first love Part-27+28

0
925

first love…..
Samira Afrin Samia (nipa)
Part: 27+28

অফিসারঃ স্যার আপনি যে নাম্বার দিয়েছিলেন আমরা তার লোকেশন ট্যাগ করতে পেরেছি।

তানভীরঃ লোকেশনের এ্যাড্রেস টা আমাকে মেসেজ করে দেন।
(ফোন রেখে কার ড্রাইভ করতে লাগলাম)
সামিহার আমি আসছি। নাহিদ আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
আমার সামিহা কে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।

রাতে নাহিদ বিয়ের আয়োজন করে অনেক লোকদের নিয়ে রেডি হয়ে আছে।কাজী সাহেব বসে আছে বিয়ে পড়ানোর জন্য। বলতে গেলে নাহিদ কাজী সাহেবকে এক প্রকার ভয় দেখিয়ে আটকে রাখছে।

নাহিদঃ সামিহা সুইট র্হাট আর কিছুক্ষণ ওয়েট করো তোমার হাজবেন্ড আসলেই আমাদের বিয়ের কাজ শুরু হবে।

আমিঃ তোর এই আশা কোনো দিনই পূরণ হবে না। আমি তোর মতো সাইক্রো কে বিয়ে করবো না। আর তা ছাড়া আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার হাজবেন্ড আছে।উনি এসে আমাকে নিয়ে যাবেন তুই কিছুই করতে পারবি না।

তানভীরঃ লোকেশনের এ্যাড্রেস টায় এসে পৌঁছালাম। একটা পুরোনো গোডাউন মনে হয় অনেক দিন যাবৎ বন্ধ পড়ে আছে। ভিতরে গিয়ে দেখি সামিহা কে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখছে।এই দু’দিনে ওর কি অবস্থা হয়েছে। ওর মায়া মাখা মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে।চোখ ও ফুলে গেছে দেখেই মনে হয় অনেক কান্না করছে।

নাহিদঃ দেখ কে আসছে। আরে অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর তোরা। আমার জানের হাজবেন্ডের আপ্যায়নে যেন একটু ও কমতি না থাকে।

(কয়েক জন তানভীরের দিকে ছুটে গেল তানভীর কে মারার জন্য। তানভীর ও ফ্লিমের হিরোর মতো এক এক করে সবাইকে মেরে তক্তা বানাচ্ছে। সাঙ্গপাঙ্গ গুলোকে মারার পর নাহিদ এন্টি নিলো।তানভীর নাহিদকে ও সেই মার মারছে। অবশেষে নাহিদ পিছন থেকে তানভীরের মাথায় আঘাত করলো যার ফলে তানভীর নিচে উপুড় হয়ে পড়ে গেল)

কি হলো মি.তানভীর চৌধুরী ওঠো। আমার সাথে ফাইট করে তোমার ওয়াইফ কে নিয়ে যাবে না?
সামিহা সুইট র্হাট খুব তো বলছিলে তোমার হাজবেন্ড এসে তোমাকে আমার থেকে নিয়ে যাবে।

আমিঃ সাহস থাকলে সামনে থেকে ফাইট কর। পিছন থেকে ভীতুর মতো আঘাত করলি কেন। তুই আমার হাত খুলে দে আমি তোকে খুন করবো।

নাহিদঃ কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করুন।

আমিঃ আমি বেঁচে থাকতে কোনো দিনও তোকে বিয়ে করবো না।
কি হলো আপনার। আপনি তো বলছিলেন আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবেন।

নাহিদঃ (সামিহার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে) তোমার হাজবেন্ড কে শেষ বারের মত দেখে নেও জান।এর পর আর কোনো দিন ও দেখতে পারবে না। তোমাকে সারা জীবন আমার সাথেই থাকতে হবে।

আমিঃ( হাত খুলে দেওয়ার সাথে সাথে দৌড়ে উনার কাছে গিয়ে)
উঠুন না। এভাবে শুয়ে আছেন কেন। উঠুন বলছি। আপনার কিছু হতে পারে না। আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। আপনাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো। আপনার কিছু হলে যে আমি বাঁচব না।
প্লিজ উঠুন।

নাহিদঃ অনেক হয়েছে এখন আসো।(সামিহার হাত ধরে নিয়ে আসার সময়)

তানভীর নাহিদের হাত ধরে ওকে এক ঘুসি দিয়ে উপুড় করে ফেলে দিল।নাহিদের র্শাটের কলার ধরে নিচ থেকে তুলে এলোপাথাড়ি ঘুসি দিতে লাগলো। মনে হয় আজ নাহিদ কে মেরেই ফেলবে।

তানভীরঃ তোর সাহস হয় কি করে আমার ওয়াইফ কে র্টাস করার। আমি তোর হাত ছিড়ে ফেলবো। তুই আমার ওয়াইফ কে অনেক কষ্ট দিয়ছিস।

আমিঃ ওকে একদম ছাড়বেন না। ও আমার থেকে আলিফকে দূরে সরিয়ে দিছে।ও আলিফের এক্সিডেন্ট করিয়েছে।ঐদিন আপনার এক্সিডেন্ট ও নাহিদ ই করিয়েছে। ও একটা পাগল উন্মাদ।।

তানভীরঃ তোর মত জানোয়ারের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ভালোবাসা কখনো কারো জীবন নিতে শিখায় না। ভালোবাসা তো জীবন দিতে শিখায়।তুই তো পশুর থেকে ও নিকৃষ্ট। আলিফের তো তোর সাথে কোনো শত্রুতা ছিল না। আলিফ তো তোকে চিনতই না। তাহলে কেন ওর জীবন নিলি।ভালোবাসার মনে কি তুই জানিস।তোর কাছে তো ভালোবাসা মানে নিজের করে পাওয়া। আজ তোকে মেরেই ফেলবো।

(চিরকালের মত পুলিশ আজ ও লেইট করেই আসলো।সব কাহিনী শেষ হয়ে গেলে পুলিশের এন্টি হয়।এখানে ও তাই হলো)

অফিসারঃ মি.তানভীর আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। ওর মতো মানুষ রুপি পশুকে আইন সাজা দিবে।
পুলিশ নাহিদ সহ সবাইকে নিয়ে চলে গেল।

আমিঃ( উনার কাছে গিয়ে) মাথায় কি অনেক লাগছে?

তানভীরঃ( সামিহার দিকে তাকিয়ে) তোমার মতো পেত্নী ওয়াইফের জন্য এইটুকু কিছুই না।

আমিঃ (আজ উনার কথা শুনে রাগ হলাম না। হেসে দিয়ে)
আমি পেত্নী?

তানভীরঃ তুমি ঐদিন রাগ করে পার্টি থেকে বের হয়ে গেলে কেন?
ঐদিন আমার সাথে আসলে তো আর এতো কিছু হত না। তুমি ও কিডন্যাপ হতে না। আর আমাকে ও ফাইট করতে হতো না।
দেখো তো তোমার জন্য মাথায় কতটুকু লাগলো।

আমিঃ পার্টির কথা মনে হতেই উনার উপর আমার রাগ বেড়ে গেল। উনি তো আমাকে বিশ্বাসই করেন না। বিশ্বাস করলে আমাকে জিসান ভাইয়ার সাথে দেখে এতকিছু বলতো না। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা ও নেই। ( মনে মনে)

তানভীরঃ ঐ দিনের জন্য সরি সামিহা।আমি নেশার ঘোরে তোমাকে অনেক কিছু বলেছি।আমাকে হ্মমা করে দেও।জিসান আমাকে সব কিছু বলেছে। ঐ দিন আমি তোমাকে যা যা বলেছি তা আমি সেন্সে থেকে বলিনি। আমি ডিংক্স করেছিলাম আর তাই তোমাকে ঐ কথা গুলো বলছি। প্লিজ সামিহা তুমি আমাকে হ্মমা করে দেও।

আমিঃ ডিংক্স করলে নাকি মানুষের মনে কথা মুখে এসে যায়।আপনি ও ঐ দিন আপনার মনের কথা গুলো বলে দিছেন। যাকে ভালোবাসেন তাকে তো একটু বিশ্বাস করতে পারতেন। ভালোবাসায় বিশ্বাস না থাকলে ওটা কে ভালোবাসাই বলে না।
চলুন বাসায় যাবো।
আমার অনেক খুদা লাগছে। দু’দিন ধরে কি খেয়েছি কিছুই মনে নাই।

তানভীরঃ চলো মামনি তোমার জন্য ওয়েট করছে। তোমাকে নিয়ে অনেক টেনশন করছে এ কয়দিন।

আমি আগে আগে গিয়ে কারে বসলাম। উনি ও আমার পিছন পিছন এসে কারে বসে কার ড্রাইভ করতে লাগলেন। কেউই কোনো কথা বলছি না। আমি কারের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি উনি মাঝে মাঝে আমার দিকে দেখছেন। উনি কিছু একটা বলতে চেয়ে ও বলছেন না।আমি ও আর জিঙ্গেস করিনি উনি কিছু বলবেন কি না।

অনেকক্ষণ কারে বসে থাকার পর….

আমিঃ এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

তানভীরঃ বাসায় যাচ্ছি। আমার বাসা তো এ দিকেই।

আমিঃ আমি আমার বাসায় যাবো। আমাকে আমার বাবাইয়ের কাছে দিয়ে যান।

তানভীরঃ সামিহা কি এখন ও আমার উপর রেগে আছে?
রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। ওর কোনো দোষ ছিল না। অথচ ওকে আমি কত কথা শুনিয়েছি।
তুমি কি আমাকে হ্মমা করতে পারবে না। তুমি আর কখনও আমার বাসায় যাবে না?
তোমাকে কি করে আটকাবো।তোমার উপর তো আমার কোনো অধিকার নেই। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে কোন অধিকার নিয়ে তোমাকে আমি আমার কাছে রাখবো?
তুমি চলে গেলে আমি কি করে থাকবো।তোমাকে ছাড়া তো আমি এক মূহুর্ত ও থাকতে পারবো না।( মনে মনে….)

আমিঃ আমি বললাম আমাকে বাবার বাসায় দিয়ে আসতে আর উনি ও তাই করছেন। মনে হয় আমি উনার মাথায় বোঝা হয়ে আছি। আমি বললেই কি আমাকে দিয়ে আসতে হবে। ঐ দিন পার্টিতে কতকিছু বলেছে। আমি কি একটু রাগ ও করতে পারবো না। উনি কোথায় আমার রাগ ভাঙ্গাবেন আমাকে জোর করে উনার সাথে নিয়ে যাবেন। তা না করে আমাকে বাবাইয়ের কাছে রেখে আসতে যাচ্ছেন। এই হলো উনার ভালোবাসা। শুধু মুখেই বলে ভালোবাসে। কচু বাসে এসব ভালোবাসা না কচু। (মনে মনে….)

তানভীরঃ (সামিহাদের বাসার সামনে কার দাঁড় করিয়ে)
এসে গেছি নামো।।।

আমিঃ (উনার দিকে তাকিয়ে) কি মানুষ!!!!
আমাকে একবার ও বললো না যেতে হবে না। আমার রাগ ভাঙ্গাবে তো দূরের কথা। উল্টো আমাকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করার চেষ্টা করছেন। আমি ও… যতদিন না আপনি আমাকে যেতে বলবেন ততদিন আমি এখানেই থাকবো। আপনি না বললে তো আমি আপনার বাসায় কোনো দিন ও যাবো না।
কার থেকে নেমে আমি বাসার ভিতর চলে আসতে লাগলাম। উনাকে কিছুই বলিনি।

তানভীরঃ আমাকে একবার ও ভিতরে যাওয়ার কথা বললো না। আমার সাথে কোনো কথা ও বললো না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমার সাথে থাকতে চাও না। তুমি আমার সাথে থাকতে না চাইলে আমি তোমাকে জোর করে আটকে রাখবো না। (মনে মনে…..)
সামিহা…

আমিঃ ( উনি পিছন থেকে আমাকে ডাকলেন। আমি পিছন ফিরে তাকালাম। উনি কি আমাকে বাসায় যাওয়ার কথা বলবেন?)

তানভীরঃ ভালো থেকো।আর নিজের খেয়াল রেখ।

(আমি যদি আর এক মিনিট ও এখানে থাকি। তাহলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না।আমি সামিহা কে আমার থেকে দূরে যেতে দিতে পারবো না। তাই ওখান থেকে চলে আসলাম)

আমিঃ( অবাক হয়ে দাড়িয়ে উনার চলে যাওয়া দেখছি।একটা বার ও আমাকে বাসায় যাওয়ার কথা বললেন না। উনি একবার বললেও আমি উনার সাথে চলে যেতাম। উনি একবার বলতেন সামিহা তুমি যেও না)
আমি ভেতরে চলে আসলাম।

আম্মুঃ সামিহা কোথায় গেছিলি তুই। তানভীর এসে তোকে খুজে গেছে। এত রাতে কোথায় থেকে আসলি।আর তানভীর কোথায় ও আসেনি?

আমিঃ মামনির কোনো কথার উওর না দিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে গেলাম সাওয়ার নেওয়ার জন্য। ঝরনা ছেড়ে ঝরনার নিচে বসে কাঁদতে লাগলাম। চোখের পানি গুলো একটু ও বাঁধ মানছে না। আমার অবাধ্য হয়ে ঝরেই যাচ্ছে।
আমি কাঁদছি আর ভাবছি উনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বাসায় বললো না কেন। আমাকে এখানে রেখে গেল কেন?
উনি কি বুঝেন না আমি উনাকে ভালোবাসি। উনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না এটা কি উনি বুঝেন না।

তানভীর রুমে এসে রুমের সব কিছু ভাঙ্গতে লাগলো।

তানভীরঃ যাকে ভালোবাসি সে আমার ভালোবাসা বুঝলো না। সে আমার থেকে দূরে সরে গেছে। এতদিন এক সাথে থাকার পরও কি আমার জন্য ওর মনে একটু ও জায়গা তৈরি হয়নি।সামিহাকে ছাড়া আমি কি ভাবে থাকবো?

মামনিঃ (তানভীরের রুম থেকে কিসের আওয়াজ আসছিল। রুমে গিয়ে দেখি তানভীর রুমের সব কিছু ভেঙ্গে উলট পালট করে ফেলছে। কাচের টুকরো রুমের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আছে)

তানভীর কি করছিস এসব। রুমের কি অবস্থা করেছিস।কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেন?

তানভীরঃ মামনি আমার লাইফ ই উলট পালট হয়ে গেছে। রুম গুছানো থেকে কি হবে?

মামনিঃ কি হয়েছে তুই এসব কেন বলছিস?

তানভীরঃ মামনি সামিহা ওদের বাসায় চলে গেছে। ও আমার সাথে ফিরে আসেনি।
আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না মামনি।

মামনিঃ তুই এমন করিস না। আমি কালই সামিহা কে আনতে যাবো।

তানভীরঃ না মামনি। তুমি ওকে আনতে গেলে ও হয়ত চলে আসবে। ও আমাকে ভালোবেসে আমার সাথে নতুন করে ওর জীবন সাজাতে আসবে না।
সামিহা আমার সাথে থাকতে না চাইলে আমি ওকে জোর করে আমার কাছে আটকে রাখবো না।

আমিঃ বাসায় আসার পর রুম থেকে আর বের হয়নি। মামনির সাথে ও কোনো কথা বলিনি। রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

মামনিঃ কি হলো আমার মেয়েটার। ও বাড়ি থেকে আসার পর রুম থেকে বের হলো না। আমার সাথে কথাও বললো না। কিছু খেলো ও না।
আর ও একা চলে আসলো কেন তানভীর কোথায়। তানভীর ওর সাথে কেন আসলো না?

তানভীরঃ লাইফে কখনও নিজেকে এমন একা মনে হয়নি। সামিহা কে ছাড়া আমার জীবন শূন্য। ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না।

চলবে…….

First love…..
Samira Afrin Samia (nipa)
Part: 28

কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল এর মধ্যে সামিহার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। অনেক বার ওকে আনতে ওদের বাসায় গেছিলাম। কিন্তু বাহিরে থেকে ওকে দেখে চলে আসছি। ওর সামনে যায়নি। ওর তো আমাকে ভালোবাসে না। তাহলে কোন অধিকার নিয়ে আমি ওকে আনতে যাবো। কোন অধিকার নিয়ে ওর সামনে গিয়ে বলবো চলো আমার সাথে আমার বাসায়।

আমিঃ বেশ কিছু দিক কেটে গেল। উনি একবার ও আমাকে নিতে আসলেন না। নিতে আসছে না কিন্তু একবার তো ফোন করে আমি কেমন আছি তা জানার দরকার ছিল। আমি এসে গেছি এখন উনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। উনি তো এখন অনেক ভালোই আছেন মনে হয়। আমাকে একটু ও ভালোবাসে না। শুধু মুখেই যত বড় বড় কথা।

আঁখিঃ কিরে কোথায় ডুবে গেলি। কখন থেকে ডাকছি কানে কথা যায় না নাকি?

আমিঃ(আঁখির কথায় আমার খেয়াল হলো আমি ক্লাসে বসে ছিলাম। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা সবাই আমাকে ঘিরে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে দেখছে মনে হয় আমি যেন অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসছি)
কি হয়েছে তোদের এভাবে আমাকে কি দেখছিস?

স্বর্নাঃ কার ভাবনায় ডুবে ছিলি।সেই ত্রিশ মিনিট ধরে ডেকে যাচ্ছি কোনো কথাই তো কানে গেছে বলে মনে হয়না।

কনিকাঃ তানভীর ভাইয়ার ভাবনায় ডুবে গেছিল মনে হয়। তা এতই যখন মিস করিস তাহলে ভাইয়ার থেকে এভাবে দূরে সরে আছিস কেন।তুই ও কষ্ট পাচ্ছিস আর ভাইয়াকে ও কষ্ট দিচ্ছিস।শুধু শুধু কষ্ট না পেয়ে ভাইয়ার কাছে চলে গেলেই তো পারিস।

আমিঃ আমি কাউকে মিস করি না। যে আমাকে মনে রাখে না আমি ও তাকে মনে রাখি না। আমি নিজে থেকে কারো কাছে যাবো। যদি না কেউ আমাকে নিতে আসে।

জান্নাতঃ খুব তো বলিস মিস করিস না। তাহলে এভাবে মোড অফ হয়ে আছে কেন?

আমিঃ (ধুর এখানে থাকলে এরা আমার মাথা খেয়ে নিতে। এদের বকবক আর ভালো লাগে না। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।এই কয়েক দিন ধরে আমি কলেজে আসি। ওনার জন্য তো আমি আমার পড়াশুনা ছেড়ে দিতে পারবো না। আমি সারাক্ষণ উনার কথা ভাবলে কি হবে উনি তো আমার কথা একটু ও ভাবেন না। ভাবলে তো অতন্ত্য একটা ফোন দিত।কিন্তু উনি তা ও দেননি।
নিজে একা একা বকবক করতে করতে বারান্দা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। হঠাৎ করে সামনে একজন কে দেখে আমি আমার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না)

উনি কলেজে কি করতে আসছেন। আর উনার সাথে ঐ মিনি স্কার্ট শাঁকচুন্নি টা কে?
মেয়েটা উনার সাথে সুপার গ্লোর মতো চিপকে আছে।হাসতে হাসতে তো দেখি আমার দিকেই আসছে।

রিয়াঃ তানভীর ও কি সামিহা। (আমাকে দেখিয়ে কথাটা বললো)

তানভীরঃ হুম ও ই সামিহা।

রিয়াঃ হাই সামিহা আমি রিয়া।তোমার হাজবেন্ডের
গার্লফ্রেন্ড।

তানভীরঃ রিয়ার কথা শুনে রেগে ওর দিকে তাকালাম। সব সময় মজা করে।

রিয়াঃ (তানভীর যে ভাবে তাকালো)
ওহহ সরি সরি আমি তোমার হাজবেন্ডের গার্লফ্রেন্ড না। তোমার হাজবেন্ড আমার বয়ফ্রেন্ড।
আমি ওকে আমার বয়ফ্রেন্ড ভাবলে ও। তানভীর আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ডই ভাবে। একভাবে যে তোমার হাজবেন্ড কে পটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হলো না।

আমিঃ মিনি স্কার্ট শাঁকচুন্নিটা পাগল নাকি। আমি কি ওকে এসব কিছু জিঙ্গেস করছি।নিজে থেকেই বকবক করে যাচ্ছে। (মনে মনে)

রিয়াঃ আমি আর তানভীর লন্ডনে এক সাথেই ছিলাম। কয়েক দিন হলো দেশে আসছি।

আমিঃ ওহহ তাই তো বলি। উনি এই শাঁকচুন্নি কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।
(যে ভাবে উনাকে ধরে রাখছে। আমার তো শাঁকচুন্নি টাকে গিলে খেতে ইচ্ছে করছে)
শাঁকচুন্নি আমার হাজবেন্ড কে ছাড় বলছি তা না হলে তোর চুল একটা ও মাথায় থাকবে না। (মনে মনে)

রিয়াঃ কি হলো কিছু বলছো না কেন। তানভীর তো বলছিল তুমি নাকি অনেক কথা বলো।সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকো।কথা না বললে নাকি তোমার পেটের ভাত হজম হয় না।
তাহলে এখন কি হলো আমার সাথে কথা বলবে না।হিংসে হচ্ছে নাকি। (হাসতে হাসতে)

তানভীরঃ আহ্ রিয়া কি হচ্ছে। এত কথা না বলে যে কাজে আসছ তা করো।

আমিঃ শাঁকচুন্নি তুই আমার হাজবেন্ডের সাথে চিপকে থাকবি আর আমার হিংসে হবে না। (মনে মনে)

আমি কোনো সময়ই বেশি কথা বলি না। দরকার ছাড়া বেশি কথা বলি না। আর হিংসে হবে কেন। আপাকে হিংসে হবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।

(কথা গুলো উনার দিকে তাকিয়ে রিয়াকে বললাম। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। একেতো উনার হাতটা এভাবে ধরে রাখছে। তার উপর আবার আমাকে জিঙ্গেস করে আমার হিংসে হচ্ছে কি না)

রিয়াঃ তোমার কি মোড অফ। এমন ভাবে কথা বলছো কেন?
যাই হোক যার জন্য আসছি। কাল তানভীরের বার্থডে বাসায় পার্টি রাখা হয়েছে। তুমি ওর ওয়াইফ তোমাকে তো আসতেই হবে।

আমিঃ কাল উনার বার্থডে আমি তা জানি না।( মনে মনে)
আমি কাল বার্থডে পার্টিতে গেলে উনার ভালো লাগবে না। আর তা ছাড়া উনার বার্থডে পার্টিতে গিয়ে আমি কি করবো। আমি সব সময় বেশি কথা বলি। অনেকে তো আমাকে একটু ও পছন্দ করে না।

তানভীরঃ ওর বেশি কথা বলে। একথা রিয়ার কাছে বলেছি বলে এতো রাগ দেখাচ্ছে। এতদিন পর সামিহার সাথে দেখা হলো। এখন ও সামিহা আমার সাথে ভালো করে কথা বলছে না।আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছে।( মনে মনে)

মামনি বলেছিল তোমাকে বলতে। তাই তোমাকে কাল পার্টিতে যেতে বলেছি।ইচ্ছে হলে আসবে না হলে নাই। এত কাহিনী করার কোনো প্রয়োজন নেই। চলো রিয়া তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি অফিসে যাবো।

আমিঃ আমি কাহিনী করছি। উনি নিজের ওয়াইফের সামনে অন্য একটা মেয়ের সাথে চিপকে আছে হাসাহাসি করে কথা বলছে।
এটা কি কোনো কাহিনীর থেকে কম?(মনে মনে)

রিয়াঃ তানভীর তুমি যাও আমি আসছি।
(সামিহার কানের কাছে গিয়ে)
তোমাকে এভাবে জ্বলতে দেখে ভালোই লাগছে। কাল পার্টিতে এসো গো সতীন তোমার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে। এখন যাই কাল দেখা হবে। বাই সতীন।

আমিঃ কি বললো?
মিনি স্কার্ট শাঁকচুন্নি আমাকে সতীন বললো। আর কি সারপ্রাইজের কথা বলছিল। তুই আমার হাজবেন্ডের দিকে নজর দিলে তোর চোখ তুলে নিবো।
সতীন বললি তুই আমাকে। তোকে আমার সতীন বানালোর আগে আমি তোকে মাডার করবো।

এতো রাগ হচ্ছিল কি বলবো। বাসায় এসে সোজা রুমে চলে আসলাম। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলি।
আম্মু রাতে এসে বললো উনার বার্থডে উপলক্ষে কাল ও বাসায় যাবে। আমাকে ও যেতে বলছে।

আম্মুঃ তোর বাবাকে তানভীরের বাবা এসে বলে গেছে। আর তানভীর ও আসছিল।

আমিঃ বলে গেছে দেখেই যেতে হবে নাকি?
আমি ঐ বাড়িতে যাবো না।

আম্মুঃ তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে। ছেলেটা বাসায় এসে বলে গেছে।

আমিঃ আম্মুর দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি গুলো কে আর আটকে রাখতে পারলাম না। আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

আম্মুঃ আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন?
আমি জানি না তোর আর তানভীরের মাঝে ঠিক কি হয়েছে। কিন্তু ও বাড়ি তোর নিজের বাড়ি। কেন যাবি না তুই ও বাড়িতে?
দেখ মা বিয়ের পর মেয়েদের আসল ঠিকানা ওর স্বামীর বাড়ি। স্বামীর সাথে ঝগড়া হতেই পারে তাই বলে কি অভিমান করে দূরে সরে আসবি।
আমি এতটুকু বুঝতে পারছি তোদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে।
তানভীর কে ভুল বুঝে বেশি দিন দূরে সরে থাকিস না মা। তাহলে যে তোদের মাঝে দূরত্বটা আরও বেড়ে যাবে। আর দূরত্ব বেড়ে গেলে খুব সহজেই তৃতীয় কোনো ব্যক্তি তোদের মাঝে এসে যেতে পারে। অনেক সম্পর্ক একটা ভুলের জন্য ভেঙ্গে যায়।যা হয়েছে সব ভুলে তুই তানভীরের কাছে ফিরে যা। তানভীর তোকে অনেক ভালোবাসে।আমি তোর মা আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি। তুই কাল ও বাড়িতে ফিরে যা।তোর সংসার তুই নিজে বুঝে নে।তোর সংসার অন্য কারো হাতে তুলে দিস না।

আমিঃ( আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গেল) আমি বেডে বসে ভাবছি সত্যিই তো। আমি তো উনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।উনার উপর অভিমান করে দূরে সরে আছি। হয়ত উনি ও আমার উপর অভিমান করে আছেন। আমাদের মাঝে অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে।
তাই বলে কি আমি আমার সংসার ছেড়ে উনাকে ছেড়ে চলে আসবো। আমাদের মান অভিমানের সুযোগ নিয়ে ঐ রিয়াটা আমাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে এসে গেছে।
ওই শাঁকচুন্নিটা আমার থেকে আমার স্বামী সংসার কেড়ে নেওয়ার আগে আমাকে ও বাড়িতে যেতে হবে। আমি কালই ও বাড়িতে যাবো। এখন তো ঐ টায় আমার নিজের বাড়ি। আমি আমার সংসার ছেড়ে এতো দিন এখানে আছি। কাল সকালেই আমি ও বাড়িতে যাবো।

তানভীরঃ রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। সামিহা কাল আসবে তো। রিয়ার সাথে আমাকে দেখে সামিহা কিছুই বললো না। ও কি তাহলে আমাকে ভালোবাসে না।

আমিঃ রাত কখন শেষ হবে?
আজ রাত এতো লম্বা হয়ে গেল কেন। না জানি ঐ শাঁকচুন্নি আমার ভোলা-বালা হাজবেন্ডের সাথে কি করছে।

সকালে…..

তানভীরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি সামিহা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সামিহা এখানে কি করে। আমি কি কোনো স্বপ্ন দেখছি?

আমিঃ মামনি তোমার হাতে জাদু আছে। এতো ভালো রান্না কি করে করো।
আমাকে শিখাবে?
আমি রান্না করতে শিখে নিলে তোমার আর এতো কষ্ট করে রান্না করতে হবে না।

মামনিঃ চুপ করে আগে খেয়েনে তো। খাওয়ার সময় এত কথা বলতে হয় না। দেখ কতো কাজ পড়ে আছে। সব কাজ কিন্তু তোকেই করতে হবে।

আমিঃ হুম তা তো করবোই। মামনি তুহি কোথায় আর বাবা ই বা কোথায়?
কাউকেই তো দেখলাম না।

আম্মুঃ এসেই খেতে বসে গেলে দেখবি কি করে?

আমিঃ তুমি তো দেখছই আমি বাসা থেকে খেয়ে আসিনি। খুদা লাগছে কি করবো।
(আম্মু আর মামনি কথা বলছে। আমি চুপচাপ বসে নিজের মত করে খেয়েই যাচ্ছি)

আম্মুঃ জানেন ভাবী আমার যে মেয়ে কোনো দিন ও সকাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠত না। আজ সে মেয়ে ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছে। আর উঠেই আপনাদের বাসায় আসার জন্য রেডি হতে শুরু করে দিছে।

মামনিঃ ও এতোদিন বাড়িতে ছিল না। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতো।
এতদিন কেউ নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকে?

আমিঃ আর থাকবো না মামনি।আমার সংসার ছেড়ে আমি আর কোথাও যাবো না।

তানভীরঃ আমি তো এসব দেখে অবাক। সামিহা বলছে এটা ওর সংসার। ও আর কোথাও যাবে না। আমি নিচে গিয়ে ডাইনিং এ একটা চেয়ার টেনে বসলাম। সামিহা মাথা তুলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার খেতে লাগলো।

আমিঃ (সেই কখন থেকে হাঁদা রামের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি কোন ভিন্ন গ্রহের প্রানী)
আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন।আমার সংসারে আমি আসছি এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

তানভীরঃ অবাক হয়নি তো। অবাক হবো কেন। তোমার সংসারে তুমি থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।

রিয়াঃ গুড মর্নিং তানভীর। হাই আন্টি।
সামিহা তুমি কখন আসছ?
(চেয়ার টেনে তানভীরের পাশে বসলো)

আমিঃ শাঁকচুন্নি টা আসতে না আসতেই আমার জামাইটার পাশে বসে গেল।শাঁকচুন্নি একদিন না একদিন তোর চুল গুলো আমিই ছিঁড়ব। (মনে মনে)

আমি তো কখনই আসছি। আপনি এখানে কেন। আপনার বাসায় যাননি?

রিয়াঃ ঢাকায় তো আমার চেনা জানা তেমন কেউ নেই। আমার বাবা মা ও লন্ডনে থাকে।অবশ্য ঢাকায় আমাদের বাসা আছে। কিন্তু আমি সেখান যাইনি।আমি তো এখানে তানভীরের বাসায় আসছি।

আমিঃ এখানে চেনা জানা কেউ নেই তাহলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসলি কেন শাঁকচুন্নি। ওখানেই কারো গলায় ঝুলে গেলি না কেন। এখানে আমার ভোলা-বালা জামাইয়ের গলায় ঝুলতে আসলি।(মনে মনে)
মামনি আমার খাওয়া শেষ আমি উঠলাম।

তানভীরঃ সামিহা কে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ও রিয়ার উপর কতটা জেলাস ফিল করছে। (মনে মনে)

চলবে………