অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-২১+২২+২৩

0
184

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২১

নিহা‌দের বাবা, নয়ন সা‌হেব বলল, ‘‌কেন চাক‌রি ছাড়‌বি কেন?’
‘ভা‌লো লাগ‌ছে না, এই নিয়ম ক‌রে জব করা। সব‌কিছু কেমন রু‌টি‌নের ম‌ধ্যে।’
‘‌সে কি রে তোর কত শ‌খের চাক‌রি। তোর তো ছো‌টো‌বেলা থে‌কে স্বপ্ন ছিল, বড় হ‌য়ে ভা‌র্সি‌টির শিক্ষক হ‌বি। এত কষ্ট ক‌রে জব পে‌য়ে তা ছে‌ড়ে দি‌বি?’
‘শখ ছিল, পূরণ হ‌য়ে গে‌ছে এখন ভা‌লো লাগ‌ছে না।’
‘তাহ‌লে কী ক‌রবি?’
‘‌তোমার ব্যবসায় বসব। তাছাড়া এই নিয়ম ক‌রে জব, কো‌চিং এসব কার‌ণে ঘ‌রে তেমন সময় দি‌তে পা‌রি না। তার‌চে‌য়ে তোর ব্যবসার হাল ধ‌রি, ইনকামও বে‌শি, প‌রিবা‌রেও সময় দি‌তে পারব।’

নয়ন সা‌হেব ভ্রু কুচ‌কে বল‌লেন, ‘তুই ক‌বে বে‌শি ইনকা‌মের কথা ভাবা শুরু কর‌লি? তোর তো তা ভাব‌তে হ‌বে না। আমার বাবা আর আমি মি‌লে যা কামাই ক‌রে রে‌খে‌ছি তা দি‌য়ে তিন প্রজন্ম আয়েশ ক‌রে চ‌লে যাবে। তুই নি‌জের স্বপ্ন পূরণ কর। শিক্ষকতা কত সম্মানের পেশা। দূর থে‌কে মানুষ যখন আমা‌কে দে‌খে তখন এটা ব‌লে না ঐ দেখ ব্যবসায়ী নয়ন যা‌চ্ছে, ব‌লে ঐ দেখ নিহাদ স্যা‌রের বাবা যা‌চ্ছে। তখন গ‌র্বে বুকটা ভ‌রে ওঠে। কত সম্মা‌নের পেশার সা‌থে জ‌ড়িত তুই।’

‌নিহাদ মুখ ফু‌টে বল‌তে পারল না কিন্তু ম‌নে ম‌নে বলল,
‘বাবা, আমি সে সম্মা‌নের পেশাটা‌কে চরমভা‌বে অপমান ক‌রে‌ছি। এ পেশায় থাকার যোগ্যতা হা‌রি‌য়ে‌ছি। আমি থাকব না এ পেশায়। তাছাড়া এখন আমার কা‌ছে কথার চে‌য়ে বে‌শি জরুরি কিছু ম‌নে হ‌চ্ছে না।’
‌নিহাদ ওর বাবা‌কে বলল, ‘বাবা, স্বপ্ন ছিল পূরন ক‌রে‌ছি, এখন মনটা নতুন ‌কিছু কর‌তে মন চা‌চ্ছে। তাছাড়া কেন জানি এখন বাচ্চা‌দের পড়া‌তেও ভা‌লো লাগ‌ছে না।’

নয়ন সা‌হেব বুঝ‌লেন সমস্যা অন্য কিছু। ত‌বে তি‌নি এবং মো‌মেনা সবসময় নিহাদ‌কে স‌াপোর্ট ক‌রে এসেছে। তি‌নি বলল,
‘‌দেখ নিহ‌াদ, তোর সবকা‌জে আমরা সবসময় তোর সা‌থে ছিল‌াম, ভ‌বিষ্য‌তেও থাকব। তুই যা-ই ক‌রিস ভে‌বে ক‌রিস। আমরা তো‌কে ভরসা ক‌রি। তোর য‌দি ম‌নে হয় ব্যবসায় বস‌বি তাহ‌লে ওয়েলকাম। তাছাড়া সব‌কিছু তো তোর না‌মেই করা। তারপরও বলব আর একবার ভে‌বে দেখ। য‌দি বে‌শি টাকা ইনকা‌মের জন্য ব্যবসায় বস‌তে চাস, ত‌বে বলব টাকার অভাব এ জীবনে তোর হ‌বে না। তোর বাবা তা হ‌তে দি‌বে না। আমি মৃত্যু পূ‌র্বে সে ব্যবস্থা ক‌রে যাব। তোর এবং তোর পরবর্তী প্রজ‌ন্মের টাকার অভাব তোর বাবা হ‌তে দি‌বে না। তুই শুধু নি‌জের শখ আল্হাদ নি‌য়ে ভাব।’
‘আচ্ছা বাবা।’

‌নিহাদ আবার রুমে চ‌লে গেল। কথা শু‌য়ে আছে। নিহাদ‌কে দে‌খে বলল, ‘ক‌লেজ যাবার সময় আমা‌কে বাসায় না‌মি‌য়ে দিও।’
‘এখন যা‌বে?’
‘হুম।’
‘জরু‌রি কিছু?’
‘শ্রাব‌ণের না‌কি কাঁচভাঙায় পা কে‌টে গে‌ছে অনেকখানি। জ্বর খুব। বর্ষণ ভাই সকা‌লে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে গে‌ছিল। চারটা স্টিচ লাগ‌ছে পা‌য়ে। বেচারা অনেক অসুস্থ।’
‘কাঁ‌চে কীভা‌বে পা কাটল?’

‘বর্ষণ ভাইয়া বলল, রা‌তে না‌কি বর্ষ‌ণে‌র রু‌মে গ্লাস ভে‌ঙেছিল, তার কাঁচ প‌রিষ্কার কর‌লেও বড় একটা টুকরা র‌য়ে গে‌ছিল। ভোর রা‌তে অন্ধকা‌রে না‌কি পা‌ সেখা‌নে দি‌য়ে‌ছিল। তখন ভাইয়া ড্রে‌সিং ক‌রে ওষুধ খাওয়ালেও সকা‌লে উঠে দে‌খে বি‌ল্ডিং থা‌মে‌নি। আর শ্রাব‌ণের জ্বরও এসে‌ছে খুব। ফ‌লে সকা‌লে উঠেই ভাইয়া হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে গে‌ছিল।’
‘‌তো ওরা কি এখন হস‌পিটা‌লে? আমরা কি হস‌পিটা‌লে যাব?’
‘এখন হস‌পিটা‌লে ত‌বে কিছুক্ষণ পর বাসায় যা‌বে। আমা‌কেও বাসায় যে‌তে বলল।’
‘আচ্ছা।’
‘দশটা বা‌জে। তোমার প্রথম ক্লাস কয়টায়?’
‘আজ এগা‌রোটায়।’
‘ওহ! তো তু‌মি দেখা কর‌তে পার‌বে?’
‘হুম পারব। তাহ‌লে চ‌লে তৈরি হ‌য়ে নি।’
‘হুম।’

কথা কিছুক্ষণ নিহা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। তারপর বিছ‌ানা থে‌কে উঠে নিহাদ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রল। শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ওর বু‌কে চু‌মু আঁকল। তারপর বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
‌নিহাদ আরও শক্ত ক‌রে কথা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রল। পরম আবে‌শে কথার কপা‌লে, গা‌লে চুমু খে‌য়ে বলল,
‘ভা‌লোবাসি তোমায়, সব‌চে‌য়ে বে‌শি।’
কথা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যে দীর্ঘশ্বাসে লু‌কি‌য়ে ছিল, হাজা‌রো কান্না, হাজা‌রো ব্যথা, হাজা‌রো কষ্ট।

