সবটাই মিথ্যা।আমি দিনের পর দিন তার পিছে ছুটেছি।কিন্তু মানুষটা আমাকে না চেনার ভান করে গেছে।এমনকি বিয়ের পরও একটা বার সত্যিটা জানায়নি।এসব কি করে ভুলে যাবো আমি?আর মাম্মা পাপা! তাদের রক্তাক্ত শরীরটা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।জানো খালামণি, আমার সমবয়সী সবার ছোট ছোট ভাইবোন ছিলো।তাদের দেখে আমার ভীষণ আফসোস হতো।মাম্মা পাপাকে আমার একটা ভাইবোনের আবদারও করেছিলাম।ভীষণ সখ ছিলো একটা ছোট্ট বেবির।আমার মনে হয়েছিলো অনেক বছর পর তারা আমার আবদারে বেবির জন্য ট্রাই করছিলো।আসলেই কি তাই?”
সাবা খানম নিচের ঠোঁট কামড় নিজের কান্না আটকালেন।আরজু খালামনির ভেজা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।আর হতবম্ব হয়ে বললো
-” মাম্মা সেখান থেকে আসার পর আমাকে একটা বড়ো গিফট দিবে বলেছিলো।খালামণি!!!যা ভাবছি সেটা কি সত্যি?”
সাবা খানম আর কিছুই বললেন না।আরজুকে বুকে ঝাপটে নিলেন।অতীতের সব বিষাক্ত স্মৃতি একের পর এক বেরিয়ে আসছে।এই মেয়েটা সব সামলাবে কি করে?
_______________
শ্রাবণ মেঘে থেকে ঝরে পড়া ফোঁটা সারা সহর জুড়ে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে।সেই বৃষ্টিতে টইটুম্বুর হয়ে রামিমের বাসার দরজায় দাড়ালো সাবিহা।রামিম দরজা খুলেই হতবম্ব হয়ে পড়ল। না চাইতেও তার নজর আটকে গেলো ভেজা নীল শাড়িতে।যা সাবিহার মেদহীন শরীরে লেপ্টে আছে।শরীরের প্রতিটি ভাঁজ লাস্যময়ী করে তুলছে মেয়েটাকে। রামিমের বুকে তবলা বাজতে শুরু করলো। হতবম্ব রামিম কে পাশ কাটিয়ে সাবিহা ভেতরে প্রবেশ করলো।আর বললো
-” এতো সময় লাগে দরজা খুলতে? এইদিকে আমি ভিজে যা তা অবস্থা।এমন হা করে আছিস কেনো?”
রামিমের সম্মতি ফিরতেই দৌড়ে তোয়ালে এনে দিলো।আর চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
-” এই বৃষ্টির মধ্যে তোকে আসতে বলেছে কে? এবার জ্বর না বাধালেই হয়।”
সাবিহা চুল মুছতে মুছতে বললো
-“বাহ!!! এখানে আসার জন্য তোর পারমিশন লাগবে নাকি?এই বৃষ্টিতে খিচুড়ি খেতে মন চাইছিলো।তাই চলে আসলেন।”
রামিম ক্ষিপ্ত হয়ে বললো
-” এই বাসায় কি খিচুড়ি বিলি করছি নাকি?”
-” করছিস না কিন্তু করলে সমস্যা কি? ঝটপট খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে আস।তোর হাতের খিচুড়ি দারুন হয়।”
রামিম অবাক হয়ে গেলো।সাবিহা কতটা অধিকারবোধ দেখাচ্ছে।কই সে তো পারছেনা সাবিহার মোহনীয় রূপের দিকে বেহায়ার মতো তাকাতে। সে তো পারছেনা একটাবার সাবিহার অধর ছুয়ে বলতে “তুই আমার জীবনের সবচাইতে বড়ো অপ্রাপ্তি।যা পাওয়ার সাদ্ধি আমার নেই।”
স্তব্ধ রামিম কে দেখে সাবিহা রামিমের কাছাকাছি এসে দাড়ালো। চোখে চোখ রেখে ফিচেল স্বরে বললো
-” কীরে আমাকে এই শাড়িতে দেখে প্রেমে পরে গেলি নাকি? শাড়িতে বুজি আমাকে এতই ভালো লাগে?”
