#উপসংহারে_ভালোবাসা
#পর্ব_৫
#তিয়াশা_জেরিন
মেহেরাব রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর সময় দেখলো রিশাদ হোসেন একটা মেয়ের সাথে বসে আছে।তাও আবার হাত ধরে কাছাকাছি বসে আছে তাদেরকে দেখলে মনে হবে যেন তারা কাপল।মেহেরাব রিশাদকে এভাবে দেখে একটা হতাশার শ্বাস ফেললো।আর মনে মনে বললো,
-“ইপ্সিতার মতো মেয়ে একে ডিজার্ভ করে না।আমাকে প্রিয়ার সাথে কথা বলতে হবে।”
এই বলে মেহেরাব সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।মেহেরাব চাইলেই পারতো রিশাদকে সরাসরি এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে কিন্তু এতে হয়তো খুব একটা লাভ হতো না সে তৎক্ষনাৎ বিষয়টা অস্বীকার করতো।এসব ছেলের পক্ষে এমনটা করা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না।সে রিশাদকে এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে দেখেছে কিন্তু তখনও সে জানতো না যে ইপ্সিতা যাকে ভালোবাসে এই সেই রিশাদ।মেহেরাব রাত নয়টার দিকে বাড়িতে আসে।মেহেরাব আসলে মিসেস রুহি ছেলের কাছে যান এবং জিজ্ঞেস করেন,
-“আমার মেয়েটার কি হয়েছে বলতো সেই যে এসে ঘরে দরজা বন্ধ করেছে আর বের হচ্ছে না,খেতে বললেও না করে দিচ্ছে।ও তো কখনো এমনটা করে না।”
মিসেস রুহির কথায় মেহেরাব তাকে বলে,
-“তেমন কিছু না মা।যেটা ও জীবনে কল্পনাও করে নি সেটা হয়েছে বলে হয়তো আপাতত এ জগৎ ছেড়ে অবাকের জগতে বসবাস করছে।”
মেহেরাবের কাছ থেকে এমন কথা শুনে মিসেস রুহি এবার তার কান মুলে দিয়ে বলে,
-“বড্ড ফাজিল হয়েছিস না,এদিকে আমার মেয়েটা ঠিকমতো কারো সাথে কথা বলছে না,খাচ্ছে না টেনশনে বাঁচছি না আর তুই মজা করছিস।”
মেহেরাব তার মায়ের কাছ থেকে কানটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠে,
-“আহ মা কানটা ছাড়ো।আর এই নাও প্যাকেটগুলো ধরো এতে কাচ্চি বিরিয়ানি আছে।আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর দেখি তোমার মেয়ে কি করে না খেয়ে থাকে।”
কথাগুলো বলে মিসেস রুহির হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে মেহেরাব ফ্রেশ হতে চলে যায়।ছেলের এমন কান্ডে মিসেস রুহি হালকা হেসে বললেন,
-‘একদম ওর বাবার মতো হয়েছে।’
মিসেস রুহির বলা কথাটা রোহান রায়হানের কানে যায়।সে তার একটা ঔষধ খুঁজে পাচ্ছে না বলে মিসেস রুহিকে ডাকতে এসেছিলেন।এসে মা ছেলের এই ভালোবাসা দেখছিলেন।সত্যি পৃথিবীতে যেন মা সন্তানের ভালোবাসাটা সবচেয়ে সুন্দর,পবিত্র আর শুদ্ধতম।রোহান রায়হান মিসেস রুহির কথাটা শুনে একগাল হেসে তাকে বলে,
-“আমার ছেলে আমার মতো হবে না তো আর কার মতো হবে রুহিরাণী।”
স্বামীর কন্ঠ পেয়ে মিসেস রুহি পিছনে তাকিয়ে দেখে সে দাঁড়িয়ে আছে।এই মানুষটাকে দেখলেই যেন মিসেস রুহির সমস্ত চিন্তা,অস্থিরতা দূর হয়ে যায়।এক অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে মনে।
মেহেরাব তার ঘরে যাওয়ার সময় তিশপিকে প্রিয়ার ঘরের সামনে পেঁচার মতো মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।মেহেরাব তখন তিশপিকে বলে,
-“কি রে গাধী,এখানে এভাবে পেঁচার মতো মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
তখন তিশপি মেহেরাবকে বলে,
-“দেখ ভাই,আমি সকালের দিকে ফোনে কথা বলতে বলতে ওর ঘরে চলে আসছিলাম।আর ভুলবশত ফোনটা ওর ঘরেই ফেলে এসেছি বিকালের দিকে আমার খেয়াল হলে আমি ফোনটা যতবার নিতে এসেছি প্রিয়া বলছে আপু একটু পরে আসো আমি দিচ্ছি,আমার না মাথা ব্যাথা করছে।তাই ওর কথামতো একটু পরে আসলে আবারও একই কথা বলে।এখন আবার এসেছি এবার তো আর কিছু বলছেই না ওদিকে বোধহয় ছেলেটা ফোন দিতে দিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
মেহেরাব তার বোন তিশপির দিকে তাকালো মেয়েরা কত সহজেই কাউকে আপন করে নেয়।এইতো কিছুদিনের পরিচয় ছেলেটার সাথে আগামী মাসেই তাদের বিয়ে।বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হচ্ছে তবে তারা দুজনে নিজেদের কাছে আরো সহজ হওয়ার জন্য কথা বলে।মেহেরাব তিশপিকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় প্রিয়া দরজা খুলে দিতে দিতে বলে,
