#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_80
আকাশে মেঘ জমেছে।সেই মেঘ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি রূপে ঝড়ে শুষ্ক রাস্তা ভিজিয়ে দিচ্ছে।আরজু বারান্দায় দাড়িয়ে সেই বৃষ্টি উপভোগ করছে।সুইমিং পুলে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো মুক্ত দানার মতো জ্বলজ্বল করে ঝড় পড়ছে।প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করছে সে।বৃষ্টির গতি আরো বৃদ্ধি পেতে লাগলো।আরজুর উতলা মন আর মানতে চাইলো না।নেমে পড়লো বৃষ্টির উষ্ণতা অনুভব করতে।
নাহিদ মাত্রই বাসায় ফিরেছ।গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেট অব্দি আসতে আসতে খানিকটা ভিজে গেছে।ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে ঢুকেই আরজুর খোঁজ করলো।এই মেয়েটি ঘরের একমাত্র সৌন্দর্য।ঘরে ঢুকেই অভিমানী স্ত্রীর মুখ না দেখলে নাহিদের বুকটা খালি খালি লাগে।অথচ জীবনের অনেকটা সময় এই ঘরে সে একা কাটিয়েছে।আশেপাশে চোখ বুলাতেই কাচের দরজার বাইরে এক মোহনীয় রূপের মাঝে হারিয়ে গেলো নাহিদ।আরজু পুলের পাশে বসে পানিতে পা ঝাপটাচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।বৃষ্টির পানিতে গায়ের টপস ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।স্কার্ট পায়ের হাঁটু অব্দি উঠানো।পানিতে লাবণ্যময়ী আরজুর শুভ্র পা জোড়া যেনো রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদের মত।নাহিদের মনে হলো এই নারীর সব কিছুই তাকে সাংঘাতিক আকর্ষণ করে।এই আকর্ষণ শুধু মনের নয়।দেহেরও।ভালোবাসার মানুষটির প্রতি তীব্র দৈহিক আকর্ষণ অস্বাভাবিক কিছু নয়।বরং এটি ভালোবাসার প্রকাশের সবচাইতে সহজ মাধ্যম।তবে অবশ্যই সেই আকর্ষণ বৈধ হতে হবে।কারণ বৈধ সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত বর্ষিত হয়।নাহিদকে অদৃশ্য সম্মোহন শক্তি আরজুর পানে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।কিছুটা আগাতেই শুনতে পেল মিষ্টি কণ্ঠের গান।
মেঘের নৌকা তুমি,
তোমায় ভাসাবো আকাশে।
সাগরের শঙ্খ তুমি,
তোমায় বাজাব বাতাসে।
অরণ্যের পাখি তুমি,
তোমায় জুরাব ছায়াতে।
হিমালয় শিখর তুমি, আমার
আনন্দ তোমায় ছুয়াতে।
নাহিদ সন্তর্পনে আরজুর পাশে বসে পুলের পানিতে পা ডুবালো।আরজুর হঠাৎ চমকে পাশে তাকাতেই দৃষ্টি পড়লো নাহিদের নেশাতুর দৃষ্টিতে।বৃষ্টির পানিতে নাহিদের কপালে চুল লেপ্টে আছে।গায়ের সাদা পাঞ্জাবি ভিজে গায়ের সাথে মিশে একাকার।যার ফলে নাহিদের আকর্ষণীয় পেশীবহুল দৃশ্যমান।আরজুর চোখ জুড়িয়ে গেলো।মুহূর্তেই আরজুর অধরে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।বললো
-” আপনি কি শত মাইল দূর থেকেও আমার মন পড়তে জানেন?একটু আগেই ভাবছিলাম এই মনোমুগ্ধকর আবেশে আপনি পাশে থাকলে দারুন হতো।”
নাহিদ মৃদু হাসলো।আরজুর কপালে লেপ্টে থাকা চুল আলতো স্পর্শে কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো
-” তোমার আমার মাঝে একটা টেলিপ্যাথি কানেকশন আছে।যার ফলে আমার বউ যা চিন্তা করে সেটা মুহূর্তেই আমার ব্রেনে চলে আসে।”
আরজু হেসে উঠলো।নাহিদ তখনও মন্ত্রমুগ্ধের মতো আরজুকে দেখছে।আরজু নাহিদের সেই ঘায়েল করা দৃষ্টির কবলে পড়ে ভীষণ লজ্জা পেল।নাহিদ আরজু কোমরে হাত রেখে আরজুকে তার দিকে টেনে নিয়ে আসলো।কপালে কপাল রেখে ভারী নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো।শীতল পরিবেশে নাহিদের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আরজু শরীরে উন্মাদনা সৃষ্টি করছে।নাহিদ ফিচেল স্বরে বললো
-” ভালোবাসা এতো যন্ত্রনাময় কেনো বলতে পারো আরজু?তুমি দূরে গেলে তীব্র যন্ত্রণায় দগ্ধ হয় এই হৃদয়।আর পাশে থাকলে তীব্র আকাঙ্খা,আকর্ষণের মিষ্টি যন্ত্রণায় এই হৃদয় ছেয়ে যায়।তুমি আমার যন্ত্রনাময় ভালোবাসা।”
এই গলার স্বর আরজুর রক্তে মাদকের মতো অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়।স্নায়ু উত্যক্ত করে তুলে।আরজুর সারা শরীর কাপছে। তা শীতল হাওয়ায় নাকি তীব্র উত্তেজনা,উন্মাদনায় আরজু ঠাহর করতে পারলো না।ভালোবাসার কাছে মানুষ বড্ডো অসহায়। ভালোবাসার মানুষের সাথে অভিমান করে থাকলেও তার কাছ থেকে দূরে থাকা যায় না।নাহিদ নেশাতুর দৃষ্টিতে আরজুর ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা ওষ্ঠের পানে তাকিয়ে রইলো।একসময় ডুব দিলো সেই ওষ্ঠে।আবেশে আরজু নাহিদের পেছনের চুল খামচে ধরলো।কিছু মুহূর্ত কাটলো ভালোবাসার উষ্ণতায়।নাহিদ আরজুকে কোলে তুলে নিলো।আরজুর সারা শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।নাহিদ বললো
-” সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।তোমার এখন উষ্ণতা প্রয়োজন।”
আরজু মৃদু হেসে বললো
-” তা সেই উষ্ণতা কি ভাবে পাবো?”