রামিম থমকালো।নিজেকে সামলে বললো
-“প্রেম? আর তোর সাথে? ইম্পসিবল।আর তোকে শাড়িতে একদম বাজে লাগছে।আমার কল্পনার চাইতেও জঘন্য।”
সাবিহার মুখটা মলিন করে বললো
-“পাশে আছি তাই মূল্যায়ন করছিস না।যেদিন হারিয়ে যাবো সেদিন বুজবি।”
সাবিহার কথাটা রামিমের বুকে আঘাত করলো।সে তো জানেই সাবিহাকে হারাতে হবে তবুও কেনো এই সত্যির মুখমুখী হতে ভীষণ কষ্ট হয়? পরিস্থিতি শান্ত করতে রামিম দ্রুত রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।বৃষ্টির দিন হলেই রামিম খিচুড়ি খেতে পছন্দ করে।মায়ের কাছ থেকে এই রান্নাটা বেশ ভালো করেই রপ্ত করেছে।বন্ধুমহলের সকলেই রামিমের রান্না খেতে বেশ পছন্দ করে।রামিম রান্না শেষে করলে দুজনেই খেতে বসে পড়লো।সাবিহা বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেতে খেতে বললো
-” দারুন হয়েছে।বৃষ্টি হলেই খিচুড়ি রান্না দায়িত্ব তোর।আমি কিন্তু তখন রান্না বান্না করতে পরবো না।আমি শুধু বৃষ্টিতে ভিজবো।”
রামিম চুপ চাপ খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বললো
-“আমি কেনো তোকে রান্না করে খাওয়াবো?তোর ফিউচার হাসবেন্ড খাওয়াবে।তাকে বলিস।”
-” সেটা তুই হলে ক্ষতি কি?”
রামিম শান্ত ভঙ্গিতে সাবিহার দিকে এগিয়ে এসে বললো
-” এই লাবণ্যময়ী রূপের আদুরে মেয়েটার উষ্ণ স্পর্শ আমার মতো খড়কুটো হীন ছেলে ডিজার্ভ করে না।”
সাবিহা আরো কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।দুজনের মধ্যে নেই কোনো দূরত্ব।বাইরে তখন ঝড়ের প্রকোপ কতটা ছিলো সেটা জানা নেই।কিন্তু এই দুই মানব মানবীর হৃদয় বইছে তুমুল সাইক্লোন।সাবিহা অভিমানী সুরে বললো
-“এই খড়কুটো হীন ছেলেটাকেই আমার অস্তিত্বে ধারণ করতে চাই।যার একাকীত্বের মিশে জীবনকে বর্ণিল আলোয় আলোকিত করতে চাই।একবার হাত বাড়িয়ে দেখ তোর পুরো জীবনকেই রঙিন করে তুলবো।”
রামিমের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।সাবিহার উষ্ণ নিঃশ্বাস তার গলায় এসে পড়ছে। এ কেমন জ্বালাময় অনুভূতি।তার ও ইচ্ছে হয় এই মিষ্টি মেয়েটাকে লাল টুকটুকে সাজিয়ে নিজের ঘরে রেখে দিতে।কিন্তু বাস্তবতা যে ভিন্ন।রামিম কাপা কাপা গলায় বললো
-” এটা সম্ভব না সাবিহা।প্লিজ একটু দূরে সরে দারা।”
সাবিহা আরেকটু কাছে এসে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-” কেনো দূরে যাবো?তোর কি অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে?”
-” প্লিজ… সাবিহা।কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।”
-” আমি চাই অঘটন হোক।”
রামিম যেনো নিজের কন্ট্রোল হারাচ্ছে।মেয়েটা তাকে এই ভাবে কষ্ট কেনো দিচ্ছে?সে বললো
-” তু..তুই কি.…..কিন্তু আমাকে সিডিউস করছিস।”
-” করছি তো?”