২৫!!
‌শ্রাব‌ণের বন্ধুরা সব ওকে দেখ‌তে আসল। সোহাগ, লিমা, অনিম, সুমু। সোহাগ, শ্রাব‌ণের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌কি‌রে হালার পো, পা কে‌টে এমন চ্যাগাইয়া শু‌য়ে আছিস কেন?’
শ্রাবণ মুখ কুচ‌কে বলল,
‘তুই আমার ফুুপিকে ক‌বে বি‌য়ে কর‌লি?’
‘‌তোর ফু‌পু‌কে আমি কেন বি‌য়ে করব?’
‘তাহলে আমাকে হালার পো বল‌ছিস কেন? আমার বাবা কীভা‌বে তোর শালা হ‌লো?’
‘চুপ শালা।’
‘নিহাদ স্যার‌কে ডে‌কে বলব যে, কথার দি‌কে বদ নজর দি‌ছোস?’
‌সোহাগ হাত‌জোড় ক‌রে বলল,
‘মাফ কর ভাই।’
‘এবার লাই‌নে আস‌ছোস। এবার বস। ব‌সে কী বল‌বি বল?’

‌সোহাগ ব‌সে আবার মা ব‌লে লাফ মে‌রে দাঁড়াল। শ্রাবণ বলল,
‘‌কি‌রে লাফ মার‌লি কেন?’
‌সোহাগ ব্যাক প‌কেট থে‌কে নেইল কাটার বের করল। বলল,
‘এটা পাছার ম‌ধ্যে ঢুকে গে‌ছিল।’
শ্রাবন ‌হে‌সে বলল,
‘তা-ও ভা‌লো পাছায় ঢুক‌ছে। সাম‌নে থাক‌লে দেখা যেত বল দু‌টোর একটা কে‌টে প‌ড়ে যেত। তখন কি কর‌তি?’

রু‌মের সবাই শব্দ ক‌রে হাসল। অনিম বলল,
‘শালা, অসুস্থ হ‌য়েও তোর শা‌ন্তি হয়‌নি।’
‘‌তো কী করব? অসুস্থ ব‌লে কি মু‌খে চেইন টে‌নে শু‌য়ে থাকব?’
‘আ‌রে রুমে লে‌ডিস আছে।’
‘‌কোথায়?’
‌লিমা বলল,
‘হারামি আমা‌কে আর রিমু‌কে চো‌খে বা‌জে না?’
শ্রাবণ বলল,
‘‌তোরা মে‌য়ে? স‌রি দোস্ত ভু‌লে গে‌ছিল‌াম।’
‌রিমু, শ্রাব‌ণের নাক টে‌নে বলল,
‘দ‌ু‌নিয়া‌তে মে‌য়ে তো কেবল তূবা একা।’
‘তূবা আপু বা ভা‌বি বল। তো‌দের বড়। গিভ রেসপেক্ট।’

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২২

‘তূবা আপু বা ভা‌বি বল। তো‌দের চে‌য়ে বড়। গিভ রেসপেক্ট।’
‌লিমু বলল, ‘‌তূবা আপু, তো তোরও বড়। তুই কেন নাম ধ‌রে ডা‌কিস?’
‘আ‌রে বু‌ঝিস না কেন, আমার বিষয়টা আলাদা।’
‌সোহাগ বলল,
‘তা তূবা ভা‌বি আস‌ছিল তো‌কে দেখ‌তে?’
‘নাহ।’
শ্রাবণ ম‌নে ম‌নে বলল, ‘‌কোন মু‌খে আস‌বে? ওর কার‌ণেই তো আমার এ দশা। একবার আসুক কথাই বলব না ওর সা‌থে। বদ মে‌য়ে।’

কথা তখন শ্রাব‌ণের রু‌মে নাস্তার ট্রে নি‌য়ে ঢুকল। সবাই কথাকে সালাম দিয়ে কুশল বি‌নিময় করল। সোহাগ বলল, ‘আপু, নিহাদ স্যারও কি আছেন?’
কথা‌ হে‌সে বলল, ‘ভয় পা‌চ্ছিস?’
‘‌কেন পাব না। স্যার নামক মানুষগু‌লো আশে পা‌শে থাক‌লেই ভয় ক‌রে। তারউপর তি‌নি আমা‌দের ভা‌র্সি‌টির স্যার।’

কথা হেসে বলল, ‘শ্রাবণ‌ তো ভয় পায় না? ভার্স‌টি‌তে স্যা‌রের ম‌তো আর বাস‌ায় দুলাভাইর ম‌তো থা‌কে।’
অনিম বলল, ‘ওর‌ তো অভ্যাস হ‌য়ে গে‌ছে।’
শ্রাবণ বলল, ‘ভাইয়া আছে না‌কি গে‌ছেন?’
কথা বলল, ‘‌তো‌কে দে‌খেই চ‌লে গে‌ছে। ওর ক্ল‌াস আছে।’
‘আচ্ছা।’

‌সোহাগ বলল, ‘তাহ‌লে এখন রিলা‌ক্সে থাক‌তে পারব।’
কথা হে‌সে বলল, ‘‌তো‌দের ক্লাস‌ নেই?’
‘আ‌ছে কিন্তু শ্রাবণ‌কে দেখার জন্য আজ প্রথম ক্লাসটা ক‌রে এখা‌নে এসে‌ছি। বাকি দু‌টো আর ক‌রব না।’
কথা বলল, ‘এ চোরা‌কে‌ দেখার কী আছে? চু‌রি কর‌তে গি‌য়ে পা কাট‌ছে।’
‌লিমু বলল, ‘মা‌নে?’
কথা মুচ‌কি হে‌সে বলল, ‘‌কিছু না।’

শ্রাবণ মাথা নিচু ক‌রে রইল। কারণ কথা‌কে শ্রাবণ নি‌জেই সব ব‌লে‌ছে। সা‌থে হুম‌কি‌ দি‌য়ে ব‌লে‌ছে,
‘‌তোর বান্ধবী‌কে একবার পাই, দে‌খে নিব। ক‌ঠিন শোধ তুলব।’
কথা ওদের বলল, ‘‌তোরা নাস্তা কর। আমি যা‌চ্ছি। তোরা কিন্তু দুপু‌রে খে‌য়ে যা‌বি।’

‌লিমুসহ সবাই বলল, ‘আ‌রে না না আপু। খাবার সময় হ‌বে না। বাসায় ব‌লে আসি‌নি।’
কথা বলল, ‘‌তো ফোন ক‌রে ব‌লে দে। না খে‌য়ে একটাও যে‌তে পার‌বি না। একটু পর তো‌দের তূবা ভা‌বিও চ‌লে আস‌বে। তার হা‌তের মাংস ভূনা খে‌লে সারাজীবন জিবে লে‌গে থাক‌বে। আজ তাকে দি‌য়ে গরুর মাংস ভূনা করাব। ফোন ক‌রে‌ছি, দশ মি‌নি‌টে আস‌ছেন ম্যাডাম।’
সবাই একসা‌থে বলল,
‘তাহ‌লে তো খে‌য়েই যাব। ভাবির হা‌তের রান্ন‌া মিস করা যা‌বে না।’

শ্রাবণ, কথার ওড়নার আঁচল টে‌নে বলল,
‘স‌ত্যি আস‌ছে না‌কি তি‌নি?’
‘হুম। বেচা‌রি খুব অপরাধ‌বো‌ধে ভুগ‌ছেন। আহা‌রে!’
কথা হে‌সে চ‌লে গেল।

কথা ওর মা‌য়ের সা‌থে রান্নায় সাহায্য কর‌ছে। শ্রাবণী বলল,
‘‌তোর শরীর কেমন‌ রে কথা?’
‘‌আমার কী হ‌বে?’
‘সকা‌লে বেয়ান কল ক‌রে বল‌লেন দু‌দিন যাবত খুব ব‌মি কর‌ছিস?’
‘মাথা যন্ত্রণা বে‌ড়ে‌ছে তাই। তু‌মি তো জা‌নো আমার মাই‌গ্রেন প্রোব‌লেম হ‌লে ব‌মি হয়।’

শ্রাবণী ভ্রু কুচ‌কে বল‌লেন, ‘মাই‌গ্রেন না‌কি অন্য কিছু?’
কথা খা‌নিকটা আটকা‌নো ক‌ণ্ঠে বলল, ‘অন্য কী হ‌বে?’
‘তোর সাই‌কেল ঠিক আছে?’
কথা কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘হ্যাঁ।’

শ্রাবণী কিছুক্ষণ কথার দি‌কে তা‌কিয়ে থে‌কে বলল,
‘আর কত বছর ওয়েট কর‌বি। এখন একটা বে‌বি প্ল্যান ক‌রে ফেল। চেষ্টা কর‌লে বাচ্চা আর পড়া‌লেখা দু‌টোই হয়। তাছ‌াড়া তুই যতটা সা‌পো‌র্টিভ শ্বশুর শাশু‌ড়ি পে‌য়ে‌ছিস তা‌তে তুই দশটা বাচ্চ‌া নি‌লেও তোর পড়া‌লেখায় ক্ষ‌তি হ‌বে না।’
কথা শুধু আস্তে ক‌রে বলল, ‘হুঁ।’
‘তাছ‌াড়া একটা সন্তান স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আরও মজবুত ক‌রে।’
‘হুঁ।’
‘‌নিহাদেরও তোর প্র‌তি ভা‌লোবাসাও বজায় থাক‌বে।’

কথা তা‌চ্ছিল্য হাসল। দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘মা, যে ভা‌লোবা‌সে সে বাচ্চা হ‌লেও ভা‌লোবা‌সে না হ‌লেও ভা‌লোবা‌সে। যে আমা‌কে ভা‌লোবে‌সে মায়া কর‌বে না, সে কখনও বাচ্চার জন্যও মায়া কর‌বে না। স্বামী-স্ত্রীর ভা‌লোবাসায় বোঝাপাড়া, বিশ্বাস, ভরসা প্রথম এবং মূল অধ্যায়, বাচ্চা তো প‌রের অধ্যায়।’
‘‌নিহাদ তো‌কে অনেক ভা‌লোবা‌সে।’
‘জা‌নি।’

কথা ম‌নে ম‌নে বলল, ‘‌নিহাদ স‌ত্যি আমায় অনেক ভা‌লোবা‌সে কিন্তু আমার ভরসা ও বজায় রাখ‌তে পা‌রে‌নি। তার শা‌স্তি কি ওকে দিব না?’

কথার কিছু একটা ম‌নে পড়ার পর ওর মা‌য়ের থে‌কে দূ‌রে গি‌য়ে কাউ‌কে কল করল। তারপর তাকে বলল, ‘কাজ হ‌য়েছে?’
অপর পা‌শের ছে‌লেটা বলল, ‘হ্যাঁ। আজ বিকা‌লে আপনার কা‌ছে পাঠি‌য়ে দি‌চ্ছি।’
‘আচ্ছা।’
কলটা কে‌টে কথা রহস্যময় হে‌সে আপনম‌নে বলল, ‘‌সি‌ন্থিয়া আপা ক‌াল‌কের দিনটা আপনার জীব‌নে স্মর‌নীয় হ‌য়ে থাক‌বে। কাল‌কে আপ‌নি অনেক‌কিছু হারা‌বেন।’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

‌কিছুক্ষণ পর তূবা আসল। তূবা এসে কথার রুমে ঢুকে বসল। তারপর কথা‌কে জি‌জ্ঞেস করল,
‘গাধাটা কেমন আছে?’
‘খুব যন্ত্রণায়। পা‌য়ে চারটা সেলাই লে‌গেছে।’
তূবা মন খারাপ ক‌রে বলল,
‘গাধা‌মি না কর‌লেই হ‌তো।’

কথা বলল, ‘তুইও তো কম গাধা‌মি করিস‌নি?’
তূবা মুখ ভার ক‌রে বলল, ‘আ‌মি কীভা‌বে বুঝব গাধাটা এমন কর‌বে? ও জানালায় টোকা না দি‌য়ে ফোন কর‌তে তো পারত?কোথায় গাধাটা?’
‘‌নি‌জের রুমে। দেখা কর‌বি?’
‘সাহস হ‌চ্ছে না। য‌দি রাগ দেখায়?’
‘তা তো দেখা‌বেই। ফুলে তো বেলুন হ‌য়ে আছে। ত‌বে তুই তো সবসময়ই রাগ দেখাস। আজ না হয় ও রাগ দেখালো। ত‌বে তুই কিছু একটা ব‌লে ফুলানো বেলুনটা‌কে চুপ‌সে দিস।’
‘চল ত‌বে।’

তূবা অনেকটা ভ‌য়ে ভ‌য়ে শ্রাব‌ণের রু‌মে প্র‌বেশ করল। তূবা‌কে রু‌মে ঢু‌কি‌য়ে কথা বলল,
‘‌লিমু, রিমু তোরা আমার সা‌থে আয় একটু হেল্প কর‌বি।’
দুজনে বিষয়টা বুঝ‌তে পে‌রে বলল,
‘আস‌ছি আপু।’
‌সোহাগ, অনিম বলল,
‘আপু, আমরাও আসি।’

সবাই চ‌লে যেতেই তূবা দরজাটা সিট‌কি‌নি দি‌য়ে দি‌লো। শ্রাবণ, তূবা‌কে দে‌খে রা‌গে অন্য দি‌কে ঘু‌রে শু‌য়ে রই‌ল। তূবা পা‌শে ব‌সে কা‌শি দি‌লো। শ্র‌াবণ তা-ও ঘুর‌ছে না। তূবা ওর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‘সরি।’
অভিমান ভরা ক‌ণ্ঠে শ্রাবণ বলল, ‘আস‌ছে স‌রি বল‌তে। রা‌তে মার্ডার করার প্ল্যান ক‌রে এখন স‌রি বল‌তে আস‌ছে।’
‘আ‌মি বুঝ‌তে পা‌রি‌নি।’
‘তা পারবা কেন? মাথায় তো সবসময় আমা‌কে মার্ডার করার চিন্তা ঘো‌রে। আমি ম‌রে গে‌লেই তো তোমার শা‌ন্তি।’

তূবা, শ্রাব‌নের মুখ চে‌পে ধরল। তারপর ধমক দি‌য়ে বলল, ‘চুপ।’
দুজন দুজনার দি‌কে অপলক চো‌খে তা‌কিয়ে রইল কিছুক্ষণ। শ্রাবণ আবেগঘন কণ্ঠে বলল,
‘তু‌মি এত সুন্দর কেন! কো‌নো মানুষের এত সুন্দর হওয়া ঠিক না। জিন, পরী, মানুষ সবার নজর লে‌গে যায়। আমার চোখ সবসময় তোমা‌কে দেখার জন্য ছটফট ক‌রে।’

তূবা লাজুক হাসল। শ্রাব‌ণের গা‌লে হাত বুলাল। তারপর বলল,
‘কাল যে অত কষ্ট ক‌রে গেলি, জানালায় টোকা না দি‌য়ে একটা কল তো কর‌তে পা‌রতি?’
শ্রাবণ মুখ গোমড়া ক‌রে বলল, ‘‌ফোন ভু‌লে বাসায় ফে‌লে গিয়ে‌ছিলাম।’
‘সা‌ধে তো গাধা ব‌লি না। কই দে‌খি কতটা কাটল।’
‘এই না।’

তূবা, শ্রাব‌ণের গা‌য়ের চাদরটা টে‌নে স‌রি‌য়ে ফেলল। শ্রাবণ খা‌লি গা‌য়ে শর্ট প্যান্ট পরা। তূবা লজ্জা পে‌লেও মুচ‌কি হাসল। শ্রাবণ, চাদরটা গা‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে বলল,
‘বস্ত্রহরণ কর‌ছো কেন? আমার লজ্জা কর‌ছে।’
‘‌তোর লজ্জা আছে?’
‘‌কেন থাক‌বে না?’
‘লজ্জা থাক‌লে বড় বো‌নের বান্ধবীকে প্র‌পোজ কর‌তি?’

শ্রাবণ মুখ বাঁকা‌লো। তূবা শ্রাব‌ণের পা‌য়ের কা‌ছে গি‌য়ে বসল। ধবধ‌বে ফর্সা পা ব্যা‌ন্ডেজ করা। তূবা ম‌নে ম‌নে বলল, ‘ধবধ‌বে ফর্সা পা‌য়ের সুন্দর লোম আর লম্বা আঙুলগুলো‌তেই মনটা প‌ড়ে থাক‌তে পা‌রে। কিন্তু তো‌কে কেন বল‌বো গাধা?’

পা‌য়ের বেশ খানিকটা জায়গা ব্যা‌ন্ডেজ করা। ফর্সা পা‌য়ে বেশ অনেক জায়গায় ল‌াল‌চে হ‌য়ে আছে। কিছু কিছু জায়গা বেশ ছি‌লে গে‌ছে। তূবার খুব খারাপ লাগল। শ্রাব‌ণের ব্যথা স্থা‌নে হাত বুলা‌তেই শ্রাবণ পা টে‌নে নি‌লো।

শ্রাবণ মৃদু হে‌সে বলল, ‘‌তোমার নিয়্যত সু‌বিধার লাগ‌ছে না।’
তূবা লাস্যময়ী চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল,‌ ‘‌নিয়্যত স‌ত্যি সুবিধার না।’
তূবা, শ্রাবণ‌কে শু‌য়ে দি‌লো। ও গায়ে চাদর টে‌নে দিলো। তারপর ওর পাশে বওস মোলা‌য়েম চু‌লে হাত বু‌লা‌তে বুলা‌তে অদ্ভুত কান্ড করল। নিচু হ‌য়ে শ্রাব‌ণে‌র কপা‌লে ঠোঁট ছোঁয়াল। তপ্ত গাঢ় চুমু আঁকল শ্রাব‌ণের কপালের মাঝ বরাবর। অনেকটা সময় ধ‌রে ঠোঁটদু‌টো চে‌পে রাখল শ্রাব‌ণের কপা‌লে। কিছু মুহূর্ত পর তূবা যখন ঠোঁট স‌রি‌য়ে চ‌লে গেল। শ্রাবণ তখন দি‌শেহারা পাগল প্রায়। ওর ম‌নে হ‌চ্ছে জ্বরটা তরতর ক‌রে বে‌ড়ে যা‌চ্ছে। শরী‌রের তাপমাত্রা ভয়াবহ মাত্রায় বে‌ড়ে যা‌চ্ছে। হার্ট এত জো‌রে ধকধক কর‌ছে যে‌ন শব্দ করে ফে‌টে যা‌বে। ওর হৃদ‌য়ের শব্দ হয়‌তো সবাই শুন‌ছে। শ্রাবণ চাদরটা‌কে আরও বে‌শি ক‌রে গা‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। ওর সত্যি খুব শীত কর‌ছে। প্রচন্ড শীত কর‌ছে।

শ্রাবণ বিড়‌বিড় ক‌রে বলল, ‘তূবা এটা কী করল? কেন করল? আধা পাগল তো ছিলামই। এখন পু‌রো পাগল হ‌বো। ইশ! এত শীত কর‌ছে কেন? এই মে‌য়েটা‌কে ভা‌লোবাসার পর থে‌কে এই এক যন্ত্রণা। আমার কো‌নো কিছু আমার নিয়ন্ত্র‌ণে নেই। মে‌য়েটা সব নি‌জের দখ‌লে নি‌য়ে গে‌ছে। এম‌নকি আমার শরীরের গ‌তি‌বি‌ধি‌কেও।

শ্রাব‌ণের রুম থেকে বের হয়ে তূবা সোজা কথার রুমে এসে থম মে‌রে ব‌সে পড়ল। কি ক‌রে‌ এসে‌ছে ও? কি অদ্ভুত কান্ড! কি ভয়াবহ কান্ড! ও কি নি‌জে‌র অজা‌ন্তেই আজ শ্রাবণ‌কে বু‌ঝি‌য়ে দি‌লো ও শ্রাবণ‌কে ভা‌লোবা‌সে। প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সে। কিন্তু কেন করল? ও তো প্র‌তিজ্ঞা ক‌রে‌ছিল ক‌য়েক বছ‌রে শ্রাবণ‌কে বুঝ‌তে দি‌বে না। তাহ‌লে কেন শ্রাবণের কা‌ছে গি‌য়ে নি‌জে নিয়ন্ত্রণাধীন হ‌য়ে গেল? তূবার মাথা ঘুর‌ছে। লজ্জায় ভ‌য়ে আয়নায় নি‌জের দি‌কেও তাকা‌তে পার‌ছে না। আয়না ওর প্র‌তিচ্ছ‌বিও যেন ওকে লজ্জা দি‌চ্ছে। বু‌কের ধকপকা‌নি যেন ক্রমাগত বাড়‌ছে। তূবার মন বল‌ছে, বাই‌রের লোক ওর বু‌কের ধুকপকা‌নি শু‌নে সব বু‌ঝে গে‌ছে। পু‌রো পৃ‌থিবী জে‌নে গে‌ছে ওর ম‌নের কথা। তূবার প‌ক্ষে আর এ বাসায় থাকা সম্ভব না।

তূবা, কথার রুম থে‌কে বের হ‌য়ে সাম‌নের রুমে আসল। সবাই ওর দি‌কে তাকাল। ওর ম‌নে হ‌লো সবাই ওকে স‌ন্দেহ ক‌রছে। সবাই সব জে‌নে গে‌ছে। নিজে‌কে কেমন চোর চোর ম‌নে হ‌চ্ছে। ইশ! প্রে‌মের পড়ার এই মহা যন্ত্রণা! অপরাধ না ক‌রেও নি‌জে‌কে মস্তবড় অপরাধী ম‌নে হয়। তূবা কারও দি‌কে চোখ তু‌লে তাকা‌তে পর্যন্ত পারল না। কথা‌কে বলল, ‘কথা, ছোট চা‌চি কল ক‌রে‌ছিল, আমা‌কে যে‌তে হ‌বে। জরু‌রি কাজ আছে।’
কথা বলল, ‘‌কিন্তু তোর তো দুপু‌রে এখা‌নে খাবার কথা ছি‌ল।’
‘খুবই জরু‌রি ক‌াজ। সময় পেলে বিকা‌লে আসব। গেলাম।’

তূবা আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। হনহন ক‌রে চ‌লে গেল। কথা বেশ অব‌াক হ‌য়ে ওর যাবার পা‌নে তা‌কি‌য়ে রইল। কিন্তু বুঝ‌তে পারল শ্রাব‌ণের সা‌থে কিছু তো একটা হ‌য়ে‌ছে। তূবা সোজা শ্রাব‌ণের রু‌মে গেল। সে চাদ‌রের উপর মোটা একটা কাঁথা মু‌ড়ো দি‌য়ে‌ছে। কথা, মাথার দিক থে‌কে কাঁথা স‌রি‌য়ে বলল, ‘কী হ‌য়েছে তোর? কাঁথা মুড়ি দি‌ছিস কেন?’
‘আপু, আমার জ্বরটা খুব বাড়‌ছে। খুব শীত কর‌ছে, শরীর হাল ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছে।’

কথা, শ্রাব‌ণের গা‌য়ে হাত দি‌লে‌া। শরীর স‌ত্যি খুব গরম হ‌য়েছে। জ্বরটা যেন তরতর ক‌রে বাড়‌ছে। চিন্তিত ভ‌ঙ্গি‌তে বলল, ‘এই তো ঠিক ছিলি এর ম‌ধ্যে এমন কী হলো যে জ্বরটা এত বে‌ড়ে গেল? তূবা কী বলে‌ছে?’
শ্রাবণ বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘আমার দু‌নিয়া ওলোট পালট ক‌রে দি‌য়ে গেছে। সাথে আমা‌কেও।’

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২৩

কথা, তূবা‌কে কল ক‌রে ধম‌ক দি‌য়ে বলল, ‘ঐ তূবা!’
‘‌কি‌রে ধমকা‌চ্ছিস কেন?’
‘আমার ভাই‌কে কী ক‌রে গে‌ছিস?’
‘আ‌মি কী কর‌ছি?’
‘‌সেটা তো তুই জা‌নিস। তুই দুপু‌রে যাবার পর থে‌কে ওর জ্বর আরও বাড়‌ছে। কমার নাম তো নি‌চ্ছেই না। জ্ব‌রে ছটফট কর‌ছে।’
‘কী ব‌লিস?’
‘হ্যাঁ। খুব ছটফট কর‌ছে। আমা‌কে মাত্র বলল, আপু প্লিজ তূবা‌কে একবার আস‌তে বল। ও না আস‌লে জ্বর কম‌বে না। কেন রে তোর কা‌ছে কি জ্ব‌রের ওষুধ আছে? তুই কি নাপা সিরাপ?’

তূবা হাসল। বলল,
‘এখন আস‌তে পারব না। দেখ‌ছিস আকাশে কেমন মেঘ কর‌ছে। ঝড় বৃ‌ষ্টি হ‌বে খুব।’
‘‌কিছু হ‌বে না। প্লিজ আয়। শ্র‌াবণের অবস্থা স‌ত্যি খারাপ।’
‘ডাক্তার কা‌ছে নি‌য়ে যা।’
‘তাই যাব। কিন্তু সন্ধ্যার পর শ্রাবণ ভাই আসলে। তা-ও তুই এখন একবার আয়। বেচারা জ্ব‌রের ঘো‌রে তো‌কে দেখ‌তে চে‌য়ে‌ছে।’
তূবা মন খারাপ ক‌রে বলল, ‘স‌ত্যি দেখ‌তে চেয়ে‌ছে?’
‘হুম।’
‘আচ্ছা আস‌ছি।’

তূবা, তা‌মিমার কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘চা‌চি, আমি একটু কথা‌দের বাসায় যাই?’
‘শেষ বিকা‌লে যাবি? তাছাড়া যে মেঘ কর‌ছে বৃ‌ষ্টি বন্যা হবে খুব।’
‘আ‌মি গি‌য়েই চ‌লে আসব।’
‘আচ্ছা। যা ত‌বে জল‌দি আসিস।’

তূবা ওড়নাটা মাথায় পে‌চি‌য়ে চ‌লে গেল। দরজায় নক কর‌ার পর কথা দরজা খু‌লে তূবা‌কে দে‌খে বলল,
‘‌তো‌দের ম‌ধ্যে কী হ‌য়ে‌ছে রে?’
তূবা ভিত‌রে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘চা‌চি কই?’
‘বাস‌ায় আমি আর শ্র‌াবণ। মা টু‌নি‌দের বাসায় গে‌ছে। ত‌বে চ‌লে আস‌বে। তুই ততক্ষ‌ণে গাধাটার সা‌থে কথা বল।’

তূবা ভিত‌রে ঢুক‌তেই কথা দরজা বন্ধ ক‌রে দিলো। তূবা সোজা শ্রাব‌ণের রুমে গেল। কথা আর গেল না ওদের মাঝে। ও সাম‌নেই ব‌সে রইল। তূবা, শ্রাব‌ণের রু‌মে গি‌য়ে দেখল শ্রাবণ ক‌ম্বোল গা‌য়ে দি‌য়ে শু‌য়ে আছে। ও শ্রাব‌ণে‌র পা‌শে বসল। ওর মাথায় হাত রাখল। শ্রাবণ, তূবা‌কে দে‌খে অবাক চোখে চে‌য়ে রইল। দু’জন দু’জনার দি‌কে কিছুক্ষণ তা‌কি‌য়ে থে‌কে চো‌খের তৃষ্ণা মেটাল।

তারপর শ্রাবণ বলল, ‘দুপু‌রে সেটা কী ছিল তূবা? আমার সব কিছু স্বপ্ন ম‌নে হচ্ছে। তু‌মি এত‌দিন আমার স্বপ্ন ছি‌লে। সে স্বপ্ন স‌ত্যি হওয়ার আনন্দটা আমার শরীর মন নি‌তে পার‌ছে না।’
তূবা খানিক ধমক দি‌য়ে বলল,
‘‌তোর কো‌নো স্বপ্ন স‌ত্যি হয়‌নি। আমি জাস্ট ক্যাজুয়াল চু‌মু এঁকে‌ছি। এ্যাজ এ বড় বোন।’

শ্রাব‌ণের এত রাগ হ‌লো যে তূবার হাত ধ‌রে টে‌নে নি‌জের বু‌কের উপর ফেলল। তারপর ওর পি‌ঠে হাত দিয়ে শক্ত ক‌রে চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘তু‌মি আমা‌কে গা‌ধা ডা‌কো, তাই ব‌লে কি আমি স‌ত্যি গাধা? কিছু বু‌ঝি না ভা‌বো? কোনটা বো‌নের ম‌তো চুমু আর কোনটা প্রে‌মিকার চুমু এতটুকু বুঝব না। তোমার চুমু‌তে এমন কিছু ছিল যা আমার পু‌রো সত্ত্বা‌কে না‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। এই যে তু‌মি অর্ধেকটা আমার বু‌কের উপর, তু‌মি জা‌নো আমার সারা শরীর এখন অবশ হ‌য়ে যা‌চ্ছে।’

তূবা উঠ‌তে চাই‌লে শ্রাবণ শক্ত ক‌রে তূবা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘তু‌মি কী ভা‌বো তোমার চো‌খের ভাষা আমি বুঝি না? তোমার চোখ আমা‌কে কীভা‌বে দে‌খে, তোমার মন আমা‌কে নি‌য়ে কী ভা‌বে তা আমি বু‌ঝি না? আমি সব বুঝি। নি‌জে‌কে আমার থে‌কে দূ‌রে রাখার যুদ্ধে তু‌মি হে‌রে গে‌ছো। আমার ভা‌লোবাসায় তু‌মি পু‌রোপু‌রি জ‌ড়ি‌য়ে গেছ। তোমার মু‌খে কিছু বল‌তে হ‌বে না, তোমার চোখ, মুখ, শরী‌রের প্র‌তিটা অংশ চিৎকার ক‌রে বল‌ছে শ্রাবণ আমি তোমার।’

তূবার চোখ ভ‌রে এলো। টপটপ ক‌রে অশ্রু কনা শ্রাব‌ণের বু‌কে পড়‌তে লাগল। নি‌জের কাছে হে‌রে গে‌ছে তূবা। শ্রাবণ নি‌জের ভা‌লোবাসার কা‌ছে হা‌রি‌য়ে জি‌তে নি‌য়ে‌ছে তূবাকে। তূবা মুখ থে‌কে একটা শব্দও বের করল না। শ্রাব‌ণের বুকে মাথা রে‌খে কাঁদ‌তে লাগল অঝো‌রে। নি‌জের কাছে হে‌রে গি‌য়েও যে এত সুখ, বহু মাস ধ‌রে চল‌তে থাকা যু‌দ্ধে হে‌রে গি‌য়েও যে সুখী হওয়া যায় তা জানত না তূবা। আজ নি‌জে‌কে সুখী ম‌নে হ‌চ্ছে, প্রকৃত সুখী। নি‌জের কা‌ছে, শ্রাব‌ণের ভালোবাসার কা‌ছে হে‌রে গি‌য়েও আজ পরম সু‌খের সন্ধান পে‌য়ে‌ছে তূবা।

আকাশ ভে‌ঙে বৃ‌ষ্টি নামল। ঝম‌ঝ‌মি‌য়ে বৃ‌ষ্টি ঝড়‌ছে প্রকৃ‌তি‌তে। আর তূবার চো‌খের বৃ‌ষ্টি শীতল কর‌ছে শ্রাব‌ণের তপ্ত বুক। বৃ‌ষ্টিরা প্রবল আন‌ন্দে ঝরছে আর কানাকা‌নি ক‌রে বল‌ছে, ‘‌দেখ একটা গল্প শুরু হ‌য়ে‌ছে। নতুন প্রে‌মের গল্প। মুগ্ধতার গল্প। দু‌টো পাগলের পাগল করা ভা‌লোবাসার গল্প। ত‌বে এদের ভ‌বিষ্যত অনি‌শ্চিত।’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

২৬!!
‌সি‌ন্থিয়া‌দের বাসার সবাই থমথ‌মে মু‌খে ব‌সে আছে। অপরাধী ভ‌ঙ্গি‌তে সি‌ন্থিয়া ব‌সে কাঁদ‌ছে। দুই গা‌লেই চ‌ড়ের কড়া দাগ। ফর্সা মানুষ হওয়ায় চ‌ড়ের দাগ আরও প‌রিষ্কার বুঝা যা‌চ্ছে। লাল হ‌য়ে গাল দু‌টো ফু‌লে আছে। সি‌ন্থিয়ার মা নিলুফা বেগম প‌রিবা‌রের সবার সামনে দাঁড়ি‌য়ে বল‌লেন,
‘‌তোর মত বে*কে আমি জন্ম দিয়েছিলাম? ভাব‌তেই ঘৃণা হ‌চ্ছে।’
‌সি‌ন্থিয়ার চোখ থে‌কে অনর্গল পা‌নি পড়‌ছে।

‌কিছুক্ষণ আ‌গে,
জবা না‌মের এক ভদ্রম‌হিলা সি‌ন্থিয়াদের দরজায় নক কর‌ল। দরজা খুলল সি‌ন্থিয়ার বড়োবোন সীমা। দরজা খু‌লে‌তেই ওর না‌কে দা‌মি পার‌ফিউম এর মি‌ষ্টি ঘ্রাণ লাগল। জবা‌কে দেখে বেশ কিছুটা সময় তা‌কি‌য়ে ছিল সীমা। জবার কাপড়, গয়ন‌া, চেহারায় অ‌া‌ভিজা‌ত্যের আলাদা ছাপ। দেখ‌লেই বোঝা যায় বেশ ধনী প‌রিবা‌রেক লোক। দেখ‌তে তেমন ফর্সা না, ত‌বে বেশ মি‌ষ্টি।

জবা‌কে চিন‌তে না পে‌রে সীমা বলল, ‘‌জি কা‌কে চাই?’
জবা সালাম দি‌লো,
‘আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘‌ভিত‌রে আস‌তে পা‌রি?’
সীমা বলল,
‘স‌রি, আপনা‌কে ঠিক চিনলাম না।’
‘‌ভিত‌রে গি‌য়ে প‌রিচয় দি।’

সীমা অনিচ্ছা স‌ত্ত্বেও জবা‌কে ভিত‌রে নি‌য়ে গি‌য়ে বলল, ‘‌প্লিজ বসুন।’
জবা বস‌তে বস‌তে বলল, ‘আজ তো শুক্রবার। তার উপর এখন দুপু‌রের প‌রের সময়। নিশ্চয়ই আপনা‌দের ঘ‌রের সবাই ঘ‌রেই আছেন?’
‌সীমা কিছুটা ভে‌বে বলল, ‘‌জি আছে। কিন্তু আপনার কা‌কে চাই?’
‘প্লিজ সবাই‌কে ডাকুন।’

এবার সীমা বেশ বির‌ক্ত হ‌লো। বির‌ক্তি মাখা ক‌ণ্ঠে বলল, ‘আপ‌নি তখন থে‌কে নি‌জে ‌নি‌জে হুকুম ক‌রে যা‌চ্ছেন কিন্তু কো‌নো উত্তর দি‌চ্ছেন না কা‌কে চাই? কেন এসে‌ছেন? নি‌জের প‌রিচয়ও দেন‌নি।’
জবা স্মিত হাসল। তারপর বলল, ‘আপনার বোন সি‌ন্থিয়া আমা‌কে খুব ভা‌লো ক‌রে চি‌নে। তা‌কে ডাকুন সাথে প‌রিবা‌রের বা‌কি সবাই‌কেও। প্লিজ জল‌দি ক‌রুন। আজ আপনা‌দের জন্য দারুণ সারপ্রাইজ আছে। প্লিজ প‌রিবারের সবাই‌কে ডাক‌বেন। ত‌বে হ্যাঁ ঘ‌রে বাচ্চারা থাক‌লে তা‌দের ডাক‌বে না। আস‌লে বড়‌দের এসব কথা বাচ্চা‌দের শোনা ঠিক হ‌বে না।’

সীমা মনে ম‌নে ভাবল, ‘হয়‌তো সি‌ন্থিয়ার জন্য বি‌য়ের প্রস্তাব নি‌য়ে এসে‌ছে।’
সীমা ম‌নে ম‌নে ব‌লল, ‘য‌দি বি‌য়ের প্রস্তাব নি‌য়েই আসে তাহ‌লে তো সি‌ন্থিয়ার কপাল খু‌লে যা‌বে। ম‌হিলা‌কে দেখ‌লেই বোঝা যায় খুব ধনী। আমা‌দের গে‌টের সাম‌নে দেখল‌াম দা‌মি গা‌ড়ি দাড় করা‌নো। নিশ্চয়ই ঐ ম‌হিলারই।’

সীমা সবাই‌কে ডাকল‌। কিছুক্ষণের ম‌ধ্যেই সবাই সাম‌নের রুমে এসে হা‌জির হ‌লো। সি‌ন্থিয়ার বাবা-মা, সীমা-সীম‌ার স্বামী, সি‌ন্থিয়ার বড় ভাই-ভা‌বি। সি‌ন্থিয়া জবা‌কে দেখ‌তেই ভূত দেখার ম‌তো চমকা‌লো। ওর মুখটা ভ‌য়ে চুপ‌সে গেল। জবা, সি‌ন্থিয়ার ‌দি‌কে তা‌কি‌য়ে বাঁকা হাসল।

সবাই বসার পর, সি‌ন্থিয়ার বাবা হক সা‌হেব জি‌জ্ঞেস করল, ‘‌জি আপনা‌কে তো ঠিক চিন‌তে পারলাম না।’
জবা তা‌কে সালাম দি‌য়ে বলল, ‘আমার নাম জবা চৌধু‌রি, আমার স্বামীর নাম ইরফান চৌধু‌রি। আমার স্বামী আর আপনার ছো‌টো মে‌য়ে সি‌ন্থিয়ার ম‌ধ্যে অবৈধ সম্পর্ক চল‌ছে। আপনার ছো‌টো মে‌য়ে আমার সতীন হওয়ার চেষ্টা কর‌ছে। সে কার‌ণে আমিই আসলাম তা‌কে সতীন ক‌রে নেওয়ার প্রস্তাব দি‌তে।’

সবার মা‌থায় নিঃশ‌ব্দে বাজ পড়ল। হক সা‌হেব বেশ রাগা‌ন্ধিত হ‌য়ে বলল, ‘কী যা তা বল‌ছেন এসব?’
জবা মৃদু হে‌সে বলল,
‘উত্তে‌জিত হ‌বেন না। আমি সব না জে‌নে আপনা‌দের কা‌ছে আসি‌নি। আপনা‌দের সা‌থে আমার কো‌নো শত্রুতা নেই যে, আপনা‌দের ‌মে‌য়ের না‌মে মিথ্যা অপবাদ দিব। আপনা‌দের মে‌য়ে‌কে জি‌জ্ঞেস করুন।’
সবাই সি‌ন্থিয়ার দি‌কে তাকাল। ও মাথা নিচু ক‌রে রইল।’

জবা হে‌সে বলল,
‘‌সে কিছু বলতে পার‌বে না। বলার ম‌তো মুখ তার নেই। আমিই বিস্তা‌রিত সব বল‌ছি। আর আমি যতক্ষণ কথা বলব ততক্ষণ দয়া করে কথার মাঝে কথা বল‌বেন না। ত‌বে কথাগু‌লো বলার আগে কিছু ছ‌বি দেখাই।’

জবা ওর হা‌তে থাকা আইপ্যাড থে‌কে কিছু ছবি বের ক‌রে সি‌ন্থিয়ার প‌রিবা‌রের সবাই‌কে দেখাল। ছ‌বিগু‌লো‌তে সি‌ন্থিয়া আর ইরফান খুব অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে। ছ‌বিগু‌লোর সি‌ন্থিয়ার বাবা, বড় ভাই আর দুলাভাই একবার তা‌কি‌য়ে দ্বিতীয়বার তাকা‌নোর সাহস পায়‌নি। সীমা, সি‌ন্থিয়ার ভা‌বি ক‌নিকা আর ‌নিলুফা ছ‌বিগু‌লো দেখার পর তা‌দের ভীর‌মি খাবার জোগাড় হ‌লে‌া। ছ‌বিহুলো এতটাই অন্তরঙ্গ যে কেউ দেখ‌লেই তার মুখ হা হ‌য়ে যা‌বে। লজ্জায় চোখ বন্ধ হ‌য়ে আস‌বে।

জবা বলল, ‘ছ‌বিগু‌লো‌কে নকল ভাব‌বেন না। কারণ ছ‌বিগু‌লো আপনার মে‌য়ের ফোন থে‌কেই নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। তার ফোন থে‌কেই আমি তার এবং ইরফা‌নের বিষ‌য়ে বিস্তারিত জে‌নে‌ছি। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা চ্যা‌টিং ক‌রে। ‌গত বছর তারা দুজন কক্সবাজার পর্যন্ত ঘু‌রে এসে‌ছে। দু‌টো ছে‌লে মে‌য়ে কক্সবাজা পর্যন্ত গি‌য়ে কী কী কর‌তে পা‌রে তা নিশ্চয়ই আপনা‌দের বু‌ঝি‌য়ে বল‌তে হ‌বে না।

আমার স্বামী ইরফান ধনী ব্যবসায়ী মানুষ। সে ব্যবসা কর‌তে ভা‌লোবা‌সে। যে কো‌নো বিষ‌য়ে তার গিভ এন্ড টেই‌কের বিষয় চ‌লে। আপনার মেয়ের থে‌কে সে অনেককিছু পে‌য়ে‌ছে। ফ‌লে আপনার মে‌য়ে‌কেও অনেক‌কিছুই দি‌য়ে‌ছে। আপনার মে‌য়ে কুইজ প্র‌তি‌যো‌গিতায় ল্যাপটপ জি‌তে, লটা‌রি‌তে আইফোন জি‌তে, সে হা‌তে সা‌ড়ে তিনলাখ টাকা দা‌মের ঘ‌ড়ি প‌রেও ঘো‌রে। লটা‌রি‌তে এতসব স‌ত্যি জেতা যায়?

আপনা‌দের বিষ‌য়ে সব খোঁজ নি‌য়ে যা জানলাম। মধ্য‌বিত্ত হ‌লেও বেশ সম্মানী মানুষ আপনারা। বিলাসীতা করার ম‌তো সামার্থ্য আপনা‌দের নেই। আচ্ছা আপনার মে‌য়ের দা‌মি দামি ড্রেস দেখে কখনও জান‌তে চান‌নি কোথায় পায় সে এসব? বুঝলাম ফোন, ল্যাপটপ লটা‌রি কিংবা প্র‌তি‌যো‌গিতা ব‌লে চালি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। ত‌বে আপনা‌দের মে‌য়ে যেভা‌বে চলা‌ফেরা ক‌রে তা‌তে তা‌কে উচ্চ‌বিত্ত লা‌গে। কখনও ম‌নে প্রশ্ন জা‌গে‌নি যেখা‌নে অাপনারা এত সাধারণ জীবন যাবন ক‌রেন সেখা‌নে আপনা‌দের মে‌য়ে এত বিলাসীতা কী ক‌রে ক‌রে?’

সীমা, সিন্থিয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে দাঁ‌তে দাঁত চে‌পে বলল,
‘তুই না বল‌তি ইরফান সা‌হেবের মে‌য়েকে প্রাই‌ভেট পড়াস, মা‌সে দশহাজার টাকা দেয় টিউশন ফি। টিউশ‌নির টাকা দিয়ে এসব কি‌নিস? তাহ‌লে এসব ক‌রে কিন‌তি?’

