#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১০
আলিয়া পুতুলের পায়ে বরফ ধরে বসে আছে,শেল্ফের একদম কোনায় বাড়ি খাওয়ায় পা একদম ফুলে লাল হয়ে যায়।ফর্সা পায়ে তা যেনো একদম স্পষ্ট, পুতুল যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু একটু টু শব্দও করছে না।পুতুলের এমন নির্বিকার থাকার ভঙ্গি দেখে সামির বেশ অবাক হয়!তখন তার মনে পরে যে পুতুলের বাবা বলে ছিলো
‘পুতুল ব্যথা পেলে তা প্রকাশ করে না বা কোনো প্রতিক্রিয়াও করে না,নিজের কষ্ট নিজেই ভোগ করে’
সামির দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে তার ঘর থেকে একটা মলম আর একটা স্প্রে এনে আলিয়াকে দেয় পুতুলের পায়ে লাগানোর জন্য।আলিয়া তার পরনের ওড়না দিয়ে পুতুলের পা মুছে আঙুলে মলম লাগিয়ে পুতুলের পায়ে আস্তে আস্তে দিতে থাকে,মলম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুতুলের পা খুব জ্বালাপোড়া করতে থাকে,পুতুল এক হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে।যা চোখ এড়ায়না সামিরের তাই সে বলে,
-আলিয়া এখন স্প্রেটা লাগিয়ে দে তাহলে আর জ্বালাপোড়া করবে না!
আলিয়া মলম লাগিয়ে তার উপর স্প্রে করে বিছানা থেকে উঠে যায়।আলিয়া উঠতেই তার পাশে সামিয়া এসে বসে পুতুলকে হালকা করে ধরে বলে,
-দুঃখীত মা আমাদের বাসায় প্রথমদিন এসেই তুমি হার্ট হলে,আমি সামিরকে আচ্ছা করে বকে দিয়েছি তোমাকে ঠিক মতো গাইড না করার জন্য প্লিজ আম্মু তুমি রাগ করো না।
-না না আন্টি এতে আপনাদের কোনো দোষ নেই আমি তো ইঁদুর দেখে ভয় পেয়ে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গিয়েছি,আর একটু ব্যথা পেয়েছি ও কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে।প্লিজ আমার জন্য আপনারা অনুতপ্ত হবেন না আমার খুব খারাপ লাগবে।
-আরে পাগলি মেয়ে,আচ্ছা তুই রেস্ট নে কোনো দরকার হলে অবশ্যই আমাদের জানাবি আর মনে কর এটা তোর বাড়ি যখন যেখানে খুশি যেতে পারিস কাউকে প্রয়োজন হলে আমাকে বা সামিরকে নিয়ে যাস কেমন!
পুতুল স্মিথ হাসে,সামিয়া কিছুক্ষণ পুতুলের পাশে থেকে চলে যেতে যায়,শুধু রয়ে যায় সামির!সবাই চলে যেতেই ঘরে নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়,সামির এখনো কেনো যাচ্ছে তা চিন্তা করছে পুতুল!সামির পুতুলের বেডের কাছে এসে একবার পায়ের দিকে নজর দেয়,পুতুল তা দেখে পা টা একটু গুটিয়ে নেয়!সামির সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে প্যান্ট এর পকেট থেকে কিছু একটা বেড় করে পুতুলের মুখের সামনে ধরে,পুতুল সামিরের হাতের জিনিসটা দেখে একবার নিজের দু পায়ের দিকে তাকায়,যেখানে এক পায়ে রুপার বানানো লম্বা সুতার মতো পায়েল,আরেক পা খালি!পুতুল আবার সামিরের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-এটা তো আমার কোথায় পেলেন?
-শেল্ফের তারকাটার সাথে বেজে হয়তো পা থেকে ছিড়ে গিয়েছে,ওখানেই পেয়েছি।এটার হুকটা বধোয় ছুটে গেছে,পায়েলটা রেখে দাও পড়া দরকার নেই।
পুতুল হাত বাড়িয়ে সামিরের হাত থেকে পায়েলটা নিতে যায়,,কিন্তু তখনি সামির তার হাতটা পেছনে নিয়ে নেয়,পুতুল হা করে তাকিয়ে থাকে সামিরের দিকে।সামির হালকা হেসে পুতুলের আরেক পায়ের দিকে ইশারা করে বলে,
-এই পায়েরটা কি এভাবেই রাখবে?