-“আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাই সেলফ।”
-” কে বলেছে কন্ট্রোল করতে?”
রামিম যেনো এক অজানা অনুভূতিতে হারিয়ে গেলো।এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে সাবিহার ওষ্ঠে ডুবে গেলো।আরো দিনের রামিম তৈরি সেই শক্ত দেয়াল যেনো মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।সাবিহা পরম আবেশে চোখ বুজে নিলো।চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল।এই অশ্রু সুখের।নিজের ভালোবাসার মানুষটির প্রথম উষ্ণ ছোঁয়া এতটা মধুর কেনো হয়?
কিছু মুহূর্তের মধ্যের রামিমের ধ্যান ফিরলো। সে ছিটকে সরে গেলো সাবিহার কাছ থেকে।প্রচন্ড অপরাধ বোধ আর ক্রোধের কারণে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।এমন ভুল কি করে করলো ভেবে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে সাবিহাকে ধমক দিয়ে বললো
-” এক্ষনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা।আর কখনো আসবিনা আমার বাসায়।”
সাবিহা শিউরে উঠলো রামিমের ধমকে।অভিমানে দুচোখ ভিজে উঠলো।রামিম দরজা খুলে বললো
-” চলে যা।”
সাবিহা তীব্র অভিমানে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।রামিম দরজায় হেলান দিয়েই বসে পড়লো।এমন সুখকর মুহূর্ত কেনো এলো তার জীবনে? যেই সুখ কোনোদিন পাওয়া সম্ভব না সেই সুখের সূক্ষ রস্নি কেনো ধরা দিল? আজ কেনো নিজেকে সামলাতে পারলো না? মেয়েটার মনে কেনো মিথ্যা আশা সঞ্চার করলো?রামিম আর ভাবতে পারছে না।দুহাতে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিল।জীবন এতো জটিল কেনো?”
_____________
বড়ো সোফায় বেশ আরাম করে বসে রেড ওয়াইনে চুমুক দিচ্ছে লিয়াকত আলী। পাঞ্জাবীর নিচের থলথলে পেটটা নিয়ে বসতে খানিকটা অসুবিধাই হয়।কিন্তু হালকা নেশা চরে আছে বলে সেসব তেমন খেয়াল নেই তার।তার সামনেই ওয়াইন গ্লাস নিয়ে বসে আছে সাদমান।লিয়াকত আলী দুর্বোধ্য হেসে বললো
-” কি ব্যাপার সাদমান তোমার কাজ কতদূর?ওই নাহিদ যেই ভাবে আগাচ্ছে, নির্বাচনে আমাদের জয় প্রায় অসম্ভব।”
সাদমান বাঁকা হেসে বললো
-” এতো চিন্তার কিছু নেই।নাহিদকে আমি ভালো করেই চিনি।শারীরিক ভাবে আপনি তাকে কখনোই দুর্বল করতে পারবেন না।তাই ওকে মানুষিক ভাবে আঘাত করে দুর্বল করতে হবে।আর ওর দুর্বলতায় অলরেডী টোকা দিয়ে ফেলেছি।”
লিয়াকত আলী খুব বিচ্ছিরি ভাবে হেসে বললো
-“নাহিদের বউকে আজ অব্দি দেখতে পেলাম না।মেয়েটা নিশ্চই সাংঘাতিক রূপবতী,তাইতো নাহিদ একদম ঘুপটির ভেতর লুকিয়ে রেখেছে।আমার ও দেখতে ইচ্ছে করছে নাহিদের মতো গুরুগম্ভীর লোকের মনের রানীর দেখতে কেমন?নাহিদ নিশ্চই কোনো সাধারণ নারীর প্রেমে পড়েনি।আমারও একটু সেই নারীর মুখদর্শন করা প্রয়োজন।নাহিদের রাত রঙিন করা নারীর প্রতি আমার বড্ডো আকর্ষণ হচ্ছে।”
