অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
278

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২৪

জবার কথায় সবাই এতটা হতভম্ব যে ওর কথার পি‌ঠে কেউ কিছুই বল‌তে পারল না। সবাই হতভম্ব হ‌য়ে যার যার স্থা‌নেই ব‌সে রইল। জবা চ‌লে যে‌তেই ‌নিলুফা বেগম দাঁ‌ড়ি‌য়ে সি‌ন্থিয়ার কা‌ছে গি‌য়ে ওকে অনবরত চড় মার‌তে লাগত। যতক্ষণ না সীমার বর শ‌ফিক তা‌কে থামাল। চড় খে‌তে খে‌তে সিন্থিয়ার গাল দু‌টো ট‌মে‌টোর ম‌তো লাল হ‌য়ে গে‌ছে। সি‌ন্থিয়ার মা চিৎকার ক‌রে বল‌ল, ‘‌তোর ম‌তো বে** আমি পে‌টে ধ‌রে‌ছিলাম ভাব‌তেই নি‌জের প্র‌তি ঘৃণা হ‌চ্ছে। তোর ম‌তো কুলাঙ্গার আমার গ‌র্ভে কী ক‌রে জন্ম হ‌লো?’

‌সি‌ন্থিয়া স্তব্ধ হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়েই রইল। চোখ থে‌কে অনর্গল জল পড়‌তে লাগল। বাসার কারও কা‌ছে ক্ষমা চাইবার ম‌তো কিংবা কিছু বলার ম‌তো মুখ ওর নেই। তাই চুপ ক‌রে দাঁড়ি‌য়ে ওর মা‌য়ের মার হজম কর‌ছিল। নিলুফা‌কে, শ‌ফিক থামা‌তেই সীমা গি‌য়ে ঠাস ঠাস চড় ব‌সি‌য়ে দি‌লো সি‌ন্থিয়ার গা‌লে।

তারপর বলল, ‘এর আগে তুই একটা ছে‌লের সা‌থে রি‌লেশ‌নে ছি‌লিস তখন আমি সাবধান ক‌রে দি‌য়ে‌ছিলাম যা‌তে এসব চক্ক‌রে না প‌ড়িস। তুই তখন আমার কথা মে‌নে ব‌লে‌ছি‌লি আচ্ছা প্রেম টেম করব না। তো এখন প্রেম না ক‌রে তুই ধান্ধা শুরু ক‌রে‌ছিস? শো‌নো বাবা, তোমার মে‌য়ের অনেক কথা জে‌নেও আমি চুপ ছিলাম। আজ সব বলছি শোনো। বহুবছর আগে যে নিহাদ স্যার আমা‌কে পড়া‌তো, ‌তোমার মে‌য়ে এখন হয়‌তো তার সংসারও ভাঙার পায়তারা কর‌ছে।’

‌সি‌ন্থিয়া অবাক হ‌য়ে সীমার দি‌কে তাকাল। সীমা বলল, ‘ওমন ক‌রে তা‌কি‌য়ে কী দেখ‌ছিস? ভাব‌ছিস নিহাদ স্যা‌রের কথা কী ক‌রে জানলাম? তোর বেস্ট‌ফ্রেন্ড হেনার সা‌থে ক‌দিন আগে নি‌জের রুমে ব‌সে বল‌ছি‌লি না নিহাদ স্যার‌কে তোর চাই-ই চাই। তার জন্য যা যা কর‌তে হয় কর‌বি। সে‌দিন আড়া‌লে দাঁ‌ড়ি‌য়ে তো‌দের সব কথা শু‌নে‌ছি আমি।

তারপর নিহাদ স্যা‌রের সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে‌ছি। বাবা, নিহাদ স্যার বিবা‌হিত, তার সংসার আছে। ফুটফু‌টে একটা মে‌য়ে তার স্ত্রী। তা‌দের বি‌য়েও হয়‌ছে চার বছর প্রায়। খুব ভা‌লো মানুষ নিহাদ স্যার এবং তার প‌রিবার। কিন্তু তোমার অসভ্য এ মে‌য়ে তার সুন্দর সংসার ভাঙতে চাই‌ছে।’

সীমা, সি‌ন্থিয়া‌কে আরেকটা চড় মে‌রে বলল, ‘হ্যাঁ‌ রে আমা‌দের ম‌ধ্যে কা‌রও চ‌রিত্র তো এত নোংরা না। ত‌বে তোর চ‌রিত্র এমন পচা গুর ম‌তো কেন হ‌লো? কার ম‌তো হ‌য়ে‌ছিস তুই?’

‌নিলুফা দাঁ‌তে দাঁত চে‌পে বলল, ‘‌ছো‌টো খালার ম‌তো ছেনাল হ‌য়ে‌ছে। ওর ছো‌টো খালা‌কেও বাবা এ কার‌ণে তেজ্য ক‌রে‌ছিলেন। যৌবনকা‌লে ছে‌লে‌দের সা‌থে তার ফ‌স্টিন‌স্টি বে‌শি ছিল। পা‌লি‌য়ে বি‌য়ে করায় বাবা তার সব‌কিছু থে‌কে ওরে বেদখল ক‌রে‌ছি‌লেন। ভুলটা আমা‌দের, ওর এইচএস‌সি পরীক্ষার পর ওর ছো‌টো খালার কা‌ছে যে‌তে দেওয়া উচিত হয়‌নি। তখন সেখা‌কে গি‌য়ে তিন মাস থে‌কে আসার পর থে‌কেই সরল সহজ মে‌য়েটা কেমন বদ‌লে গেল। ছো‌টো খালার গা‌য়ের বাতাস লে‌গে‌ছিল। লো‌কে বলে না, সৎ সঙ্গে সর্গবাস আর অসৎ স‌ঙ্গে সর্বনাশ। ঐ কু‌ত্তিটা নিশ্চয়ই কিছু তো এমন ক‌রে‌ছে যে আমার মে‌য়েটা ধী‌রে ধী‌রে ওর ম‌তো হ‌য়ে গেল।’

সীমা বলল, ‘‌কিরে বলল, নিহাদ স্যা‌রের সংসার ভাঙা শেষ ক‌রে‌ছিস নাকি এখনও কিছু করিস‌নি?’
‌সি‌ন্থিয়া চুপ ক‌রে রইল। সি‌ন্থিয়ার ভাই সোহান বলল,
‘এখন চিল্লাপাল্লা বন্ধ ক‌রে ওকে জি‌জ্ঞেস করো প্রায় সাত লক্ষ টাকা কী ক‌রে দি‌বে? ইরফান চৌধু‌রির স্ত্রী যা ব‌লে গে‌লেন তা‌তে ম‌নে হয় ম‌হিলা খুব ডেঞ্জারাস। সহ‌জে ছাড়‌বে না।’

হক সা‌হেব এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলল, ‘‌যে অপকর্ম ক‌রে‌ছে তার অপক‌র্মের ফল সে ভোগ কর‌বে। আজ থে‌কে আমার মে‌য়ে একটাই। ওকে বের হ‌য়ে যে‌তে ব‌লো। তারপর যা খু‌শি করুক, যেভা‌বে খু‌শি টাকা দিক।’

হক সা‌হেব উঠে নি‌জের রুমে চ‌লে গে‌লেন। নিলুফা সি‌ন্থিয়ার মুখে একদলা থু থু ছি‌টি‌য়ে চ‌লে গে‌ল। সি‌ন্থিয়া দপ ক‌রে মা‌টি‌তে ব‌সে পড়ল। সবাই ‌যে যার ম‌তো সিন্থিয়া‌কে কথা শু‌নি‌য়ে চ‌লে গেল।

সি‌ন্থিয়ার ভা‌বি ঝুমা ওর কা‌ছে এসে বলল, ‘রু‌মে যা। বাবার এখন মাথা গরম। রাগ পড়‌লে বু‌ঝি‌য়ে বলব।’
‌সি‌ন্থিয়া, ঝুমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কাঁদ‌তে লাগল। প্রচন্ড কষ্টে, অপমা‌নে কো‌নো কথাই বল‌তে পারল না।