নাহিদ অদ্ভুদ হাসলো।আরজু যেনো এবার ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল।কি সাংঘাতিক হাসি।প্রচন্ড লজ্জায় সে নাহিদের বুকে মুখ লুকালো।নাহিদ এবার আরো জোরে হেসে উঠলো।আর বললো
-” অতি নির্লজ্জ মেয়েরা লজ্জা পেলে ভয়ঙ্কর সুন্দরী লাগে।”
আরজু কপাল কুঁচকে বললো
-” আমি নির্লজ্জ?”
নাহিদ হেসে বললো
-” না,তুমি ভয়ঙ্কর সুন্দরী।”
আরজু চিন্তিত হয়ে ভাবতে থাকলো। এর মানে তো একই দাড়ালো।এই নেতা সাংঘাতিক চালাক।
_______________
নাহিদের অফিসে আজ নাঈম মাহমুদ এসেছন।তিনি খুব একটা এখানে আসেন না।সকলেই তাকে বেশ সম্মান প্রদর্শন করে।নাঈম মাহমুদ বুঝতে পারলেন তার ছেলেকে মানুষ ঠিক কতটা সম্মান করে। গর্বে তার বুক ফুলে উঠলো।নাহিদ নাঈম মাহমুদকে আসতে দেখে একটু চিন্তায় পড়ে গেল।বললো
-” হঠাৎ আপনার পদ ধুলি আমার অফিসে পড়লো কি করে?”
নাঈম মাহমুদ বেশ আরাম করে চেয়ারে বসলেন।মৃদু হেসে বললেন
-“কেনো আসতে পারিনা?”
-” অবশ্যই পারেন।তবে আজ হঠাৎ আসলেন বলে অবাক হলাম।”
-” আমার সন্তানের অফিস।নোটিশ দিয়ে নিশ্চই আসতে হবে না।”
নাহিদ মনে মনে ভাবলো সে একরোখা সভাবটা নিশ্চই বাবার কাছথেকেই পেয়েছে।তাই বললো
-” না।যখন খুশি আসতে পারেন।”
-” তোমাদের প্রচারণা বেশ জোরেশোরে চলছে দেখি।তোমাকে একটু সাবধানে চলতে হবে।নিজের সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দাও।বিরোধী দলের লোকেরা তোমার প্রতি ভীষণ ক্ষিপ্ত।তারা কিন্তু তোমার পার্সোনাল লাইফেও ইফেক্ট ফেলতে চাইছে।”
নাহিদ মৃদু হাসলো।বললো
-“আপনি বিরোধী দলের কথা ভাবছেন।যেখানে নিজের পার্টির লোকেরাই আমার বিরোধিতা করছে। যাই হোক।নাহিদকে দমে রাখা এতো সহজ না।আর বিনা অনুমতিতে আমার পার্সোনাল লাইফের ঢোকার মাসুল তাদের অবশ্যই দিতে হবে।”
-” তোমাদের বিয়েটা মনে হয় এবার প্রকাশ করা প্রয়োজন।একটা মেয়ের জন্য সমাজের স্বীকৃতি অনেকটা মেটার করে।”
নাহিদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।বললো
-” সেই বিষয়টা আমি আগেই ভেবে রেখেছি।নির্বাচনের ঝামেলা শেষ করেই রিসেপশনের প্ল্যান করেছি।আরজুকে এই বিষয়ে কিছুই বলিনি। সারপ্রাইজ দেবো তাই।নিজের স্ত্রীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। কারো ভয়ে নিজের স্ত্রীকে গোপনে রাখার প্রশ্নই আসে না।এতদিন আরজুকে হাইড করার অন্য রিজন ছিলো।আমি আরজুর সামনে অতীতের স্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। আর আমার এই দূর্বলার সুযোগ সাদমান নিবে ভেবেই আরজুকে দূরে দূরে রেখেছি।আরজুর প্রতি আমি বর্তমানেও দুর্বল আছি জানলে সাদমান আরজুর ক্ষতি করতো।আর আরজুকে দুর থেকে প্রোটেক্ট করা আমার জন্য দুঃসাধ্য ছিলো।কিন্তু সাদমান আমার ভয়কে সত্যি প্রমাণ করেছে।আরজু আর আমার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করেছে।তবে আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারলেও সম্পর্ক নষ্ট করতে পারেনি।বরং ওর কারণেই আমাদের সম্পর্কে গভীরতা বেড়েছে কয়েকগুণ। আমাদের সম্পর্কের গভীরতা এতটাই, যে কেউ সেটা দুর্বল করতে পারবে না। তাছাড়া নির্বাচনের পর এমপি পদ পাবো।একজন এমপির স্ত্রীর ক্ষতি করা তাদের জন্য সহজ হবে না।”
নাঈম মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ছেলেটা এই জটিল জীবন কেনো বেছে নিলো।নাহিদ মৃদু হেসে বললো
-” পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে।দারুন সব দিস পাওয়া যায়।চলুন আপনাকে ট্রাই করাই।”
নাঈম মাহমুদ হাসলেন।ছেলের সাথে তার সম্পর্ক অনেকটাই সহজ হয়ে আসছে।এটা তার জন্য ভীষণ প্রাপ্তির।
___________________
সকাল থেকেই টিভিতে একটাই নিউজ ভেসে আসছে।মেয়র নিবরাস নাহিদের সাথে এক নারীর গোপন সম্পর্ক ফাঁস।তাদের কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে।তাদের একাধিক বার এক সাথে দেখা গেছে।সুন্দরী এই নারী কে? কি তাদের সম্পর্ক?”
এই নিউজটা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।নাহিদের সাথে আরজুর বেশ কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে।এই নিউজে আরজু চিন্তিত হলেও নাহিদের মধ্যে তেমন উৎকন্ঠা দেখা গেলো না।সে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিউজ দেখছে।অন্যদিকে সাবা খানম আর জুবায়ের আহমেদ ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সকলেই আরজুরকে নিয়ে নানান মন্তব্য করছে।আরজুর নিরাপত্তা নিয়ে ভীত হলেন তারা।নাহিদ নিজে তাদের কল করে শান্ত থাকতে বলেছে।নির্বাচনের আগে তাকে দিস্ট্রেক করে তার নাম খারাপ করার চেষ্টা করছে অন্যরা।কিন্তু নাহিদকে দুর্বল করা এতো সহজ নয়।আরজু নাহিদের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বললো
-” তার মানে আমার স্বাধীনতা আজ থেকে শেষ?আমি আর সাধারণ ভাবে চলতে পারবো না?সর্বদা সিকিউরিটি মধ্যে থাকতে হবে?”
