গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ৪৩ + ৪৪ এবং শেষ
লেখিকা :- বাবুনি
.
.
-:”তারপর আমি বললাম,ঐ তুমি কি বলছো এসব বাঘের বাচ্চা কেউ পালন করে না কি..?
তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো ..তুমি অন্য কিছু বলো আমি এনে দেবো…
রুমকি: তাহলে ছোট্ট একটা কুকুরের বাচ্চা এনে দাও না প্লিজ…
আমি:দূররর কি বলো এসব…
রুমকি:গাল ফুলিয়ে বলল, আমি জানতাম আপনি এরকম করবেন..আমাকে এনে দিবেন না উল্টো জারি দিবেন…
আমি: হয়েছে গো আমার পিচ্চি বউ তুমাকে এসব পশুপাখি পালন করতে হবে না…তুমাকে আমি একটা ছোট্ট বাবু এনে দিবো,আর তুমি ওকে লালনপালন করবে…
রুমকি: একটু লজ্জা পেয়ে গেলো মুখে তার একচিলতে হাসি,মুখ টা নিচু করে বসে আছে..
আমি:ঐ পিচ্চি বউ বাবু নিবে না..
রুমকি:যা দুষ্টু ,বলেই উঠে চলে যেতে চাইলো..
আমি ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম ..
ও কেমন যেন কেঁপে উঠলো..
আমি আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম..
এবার ও সামনের দিকে ঘুরে আমাকে জরিয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিল…
কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর, আমি ওর মুখ টা দুহাতে উপরে তুললাম..
তারপর ওর মুখের কাছে মুখ নিতে লাগলাম..
ও চোখ বন্ধ করে দিয়েছে… আমি আর কিছু না ভেবেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম…
ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল… আমি ওকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় রাখলাম…
(তারপর কি হল __আর বলা যাবে না .. লেখিকা লজ্জাবোধ করছেন..বুঝে নিয়েন..)
সকালে ঘুম থেকে উঠে দুজন ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করলাম…
নাস্তা করতে আসলাম নিচে আম্মু আব্বু ও নাস্তা করছেন…
আমি রুমকির দিকে লক্ষ্য করে দেখছি ও একবার ও আমার দিকে তাকালো না আজ…
বুঝতে আর বাকি রইল না ও কেনো এমন করছে…
রাতের বেলার কথা ভেবে হয়তো লজ্জা পাচ্ছে তাই…
আমি নাস্তা করে, অফিসে চলে গেলাম…
রুমকি আমার আশেপাশে ও আসলো না আর..
অফিসে পৌঁছে কিছু কাজ ছিলো তা শেষ করে ..প্রায় ২:৩০ এ রুমকি কে কল দিলাম…
কারণ আমি জানি ও আমাকে রেখে খাবে না…আর এইদিকে আমার এখন বাসায় যাওয়া হবে না, তাই ওকে কল দিলাম…
আমি:হ্যালো রুমকি…
রুমকি:হুমমম, আসসালামুয়ালাইকুম বলুন…
আমি: তুমি কি করছো..
রুমকি: কিছু না বসে বসে টিভি দেখছি.. আপনি…?
আমি: আমি আর কি করবো কয়েকটা ফাইল দেখতে হবে ঐগুলাই দেখছি…
রুমকি:ওহ .. বাসায় আসবেন না…?
আমি:না আসতে পারবো না মনে হয় গো আমার পিচ্চি বউ…তাই কল দিলাম,যাও তুমি খেয়ে নাও…
রুমকি:ভালো ..তা আপনি খাবেন না ..? সকালে তো শুধু নাস্তা করে গেছেন..
আমি: আমি খেয়ে নেব কিছু একটা…
আমার জন্য টেনশন করতে হবে না..তুমি খেয়ে নাও প্লিজ…
রুমকি :ওকে…
অফিস থেকে ফেরার পথে ওর জন্য বাদাম নিয়ে আসলাম…ও বাদাম খেতে পছন্দ করে ..
আসার পর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে,শুয়ে আছি..পাশেই আমার পিচ্চি বউ শুয়ে আছে…
হঠাৎ করে রুমকি বলে উঠলো, কাল থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে যেও আমি রান্না করে রাখবো…যে কয়দিন অফিসে বেশি কাজ থাকে বাসায় আসতে পারেন না সে কয়দিন খাবার নিয়ে যেও..
আমি: জু হুকুম মহারানী..
রুমকি:হুমমম…বাইরের খাবার খাবেন না সহজে ওকে..
আমি:ওকে ম্যাডাম ওকে…
এইভাবেই আরও ২মাস কেটে গেলো…
একদিন সবাই মিলে টিভি দেখছি, রুমকি হঠাৎ করে বমি করতে লাগলো ওয়াশরুমে গিয়ে…
আমি ও পিছন পিছন গেলাম…
ও বমি করার পর আমার দিকে তাকালো ..
ও মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে আমি তারাতাড়ি করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপর রাখলাম…
ও সেন্সলেস হয়ে গেছে… আমি কি করবো বুঝতে পারছি না আম্মু আব্বু কে ডাকলাম.. আব্বু ডাক্তার আংকেল কে কল দিলেন..
ডাক্তার আংকেল এসে রুমকি কে পরিক্ষা করে দেখলেন..
বেশ কিছুক্ষণ পরিক্ষা করে, আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন ওই সুখবর আছে.. দাদা হতে চলেছিস মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা কর …
আব্বু আম্মুর চোখমুখ খুশিতে ভরে উঠলো..
সাথে আমি ও ভীষণ খুশি হলাম..
আব্বু: বললেন মিষ্টি তো খাওয়াবোই এত বড় একটা খুশির সংবাদ দিলি..তার আগে বল আমার বউমার কি অবস্থা কেমন আছে…?
আংকেল: এখন ভালো আছে,এই সময় এসব হয় একটু স্বাভাবিক বিষয় এইগুলো..তবে ভয়ের কিছু নেই একটু খেয়াল রাখতে হবে..আর নিয়মিতভাবে চ্যেকাপ করালে সন্তান ও মা দুজনেই ডেলিভারির সময় ভালো ও সুস্থ থাকবে …
আর হে বউমাকে নিয়ে ৩মাসের সময় হসপিটাল নিয়ে আসিস..
আমি বললাম ওকে আংকেল..
ডাক্তার আংকেল বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন নিচে আম্মু আব্বু ও সাথে গেলেন..
আর রুমকি কে রেস্টে রাখতে বললেন..
আমি আমার পিচ্চি বউ এর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি…
.
.
#Part :- 44
.
.
-:”কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিজে ও জানি না…
হঠাৎ মধ্যরাতে রুমকির হাতের ধাক্কা খেয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম..
বললাম বউ তুমি উঠে গেছো…? তুমার কি খিদে পেয়েছে…? কিছু খাবে…?
রুমকি:আরে এত প্রশ্ন এক সাথে করলে, উত্তর দিব কিভাবে..আর আমার খিদে পেয়েছে অনেক..তবে আগে বলেন আমার কি হয়েছিলো আমি এখানে কেন…?
আমি: আমার পিচ্চি বউ, তুমি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলে, আমি তোমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম.. তারপর ডাক্তার আংকেল কে কল দিলো আব্বু আম্মু..(বিস্তারিত সব কিছু খুলে বললাম..) তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম ,আর সব থেকে খুশির সংবাদ হচ্ছে তুমি মা হতে চলেছো…
রুমকি :এই কথা শুনে একটু লজ্জা পেল মাথা টা আমার বুকে রেখে আঁচল দিয়ে মুখটি ঢেকে দিল..
আমি:ওর মুখ টা থেকে আঁচল সরিয়ে দিয়ে ওর কপালে চুমু খেলাম..
তারপর বললাম আমার পিচ্চি বউ_তুক্কু? আমার বেবির মা .. এখন আপনি একটু ওয়েট করেন.. আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসি রান্না ঘর থেকে..
রুমকি:ওকে…
কিছুক্ষণ পর আমি খাবার নিয়ে রুমে আসলাম…
রুমকি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে মাত্র..
আমি খাবারের পেলেট টা টেবিলের উপর রেখে..এক দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরলাম ধরে এনে বিছানায় বসালাম..
ধরে বললাম,আরে আরে করছো কি তুমি..
রুমকি:কি করলাম আবার…?
আমি: তুমি উঠলে কেন একা একা , আমাকে ডাকলেই পারতে আমি তোমাকে ধরে ধরে নিয়ে যেতাম…
রুমকি:আরে দূর আমি কি অসুস্থ না কি..?আর আমি কি হাঁটতে পারি না নাকি যে তুমি আমাকে ধরে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাবে..
আমি: না তা নয়, কিন্তু এখন তো তুমি একা না তুমার পেটে আমার বাচ্চা.. আর এখন যদি তুমি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো…?
রুমকি:হা হা হা করে হেসে উঠলো…
আমি:ঐ হাসছো কেন…?
রুমকি:হাসবো না… মাত্র দুই মাস এর মধ্যে এত কেয়ার…
আমি: কেয়ার করবো না..?? আমার প্রথম সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছো আর তুমার কেয়ার নিতে হবে না..?
রুমকি: হয়েছে হয়েছে..আর এত দরদ দেখাতে হবে না..খিদে পেয়েছে ভীষণ এখন খাবো …
আমি:হুমমম,ঐ ওয়েট.. তুমি হাত দিও না..
আমি খাইয়ে দিচ্ছি..
রুমকি:বা বাহ খাইয়ে দিবেন..তা হঠাৎ করে এরকম পরিবর্তন …
আমি: দূর হঠাৎ কোথায়.. আমি তো খাইয়ে দেই ই তোমাকে মাঝেমধ্যে..আর আজ মনে কর খুশির ঠেলায়.. হাঁ কর এবার…
রুমকি: হাঁ করলো…
ওকে খাইয়ে দিচ্ছি .. রুমকি ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে… খাওয়া শেষে দুজন ঘুমিয়ে পড়লাম…ওর গায়ের উপর কমল টা আলতো করে টেনে দিলাম..
তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম,ও আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো…
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে,সবাই এক সাথে নাস্তা করে ..অফিসে যাওয়ার সময় ওকে বললাম ঐ পিচ্চি বউ তুমার এবং আমার বেবির খেয়াল রেখো…
রুমকি:হুমমম..ওকে..
আমি:ওর কপালে চুমু খেলাম.. তারপর ওর পেটের কাছে মুখ নিয়ে ওর পেটে চুমু খেলাম.. তারপর বললাম বাই আম্মু বাবা চলে যাচ্ছি..
মা যদি তুমার খেয়াল না রাখে , আমি আসলে বল.. আমি মাকে ইচ্ছে মতো বকা দিবো…
রুমকি: আবার ও হাসছে,হা হা হা…
তারপর ওকে বিদায় জানিয়ে নিচে নেমে আসলাম..
আম্মু কে বললাম রুমকির খেয়াল রাখতে…
এভাবেই চলছিল দিন গুলো ভালো ই…১মাস পর পর রুমকি কে চ্যাকাপ করাতে নিয়ে যেতে হয়…
আজ রুমকির ৬ মাস হল প্রেগন্যান্ট হওয়ায়..
আজ কম্পিউটার করাতে হবে…
হসপিটাল যাওয়ার আগে রুমকি ও আমার মধ্যে বিশাল ঝগড়া লেগে গেল…
ঝগড়ার কারণ হচ্ছে,ও বলছে ছেলে হবে…
আর আমি মেয়ে…
এই নিয়ে ঝগড়া করতে করতে, দুজন সিদ্ধান্ত নিলাম রিপোর্ট অনুযায়ী যা হবে তাই মেনে নিতে হবে…
তারপর হসপিটাল গেলাম…
রিপোর্টের জন্য দুজন ই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি বসে বসে…
একটু পর নার্স রিপোর্ট নিয়ে হাজির হলেন..
দুজন ই রিপোর্ট দেখার জন্য পাগলপারা…
নার্সের হাত থেকে রিপোর্ট নিয়ে কে আগে দেখবো…কে পরে…এই নিয়ে আবার ঝগড়া..
দুজনের টানাটানিতে রিপোর্ট ই ছিঁড়ে গেলো…
দুজন ই হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলাম…
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি …
তবে হে এখন রুমকির একটু বেশি যত্ন নিতে হবে ডাক্তার বলেছে…
তাই আমি অফিস থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসি.. এবং রুমকির জন্য আসার সময় আচার নিয়ে আসি..এই সময় না কি এসব লাইক করে খেতে সব মেয়েরাই..?
ওর পর্যাপত পরিমাণ ঘুম পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সব কিছুর খেয়াল রাখতে হয়.. আমি তো যতক্ষণ বাসায় থাকি ততক্ষণ খেয়াল রাখি..আর বাকি সময় আম্মু ই খেয়াল রাখেন..
দিনগুলো কাটছে…
আর ১মাস বাকি ডেলিভারির .. ভাবছি ১৫দিন পর.. ১৫দিনের জন্য ম্যানেজার কে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় থাকতে হবে… কখন কি হয় তা তো বলা যায় না…
.
.
গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ৪৫ এবং শেষ
.
.
-:”দেখতে দেখতে আরো ১৫দিন চলে গেল..
আমি ম্যানেজার কে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় থাকি এখন..
রুমকির খেয়াল রাখতে হয় ঠিকমত… এদিকে এরকম খুশির সংবাদ পেয়ে আমার শশুড় শাশুড়ি মা তো, প্রতিদিন ১০_১২বার কল দিয়ে রুমকির খুঁজ খবর নেন.. ও কেমন আছে কি করছে ইত্যাদি ইত্যাদি…
ফোনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনে রাতে কত কল যে আসে… শশুড় বাড়ি থেকে তো আসেই সাথে রুমকির যত বান্ধবী আছে, কাজিন আছে ..তারা ও কল দেয়…
এত ফোনের কারণে মাঝেমধ্যে মনে হয় ফোন টাই ভেঙ্গে দেই…
আমি আমার ব্যক্তিগত ফোন ইউজ করছি না কি কোন কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস চালু করেছি সেটাই বুঝতে পারছি না…
দেততত ভালো লাগে না আর …
রুমকির সাথে বসে গল্প করছি একদিন বিকেলে…
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে…
আমি বললাম ওই কি দেখছো এইভাবে…
রুমকি: কিছু না তোমাকে দেখছি…
আমি:কেনো…
রুমকি:বাহ রে দেখবো না..পরে যদি আর দেখার সুভাগ্য না পাই…
আমি:মানে…
রুমকি:এত মানে মানে করছেন কেনো…
আমি: কেন এই কথা বললে বল…?
রুমকি: শুনেছি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনেকেই মারা যায়..যদি আমার ও কিছু হয়ে যায়… তখন তো আপনাকে দেখতে…..
(ওকে আর কিছু বলতে দিলাম না ওর মুখ চেপে ধরলাম হাত দিয়ে..)
আমি: চুপ একদম চুপ..কি বলো এসব ..?তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে..আর তুমার
কিছু হবে না.. আমি আছি তো…
রুমকি: মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল.. তারপর ও যদি আমার কিছু হয়ে যায় তখন তুমি কি করবে রাফসান…?
আমি:ওর কথা শুনে আমার খুশিতে ভরপুর মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো..কষ্ট অনুভব করতে লাগলাম বুকটা মুচড় দিয়ে উঠলো..
তারপর ওর হাত টা আমার হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওকে…
বললাম, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি রুমকি.. আমি তোমাকে হারানোর কথা ভুলে ও ভাবতে পারি না.. আমি তুমাকে একটা দিনের জন্যেও ভালো না বেসে থাকতে পারি না..আর আমি তুমাকে হারিয়ে কি ভাবে থাকবো বল…?
কথা গুলো বলতে বলতে কখন যে চোখের কোণে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো, বুঝতেই পারলাম না…
রুমকি: আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল…
তুমি আমাকে এত ভালোবাসেন…? তারপর ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো..
কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি কোথায় যাবো এই তোমাকে ছেড়ে যেই তুমি আমাকে এত ভালোবাসো…
সত্যি আমি অনেক অনেক সুখী মানুষ.. তুমার মতো এত কেয়ারিং একটা স্বামী পেয়ে…
আমি ও তোমাকে হারাতে চাই না জামাই…
আমি ওকে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম… দুজনের চোখেই পানি…
এই চোখের পানি টা হচ্ছে , আমাদের একজন আরেকজনের প্রতি ভালবাসা ও হারানোর ভয়ের…
এই ভাবে ই দিন কাটছে…
আমি আমার পিচ্চি বউ এর পেটে মাঝেমধ্যে কান লাগিয়ে শুনার চেষ্টা করি আমার বেবি টা কি বলে…
একদিন প্রতিদিনের মত ওর পেটে কান লাগিয়ে বললাম…
আমি:ঐ বাবু তুমি মেয়ে হবে তো গো…? বাবার আদরের রাজকন্যা…
রুমকি: না না ও ছেলে হবে , আমার রাজপুত্র…
আমি: না ও ছেলে হবে না মেয়ে…
রুমকি:নাহ ও ছেলে…
আমি:আরে দূর না ও মেয়ে হবে…
রুমকি: বললাম তো ছেলে…
আমি: হয়েছে চুপ কর এখন হলেই দেখা যাবে… এখন আমার বেবিটার সাথে একটু কথা বলতে দাও তো…
আবার কান লাগিয়ে বললাম,কি গো আমার বেবি সোনা টা তুমি কবে আসবে বাবার কোলে…
মার কষ্ট হয় তো , তুমি তারাতাড়ি চলে আসো …
বাবা তোমাকে অনেক আদর করবো…
তারপর ওর পেটে একটা চুমু দিলাম…
রুমকি:হাসছে আমার এসব দেখে..তারপর বলল ,পাগল জামাই একটা…
ওর সাথে গল্প করছি…
এরমধ্যেই ম্যানেজার সাহেব কল করলেন…
আমি কল ধরলাম..
আমি: হ্যালো..
ম্যানেজার: হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম স্যার..
আমি: ওয়ালাইকুম আসসালাম কি ব্যাপার ম্যানেজার সাহেব হঠাৎ কল দিলেন যে…?
ম্যানেজার: স্যার আমাদের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে যে কথা হচ্ছিলো ঐটার ফাইল চলে আসছে… এখন আপনি সাইন করে দিলেই আমি জমা দিতে পারি… এখন যদি ৩০মিনিটের জন্য আপনি একটু অফিসে আসতেন…
আমি:কি বলছো,বাট এখন কিভাবে যাবো এই দিকে রুমকির যেকোনো সময় ব্যথা উঠতে পারে…
ম্যানেজার: বুঝতে পারছি স্যার কিন্তু আজ ই জমা দিতে হবে..তা না হলে প্রজেক্ট টা ক্যান্সেল করে দিবে পার্টির লোকেরা..এতে আমাদের প্রায় ২লক্ষ্য টাকা লস হবে .. আপনি ভেবে দেখুন স্যার একটু প্লিজ…
আমি:ওকে তুমি কল রাখো আমি দেখছি কি করা যায়…
আমাকে চিন্তিত দেখে রুমকি জিঙ্গেস করল কি হয়েছে… আমি সব কিছু খুলে বললাম ওকে…
রুমকি সব কিছু শুনে বলল, তুমি যাও…
আমি:আরে দূর পাগল না কি আমি তোমাকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাবো অফিসে..
রুমকি:আরে দূর বোকা এত বড় একটা প্রজেক্ট হাত ছাড়া হয়ে যাবে, শুধু তুমার একটা সাইন করার অভাবে..
আমি:হলে হোক.. আমি যাবো না তোমাকে একা ফেলে..যদি হঠাৎ তোমার ব্যথা উঠে তখন কি হবে…?
রুমকি:দেততত যাও তো তুমি এত টেনশন কর না ,আর আম্মু আব্বু তো আছেই এত টেনশনের কি আছে…?
আমি:তবু ও…
রুমকি:আর কোনো তবু ও না যাও তো…
আর এই প্রজেক্ট টা হয়তো আমাদের বেবির জন্য ই হাতে আসছে…সো প্লিজ তুমি যাও..আমার কিছু হবে না..আর হলে তো আম্মু আব্বু আছে বাসায়…
আমি:যাবো তুমি বলছো…? ওকে ঠিক আছে …
রেডি হয়ে ওর পাশে আসলাম এসে বললাম…
তুমার কিছু প্রয়োজন হলে আম্মু কে ডেকে নিও…আর হে নিজে উঠবে না একা একা একদম না ওকে…
রুমকি:হুমমম.. মিস্টার ওকে এখন যান লেট হয়ে যাচ্ছে…
আমি:হুমমম আসি তাহলে ওর কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে,চলে আসলাম…
অফিসে পৌঁছে গেছি …ফাইল গুলো তে সাইন দিয়ে প্রজেক্ট নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি ম্যানেজার এর সাথে…
এরমধ্যেই আম্মুর ফোন আসলো ….
রুমকির ব্যথা উঠেছে…
এই কথা শুনে আমি ম্যানেজার কে বললাম আমি আসছি… তুমি ফাইল গুলো জমা দিয়ে দিও…
বলেই দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম… তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলাম দ্রুত ড্রাইভিং করছি…
আধ ঘন্টা লাগে অফিস থেকে বাসায় যেতে…
এত দ্রুত ড্রাইভিং করে ও আধ ঘন্টার পথ যেনো মনে হচ্ছে আধমাইলের পথ…
অবশেষে বাসায় পৌছে গেলাম…
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসার ভিতর গেলাম…
উপরে গিয়ে দেখি,রুমকি ব্যথায় কাতরাচ্ছে আর কান্না করছে… আম্মু পাশেই বসে আছে…
আব্বু কল দিচ্ছে কাকে যেনো…
আমাকে দেখে আম্মু:তুই এসেছিস…
আমি:হুমমম.. এম্বুলেনস কে কল দাও নি…
আব্বু:দিয়েছি..আসছে…
আমি রুমকির পাশে গিয়ে বসলাম…
ও আমার হাত টা শক্ত করে ধরে কাতরাচ্ছে আর কান্না করছে…
ওর এসব দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…
আব্বু কে বললাম তুমি একটু নিচে গিয়ে দেখো তো আব্বু এম্বুলেনস আসছে কি না…
আব্বু নিচে নেমে গেলেন…
একটু পর রুমে আসলেন দুজন নার্স কে সাথে নিয়ে…
নার্স ও আমি আম্মু রুমকি কে কোলে তুলে নিয়ে খুব সাবধানে নিচে নেমে আসলাম… এম্বুলেনস এর ভিতর ঢুকালাম..
আমি আব্বু আম্মু সাথে গেলাম…
হসপিটাল আসার পর ওকে এম্বুলেনস থেকে নামিয়ে … আবার কোলে করে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেলাম…সিটে শুইয়ে দিলাম…
ও আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে…
আর বলছে তুমি যেও না প্লিজ রাফসান , তুমি আমার পাশে থাকো…আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…
ওর চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসলো…
আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না…
তবুও ওকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলাম …
বললাম আমি আছি তুমি টেনশন নিও না…
একটু পর ডাক্তার রুমে এসে সবাই কে বাইরে যেতে বললেন…
আমি ডাক্তার কে অনুরোধ করে বললাম আমি রুমকির পাশে থাকবো…
আম্মু আব্বু চলে গেলেন…
ডাক্তার মহিলা বললেন এই সময় কাউকে রাখা যাবে না ভিতরে…
আমি অনেক রিকোয়েস্ট করলাম শেষ পর্যন্ত কেঁদে ফেললাম…
ডাক্তারনি আমার এমন অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললেন এইরকম স্ত্রী পাগল স্বামী আমি জীবনে কখনো দেখিনি… অনেক ভালোবাসেন স্ত্রী কে তাই না…?
আমি:হুমমম…
ডাক্তারনি:ওকে থাকেন তাহলে…
আমি রুমকির হাত টা ধরে আছি ও আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে…
ওর চিৎকার আর কান্না দেখে আমার অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করছে…চোখ আর বাঁধা মানছে না…আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আমার পিচ্চি বউ এর কষ্ট দেখে…
সন্তান জন্ম দেওয়া যে কত কষ্টের তা কেউ আমার মতো সামনাসামনি না দেখলে বুঝবে না…
আমার বা আপনার সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে একটা মেয়ে কত টুকু কষ্ট সহ্য করে..তা যদি সব পুরুষ মানুষ বুঝতে পারতো উপলব্ধি করতে পারতো.. তাহলে কখনোই কোন মেয়ে কে ইপ্টিজিং করত না,কখনো তাদের উপর নির্যাতন করত না,যৌথোকের জন্য বা অন্য কোনো কারণে…সবাই যদি ওদের কষ্ট গুলো অনুভব করতে পারতো তাহলে মেয়েজাতিকে সম্মান দিয়ে কথা বলতো.. কখনো তাদের অসম্মান করতো না… কোনো মেয়েই লাঞ্ছিত হত না,সমাজ টা ও খুব সুন্দর হতো…
ডেলিভারির কাজ শেষ আমার পিচ্চি বউ সেন্সলেস হয়ে গেছে…
সব থেকে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে আমার দু টা ফুটফুটে বেবি হয়েছে…
একটা ছেলে আর একটা মেয়ে…
যাক দুজনের আশাই পূর্ণ হলো…
একবারেই দুবারের কষ্ট শেষ হয়ে গেল…
আর আমি অবশ্যই আর সন্তান নিতাম না আজকে যা দেখেছি তা দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল…এত কষ্ট চোখের সামনে দেখার পর কে বলবে সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা আরো…
আমি আমার বেবি গুলো কে দেখছি আর চুমু দিচ্ছি…
আব্বু আম্মু রুমে আসলেন… সাথে রুমকির বাসার সবাই ওনারা ও চলে এসেছেন … এরকম খবর পেয়ে…
সবাই খুব খুশি , বেশি খুশি টুইন বেবি দেখে…
সবাই বেবিদের নিয়ে ব্যস্ত, আমি আমার পিচ্চি বউ এর পাশে বসে আছি…
প্রায় ২ঘন্টা পর ওর সেন্স ফিরল…
আমি ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম ঐ পিচ্চি বউ কেমনে কি হলো…?
রুমকি:মানে…?
আমি: একসাথে দুইটা উপহার কেমনে দিলা..?
রুমকি:মানে…?
আমি আম্মু কে বললাম বেবি এনে দিতে ওর পাশে…
রুমকির আম্মু ও আম্মু দুজন বেবিদের এনে ওর পাশে রাখলেন…
ও একটু মুচকি হাসলো…
আমি বললাম কানে কানে ফিসফিস করে..
পিচ্চি হলে কি হবে আমার দুইটা বেবির মা….
ও হাসছে….
সবাই খুব খুশি…..
দুদিন পর বাসায় চলে আসলাম সিট কেটে….
শুরু হলো এক নতুন অধ্যায় জীবনের….
ওর খুনসুটি গুলো আর আবদার গুলো এখন আর ঐ পিচ্চি বউ এর মতো নেই…
এখন সন্তানদের আবদার ই পূরন করতে ব্যস্ত থাকতে হয় দুজন কে…..
আমি আম্মু আব্বু আমার পিচ্চি বউ .. থুক্কু?আমার বেবির মা…আর আমার বেবি গুলো কে নিয়ে আমার হ্যাপি ফ্যামিলি….?
#বিদ্রোহ … ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন….
সবাই কে ধন্যবাদ যারা আমার গল্প টা শেষ পর্যন্ত পড়েছেন….
আসসালামুয়ালাইকুম,আল্লাহ হাফেজ….