মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-২১+২২

0
364

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_২১

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” আমি লুলা না যে আমাকে কোলে করে নামাতে হবে। আমার সাথে পা আছে আমি নিজেই নেমে যাচ্ছি বলে শিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ঠিক তখনি কেউ একজন এসে শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরলো। শিক্ষা নিজেকে লোকটার থেকে ছাড়িয়ে দেখে অতি সুন্দরী একটা মেয়ে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের । কিন্তু শিক্ষা তাকে চিনে না। শিক্ষা কিছু বলার আগেই মেয়ে টা বললো,তুমি এসিপি রায়হান আঙ্কেল এর মেয়ে উষ্ণতা রাইট?”

-” না মানে হ্যাঁ ।আমি উষ্ণতা। কিন্তু আপনি কে ? আর এইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন?”

-“আমি নেহা। রায়হান আঙ্কেল আমার বাবার অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন। আঙ্কেলের মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি । কিন্তু তোমাকে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয় নি। আজ সকালে যখন তোমার খবর নিউজে জানতে পারলাম,তখন থেকে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারি নি। সোজা চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে। তোমার সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো। অবশ্যই আমাদের বাসায় একদিন আসবে কিন্তু।”

-” ঠিক আছে আপু।”

-” আমি একজন জার্নালিস্ট। তোমার বাবা মায়ের সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার ছিলো।তারা কিভাবে নিখোঁজ হলো?তারা কি আদৌ বেঁচে আছে? তোমার পরিচয় এতো দিন কেনো সামনে আসে নি? তুমি এতো দিন কেনো বলো নি তুমি রায়হান আঙ্কেল এর মেয়ে?”

-” শিক্ষা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,আজ নয় আপু। আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, আমি আসি এখন বলে শিক্ষা সামনের দিকে পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য এসে শিক্ষা কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে ও টাল সামলাতে না পেরে শিক্ষার উপর পড়ে যায়।যার ফলস্বরূপ শিক্ষা রাগান্বিত হয়ে বলে,এসব কি ধরণের অ’স’ভ্যতা সাহিত্য?এটা ভার্সিটি ক্যাম্পাস, আপনার বেডরুম না যে যখন তখন জড়িয়ে ধরবেন , গায়ের উপর ঢলে পড়বেন।”

-” বাহ্ যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।আমি যদি দৌড়ে এসে তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে না দিতাম ,তাহলে এতোক্ষণে তুই পটল ক্ষেতের বাসিন্দা হয়ে পটল চাষ করতি। ভাগ্যিস আমি গাড়িতে উঠার আগেই ব্যাপার টা নোটিশ করেছিলাম।”

-” মানে কি?”

-” সাহিত্য উঠে এসে পাশের গাছ থেকে একটা গুলি বের করে শিক্ষার হাতে দিয়ে বললো,এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিস কেন তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছি?

-” ও মাই গড! কেউ আমাকে গুলি করে মা’র’তে চেয়েছিলো?”

-” হ্যাঁ ।এটা ছিলো তোর উপর প্রথম অ্যাটাক।”

-” কিন্তু কখন গুলি চললো? আর গুলি যদি চলে ও থাকে গুলি চলার আওয়াজ হলো না কেন?”

-” সবাই তো তোর মতো গা’ধা না।ঐ কিলারের বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো ছিলো ,যার জন্য কোনো শব্দ হয় নি।কিলাররা এতোটা ও বোকা হয় না যে এই ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সাইলেন্সার লাগানো বন্দুক ছাড়া অন্য কোনো বন্দুক ব্যবহার করবে।তবে একটা বিষয় আমার কাছে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো।এই খু’নি সেই খু’নি নয় ,যাকে আমরা খুঁজে চলেছি।সে কখনো তোকে জনসম্মুখে মা’র’বে না। তার মানে উষ্ণতার আরো শত্রু রয়েছে। ভার্সিটি তে থাকা তোর জন্য নিরাপদ নয়। যেকোনো সময় আবারো অ্যাটাক হতে পারে। তুই বরং বাড়ি চলে যা।আমি ড্রাইভার কাকু কে ফোন করে দিচ্ছি ।তোকে এসে নিয়ে যাবে।”

-“শুধু শুধু ড্রাইভার কাকুর আসার কি দরকার? আপনি আমাকে ড্রপ করে দিন না?”

-” আমি এখন যাচ্ছি না। আমার একটু কাজ আছে। লোকটার মুখ আমি সম্পূর্ণ দেখতে পাই নি।তবে লোকটা যেইখানে দাঁড়িয়ে ছিলো , সেইখানে নিশ্চয় কোনো না কোনো কিছুতে হাত দিয়েছে।ঐ খান থেকে যদি লোকটার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাই তাহলে ওর ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক করে নিশ্চয় কিছু না কিছু জানতে পারবো। তাছাড়া আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা আশেপাশের লোকজনের থেকে ও কিছু জানতে পারবো।”

-” ঠিক আছে।আসছি আমি।”

___________________________________

-” বস এসিপির মেয়ের আমরা বাদে ও আরো অনেক শত্রু রয়েছে।”

-” মানে কি বলছিস ক্লিয়ার করে বল?”

-” বস, কিছুক্ষণ আগে মেয়েটার উপর অ্যাটাক হয়েছে।তবে ঠিক সময়ে সিআইডি অফিসার এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।যার জন্য মেয়েটা এখনো বেঁচে আছে।”

-” না! এটা কিছুতেই হতে পারে না। এসিপির মেয়ে আমার শিকার।আমি ওকে তিলে তিলে মা’র’বো।এসিপি আর তার প্রেয়ারের ব‌উয়ের করা অপমানের বদলা তাদের মেয়ের উপর নিবো আমি। তুই কি ঐ কিলার কে দেখেছিস? কে ছিলো লোকটা?”

-” জানি না বস।হয়তো কোনো কন্ট্রাক্ট কিলার ছিলো। সিআইডি ওকে খুঁজছে।”

-” সিআইডি ওকে খুঁজে পাওয়ার আগেই লোকটা কে আমার কাছে তুলে নিয়ে আয়।আমি ও দেখতে চাই কে সেই লোক যে আমার শিকার কে ছিনিয়ে নিতে চায়?”

-” ইয়েস বস।”

-” রাখছি আমি।তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ যদি কোনো প্রকার গন্ডগোল করিস,তাহলে কিন্তু তোর ছেলেমেয়ের বাবা ডাকার জন্য মানুষ টা কে আর খুঁজে পাবে না বলে অজানা লোকটা ফোন কেটে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,একটা মানুষ কখনো খারাপ হয়ে জন্ম নেয় না।এই সমাজ, সমাজের মানুষ তাকে বাধ্য করে খারাপ হতে।কি দোষ করেছিলাম আমি? ভালোবেসে ছিলাম।আর ভালোবাসা টা নিশ্চয় ভুল কিছু না। কিন্তু এই সমাজের চোখে সেটা ভালো ছিলো না।এই সমাজ আমাকে খু’নি হতে বাধ্য করেছে।হা হা হা একটা খু’নে’র ও যে শাস্তি , হাজার টা খুনের ও সেই শাস্তি।তবে আমি কেন চুপ থাকবো? এই খুনের লীলা ততোক্ষণ চলবে যতোক্ষণ না আমি আমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌঁছে যাচ্ছি।”

___________________________________

-” হ্যাঁ সাহিত্য কিছু জানতে পারলে লোকটার ব্যাপারে?”

-“হ্যাঁ স্যার ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে আমাদের ডেটাবেজে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করেছে। লোকটার ক্রিমিনাল রেকর্ড থেকে জানা গেছে সে একজন কন্ট্রাক্ট কিলার।এই কাজের জন্য বেশ কয়েক বার জেলে ও গিয়েছে।এই তো কিছু আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু কথায় আছে না স্যার ” ইজ্জত যায় না ধুলে,আর স্বভাব যায় না মলে।জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে আবারো সেই কাজ শুরু করছে।”

-” ব্যাপার না । নির্জন তো গিয়েছে ঐ কিলার কে নিয়ে আসতে। একবার আসতে দাও। তারপর স্বভাব কিভাবে বদলে দিতে হয়,সেটা খুব ভালো করে জানা আছে সিআইডি অফিসারদের বলে এসিপি সাইফুজ্জামান একটা ফাইল হাতে নিয়েছে এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে। সাইফুজ্জামান কল রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ নির্জন বলো।পেলে ঐ কিলার টা কে?”

-” হ্যাঁ স্যার পেয়েছি।তবে আহত অবস্থায়।আমি এইখানে আসার আগে কেউ একজন ওর উপর অ্যাটাক করেছিলো।আমি ওকে সিটি হসপিটালে নিয়ে এসেছি।তবে অবস্থা বেশি একটা ভালো না। আপনি তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে আসুন।”

-” ঠিক আছে ।আসছি আমি।”

-“প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সাইফুজ্জামান আর সাহিত্য এসে দেখে লোকটা তার পকেটের দিকে কিছু ইশারা করছে।যা দেখে সাহিত্য জিজ্ঞেস করলো , তোমার এই অবস্থা হলো কি করে? তুমি তো নিজেই একজন কন্ট্রাক্ট কিলার।তোমাকে সুপারি দেওয়া হয়েছিলো উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য। কে সুপারি দিয়েছিলো তোমাকে? বলো কে সুপারি দিয়েছিলো?”

-” লোকটা তোতলাতে তোতলাতে বললো,আ আমি তা তাকে চিনি না। আমার পকেটে তার ছবি আছে বলে লোকটা মৃ’ত্যু’র কোলে ঢলে পড়ে ‌।”

-” সাহিত্য লোকটার কথা অনুযায়ী পকেট থেকে ছবি বের করে ছবির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ,না ! এটা হতে পারে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_২২

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে স্যার। আমি আমার বাবা কে খুব ভালো করে চিনি। আমার বাবা আমাদের থেকে ও শিক্ষা কে বেশি ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে তিনি শিক্ষা কে বাবার আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। কখনো শিক্ষার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয় নি। নিজের বাবার মতো শিক্ষা কে আগলে রেখেছে। তাছাড়া বাবা তো জানে শিক্ষা উষ্ণতা নয়। তাহলে বাবা কেন উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়বে?”

-” সেটা তো তোমার বাবা কে জিজ্ঞেস করতে হবে। উষ্ণতার সাথে কিসের শত্রুতা তোমার বাবার? কেন সে উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়?

-” স্যার বিশ্বাস করুন আমার বাবা এমন নয়।তিনি কাউকে মা’র’তে পারেন না। নিশ্চয় আমার বাবা কে কেউ ফাঁসাতে চায়ছে।”

-” ছবিটা যদি তোমার বাবার না হয়ে অন্য কারো হতো তাহলে ও কি তুমি এক‌ই কথা বলতে সাহিত্য?এটা স্বজনপ্রীতির জায়গা না সাহিত্য। আমাদের এইখানে প্রত্যেক টা অপরাধী সমান।সে হোক আমাদের পরিবারের কেউ বা একান্তই নিজের কেউ । কিন্তু আমাদের চোখে সবাই সমান। তাছাড়া লোকটা মা’রা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে, যে উষ্ণতা কে মা’রার জন্য তাকে টাকা দিয়েছে তার ছবি পকেটে রয়েছে।এটা আমরা সবাই স্পষ্ট শুনেছি।আর ছবিটা কাকতালীয় ভাবে তোমার বাবার হয়ে গেল।এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য এই কিলার কে সুপারি তোমার বাবাই দিয়েছে।”

-” স্যার এমন ও তো হতে পারে যে আসল খু’নি আমাদের কে বোকা বানাতে চায়ছে।তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মৃ’ত লোকটার পকেটে আমার বাবার ছবি রেখে আমাদের ফোকাস অন্য দিকে নিয়ে যেতে চায়ছে।”

-” সেটা তো নম্রতা মৃ’ত লোকটার কল ডিলেইলস নিয়ে আসার পরেই জানতে পারবো। তোমার বাবা কে ডাকো তাকে ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।এর‌ই মধ্যে নম্রতা এসে বললো,তার কোনো প্রয়োজন নেই স্যার। মৃ’ত লোকটার সমস্ত কল ডিলেইলস পেয়ে গিয়েছি।এই দেখুন স্যার , এইখানে কোথাও সাদ্দাম আঙ্কেলের নাম্বার নেই। বরং এই কামরুল নাম দিয়ে সেভ করা লোকটার সাথে তার একাধিক বার কথা হয়েছে। এমনকি লোকটা মা’রা যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগেও তার সাথে দুই মিনিট ধরে কথা বলা হয়েছে।হয়তো এই কামরুল নামের লোকটা উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য সুপারি দিয়েছিলো। কিন্তু লোকটা উষ্ণতা কে মা’রা’র বদলে নিজে মা’রা গেল। স্যার আমার মনে হচ্ছে এই লোকটার খু’নে’র সাথে আমরা যাকে খুঁজে চলেছি তার কোনো না কোনো কানেকশন রয়েছে।সে হয়তো নিজে উষ্ণতা কে মা’রতে চায়ছে।যার জন্য সে এই কিলার কে মে’রে দিয়ে সাদ্দাম আঙ্কেল কে ফাঁসানোর জন্য লোকটার পকেটে সাদ্দাম আঙ্কেলের ছবি রেখে দিয়েছে।”

-” হলেও হতে পারে। এখন এই কামরুল কে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কামরুলের লোকেশন ট্রাক করো।এই কামরুল কে পেলে আমরা আসল সত্যটা জানতে পারবো।আর সাদ্দাম শিকদার কে ও ডাকো।তার কাছেও শিক্ষার ব্যাপারে কিছু জানার আছে।”

-” ইয়েস স্যার।”

___________________________________

-” রাতে সাহিত্য বাসায় ফেরার সময় বর্ণের কল আসে।বর্ণের কল দেখে তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের মনে পড়ে যায় বর্ণ শিক্ষাকে ভালোবাসে,তাকে বিয়ে করতে চায়। মূহুর্তের মধ্যে যেন সাহিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সাহিত্য বর্ণের কল রিসিভ না করে কেটে দেয়। কিন্তু বর্ণ বারবার কল করার কারণে এক পর্যায়ে সাহিত্য বাধ্য হয়ে বর্ণের কল রিসিভ করে। সাহিত্য ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বর্ণ বললো, সাহিত্য স্যার আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন প্লিজ?”

-” বিয়ের আয়োজন করতে হবে বুঝি? তুমি এটায় বলতে চাচ্ছো , আমি যেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার আর শিক্ষার বিয়ে টা দিয়ে দেই তাই তো?”

-” আপনি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছেন সাহিত্য স্যার। আমি আপনাকে সবটা খুলে বলবো।আপনি প্লিজ একটু কষ্ট করে রংধনু ক্যাফে আসুন ।আমি ক্যাফে তে অপেক্ষা করছি।প্লিজ স্যার না করবেন না।”

-” সাহিত্য ঘড়ি দেখে বললো, এখন রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার?”

-” প্লিজ স্যার।”

-” সাহিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ঠিক আছে আসছি । প্রায় বিশ মিনিট পরে সাহিত্য এসে দেখে বর্ণ তার জন্য অপেক্ষা করছে। সাহিত্য কে আসতে দেখে বর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,বসুন স্যার।কি খাবেন বলুন?”

-“আমি এখানে বসতে বা খেতে আসি নি। তুমি কি জন্য ডেকেছো সেটা বলো?”

-” আপনি যে বিবাহিত সেটা আমি জানি স্যার। আর শিক্ষা আপনার বিবাহিত স্ত্রী সেটা ও জানি।”

-” সবকিছু জানার পর ও তুমি শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়ছো ?”

-” না স্যার। আমি শিক্ষা কে নয় বরং আবৃত্তি কে ভালোবাসি। আবৃত্তি কে বিয়ে করতে চাই। সেদিন ভার্সিটিতে যে ছেলেটাকে শিক্ষার হাত ধরতে দেখেছিলেন সেটা আর কেউ নয়,আমি ছিলাম। আবৃত্তি যে আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বসবাস করে এটা আমি আবৃত্তি কে বলতে যেয়ে ও বলতে পারি নি । তাইতো শিক্ষা কে অনুরোধ করছিলাম শিক্ষা যাতে আমার হয়ে আবৃত্তি কে ভালোবাসার কথা টা বলে দেয়। আমি ভেবেছিলাম শিক্ষা হয়তো আবৃত্তি কে আমার মনের কথা জানিয়েছে এজন্য আমি আবৃত্তি কে ফোন করি।আর তখন আবৃত্তি আমার কাছে হেল্প চায়। আবৃত্তি ভেবেছিলো হয়তো আমি শিক্ষা কে ভালোবাসি , বিয়ে করতে চাই ,এটা শোনার পর আপনি জেলাস ফিল করবেন। শিক্ষা কে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন। কিন্তু আবৃত্তির ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আপনি সত্য মিথ্যা কিছু যাচাই-বাছাই না করে শিক্ষা কে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিলেন।এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আমার জন্যেই শিক্ষা কে আপনি ভুল বুঝেছেন।আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি স্যার।”

-” ইটস্ ওকে বর্ণ।বাই দ্যা ওয়ে তুমি আবৃত্তির কথা কি জানি বলছিলে?”

-” আমি আবৃত্তি কে ভালোবাসি স্যার। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হ‌ওয়ার ভয়ে কখনো নিজের মনের কথা বলতে পারি নি।আর মাত্র কয়েকটা দিন পরে আমাদের গ্ৰাজুয়েশন শেষ হয়ে যাবে। আমি চাচ্ছি আমাদের গ্ৰাজুয়েশন শেষ হলে আপনাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। এখন আপনার মতামত কি স্যার? ”

-” দেখো বর্ণ তুমি হতে পারো মন্ত্রীর ছেলে। তোমার বাবার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। কিন্তু কোনো বাবা ,মা, ভাই চায়বে না তার মেয়েটা কে একটা বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে। তুমি এখনো স্টুডেন্ট। পড়াশোনা শেষ করো, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখো। তারপর বাকিটা দেখা যাবে।”

-” তার মানে আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?”

-” অনেক রাত হয়েছে । বাসায় যাও বলে সাহিত্য ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসে। শিক্ষা কে আরো একবার সন্দেহ, ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য অপরাধ বোধ ‌হয় সাহিত্যের। সাহিত্য গাড়ি তে উঠতে গিয়ে ও কি মনে করে মার্কেটে এসে শিক্ষার জন্য একটা লাল শাড়ি,লাল চুড়ি, বেলি ফুলের মালা নিয়ে গাড়িতে এসে মনে মনে বলে,আজ আর কোনো বাধা থাকবে না শিক্ষা। কিছু দিন আগে তুই বলেছিলি আমি যেন তোকে একটা লাল শাড়ি,লাল চুড়ি আর বেলি ফুলের মালা কিনে দেই।আজ তোর ইচ্ছা পূরণ হবে শিক্ষা।আমি নিজে হাতে আজ তোকে সাজিয়ে দিবো।তোকে প্রাণ ভরে দেখবো।তোর হাত ধরে আজ সারারাত শহর ঘুরে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করবো। আজকের রাত হবে শুধু তোর আর আমার ।”

-” রাত প্রায় বারোটা। চারিদিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে দূর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সাহিত্য প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে কলিং বেল দিচ্ছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।মনে মনে সাহিত্য খুশি হয়ে বলে,ভালোই হয়েছে সবাই আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে।এই সুযোগে আমি শিক্ষা কে নিয়ে আজকের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবো বলে সাহিত্য শিক্ষার নাম্বারে কল করে । কিন্তু ফলাফল শূন্য।দশ বার কল করার পরেও যখন শিক্ষা ফোন রিসিভ করে না তখন সাহিত্য নিজের কাছে থাকা একটা অস্ত্র দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে কোনো সাড়া শব্দ নেই।মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কখনো কারো বসবাস ছিলো না। সাহিত্য টেবিলের উপর থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়ার সময় হঠাৎ শিক্ষার উপর অ্যাটাকের কথা মনে পড়ে। সাহিত্যে পানির গ্লাস ফেলে দিয়ে দৌড়ে শিক্ষার রুমে চলে আসে। শিক্ষার রুমে এসে যেন সাহিত্যের পা থমকে যায়। সাহিত্যের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ নিচে পড়ে যায়।লাল কাচের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।