নাহিদ মুচকি হেসে আরজুকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।শান্ত সুরে বললো
-” বুঝলে আরজু এই সমাজের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে।শুধু নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবলে তুমি কখনোই একটা সুস্থ সমাজ পাবে না।মানুষ খুব সহজেই প্রশাসন,নেতাদের উপর অংগুল তুলতে পারে।কিন্তু নিজ থেকে কখনোই পদক্ষেপ নেয়না।আমাদের ফিউচার জেনারেশনের জন্য একটা সিকিউরড সোসাইটি দেওয়ার জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি আমরা।একজন পলিটিশিয়ান হওয়ার দরুন আমার যেমন অনেক দায়িত্ব আছে।ঠিক তেমন একজন পলিটিশিয়ানের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে তোমার উপর ও সেই দায়িত্ব বর্তায়। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য যদি নিজেকে একটু নিয়মের ভেতরে আনতে হয় ক্ষতি কি। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সবাইকেই নিজেদের লাইফ স্টাইলে খানিকটা পরিবর্তন করতে হয়। তোকে আমি বলছি না তোমার জীবন সম্পূর্ন পরাধীন হয়ে যাচ্ছে।তুমি নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলো।একটু সাবধানে চললেই তুমিও ঠিক স্বাধীন ভাবেই জীবন যাপন করতে পারবে।তবে তোমাকে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চারপাশে চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে।তোমাকে সম্পূর্ণ কমফোর্ট ফিল করানোর দায়িত্ব আমার।”
আরজু যেনো এবার একটু নিশ্চিন্ত হলো।সে জানে তার জীবনধারায় এখন আমূল পরিবর্তন আসবে।কিন্তু মেয়র নিবরাস নাহিদের স্ত্রী হয়ে এই পরিবর্তন মানতে না পারলে সেটা তার ব্যার্থতা হবে।
সকলেই নাহিদকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে।নেতাদের চরিত্র এমনি হয় বলে হাজারো কমেন্ট করছে।নাহিদ এসব প্রশ্ন গায়ে মাখালো না।এমন হাজারো সমালোচনা তাদের জীবনে আসে।এসব গায়ে মেখে চলা বোকামি।যেই বিষয়টা সে ধীরে সুস্থে সুন্দর ভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করতে চেয়েছে সেটা একটু বাজে ভাবে আগেই প্রকাশ পেয়েছে।নাহিদ আরজুকে প্যানিক করতে মানা করল।নাহিদের জন্য এসব সমালোচনা পুরনো হলেও আরজুর জন্য সম্পূর্ন নতুন।এই পরিস্থিতির সম্মুখে আগে পড়েনি।কলেজে দুই একজন কানা ঘুসা করলেও দেশ ব্যাপী হওয়া সমালোচনায় আরজু অসস্তি বোধ করলো।
আজ একটা টকশো তে নাহিদ উপস্থিত হয়েছে।নির্বাচন নিয়ে নানান আলোচনা হচ্ছে।উপস্থাপন একটা সময় বললেন
-” কিছুদিন যাবত একটা বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ তোলপাড় হচ্ছে।কিছু ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।সেটা নিয়ে আপনি কি বলবেন?”
নাহিদ শান্ত কিন্তু ধারালো কণ্ঠে বললো
-” ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে পাবলিক্যালি কথা বলা আমার মোটেও পছন্দ না। প্রত্যেকটা মানুষেরই একান্ত নিজস্ব কিছু বিষয় থাকে। আপনারা আমাকে এবং একজন নারীকে নিয়ে হাজারো কথা রটাচ্ছেন। একটা কথাই সবার উদ্দেশ্য বলবো যারা সেই নারীকে নিয়ে হাজারো কথা রটাচ্ছেন সে আমার জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। তার সাথে আমার সম্পূর্ণ বৈধ একটি সম্পর্ক রয়েছে। নিজের একান্ত মানুষটিকে সবার সামনে অতি রঞ্জিত ভাবে প্রদর্শন করার কিছু নেই। যে মানুষটা একান্তই আমার তাকে আমি ঠিক একান্তভাবেই রাখতে চাই।সে কোন পাবলিক ফিগার নয়।তাই তার দিকে আঙুল তোলার আগে সবাইকে ভাবতে হবে তার নামের সাথে কার নাম জড়িয়ে আছে।যারা আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নির্বাচনের আগে কোন নোংরা খেলা খেলতে চাইছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,
“আমার অর্ধাঙ্গিনী আমার দুর্বল তা নয় বরং সে আমার সম্মান,আমার শক্তি,আমার অহংকার।”
আরজু টিভিতে সবটাই দেখছিল।এই মানুষটাকে সে ঠিক কি ভাবে বিশ্লেষণ করবে জানা নেই।নেতা সাহেব সর্বদা তাকে যেই সম্মান দিয়েছেন সেটা আদো কেউ দিতে পারতো? এই মানুষটার কথায় কেমন মাধুর্যতা আছে।যেনো হাজার বার শুনলেও মন ভরবে না।এই মানুষটা যেনো যে কোনো জটিল সমস্যার সমাধান মুহূর্তেই করতে জানে।সে একজন যোগ্য নেতা,একজন যোগ্য স্বামী।
_________________
আজ দুদিন যাবত কোনো গুরুত্বপূর্ন কাজে নাহিদ শহরের বাইরে গেছে।সাথে আছে আসফি।এই দুদিনে আরজুর সাথেও খুব কম যোগাযোগ হয়েছে।নাহিদ আরজুর সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আরজুকে এই দুদিন বাসার বাইরে যেতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে সে।আরজু বুঝতে পড়ছে নির্বাচনের আগে যে কোনো ঝামেলা এড়াতে নাহিদের এই ব্যাবস্থা।আরজু আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করেন।স্ত্রী হিসেবে সেই স্বামীর পাশে দাঁড়াতে চায়।
তবে তার বন্ধুমহল ঠিকই চলে আসলো আরজুকে সঙ্গ দিতে।সারাদিন অনেক আড্ডা চললো তাদের।ভিডিও কলে রামিম ও যুক্ত হলো।ফুয়াদ কায়দা করে ক্যামেরা সাবিহার দিকে রাখলো।আজ অনেকদিন পর রামিম প্রিয়তমার মুখদর্শন করল।কি মিষ্টি করে হাসছে।অথচ তার সাথে রাজ্যের অভিমান।আরজু একটা বিষয় খেয়াল করলো শুভ আর রিমির মাঝে কিছু একটা চলছে।দুজন আগের মতো সহজ হতে পারছে না।দুজন বার বার দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করছে।আরজু মনের সন্দেহ দূর করতে রিমিকে নিয়ে অন্য পাশে চলে গেলো।কথা বলার মাঝে আরজু আড়চোখে তাকিয়ে বললো
-” বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুভ টা দারুন হ্যান্ডসাম হচ্ছে তাইনা?”
