#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০২
#মোহনা_হক
‘রুয়াতের আর আয়াজের বাগদান সম্পন্ন হবে আজ। সে হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। হান্নান সাহেব ফজলুল চৌধুরীর কথাটি মেনে নিলেন যেহেতু তিনি আর আয়াজ তার আবদারটি রেখেছে।
অবশ্য ফজলুল চৌধুরী মেহরুবা ফাইরোজের কাছেও জিগ্যেস করেছেন তিনিও সম্মতি দিয়েছেন। তাই তারা শুভ কাজের প্রমাংশ সেরে ফেলতে চান আগেই। সবার মনেই খুশির জোয়ার বইছে। হান্নান সাহেবের কষ্ট হলেও তিনি কাউকে বুঝতে দেয়নি।’
‘সন্ধ্যায় আরহাম মায়া চৌধুরী কে নিয়ে মজুমদারদের বাসায় আসে। আয়াজ চায় তার জীবনের এই শুভ মুহূর্তে তার মা যেনো তার পাশে থাকে।’
‘মায়া চৌধুরী এসেই সবার আগে রুয়াতের কাছে গেলো।’
‘রুয়াত তার মায়ের ঘরের এক কোণায় চুপ মেরে বসে আছে। সবাই সবার মতামত নিয়ে রাজি হলো কিন্তু যে সংসার করবে তাকেই কিছু জিগ্যেস করলো না। নাহ এই বাসায় রুয়াতের কোনো দাম নেই আজ বুঝলো সে। আজই কেনো বাগদান সম্পন্ন হতে হবে। দু’টো দিন পরে হলে কি হতো? তখন আয়াজের কথার যথাযথ উত্তর দিলে হয়তো আজ এমন দিন দেখতে হতো না। আনমনে বসে এসব ভাবছে রুয়াত।’
-‘ আসবো রুয়াত?’
‘কারও কন্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকালো। মায়া চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। হড়বড় করে উঠে দাঁড়ালো সে। অপ্রস্তুত হয়ে বললো-‘
-‘আসসালামু আলাইকুম। আসুন আন্টি।’
‘মায়া চৌধুরী হেসে ভিতরে ঢুকলেন। হাতে কিছু ব্যাগ। রুয়াতের জন্য সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে এনেছেন। তার একমাত্র আদরের ছোট ছেলের বউ বলে কথা।’
-‘কেমন আছো মা?’
-‘ ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’
-‘এইতো মা ভালো আছি। মুখটা এতো শুকনো শুকনো লাগছে কেনো বলো তো? খাওয়া দাওয়া করো না ঠিক মতো?’
‘রুয়াত মাথা নিচু করে ফেললো। মায়া চৌধুরী রুয়াতের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত তিনি। মেয়েটা যে বড্ড সহজ সরল লাজুক স্বভাবের এটা তিনি জানেন। একদিকে তার ছেলে গম্ভীর টাইপের আর অন্য দিকে তার বউ কথা কম বলা।
এ দু’জনের আসলে ভবিষ্যতে হবে কি, তা বোঝা দায়।’
-‘ অনেকদিন তো হয়েছে আমাদের বাসায় যাও না। কেনো যাওনি?’
‘রুয়াত নিচু স্বরে উত্তর দিলো।’
-‘আন্টি সামনে তো পরীক্ষা। তাই কোথাও তেমন একটা যাওয়া হয়না।’
‘মায়া চৌধুরী হেসে বললেন-‘
-‘পরীক্ষার পর যাবে তো?’
‘রুয়াত মাথা তুলে তাকালো মায়া চৌধুরীর দিকে। তার আসলে এই মুহুর্তে কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছে না।’
-‘পরীক্ষার পর তো আমাদের বাসায় একেবারের জন্য চলে যাবে। থাক এর উত্তর আমিই নাহয় বলে দিলাম।’
-‘জ্বী। ‘
‘মায়া চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগেই ইনিমা এসে হাজির। তার কোলে আবার জাফরি পুচকে ও আছে।’
-‘মা আপনি কিছু না খেয়ে একদম উপরে চলে এসেছেন রুয়াতের সাথে কথা বলার জন্য। আসুন কিছু খাবেন চলুন।’
‘মায়া চৌধুরী ইনিমার কোল থেকে জাফরি কে নিলো।’
‘-আমার নতুন পুএবধুর সাথে একটু আলাপ করছিলাম। আর জাফরি তোমার কোলে কেনো? ওর বাবা কোঁথায়? এ কেমন বাবা যে নিজের মেয়ে কে কোলে নেয় না। সে কি দেখছে না তুমি কাজ করছো। ওকে নিয়ে কি পারো এতোকিছু করতে?
-‘না মা আসলে সে তো অফিস শেষ করে আপনাকে নিয়ে সোজা এ বাড়িতে চলে এসেছেন। টায়ার্ড হয়তো। অবশ্য বলেছে মেয়েকে তার কোলে দেওয়ার জন্য আমিই দেইনি। রেস্ট করুক একটু।’
‘মায়া চৌধুরী রুয়াত কে নিয়ে নিচে আসলো। নিচে সবাই বসে কথা বলছে। হঠাৎ আয়াজের চোখ গেলো রুয়াত ও তার মায়ের দিকে। তাড়াতাড়ি নিজের ফোনটা বের একটা এতো সুন্দর মুহুর্তের একটা ছবি তুলে ফেললো। কি সুন্দর করে তার প্রেয়সী নামছে। মেয়েটা কে খুব বেশি সুন্দর মনে হলো আয়াজের কাছে। মায়া মায়া প্রেয়সী তার।’
‘আয়াজ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেমে আরহাম আস্তে করে বললো-‘
-‘এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। নজর লাগবে তো আমার শালীকার।’
‘আয়াজ আরহামের কন্ঠস্বর শুনে তাকালো সেদিকটায়। ভাইয়ের এসব কথায় বিরক্ত সে।’
-‘আগে তোমার একমাত্র শালীকা ছিলো। তখন দেখা হলেও কখনো কথা বলতাম না। কিন্তু এখন সে আমার বাগদত্তা। তাকাতে পারিই আমি।’
‘আরহাম মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো। এখনো বাগদত্তা হয়নি তার আগেই এসব বলে বেড়াচ্ছে।’
-‘এখনো হয়নি। তাই আগে আগে এসব বলে বেড়িও না বুঝেছো। যখন হবে তখন বলবে। তুমি দেখছি কেমন জানি। ‘
‘আয়াজ অতিমাত্রায় বিরক্ত তার ভাইয়ের এরকম অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে। এমনিও আরহাম তার পিছনে সারাক্ষণ পড়ে থাকে। এখনো ছাড় দিলো না। ঘরের শত্রু বিভীষণ। ‘
-‘তোমার মনে হচ্ছে না তুমি বেশি কথা বলছো? যাও এখন গিয়ে তোমার শালীকা কে এনে আমার পাশে বসাও।’
-‘শুনো এমপি সাহেবে এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা দেখানো উচিৎ না। পরে হিতে বিপরীত হলে তোমারই দোষ।’
-‘বেশি কথা বলছো আজকাল। আর আমার প্রেয়সীর সামনে এমপি সাহেব বলবে না। তার আবার পলিটিক্যাল কোনো বিষয় পছন্দ না। এমনিও সে রাজি না।’
‘আরহাম আয়াজ একটু জ্বালানোর জন্য বললো-‘
-‘তাহলে তুমিই জোর করে এমন করছো বুঝেছি এখন। এতো বড় একজন সম্মানীর ব্যক্তি হয়ে লাভ কি হলো? নিজের প্রেয়সীর কাছেই তো মান সম্মানটা রাখতে পারলে না।’
‘আরহাম উঠে রুয়াত ঠিকই আনলো কিন্তু আয়াজের পাশে বসতে না। উল্টো তার পাশে বসালো। আয়াজ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তার ভাই যে এমন করবে মোটেও ভাবেনি। তাহলে উপরোক্ত বাক্যটিই সঠিক ঘরের শত্রু বিভীষণ। ‘
‘দীর্ঘ দু বছর সাত মাস ভালোবাসার পর আজ আয়াজ রুয়াত কে তার বাগদত্তা হিসেবে পেয়েই গেলো। নিজেকে বড্ড সুখী মানব মনেহচ্ছে।’
‘আয়াজ একটু রুয়াতের সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো-‘
-‘রিংটা কিন্তু আমার নামে পড়ানো হয়েছে। এই দু মাসে নিজেকে প্রস্তুত করে নিবেন রুয়াত ফাইরোজ তয়ত্রী। ‘
‘ অতঃপর রুয়াতের হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। আয়াজের বলা কথাগুলো ভাসছে রুয়াতের কানে। সব ঘোলাটে লাগছে তার কাছে।
সেই রিংটার দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে। যার সাথে কখনো কথাই হয়নি, যে কখনো কথা বলতে আসেনি, আজ হঠাৎ তার নামে রিং পড়িয়ে দিলো। আশ্চর্যজনক ঘটনা। রুয়াতের ক্ষুদ্র মনে হাজার হাজার অনুভূতি এসে জমা হচ্ছে। এক অন্য রকম অনুভূতি। যা আগে কখনো হয়নি। রুয়াতের মনে সৃষ্টি হওয়া অনুভূতি কি তাহলে আয়াজের জন্যই। সে এখন অন্য কারো ভবিষ্যৎ সম্পদ। কাল ও তো জানত না যে আজই তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে। আয়াজ তাকিয়ে আছে
তার প্রেয়সীর দিকে। মনের দিক থেকে বলতে গেলে আজ সে ভীষণ খুশি। নিজের ভালোবাসা কে পাওয়ার মতো অমৃত শান্তি আর কোথাও নেই। একদিন রুয়াতের ও তার মতো এমন ভালোবাসা জন্মাবে। রুয়াত ফাইরোজ ও একদিন আয়াজের ভালোবাসায় মত্ত থাকবে।’
‘রুয়াত রিংটার দিকে তাকিয়ে একবার আয়াজের দিকেও তাকালো। লোকটার নামে সে আজ রিং পড়েছে। আয়াজের দিকে তাকালেই বুকটা ধক করে উঠলো তার। প্রেয়সীর এহেন চাহনি সহ্য হলো না প্রেমিক পুরুষের। মাতাল করা চাহনি তার প্রেয়সীর। চোখটা সরিয়ে ফেলছে সে।’
‘হান্নান সাহেব কাউকেই যেতে দিচ্ছেন না রাতের খাবার না খাওয়া ছাড়া। তাই সবাই ঠিক করেছে রাতের খাবার খেয়েই তবে যাবে। কিন্তু এদিকে আয়াজের তো তার কাজ ফেলে এভাবে এতোক্ষণ বসে থাকা ঠিক না। সে বসেও থাকতে পারছে না। অনেকক্ষন ধরে কেউ একজন কল দিয়েই যাচ্ছে। তবে সময় পাচ্ছে না রিসিভ করার। এতো মানুষের সামনে সে কলটা রিসিভ করতে পারছে না। সে খুব ভালো করেই জানে এখন ইমারজেন্সি কিছু না হলে কল আসবে না। একবার সবার দিকে তাকিয়ে বাসার বাহিরে চলে আসলো সে।’
‘সাহেদ কল দিচ্ছে। আয়াজের সব গোপন খবর সে ই বহন করে। আয়াজ নিজেকে তটস্থ রেখে কলটা রিসিভ করলো-‘
-‘সাহেদ কিছু হয়েছে কি? কেনো কল দিচ্ছো বার বার?’
‘অনেকক্ষণ যাবত চেষ্টা করার পর স্যার কল ধরেছে। ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। গোপন সূত্রে কিছু জানতে পেরেছে।’
-‘স্যার আপনি এখন কোথায়?’
-‘ একটু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছি। কি হয়েছে বলবে তো?’.
‘সাহেব ব্যস্ত স্বরে বললো-‘
-‘স্যার ইকরামুল তাহের নতুন কিছু করবেন। অপর দলের লোকেরা কিছু ভাবছেন। যার সর্ব প্রথম প্রভাব পড়বে আপনার উপর। নিজেকে হেফাজতে রাখার চেষ্টা করুন।’
‘প্রথমে সাহেদের কথা শুনে কপাল ভাঁজ পড়লো তার। এরকম অনেক দোলের লোকেই তাকে তার জায়গা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বরাবরের মতো ফল শূন্যই এসেছে। রাজনীতি তে প্রথম প্রথম যোগ দেওয়ার অপর দলের প্রভাব খুব বাজে ভাবে পড়লেও এখন দ্বিধাবোধ করে না এসব বিষয় নিয়ে। বার বার এমন আক্রমণে এখন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে তার মন, শরীর। এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না এখন আর।’
-‘তুমি নিশ্চিন্তে থাকো সাহেদ। আমার কিছুই করতে পারবে না তারা। আর ইকরামুলের এখনো এতো বড় সাহস হয়নি যে আয়াজ কে কিছু করবে। করলেও তাকে একদম গোড়া থেকে উপড়ে ফেলবো।’
‘জাতির কাছে আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী একজন সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ। কিন্তু যারা তার ক্ষতি করতে চায় তাদের কাছে ভয়ংকর দানবের মতো। কেউ যদি মুখে মধু অন্তরে বিষ ঢালতে চায় তাহলে সে ও ঠিক তাই করে। কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দেয়না।’
‘সাহেদের মন শান্ত হতে পারছে না। কিছুটা রহস্যময় থেকেই গেলো। কিন্তু আয়াজের এমন কান্ডে সে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। বার বার আক্রমণ করার পর ও স্যার তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন। পরে তো তাদের দলের লোকদের জীবন বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। শুধু যে আয়াজের উপর ইফেক্ট পড়ে তা না আয়াজের পুরো দলের উপর পড়ে।’
-‘স্যার কালকের মিটিং এ থাকবেন?’
-‘অবশ্যই থাকবো।’
-‘আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।’
‘আয়াজ ফোন রেখে দিলো। কখনো দু দন্ড শান্তিতে থাকতে পারে না সে। এই রাজনীতি করে অ’কারণেই কিছু কিছু মানুষের চরম শত্রু হয়ে গিয়েছে। আজ তার এমন একটা বিশেষ দিনে এই খবর শুনতে হলো। যদি ইকরামুল তাহের কোনো কিছু করার চেষ্টা করে তাকে কখনো ছেড়ে দিবে না। সব সময়ের মতো চুপ করে থাকবে না। লোভ জিনিসটা মানুষের খুব বেশি। এই লোভের জন্য মানুষ কতো খারাপ খারাপ কাজ করে ফেলে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে মানুষই একমাত্র জীব যে অন্য কোনো মানুষের ভালো চায় না। ভালো দেখতে পারে না। এক ঘন নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো আয়াজের।’
‘সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো। তবে ইনিমা আর জাফরি থেকে গেলো। তারা কিছুদিন থেকে তারপর যাবে। সবাই হাসি মুখে বিদায় নিলো। রুয়াতের কাছ থেকেও সবাই বলে গেলো। কিন্তু আয়াজ কিছু বললো না। এটা আসলে বুঝতে পারলো না রুয়াত। হান্নান মজুমদার ও তার স্ত্রী কে ও বললো সে। তবে তার হবু স্ত্রী কে কিছু না বলে চলে গেলো।’
‘আয়াজ কখনোই চায় না রুয়াত কে তার জন্য বিব্রতবোধ অবস্থায় পড়ুক। সে খুব ভালো করেই জানে রুয়াত এখন তার সাথে মোটেও কথা বলতে চাইবে না। উল্টো লজ্জা পাবে। যদি আলাদা একান্ত কিছু মুহুর্ত তাদের দেওয়া হতো তাহলে কথা বলা যেতো। সবার সামনে আলাদা করে রুয়াতের কাছ থেকে বিদায় নিবে এটা তার নিজের কাছেও ভালো লাগবে না। আর সে জায়গায় মেয়েটার থেকে কথা বলা আশা করা দায়। কখনো রুয়াতের সাথে কথা না বললেও মাঝে মাঝে যখন তাদের বাসায় যেতো চুপচাপ করে তার বোনের আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এসব বিষয় খুব ভালো করেই খেয়াল করত সে। এদিক বিবেচনা করে তাই আর রুয়াতের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া হয়নি।’
(*)
‘আজ তিনদিন পর রুয়াত কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। তার কলেজ যেতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু একদিকে তার অনেক পড়া মিস হয়ে যাচ্ছে আরেক দিকে তার প্রিয় বান্ধুবী জ্বালিয়ে মারছে কলেজে আসার জন্য। নিজের মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করেই কলেজ যাওয়ার জন্য রওনা হলো।’
‘কলেজে এসে প্রথমেই ক্লাস রুমে ঢুকে পড়লো রুয়াত। অতঃপর কলেজের শেষ প্রান্তে একটা বেঞ্চির উপর বসলো। অপেক্ষা করতে লাগলো নিমির জন্য। ‘
‘বেশ কয়েক মিনিট পর নিমির দেখা পেলো। দৌড়ে আসছে সে এদিকটায়। নিমিকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো রুয়াত।’
‘দৌড়ে আসার কারণে নিমি হাঁপাচ্ছে। কোমড়ের দু পাশে হাত রেখে হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।’
-‘এ কেমন বান্ধুবী তুই? দেখছিস আমি দৌড়ে আসছি তাও একবারও গেলি না।’
‘রুয়াত হাসছে নিমি যতোবার তাকে দেখে দৌড়ে আসে ততবারই এ কথা বলে।’
-‘কেমন আছিস বল?’
‘নিমি মন খারাপ করে বললো-‘
-‘ভালো নেই রে। সময় মতো পড়ি নাই দেখে এখন এতো পড়া একসাথে লোড নিতে পারছি না।’
‘রুয়াত নিমির কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘
-‘আস্তে আস্তে পড়িস। দেখবি সব লোড হয়ে যাবে।’
‘নিমি ব্যস্ত কন্ঠে বললো-‘
-‘আচ্ছা তোর বোনের দেবর ওই এমপি আছে না? তার কি এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে?’
‘রুয়াতের ভ্রু কুচকে এলো। হঠাৎ তার কথা জিগ্যেস করছে কেনো?’
-‘তার যে এনগেজমেন্ট হয়েছে তুই কিভাবে জানিস?’
-‘আরে তাকে তো আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছে। তিনি যে পোস্ট দেয় সেটা আমি দেখি। পরশুদিনই দেখলাম এটা। তার সাথে যার এনগেজমেন্ট মেয়েটা কেমন দেখতে আসলে?’
‘রুয়াত এখন বিপাকে পড়ে গেলো। ভেবেছিল পরে জানাবে নিমি কে। এখন দেখছে সে আগেই জেনে বসে আছে।’
-‘মেয়েটি আমি।’
‘নিমির মাথায় যেনো ছাদ ভেঙ্গে পড়লো রুয়াতের কথায় শুনে। আসলেই কি নিমিকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে?’
-‘তুই কি আসলেই আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস? সত্যি করে বল তো। আর তুই তো বলেছিস সে কখনো তোর সাথে কথাই বলেনি তাহলে?’
-‘আমিও জানতাম না। যেদিন দেখতে আসে ওইদিনই জানতে পারি। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সব কিছু হয়েছে। আপুর থেকে শুনেছি ওনি নাকি আমাকে ভালোবাসে। তবে এর সত্যিটা আমি জানি না। তুই প্লিজ রাগ করিস না।’
-‘আচ্ছা বিয়ের দাওয়াত দিলেই হলো। কিন্তু তাদের মতো মানুষদের জীবনের যে কতো ঝুঁকি আছে তুই সেটা জানিস? আর তুই তো বলতি পলিটিক্যাল মানুষদের তোর পছন্দ না। তারা সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকে। জীবনের বাকি সময় এভাবেই কাঁটিয়ে দেয় তারা। তাদের বন্ধুর চেয়ে শত্রু বেশি।’
‘রুয়াত সাথে সাথে তার হাতের রিংটার দিকে তাকালো। সে কি কোনো ভুল করলো আয়াজের সাথে তার জীবনটা জড়িয়ে?’
#চলবে….