ঝুমা ওর কান্না দে‌খে ম‌নে ম‌নে বিরক্ত হ‌য়ে বলল, ‘‌নি‌জে আকাম কর‌বে আবার ঢঙ মা‌রি‌য়ে কাঁদ‌বে। ফালতু মে‌য়ে। কম তো জ্বালাস‌নি আমাকে। আল্লাহ তার বিচার কর‌ছেন। আরও কর‌বে। কারও সংসার ভাঙতে চাওয়া মস্তবড় গুনা‌হের কাজ। আর তুই তো পর‌কিয়া ম‌া‌রি‌য়ে ইরফা‌ন চৌধু‌রির সংসার ভে‌ঙে‌ছিস, তোর স্যার নিহা‌দের সংসার ভে‌ঙে‌ছিস কি না তা তো জা‌নি না। আমার সংসার ভাঙার জন্যও তো কম চেষ্টা ক‌রিসনি। তোর ভাইয়ের জন্য সুন্দর মে‌য়ে আনতে চে‌য়ে‌ছি‌লি। তোর মা বাবা আমার ম‌তো শ্যামলা মে‌য়ে‌কে পছন্দ ক‌রে‌ছে ব‌লে কম জ্বালাস‌নি আমা‌কে। কথায় কথায় বল‌তি তোর ভাই‌কে আবার বিয়ে করা‌বি। ভা‌গ্যিস তোর মা-বাবা-ভাই তোর ম‌তো না। নয়তো এত‌দি‌নে আমার সংসারও ভাঙা শেষ কর‌তি। রাক্ষ‌সী যেখা‌নে যায়, যার ঘ‌রে যায় তার সংসা‌রে বদ নজর দেয়।’

ম‌নের কথা ম‌নে চে‌পে ঝুমা বলল,
‘যা, নি‌জের রুমে যা। আমি দে‌খি বা‌কি‌দের বোঝা‌তে পা‌রি কি না?’
‌সি‌ন্থিয়া কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে রু‌মে চ‌লে গেল। ঝুমা বির‌ক্তি প্রকাশ ক‌রে খুব খারাপ কথা ব‌লে বলল, ‘‌বে**‌গি‌রি ক‌রে আবার ন্যাকা‌মি মারা‌চ্ছে।’

২৭!!
কালরাত থে‌কে তূবা দু’চো‌খের পাতা এক কর‌তে পার‌ছে না। চোখ বন্ধ কর‌লেই দেখ‌ছে শ্রাবণ ওকে জ‌ড়ি‌য়ে রে‌খে‌ছে। লজ্জায় তখন দি‌শেহারা হ‌য়ে চোখ মে‌লে রে‌খে‌ছে। শরীর, ম‌নে অদ্ভুত শিহরন খে‌লে যা‌চ্ছে। দুপু‌রে খে‌য়ে শু‌য়েছে একটু ঘুমা‌বে ব‌লে, কিন্তু যে-ই ‌চোখ বন্ধ ক‌রে ওম‌নি ম‌নে হয় শ্রাবণ ওর পাশে শু‌য়ে আছে। বড় যন্ত্রণা দি‌চ্ছে শ্রাবণ।

তূবা ফোন হা‌তে নি‌য়ে দেখল শ্রাব‌ণের‌ অনেক মে‌সেজ। কাল রাত থে‌কে শ্রাবণ অসংখ্য মে‌সেজ দি‌য়ে‌ছে। প্র‌তিটা মে‌সে‌জে লেখা “ভা‌লোবা‌সি।” তারপর‌ লেখা, “তোমার মন তো ব‌লেই দি‌য়ে‌ছে ভা‌লোবা‌সি। এবার মু‌খেও ব‌লো। আচ্ছা মু‌খে না ব‌লো এট‌লিস্ট মে‌সেজ ক‌রো।”

‌মে‌সেজগু‌লো প‌ড়ে তূবা অনেক্ষণ বা‌লি‌শে মুখ ‌চে‌পে হাসল। তারপর উত্তর দি‌লে‌া। “অামি কিছু বলব না, লিখবও না আর আমার মনও কিছু ব‌লে‌নি। কাল সন্ধ্যায় যা হ‌য়ে‌ছে তা তোর স্বপ্ন ছিল। এছাড়া কিছু না।”

‌মে‌সেজ প‌ড়ে শ্র‌াবণ এত হাসল। তারপর উত্তর দি‌লো, “‌কোনটা স্বপ্ন? দুপু‌রে তু‌মি আমার কপালে যে গাঢ় তপ্ত চু‌মু এঁকেছি‌লে সেটা স্বপ্ন? না‌কি গোধূলী ল‌গ্নে আমার বু‌কে মাথা রে‌খে কেঁ‌দে আমার বুক ভি‌জি‌য়ে‌ছি‌লে সেটা স্বপ্ন? না‌কি তখন আমার বু‌কে চু‌মু খে‌য়ে‌ছি‌লে সেটা স্বপ্ন? না‌কি বা‌ড়ি যাবার পূ‌র্বে আমা‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছি‌লে সেটা স্বপ্ন? না‌কি তু‌মি যাবার সময় তোমার কপা‌লে আমি ভা‌লোবাসার উষ্ম পরশ দি‌য়ছিলাম সেটা স্বপ্ন? এতসব স্ব‌প্নে হ‌লো? তাও মাত্র এক‌দি‌নের দিবাস্বপ্নে।”

শ্রাব‌ণের মেসেজ প‌ড়ে তূবা একা রু‌মেও লজ্জায় মুখ ঢাকল। শ্রাবণ আবার মে‌সেজ লিখল, “স্ব‌প্নে এতকিছু হয় জানতাম না? অবশ্য স্বপ্নে স্বপ্নদোষও হয়।”
‌মে‌সেজটা লি‌খে শ্রাবণ আবার কে‌টে দি‌লো। নি‌জে নি‌জে বলল, ‘এম‌নি মে‌য়েটা এত লজ্জাবতী, তার উপর ভীষণ রাগী। এ মে‌সেজ লিখ‌লে র্নিঘাত লজ্জা পে‌য়ে আমা‌কে মার্ডার কর‌বে।’

শ্র‌াবণ আবার মে‌সেজ করল, “ভা‌লোবা‌সি।”
তূবা উত্তর করল, “‌তো আমি কী করব? আমি তো ভা‌লোবা‌সি না।”
শ্রাবণ হে‌সে মেসেজ করল, “ধন্যবাদ ভা‌লো না বাসার জন্য।”

কথা ছো মে‌রে শ্রা‌বণের ফোন নি‌য়ে বলল, ‘‌দে‌খি, জ্ব‌রের ম‌ধ্যেও সারা‌দিন এত কার সা‌থে চ্যা‌টিং ক‌রিস।’
শ্রাবণ ফোন নি‌তে চাই‌লে কথা বলল,
‘তোর সে‌টিং আমি করা‌চ্ছি। সো আমার জানার রাইট আছে।’
কথা ক‌য়েকটা মে‌সেজ প‌ড়ে চোখ বড় বড় ক‌রে বলল,
‘‌তো‌দের মা‌ঝে এত‌কিছু হয়ে গে‌ছে?’
শ্রাবণ লজ্জা পে‌য়ে বলল,
‘আপু ফোন দে প্লিজ।’

কথা ফোন শ্রাব‌ণের হা‌তে দি‌য়ে ওর কপা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
‘জ্বর তো তেমন নেই। গা হালকা গরম। পা‌য়ের ব্যথা কেমন?’
‘‌সেলাই‌তে যন্ত্রণা হ‌চ্ছে খুব।’
‘তা তো কর‌বেই। প্রেম করবি আর যন্ত্রণা ভোগ কর‌বি না তা তো হয় না। বাই দ্যা ওয়ে আজ রা‌তে আমি তূবা‌দের বা‌ড়ি থাক‌ছি।’
‘তুই কেন ওদের বাসায় থাক‌বি? ওকে আসতে বল। ও আজ রা‌তে আমা‌দের বাসায় থাকুক।’

কথা, শ্রাব‌ণের কান টে‌নে বলল,
‘যা‌তে তোরা উল্টা পাল্টা কিছু কর‌তে পা‌রিস তাই না?’
‘‌ছি! ছি! তুই নি‌জের ভাই‌কে চি‌নিস না? আমার ম‌তো প‌বিত্র‌ ছে‌লে ত‌ুই জীব‌নে দে‌খিস‌নি। আমি হলাম পিওর গোল্ড। কোনো খাদ নেই। হীরার ম‌তো দা‌মি। কো‌নো ভেজাল নেই।’