রিমি আড়চোখে সোফায় বসা শুভর দিকে তাকালো।শুভও হঠাৎ সেদিকে ফিরে তাকালো।দুজনের চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।রিমি এতে ভীষণ লজ্জা পেলো।শুভ তার ফিলিংস সম্পর্কে জানার পর থেকেই রিমির শুভর সামনে কেমন অস্থির লাগে।গলা শুকিয়ে আসে।রাজ্যের অসস্তি ভর করে।আরজুর চোখে সবটাই ধরা পড়ছে।সে মৃদু হেসে বললো
-” ভালবাসিস শুভকে?”
রিমি চমকে আরজুর দিকে তাকালো।রিমির বুক কাপছে।আরজু তার মনের খবর জানলো কি করে?সে আমতা আমতা করে বললো
-” আরে তেমন কিছু না।”
-” তাহলে কেমন কিছু?”
রিমি কি বলবে বুঝতে পারছে না।আরজু রিমির হাত ধরে বললো
-“ধং করিস না।সব বুঝি।শুভ দারুন একটা ছেলে।আমাকে জিজ্ঞেস কর।ওকে সেই ছোট বেলা থেকেই চিনি।তুইও এতো বছরে তাকে চিনেছিস। তাছাড়া শুভর সাথে তোর কিছু হয়ে গেলে আমার জন্য দারুন হবে। আউট সাইডের কোন মেয়ে আসলে আমার আর শুভ বন্ধুত্ব দেখে জেলাস ফিল করতে পারে। নানান রকম মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট হতে পারে। এমনও হতে পারে আমার সাথে শুভর বন্ধুত্ব টাই নষ্ট হয়ে গেল। সেখানে তুই থাকলে আর কোনো ঝামেলাই নেই। শুভ আমার বন্ধুত্বে কোনো সমস্যাই আসবে না।”
রিমি পিটপিট করে আরজুর দিকে তাকিয়ে রইলো।শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিল।বললো
-” তোর কি মনে হয় শুভর মনে আমি জায়গা করতে পারবো?”
-” আলবাত পারবি।এতো কিউট চশমিশ কে মনে ধরবে না কেনো?”
রিমি মনে মনে হাসলো।যেই মন জুড়ে আরজু নিজেই দখল করে আছে সেখানে নিজের জন্য আদো জায়গা করা কি সম্ভব?তাই বললো
-” এমন ও হতে পারে শুভর মনে হয়ত অন্য কেউ আছে।”
-” আরে না।ওর মনে কেউ নেই।ওর গফ হবে আর আমি জানবো না?”
রিমি মৃদু হাসলো।বললো
-” আচ্ছা আরজু তোর কখনো মনে হয়নি শুভ হয়তো তোকে বন্ধুর চাইতে বেশি কিছু ভাবে?”
আরজুর চোখ কুচকে গেলো।বিরক্ত হয়ে বললো
-” মোটেও না।তুই ও অন্যদের মতো আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে সন্দেহ করছিস?শুভর বউ না হতেই আমাকে দূরে সরাতে চাইছিস?”
বলেই রিমির পিঠে চাপড় মারলো।রিমি “আহ” করে বললো
-” কুত্তী মারিস কেনো?”
-” মারবো না?জেলাস মহিলা।”
-” আমি মোটেও জেলাস নই।আর ওই শুভ ফুবকে আমার ভালোবাসতে ঠেকা পড়েনি।”
আরজু দুষ্টুমি করে বললো
-“আয়!!!!হায়!!!! তুই তো অলরেডী শুভর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস!একদম প্রমিকাদের মতো লজ্জা লজ্জা ভাব।শুভর সাথে শুভদৃষ্টি বিনিময় চলছে তোর।আই থিঙ্ক তোদের দুজনের মধ্যে প্রণয়ের ফাস্ট স্টেপ চলছে।শুভর দৃষ্টিতেও আমি কিছু একটা দেখেছি। কুছ কুছ হোতা হে!!!”
-” তোর ভুল ধারণা।শুভর মনের কোণে কোথাও আমি নেই।”
রিমির কথায় আরজু বিরক্ত হলো।রিমি চলে যেতেই আরজু ভাবতে লাগলো।শুভর সাথে রিমি দারুন কম্বিনেশন হবে।পূর্বের অনেক স্মৃতি ঘেঁটে আরজুর আজ মনে হচ্ছে রিমি শুভর প্রতি আগে থেকেই দুর্বল ছিলো।সেটা তারা কেউ ধরতে পারেনি।তার মানে মেয়েটা মনে মনে এতো বছর শুভকে ভালবেসে এসেছে।ভাবতেই আরজু মুচকি হাসলো।ফুয়াদকে বিষয়টা বলতেই ফুয়াদের মধ্যে তেমন হেলদোল দেখা গেলো না।আরজু অবাক হয়ে বললো
-” তুই আগে থেকেই জানতি ওদের বিষয়ে?আমাকে কিছু বলিসনি কেনো?”