‌সি‌ন্থিয়া মাথা নিচু ক‌রে রইল। জবা বলল,
‘হাসা‌লেন আপা। আমার মে‌য়ের বয়স সাত বছর। এবার কে‌জি ওয়া‌নে প‌ড়ে। কে‌জি ওয়া‌নের একটা বাচ্চাকে পড়া‌নোর ফি দশ হাজার টাকা? কেন মানুষ‌কে টাকায় গুতায়? আপনার বোন‌কে প্র‌তিমা‌সে দুই হাজার টাকা দিত‌াম আমার মে‌য়ে‌কে পড়া‌নোর ব‌দৌল‌তে।

আপনার বোন আমার মে‌য়েকে পড়া‌তে গি‌য়ে আমা‌র স্বামী‌কেও পড়ানো শুরু করল। তা‌দের ম‌ধ্যে সম্পর্ক অনেক গভীর। ইতিম‌ধ্যে তারা কতবার ফি‌জিক্যাল রি‌লেশন ক‌রে‌ছে তার হিসাব নেই। আমার স্বামী নিশ্চয়ই ওকে বল‌ছে বিয়ে কর‌বে। কিন্তু ট্রাস্ট মি, ও কখনও তা করত না কিংবা কর‌বে না। প্রথম এবং ‌শেষ কথা সে মরার আগ পর্যন্ত আমার সা‌থে থাক‌তে বাধ্য। কারণ তার বিষয় সম্প‌ত্তি সব আমার না‌মে। আমা‌কে ছাড়‌লে সে প‌থের ভিখা‌রি হ‌য়ে যা‌বে।

আপনা‌দের মে‌য়েকে বলুন আমি ঐ লম্পটটা‌কে ছে‌ড়ে দি‌চ্ছি। ও ঐ ভিক্ষুকটা‌কে বি‌য়ে করে নিক। আমার কথা বিশ্বাস না হ‌লে আমার কা‌ছে কিছু ভি‌ডিও আছে। আমার অনুপ‌স্থি‌তি‌তে আপনার মে‌য়ে আর আমার স্বামী কি কি করত তার ভি‌ডিও রেকর্ড। ফুল এইচ‌ডি পিকচার কোয়া‌লি‌টির। দেখ‌তে চাই‌লে দেখা‌তে প‌া‌রি।’

‌সি‌ন্থিয়া, জবার পা জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আপা প্লিজ এমনটা কর‌বেন না।’
জবা, সি‌ন্থিয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হে‌সে বলল,
‘আমা‌কে আপা নয়, ম্যাডাম ডা‌কো। আপা ডে‌কে আমার সা‌থে সম্পর্ক গড়ার কো‌নো কারণ নেই। তু‌মি তো ইরফান‌কে খুব ভা‌লোবা‌সো। তো ওকে বি‌য়ে ক‌রে নিও। ক‌য়েকমা‌সের ম‌ধ্যে আমা‌দের ডি‌ভোর্স হয়ে যা‌বে। ইরফান আজ ইরফান চৌধু‌রি হ‌য়ে‌ছে আমার বাবার টাকার ব‌দৌল‌তে। সেই টাকা পে‌য়ে আমা‌কে ধোকা দি‌বে কিন্তু আমি তো ওকে শা‌ন্তি‌তে থাক‌তে দিব না। ওর শা‌ন্তি হারাম করার গুরু দা‌য়িত্ব আমি কাঁ‌ধে তু‌লে নিলাম।

ও হ্যাঁ আমার টাকায় কেনা তোমার আইফোন‌টি আমার কা‌ছেই আছে। ক‌দিন আগে তোমার ফোন‌টি চু‌রি হ‌য়ে‌ছিল না? সেটা আমিই ক‌রিয়ে‌ছিলাম। তোমার ল্যাপটপটা প্লিজ নি‌য়ে আসো। সত্তর হাজার টাকার ল্যাপটপ। আর গত বছর থে‌কে যাবত মা‌নে গত এক বছ‌রে ইরফান তোমার পিছ‌নে ছয় লক্ষ নব্বই হাজার টাকা ব্যয় ক‌রে‌ছে। হয়তো এর চে‌য়ে বে‌শি। কিন্তু ইরফান আমা‌কে এতটারই হিসাব দি‌য়ে‌ছে।

যাক সব কিছু তো হিসাব করে চ‌লে না। আমি ইরফা‌নের হিসাব মে‌নে বা‌কিটা ছে‌ড়ে দিলাম। এই ছয় লক্ষ নব্বই হাজার টাকা দুই মা‌সের ম‌ধ্যে তু‌মি আমা‌কে ফেরত দি‌বে। বা‌কি যে টাকার হিসাব পাই‌নি সে টাকা তো‌মা‌কে ভিক্ষা দিলাম। এক মি‌নিট। তোমা‌কে পু‌রো টাকাটা দি‌তে হ‌বে না। তুমি আমা‌কে ছয় লক্ষ দি‌বে। বা‌কি যে টাকার হিসাব পাই‌নি এবং সা‌থে নব্বই হাজার টাকা তোমার রেট। আমার স্বামী‌কে যে বিছ‌ানায় সুখ দি‌য়ে‌ছো তার রেট। আমার টাকাটা যত জল‌দি পা‌রো ফেরত দি‌বে। নয়‌তো তোমার আর ইরফা‌নের যে ভি‌ডিওগুলা আছে সেগু‌লো ডার্কওয়ে‌বে বি‌ক্রি কর‌লে এর চে‌য়ে বে‌শি টাকা পাব আমি। এখন তু‌মি ইরফা‌নের না‌মে রেপ কেস, মামলা ফামলা যা খুশি কর‌তে পা‌রো। ঐ কুকুরটাকে নি‌য়ে আমার কো‌নো মাথা ব্যথা নেই। কই যাও ল্যাপটপটা নিয়ে আসো?’

‌সি‌ন্থিয়া, জবার কথা, ক‌ণ্ঠের শীতলতা শু‌নে এতটাই হতভম্ব যে কী বল‌বে সেটাই ভে‌বে পা‌চ্ছে না। ধরা ক‌ণ্ঠে বলল,
‘গতকাল অামার ল্যাপটপটাও চু‌রি হ‌য়ে গে‌ছে।’
জবা হে‌সে বলল,
‘‌নো প্রোব‌লেম। তু‌মি ল্যাপটপটার দাম দি‌য়ে দিও। তো তু‌মি আমা‌কে মোট টাকা দি‌বে ছয় লক্ষ সত্তর হাজার।’

জবা হক সা‌হে‌বের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, ‘আপ‌নি খুব ভা‌লো মানুষ। আপনার সম্প‌র্কে সব খোঁজ নি‌য়ে‌ছি। আপনার বড় মে‌য়ে‌টিও চমৎকার মানুষ। ত‌বে ছোটো মে‌য়ে‌টি প‌তিতা হ‌লো কীভা‌বে? না‌কি ছো‌টো ব‌লে আদর দি‌য়ে সবসময় মাথায় তু‌লে রে‌খে‌ছি‌লেন। কথাগু‌লো আমি বাই‌রে বল‌তে পারতাম, চিৎকার চেঁচা‌মে‌চি কর‌তে পারতাম। কিন্তু তা‌তে আপনার এবং আমার দুই প‌রিবা‌রেরই মানহা‌নি হ‌তো। আপ‌নি এবার ভে‌বে দেখুন মে‌য়ে‌কে কী কর‌বেন? আর আপনার মে‌য়ে ভাবুক কী ক‌রে আমার টাকা শোধ দি‌বে। আমি আর কথা বলব না। চললাম।’

জবা যেমন নিঃশ‌ব্দে এসে‌ছিল, শীতল ক‌ণ্ঠে কথাগু‌লো ব‌লে তেমন নিঃশ‌ব্দেই চ‌লে গেল।
জবার কথায় সবাই এতটা হতভম্ব যে ওর কথার পি‌ঠে কেউ কিছুই বল‌তে পারল না। সবাই হতভম্ব হ‌য়ে যার যার স্থা‌নেই ব‌সে রইল।

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।
এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে….