অভিনয় পর্ব-১২+১৩ এবং শেষ পর্ব

0
359

#অভিনয়
#পর্ব_১২_১৩_last_part_included
#মুমতাহিনা_তারিন

রিপা সারা বিকেল ধরে ঘুমিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ চোখ খুললো । বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে । ওর বড় খালার যা ফাটানো গলা ঘরের ফ্যানের ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ ভেদ করে অবলীলায় কানে ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। এই অসহ্য মহিলাকে কিভাবে তার সাদাসিধে খালু হ্যান্ডেল করে কে জানে!

বসার ঘরে বেসিন আর বাথরুম সারা বাড়িতে শুধু গেস্ট রুমে আর শাওনের ঘরে এটাচড বাথরুম আছে । ঘুম থেকে উঠলেই ওর কেনো জানি এক পেয়ে যায় । গায়ে উড়না জড়িয়ে চোখ গুলো ঢলে পরিষ্কার করে বাইরে বেরোলে। বড়ো খালা কেনো বাড়ি আসলো পরে জানা যাবে এখন ওর একমাত্র কাজ এক করা🙂। টুক টুক করে এদিক ওদিক দেখে বাথরুমে ঢুকে গেলো রিপা যদি ও এইটা খুব সাভাবিক একটা বিষয় কিন্তু কেনো জানি কেউ আসলে ওর বাথরুমে যেতে খুব লজ্জা লাগে ।

এক করা শেষে বাইরে দাড়িয়ে বেসিনে মুখে পানি ছেটাচ্ছে রিপা । শাওনের মুখে চওড়া হাসি দেখে চোখ কুচকে গেলো রিপার । গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করলো-

” কিরে এমন ডিজে মার্কা হাসি দিচ্ছিস কেনো? কি ব্যাপার?”

” তোর ভাবি আসবে দুইদিন পর আর তুই দিন রাত এক করে ঘুমাচ্ছিস!! ”

” ভাবি আসবে মানে?কোন ভাবি !? ”

মুখে লাজুক লাজুক ভাবটা চাপা দিতে পারলো না শাওন । ইসস আর মাত্র একদিন পর ওর বিয়ে একটু লজ্জা না পেলে চলে!!

” তুই রঙ্গ চঙ্গো দেখাচ্ছিস কেনো রে?”

” তোর পারু ভাবি পার্মানেন্ট হবে আমাদের বাড়ি তাই ”

” কিহহ!!!!”

” হা বন্ধ কর নইলে গালে মাছি ঢুকে যাবে”

“কালকে তোর ভাবির জন্য শাড়ি গহনা কেনাকাটা করতে হবে রেডী থাকবি বুঝলি”

রিপা যেইখানে হা করে ছিল সেইখানে কিছুক্ষন হা করে রইলো । হঠাৎ কিভাবে কি হলো সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে রিপার । তাই দেরি না করে আম্মার ঘরে গেলো । তাহেরা বানুর সাথে বসে আছে বড়ো খালা নূরজাহান । গালের ভিতরে বড় একটা পান ঢুকিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে চাবাতে লাগলো ।ঠোঁটের দুই পাশের অংশ লালচে রং ধারণ করেছে । নিজের চুনের কৌটা থেকে একটা বোটা দিয়ে চুন দাতে লাগিয়ে চিবুতে চিবুতে বললো । মুখটায় দুখি দুখি ভাব ফুটিয়ে বললো –

” তাহেরা আমার যে ফুফু শাউড়ি আছে না । তার একটা মায়ে আছে মেলা সুন্দর কিন্ত একটু পড়াশুনা করে নি তেমন । ওইডা ছাড়া মায়েডা সুনার টুকরো বুঝলি ভাবিলাম আমাগে শাওনের সাথে বিয়ের কতা কবো তার আগেই তোর কল চলে গেলো ”

তাহেরা মুখে বিরক্তি খেলা করলো ।নুর জাহান যে ফুফু শাশুড়ির মেয়ে,, মোটা হাতি নড়তে চড়তে তার লাগে এক ঘন্টা তার থেকে হাজার গুনে পারু ঠিক আছে । তাও নিজের বোনের সান্ত্বনার সুরের সাথে তাল মিলিয়ে বিরস মুখ করলো ।

” কি করবো আপা বাবু পুরো পাগল । ছোটো বেলায় তো ভাবতাম ভাই বোন কিন্তু বড়ো হয়ে যে কি হয়ে গেল”

তাহেরার কথা শুনে রিপা আকাশ থেকে পড়লো । তার আম্মা যে ভালো মিথ্যে বানাই বানাই বটে পারে সেটা ও জানত । কিন্তু চোখে মুখে মিথ্যে এমন মিথ্যে বলতে পারে আজকে জানলো।

” আম্মা সত্যি ভাইয়ার বিয়ে নাকি ?”

” না আমার বিয়ে অসহ্য যা এইখান থেকে ”

মায়ের মুখের কথা শুনেই বুঝে গেলো ঘটনা তাহলে ঘটে গেছে । ইসস এখন মন চাচ্ছে পারু কে একটি জ্বালাতে কিন্তু কি আর করার রাত হয়ে গেছে । কালকে বিকেলে যাবে ভেবে নিজের ঘরে চলে গেল রিপা ।
___________________________

পারুর মাথায় হাজারো চিন্তা কিভাবে কি হবে ! শাওনেরর হাত টা কি ধরতে পারবে ও? যেখানে অন্য কেউ প্রথম স্পর্শ করেছিল।নিজেকে সব সময় পবিত্র রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে পারু । কোনো ছেলের সংস্পর্শে আসেনি কখনো। ও ভেবেছিল নিশ্চয় শাওন এভাবে চলবে কিন্তু সব ভাবনা কি বাস্তবে হয়? শাওনের বুকে অন্য কেউ প্রথম মাথা রেখেছে ,,,প্রথম বুকে মাথা রাখার যে শান্তি পারু অনুভব করতে চেয়েছিল সেটা আর সম্ভব না । যতই চেষ্টা করুক সেই ভালো লাগা আর কাজ করে না নিজের মধ্যে । মন চায় না ইচ্ছামত সাজতে ,,, প্রশংসা শুনতে।

রিপা ,তাহেরা আর শাওন এসেছে বিয়ের জন্য যা যা দরকার সব কিনতে। কালকে বিয়ে আজকে বিকেলে পারুদের বাড়ি পারুর বিয়ের সব কিছু পাঠাতে হবে । তাহেরা বেগম দেখে দেখে সব কমদামী জিনিস দেখছে । রিপা আর শাওন বিরক্ত হচ্ছে তাহেরার উপর কিন্তু কিছু বলতে পারছে না যতই হোক আম্মা।

শাওন পারুর জন্য সাদা একটা শাড়ি পছন্দ করেছে উপর দিয়ে বেগুনি আর গোলাপী রঙের ভারি কাজ করা । প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গিয়েছে শাওনের । রিপার অনেক ভালো লেগেছে শাড়িটা । শাওন সেলস ম্যান কে শাড়িটা প্যাক করে দিতে বললো ।

” দাড়া আগে দামটা তো শোন,,,বাবা দাম কত শাড়ীটার?”

” সাত হাজার টাকা খালা ”

দম শুনে তাহেরার মাথায় হাত এতো দামী শাড়ি কিনবে তাও আবার পারুর জন্য । তাহেরার মনে হচ্ছে পারুর জন্য শাওন দিন দিন তার অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে । যে ছেলে তার সব কথা মেনে চলত এখন কিছু বললে গায় লাগাই না । কত কান্নাকাটি করে ও পারুর সাথে ওর বিয়েটা আটকাতে পারল না ভেবে মনের ভিতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাহেরার ।আর তার ছেলে তার জন্য কিনেছে মাত্র দুই হাজার টাকার শাড়ি আর পারুর জন্য সাত হাজার!!! বিয়ের পরে পারুর হাতের ইশারায় শাওন নাচবে ভেবে বুক কেপে উঠে তাহেরার ।
– “এতো দাম !!!!! এইডা রাখ বাবা এই শাড়িটা আমরা নেবো না । একটু কম দামের মধ্যে দেখাও ”

” না ভাইয়া আপনি এইটাই প্যাক করেন ”

” বাবু এতো দামের শাড়ি পারু জীবনে চোখে দেখেছে বলে মনে হয় না ।ওর জন্য একটা কম দামী শাড়ি কেনায় ভালো ”

” আম্মা আমরা কি প্রতিদিন বিয়ে করবো? জীবনে একটা বিয়ে করবো একটু দামিতাই না হয় কিনলাম”

তাহেরা মুখটা ভার করে রইলো । সেলসম্যান শাড়ি প্যাক করে দিয়েছে । পারুর শাড়ির সাথে ম্যাচ করে জামা কিনেছে রিপা । সাবান থেকে শুরু করে পায়ের জুতো সহ সব কেনা শেষ । তনুজা আর সালাম মিয়ার জন্যও কাপড় কিনেছে শাওন ।ছোটো থেকে কত আদর যত্ন করেছে তারা শাওনকে ।
_________________________

পারুর দুই ফুফু এসেছে বাড়ি,, সাথে এসেছে সুমাইয়া আর সুরাইয়া ওরা সমবয়সী । সকালে তনুজা বেগমের কল পেয়ে আর দেরি করেন নি তারা । দুইমেয়ে জামাই নিয়ে দুপুর হতে হতে হাজির ।

বিকেলে সব কিছু পাঠিয়ে দিয়েছে পারু দের বাড়ি তাহেরা বানু । রিপা বর পক্ষের থেকে কনে পক্ষ বলে বেশি মনে হচ্ছে । উঠানে পাতি বিছিয়ে বসেছে সবাই । শাওনের পাঠানো মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে পারুর হাতে । রিপা তো হেসে কুটি কুটি হচ্ছে আর তার সাথে সুমাইয়া সুরাইয়া তো আছেই ।বাড়ির মহিলারা রান্না বান্নার দিকটা দেখছে । সালাম মিয়া সব বাজার করে এনেছে পাশের বাড়ির আওয়াল মোল্লার সাথে গিয়ে । তনুজা সব কেটে বেছে রাখছে।

পারুকে সুন্দর করে একটা হলুদ শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে পারু । গায় হলুদ হবে না তাই বলে কি শাড়ি পরা যাবে না । চুল গুলো সুন্দর করে বেনি করে দিয়েছে । প্রতিটা বেনিতে নিজেদের উঠানে থাকা বেলি ফুল গুঁজে দিয়েছে ।

শাওন ব্যালকনি তে দাড়িয়ে পারুর লজ্জা পাওয়া মুখটা উপভোগ করছিল । তখন আগমন হলো আকাশ আর মহিনের ।তারা বেজায় খুশি পারুর সাথে শাওনের বিয়ে হবে ভেবে । খুব বেশি মানুষকে দাওয়াত দেই নি শাওন শুধু এই দুইজন বন্ধু আর কিছু আত্মীয় ।

পারুর মনে লজ্জা ভয় অভিমানের মিশ্র একটা অনুভুতি হচ্ছে । মাঝে মাঝে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তো মাঝে মাঝে চোখের পানি ফেলছে । যখন ওর বিয়ে হচ্ছেই তখন আর অতীত ঘাটতে ইচ্ছা হচ্ছে না ওর । শাওনকে মাফ করে দিলে ও এই একটা ঘটনা অনেক কিছু শিখতে পেরেছে পারু কাছের মানুষ গুলোকে চিনতে এই একটা ঘটনায় যথেষ্ট ছিল ।অতীত ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করার মানে হয় না।তাই নিজের মনকে নিজে বুঝিয়েছে ওকে খুশি থাকতে হবে ।ওর ও ভালোবাসার অধিকার আছে ভালোবাসা পাওয়ার ও অধিকার আছে।

_______________________

ব্যাস্ততার মধ্যে থাকলে সময় খুব দ্রুগতিতে চলে যায় । আজকে পারুর বিয়ে রাতে সবার হাসি ঠাট্টার মধ্যে কিভাবে যে রাত টা পার হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারে নি পারু ।

তনুজা, রোখসানা আর মোহনা বেগম হাতে হাতে কাজ করছে ।একজন পেঁয়াজ কাটছে তো আরেকজন রাধছে। দুপুরের মধ্যেই শাওয়ানরা চলে আসবে তাই সবাই অনেক ব্যস্ত । সুমাইয়া পারুকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে । আসে পাশের মানুষজন উকি ঝুঁকি মারছে । গহনা গুলো আলতো হতে পরিয়ে দিচ্ছে সুমাইয়া । সুরাইয়া চুল বেঁধে দিচ্ছে । হালকা সাজানো হবে পারুকে শাওন রিপাকে বলে দিয়েছিলো কেমন সাজাতে হবে । রিপা আগে এসেই সব বলে বুঝিয়ে দিয়েছিলো ওদের সেই অনুযায়ী সাজানো হয়েছে ।

পারু ছোট্ট আয়নায় নিজেকে দেখে যেনো নিজের বিশ্বাস হচ্ছে না ওকে এত সুন্দর লাগতে পারে । ওর চাপা রংটা জন্যই যেনো বেশি সুন্দর লাগছে । সাদা শাড়িটা দেখিয়ে দিয়ে গত কালকে সব কিছু কেনা কত করতে গিয়ে কি কি করছে শাওন সব বলছে সবাইকে । হেসে লুটি পুটি খেয়েছিল সবাই আর পারু লজ্জায় মাথাটাই যেনো উচ করতে পারে নি ।

অন্যদিকে ,তাহেরা বানু সহ সবাই চলে এসেছে ছোটো খাটো একটা সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে উঠানে সেই ক্ষণে সবাই বসেছে । সালাম মিয়া আর পারুর দুই ফুফা তাদের অ্যাপায়নে ব্যস্ত ।

” শাওন রুমাল কই তোর? বর তো রুমাল দিয়ে দাঁত ঢাকে তুই ঢাকবি না?”

” আমার কি দাতে ময়লা? যে ঢাকতে হবে ?”

শাওন আকাশ আর মহিন এমন মজা করেই ব্যাস্ত।বিয়ের আর কিছুক্ষন বাকি বিয়ের পরেই সবাই খাওয়া দাওয়া করবে । কাজী এসে একটা চেয়ারে বসে রয়েছে চারপাশ হাসি আনন্দ মুখরিত। তাহেরা বানুর চুপসে যাওয়া মুখটায় ও হাসি খেলা করছে । কে জানে লোক দেখানো হাসি কিনা । এমন সময় কর্কশ শব্দ তুলে শাওনের ফোনটা বেজে উঠলো বিরক্ত মুখে ফোন টা রিসিভ করতেই ওইপাশে শোরগোলের শব্দের সাথে ভেসে আসলো নাহিনের কণ্ঠ –

” দোস্ত নয়নের অ্যাকসিডেন্ট হয়ছে । হাসপাতালে ভর্তি তোকে দেখতে চাচ্ছে তুই জলদি চলে আয় ”

এখন কি করবে শাওন!!
#অভিনয়
#পর্ব_১৩
#মুমতাহিনা_তারিন

নাহিনের ফোন কাটতে না কাটতেই নিধি রহমান কল দিল শাওনকে । বাধ ভাঙা কান্নায় ভেংগে পড়লো । নিজের মেয়ের এমন অবস্থায় পাগল প্রায় নিধী রহমান । শাওনের কাছে যত রকম আকুতি করার করলো যাতে এক্ষনি শাওন হাসপাতালে আসে।

ফোনের সব কোথায় শুনলো আকাশ আর মহিন ।দুইজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শাওনের কাধে হাত রাখলো।

” দেখ তোর এখন বিয়ে । নিধি তোর বান্ধবী হতে পারে কিন্তু পারু ,,পারু তোর হবু বউ এতো বছরের ভালোবাসা তুই যদি এখন চলে যাস তাহলে মেয়েটা আর কোনোদিন তোরে মেনে নিতে পারবে না। ”

” আমি আর পারুর বিশ্বাস ভাঙতে পারবো না । বিয়ে করে পারু কে সাথে নিয়ে যাবো দরকার হয় ।আমি চায় না পারু আমাকে আর ভুল বুঝুক ”

________________________

খুব সুন্দর ভাবেই পারু আর শাওনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে । শাওনের ফোনে বার বার কল দিচ্ছে ।

” পারু চল এক জায়গায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি উঠ”

” কেবল বিয়ে হলো এখন কই যাবো ? ”

পারুকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে হাত ধরে তনুজা সামনে গিয়ে অনুমতি নিলো । তাহেরা সহ আর সব আত্মীয় স্বজন খাওয়াই ব্যাস্ত। কোনো মতে ভিড় ঠেলে বাইরে রাস্তায় দাড়ালো । আকাশকে গাড়ি নিয়ে আসার কথা বলে দিয়েছিল শাওন । একটা সিএনজিতে দুইজন উঠে বসলো। শাওন পারুর হাত টা শক্ত করে ধরে রেখে আছে । প্রথম বার শাওন পারুকে স্পর্শ করলো বড়ো হওয়ার পর । শাওন মুখটা গম্ভীর করে বসে আছে । পারুর মন ছলাৎ ছলাৎ করছে আনন্দে।

হাসপাতালের সামনে গাড়িটা থামলো প্রায় ঘন্টা খানেক লেগেছে আসতে । হাসপাতাল পারুর মুখটা পাংশুটে হয়ে গেছে ।
” হাসপাতালে কেন আসলি? কারোর কিছু হয়েছে?”
“হুম নয়ন অ্যাকসিডেন্ট করেছে”
“ওহ”
পারুর খুশি খুশি মনটা মুহূর্তেই বিষাদের নদী প্রবাহিত হতে থাকলো। আজকে ওদের বিয়ে হলো আর আজকেই এমন হতে হলো । কত জল্পনা কল্পনা সাজিয়েছিল পারু এখন সব সে গুড়ে বালি । আল্লাহ কেন আমার সাথেই সব হয়? এই প্রশ্নটা মনে উদয় হলো পারুর । শাওন আবারও পারুর হাত টা শক্ত করে ধরলো । রাস্তার মানুষজন গোল গোল চোখে পারু আর শাওনের দিকে তাকাচ্ছে । সেই সব খেয়াল না করেই পারুকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকলো শাওন ।

___________

হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নিধি রহমান । নয়ন আপাতত সুস্থ আছে মারাত্মক কিছু ঘটেনি কেটে গেছে হাত পা আর কপালের কিছুটা অংশ তাই ব্লিডিং হয়েছে ।
শাওনকে আসতে দেখে হন্ত দ্বন্ত হয়ে নাহিন সামনে আসলো ইমরান একটু আগেই দরকারি কাজে বাইরে গিয়েছে।

” তুই এখন আসলি!যাক ভালো হয়েছে …..”

কথার মাঝে পারুকে দেখে অবাক হলো । বিয়ের সাজ দুইজনের এতো চিন্তার মধ্যে এইসব কিছু খেয়াল করে নি নাহিন। পারুকে দেখে সালাম দিলো । পারু মুখটা নিচু করে সালামের উত্তর দিলো ।

” কোথায় নয়ন? ”

” একশো নয় নম্বর রুমে আছে ”

“এখন অবস্থা কেমন?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি ”

” ঠিক আছে”

পারুকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলো শাওন। নয়নকে মিথ্যা আশা দিয়ে রাখতে চায় না শাওন । এই অবস্থায় শাওন আর পারুকে দেখলে হয়তো পানিক করবে । তাই পারুকে রুমের কিছুটা দূরে বসতে বললো।
” পারু আমাকে বিশ্বাস করিস তো?”

” হ্যাঁ করি”।

” তাহলে ভয় পাস না যা কিছুই হয়ে যাক আমি তোর থাকবো ইন শা আল্লাহ”

পারু উদাস নয়নে শাওনের চলে যাওয়া দেখছে। শাওনকে বিশ্বাস করে সেইটা ঠিক কিন্তু হারানোর ভয়টা যে খুব ভয়ংকর। জীবনে হারাতে হারাতে এই পর্যায়ে সে । চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো পারুর নয়নের সাথে শাওনকে দেখার তিক্ত অনুভূতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । অজানা ভয়ে কেপে উঠলো সমস্ত শরীর ।
_____________________

বিয়ের ছয় মাস পেরিয়ে গিয়েছে । পারুর সাথে শাওনের সম্পর্ক টক ঝাল মিষ্টির মত। কখনো রাগ অভিমান কখনো বয়ে যায় টর্নেডো কিন্তু দিন শেষে সব মিটমাট । তাহেরা বানু পারুকে অপদস্ত করার পায়তাড়া করে ও কোনো লাভ হয় না । শাওন রিপা দুইজন পারুর দলে বেচারা তাহেরা একা একা কত বকবে। রিপার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে তাদের দেখে বোঝার কায়দা নেই তারা ভাবি ননদ । দুইজন সারাদিন এ মাখা সে মাখা করে খাবে ,ফুলের গাছ লাগাবে, বিকেল হলে ঘুরতে বেরোবে । নয়ন সুস্থ সেদিনের পর থেকে নিজেকে সংযত করেছে সে । সবাই তার রূপ দেখে পাগল হবে এমন ধারণাটা যে কত ভুল সেইদিন অনুধাবন করতে পেরেছিল । শাওনের দ্বিতীয় বউ হতে ও রাজি হয়েছিল নয়ন কিন্তু শাওন আর কাউকে চায়না । একজনকে ভালোবেসে কূল পাইনা সেইখানে আরেকজন এসে যোগ হলে শাওন মরে যাবে । নয়নকে ওর আম্মু খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছে জোর করে ভালোবাসা হয় না ।

শাওন সুখের ভেলায় ভেসে যায় পারুর প্রাণোচ্ছল হাসি দেখে । এই একটা মানুষকে ভালোবেসে যেন ওর শান্তি হয়না । হাজারো সুন্দর রূপবতী মেয়ে দেখলেও এই শ্যাম রঙা মেয়েকে দেখে যে প্রশান্তি সেটা কোথাও নেই । ফুল, চাঁদ সব থেকে সুন্দর লাগে পারুর মুখ । গ্রামের লোক ,বন্ধুরা , অফিস কলিগরা তাকে বউ পাগল নামে চেনে । তিন ঘণ্টা পর পর পারুর সাথে কথা না বললে তার চলেই না । তাকে দেখে সবাই হেসে মজা নেই তাতে শাওনের কিছু যায় আসে না। সবাই তো শাসক হতে চাই আমি না হয় একটু শোষিত হলাম ,,,,,বউ পাগল হলাম।

সমাপ্ত