ফুয়াদ ভাবলো “তোর জন্যই তো বলিনি।কারণ শুভর মনের খবর তুই জানলে সারা জীবন একটা গিল্ট নিয়ে বাঁচবি।এতো দিনে তোর জীবনে যেই অসীম সুখের সময় এসেছে।সেটা নষ্ট করতে চাইনি।”
কিন্তু মুখে বললো
-“বলিনি কারণ বিষয়টা একতরফা ছিলো।শুভর পক্ষ থেকে কোনো রেসপন্স ছিলো না।”
আরজু দাত দিয়ে নখ কেটে বললো
-” কি করা যায় বলতো?শুভ বেকুব তো মনে হয় বুঝতেই পারেনি রিমির মনের খবর।”
ফুয়াদ মনে মনে বললো “একদম তোর মতোই।যেমন তুই বুঝতে পারিসনি শুভর মনের খবর।” ফুয়াদ জানে শুভ এখনো আরজুর প্রতি প্রচন্ড দুর্বল।তাই এই মুহূর্তে শুভর উপর অন্য একটা সম্পর্কে দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।এতে শুভ আর রিমি দুজনই ভুক্তভোগী হবে।
তাই আরজুর উদ্দেশ্যে বললো
-” কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই।সময় অনেক কিছু ঠিক করে দেয়।ওদের সম্পর্কটা নাহয় সময়ের উপর ছেড়ে দে।”
আরজু ভাবলো ফুয়াদ ঠিক বলেছে।সময় অনেক কিছু আপনা আপনি ঠিক করে দেয়।যেমনটা সাবিহার ক্ষেত্রে হয়েছে।
#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_81
শহরের আনাচে কানাচে চলছে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ।তাই তো সর্বত্র উৎসব মুখর পরিবেশ।সারা শহর জুড়েই হাজারো পোস্টার ,ব্যানার লাগানো হয়েছে।মানুষের মুখে মুখে চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।সব নেতারাই জোরালো ভাবে প্রচারণার কাজে লেগে পড়েছে।সারা শহর জুড়েই সিকিউরিটি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
নাহিদ দের পার্টির নেতা শরিফুল হোক এবার নমিনেশন পায়নি।এতে পুরো পার্টির উপর তার তীব্র ক্ষোভ।এতো বছর তিনি যেই পজিশনে ছিলেন হুট করেই কেউ তার কাছথেকে সেই পদ ছিনিয়ে নিচ্ছে।আরো বেশ কিছু নেতারাই এমন পদ হারিয়েছে।কারণ নাহিদ পার্টিকে বেশ কিছু ইয়াং ছেলেদের সাজেস্ট করেছে। যারা পলিটিক্সে বেশ ভালো কাজ করবে।তাদের পার্টির ভারপ্রাপ্ত অনেক নেতাই করাপ্টেড।যাদের জন্য পার্টির নাম খারাপ হচ্ছে।তাই এই নির্বাচনে অনেক পুরাতন নেতারা নিজেদের অবস্থান হারিয়েছে।সকলেই নাহিদের প্রতি ক্ষিপ্ত।তারা নানা ভাবে পার্টিতে ঝামেলা বাধিয়েই যাচ্ছে।নাহিদ এবং বাকি ছেলেদের অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।নাহিদ নতুন ছেলেদের ধৈর্য ধরতে বলেছে।যেখানে তাদের প্রতিযোগিতা বিরোধী দলের সাথে সেখানে নিজেদের দলের অভ্যন্তরের রেষারেষি খুবই কষ্টদায়ক।নাহিদ সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বললো।নির্বাচনের আগে পার্টির নেতাদের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে বিরোধী দল এর সুযোগ নিতে পারে।নাহিদের এই স্থিরতা আর বিচক্ষণ বুদ্ধির কারণে পার্টির বিজ্ঞ নেতারা নাহিদকে ভীষণ পছন্দ করে।
নাহিদ ক্লান্ত শরীরে বাইরে থেকে ফিরে অফিসের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আজকাল কাজের ভীষণ চাপ।তখনই নাহিদের ফোন কল আসলো।নাহিদ চোখ খুলে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো আরজুর কল।মুহূর্তেই যেনো নাহিদের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।কল রিসিভ করতেই আরজু বললো
-” নেতা সাহেব কোথায় আপনি?”
-” জি ম্যাডাম আমি অফিসে।”
-” আপনার এই আজাইরা সিকিউরিটির উপর বিরক্তি ধরে গেছে।”
-” কেনো?”
-“এরা আমার ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে থাকছে।আমার পিছু পিছু ক্যান্টিনে চলে যাচ্ছে।এসব কি?আর জারা এসব দেখে মজা নিচ্ছে।”
নাহিদ হাসলো।এই আদুরে মেয়েটাকে কোলে তুলে আদর করতে মন চাইছে।নাহিদ হেসে বললো
-” আর কয়টা দিন ধৈর্য ধরুন ম্যাডাম।নির্বাচন শেষ হলেই আর এই টাইট সিকিউরিটিতে থাকতে হবে না।তখন আপনি মুক্ত পাখি।”
-” সত্যি তো?”
-” একদম।”
-” আই মিস ইউ নেতা সাহেব।”
নাহিদ হাসলো।হাতের ঘড়িতে সময় দেখে বললো
-” আজ আসতে একটু লেট হবে।তুমি সাবধানে থেকো।”
-” আপনার এই পলিটিক্স আমার সতীন। জাস্ট অসহ্য।আর শুনুন আপনাদের পার্টির ওই নতুন মেয়েটা লিজা না ফিজা ওর কাছ থেকে দূরে থাকবেন।এক নম্বরের চিপকু মহিলা।অন্যের জামাইর দিকে নজর দেয়।”
নাহিদ মিটিমিটি হাসলো।বললো
-” আমার অফিসের এতো খবর তোমাকে কে দেয়?”
-” আরে আছে আছে!! আমারও স্পাই আছে।আপনার উপর আমার করা নজর আছে।”
-” তাই নাকি?”
-” হুম!!”
-” এতো চিন্তার কিছু নেই।আমার দৃষ্টি শুধু এক নারীতে আবদ্ধ। এখন সেই দৃষ্টি কেমন সেটা তুমিই বুঝে নাও।”
আরজু লাজুক হাসলো।আর দ্রুতই কল কেটে দিলো।জারা কোল্ড ড্রিংকসে চুমুক দিতে দিতে আরজুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মুচকি হেসে বললো
-“বুঝলি সাবিহা,কেউ একজন বলতো তার নেতা সাহেব একদম আনরোমান্টিক।কিন্তু আমি তো দেখি কাহিনী অন্য।লজ্জায় তাকাতেই পারছে না দেখ।”
সাবিহা মুচকি হাসলো।রিমি চশমার গ্লাস পরিষ্কার করতে করতে বললো
-” ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার।পুরুষ মানুষের দ্বারা সব সম্ভব।আমি তো দেখি শান্ত ,গম্ভীর লোক গুলোই গভীর প্রেমে পড়ে।”
সাবিহা হেসে বললো
-” জাস্ট এ মিনিট। তোর ভাই ও কিন্তু শান্ত,গম্ভির টাইপের লোক।তার মানে তোর ভাইও গভীর প্রেমিক?”
জারা,আরজু দুজনেই হেসে উঠলো।রিমি মনে মনে বললো
-” আমার ভাই তো বিশ্ব প্রেমিক।ইসস!!! আরজু জানলে কি ভাববে?তার ছোট বোন আর ভাইয়া ভাবতেই অবাক লাগছে।”
______________
শুভকে লাইব্রেরীতে বসে থাকতে দেখে ফুয়াদ ও সেদিকে এগিয়ে গেলো।চেয়ার টেনে রিল্যাক্স হয়ে বসলো।শুভ তখনও মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে।ফুয়াদ কাগজ পত্র দেখে বললো
-” সিভি রেডি করছিস যে,বিয়ে করার প্ল্যান চলছে নাকি?”