কথা হে‌সে শ্রাব‌ণের মাথায় টোকা দি‌য়ে বলল,
‘শু‌য়ে থাক। সেলাই পা‌য়ে বে‌শি হাঁটাহাটি ক‌রিস না। ইন‌ফেকশন হ‌তে পা‌রে।’
‘‌তোর বান্ধবী গতকাল দুপু‌রে জ্বর বা‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে‌ছিল, শেষ বিকা‌লে জ্বর ক‌মি‌য়ে দি‌য়ে গে‌ছে। এখন বল না, এখা‌নে এসে পা‌য়ে ব্যথা ঠিক ক‌রে দি‌তে।’
‘আমার বান্ধবী ম্যা‌নেজমেন্ট এর ছাত্রী, সে ডাক্তার না।’
‘আমার বড় ডাক্তার তো ও-ই।’
‘বজ্জাত! বড় বো‌নের সাম‌নে র্নিল‌জ্জের ম‌তো কথা বল‌ছিস।’

রা‌তের বেলা,
কথা, তূবার পা‌শে শু‌য়ে শু‌য়ে তূবা‌কে সি‌ন্থিয়া আর নিহা‌দের সব কথা বলল। শুধু বলল না, নিহাদ যে সি‌ন্থিয়ার সাথে ফি‌জিক্যাললী ইনভলব হ‌য়ে‌ছে সে কথা। বলল, সি‌ন্থিয়ার বিষ‌য়ে সব কথা নিহাদ ওকে ব‌লে‌ছে। কথা চায় না পৃ‌থিবীর কেউ নিহাদ‌কে ঘৃণা করুক, অসম্মান করুক। ও ম‌নে ক‌রে নিহাদ‌কে ভা‌লোবাসার, রাগ দেখা‌নোর অধিকার শুধু ওর। কেউ নিহাদ‌কে অসম্মান কর‌বে সেটা কথা সহ্য কর‌তে পার‌বে না। সে কার‌ণে কথা কাউ‌কে নিহা‌দের করা কাজ‌কে কখনও বল‌বে না। একজন অবশ্য জা‌নে। সি‌ন্থিয়া‌কে শিক্ষা দি‌তে সে-ই কথা‌কে সাহায্য কর‌ছে।

সব কিছু শু‌নে তূবা হা হ‌য়ে রইল। বিস্ম‌য়ে বলল, ‘কথা, এত‌দিন যাবত তুই এত ক‌ষ্টে, এত যন্ত্রণায় ছিলি অথচ আমা‌কে ব‌লিস‌নি পর্যন্ত। কেন? এই আমি তোর সবচেয়ে প্রিয়?’
‘‌আস‌লে তূবা!’
‘চুপ কর। তোর সা‌থে কো‌নো কথা নেই আমার।’
তূবা কান্না কর‌তে কর‌তে বলল, ‘আমার সব‌চে‌য়ে কা‌ছের মানুষটা এত‌দিন যাবত মরন যন্ত্রণায় ভুগ‌ছিল আর আমি জানতাম না পর্যন্ত। তারম‌ধ্যে তুই প্রেগ‌নেন্ট। এ অবস্থায় এত ধকল সহ্য করা যায়? তুই আমা‌কে ব‌লে নি‌জের কষ্ট কম কর‌তে পার‌তি।’

কথা, তূবাকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, ‘স‌রি রে। আমি আস‌লে ভাব‌ছিলাম, এসব কথা শুন‌লে য‌দি তুই নিহাদ‌কে অসম্মান ক‌রিস?’
‘গা‌ধি! তা‌কে কেন অসম্মান করব? তি‌নি কী ক‌রে‌ছেন? যা করার তা তো ঐ কু‌ত্তিটা ক‌রে‌ছে। ভা‌র্সিটি‌তে গি‌য়ে নি। ঐ কু‌ত্তিট‌া‌কে পু‌রো ভা‌র্সি‌টির সাম‌নে বেপর্দা করব।’
‘না। সেটা কর‌লে নিহা‌দেরও বদনাম হ‌বে খুব। ওর শা‌স্তি আমি ওকে দি‌চ্ছি। আমার প‌রিকল্পনা য‌দি স‌ঠিক হয় ত‌বে আজ ও ওর পু‌রো প‌রিবা‌রের কা‌ছে এক্সপোজ হ‌য়ে‌ছে।’
‘মা‌নে বুঝলাম না।’

কথা রহস্যময় হে‌সে বলল, ‘আমার প্ল্যানটা এমন ছিল যেন সাপও ম‌রে লা‌ঠিও না ভা‌ঙে।’
‘মা‌নে?’
কথা আবার হে‌সে বলল,
‘ও‌কে এমনভা‌বে শা‌য়েস্তা করব যা‌তে নিহা‌দের কথা কেউ না জা‌নে, আর ও ক‌ঠিন শা‌স্তি পায়।’
‘‌বিস্তা‌রিত বু‌ঝি‌য়ে বল।’

কথা আবার হে‌সে বলল, ‘তিনদিন আগে আমি লু‌কিয়ে সি‌ন্থিয়ার ফোন চেক ক‌রি। ওর ফো‌নের পাসওয়ার্ড আগেই কৌশ‌লে জে‌নে‌ছিলাম। তারপর ফোন এবং মেম‌রি কা‌র্ডের সব‌কিছু ক‌পি ক‌রে আমার ল্যাপট‌পে নি‌য়ে রা‌খি। ভাবলাম ওর ফো‌নে ওকে শা‌য়েস্তা করার ম‌তো কিছু পাই কিনা? আজকাল মানু‌ষের সকল গোপন দ‌লিল থা‌কে ফো‌নে।

প‌রে বা‌ড়ি এসে ল্যাপটপে নিহা‌দকে ব্ল্যাক‌মেইল করা ছ‌বিগু‌লো দেখলাম। সা‌থে দেখলাম ইরফান চৌধু‌রির সাথে ঘ‌নিষ্ঠ মুহূ‌র্তের ছ‌বি। মাথায় দারুণ বু‌দ্ধি আসল। ইরফান চৌধু‌রি‌কে আমি আগে থে‌কেই চিনতাম। আমার শ্বশু‌রের সাথে তার ব্যবসার সম্পর্ক। সেই সুবা‌দে দুইবার আমা‌দের বা‌ড়ি এসে‌ছি‌লেন। তার স্ত্রীও এসে‌ছি‌লেন। কাকতালীয়ভা‌বে দুজন‌কেই আমি চি‌নি।

‌সে রা‌তেই একটা ফেইক আইডি খু‌লে আমি জবা‌কে, ইরফান আর সি‌ন্থিয়ার ঘ‌নিষ্ঠ ছ‌বি পাঠাই। তি‌নি সে‌দিন মে‌সেজ দে‌খেননি। আর প‌রের দিন আমি আরেকটা কাজ ক‌রি। আবার কৌশ‌লে সি‌ন্থিয়ার ফোনটা আনি। আস‌লে এ কাজটা ওর কা‌ছের লো‌কের মাধ্য‌মেই সম্ভব হ‌য়ে‌ছে। ব‌লে না টাকা সব পা‌রে।

ওর ফো‌নে এস‌ডি কার্ড মা‌নে ম্যাম‌রি‌তে ছিল নিহা‌দের সা‌থের ছ‌বি। আর ফো‌নে মা‌নে ইন্টারনাল স্টো‌রে‌জে ছি‌ল ইরফান সা‌হে‌বের সা‌থের ছ‌বি ভি‌ডিও। আমি ওর ফোন থে‌কে ম্যাম‌রি‌টা খু‌লে নি‌য়ে আসি।

বাসায় আসার পর দেখলাম জবা মে‌সেজ কর‌ছে। অনেক অনেক প্রশ্ন তার। আমি কো‌নো প্র‌শ্নের উত্তর দিলাম না। বললাম, সি‌ন্থিয়ার ফোনটা আন‌লেই সব প্র‌শ্নের উত্তর পে‌য়ে যা‌বে। আ‌মি জানতাম ম‌হিলা প্রচুর চালাক, প্রচন্ড স্মার্ট। বাকি কাজ নি‌জেই ক‌রে‌ছেন। আমার ইনফর‌মেশন অনুসা‌রে আজ তি‌নি সি‌ন্থিয়ার ব‌াসায় গি‌য়ে বো***ম ফা‌***টি‌য়ে এসে‌ছে। ওনার স্বামীর এবং সি‌ন্থিয়ার অবৈধ সম্পর্কের কথা সি‌ন্থিয়ার প‌রিবার‌কে জা‌নি‌য়ে এসে‌ছে।

আলহামদু‌লিল্লাহ আমার নতুন বই‌য়ের প্রচ্ছদ পে‌য়ে‌ছি। কাল‌কে দেখাব আপনা‌দের। “‌রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া” বইটা আশাক‌রি মে মা‌সে হা‌তে পা‌বেন। দোয়া কর‌বেন।