লিয়াকত আলীর কথায় সাদমানের ভীষণ রাগ হচ্ছে।গা গুলিয়ে আসছে।এই লোকে নারী দেহে আসক্ত।প্রতি রাতেই এই বুড়ো ভুঁড়ি যুক্ত লোকটার কচি মেয়ে চাই।আর টাকার লোভে কতো শত মেয়েরা বাবার বয়সী লোকটার শয্যাসঙ্গী হতে প্রস্তুত।অন্য সবার সাথে আরজুর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।আরজুর প্রতি সাদমানের একটা দুর্বলতা আছে।না চাইতেও এই মেয়েটার প্রতি তার তীব্র সম্মান,আকর্ষণ কাজ করে।আর যাই হোক আরজুর নাগালে লিয়াকত আলী কে আনা যাবে না।আরজুর দেখা পেলে এই জানোয়ারের মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।আর আরজুর সাথে এমন কিছু হোক সে চায় না।বরং আরজুকে সে নিজের করে চায়।বৈধ রূপে।নাহিদকে সরাতে পারলে আরজু শুধু তার হবে। লিয়াকত আলী কে সাদমান মোটেও পছন্দ করেন।কিন্তু ক্ষমতার লাভে এই লোককে সহ্য করতে হচ্ছে।তবে সময় সুযোগ পেলে এই লোকটাকে একদম উড়িয়ে দেবে।
এই ক্ষমতার পেছনে ছুটতে যেয়ে আরজুকে অনেকটা পিছনে ফেলে এসেছে।নাহিদ ও সবার সামনে এমনটাই প্রেজেন্ট করেছে।সাদমান নাহিদকে হারানোর পেছনে এতটাই বিভোর ছিলো যে আরজু তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো।নাহিদ ও এটাই চেয়েছিলো।তাইতো সবাইকে বুঝিয়েছে সে আরজুর পিছু ছেড়ে দিয়েছে।কিন্তু নাহিদ আরজুর পিছু আসলে কখনোই ছাড়েনি।এতদিন শত্রুপক্ষকে আরজুর নাগালের বাইরে রাখতেই নিজের সবচাইতে দুর্বলতাকে নিজের কাছ থেকে দূরে রেখেছে।সবার চোখের আড়ালে সে ঠিক আরজুর প্রীতি নজর রেখেছে।আর সাদমান সেটা টেরও পেলো না।সত্যি নাহিদ একদম পাক্কা খেলোয়াড়।
__________________
পরের সময়টা অনেকটাই দ্রুত কেটে গেলো।নাহিদ সবটা বুঝিয়ে বলতে আরজুদের বাসায় দুইবার গেছে।অভিমানী আরজু দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো।সামনে অব্দি আসেনি।কারণ আরজু জানে এই মানুষটার মুখোমুখি আসলেই সে ভীষণ ভীষণ ভেঙে পড়বে।এই মানুষটা তার সুখের জগৎটাকে নিমিষেই গুড়িয়ে দিয়েছে।তাকে আরজু মাফ করবে না।
প্রতিবারের মতো আজও নাহিদ আরজুদের বাসার সোফায় বসে আছে।অবনি কয়েক মুহূর্ত নাহিদকে পর্যবেক্ষণ করলো।উজ্জ্বল মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। তেজী চোখ দুটিও কেমন গর্তে চলে গেছে।নিশ্চই খাওয়া,ঘুম কোনোটাই নিয়ম মাফিক হচ্ছে না।অবনির ভীষণ খারাপ লাগলো।সে শান্ত সুরে বললো
-” আমি আরজু আপুকে বোকা ভেবেছিলাম।আসলে সে মহা চালাক।এমন হিরোর মতো জামাইকে কেমন ভেড়া বানিয়ে রেখেছে।এতো বড়ো নেতাকে কেমন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। ভাবা যায়?”
এতো বিষণ্ণতার মাঝেও নাহিদ মুচকি হাসলো।বললো
-” ভালোবাসলে মন্ত্রী,মিনিস্টার,নায়ক, গায়ক সবাই ভেড়া হয়ে যায়।ভালোবাসার মানুষটার অভিমান বড়ো অদ্ভুদ জিনিস।এই অভিমান না সহজে ভাঙ্গা যায় আর না অভিমানী কে ছাড়া স্বস্তিতে বাঁচা যায়।”
মন্ত্রমুগ্ধের মত অবনি সবটাই শুনলো।আর বললো
-” আরজু আপু ভুল করছে।আপনার মতো প্রেমিক স্বামীকে অবহেলা করছে।আমার মত আনরোমান্টিক ছাগল পছন্দ করেনি এই ঢের।আমার বেশ সুন্দরী বান্ধবী আছে।এই আরজু আপু কে ছেড়ে তাকে বিয়ে করুন।সে আপনাকে বছরে দুইটা করে বেবি দিয়ে ঘর ভরিয়ে রাখবে।”
নাহিদ হেসে বললো
-” আমার যে তোমার আপুকেই চাই।অন্য কাউকে স্পর্শ করার রুচি আমার কখনোই জন্মাবে না। তোমার আপু অভিমান ভেঙে এই কাঙ্গালের দিকে ফিরে দেখুক তাকে ছাড়া এই নিবরাস নাহিদ শূন্য।একেবারে শূন্য।কিন্তু অভিমানী সেটা বুজলেত?”
নাহিদ তারপর উঠে আরজুর দরজার পাশে দাঁড়ালো।দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আরজু সবটাই শুনছিল আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল।মানুষটার প্রতি তার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি।কিন্তু সব বিষাক্ততা আরজুর হৃদয়কে বিষাক্ত করে রেখেছে।চাইলেও সব ভুলতে পড়ছেনা।নাহিদ উচ্চ শব্দে বললো
-“আরজু আমি জানি তুই আমার কথা শুনতে পারছ।সব ঘটনার দুইটা দিক থাকে।আমাকে এক্সপ্লেইন করার একটা সুযোগ তো দিতে পারতে।আমি কিন্তু অন্য হাসবেন্ডের মতো প্রতিদিন তোমার দোরগোড়ায় এসে বারবার দাড়াবো না।আর না রাতে ঘণ্টার পর ঘন্টা তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকবো।সেই বয়স আর পরিস্থিতি আমার নেই।যখন বয়স ছিলো তখন ঠিক ছিলাম দাড়িয়ে।একটা নজর আমার প্রিয়সী দেখার জন্য।সেই খবর হয়তো তুমি জানো না।এমন অনেক কিছুই আছে যা তুমি জানো না।তবে আজকের পর আর একবারও আমি আসবো না।তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো,আমার বিষাক্ত জীবন থেকে তোমার কোনো মুক্তি নেই।এটা আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম।আমি চাইলেই এই মুহূর্তে দরজা ভেঙে তোমাকে তুলে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারি। তুমি বা তোমার পরিবার কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।কারণ সেই ক্ষমতা বা অধিকার সবটাই আমার আছে।কিন্তু আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করতে চাইনা।যেমনটা আগেও চাইনি।তবে আমি আমার অবস্থান তোমার কাছে অবশ্যই ক্লিয়ার করবো।তুমি শুনতে না চাইলে শুনতে বাধ্য করবো।যেই বিশ্বাসঘাতক আর প্রতারকের ট্যাগ আমাকে দিয়েছ নিবরাস নাহিদ নিজের উপর থেকে সেই ট্যাগ মুছেই দম নিবে।”
বলেই ক্ষিপ্ত নাহিদ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বেরিয়ে গেলো।আরজু দরজার অপর পাশে ফ্লোরে বসে কাদছে।তার ইচ্ছে করছে নেতা সাহেবের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে।কিন্তু অতীতের সব আরজুকে কিছুই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না। চোখের সামনে ভেসে উঠে বাবা মায়ের মুখটা।
অবনি অবাক হয়ে সবটাই দেখলো আর বির বির করে বললো
-“ওহ মাই গুডনেস।কি তেজ বাবা! এই না হলে নেতা।এমন হুমকি ধামকি ছাড়া নেতা হওয়া যায় নাকি? এবার আরজু আপুর খবর আছে।ইসস!! ওই রোবট মানব যদি তাকে এমন হুমকি দিয়ে নিয়ে যেত?”
সাবা খানম পাশের রুম থেকে সবটাই শুনছিলেন।এই প্রথম তার মনে হয়েছে নাহিদকে তিনি যেমন ভাবেন নাহিদ হয়তো তার চাইতে ভিন্ন।জুবায়ের আহমেদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তিনি তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আর বললেন
-” তোমার কি মনে হচ্ছে সাবা?ছেলেটা কি একটা সুযোগ ডিজার্ভ করেনা?”
সাবা খানম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
-“ছেলেটার মধ্যের কোনো অশালীনতা,অভদ্রতা নেই।সবচাইতে বড় বিষয় সে আরজুকে ভীষণ সম্মান করে।যেটা একটা সম্পর্কে খুব বেশি জরুরি।আরজুর হয়তো সবটা ভালোভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন।একবার নাহিদের দৃষ্টিকোণ থেকে আরজুর ভেবে দেখা প্রয়োজন।আমি আরজুর সাথে কথা বলবো।মেয়েটাকে এই ভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না।”
______
শুভ আরজুর পাশেই বসে আছে।আরজু গম্ভীর ভাবে বারান্দায় বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে।মলিন মুখ, শুষ্ক ঠোঁটে মেয়েটাকে কেমন জির্ণসীর্ণ লাগছে।পাশেই অবনি বসে আছে।অবনির বেশ বিরক্ত লাগলো আরজুর অবস্থা দেখে।বেশ বিরক্ত হয়েই বললো
-” তোমাদের মত মানুষদের জন্যই ভালোবাসা থেকে সবার বিশ্বাস উঠে গেছে।”
আরজু কপাল কুঁচকে বললো
-” আমি কি করলাম?”
-” এইযে প্রেমে টালমাটাল হয়ে সবার অগোচরে বিয়ে করে নিলে।আবার কিছু একটা হতেই সব প্রেম হাওয়া হয়ে গেলো?”
-” কিছু একটা না।বিষয়টা অনেক বড়ো অবনি।তুই ছোট বুজবি।মানুষটা আমার বিশ্বাস ভেঙেছে।”
-“জিজুর মতো লোক কোনো ভুল করতেই পারে না।”
বলেই অবনি চলে গেলো।শুভ সূক্ষ ভাবে আরজুকে দেখছে।এই মেয়েটার মলিন মুখখানা শুভকে বরাবর অশান্ত করেছে।শুভ শান্ত হয়ে বললো
-” অবনি কিন্তু ঠিক বলেছে।”
-” কি ঠিক বলেছে?”
-“নাহিদ ভাই কি কখনো তোকে অসম্মান করেছে বা তোর কখনো মনে হয়েছে সে তোকে কম ভালোবেসেছে?মানুষটা শুধু তোর কাছ থেকে সত্যিটা লুকিয়েছে। সত্য জানলে তুই ঠিক এমন রিয়েক্ট করতি এই ভয়েই হয়তো মানুষটা কিছু বলেনি। যাকে ভালবাসতে পেরেছিস তার দোষ গুণ সবটা নিয়েই ভালোবাসতে হয়। আমি জানি ভাইয়ার জন্য তোর ভালোবাসা এক বিন্দু কমেনি। তবে এই মুহূর্তে তোর মনে যে অভিমান জমা হয়েছে সেটা তোকে সঠিক ভুলের বিচার করতে অক্ষম করে রেখেছে।নিজেকে শান্ত আর স্থির করে সবটা ভেবে দেখ।আর কাল থেকে নিয়মিত ভার্সিটি যাবি।কোনো ফালতু এক্সকিউজ শুনবো না।সামনেই কিন্তু পরীক্ষা।”
আরজু কোনো উত্তর দিলো না।বিষণ্ণ মনে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।তার জীবনেও ঠিক এমন কালো মেঘ জমেছে।কবে সূর্যের রশ্মি পাবে কে জানে?