-” সিভি কি জাস্ট বিয়ের জন্য প্রয়োজন হয়?”
-” না।এই তুই কি জব করার প্ল্যান করছিস?এতো জলদি?মাস্টার্স কমপ্লিট করে তার পর ট্রাই কর?”
-“আমি জাস্ট এক্সপেরিয়েন্স করার জন্য জব করতে চাইছি।তাছাড়া বাবার বয়স হয়ে যাচ্ছে। এবার অন্তত আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানো প্রয়োজন।”
ফুয়াদ একটু চিন্তা করে বললো
-“গুড। তাহলে আমিও সিভি রেডি করছি।”
-” কেনো? তোর বাবার বিশাল অফিস থাকতে তোর জবের কি প্রয়োজন?”
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
-” তার অফিসে আমি জয়েন করব না।নিজের যোগ্যতায় বাইরে কিছু করবো।তাদের কোনো কিছুর প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই।তাদের ওই মিথ্যা অহংকার,প্রাচুর্য আমার প্রয়োজন নেই।”
শুভ হেসে বললো
-” ওই বাচ্চা মেয়েটা তোকে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে।”
-” ওকে কথা দিয়েছি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাকে আপন করে নিবো।আমি স্ট্রাগল করে সাকসেস হতে চাই।নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে চাই।বাবা মায়ের তৈরি করা সম্রাজ্যের উত্তরাধিকার হয়ে অঘোষিত রাজা হতে চাই না।”
শুভ হাসলো।ফুয়াদ বললো
-” কোথায় কোথায় সিভি ড্রপ করছিস?”
শুভ খুশি হলো।ফুয়াদ আগের চাইতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।সেই প্লে বয়,বাবার টাকা উড়ানো ছেলেটা আজকাজ সাবলম্বী হতে চাইছে।আসলেই মানুষ পরিবর্ত হয়।
___________
আজকের দিনটি লিয়াকত আলীর জন্য এতটা জঘন্য হবে সে সপ্নেও ভাবতে পারেনি।টিভিতে তার নিউজ চলছে।তার অবৈধ ব্যাবসা আর দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।সেখানে যথা যোগ্য প্রমাণও প্রদর্শন করা হয়েছে।এই নিউজ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তেই।লিয়াকত আলী প্রচন্ড ঘামতে লাগলেন।নির্বাচনে আগ মুহূর্তেই এমন একটা নিউজ সামনে আসা মানে বিরাট ক্ষতি।কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাকে থানায় ডাকা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।লিয়াকত আলী অত্যন্ত চতুর লোক।কথার মাধ্যমে লোকদের কনফিউজড করে ফেলে।সেখানেও তাই করেছে।কোনো কথাই তিনি ক্লিয়ার করেনি।যথেষ্ট পাওয়ারফুল নেতা হওয়ায় সে দ্রুতই বেইল নিয়ে বেরিয়ে আসে।কিন্তু পুলিশ থেমে নেই।আগে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করবে তারপর এই নেতাকে ছাই দিয়ে ধরবে।তখন আর বেইল পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
তবে এই খবর নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে সেটা লিয়াকত আলী বুঝতে পারছেন।পার্টির নেতারা তার উপর ভরসা করতে পাড়ছে না।অন্য দিকে পুলিশ তার পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে।সব মিলিয়ে সে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত।তিনি সাদমানকে ডেকে পাঠালেন।সাদমান আসতেই তিনি ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললেন
-“এতো গোপন খবর ফাঁস হলো কি করে? কে করেছে এই কাজ?পুলিশ এসব নিজে থেকে বের করার কথা না।কেউ গোপনে কাজটা করেছে।”
সাদমান কপালে আঙ্গুল ঘষতে লাগলো আর বললো
-“নাহিদ যে চুপ থাকার মানুষ না সেটা আগেই বুঝা দরকার ছিল।ওর লাইফে আমরা ইন্টারফেয়ার করব আর নাহিদ কোন পাল্টা জবাব দেবে না সেটা ভাবা ভুল ছিলো।আমি বুঝতে পারছিলাম নাহিদ কিছু একটা প্ল্যান করছে।কিন্তু কি সেটা ধরতে পারিনি।”
লিয়াকত আলী টেবিলের পাশে রাখা পানির গ্লাসটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে রেগে বললো
-” এই নাহিদকে আমি ছাড়বো না।ঠিক নির্বাচনের আগ মুহূর্তেই সে পাবলিকের সামনে আমাকে অপদস্ত করেছে।কতটা চতুর এই ছেলে।পাবলিক এখন অটোমেটিক্যালি ওর দিকে ঝুঁকে পড়বে।ওই ব*স্টা*র কে আমি ছাড়বো না।”
-” এই মুহূর্তে কি করা যেতে পারে?”
-” কেন্দ্র দখল করে নাও। কেউ ভোট দিতে পারবে না।সব ভোট আমার দিকেই আসা চাই।”
সাদমান চলে আসল।নাহিদকে তার আন্ডারএস্টিমেট করা মোটেও ঠিক হয়নি। এই নাহিদ তুখোড় রাজনীতিবিদ।ঠিক কোন সময় আঘাত করলে মলম দেওয়ার সময়ও পাওয়া যাবে না সেটা ভালো করে বুঝে।সাদমান দ্রুত কিছু ছেলেদের রেডি থাকতে বললো।তাদের কাজ ভোট কেন্দ্রে দাঙ্গা করা।
কাল নির্বাচন।আর আজ এই ঘটনা।তারা কোনো কিছু ঠিক করার সময় অব্দি পেলো না। এতেই বুঝা যায় নাহিদ ঠিক কতটা ঠান্ডা মাথায় খেলেছে।শান্ত,গম্ভীর ছেলেটা ভেতরে ভেতরে লিয়াকত আলীর কলিজা অব্দি চলে গেছে।অথচ তারা বুঝতেই পারেনি।এই ঝামেলা থেকে বের হতে গেলে একটাই পথ।নির্বাচনে জয় লাভ করা।ক্ষমতা থাকলে কেউ তাদের ছুতে পারবে না।নাহলে লিয়াকত আলীর জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।সাথে সাদমানের ও।কারণ সে লিয়াকত আলীর ডান হাত।লিয়াকত আলী ফাসলে সাদমান নিজেও ফেঁসে যাবে।
**********************
আজ শহরে রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে। বেশ উৎসাহ নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে।প্রতিটি কেন্দ্রেই পুলিশ, র্যাব মোতায়ন করা হয়েছে।আজ সকাল থেকেই নাহিদকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছে।সে সব ভোট কেন্দ্রে ভিজিট করেছে।এই কাংখিত দিনের অপেক্ষা সে বহু বছর যাবত করছিলো।আজ সেই স্বপ্নপূরণের দিন।নাহিদ জানে গতকালের সেই ঘটনার পর লিয়াকত আলী ঘায়েল বাঘ হয়ে আছে।আজ দাঙ্গা,ফ্যাসাদ বাধানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।তাই নাহিদও আজ প্রস্তুত।প্রতিটি কেন্দ্রে কড়া সিকিউরিটি আছে।
আরজু আজ সারাদিন টিভির সামনে বসে আছে।পাশে আছে সুমি।আরজুর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা কাজ করছে।আগে কখনোই এসব বিষয়ে আরজুর আগ্রহ ছিলো না।কিন্তু এবার বিষয়টা ভিন্ন।নেতা সাহেবের সঙ্গ পেয়ে তার ও পলিটিক্সের বিষয়ে আগ্রহ বেড়েছে।
দুই একটা কেন্দ্র ঝামেলা হলেও বাকি কেন্দ্র সুস্থ ভোট হয়েছে।নাহিদের চাচা নকীব মাহমুদ নিজে সিকিউরিটির বিষয়ে তদারকি করেছেন।লিয়াকত আলীর লোকেরা কোথাও সুবিধা করে উঠতে পারেনি।বিকেল হতেই ভোট গণনা শুরু হলো।নাহিদের অস্থিরতা আরো বাড়তে লাগলো।সকাল থেকে গলা দিয়ে খাবার নামাতে পারেনি।আরজু জোর করে একটু খাইয়ে দিয়েছিলো।এই প্রথম আরজু দেখেছে নাহিদকে এতো বিচলিত হতে।আরজু বুঝতে পড়ছে মানুষটা যেই স্বপ্ন বুকে লালন করেছে তার সন্নিকটে এসে মানুষটা আজ অস্থির হয়ে উঠেছে।
নাহিদ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মুখে হাত বুলাচ্ছে।তার চোখ অসম্ভব লাল।গলা অব্দি চলে আসা প্রানটা যেনো বেরিয়ে যাবার জোগাড় হচ্ছিল।নাহিদ জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।এই মুহূর্তটা তার জন্য খুব স্পেশাল। আসফি উচ্ছ্বসিত হয়ে নাহিদকে জড়িয়ে ধরে বললো
-“কনগ্রাচুলেশন এমপি নিবরাস নাহিদ।”
নাহিদের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সেও আসফিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম বাজনা বাজছে।রাজনীতির এই দুর্গম পথে সর্বদা এই বন্ধুটিকে পাশে পেয়েছে।যখনই নাহিদ কোনো দ্বিধা দ্বন্দ তে পড়েছে তখনই আসফি তার পাশে প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছে।নাহিদ ভাঙ্গা গলায় বললো
-” আজ দাদাজান থাকলে সবচাইতে বেশি খুশি হতেন।তিনি আমাকে আজকের এই অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলো।”
আসফি হেসে বললো
-” আরে বেটা সেন্টি খাইস না।দাদাজান উপর থেকেই তোর সফলতা দেখছেন। আই এম প্রাউড অফ ইউ নাহিদ।আমি জানতাম তুই পারবি।”
নাহিদ নিজেও হেসে উঠলো।তখনই আরজু কল করলো।নাহিদ কল রিসিভ করতেই আরজু বললো
-” আচ্ছা এমপিদের বউদের জন্য কি কোন রুলস আছে?থাকলেও বলে লাভ নেই।আমি ওসব মানতে পারবো না।আমি আরজু অত নিয়মে চলতে পারব না।”
নাহিদ নিচের ঠোঁট কামড় হাসলো।বললো
-” মানতে হবেনা কোনো নিয়ম।শুধু ভালোবেসে পাশে থাকলেই চলবে ম্যাডাম।”
-” আপনি কি এখন থেকে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন?”
নাহিদ হাসলো।আরজুর চিন্তা বুঝতে পড়ছে।তাই বললো
-“তুমি তো আমার পজিশনকে রীতিমতো সতীনের মতো ভাবতে শুরু করেছ।চিন্তা করো না।দেশের সাথে সাথে বউকে ও সামলে নিবো।”
-“আপনাকে কে অভিনন্দন নেতা সাহেব।এইভাবেই আপনার সব সপ্ন পূরণ হোক।”
-” তুমি পাশে থেকে হাতটা ধরে রাখলে সব স্বপ্নই পূরণ সম্ভব।তুমিহীন জীবনে আমার কোনো স্বপ্নই বেচেঁ থাকবে না।”
নাহিদকে পার্টির নেতারা একে একে অভিনন্দন জানাচ্ছে। নাহিদ বিপুল ভোট জয় লাভ করেছে।এটা নাহিদের জন্য অনেক বড়ো প্রাপ্তি।সবাই নাহিদকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে।ব্যস্ততম রাস্তাঘাটে আরও বেশি ব্যস্ততা। আকাশ বাতাস রঙিন করে আজকের দিনটায় আনন্দ উৎসব করছে ছেলেপেলেরা।নাহিদ জানে তার কাঁধে আরো বড়ো দায়িত্ব এসে পড়েছে।সে চায় সেই দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করতে।এই সফলতার উদ্দেশ্য জসাধরণের সেবা করা।সে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে।
________________
নাঈম মাহমুদ ছেলের সাফল্যে ভীষণ খুশি হলেও তার মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে।ক্ষমতার বৃদ্ধি মনে শত্রুদের চক্ষুশূল হওয়া।নাহিদ প্রচন্ড তেজী ছেলে।হুমকি,ধামকি দিয়ে তাকে কখনোই দমিয়ে রাখা যায়না।বরং সে আরো রেগে যায়।সানজিদা মাহমুদ স্বামীর পাশে বসে বললেন
-” তুমি কিছু নিয়ে চিন্তিত? এখন বয়স হয়েছে।এই বয়সে এতো স্ট্রেস তোমার জন্য ভালো না।”
-” এইতো নাহিদকে নিয়ে ভাবছিলাম।”
-“নাহিদের টেনশনে তুমি প্রেসার বাড়িয়ে ফেলো।সে বর্তমানে দায়িত্বশীল হয়েছে,বিয়ে করে সংসারী হয়েছে।তাকে নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করো।তাছাড়া অফিসের কাজের চাপে তোমার বেহাল দশা।নাহিদ তো আর তোমার দিকে ফিরেও তাকালো না।তোমার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করলো না।নিজের ক্যারিয়ার নিজে গড়ে নিয়েছে। এখন তোমার যে একটু বিশ্রামের প্রয়োজন সে দিকে খেয়াল নেই।”
নাঈম মাহমুদ বিরক্ত হলেন।সানজিদা মাহমুদ আবার বললেন
-” বলছিলাম কি জাহিদ কে তোমার অফিসে বসতে বলো।”
নাঈম মাহমুদ বিরক্ত হয়ে বললেন
-” জাহিদের কি বয়স হয়েছে অফিসে বসার মতো?ফালতু কথা বন্ধ করো।”
সানজিদা মাহমুদ মোটেও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়।নিজের ছেলেকে তিনি এই বিশাল অফিসের মালিক হিসেবে দেখতে চান।একদিকে ভালই হয়েছে নাহিদ সরে গেছে।নাহলে নিশ্চই ওই ছেলে সব কিছুতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতো।যা সানজিদা মাহমুদ মোটেও মানতে পারত না।তিনি বললেন
-” আরে এখনই দায়িত্ব দেওয়া দরকার নেই।আসা যাওয়া করুক, বুঝুক,কাজের এক্সপেরিয়েন্স হোক।”
-” কোনো দরকার নেই।যখন বয়স হবে তখন নিজে থেকেই দায়িত্ব নিবে।তাছাড়া জাহিদ ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার কিভাবে গড়তে চায় সেটা সম্পূর্ণ ওর ডিসিশন। ওর উপর আমার কোনো ডিসিশন চাপিয়ে দিব না।”
সানজিদা মাহমুদ আর কিছুই বললো না।বিরক্ত হয়ে চলে আসলো।জাহিদ টা এমন উদাসীন কেনো হলো?অর্থ,সম্পদে যেনো ছেলেটার কোনো আগ্রহই নেই।ভাই বলতে পাগল। সৎ ভাইয়ের প্রতি এতো দরদ কেনো কে জানে?”
_______________________
আজ নাহিদের বাড়িটি হাজারো আলোয় ঝলমল করছে।ভীষণ সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাবে সাজানো হয়েছে সব কিছু।দুর থেকেই বাড়ির চাকচিক্য সকলের নজর কাড়ছে।নির্বাচনে জয় লাভের পর নাহিদ তাদের বিয়ের রিসেপশনের আয়োজন করেছে।যদিও তার এমন ঢাক ঢোল পিটিয়ে লোক দেখিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না।কিন্তু প্রতিটি মেয়েরই বিয়ে নিয়ে হাজারো সপ্ন থাকে।আরজুর ও নিশ্চই আছে।নাহিদের সামনে প্রকাশ না করলেও সে বুঝতে পারে।তাছাড়া তাদের সম্পর্কের বিষয়ে সবাইকে অবগত করা প্রয়োজন।নাহলে মানুষ নানান গুজব ছড়াবে।আরজুকে যেদিন জানালো তাদের রিসেপশনে কথা আরজু যেনো বিশ্বাস করতে পড়ছিলো না।খুশিতে মেয়েটা নাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।
আজ আরজু খুব সুন্দর পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে।নাহিদ নিজে এই ড্রেসটি পছন্দ করেছেন।সাজ শেষে সাবিহা,জারা,রিমি আরজুকে হা করে দেখছিলো।সাবিহা চটজলদি আঙ্গুল দিয়ে নিজের চোখ থেকে কাজল তুলে আরজুর কানের পেছনে লাগিয়ে দিলো।আর বললো
-” মাশাআল্লাহ। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ব্রাইট।”
জারা হেসে বললো
-” আজ এমপি সাহেব তোকে দেখলে রূপের ঝলকে মাইনর হার্ট অ্যাটাক করে বসবে।”
রিমি আরজুর ওড়না ঠিক করতে করতে বললো
-” ইউ লুক ড্যাম গর্জিয়াস।”
আরজু লাজুক হাসলো।জারা বললো
-” ইসস!! তোকে দেখে আমারও বিয়ে করতে মন চাইছে।”
আরজু বাঁকা হেসে বললো
-” করে ফেল সমস্যা কি? জামাই তো রেডি আছে।”
জারা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এই জাহিদের জন্য সবাই তার সাথে মজা নিচ্ছে।সাবিহা আর রিমি মিটিমিটি হাসছে জারার রাগী মুখ দেখে।
সাবা খানম এসে আরজুকে দেখে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন।তিনি আরজুকে ঠিক এই ভাবেই দেখতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো।তাই সম্ভব হয়নি।আরজুর ছোট বয়স থেকেই তিনি মেয়েকে বউ সেজে দেখতে চেয়েছিলেন।এই মিষ্টি মেয়েটাকে যে বউ হিসেবে পৃথিবীর সবচাইতে মিষ্টি বউ লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।সাবা খানমের দু চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ল।আপা দুলাভাই আজ বেচেঁ থাকলে মেয়েকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়তো।এতো আদরের মেয়ে তাদের।কিন্তু তাদের ভাগ্যে সেই সুখ লেখা ছিলো না।তাইতো এই পরী তাকে বউ সাজে দেখতে পেলো না।মুহূর্তেই সাবা খানম ভীষণ ইমোশনাল হয়ে পড়লেন।আরজু সেটা বুঝতে পেরে খালামণিকে জড়িয়ে ধরলো।মায়ের ভালোবাসা তো এই মানুষটাই দিয়েছে তাকে।কেমন মা মা সুভাষ পায় আরজু খালামনির কাছে।এই মানুষটা তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে।খালামণিকে জড়িয়ে ধরে বুকে যেনো প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।সৃষ্টিকর্তা তার জীবন থেকে যা নিয়েছে তার চাইতে অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে।আরজু ভাবছে জীবন সুন্দর ভীষণ সুন্দর।আর সবচাইতে বেশি সুন্দর তার নেতা সাহেবের ভালোবাসা।এই মানুষটা যত্ন করে ভালোবাসতে জানে।আর সেই ভালোবাসায় আরজু বারবার বিমোহিত হয়।