চলবে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২৫

আমার ইনফর‌মেশন অনুসা‌রে আজ তি‌নি সি‌ন্থিয়ার ব‌াসায় গি‌য়ে বো**ম ফা‌**টি‌য়ে এসে‌ছে। ওনার স্বামীর এবং সি‌ন্থিয়ার অবৈধ সম্পর্কের কথা সি‌ন্থিয়ার প‌রিবার‌কে জা‌নি‌য়ে এসে‌ছে। ত‌বে উনি নিহা‌দের কথা কিছুই জা‌নেন না। বা‌কি খবর অবশ্য আমি এখনও পাইনি। আশাক‌রি সি‌ন্থিয়া নি‌জেই ফোন ক‌রে জানা‌বে। না জানা‌লেও সমস্যা নেই। আমার সমস্যা সমাধান হ‌য়ে গেছে। ওর সমস্যা এখন ও সমাধান কর‌বে।

কথায় আছে না প‌রের জন্য গর্ত কর‌লে সেই গ‌র্তে নি‌জেই পড়ে। তো ও আমার জন্য অনেক বড় গর্ত খু‌ড়ে‌ছিল।‌ আমি বু‌দ্ধি দি‌য়ে গর্ত দে‌খে পাশ কা‌টি‌য়ে চ‌লে এসে‌ছি, কিন্তু ও নি‌জের খোড়া গ‌র্তে আমি প‌ড়ে‌ছি কি না তা দেখ‌তে গি‌য়ে নি‌জেই সেই গ‌র্তে প‌ড়ে গে‌ছে। আমি কিন্তু ওকে গ‌র্তে ফে‌লি‌নি বরং ওর কর্ম ওকে ওরই খোড়া গ‌র্তে ফে‌লে‌ছে।’

তূবা স্ব‌স্তির নিঃশ্বাস ফে‌লে বলল, ‘ওর কা‌ছে নিহাদ স্যা‌রের আর কিছু নেই তো?’
‘ওর ল্যাপট‌পে আর পেইড্রাই‌ভে ছিল।’
‘ব‌লিস কি?’
‘‌সেগু‌লো কী ক‌রে পা‌বি?’
কথা হে‌সে বলল, ‘ওর ল্যাপট‌পের হার্ড‌ডিক্স আমা‌দের বা‌ড়ির মা‌টির চুলায় দগ্ধ হ‌য়ে‌ছে। বা‌কি ব‌ডিপার্স ভে‌ঙে চুরমার হ‌য়ে আমা‌দের বা‌ড়ির পিছ‌নের ডাস্ট‌বি‌নে প‌ড়ে আছে। হয়‌তো কো‌নো টোকাই তু‌লে নি‌বে।’
তূবা বিস্ম‌য়ে বলল, ‘কীভা‌বে?’

কথা হে‌সে বলল, ‘ওর ল্যাপটপ আমি চু‌রি ক‌রি‌য়ে আনি‌য়ে‌ছি। কারণ ও নিহাদ‌কে ব‌লে‌ছিল ও নিহা‌দের সা‌থের ছ‌বিগু‌লো ডিলিট ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। যেটা মিথ্যা ছিল। কারণ ওর ফো‌নে ছ‌বি পে‌য়ে‌ছি আমি। তখন আমার মাথায় আসল ও এগু‌লো ক‌পি করে অন্য কোথাও তো রাখ‌তে পা‌রে। সে কার‌ণে ওর কাছ থে‌কে ওর ল্যাপটপ ছিনকারীর দ্বারা ছিনতাই ক‌রি‌য়ে‌ছি। আর আমার সূত্রম‌তো ওর তিনটা পেনড্রাইভ ছিল সেগু‌লোও আমার কা‌ছে।

ল্যাপ‌ট‌পেও ওর আর নিহাদের ছবি পে‌য়ে‌ছি। সেগু‌লো ডি‌লিট ক‌রেছি। কিছু ফাইল লক ছি‌ল। সেগু‌লো খুল‌তে পা‌রি‌নি ব‌লে হার্ড‌ডিক্সটাই ডিসট্রয় ক‌রে ফে‌লে‌ছি। না থাক‌বে বাঁশ না বাঁজ‌বে বাঁ‌শি। তিনটা পেনড্রাই‌ভের একটা‌তে নিহা‌দের ছ‌বি ছিল। কতবড় অসভ্য আর চালাক মে‌য়ে ভাব। তিন জায়গায় ক‌পি ক‌রে রে‌খে‌ছে। আমি পেনড্রাইভ থে‌কে তা ডি‌লিট ক‌রে প্র‌তিটা পেনড্রাইভ নষ্ট করে ফে‌লে‌ছি।’

তূবা খা‌নিকটা ভয়ার্ত ক‌ণ্ঠে বলল, ‘আর কো‌নো স্থা‌নে যে ক‌পি নেই তা বুঝ‌লি কী ক‌রে?’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে কথা বলল, ‘‌সে ভয়টা তো আছে। কিন্তু আমা‌কে যে এসব সংগ্রহ ক‌রে দি‌য়েছে সে বল‌ছে সি‌ন্থিয়ার আর কো‌নো পেনড্রাইভ বা মে‌মো‌রি নেই। বা‌কিটা পরম করুণাম‌য়ের ইচ্ছা।’

‘বুঝলাম এখন বল সি‌ন্থিয়ার এমন কোন কা‌ছের লোক যে তো‌কে এত হেল্প ক‌রেছে?’
‘‌হেনা।’
তূবা অবাক হ‌য়ে বলল, ‘ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হেনা?’
‘হুম।’
‘‌কেন?’

‘কথায় আছে না, যে যেমন তার সা‌থে মি‌শেও তেমন লোক। হেনা‌ অবশ্য ওর কা‌জে ক‌র্মে বিরক্ত হ‌য়ে হেল্প ক‌রে‌ছে। সা‌থে আমার কাছ থে‌কে হাজার পঁ‌চিশ টাকা নি‌য়ে‌ছে। কারণ টাকাটা ওর প্র‌য়োজন ছিল। ওর ছে‌াটো বোন‌কে ক‌ম্পিউটার কি‌নে দি‌বে। ত‌বে হেনা সি‌ন্থিয়ার ম‌তো খারাপ ন‌া। ও জানত না, নিহা‌দকে যে সি‌ন্থিয়া ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছে বা নিহা‌দের সা‌থে কী কী খারাপ কর‌ছে। ও শুধু জানত সি‌ন্থিয়া নিহাদ‌কে ভা‌লোবা‌সে।

কিছু‌দিন আগে না‌কি সি‌ন্থিয়া ওকে ব‌লে‌ছিল, নিহাদ‌কে ওর যে কো‌নো মূ‌ল্যে চাই। তার জন্য আমা‌দের সংসার ভাঙ‌তে হ‌লেও ভাঙ‌বে। এ কথাটা শোনার পর হেনাই ক‌য়েক দিন আগে আমার সা‌থে যোগা‌যোগ ক‌রে বিষয়টা ব‌লে। আমিও আর ওকে নিহাদ সি‌ন্থিয়ার বিষ‌য়ে ব‌লি‌নি। শুধু ব‌লে‌ছি সি‌ন্থিয়া, নিহাদ‌কে কিছু বিষয় নি‌য়ে ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছে তা সি‌ন্থিয়ার ল্যাপটপ বা ফো‌নে আছে। ল্যাপ‌ফো‌নের কাজ শেষ হব‌ার পর আমার কেন জা‌নি ম‌নে হলো যে মেয়ে এতটা কর‌তে পা‌রে সে কি এগু‌লে‌ার আরও ক‌পি কর‌তে পা‌রে না? তারপর হেনার কাছ থে‌কে জানলাম সি‌ন্থিয়ার তিনটা পেন‌ড্রাইভ আছে। তারপর ওকে রি‌কো‌য়েস্ট করলাম সেগু‌লো‌ এনে দি‌তে। হেনা রা‌জি হ‌য়ে গেল।’

তূবা স‌ন্দেহভাজন ক‌ণ্ঠে বলল, ‘শুধুমাত্র পঁচিশ হাজার টাকার বদ‌লে হেনা এত হেল্প করল?’
‘আমারও সেটা ম‌নে হ‌য়ে‌ছিল। প‌রে হেনা‌কে জি‌জ্ঞেস করলে হেনা বলল, ও সি‌ন্থিয়া‌কে একরকম ঘৃণা ক‌রে।’
‘‌কেন?’
‘‌সি‌ন্থিয়ার কার‌ণে হেনার একমাত্র ভাই নেশায় আসক্ত।’
‘কী বল‌ছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘‌কীভা‌বে?’

‘‌সি‌ন্থিয়া আমা‌দের ভা‌র্সি‌টি‌তে আসার পর থে‌কে‌ হেনার সা‌থে ভা‌লো সম্পর্ক হয়। তারপর থে‌কে হেনার বাসায় যাওয়া আসা করত। তখন হেনার ভাই হাসা‌নের সা‌থে সম্পর্ক তৈরী হয়। কিন্তু দুই মাস যে‌তে না যে‌তেই ব্রেকাপ হয়। কারণ হেনারা তো ধনী না, নিম্ন মধ্য‌বিত্ত। তো সি‌ন্থিয়ার ডিমান্ড পূরণ করা হাসা‌নের প‌ক্ষে সম্ভব হয়‌নি। ব্রেকা‌পে হেনার কিছু আসে যায়‌নি, কিন্তু হাসান ব্রেকাপটা নি‌তে পা‌রে‌নি। নেশার জগ‌তে জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে।

তখন থে‌কেই হেনা সু‌যোগ খুঁজ‌ছিল সি‌ন্থিয়া‌কে শা‌য়েস্তা করার।যখন নিহা‌দের বিষ‌য়ে ওর কা‌ছে বলল, তখন ও সোজা আমার কা‌ছে আসল। হেল্প কর‌তে রা‌জি হ‌লো। তারপর নি‌জের লজ্জা ভে‌ঙে বলল, ওর ছো‌টো বোন ক‌ম্পিউটার নি‌য়ে ডি‌প্লোমা কর‌তে চায় কিন্তু ক‌ম্পিউটার কেনার ম‌তো টাকা ওর বাবার কা‌ছে নেই। আমি যেন কিছুটা হেল্প ক‌রি। আমি পঁ‌চিশ হাজার দি‌য়ে‌ছি। ব‌লে‌ছি আরও লাগ‌লে আরও দিব।’

তূবা বিস্ম‌য়ে বলল,
‘‌সি‌ন্থিয়া শালী দেখ‌ছি সব জায়গায় গোল ক‌রে‌ছে। মা‌নে এটা মে‌য়ে না‌কি পাব‌লিক টয়‌লেট‌ের টিস্যু। যে আস‌ছে ব্যবহার ক‌রে যা‌চ্ছে।’
‘‌তেমনই।’
‘এখন ওকে কীভা‌বে সামলা‌বি?’
‘আমার সামলা‌নোর দিন শেষ। ও‌কে তো জবা চৌধু‌রি সামলা‌বেন। জবা চৌধু‌রি‌কে যতটুকু চি‌নে‌ছি প্রচন্ড চালাক, স্মার্ট, বুদ্ধিমতী। ওর ম‌তো দশটা সি‌ন্থিয়া‌কে না‌কে দ‌ড়ি দি‌য়ে ঘুরা‌নোর ম‌তো বু‌দ্ধি রা‌খেন। কিন্তু ম‌হিলা স্বামী‌কে বিশ্বাস ক‌রে ঠ‌কে গে‌ছেন।’

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে তূবা বলল, ‘এটা তো ব‌াঙালী মে‌য়ে‌দের মুদ্রাদোষ। স্বামী‌কে বিশ্বাস ক‌রে, অনেক মে‌য়ে ঠ‌কে যায়। সি‌ন্থিয়া তো‌কে কল কর‌লে কী বল‌বি?’
‘বল‌বো কিছু একটা। প্র‌শ্নের উপর ভি‌ত্তি ক‌রে।’
‘কথা তুই জাস্ট টু গুড। মা‌নে, আমি যে কথা‌কে জ‌ন্মের পর থে‌কে চিনে‌ছি জে‌নে‌ছি আর আজ যে কথা‌কে জানলাম দুজন পু‌রোপু‌রি ভিন্ন। মা‌নে কী বল‌বো ভেবে পা‌চ্ছি না। জাস্ট আগুন তুই। পু‌রো আগুন। এটা স‌ত্যি প্রমাণিত স্বামীর উপর বিপদ আস‌লে মে‌য়েরা অসাধ্য সাধন কর‌তে পা‌রে।’

কথা হাসল। তূবা বলল, ‘‌নিহাদ স্যার এসব জা‌নেন?’
‘না।’
‘তাহ‌লে তো‌কে হেল্প কে করল?’
‘বল‌লে চমকাবি না তো?’
‘তখন ‌থে‌কে যে একটার পর একটা চমক দি‌চ্ছিস হজম হ‌বে তো? থাক আজ আর ব‌লিস না। যা চমক দি‌য়ে‌ছিস তা পাঠকরা হজম ক‌রে নিক। বা‌কিটা প‌ড়ে ব‌লিস। তা নিহাদ স্যার‌কে এসব ক‌বে বল‌বি?’
‘ক‌ালকে সব বলব।’
‘কালকে ভাইয়া এক নতুন কথা‌কে দেখ‌বে।’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে কথা বলল, ‘হ্যাঁ। হয়‌তো।’

(টাইম প্লিজ: বির‌তি: সা‌ড়ে আটট‌ায় নতুন বই‌য়ের প্রচ্ছদ প্রকাশ করব।)

২৮!!
সকাল নয়টা,
তূবা‌ আসল কথার কা‌ছে। কথার রু‌মে গি‌য়ে জি‌জ্ঞেস করল, ‘কি‌রে ভা‌র্সিটি‌তে যা‌বি?’
‘হুঁ বস। আমি একটু তৈ‌রি হ‌য়ে নি।’
‘আচ্ছা তুই তৈ‌রি হ। আমি চা‌চির সা‌থে দেখা ক‌রে আসি।’
কথা হে‌সে বলল, ‘সোজা বাংলায় বল তুই শ্রাব‌ণের কা‌ছে যা‌চ্ছিস। ভা‌লো ক‌রে জা‌নিস মা এ সময় খুব ব্যস্ত থা‌কে। কারণ এ সময় সে বাচ্চা‌দের প্রাই‌ভেট পড়ান।’
তূবা খা‌নিকটা ধরা পড়া ক‌ণ্ঠে বলল,
‘‌মো‌টেও না। আমি চা‌চির সা‌থেই দেখা করব।’

তূবা সত্যি স‌ত্যি শ্রাবণী যে রুমে বাচ্চা‌দের পড়ায় সে রু‌মে গি‌য়ে বলল,
‘চা‌চি, আসব?’
‘আয়।’
তূবা রু‌মে ঢোকার পর শ্রাবণী বলল,
‘কী খবর বল?’
‘চাচি সে‌দিন যেমন সুন্দর ক‌রে নকশী খোঁপা ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লে কাল তেমন দি‌বে?’
‘‌কেন?’
‘কাল একজনার বউ-ভা‌তের অনুষ্ঠা‌নে যাব।’
‘আচ্ছা আসিস।’

‘চা‌চি তু‌মি এত নিখুঁত কীভা‌বে? আমি কিন্তু খুব জেলাস।’
শ্রাবণী হে‌সে বলল,
‘‌কেন?’
‘‌যে রা‌ধে সে চুলও বাঁ‌ধে কথাটা তোমার ম‌তো সুপার ওমেন‌দের জন্যই বানা‌নো হ‌য়ে‌ছে।’
‘‌কেন?’

‘এই যে তু‌মি, এত বড় সংসার সামলাও, তারপর এত এত বাচ্চা‌দের প্রাই‌ভেট পড়াও। কত সুন্দর ক‌রে নকশী কাঁথা ক‌রো, কত সুন্দর ক‌রে, কত ডিজাই‌নে চুল বাঁধো।’
শ্রাবণী হে‌সে বলল,
‘এক‌দিন তুইও পার‌বি।’
‘‌তোমার ম‌নে হয় আমার ম‌তো অর্কমণ্য এত সব সামলা‌তে পার‌বে?’
‘‌কেন পার‌বি না।’

‘‌শোন একটা বয়সে আমারও এমন ম‌নে হ‌তো। তারপর সব শি‌খে গে‌ছি। বাস্তবতা সংসার মে‌য়ে‌দের সব শি‌খি‌য়ে দেয়। তোর বয়‌সে আমার কো‌লে তখন বর্ষণ। বর্ষণ‌কে নি‌য়েই গ্রাজু‌য়েট হলাম। তারপর মাস্টার্সও করলাম। তারপর চাক‌রিও নিলাম। তারপর কথা হ‌লো তখনও চাক‌রি সংসার দুই বাচ্চা একসা‌থে সাম‌লে‌ছি। কিন্তু শ্রাবণ হবার পর পা‌রি‌নি। তখন শরীর একটু বে‌শিই খারাপ থাকত। জব ছে‌ড়ে দিলাম কিন্তু কখনও কারও উপর নির্ভরশীল হয়‌নি।

সংসার, বাচ্চা সমালে যে সময় পেত‌াম তখন বাচ্চাদের পড়া‌নো শুরু ক‌রি। তোর চাচা আমা‌কে যে হাত খরচ দেন তা কিন্তু ব্যাং‌কে প‌ড়ে থা‌কে। প‌রে বিপ‌দে কা‌জে লাগ‌বে এ আশায়। আমার খরচ আমি নি‌জে বহন ক‌রি। য‌দিও তোর চাচা চমৎকার মানুষ। তবুও আমি ম‌নে ক‌রি প্র‌তিটা মে‌য়ের আত্ম‌নির্ভরশীল হওয়া দরকার। বাই‌রে কাজ কর‌তে না পা‌রো ওকে কিন্তু ঘ‌রে ব‌সে কিছু ক‌রো, তা-ও নি‌জের ব্য‌ক্তিত্ব বজায় রাখো।’

তূবা, শ্রাবণীকে জড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, ‘চা‌চি তু‌মি আমার অাদর্শ। সুপার ওমেন।’
‌কোথা থে‌কে শ্রাবণ এসে তূবা‌কে সহ শ্রাবণী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আমার মা পৃ‌থিবীর বেস্ট।’
তূবা নি‌জে‌কে ছ‌‌াড়াতে চাই‌লে শ্রাবণ আরও শক্ত ক‌রে ধরল।

সা‌ড়ে আটট‌ায় নতুন বই‌য়ের প্রচ্ছদ প্রকাশ করব। প্লিজ পা‌শে থাক‌বেন। গল্প লিখে আমি যেমন আপনা‌দের মন ভা‌লো করার চেষ্টা ক‌রি। তেম‌নি আমার বই নি‌য়ে প্রচা‌র কর‌তে সহায়তা ক‌রে প্লিজ আমা‌কে একটু হেল্প করুন। প্রায় দুই বছর পর নতুন বই আন‌ছি। ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভ‌য়ে আছি। ঠিক যেমন প্রথম বই প্রকা‌শের সময় ভ‌য়ে ছিল‌াম, তেমন। আপনা‌দের সহায়তা আমার ভয় কিছুটা হ‌লেও কমা‌বে। আশাক‌রি গল্প প‌ড়ে রিয়াক্ট ক‌মেন্ট ক‌রে যেমন আপনা‌দের উপ‌স্থি‌তি জানান দেন, তেম‌নি বই প্রচার ক‌রেও বুঝা‌বেন আপনারা আমার পা‌শে আছেন। ধন্যবাদ। দোয়া করবেন। সা‌ড়ে আটটায় আমার পেইজ, গ্রুপ, আইডি যে কো‌নো একটায় উপ‌স্থিত থাক‌বেন।

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২৬

তূবা নি‌জে‌কে ছ‌‌াড়াতে চাই‌লে শ্রাবণ আরও শক্ত ক‌রে তূবা‌কে আর ওর মা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। তূবা কো‌নো রকম নি‌জে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে বলল, ‘চা‌চি যাই। ভা‌র্সি‌টি‌তে দেরী হ‌য়ে যা‌বে।’
‘আচ্ছা যা।’

শ্রাবণ বলল, ‘আ‌মিও ভা‌র্সি‌টি‌তে যাব। দু‌’দিন যাবত ঘ‌রে আছি একটুও ভা‌লো লাগ‌ছে না।’
শ্রাবণী ধমক দি‌য়ে বলল, ‘পা‌য়ের সেলাই না কাটা পর্যন্ত ঘর থে‌কে বের হওয়া বন্ধ তোর। যা রু‌মে গি‌য়ে রেস্ট নে। পা কাটার সময় ম‌নে ছিল না যে, ঘ‌রে ব‌সে থাক‌তে হ‌বে।’

শ্রাবণ মুখ কা‌লো ক‌রে নি‌জের রু‌মের দি‌কে পা বাড়াল। তূবা মুচ‌কি হে‌সে ওর পিছু পিছু কথার রু‌মের দি‌কে যা‌চ্ছিল। শ্রাবণ দাঁ‌ড়িয়ে বলল, ‘ম্যাডাম দয়া ক‌রে আমার রুমে একটু আসুন।’
‘পারব না।’
‘না পার‌লে আমি এখা‌নে ব‌সে তোমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরব।’
‘‌দে‌খি তোর কত সাহস।’

শ্রাবণ ধর‌তে গে‌লেই তূবা দৌ‌ড়ে দূ‌রে গি‌য়ে জিব কে‌টে বলল, ‘খোড়া, লুলা মানুষ আমার সা‌থে পার‌বি না।’
শ্রাবণ অসহায় চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল, ‘ক‌দিন সময় দাও। সুস্থ হ‌য়ে নি। তারপর মজা বুঝাব।’
তূবা হেসে বলল, ‘‌দেখা যাবে।’

তূবা কথার রুমে গি‌য়ে বসল। কথা তখন অন্য রুমে কিছু কা‌জে গে‌ছে। তূবা ব‌সে ব‌সে ফো‌নে কি যেন দেখ‌ছে। তখন শ্রাবণ এসে দরজা বন্ধ ক‌রে দি‌লো। তূবা চোখ বড় বড় করে বলল, ‘দরজা বন্ধ কর‌ছিস কেন?’
‘আমার উত্তর চাই।’
‘কীসের?’
‘‌যেটা তোমার চোখ ব‌লে। সেটা মু‌খে বলো প্লিজ।’
‘আমার চোখ কিছু ব‌লে না। মুখে তো বলার প্রশ্নই উঠে না।’

শ্রাবণ, তূবার একদম কা‌ছে গি‌য়ে বলল, ‘চোখ কিছুই ব‌লে না?’
তূবার চো‌খে স্পষ্ট ভয় দেখা যা‌চ্ছে। তূবা স‌রে যে‌তে নি‌লে শ্রাবণ, ওর হাত ধ‌রে বলল, ‘‌প্লিজ ব‌লো।’
‘বলার ম‌তো কিছু নেই।’
ধী‌রে ধী‌রে শ্রাবণ, তূবা‌র ছোট্ট শরীরটা‌কে নি‌জের আয়‌ত্বে নি‌য়ে আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, ‘‌প্লিজ ব‌লো।’

তূবার এবার রাগ উঠে গেল। এম‌নি এ ছে‌লে‌কে নিয়ে ও সবসময় ভ‌য়ে থা‌কে। তারউপর ইদা‌নিং ছে‌লেটা বারবার লি‌মিট ক্রস ক‌রে যা‌চ্ছে। তূবার খুব রাগ হ‌লো। নি‌জে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে ঠাস ক‌রে শ্রাব‌ণের গা‌লে চড় ব‌সি‌য়ে বলল, ‘তুই বড়ো ব‌াড় বে‌ড়েছিস। বারবার এত ক‌রে বুঝা‌চ্ছি কথা কা‌নে যাচ্ছে না? ‌তো‌কে আমি কেন ভা‌লোবাস‌বো? কী যোগ্যতা আছে তোর? একে তো বয়‌সে আমার চে‌য়ে এত ছো‌টো। তারউপর বেয়াদ‌বের মতো আচরন তোর? বারবার আমার শরীর কেন স্পর্শ কর‌তে চাস তুই? ও বুঝ‌তে পার‌ছি, আমি সুন্দর ব‌লে আমার শরীরটার দি‌কে খুব লোভ না তোর? আচ্ছা আয় কা‌ছে আয়। আমার সা‌থে যা খু‌শি কর। আমি বাঁধা দিব না। তা-ও আমা‌কে মেন্টাল টর্চার করা বন্ধ কর।’

তূবার চ‌ড়ে শ্রাবণ যতটা না আঘাত পে‌য়ে‌ছে তার চে‌য়ে বে‌শি আঘাত পে‌য়ে‌ছে ওর কথাগুলো‌তে। তূবা, শ্রাবণ‌কে চ‌রিত্রহীন ভে‌বে‌ছে। যা শ্রাবণ নি‌তে পারল না। শ্রাব‌ণের কৃষ্ণকালো অক্ষিযুগল থে‌কে ক‌য়েক‌ফোটা অশ্রু গ‌ড়ি‌য়ে পড়ল। তা‌রপর বলল, ‘তু‌মি, আমা‌কে চ‌রিত্রহীন ভাব‌লে তূবা?’