-“সরি আপু আসলে আমি তোমার ফোনটাই খুঁজছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেল।এই নাও,সাহাদ ভাইয়া ফোন দিয়েছে।”
এই বলে ফোনটা তিশপির দিকে বাড়িয়ে দিতে পাশেই দেখে মেহেরাব দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়ার বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠলো।বারবার কেন এই মানুষটার সামনেই তাকে পড়তে হচ্ছে।যত মানুষটার থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাইছে সে যেন ততই তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিচ্ছে।তিশপি ফোনটা নিয়েই দেখে সাহাদ ফোন দিয়েছে সে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো কথা বলতে বলতে চলে গেল।প্রিয়া মেহেরাবকে দেখে দ্রুত দরজা বন্ধ করতে গেলে মেহেরাব হাত দিয়ে ঠেলে ঘরে প্রবেশ করে।প্রিয়ার এবার অস্বস্তি হতে লাগলো সকালের ওই ঘটনার পর থেকে ভেবেছিল ও আর মেহেরাবের সামনে পড়বে না।আর এমনিতেও কাল প্রিয়া তার বাসায় চলে যাবে।মেহেরাব প্রায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে প্রিয়াকে লক্ষ্য করছে।তার ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছে।প্রিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে তার ওড়নায় কেমন আঙুল পেঁচাচ্ছে।মেহেরাবকে এভাবে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ার কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে।বিরক্তিও লাগছে না আবার ভালোও লাগছে না।এ কেমন অনুভূতি।মেহেরাব এতক্ষণে বলে,
-“কি ব্যাপার তুই নাকি কিছু খাস নি।কেন?”
মেহেরাবের কথায় প্রিয়া তাকে বলে,
-“না আসলে মেহেরাব ভাইয়া আমার খেতে ইচ্ছে করছিল না আর খিধেও পায়নি।”
মেহেরাব তখন প্রিয়ার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে বলে,
-“খিধে পায়নি নাকি অন্যকিছু।”
মেহেরাবের কথায় প্রিয়া একটু থতমত খেয়ে যায়।প্রিয়া বুঝতে পারছে এই লোকটা ইচ্ছে করে প্রিয়াকে অস্বস্তিতে ফেলছে।নিজে এমন একটা কাজ করে আবার জিজ্ঞেস করছে এমন ভাব করছে যেন সে কিছু জানেই না।ঢং।
-“না অন্যকিছু কি হবে,কি…কিছু না তো।”
মেহেরাব তখন হুট করে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“সত্যি কিছু না”
মেহেরাবের এমন আগানো দেখে প্রিয়ার এবার গলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।প্রিয়া শুকনো একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
-“মেহেরাব ভাইয়া প্লিজ তু..তুমি এখন এখান থেকে যাও।”
কথাটা বলতে বলতে প্রিয়া পিছিয়ে যেতে থাকে।মেহেরাব হঠাৎ প্রিয়ার হাত ধরে হেচকা টান দেয়।প্রিয়া টাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলে মেহেরাবের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে আর মেহেরাবও তাকে আকড়ে ধরে।প্রিয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আর মেহেরাব মুগ্ধচোখে তার প্রাণপ্রিয়াকে দেখতে থাকে।এত মায়া কেন মেয়েটার মাঝে।
-“এত পালাই পালাই করিস কেন সবসময়?”
কথাটা কানে যেতেই প্রিয়ার সারা শরীর জুড়ে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেল।প্রিয়ার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল মেহেরাবে।
-প্রাণপ্রিয়া
মেহেরাবের এই ডাকটাতে কিছু একটা ছিল যা প্রিয়ার ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিল।এই মানুষটা কি তাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে না কি।প্রিয়া মেহেরাবের কাছ থেকে সরে যেতে নিলে মেহেরাব আবার প্রিয়াকে কাছে টেনে নেয়।
-“মেহেরাব ভাইয়া ছা..ছাড়ুন।কেউ এসে পরলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
প্রিয়ার কথায় মেহেরাব তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।মেহেরাব প্রিয়াকে ছেড়ে দিলে প্রিয়া জোরে একটা শ্বাস নেয় এরপর সামনে তাকাতেই যেন তার শ্বাস আটকে আসে মেহেরাব যায় নি সে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।প্রিয়ার যেন হাত পা অবশ হয়ে আসলো।কি করছে কি মেহেরাব ভাইয়া পাগল হয়ে গেল নাকি।
চলবে…