#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (৬)
হুযাইফা মাইশা
পরদিন সকাল। ইয়াভকিন উঠেছে খুব ভোরে। শুক্রবার বিধায় অফিসের তাড়া নেই। হাঁটা-হাঁটি শেষ করে ফ্ল্যাটে ফিরতেই সোফায় বসা পূর্ণতাকে দেখল। অগোছালো চুলে, কুঁচকানো কাপড়ে আর ঘুম লেপ্টানো মুখশ্রীতে তাকানোর পর দৃষ্টি ফেরাতে ব্যর্থ হলো। কিছু সময় যেতেই তার উপস্থিতি টের পেল পূর্ণতা। তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াল। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইয়াভকিন রুমে যেতে যেতে বলল,
‘ আজ বাড়ি যাবো। একটু পর বের হবো। নাহলে যেতে যেতে সময় লাগবে।’
পূর্ণতা মাথা দুলাল। লোকটার মত ঘনঘন বদল হয় কি করে!
নাশতা কোনোমতে খেয়ে বেরিয়ে পড়ল দুজনে। কাজলকে বলা হয়নি। বলতে অবশ্য মানা-ই করেছে ইয়াভকিন। বলে দিলে তিনি এটুকু সময়ের মধ্যে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধাবেন।
মাথা এলিয়ে দিয়েছে পূর্ণতা। ঠিক গাড়ির জানালার ধারে। শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ ছেড়ে গ্রামের দিকে রাস্তায় গাড়ি ঢুকেছে সবে। যেতে সময় লাগবে আরো। পূর্ণতা মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়েছে টের পায়নি। ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকুনিতে বারবার মাথা এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে। ইয়াভকিন হঠাৎ খেয়াল করল। গাড়ির গতি কমাল। মেঘ মিশ্রিত আকাশটা নজরে এলো তখনই। বৃষ্টি আসবে, বোঝাই যাচ্ছে। বৃষ্টির আগে পৌঁছাতে হবে। কাঁচা রাস্তা আছে কিছুটা। বৃষ্টি আসলে নির্ঘা’ত কাদা জমবে। ইয়াভকিন কিছুটা ঝুঁকল পূর্ণতার দিকে। ভ্রুদ্বয় মা’রাত্মক ভাবে কুঁচকে ডাকল,
‘ এই মেয়ে?’
পূর্ণতার কানে সে ডাক প্রবেশই করেনি। সে নিশ্চিন্তে গভীর ভাবে ঘুমোচ্ছে। মেয়েটা তো একটু আগেই ঘুম থেকে উঠল। এখন আবার ঘুমোচ্ছে কি করে?
তন্মধ্যে একহাত এগিয়ে গেল ইয়াভকিনের। সিট বেল্ট খুলে পূর্ণতাকে নিজের দিকটায় টেনে নিজেও সরলো ওদিকে কিছুটা। মেয়েটা মাথা এলিয়ে দিল ওর কাঁধে। চকিত নয়নে একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং এ ধ্যান দিল। এমন বিড়ম্বনায় আগে কখনো পড়েনি ও। মেয়েটা জেগে থাকলে নিশ্চিত এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ছাড়ত!
বাড়ির কিছুটা কাছে যেতেই ঝুমঝুম শব্দে বৃষ্টি নামলো। জানালা লাগিয়ে দিল ইয়াভকিন। গাড়ি থামিয়ে পূর্ণতাকে ডাকার চেষ্টা করল। নিচু কণ্ঠে ডাকায় হয়তো আবারও শুনেনি পূর্ণতা। ওর এতো আরামের ঘুমটা ভাঙ্গানোর ইচ্ছা হলোনা আর। আবারও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একদম বাড়ির সামনে থামলো। বারোটার উপর বাজে। বাড়ির গেট লাগানো। ভেতর থেকে দু’তলা বাড়িটার মাথা উঁকি দিচ্ছে। কয়েকবার হর্ন বাজাতেই দারোয়ান গেট খুলল। ভেতরে ঢুকে গাড়ি থামিয়ে তৎক্ষনাৎ পূর্ণতাকে ডাকল। বেশ জোরে জোরে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতেই পূর্ণতা খেয়াল করল সে ইয়াভকিনের এতো কাছে! ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখল, এটা কি আসলেই সত্যি! পরক্ষনে নত মস্তকে সোজা হয়ে বসলো। কি লজ্জাজনক ঘটনা! বেখেয়ালি ভাবে ঘুমালো কি করে ও!
আচমকা ছেলে আসার খবর পেয়ে কাজল ছুটতে ছুটতে এলেন। ছাতা-টাতা নিয়ে এগিয়ে গেলেন সঙ্গে। ঘরের দুয়ার অব্দি আর বৃষ্টি স্পর্শ করলোনা কাউকে। কাজল ওদের দেখেই বললেন,
‘ আসার আগে জানাবিনা?’
‘ নিজের বাড়িতে আসতে এতো জানানো লাগবে কেন?’
ইয়াভকিনের সেসব কথাবার্তাকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির তিন গিন্নি লাগলেন নতুন বউকে নিয়ে! সাথে যোগ দিল উনাদের ছেলে মেয়েরা। সোফায় বসিয়ে হরেক রকম খাবার হাজির করলেন কিছুক্ষণের মধ্যে। বউকে এক দিনও পাননি বিয়ের পর। উনার গুনধর ছেলের দোষে! নাহলে কি আর এমন আশ্চর্যজনক কান্ড ঘটতো!
ইয়াভকিন একনজর সেদিকে তাকাল। বিব্রত অথচ হাসি হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে পূর্ণতা। মেয়েটাকে বিব্রত অবস্থায় দেখে বাঁকা হেসে উঠে গেল উপরে। ইয়াদ তখন সিঁড়ির পাশে। চিৎকার চেঁচামিচি কিসের জন্য দেখতে নিচে নামছিল। সিঁড়ির পাশটায় এসে ভাইকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল। ইয়াভকিন বিরক্ত ভঙ্গিমার তাকিয়ে ধমকে উঠল,
‘ কি সমস্যা তোর?’
‘ তুমি আসায় এরা এভাবে চিৎকার করছে তবে?’
‘ আমি না, ও আসায়।’
থমথমে কণ্ঠে কথাটা বলে এক আঙ্গুল নিচ বরাবর সোফায় বসা পূর্ণতার দিকে তাক করল। পরপরই গটগট পায়ে নিজের রুমটার দিকে অগ্রসর হলো।
ইয়াসিন সাহেব ছিলেন দরকারি কাজে। সাথে উনার বড় আর ছোট ভাইও ছিলেন। তিনজনে দুপুর বেলা এসে ছেলে আর ছেলের বউকে পেয়ে হইহই করে উঠলেন। বাড়িতে জমজমাট কান্ড। ইয়াসিন সাহেব ধরে নিলেন, উনার ছেলের রাগ পড়ে গেছে। মনে মনে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেলেন।
ইয়াভকিনের রুমে পা টিপে টিপে ঢুকল পূর্ণতা। খালি ঘরটায় নজর বুলাল খুব সাবধানে। এক রুমে থেকেছে সেই একদিনই! বিয়ের রাতে! এরপরে তো দুজনে আলাদা।
পূর্ণতার পিছু পিছু একটু পর আসলেন কাজল। হাতে কয়েকটা কাতান আর জামদানী শাড়ি। চকচকে শাড়িগুলো ভীষণ দামী, বোঝাই যাচ্ছে। সেগুলোর উপর আবার কয়েকটা গয়নার বাক্স। আচমকা উনাকে প্রবেশ করতে দেখে পূর্ণতা চমকে উঠল বটে। উনি সেগুলো বিছানার উপর রেখে একেকটা পূর্ণতার উদ্দেশ্যে দেখাতে দেখাতে বললেন,
‘ এগুলো আমি কিনেছিলাম। ছেলের বউয়ের জন্য। তোমরা তো চলে গেলে খুব জলদি। এখন নাও, এগুলো তোমার। গয়নাগুলোর কয়েকটা তোমার দাদি শাশুড়ির। আর কয়েকটা আমার।’
বলতে বলতে নাকের দুল, কানের দুল আর হাতের বালা বের করলেন উনি। পূর্ণতাকে পাশে বসিয়ে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘ আজকে এসব পড়ে থাকো নাহয়?’
পূর্ণতা হেসে সায় দিল। কাজলের ডাক পড়ায় উনি বেরিয়ে গেলেন। পূর্ণতা দরজাটা ভিড়িয়ে রেখে হাতের বালা জোড়া খুলে রাখল। গোসল শেষে পড়বে। কাতান একটা শাড়ি শুধু বাইরে রেখে বাকিগুলো আলমারির একপাশে রাখল। তৎক্ষনাৎ ঢুকে পড়ল বাথরুমে।
ইয়াভকিন এতক্ষন ছিল ইয়াদের রুমে। ওর রুমে ওদের সব চাচাতো ভাইবোনরা বসা। ওরাই অবশ্য ইয়াভকিনকে টেনে নিয়ে গেছে। ইব্রাহিম সাহেব হচ্ছেন তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট। উনার এক মেয়ে, ইশরাত। আর সবার বড় হচ্ছেন ইমতিয়াজ সাহেব। উনার দুই ছেলে মেয়ে, ইরিন আর ইয়াজিদ। ইরিনের বিয়ে হয়েছে আগেই। বর্তমানে সে এক বাচ্চার জননী। ক’দিনের জন্য বেড়াতে এসেছিল। বয়সে কেবল ও-ই ইয়াভকিনের বড়। বাকি সব ছোট।
ইয়াভকিন রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিল। গোসল সেড়ে পূর্ণতা বের হলো তক্ষুনি। এলোমেলো আঁচল সামলে দু’কদম এগিয়ে আসতেই ইয়াভকিন তাকে দেখে তব্দা খেল। পরপরই তার অবস্থা দেখে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলো। তৎক্ষনাৎ শাড়ি ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো পূর্ণতা। আয়নার সামনে গিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় চুল মোছা শুরু করলো। বারান্দা হতে ফিরে এল ইয়াভকিন। একনজর পূর্ণতার দিকে তাকাল। মেয়েটা একদম নববধূর ন্যায় সেজে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা নীল রঙের কাতান শাড়ি। নাকে দুল, কানে দুল, হাতে বালা। না চাইতেও দৃষ্টি সরিয়ে বাথরুমে ঢুকল ও।
পূর্ণতা বের হতেই ইরিন, ইশরাত ছুটে এলো।
ইশরাত পূর্ণতাকে আপাদমস্তক দেখে নিল একবার। পরপরই মিষ্টি হেসে বলল,
‘ শাড়িটায় আপনাকে ভীষণ মানিয়েছে ভাবি!’
জবাবে কেবল হাসি উপহার দিল পূর্ণতা।
নিচে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইয়াভকিন নেমে এল। বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি কমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ণতা সদর দরজার পাশে থাকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। এই বৃষ্টির মধ্যে বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা কি করে বলবে!
দুপুরের খাবার খেয়ে গল্প জুড়ে দিলেন ইয়াসিন সাহেব। নিজের মেয়ের মতোই দেখেন পূর্ণতাকে। তাছাড়া এই বিয়ের আগ থেকেই উনার সাথে পূর্ণতার বেশ ভাব। মেয়েটাকে মনে ধরেছে তখনই। কি মিশুক মেয়েটা!
পূর্ণতা রুমে এসে গা এলিয়ে দিলো। গরম লাগছেনা তেমন। তবুও এসি ছাড়া রুমটায়। গ্রামের মধ্যে হলেও এ বাড়িটায় আধুনিকতার ছোঁয়া কোনো অংশে কম নেই। সেই সাথে আভিজাত্য! পুরো বাড়ির কোণায় কোণায় আছে তা।
ইয়াভকিন কোথায় জানেনা পূর্ণতা। আরামসে ঘুম দেয়ার উদ্দেশ্যে চোখ বন্ধ করল। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়েও গেলো। আজ এতো ঘুম পাচ্ছে কেন সে নিজেও জানেনা।
শেষ বিকেলের দিকে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সর্বপ্রথম নজর গেল উপরে ঝুঁকে থাকা ছায়ামূর্তিটার উপর। খানিকটা সময় চুপ থেকে নিজেকে শান্ত, স্থির করার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলো, তখনই সব অস্থিরতা, অশান্ত ভাব চিৎকার এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু তৎক্ষনাৎ ওর মুখে চেপে ধরায় চিৎকারটা গিলেই ফেলতে হলো।
পুরো রুমে আবছা আলো। বারান্দার দরজা লাগানো। জানালাগুলোয় বড় বড় পর্দা টানানো। আলো আসার সুযোগই নেই! মুখ চেপে ধরা হাতটায় প্রাণপণে কাম’ড় বসাল ও। মাথায় নেই যে ইয়াভকিনের রুমে ও ছাড়া কে-ই বা আসবে। ইয়াভকিন আর্ত’নাদ করার বদলে নিজের হাতে অন্য হাত চেপে ধ’ম’কে উঠল,
‘ বিচ্ছু মেয়ে, আমার হাত শেষ করে দিলে।’
‘ আপনি? ভূতের মতো এমন করে ছিলেন কেনো?’
‘ কেমন করে?’
‘ এতো কাছে!’
কথাটা বলেই ইতস্তত করে উঠল পূর্ণতা। ইয়াভকিন আরো ঝুঁকে এলো। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলল,
‘ কেনো? ভূত তোমার এতো কাছে আসে?’
ছি ছি করে উঠল পূর্ণতা। উঠে গিয়ে জানালার ধার থেকে পর্দা সরালো কিছুটা। হালকা আলোয় ঘর পরিষ্কার দেখা গেল এবার। বাইরে বৃষ্টি পরছে। অন্ধকার ঘিরে ধরা। ইয়াভকিন উঠে দাঁড়াল। মেয়েটা কি না শেষমেশ কা’ম’ড়ে দিলো! ওয়াশরুমে গিয়ে পানি দিয়ে আসলো হাতটায়। পূর্ণতা তখনও জানালার ধারে দাঁড়িয়ে। এলোমেলো চুলগুলো খোঁপা করেছিল বোধহয়। বর্তমানে সেগুলো পিঠে অগোছালো ভাবে পড়ে আছে। উন্মুক্ত ফর্সা কোমর দেখা যাচ্ছে। ইয়াভকিন দৃষ্টি সরিয়ে ঢোক গিলল। মেয়েটা যদি দেখে, ইয়াভকিন ওর দিকে এভাবে তাকাচ্ছে, কি করবে কে জানে। ইয়াভকিন নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাল। পারলনা। ব্যর্থ হলো। বারবার চোখ পূর্ণতার দিকেই যাচ্ছে। যা তাকে অস্থির করে তুলছে। ঠিক এই মূহুর্তেই নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর। কি কান্ড!
কিছুটা সরে এসে বিছানার উল্টো পাশে বসে ফোন হাতে নিলো। আজকে তো ফিরতে পারবেনা। কাল নাহয় যাবে। ম্যানেজারকে বলে রাখা উচিত। দরজায় টোকা পড়তেই ধ্যান ভেঙ্গে গেলো দুইজনেরই। পা বাড়িয়ে দরজা খুলে দিলো ইয়াভকিন। কাজল ধীরে সুস্থে ঢুকে বললেন,
‘ শোন, বলছি কি..আজ তোরা থাকবি! কালকেও থাকবি। পরশুরটা জানিনা। পরশু বা এর পরের দিন যাবি। বুঝেছিস?’
‘ এসবের চক্করে আমার ব্যবসা যে লাটে উঠছে? আর কতো মা? অফিস একা সামলাতে হয় আমার।’
‘ তোর ম্যানেজার আছেনা? কি যেনো নাম, শাফায়াতকে বল। ছেলেটা সামলে নিতে পারবে। কয়টা দিনের ব্যাপারই তো। তাছাড়া বড় বউ বাপের বাড়ি যাবেনা? কিসব বলিস না তুই!’
বকবক করতে করতেই বেরিয়ে গেলেন উনি। বড় বউ কাকে বুঝালেন, বুঝতে সময় লাগলোনা পূর্ণতার। আসতে না আসতেই বড় বউয়ের তকমা পেয়ে গেলো! বাবার বাড়ির যাওয়ার কথা আর উচ্চারণ করতে হলোনা ওর। মনে মনে খুশির জোয়ার বইতে শুরু হলো তক্ষুনি।
পূর্ণতা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ইয়াভকিন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ কাপড় চোপড় ঠিক করে যাও।’
লজ্জায় আড়ষ্ট হলো পূর্ণতা। মেকি রাগ দেখিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে শাড়িটা ঠিক করে বেরিয়ে গেলো। কি লজ্জা!
_
রাতের বেলা। খাওয়া দাওয়া সবার শেষ। পূর্ণতা গুটিগুটি পায়ে রুমে এসেই ইয়াভকিনকে দেখল। ফোনে কি যেন করছে! রাজ্যের কাজ বোধহয় ফোনেই! বিরক্তিকর দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে গেলো বিছানায়। গা এলিয়ে দিবে এমন সময় ইয়াভকিন বলে উঠল,
‘ এভাবেই শুবে?’
‘ জ্বি?’ বড় বড় চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন রাখল পূর্ণতা।
‘ বলছি যে এই শাড়ি পড়েই ঘুমাবে? বিকালে যা অবস্থা হলো..’
থমথমে হলো মুখশ্রী। আলসেমি লাগলেও উঠে পড়ল পূর্ণতা। আলমারি হাতড়ে বেশ কিছুক্ষন পর সুতি শাড়ি নিয়ে বাথরুমে গেলো। ঘুম যেন পড়েই যাচ্ছিল ও। তবুও কোনোমতে শাড়ি পালটে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ল। ঘুমের দেশে যেতে পারলোনা কিছুতেই। লাইট অন। কিভাবে ঘুমাবে? লোকটা সেই যে বসেছে, বসেই আছে। ওখানেই থাকবে নাকি? ঠিক বিয়ের রাতের মতো?
ভাবনার মধ্যেই লাইট অফ করে অন্যপাশটায় শুয়ে পড়ল ইয়াভকিন। অন্ধকারে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে পূর্ণতা আরও গুটিয়ে নিল নিজেকে। ঘুমিয়ে পড়ল কিছুসময়ে মাঝে। ইয়াভকিন তখনও জেগে। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর হতে। মেয়েটাকে নিয়ে আজকাল বেশি ভাবছে ও। ভাববে না-ই বা কেনো? মেয়েটা সর্বদা এমন রূপ নিয়ে ওর পাশে ঘুরঘুর করে। যেনো মাথার ভেতর গেঁ’থে রাখতে চায় নিজেকে! মেয়েটা কি অনিচ্ছাকৃতই এমন করে? নাকি ইচ্ছা করে? প্রশ্ন জাগলো ওর মনে। উত্তর না পেয়ে আপাতত সেই প্রশ্ন তুলে রাখল ও। একপাশ ফিরে নেত্রজোড়া বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা চালাল।
চলবে।