তূবা কিছু বলল না। দরজা খু‌লে বের হ‌য়ে দেখল কথা দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছে। কথা‌কে দে‌খে বলল, ‘কথা, আমি আজ ভা‌র্সি‌টি‌তে যাব না। তুই যা।’

তারপর চোখ মুছতে মু্ছ‌তে তূবা চ‌লে গেল। কথা রুমে গি‌য়ে দেখল, শ্রাবণ মু‌র্তির ন্যায় স্তব্ধ হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছে। কথা, শ্রাব‌ণের কাঁ‌ধে হাত দি‌য়ে বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে ভাই? তূবা ওমন কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে কেন চ‌লে গেল?’

শ্রাবণ, কথা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বাচ্চা‌দের ম‌তো কেঁ‌দে ফেলল। কথা ওর পিঠে হাত বু‌লি‌য়ে বলল, ‘কী হ‌য়েছে ভাই?’
‘আপু, তোর কি আমা‌কে চ‌রিত্রহীন ম‌নে হয়?’
কথা, শ্রাবণ‌কে ‌বিছ‌ানায় ব‌সি‌য়ে মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল, ‘‌ছি! ছি! এমন কথা কে ব‌লে? আমার ভাই একটা খা‌টি হীরা।’
‘তাহ‌লে তোর বান্ধবী আমা‌কে চ‌রিত্রহীন বলল কেন?’
‘কী? তূবা ব‌লে‌ছে?’
‘সরাস‌রি ব‌লে‌নি, কা‌জে বু‌ঝি‌য়ে‌ছে।’

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে কথা বলল, ‘‌তে‌া‌কে পূ‌র্বেও ব‌লে‌ছি সি‌নিয়া‌রের সা‌থে রি‌লেশন কর‌তে যাওয়া মা‌নে কাটা বিছা‌নো প‌থে হাঁট‌তে যাওয়া। য‌দি কাঁটার আঘাত সহ্য করতে পা‌রো ত‌বে এ প‌থে পা বাড়াও, নয়তো আগে থাক‌তে স‌রে দাঁড়া।’
‘তো পা তো বা‌ড়ি‌য়ে‌ছি। দে‌খিস না পা‌য়ে চার চারটা সেলাই লাগ‌ছে।’

কথা হে‌সে বলল, ‘গা‌লে চড় মার‌ছে?’
‘গা‌য়ের জো‌রে মার‌ছে। ব্যথা কর‌ছে। আমি নি‌শ্চিত লাল হ‌য়ে গে‌ছে।’
কথা হাসতে হাস‌তে শ্রাব‌ণের গা‌লে হাত বু‌লি‌য়ে বলল, ‘আহারে! আমার ভাই‌য়ের ফর্সা গালটা কেমন লাল ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। আচ্ছা ওকে আমি দেখ‌ছি। এখন তুই বল তুই কী ক‌রে‌ছিস যে চড় মারছে?’

শ্রাবণ এবার লজ্জা পেল। লজ্জা পে‌য়ে বলল, ‘‌কিছু না। আমি রুমে গেলাম।’
কথা শ্রাব‌ণের কান ধ‌রে বলল,
‘নিশ্চিত মাইর খাবার ম‌তো কাজ তুই কর‌ছি‌লি, নয়তো তূবা শুধু শুধ‌ু গা‌য়ে হাত তোলার মে‌য়ে না। শ্রাবণ হালকা তুত‌লে বলল,
‘আ‌মি কিছ‌ু করি‌নি।’

কথা হে‌সে বলল,
‘‌তূবা তো‌কে মারার পর যে কথা বলছে তা কি তুত‌লে বল‌ছে?’
‘না।’
‘তাহ‌লে ও রাগ ক‌রে‌নি। তো‌কে দেখা‌নো রাগ ক‌রেছে, সত্যি রাগ ক‌রে‌নি। জা‌নিসই তো ও যখন স‌ত্যি রাগ ক‌রে কথা বলে তখন হালকা তুত‌লি‌য়ে কথা ব‌লে।’
‘কিন্তু ও ইনডায়‌রেকট‌লী আমা‌কে ক্যা‌রেক্টালেস ব‌লে‌ছে।’

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে কথা বলল, ‘তূবার সম্প‌র্কে সব জানার পরও য‌দি তুই তূবা‌কে ঠিকভা‌বে চিন‌তে না পা‌রিস, বুঝ‌তে না পা‌রিস ত‌বে ব্যর্থতা তোর!’
শ্রাবণ মন খারাপ ক‌রে নি‌জের রু‌মে এসে শু‌য়ে পড়ল।’

তূবাকে বা‌ড়ি আস‌তে দে‌খে তা‌মিমা বলল, ‘‌কি রে ভা‌র্সি‌টি‌তে যাস‌নি?’
তূবা মিথ্যা বলল, ‘ক্লাস ক্যা‌ন্সেল হ‌য়ে গে‌ছে।’

‌নি‌জের রুমে গি‌য়ে দরজা বন্ধ ক‌রে তূবা কান্নায় ভে‌ঙে পড়ল। কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘আ‌মি তো‌কে চ‌রিত্রহীন ভা‌বি‌নি‌রে শ্রাবণ। তো‌কে আটকা‌নো জরু‌রি হ‌য়ে গে‌ছে। প‌রিবার, সমাজ, বয়সের পার্থক্য সব বাদ দি‌লেও আমার ত্রু‌টিটা যে বাদ দি‌তে পারব না রে। আমার সা‌থে তোর কো‌নো ভ‌বিষ্যৎ নেই শ্রাবণ। আজ‌কের পরও য‌দি তুই আমা‌র কা‌ছে আবার আসিস ত‌বে তো‌কে স‌ত্যিটা জা‌নি‌য়ে দিব। তারপর যা হবার হ‌বে। হয় এসপার নাহয় ওসপার।’

কথা বের হবার সময় ওর মা‌কে বলল,
‘মা, আমি কিন্তু ভা‌র্সি‌টি থে‌কে সোজা বাসায় যাব।’
‘আর ক‌দিন এখা‌নে থা‌কতি!’
‘না মা। বাসায় কাজ আছে। প‌রে আবার আসব।’
‘আচ্ছা। সাবধা‌নে যাস।’

কথা শ্রাব‌ণের রুমে গি‌য়ে বলল,
‘‌নি‌জের খেয়াল রা‌খিস। মন খারাপ ক‌রিস না। ওকে স‌রি লি‌খে মে‌সেজ কর। তূবাকে যতদূর জে‌নে‌ছিস, সেই হিসা‌বেই ভা‌লোবাসার চেষ্টা কর। ও তো‌কে বল‌ছে না ঠিকই কিন্তু ও-ও তো‌কে প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সে। তুই শুধু ওকে একটু সাম‌লে নে দেখ‌বি ও তোর পু‌রো জীবনটা‌কেই পা‌ল্টে দি‌বে।’
‘ধন্যবাদ আপু।’
কথা, শ্রাব‌ণে‌র মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে চ‌লে গেল।

কথা যে‌তেই শ্রাবণ, তূবা‌কে লম্বা একটা মে‌সেজ করল,
“প্রথ‌মেই অনেককককক গু‌লো স‌রি। আমি তোমার চ‌ড়ে বা কথায় কষ্ট পে‌লেও এখন সেটা ভু‌লে গে‌ছি। কারণ ভে‌বে দেখলাম ভুলটা আমার। দোষ ক‌রে‌ছি তু‌মি শা‌স্তি দি‌য়ে‌ছো। আমি শা‌স্তি মাথা পে‌তে নিলাম। এখন ক্ষমা চাই‌ছি তুমি লক্ষী মে‌য়ের ম‌তো ক্ষমা ক‌রে দাও। আমিই বাড়াবা‌ড়ি ক‌রে‌ছি। এত দ্রুত আমার এতটা বাড়াবা‌ড়ি করা উচিত হয়‌নি। এরপর থে‌কে তোমার থে‌কে দূ‌রে থে‌কেই ভা‌লোবাস‌বো।

আস‌লে কাল‌কের দুপু‌রে এবং সন্ধ্যার ঘটনার পর ভে‌বে‌ছিলাম তু‌মি পু‌রোপু‌রি আমার। তোমার উপর আমার সবরকম অধিকার আছে, কিন্তু আমি ভু‌লে গে‌ছিলাম অধিকার খাটা‌নোরও স‌ঠিক সময় আছে। ছাগ‌লের ম‌তো কাজ ক‌রেছি। তু‌মি চড় তো মে‌রেছো-ই এবার তু‌মি আমার কানদু‌টো টে‌নেও ছাগ‌লের ম‌তো লম্বা ক‌রে দি‌তে পা‌রো। তা‌তে আমার কো‌নো আফসোস নেই। ত‌বে নি‌জের হবু স্বামীর কান ছাগ‌লের ম‌তো হ‌লে তোমারই কষ্ট লাগ‌বে।

ত‌বে হ্যাঁ আমি একটা জি‌নি‌সে কষ্ট পে‌য়ে‌ছি, তু‌মি আমা‌কে চ‌রিত্রহীন ভে‌বে‌ছ। শোনো তূবা, তোমা‌কে আমি কতটা সম্মান ক‌রি সে বিষ‌য়ে তোমার ধারণা নেই। আমি সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি আর সম্মান ক‌রি আমার মা, কথা আর তোমা‌কে। হয়‌তো রা‌গের মাথায় তু‌মি আমা‌কে যা তা ব‌লে ফে‌লেছ কিন্তু আমি সেগু‌লো মনে রা‌খি‌নি। তোমা‌কে ভা‌লোবাসার যোগ্যতা হয়‌তো এখন নেই আমার। ত‌বে খুব শীঘ্রই আমি নি‌জে‌কে তোমার যোগ্য প্রমাণ ক‌রে দেখাব। তখন সব‌চে‌য়ে বেশি খু‌শি তু‌মি হ‌বে। তত‌দিন প্লিজ তু‌মি একটু অপেক্ষা ক‌রো আমার জন্য। আজ‌কের গাধা‌মির জন্য আবারও স‌রি।”

শ্রাব‌ণের মে‌সেজ প‌ড়ে তূবা আবারও কান্নায় ভে‌ঙে প‌ড়ে বলল, ‘এই পাগলকে নি‌য়ে আমি কী করব? আম‌ার এত খারাপ ব্যবহা‌রের পরও আমা‌কে কিছু বলল না? উলটা নি‌জে‌কে নি‌জে দোষী করল। এতটা ভা‌লোবা‌সে ও আমা‌কে? দোষ তোর না‌রে পাগল সু‌যোগ তো আমিই তো‌কে দি‌য়ে‌ছিলাম। আমিই চাইতাম তুই আমার কা‌ছে আয়, আমা‌কে স্পর্শ কর, খুব ভা‌লোবাস, কিন্তু তারপর তো‌দের দেয়ালে টানা‌নো ছো‌টো বাচ্চার ছ‌বি দে‌খে আমি কি সেটা ম‌নে পড়ল। শ্রাবণ পু‌রো সমা‌জের সা‌থে যুদ্ধ ক‌রে হয়তো তুই আমা‌কে পা‌বি কিন্তু যখন জান‌বি আমার মা হবার চান্স নেই বল‌লেই চ‌লে তখন কী মান‌তে পার‌বি আমায়? পার‌বি তখন এমন পাগ‌লের ম‌তো ভা‌লোবাস‌তে?’

তূবা বা‌লি‌শে মুখ গু‌জে অঝো‌রে কাঁদ‌তে লাগল। শ্রাবণ আবার মে‌সেজ করল,
“স‌রি ব‌লে‌ছি। মে‌সেজ সিন ক‌রে রে‌খে দি‌লে কেন? দে‌খো এমন কর‌লে কিন্তু তোমার বাসায় চ‌লে আসব।”
তূবা হিচ‌কি দি‌তে দি‌তে মে‌সেজ করল,
“আ‌মি কা‌জে ব্যস্ত। আমা‌কে আর মে‌সেজ কর‌বি না।”
“‌মিথ্যা কেন বল‌ছো? আমি জা‌নি তু‌মি কাঁদ‌ছো। আমা‌কে মে‌রে, বা‌জে কথা বলায় আমার চে‌য়ে বে‌শি তু‌মি কষ্ট পে‌য়ে‌ছো। তু‌মি কাঁদ‌ছো তাই।”
“আই হেট ইউ।”
“আই নো। আই লাভ ইউ টু।”

‌বির‌তি,
শীঘ্রই কিন্তু আমার নতুন বই “‌রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া” উপন্যা‌সের প্রি অর্ড‌ার আস‌ছে।

২৯!!
রাত স‌া‌ড়ে এগা‌রোটা,
কথা, নিহাদ‌কে বলল,
‘‌সি‌ন্থিয়া নামক কাঁটা‌কে অামি তোমার জীবন থে‌কে উপ‌রে ফে‌লেছি।’
‌নিহাদ বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
‘মা‌নে?’

কথা নিহাদ‌কে শুরু থে‌কে শেষ পর্যন্ত সব কিছু খু‌লে বলল। সব কিছু শোনার পর নিহাদ বিস্ম‌য়ে কথার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। এ কোন কথা‌কে দেখ‌ছে ও? এ কি সেই সহজ সরল কথা যা‌কে নিহাদ ভা‌লো‌বে‌সে বি‌য়ে ক‌রে এনে‌ছিল? এ কি সেই কথা যে কথায় কথায় ইমোশনাল হ‌য়ে কাঁদ‌তো? যে মুখ ফু‌লি‌য়ে অভিমান করত! বাচ্চা‌দের ম‌তো বায়না করতো! বায়না পূরণ না হ‌লে ঠোঁট বাঁ‌কি‌য়ে কাঁদত! যে সবসময় নিহা‌দের আঙুল ধ‌রে চলত। নিহা‌দের হাতটা একটু ছু‌টে গে‌লে যে ভ‌য়ে অস্থির হ‌য়ে যেত! কষ্ট পে‌লে যে নি‌জে‌কে গু‌টি‌য়ে নিত! যে কেঁ‌দে কেঁ‌দে নিহা‌দের বুক ভাসাত।

সেই মে‌য়েটা আজ কতটা ক‌ঠিন, কতটা সাহসী, কতটা বু‌দ্ধিমতী, আত্ম‌নির্ভশীল, আত্মপ্রত্যয়ী। ‌নিহাদ যেন নত‌ুন এক কথা‌কে দেখ‌ছে। ফি‌নিক্স পা‌খি যেমন নি‌জে‌কে পু‌ড়ি‌য়ে নতুন ক‌রে জন্ম লাভ ক‌রে। তেমন নিহা‌দের থে‌কে কষ্ট পে‌য়ে, ক‌ষ্টের আগু‌নে জ্ব‌লে কথার যেন নতুন জন্ম হ‌য়ে‌ছে। এ কথা নিহা‌দের বড্ড অচেনা!

কথা বলল, ‘কী ভাব‌ছো আমি এতসব একা কী ক‌রে করলাম?’
‘হুঁ।’
‘একজন সহায়তা করে‌ছে?’
‘‌কে?’
‘তার নাম বলব না তোমা‌কে। কখনও বল‌বো না। সে-ও তোমা‌কে কখনও বুঝ‌তে দি‌বে না।’

‌নিহাদ অবাক হ‌য়ে কথার পা‌নেই চে‌য়ে রইল। কথা বলল, ‘সিন্থিয়ার শা‌স্তি তো সি‌ন্থিয়া পে‌য়ে গে‌ছে। এবার তোমার শা‌স্তির পালা। তু‌মি ব‌লে‌ছি‌লে তোমা‌কে যা শাস্তি দিব মাথা পে‌তে গ্রহণ করব। এখন তোমা‌কে সে শা‌স্তি মাথা পে‌তে গ্রহণ কর‌তে হ‌বে।’

কথার এ রূপ দে‌খে নিহাদ এম‌নি ভয়ার্ত ছিল। শা‌স্তির কথা শু‌নে ভিত‌রে ভিত‌রে চুপ‌সে গে‌লেও বলল, ‘আমি তৈরি। কী শা‌স্তি?’
কথা, নিহা‌দের হাতটা ওর পে‌টে রে‌খে বলল,
‘‌নিহাদ এখা‌নে ছোট্ট একটা প্রাণ আছে। যে তোমার আমার অংশ।’
‌নিহাদ বিস্ম‌য়ে কথার চোখের দি‌কে চে‌য়ে রইল। কথা বলল,
‘হ্যাঁ আমি প্রেগ‌নেন্ট। তু‌মি বাবা হ‌তে, কিন্তু এখন হতে পার‌বে না।’

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।
এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ, পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে…