#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৮
কয়দিন ধরে কি হলো কে জানে।মনটা সারাক্ষণ খারাপ থাকে,একদম যেনো কালো মেঘে ঢাকা।লাষ্ট কবে যে মন খুলে নিশ্চিন্তে হেসেছে তা খেয়াল নেই তার।হুদা হুদাই এতো মন খারাপ কই থেকে ঘীরে ধরে তা সব অজানা তার,কিন্তু আজকে যেনো একটু বেশিই মন খারাপ।নিজেকে আজ খুব দোষারোপ করতে মন চাচ্ছে,শুধু মাত্র আমার জন্য এতোদিন আমার বাবা ভাইরা এতো লড়াই করে যাচ্ছে আর সে কিনা আমি জানিনা?
পালঙ্কে দুই হাটুর উপর থুতনি দিয়ে নীরব হয়ে বসে আছে পুতুল!হাত দিয়ে বিছানার চাদরে আঁকিবুঁকি করছে,পাশেই পুতুলের কাপড় ভাজ করে ব্যাগে রাখছে শ্রেয়া।আজ সেও নীরব তারো খুব মন খারাপ।যে ননদীর জন্য বাবার বাড়ি গিয়ে দু দন্ড থাকা যেতো না ভায়ের আগে সে বেশি পাগল হয়ে যেতো তাকে বাড়ি আনার জন্য।তাকেই আজ কোনো অচেনা বাড়িতে রেখে আসতে হবে!যার সাথে খুনশুটি একদম বন্ধুর মতো আচরণ করে সারাদিন পাড় করতো,তাকে ছাড়া থাকতে হবে কত দিন।সবই ছিলো পরিস্থিতির শিকার,
-আমাকে আগে কিছু বললে না কেনো ভাবিপু?
আকস্মিক কথায় মাথা ঘুড়িয়ে পুতুলের দিকে তাকায় শ্রেয়া,তার প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারে না সে।মুচকি হেসে পুতুলের দু হাত ধরে বলে,
-সত্যি কথা বলতে আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না।যেদিন তোর জ্বর হয়েছিলো সেদিনকে রাত্রে তোর ভাই আমাকে বলেছিলো।জানিনা এরকম অচেনা যায়গায় গিয়ে তুই কিভাবে থাকবি তবে একদিনের পরিচয় হয়ে আমি যা বুঝলাম ও বাড়ির মানুষ গুলো সত্যি খুব ভালো আর যাই হোক তোর দায়িত্ব নিয়ে কোনো হেলাফেলা করবে না।ভালো থাকিস বনু,আমরা সকলেই তোকে খুব মিস করবো কয়দিন পর দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে আমরা আবার আগের মতো একসাথে থাকতে পারবো।
পুতুল আর কিছু বলে না,,’পড়ে যা হবে দেখা যাবে।বাবা আমার জন্য এতোদিন এতো বিপদের উপর দিয়ে গিয়েছে আর আমি কিনা এতটুকু করতে পারবো না?’
সোফায় বসে বসে প্রণয়ের সাথে কথা বলছে সামির!সামনে পুতুলের বাবাও আছে,,তার হাতে ধোঁয়া উঠানো দুধ চা।পুতুলের বাবা চিন্তিত স্বরে সামিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
-দেখো সামির বাবা,আমার মেয়েটা খুব ছোট!গ্রামের প্রায় অনেকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ওকে কিন্তু আমি দেয় নি।ইমনকে হয়তো তুমি চিনো না তবে ও খুব ডেঞ্জারাস লোক ইমন হয়তো আমার মেয়েকে ভালো বাসে কিন্তু তার বাবা ইয়াসমিন শুধু মাত্র আমার সম্পত্তির জন্য এইসব করছে,যখন আমার বাবা এই চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তখন থেকেই ইয়াসিন অনেক ফাঁদ পেতেছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য।তারা জানে আমাদের দুর্বল যায়গায় হলো পুতুল,তাই পুতুলকে ব্যবহার করে তারা সব হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে।আর কোন বাবা মা চায় যেনে শুনে খারাপ ছেলের সাথে বিয়ে দিতে?তাই এই কিছুদিন আমি আমার মেয়েকে তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি দোয়া করে তোমরা আমার মেয়েকে আগলে রেখো।তার কিছু হলে বা ব্যথা পেলে সে কাউকে বলতে চায় না,আশা করি তোমরা সব দিক সামলে নিবে।আমি সারাজীবন তোমাদের কাছে ঋণী থাকবো বাবা।
পুতুলের বাবার লম্বা বক্তব্য শুনে,সামির নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো ‘তার মানে এই সেই ইমন যার জন্য তাকে ইমনের চামচা বলেছিলো’
-না না আঙ্কেল আপনি একদমি চিন্তা করবেন না,আমাদের বাসায় গিয়ে আপনার মেয়ের কোনো অসুবিধা হবে না,সম্পুর্ন গার্ড দিয়ে তাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবো।আর আপনাদের ব্যপারে আমিও সাহায্য করবো।সামনে তো ইলেকশন আপনি বেশি টেনশন নিয়েন না,সবটা আমি আর প্রণয় সামলে নিবো।
সামিরের কথা শুনে প্রণয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে,
-হ্যা বাবা তুমি কোনো চিন্তা করো না, সামনে যা হবে ভালোর জন্যই হবে। আর সামির তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না,আজ তুমি আর তোমার পরিবার না থাকলে যে আমার বোনটার কি হতো,থ্যাং গড!
-আরে না না,তোমার বোন মানেই তো আমার বোন তার সকল প্রটেকশনের দায়িত্ব আমার?একটা আঁচ ও লাগতে দিবো না তার গায়ে,নিশ্চিত থাকো।
সামিরের কথায় প্রণয় মুচকি হাসে,সামির বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাত ঘরির দিকে তাকিয়ে বলে,
-আঙ্কেল এইবার পুতুলকে আসতে বলেন আমাদের বেড়ুতে হবে।
একটু পর শ্রেয়ার হাত ধরে পুতুল ঘর থেকে বের হয়,একবারো চোখ তুলে কারো দিকে তাকায় না।কেউ আর কথা বলার ভাষা খুজে পায় না,যাওয়ার সময় সামির প্রণয়ের কাধে হাত দিয়ে চিন্তা না করতে বলে।পুতুল গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়,একটা গার্ড দৌড়ে আসে গাড়ির দরজা খোলার জন্য, কিন্তু তার আগেই সামির ডোর খুলে দেয়।পুতুল বিনা বাক্যে গাড়িতে গিয়ে বসে,গাড়ি স্টার্ট করার আগে শুধু একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।স্নিগ্ধা তো হা করে তাকিয়ে আছে শুধু সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার ফুপি কথায় যাচ্ছে।পুতুল তার পানিতে টুইটুম্বর হওয়া চোখ নামিয়ে নেয়,
ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।একটানে একদম বাড়ির মেইন গেইট থেকে অনেকটা দূরে চলে যায়,মাথা ঘুড়িয়ে একবার পেছনের কাচ দিয়ে দেখে নেয় তাদের বাড়ি,আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। ‘জানা নেই আবার কবে ফিরবে এই বাড়ি’
সামিরদের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই পুতুলের মা হু হু করে কেঁদে দেয়।শ্রেয়া মায়ের কাধে হাত রেখে শান্তনা দেয়,,বাবার কোলে থাকা স্নিগ্ধা হঠাৎ বলে উঠে,
-মা মা নানু,ফুপির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?ফুপি কি ওই সামির আঙ্কেল বাড়ি গিয়েছে?সামির আঙ্কেল কি আমার ফুপা হয়ে গিয়েছে?
স্নিগ্ধার কথায় সবাই তার দিকে তাকায়,শ্রেয়া ধমকের স্বরে বলে,
-তোকে কে বলেছে তোর ফুপির বিয়ে হয়েছে?
-না আমি তো জানি যাদের বিয়ে হয় তারা বাবা মাকে ছেড়ে বরের সাথে শশুর বাড়ি চলে যায়,ফুপিও তো নানা নানু কে ছেড়ে তার শশুর বাড়ি চলে গেলো।
-চুপ কর বেয়াদপ এইসব নিয়ে আর কোনো কথা বলবিনা,কেও জিজ্ঞেস করলে বলবি জানিনা!
স্নিগ্ধা শুধু মাথায় নাড়ায়,সবাই আবার বাড়ির ভেতরে চলে যায়,,
_______
চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে এমপিদের বাড়ি আসতে বেশি একটা সময় লাগে না,গ্রামের পাকা রাস্তা ছেড়ে হালকা উন্নত রাস্তার আসলেই এমপিদের বাড়ি।কিন্তু আশ্চর্য জনক ব্যপার হচ্ছে,ড্রাইভার বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে না ঢুকে ঘুড়ে বাগান গেইটে এসে গাড়ি থামায় এতে সামনে বসা সামিরেরও কোনো হেলদোল দেখা যায় না।গেইটের সামনে আসতেই সামির চট করে গাড়ি থেকে নেমে পুতুলের সামনের দরজা খুলে দেয়।পুতুল চোখ উচিয়ে সামিরের দিকে তাকায়,সামির বলে “নামো” পুতুল আর কিছু বলে না সোজা হয়ে নেমে যায়,পুতুল রাস্তায় পা রাখার আগেই সামির পুতুলের হাত ধরে সামিনে নিয়ে যেতে থাকে,,পুতুল চোখে বড় বড় করে একবার সামিরের দিকে আরেকবার তার ধরা হাতের দিকে তাকায়।
সামির পুতুলকে কালো গোলাপ গাছের পাশ দিয়ে ঘেঁষে নিয়ে যায়।পুতুল শুধু দেখেই যায় কিছু বলে না,,বাড়ির ভেতরে যেতেই সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়।সামিয়া পুতুলকে ধরে কাছে নিয়ে বলে,,
-এইতো এসেছে আমার মা,কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করেছি তুই জানিস!আজ থেকে আমার আর একা একা লাগবে না,আয় মা বস এখানে,, নার্ভাস হস না।
পুতুল কিছু বলে না,শুধু মুচকি হাসে।সামির মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
-মা আসতে না আসতেই এতো প্রশ্ন করছো কেনো?চলে তো যাচ্ছে না!যাও ওকে ওর ঘর দেখিয়ে দাও ফ্রেশ হলে নাস্তা দিও।
বলেই সামির উপরে চলে গেলো,সামিয়া মুচকি হেসে পুতুলের কপালে একটা চুমু একে দেয়।পুতুলের হাত ধরে উপরে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে নিয়ে যায়,,পুতুলকে ওয়াশরুমে রেখে সামিয়া নিচে নাস্তা তৈরি করতে যায়।পুতুল ওয়াশরুম থেকে মুখ মছতে মুছতে বের হয়,একবার পুরো ঘরটা চোখ বুলিয়ে নেয়,সব একদম পরিপাটি পরিস্কার!হয়তো তার জন্য এই ঘরটা পরিস্কার করা হয়েছে,,পাশে একটা বারান্দাও রয়েছে।
পুতুল একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেলকনিতে যায়,এখান থেকে বাগান দেখা গেলেও ওই কালো গোলাপের গাছটা দেখে যায় না।পুতুল হতাশ হয়ে ঘরে চলে যায়
চলবে…!