#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৮
” ছেড়ে দিন না আমায়। ”
” সরি সোনা। এটা যে ইহকালে আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”
কণ্ঠে তখন দৃঢ়তা। চোখেমুখে আকুল আকাঙ্ক্ষা! দিনের কথা স্মরণ করেই আবেগী হয়ে পড়লো তৃষা। উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে মেয়েটি। বালিশে মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
” এমনটা করবেন না নিশাদ ভাইয়া। ভুলে যান সবটা। ”
ভুলে যেতে বলছে। তবুও কেন সিক্ত অক্ষিকোল। কেন হাহাকার অনুভূত হচ্ছে অন্তরে? যন্ত্রণা হচ্ছে অন্তঃস্থলে? জানা নেই।
•
দিবাবসুর দীপ্তিতে উজ্জ্বল বসুন্ধরা। লিভিং রুমে সোফায় বসে আনোয়ারা বেগম। কথা বলছেন বড় কন্যার সঙ্গে। তখনই সেথায় ছুটে এলো দুই রমণী।
” নানুমনি! ”
ওনার কোলে মাথা এলিয়ে দিলো দুয়া এবং তৃষা। দু’জনের অধরে খুশির ছাপ। উনিও মুচকি হেসে দু’জনের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিলেন।
” কেমন আছে আমার নানুভাইরা? ”
দুয়া নানুমনির হাতটা আঁকড়ে ধরে খুশিমনে বললো,
” আলহামদুলিল্লাহ্ খুউব ভালো আছি। তুমি কেমন আছো গো? ”
উনি হাসিমুখে বললেন,
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে আমার নানুভাই মনে হয় একটু বেশিই খুশি? কি ব্যাপার? বিয়ের ফুল ফুটেছে মনে? ”
র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো মায়াবী চেহারায়। আনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে ওর ললাটে চুমু এঁকে দিলেন।
” সুখী হও নানু। স্বামী, পরিবার নিয়ে আল্লাহ্’র রহমতে ভালো থাকো। ”
দুয়া নানুমনির কোলে মাথা রেখে শুলো। মৃদু স্বরে বললো,
” দোয়া করো নানুমনি। ”
এবার পাশ থেকে ফোঁড়ন কাটলো তৃষা।
” বলি আমি কি অদৃশ্য হয়ে গেছি? সামওয়ান পাত্তা মি প্লিজ।”
হেসে উঠলো সকলে। আনোয়ারা বেগম বললেন,
” তোমাকেও দোয়া করলাম নানু। শীঘ্রই এক রাজপুত্তুর এসে তোমাকে পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় করে নিয়ে যাক। ”
দুয়া দুষ্টুমি করে বললো,
” আর আপদ বিদায় হোক। ”
তৃষা ধপাধপ ওর পিঠে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিলো। নানুমনির উদ্দেশ্যে বললো,
” ও নানুমনি। দোয়া করলে ভালো করে করো। আদিম কালের দোয়া করছো কেন? এখন আর পঙ্খির যুগ নেই। আমার বর তো ফার্স্ট ক্লাস বাইক কিংবা বিএমডব্লিউ করে আসবে। ”
” জ্বি না। পায়ে হেঁটে আসবে। ” দুয়া মিটিমিটি হাসছে।
” দুয়া কি বাচ্চি! ” দাঁতে দাঁত চেপে রয়েছে তৃষা।
তাসলিমা মেয়ের কাঁধে চাপড়ে দিলেন।
” ভালো করে ডাক। ভাবী হয় তোর। ”
” উফ্ আম্মু। শুধু শুধু মা;রছো কেন? লাগে তো। ”
” লাগুক। ঠিক করে কথা বল। ”
” বলতাম না। ” মুখ ফুলিয়ে রেখেছে মেয়েটা।
দুয়া সশব্দে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আদুরে কণ্ঠে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো,
” লাগ কলে না বেপ্পি। ও লে আমাল বাবুতা। ”
না চাইতেও ফিক করে হেসে উঠলো তৃষা। ভাবিকে জড়িয়ে বললো,
” লাগ কলিনি তো। খুদু পেয়েছে আম্মা। ”
দুয়া ওর বাহুতে আঘাত করে বললো,
” নটাঙ্কি! আমাকে ডিরেক্ট মা বানিয়ে দিলি? ”
দাঁত কেলিয়ে হাসলো তৃষা। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
” তোকে তো আমি.. ”
ধাওয়া করলো দুয়া। হাসতে হাসতে ছুটলো তৃষা। সে দেখে হেসে উঠলেন মা-মেয়ে যুগল।
•
নিশুতি রাত। বিছানায় হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে তূর্ণ। ওর বক্ষদেশে মিশে মেয়েটি। নিভানো কক্ষের আলো। আঁধারে ঘনিষ্ঠ রূপে বসে দু’জনে। মেয়েটির পৃষ্ঠ ঠেকে স্বামীর বক্ষে। তূর্ণ’র পেশিবহুল দু হাতে বেষ্টিত মাইরা’র কটি। মেয়েটির দৃষ্টি নিবদ্ধ সম্মুখে। সমতল বৃহৎ আকৃতির স্মার্ট টিভিতে। দুয়া’র হাতে রিমোট। দুয়া একের পর এক চ্যানেল পরিবর্তন করছে। খুঁজে বেড়াচ্ছে পছন্দসই প্রোগ্ৰাম। কিন্তু পেছনে থাকা মানব? সে ব্যস্ত দুষ্টুমিতে। কখনো দীঘল কেশে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে টেনে নিচ্ছে মা.তাল করা সুবাস! কখনোবা আলতো স্পর্শে ডান কাঁধ হতে সরিয়ে দিচ্ছে কেশগুচ্ছ। উন্মুখ কাঁধে অঙ্কন করে চলেছে ওষ্ঠ পরশ। শিহরণে আবিষ্ট মেয়েটি নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে ব্যর্থ। বন্দী শক্তপোক্ত দু হাতের মধ্যিখানে। দুয়া শেষমেষ হাল ছেড়েই দিলো। মনযোগ দিলো টিভির পর্দায়। চ্যানেল পরিবর্তন করছিল হঠাৎ পেছন হতে বাঁধা এলো।
” অ্যাই! দাঁড়া দাঁড়া। ”
” হুঁ? ” চমকে উঠলো দুয়া!
” আরে আগের চ্যানেলটা দে। ”
” তা বলবে তো। শুধু শুধু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। অন্ধকারে এভাবে কেউ চেঁচায়? ভয় লাগে না বুঝি? ”
তূর্ণ দাঁত কেলিয়ে হাসলো। উদরে এক হাতে চাপ প্রয়োগ করে মৃদু স্বরে বললো,
” আমার বিবিজান তাহলে আমায় ভয় পায়? জানা ছিল না তো। ”
থতমত খেলো দুয়া। কি বলতে কি বলে ফেলেছে। সর্বনাশ। এ তো এখন থেকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে! কোনোমতে নিজেকে ধাতস্থ করে দুয়া বললো,
” ভ্ ভয়! কে ভয় পায়? অন্ধকারে ভুলভাল শুনছো নাকি? ”
” হা হা। আমি তো জানতাম পুতলা বলে একজন আমাকে বেশ ভয় পায়। পিচ্চি কালে দেখলেই পালাই পালাই করতো কিনা! ”
দুয়া আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে বললো,
” তখন আমি ছোট ছিলাম। শিশু। অমন লম্বা খুঁটি দেখলে যেকোনো বাচ্চাই ভয় পাবে। কিশোর তো নয় যেন স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। ”
তূর্ণ ওকে শক্ত রূপে আবদ্ধ করে বললো,
” ওরে পাকনি। সাহস বেড়ে গেছে তাই না! তূর্ণ ভাইয়াকে এখন আর ভয় হয় না? ”
” ভয় পাবো কেন? তুমি কি এখন শুধুই তূর্ণ ভাইয়া? নও তো। বর হও আমার। আর ইতিহাস সাক্ষী দেয় পুরুষ মানুষ যতই সিংহ কিংবা বাঘ হোক না কেন… বেলাশেষে বউয়ের কাছে ভেজা বেড়াল। বুঝলে? ”
অজান্তেই অস্ফুট স্বরে ম্যাঁও করে উঠলো তূর্ণ। নাকমুখ কুঁচকে বললো,
” বে*দ্দপ মাইয়া। জামাইরে শেষমেষ ম্যাঁও? আমার সোনাবাবুরা তোরে গা.লমন্দ করবে। পাপ লাগবে রে পাপ। ভালা হয়ে যা। ”
ভেংচি কাটলো দুয়া। পাত্তা দিলো না এসব ছাইপাশে। তূর্ণ বলে উঠলো,
” আমাকে নাকি ভয় পায় না। মনে পড়ে গত মাসের কথা? ভার্সিটির কাজে আমি বেশ ডিস্টার্বড্ ছিলাম। মন মেজাজ বিগড়ে ছিল। তাই অজান্তে তোকে ছোট্ট বকা দিয়েছিলাম। তাতেই বিবিজান নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদা। ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। দু’দিন তো চোখের দেখাই পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন গিয়ে কতগুলো চু মু ঘুষ দিয়ে মানাতে হয়েছিল। কি চতুর মেয়ে রে বাবা! চু মু চাই বললেই হয়। এজন্য এমন ভঙ ধরতে হয়? নট্টি গার্ল। ”
চোখমুখ নাচিয়ে শেষোক্ত কথাটা বললো তূর্ণ। দুয়া তো হতভম্ব-হতবাক! উদরে রাখা স্বামীর হাতে জোরসে চিমটি কেটে বললো,
” চাপাবাজ! তোমাকে তো চাপাবাজির জন্য নোবেল ছুঁড়ে দেয়া উচিত। কি পরিমান চাপা ছাড়লে! তোমার বুঝি পাপ লাগবে না? ”
ডান কপোলে ওষ্ঠ চেপে নেতিবাচক মাথা নাড়লো তূর্ণ। স্বামীর স্পর্শে শিউরে উঠলো মেয়েটি। আবেশে বুজে গেল অক্ষি পল্লব। অস্ফুট স্বরে বলল,
” কি করছো? ছাড়ো। ”
ছাড়লো না মানুষটি। বরং হাত বাড়িয়ে রিমোট নিয়ে বন্ধ করলো টিভি। আঁধারে নিমজ্জিত কক্ষে ঘন শ্বাসের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। সুগভীর ছোঁয়া অঙ্কিত হতে লাগলো কোমল কায়ায়।
•
তূর্ণয়া’র বিবাহ বলে কথা! ব্যস্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য। ছোট থেকে বড় সকলেই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শপিং, ইনভিটিশেন প্রদান, কাজকর্ম আগেভাগেই সম্পাদন, ওয়েডিং প্লানারের সঙ্গে যোগাযোগ, ক্যাটারিং ব্যবস্থা আরো কত কি। সমস্ত প্রস্তুতি শেষে এলো কাঙ্ক্ষিত দিন।
আদিত্য’র কিরণে আলোকিত বসুন্ধরা। বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে সফেদ এ/সি বাস। তূর্ণ, জাবির এবং রিশাদ সমস্ত লাগেজ বাসে তুলছে। পরিবারের বাকি সদস্যরা একে একে বাসে উঠে পড়েছে। গ্রহণ করেছে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন। খানিক বাদে তানজিনা জানালা গলিয়ে বাহিরে তাকালো। শুধালো,
” কি গো? তোমাদের হয়েছে? ভেতরে এসো। ড্রাইভার তাড়া দিচ্ছে। ”
ওর স্বামী রিশাদ জবাবে বললো,
” এই তো হয়ে গেছে। আসছি। ”
ওরা দ্রুত কর্ম সম্পাদন করে বাসে উঠে পড়লো। রিশাদ বসলো স্ত্রীর পাশে। জাবির জাহিনের পাশে। তূর্ণ আশপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে খুঁজে পেল কাঙ্ক্ষিত মানবীকে। অধর প্রসারিত হলো তার। তবে তা শীঘ্রই মিলিয়েও গেল। ব্যস্ত কদম ফেলে বাঁ পাশের চতুর্থ সিটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বোন এবং অর্ধাঙ্গী হা হা হি হি করতে ব্যস্ত। সে গলা খাঁকারি দিলো ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। সফল হলোও বটে। তৃষা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরে ভাইয়া? দাঁড়িয়ে কেন? গিয়ে বসো। বাস ছেড়ে দেবে তো। ”
” হাঁ সেটাই। ওঠ এবার। ”
” মানে? ”
” মানে টানে ছাড়। আমায় বসতে দে। ”
তৃষা দুয়া’র পানে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। দুষ্টু হেসে বললো,
” আমি তো বসে পড়েছি। তুমি অন্য সিটে বসো। ”
” অসম্ভব। বউ ছাড়া বসে জার্নিতে ব্লাড প্রেশার হাই করতে পারবো না। ”
তৃষা অবাক হয়ে বললো,
” ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে যাবে! কেন? ”
” কে বলতে পারে বাতাসে হয়তো আমার শুঁটকি বউটা ফুরুৎ করে উড়ে গেলে। তুইই বল বউ গেলে কি আর বউ আসবে? চিন্তায় চিন্তায় তো আমার দিশেহারা অবস্থা। শেষমেষ প্রেশার হাই হয়ে ফিট না খেয়ে বসি। ”
দুয়া গরম চোখে তাকালো। বেশরম পুরুষ কিসব উল্টোপাল্টা বলে চলেছে! এর মধ্যে কি লাজশরম এর
‘ ল ‘-ও নেই? তৃষা মিটিমিটি হাসছে। তখন ডান পাশের সামনের সিট হতে রিশাদ বলে উঠলো,
” শালি সাহেবা! সিটটা দ্রুত ছেড়ে দাও। শালা বাবু যেকোনো সময় চেতনা হারালো বলে। ”
তূর্ণ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সশব্দে হেসে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। ভাইকে নিজের যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়ে নিশি’র পাশে বসলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধপ করে সঙ্গিনীর পাশে আসন গ্রহণ করলো তূর্ণ। দুয়া কটমট করে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তাকালো বাহিরে। তূর্ণ বিড়বিড় করে সুরে সুরে বলতে লাগলো,
” রাগ করে না। লা লা লা লা। ”
.
ঢাকার ব্যস্ত সড়ক, যানবাহনের কোলাহল পেরিয়ে নীরবতায় অগ্রসর হচ্ছে বাস। জানালার ধারে বসে দুয়া। চক্ষু তার নিমীলিত। চোখেমুখে ছুঁয়ে যাচ্ছে শীতল পবন। পুলকিত হৃদয়ের অন্তঃস্থল। অধরে লেপ্টে খুশির ছোঁয়া। সে খুশিতে অংশীদার তূর্ণ। বিমুগ্ধ চাহনিতে পরখ করে চলেছে হালাল সঙ্গিনীকে। উচ্ছসিত হচ্ছে তার খুশিতে। চোখেমুখে অপার মুগ্ধতা বিরাজমান!
জাহিন নিজ আসনে বসে চিপস খাচ্ছে এবং বাইরের দৃশ্য দেখছে। কখনো কখনো এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে জাবির ভাইয়াকে। সে-ও খুশিমনে জবাব দিচ্ছে। তৃষা এবং নিশি তো পাশাপাশি বসে কত আলাপ করে চলেছে। ননস্টপ টকিং যারে বলে। সকলেই উপভোগ করছে এই ভ্রমণ। উত্তেজনা বিরাজ করছে শিরায় শিরায়।
.
তূর্ণ’র হাতে একটি কিটক্যাট চকোলেট। প্যাকেট ছিঁড়তে ছিঁড়তে কাউকে শুনিয়ে বলতে লাগলো,
” উম্! কিটক্যাট! বেশ ইয়াম্মি লাগছে! কেউ কি খাবে?”
প্রিয় চকোলেট এর নাম শুনেও সাড়া দিলো না দুয়া। তার ধ্যান জ্ঞান সবটাই বাহিরে। তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বউ ভালোই চেঁতিছে। এবার একে বাগে আনা মুশকিল। অন্তত সবার মাঝে। কেননা তার তো স্পেশাল আদুরে টোটকা রয়েছে। যা ব্যবহার করলেই সমস্ত রাগ অভিমান উধাও। তবে সবার মাঝে কি আর সেসব প্রয়োগ করা যায়? লজ্জা বলে কিছু আছে না? সে তো আর বেলাজ বেশরম নয়। সমস্যা নেই। একবার গন্তব্যে পৌঁছানো যাক। ওখানে আদরে সোহাগে মান অভিমান ভাঙানো যাবে। হুঁ। তাই আর বেশি ঘাঁটালো না সে। চুপচাপ ভ্রমণ উপভোগ করতে লাগলো।
কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হলো। অভিমানিনীর অভিমান আরো বৃদ্ধি পেলো। অর্ধাঙ্গের আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ছলছল করে উঠলো নেত্রজোড়া।
চলবে.
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৯
” হোয়াট! আর ইয়্যু গাইজ জোকিং? ”
” না আব্বা। আমরা ঠিকই বলছি। ”
হতবিহ্বল তূর্ণ! গণ্ডস্থল শুকিয়ে কাঠ। এসব কি বলছে তারা? এ যে অসম্ভব! হতেই পারে না। তূর্ণ শুকনো ঢোক গিলে অসহায় কণ্ঠে বললো,
” আম্মু। এমন বলো না। আমি, দুয়া.. না না। তোমরা একটু বোঝার চেষ্টা করো। ”
তাসলিমা দ্বিমত পোষণ করে বললেন,
” না আব্বা। বিয়ের আগ পর্যন্ত এটাই ফাইনাল কথা। ঠিক আছে? আশা করি আমার বুঝদার ছেলেটা বুঝবে। হুম? ”
মিটিমিটি হাসছে সকলে। শুধুমাত্র মলিন কপোত- কপোতীর বদন। তৃষা টুপ করে ভাবির হাতটা ধরলো। খুশিমনে অগ্রসর হতে লাগলো তাদের রুমের পানে। হাঁটার তালে পিছু ঘুরে তাকালো দুয়া। ম্লান দু জোড়া নয়ন মিলিত হলো। দু’জনের চোখেমুখেই বেদনার ছাপ! আকুলতা! তবে কিছু করার নেই। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেল দুয়া। পরবর্তীতে বাকিরাও প্রস্থান করলো নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে। রিসোর্টের রিসিপশনে একাকী রয়ে গেল তূর্ণ। দাঁতে দাঁত চেপে আওড়ালো,
” শিট! ”
.
বরাদ্দকৃত কক্ষের বিছানায় বসে দুয়া। সম্মুখে থাকা রমণী হাসতে হাসতে কুপোকাত। হাসির দমকে কথা আঁটকে যাচ্ছে।
” বেবি রে! ভাইয়া আমার শোকে দুঃখে বিয়ের আগেই দেবদাস। এখন টালমাটাল হয়ে ঘুরে না বেড়ায়। হা হা হা। ইতিহাস হয়ে যাবে রে। সাক্ষী রইবে এ গাজীপুর বাসী। ”
দুয়া সরু চোখে তাকালো। মৃদু স্বরে শুধালো,
” তুই আগে থেকেই জানতি? ”
তৃষা কোনোমতে হাসি থামাতে সক্ষম হলো। এগিয়ে এসে বসলো দুয়া’র ডান পার্শ্বে। ঘন শ্বাস ফেলে বললো,
” সে টুকটাক জানতাম। তবে আম্মু যে আজ এভাবে ক্লিন বোল্ড করে দেবে ভাবিনি। সত্যি। আম্মু পারেও বটে। ভাইয়ার মুখটা কিন্তু দেখার মতো হয়েছিল। ”
আফসোস প্রকাশ করে,
” আহা রে ভাই আমার! বিবাহ পর্যন্ত বউ ছাড়া একাকী রাত্রি যাপন করতে হবে। ইশ্! কাটেনা যে বেলা। একাকী একেলা। ভালোবাসায় এ কি জ্বালা! উঁহু হুঁ। ”
দুয়া তেঁতে উঠে ওর বাঁ বাহুতে আঘাত করলো।
” তুই থামবি? ”
” আহা গো? জামাইয়ের বিরহে দু ক্কু হচ্ছে? জামাই যাবে? ”
দুয়া আর’ক্ত মুখে মেকি বিরক্তি প্রকাশ করলো।
” অ্যাই থাম তো। এতটা পথ জার্নি করে এসেছি। আ’ম টায়ার্ড। ”
” আচ্ছা! ভাইজানের কাছে থাকলে ঠিক অ্যানার্জি বুস্টার পাইয়া যাইতা। তাই না? ” ভ্রু নাচিয়ে চলেছে তৃষা।
দুয়া কোনোমতে চেহারার লালিমা লুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললো,
” ফ্রেশ হয়ে আয়। একসাথে বের হবো। ”
নিঃশব্দে হাসতে লাগলো তৃষা। আহা রে! বিরহে কাতর দু’জনা! কি যে হবে এদের?
.
নিজস্ব কক্ষে লাগেজ হতে পোশাকআশাক বের করছেন তাসলিমা। বিছানায় বসে নিজাম সাহেব। উনি স্ত্রীর পানে তাকিয়ে বললেন,
” লিমা! ”
” হুঁ বলো। ”
” বলছি যে, ওদের দুজনকে তো আলাদা করে দিলে। কাজটা কি ঠিক হলো? আফটার অল বিয়ের আগ আগ মুহূর্ত। এসময়ে দু’জনে কাছাকাছি থাকবে। একে অপরকে জানবে। সুন্দর সময় কাটাবে। তুমি উল্টো আলাদা করে দিলে? ”
তাসলিমা হাসিমুখে স্বামীর দিকে তাকালেন। বললেন,
” কাছে থাকলে অপর পাশে থাকা মানুষটির মর্ম পুরোপুরি বোঝা যায় না। কখনো কখনো সাময়িক দূরত্বে ভালোবাসা আরো গাঢ় হয়। মজবুত হয়। আপাতত দু’জনে সাময়িক দূরত্বে থাকুক। ইনশাআল্লাহ্ বিয়ের পর সবটা উসুল হয়ে যাবে। দু’জনের ভালোবাসা আরো মজবুত হবে। ”
হেসে উঠলেন নিজাম সাহেব।
” এটা অবশ্য মন্দ বলোনি। তবে আমি চিনি তো তূর্ণ’কে। আমার ছেলে কিনা? ঠিক ইনিয়েবিনিয়ে বউ অবধি পৌঁছে যাবে। এত দূরত্ব মানবে না। ”
” ইশ্ থামবে তুমি? বাবা হয়ে কিসব বলছো? ছেলেটাও হয়েছে তোমার মতো। নির্লজ্জ। ”
নিজাম সাহেব অবাক হওয়ার ভান করে বললেন,
” কি বললে! আমি নির্লজ্জ? তুমি জানো সবাই আমাকে এক নামে লাজুক হিসেবে জানে। ”
তাসলিমা পোশাক গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললেন,
” হুহ্! চাপা। লোকে তো আর ঘরের খবর জানে না। বুঝবে কি করে তোমার লজ্জা আছে কি নেই। ”
” এমন করে বলো না মিসেস। বুকে লাগে গো। ”
বুকে হাত রেখে নাটুকে ভঙ্গিতে বললেন নিজাম সাহেব। তাসলিমা মৃদু লজ্জালু হেসে বললেন,
” বুড়ো বয়সে যতসব ভীমরতি! ”
শব্দ করে হেসে উঠলেন নিজাম সাহেব। তাসলিমাও নিঃশব্দে হাসলেন।
.
তমসায় আবৃত ধরিত্রী। হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে চারিদিকে। মৃদু পবনে নৃত্যরত বৃক্ষপত্র। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। দৃষ্টি নিবদ্ধ বাহিরে। বৃক্ষপত্রের নৃত্যে নিবদ্ধ আঁখি যুগল। মনে জমেছে তুলোর ন্যায় ঘন কালো মেঘ। এই আঁধার রজনীর ন্যায় সে কালো মেঘ। নিস্তব্ধতায় আচ্ছাদিত মানসলোক। চোখেমুখে উদাসীন ভাব। বিছানায় শুয়ে থাকা মানব মোবাইল স্ক্রল করতে করতে তা লক্ষ্য করলো। ডেকে উঠলো সহসা,
” ভাইয়া? ”
ধ্যান ভঙ্গ হলো। পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। অতঃপর বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,
” বল। ”
মিহাদ বললো, ” ভাইয়া আর কত কবির সিং হয়ে ঘুরবে? এবার তো এসো। ঘুমাবে না? ”
” ঘুম আসছে না রে। তুই ঘুমা। ”
” তুমি জেগে থাকবে। আমি একা ঘুমাবো। তা কি করে হয়। এসো। ঘুমাও। এমন ছ্যা কা খাওয়া পাবলিকের মতো ঘুরো না। ”
তূর্ণ তেঁতে উঠলো এবার। পিছু ঘুরে বললো,
” ব্যা টা রা*মছাগল। সিঙ্গেল হয়ে মিঙ্গেলের দুঃখ বুঝবি কি করে? বিবাহিত পুরুষের জন্য বউ ছাড়া ঘুমানো
অ;ভিশপ্ত। কাঁটায় আচ্ছাদিত বিছানায় ঘুমানোর মতো। বুঝেছিস? ”
ভ্যাবাচাকা খেল মিহাদ। বুকে পড়ে রইলো মোবাইল। বিবাহিত ভাইয়ের দুঃখে তার চি!ক্কুর দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এত দুঃখ! শেষমেষ অ;ভিশাপ! আহা রে! আকাশে বাতাসে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে ভারতবর্ষ কাঁপানো ছ্যা’কার গান,
” হামারি আধুরি কাহানি। ”
•
পরেরদিন সকালবেলা। ভানু’র কিরণে আলোকিত বসুন্ধরা। তৃষা কক্ষ হতে বের হলো। ঠিক সে মুহূর্তে চুপিসারে আগমন হলো দেবদাস ওরফে প্রেমিক পুরুষের। চুপিচুপি গন্তব্যে পৌঁছে বিশ্বজয়ী হাসি দিলো। আস্তে করে আঁটকে দিলো দ্বার। বদ্ধ ওয়াশরুমের দ্বারে তাকিয়ে বসলো বিছানায়। অপেক্ষায় আকাঙ্ক্ষিত রমণীর। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। খট করে উন্মুক্ত হলো দ্বার। ভেজা চুলে তোয়ালে চালনা করতে করতে বেরিয়ে এলো দুয়া। পড়নে তার মেরুন রঙা থ্রিপিস। ওড়না বিহীন সদ্য স্নাতা রমণী! তোয়ালের অন্তরালে লুকায়িত চেহারার একাংশ। সম্মোহিতের ন্যায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। অবর্ণনীয় ঘোর লেগে গেল অক্ষি জোড়ায়। আস্তে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলো সে। সহসা কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সম্মুখে তাকালো দুয়া। স্তব্ধ হলো অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে। বড় হলো মায়াবী আঁখি যুগল। থেমে গেল চলন্ত হাত।
” ত্ তুমি! ”
কিচ্ছুটি বললো না তূর্ণ। নিঃশব্দ পদচারণায় এগিয়ে এলো। দাঁড়ালো মাইরা’র সন্নিকটে। দু জোড়া তৃষ্ণার্ত নয়ন মিলিত হলো। স্বস্তি মিললো হৃদয়ে। তৃপ্ত হলো অন্তঃস্থল। দুয়া মুগ্ধ নয়নে স্বামীর পানে তাকিয়ে। পুরো দশ ঘণ্টা বাদে মানুষটির সনে সাক্ষাৎ। এই দশটি ঘন্টা যেন দশ বছরসম ছিল। কাটছিল না সময়। অস্থিরতা গ্রাস করে ফেললো করুণ ভাবে। বিছানায় বারবার এদিক ওদিক করছিল। আসছিল না শান্তির নিদ্রা। এ মানুষটি বিহীন সে যে রাত্রি যাপন করতে অভ্যস্ত নয়। বিবাহ পরবর্তী বিগত প্রায় এক বছর দু’জনে একসঙ্গে কাটিয়েছে। হাতে গোনা মাত্র কয়েক রাত্রি কেটেছিল আলাদা। এছাড়া প্রতি রাতে শয্যা সঙ্গী ছিল মানুষটি। সে বিহীন রাত্রি যাপন যেন দুষ্কর। কষ্টকর। যেমনটি ছিল বিগত রাত। ঘোর কেটে গেল দুয়া’র। নিজেকে আবিষ্কার করলো একান্ত জনের বক্ষদেশে। লাজুক আভা ফুটে উঠলো মায়াবী মুখে। হাত খসে পড়ে গেল তোয়ালে। তৃপ্তির হাসি অধরে লেপ্টে মেয়েটিও কোমল দু হাতে স্বামীর পৃষ্ঠদেশ আঁকড়ে ধরলো। বাহুবন্ধনে অতিবাহিত হলো অগণ্য মুহূর্ত। নিমীলিত হলো দু’জনার আঁখি পল্লব। সিক্ত কেশে মুখ ডুবিয়ে দিলো তূর্ণ। ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে টেনে নিতে লাগলো প্রিয় মা*দকতায় আচ্ছন্ন সুবাস! শক্ত হাতটি আরো ডেবে গেল পৃষ্ঠে। মেয়েটির কর্ণ কুহরে পৌঁছালো সম্মোহনী স্বর,
” আই মিসড্ ইউ বিবিজান! ”
লালাভ আভা দু কপোলে লেপ্টে গেল। ইচ্ছে স্বত্ত্বেও নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারলো না মেয়েটি। শুধু আরো নিভৃতে আঁকড়ে ধরলো। তাতেই যেন অব্যক্ত ভালোবাসা খুঁজে পেল মানুষটি।
.
‘ সারাহ রিসোর্ট গাজীপুর ‘. নীলাভ জল ধারণকৃত গোলাকার একটি সুইমিং পুল। তার অপর পাশে কয়েক তলার রিসোর্ট। আশপাশে অসংখ্য বৃক্ষরাজি। পাখপাখালির গুঞ্জনে মাতোয়ারা দেহমন। সুইমিং পুলের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তৃষা। হাতে মোবাইল। একের পর এক সেলফি তুলে চলেছে মেয়েটি। নিজেকে দেখে নিজেই নতুন করে প্রেমে পড়ছে। হঠাৎ কর্ণ কুহরে পৌঁছালো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কণ্ঠ,
” বেবি গার্ল সাবধান। পড়ে যাবে তো। ”
সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কণ্ঠে মেয়েটা সত্যিই পুলে ডুবে যেতো। যদি না সময়মতো বলিষ্ঠদেহী মানুষটি আঁকড়ে ধরতো। ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটির ঘন শ্বাস পড়ছে। ওঠানামা করছে বক্ষস্থল। বেশ ভয় পেয়েছে। ওকে সযতনে আগলে পাশের সিটিং এরিয়ায় বসালো নিশাদ। স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে এলো ওয়াটার বটল নিয়ে। হাঁটু গেড়ে সম্মুখে বসলো। বোতলের ছিপি খুলে এগিয়ে দিলো তৃষার পানে। তৃষা দ্রুত পানি পান করলো। আস্তে ধীরে একটু স্বাভাবিক হলো। নিশাদ বোতল হাতে নিয়ে বিচলিত স্বরে শুধালো,
” আর ইয়্যু ওকে? ”
তৃষা অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বললো, ” আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আর উল্টোপাল্টা কিসব বলছিলেন? কে বেবি গার্ল? ”
” কেন? তুই। আমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি বেবি গার্ল। ” বাচ্চা ফেস করে বললো নিশাদ।
তৃষা দু’চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
” এসব বাজে কথা বলবেন না। কেউ শুনলে মন্দ বলবে। ”
উঠে দাঁড়ালো নিশাদ। দায়সারা ভাবে বললো,
” তাতে কার কি এসে যায়? লোকের কাজ বলা। এখন মন্দ বলবে না ভালো সেটা তাদের বিষয়। ”
” আপনি এমন করছেন কেন? অবুঝ তো নন। একজন ওয়েল এস্টাবলিসড্ বুঝদার মানুষ। তাহলে কেন ছেলেমানুষী করছেন? ”
মধুরতম জবাব, ” শুধু তোমারই জন্য। ”
তৃষা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মৃদু স্বরে বললো,
” পা*গলামি বন্ধ করে আগের মতো সভ্য হয়ে যান। এতেই সকলের মঙ্গল। ”
সেথা হতে প্রস্থান করলো তৃষা। নিশাদ একাকী আওড়ালো,
” তা তো সম্ভব নয় সোনা। তোমায় ভালোবাসার পূর্বে যেমন তোমার অনুমতি নেইনি। তেমনিভাবে তোমার কথায় ভালোবাসা বন্ধ করতেও পারবো না। অ্যান্ড আ’ম নট সরি ফর দ্যাট। ”
দূর হতে এমন মুহূর্তের স্বল্প সাক্ষী হলো একজন।
.
তূর্ণ এবং দুয়া’র বন্ধুমহল চলে এসেছে। আর মাত্র ছয়দিন। অতঃপর তূর্ণয়া’র বিবাহ। ওয়েডিং ডেস্টিনেশন নির্বাচন করা হয়েছে গাজীপুরের এই নান্দনিক সৌন্দর্যের অধিকারী রিসোর্টটি। এখানেই তূর্ণ, দুয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। সে-ই উপলক্ষে পুরো রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। বন্ধুমহল, দূর হতে আগত নিকট আত্মীয় বিবাহ পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করবে। সে ব্যবস্থা ই করা হয়েছে। যদিওবা খরচ হচ্ছে বেশ। তবে একমাত্র পুত্রের বিয়েতে নিজাম সাহেব খরচ করতে মোটেও কার্পণ্য করছেন না। মুক্ত হস্তে খরচ করছেন।
চলবে.
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫০ ( অর্ধশত পর্ব )
” আজ রাতে সবাই ঘুমানোর পর রুফটপে চলে আসবি। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই সোজা তুলে নিয়ে যাবো। বুঝেছিস? ”
ক্ষুদ্র যান্ত্রিক পর্দায় ভাসমান একান্ত জনের প্রেরিত বার্তা। হতবিহ্বল দুয়া! এটা কি ছিল? অনুরোধ, ইচ্ছে নাকি সোজা হু.মকি? বোধগম্য হলো না। পা!গলাটে লোকটার কাণ্ডে না হেসে পারলো না দুয়া। অধরে ফুটে উঠলো তৃপ্তিকর আভা। আস্তে করে মোবাইলটি রেখে দিলো বিছানার এক ধারে। অগ্রসর হলো সমতল আরশির সম্মুখে।
.
আঁধার রজনী। রিসোর্টের জনশূন্য এক স্থানে বৃক্ষে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তৃষা। কানে গুঁজে রাখা ইয়ারফোন। নিমীলিত আঁখি পল্লব। কর্ণ কুহরে প্রবেশ করছে অরিজিৎ সিংয়ের হৃদয়ছোঁয়া গান। হিমেল পবনে শিরশির করে উঠছে কায়া। স্বল্প দাঁড়িয়ে লোমকূপ। পবনের তালে তালে নৃত্যরত উন্মুক্ত কেশ। আছড়ে পড়ছে চোখেমুখে। তবুও মেয়েটি সরালো না। হলো না বিরক্ত। সে মনপ্রাণ এক করে এই পরিবেশটি উপভোগ করে চলেছে। রোমাঞ্চিত হচ্ছে তনুমন। হঠাৎই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি ভারিক্কি স্বরে গানের লিরিক্স,
‘ মুসকুরানে কি ভাজাহ্ তুম হো ‘
ইয়ারফোনের সুর ভেদ করে সে স্বর কর্ণে নাড়া দিলো। তড়িৎ আঁখি মেলে তাকালো তৃষা। এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে পুরুষালি স্বরে প্রেমের গান। হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলো। নাম না জানা অনুভূতিতে ছেয়ে যেতে লাগলো অন্তর। তৃষা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তাকাতে লাগলো আশপাশে। কিন্তু কারোর দেখা মিললো না। জনশূন্য চারিপাশ। বরঞ্চ শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছালো,
‘ গুণগুণানে কি ভাজাহ্ তুম হো ‘
সম্মোহিত হয়ে পড়ছে কোমল হৃদয়। ছটফটানি অনুভূত হচ্ছে হৃদয়কাড়া স্বরে। আস্তে ধীরে কান হতে ইয়ারফোন খুলে ফেলল মেয়েটি। শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে নে শা ধরিয়ে দিতে লাগলো,
‘ মুসকুরানে কি ভাজাহ্ তুম হো
গুণগুণানে কি ভাজাহ্ তুম হো ‘
হঠাৎ করেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো। জানান দিতে লাগলো কারোর উপস্থিতি। আশপাশেই রয়েছে কেউ। মুখের ওপর পড়ে থাকা এলোকেশ হাতের স্পর্শে গুছিয়ে পিছু ঘুরে তাকালো তৃষা।
‘ জিয়া যায়ে না যায়ে না যায়ে না
ও রে প্রিয়া রে
জিয়া যায়ে না যায়ে না যায়ে না
ও রে প্রিয়া রে ‘
তৃষা উত্তর দক্ষিণ পুবে বারংবার তাকাতে লাগলো। খোঁজ করে চললো এমন সম্মোহনী সুরের উৎস। কিন্তু পেলো না। পাবে কি করে? সুরের উৎস যে লুকায়িত তার অবস্থান হতে চার বৃক্ষ পরে পঞ্চমতম বৃক্ষের অন্তরালে। বৃক্ষ সনে দেহ এলিয়ে দাঁড়ানো নিশাদ। বদ্ধ তার অক্ষি জোড়া। বাঁ পা জমিন ছুঁয়ে, ডান পা তুলে ভাঁজ করা বৃক্ষের সনে। কণ্ঠে একরাশ আকুলতা, প্রেম মিশ্রিত করে গাইতে লাগলো,
‘ ও রে লামহা তু কাহি মাত যা ‘
কেঁপে উঠলো তৃষার অন্তর। মন বললো আসলেই থেমে যাক সময়। অব্যাহত থাকুক এ রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।
‘ হো সাকে তো উমার্ ভার থাম যা ‘
বদ্ধ দুজনার আঁখি পল্লব। অনুভব করে চলেছে প্রতিটি শব্দমালা, সুরের কলতান, আবেগের সর্বোচ্চ স্তর।
‘ জিয়া যায়ে না যায়ে না যায়ে না
ও রে প্রিয়া রে
জিয়া যায়ে না যায়ে না যায়ে না
ও রে প্রিয়া রে, ও রে প্রিয়া রে… ‘
সম্মোহনী মুহূর্ত দীর্ঘস্থায়ী হলো না। সহসা থেমে গেল প্রেমাদ্র সুরের কলতান। মিলিয়ে গেল মধুরতম শব্দমালা। অস্থির হয়ে আঁখি পল্লব মেলে তাকালো তৃষা। ছটফট করে আশপাশে তাকাতে লাগলো। কিন্তু কাউকে পেল না। তবে হঠাৎ দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো এক বৃক্ষতলে। কিছু রয়েছে সেথায়। কৌতূহল বশত ধীরপায়ে সেথায় অগ্রসর হলো তৃষা। নিচু হয়ে সে জিনিসটি হাতে নিলো। একগুচ্ছ বুনোফুল। অসাধারণ দেখতে! তার অন্যতম প্রিয় ফুলের গুচ্ছ। সঙ্গে ছোট্ট সফেদ চিরকুট। যাতে কৃষ্ণবর্ণ অক্ষরে লেখা,
‘ ফর ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট বিউটিফুল ওম্যেন আই হ্যাভ সিন ‘
হৃদয় ছুঁতে সক্ষম হলো এ আয়োজন। আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে পড়লো মুখখানিতে। কি মনে হতেই পিছু ঘুরে তাকালো তৃষা। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো এক মানবের প্রস্থান। অজান্তেই প্রসারিত হলো অধর কোল।
.
ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে রিসোর্টের ফুড এরিয়ায়। সেথায় উপস্থিত আগত সকলে। ভোজন পর্ব চলমান। টুকটাক কথাবার্তার ফাঁকে ভোজন চলতে লাগলো। সকলের পূর্বে ভোজন সম্পন্ন হলো তূর্ণ’র। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সেথা হতে প্রস্থানের পূর্বে নয়নে মিলিত হলো আকাঙ্ক্ষিত নয়নের। সকলের অলক্ষ্যে চোখ টিপে দিলো তূর্ণ। হকচকিয়ে যাওয়া রমণীর হাল দেখে বক্র হেসে সেথা হতে প্রস্থান করলো মানুষটি। লালাভ রঙে রঙিন হলো মেয়েটির কপোলদ্বয়।
.
ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে দশের ঘরে। বিছানায় শুয়ে অন্যমনস্ক তৃষা। বারবার চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে ঘন্টা কয়েক পূর্বের সে-ই রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে হৃদস্পন্দনের গতি। র’ক্তিম হলো দু কপোল। কর্ণ কুহরে এখনো শ্রবণ হচ্ছে সে সুরের কলতান। একদিকে তৃষা রোমাঞ্চিত মুহুর্তে মগ্ন। অন্যদিকে তার শয্যা সঙ্গিনী বারবার উশখুশ করছে। ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলাচ্ছে। সাড়ে দশটার বেশি বাজে। মানুষটি নিশ্চয়ই তার অপেক্ষায়। একাকী সময় কাটাচ্ছে। উফ্ এই তৃষাটার আজ হয়েছে টা কি? ঘুমাচ্ছে না কেন? কোন ধ্যানে মগ্ন? কেটে গেল আরো কতক্ষন। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে ডেকে উঠলো,
” তৃষা। ”
হকচকিয়ে গেল তৃষা। কেটে গেল ঘোর। কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে বললো,
” হাঁ বল। ”
” কি এত ভাবছিস বল তো? ”
” ক্ কিছু না তো। ” আমতা আমতা করছে মেয়েটা।
” আসলেই কিছু নয়? নাকি সামথিং সামথিং? হুঁ? ” ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো দুয়া।
তৃষা তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো।
” এই না না। নাথিং। এমনিই ভাবছিলাম। ও ই প্ প্লান করছিলাম। ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। কত্ত প্লানিং। বুঝতেই পারছিস? ”
দুয়া সরু চোখে তাকিয়ে ইতিবাচক মাথা নাড়ল।
” হুঁ বুঝলাম। এবার ভাবাভাবি বন্ধ করে চোখ বন্ধ কর। কত রাত হয়েছে দেখেছিস? ঘুমাতে হবে না? ”
” মাত্র এগারোটা বাজে। এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবো? ”
” জানু এটা ঢাকা নয়। গাজীপুর। গ্রামীণ ভাইবস্ আছে। দেখলি না নয়টা বাজতে না বাজতেই চারদিকে নিস্তব্ধতা? এখানের সাথে ঢাকার তুলনা দিয়ে লাভ নেই। তারচেয়ে বরং ঘুমা। সকাল সকাল উঠতে হবে। ”
তৃষা হাই তুলে সম্মতি পোষণ করলো। হাত বাড়িয়ে পাশের ল্যাম্প বন্ধ করে দিলো। আঁধারে নিমজ্জিত হলো কক্ষ। আস্তে ধীরে নিদ্রায় তলিয়ে গেল তৃষা। ধীরজ গতিতে ওর দিকে আধশোয়া হয়ে কাত হলো দুয়া। মেয়েটি ঘুমিয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করতে মুখের সামনে হাতের আঙুল নাচাতে লাগলো। কোনোরূপ সাড়া না পেয়ে নিশ্চিত হলো তৃষা ঘুমিয়ে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া। অতঃপর কোনোরূপ বিলম্ব না করে সাবধানতা অবলম্বন করে বিছানা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালো। দেহের উর্ধাংশ ওড়নায় আবৃত করে দরজার পানে অগ্রসর হতে লাগলো। নিঃশব্দে দ্বার উন্মুক্ত করে বের হলো। অতঃপর দ্বার ভিড়িয়ে দিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। গন্তব্য ছাদ।
.
এতরাতে একাকী রিসোর্টে হেঁটে বেড়াচ্ছে দুয়া। স্বাভাবিক ভাবেই ভীতি কাজ করতে। ছমছম করছে কায়া। দোয়া দরুদ পাঠ করতে করতে সাবধানে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো মেয়েটি। অনবরত নড়ে চলেছে ওষ্ঠ। পাঠ করছে দোয়া। একসময় ছাদে পৌঁছে গেল। ছাদের দ্বার অর্ধ উন্মুক্ত। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছাদে প্রবেশ করলো দুয়া। একরাশ হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে গেল কায়া। শীতলতা জেঁকে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। শিরশিরানি অনুভূত হতে লাগলো। দুয়া ভালোমতো ওড়না জড়িয়ে আশপাশে তাকাতে লাগলো। তৃষ্ণার্ত নয়ন জোড়া খুঁজে চলেছে একান্ত জনকে। কিন্তু এ কি? কোথাও কেউ নেই। মুহুর্তের মধ্যেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো অন্তঃস্থল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। দাঁড়িয়ে গেল লোমকূপের আস্তরণ। ভীত নয়নে আশপাশে তাকাতে লাগলো মেয়েটি। আকস্মিক ভ!য়ঙ্কর এক আ:ক্রমণ! সিঁড়ি ঘরের দেয়ালে সেঁটে গেল কোমল কায়া। দু’টো হাত লেপ্টে দেয়ালে। আবদ্ধ পুরুষালি হাতের মাঝে। বুজে গেল নেত্র পল্লব। ধক ধক করে চলেছে হৃৎপিণ্ডের আনাচে কানাচে। ভয়ে জীর্ণশীর্ণ দশা।
” এতক্ষণে আসার সময় হলো? আমাকে মশা বাহিনীর হাতে শহীদ করার পরিকল্পনা ছিল বুঝি? এখন ডেড বডি দেখতে আগমন? ”
সহসা চক্ষু মেলে তাকালো দুয়া। আতঙ্ক প্রকাশ পেলো চোখেমুখে। তাতেই তৃপ্ত হলো মানুষটির অন্তঃপুর। মেয়েটি ছলছল নয়নে তাকিয়ে। ভেজা কণ্ঠে বলে উঠলো,
” তুমি আমাকে এতটা খারাপ ভাবো? এসব বাজে কথা কি করে উচ্চারণ করলে? বুকের ভেতর একটুও কেঁপে উঠলো না? ”
তূর্ণ বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে। নিঃশব্দে উপভোগ করে চলেছে মুহুর্তটি।
” ক’দিন পর আমাদের জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়। আর তুমি কিনা ম*রাধরা যা নয় তাই বলছো? এতটাই
নি!ষ্ঠুর তুমি? একটিবারের জন্যও ভাবলে না তোমার কথায় বিপরীতে থাকা মানুষটির কেমন লাগবে? ”
কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা। এবার মনোক্ষুণ্ন হলো মানুষটির। সে নীরবে আরো এগিয়ে এলো। ওষ্ঠ পরশে মুছে দিলো অশ্রু কণা। মৃদু স্বরে বললো,
” তূর্ণ সরি। এবারের মতো ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার মাইরা কি করবে না ক্ষমা? ”
” নাহ্। ”
বাঁ পাশে মুখ ফিরিয়ে নিলো অভিমানিনী রমণী। তাতে আরো একবার আকর্ষিত হলো প্রেমিক চিত্ত! বিমোহিত হলো সে পুনরায়। মুচকি হেসে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। ওষ্ঠ চেপে বসলো ডান কপোলের কোমল ত্বকে। শিউরে উঠলো মেয়েটি। খামচে ধরলো দেয়ালে সেঁটে থাকা স্বামীর হাত। কর্ণ কুহরে উষ্ণ শ্বাসের বহরে কম্পিত হলো গাত্র। শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছালো সম্মোহনী স্বর,
” অভিমানিনী কন্যার অভিমানেও মুগ্ধতা
স্বার্থক হয়ে ওঠে আমার নয়ন জোড়া
প্রেমে পড়ি আরো একবার শতবার
তুমি যে হৃদয়ে লুকানো প্রেম আমার ”
•
দিবাবসুর দীপ্তিতে আলোকিত ধরনী। সারাহ্ রিসোর্টে সাজ সাজ রব। ওয়েডিং প্লানারের নির্দেশিকা মোতাবেক কাজে লেগে পড়েছে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ। ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। নিজাম সাহেব, সাজ্জাদ সাহেব এবং জাবির এসবের তদারকি করছে। নাজমুল সাহেব ব্যস্ত ভিন্ন কর্মে।
ওদিকে রিসোর্টের একাংশে আড্ডা চলছে। পুষ্পি, বিন্দু, তৃষা সুরে সুরে গাইছে,
” মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায়… ”
লাজে রাঙা মেয়েটি উপভোগ করছে বন্ধুদের খুনসুটি। তৃষা ভাবির বাহুতে ধাক্কা মে রে হাসাহাসি করছে। হঠাৎ কিছুটা দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। নিশাদ রাজীবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে বলতে আসছিল। হঠাৎ দু’জনের চোখে চোখ পড়লো। মুহুর্তের মধ্যেই চোখ টিপে দিলো নিশাদ। হতবিহ্বল রমণীর হেঁচকি উঠে গেল। বন্ধুরা ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওকে নিয়ে। তা লক্ষ্য করে বক্র হেসে সেথা হতে প্রস্থান করলো নিশাদ।
.
নিজের বিয়ে তাতে কি হয়েছে? পূর্বের ন্যায় দায়িত্ব পালনে লিপ্ত তূর্ণ। বন্ধুরা তো এই নিয়ে কম খুনসুটি করছে না।
” কি মাম্মাহ্! নিজের বিয়ার ডেকোরেশন নিজেই করবা নি? ” শুধালো টগর।
নিশাদ বললো, ” আরে বুঝিস না? পারফেক্ট সাহেব নিজের বিয়েতেও অল পারফেক্ট চান। তাই তো নিজের হাতেই সবটা তদারকি করছেন। ”
মনিকা ও দিবা হেসে উঠলো। তূর্ণ সেসবে পাত্তা না দিয়ে নিজ কর্মে লিপ্ত অবস্থায় জবাব দিলো,
” এতদিন আত্মীয়দের বিয়েতে খাটাখাটুনি করে সবটা পারফেক্ট করার চেষ্টা করলাম। সেখানে আজ নিজের বিয়েতে মিনিমাম চেষ্টাটুকু করবো না? ”
রাজীব দু হাতের ভঙ্গিমায় অসীম শ্রদ্ধা নিবেদন করে বললো, ” নিশ্চয়ই করবেন জাহাপনা। ”
হেসে উঠলো বন্ধুমহল। একদিকে হাসিঠাট্টা খুনসুটি। আরেকদিকে রাতের আঁধারে রিসোর্টে চলছে ভিন্ন আয়োজন।
চলবে.