পুতুল বুঝতে পারে সামির তার সাথে ইয়ারকি করছে,তাই সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরেক পায়েটা খুলতে থাকে,কিন্তু পারছিলোনা।একেই হুকটা খুব টাইট করে লাগানো ছিলো তার মধ্যে সেই পায়েই ব্যথা পেয়েছে,তাই বেশি জোরাজোরি করে খুলতে পারছিল না এই নিয়ে অনেকবার খোচাও খেয়েছে।অনেক্ষন চেষ্টা করার পর যখন পায়েল খুলতে ব্যার্থ হয় তখন সামির পুতুলের পা ধরে পায়েল খোলার জন্য,
কারো হাতের শীতল স্পর্শ পেতেই পুতুলের সারা শরীরে শিউরে ওঠে,চোখ বড় বড় করে সামিরের দিকে তাকিয়ে পা সড়িয়ে নেয়।পুতুলের এহেন কান্ডে সামির ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
-কি হলো?
-আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?
-তোমাকে সাহায্য করার জন্য এমনিতেও যেভাবে টানাটানি করছো পায়ে তো আরো ব্যথা পাবে,
-না থাক দরকার নেই আমি পারবো!
-হু,,,হ্যাঁ পারবে বলেই তো এতক্ষণ ধরে শুধু টানা টানি করে যাচ্ছো!এখন বেশি কনফিডেন্স না নিয়ে আমাকে খুলতে দাও,এমনিতেও এর আগের বার আমি তোমাকে পায়ে বেন্ডেজ করে দিয়েছিলাম।
পুতুল আর কিছু বলে না,সামির আলতো করে পুতুলের পা থেকে পায়েলটা খুলে দেয়,,তাতে সামিরের হাত পুতুলের পায়ে একটু ছোয়া লাগে নি।এমনি কি কোনো ব্যথাও পায় নি,সামির পায়েল খুলে সেটা হাতে নিতে নিতে বলে,
-এটা কি পা নাকি আস্ত কা’টাছে’ড়ার রাস্তা?পুরো পা জুড়ে কা’টা ছে’ড়ার দাগ!আর এতো দেখছি তোমার পা এর মুখের কোনো মিল নেই,মুখ কেমন সাদা আর পা কত কালো।অন্য সব মেয়েদের মতো তুমিওকি মুখে ক্রিম মেখে সাদা হয়েছো নাকি,পায়ে মাখার জন্য টাকা পাওনি।আর ওই ছেলেটার নাম কি জানি,ও হ্যা ইমন!ওই ইমন তোমার মধ্যে কি দেখে প্রেমে পড়লো?
সামিরের এরকম জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা শুনে পুতুল হা হয়ে যায়,যেখানে সবাই বলে তার মুখের থেকে হাত পা বেশি ফর্সা আর পরিস্কার সেখান সে বলে কিনা মুখ সাদা পা কালো?পুতুল বুঝতে পারে সামির এখন তার সাথে ইয়ার্কি করছে,তাও নিজের তেজটাকে আটকে রাখতে না পেরে চোখ ছোট ছোট করে বলেই ফেলল,
-আমাকে কি আপনার মতো ভাবেন নাকি?আমি সবসময়ের মতো নেচরাল সুন্দর এমনকি আমার মুখ আর পা এর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই!আর আমার পায়ের এইসব দাগের জন্য এক মাত্র দায়ি আপনি।আপনার জন্যই আমি ব্যথা পেয়েছি,তাও একবার না তিন তিন বার।
-বাচ্চাদের মতো এমন ছুটাছুটি করলে তো ব্যথা পাবেই,যাই হোক এখন বলো এই পায়েল গুলো কোথায় রাখবে?
-আমার কাছে দিন আমি রেখে দিবো।
-না তুমি বলো কথায় রাখতে হবে,
-ওই আলমারিতে একটা টিনের বাক্স আছে সেখানে রাখুন।
সামির আর কোনো প্রতিত্তোর না করে আলমারি খুলে টিনের সেই বক্সটা খুলে,যেখানে ছোট ছোট অনেক কিছু রাখা আছে,আছে তার দেওয়া সেই ছোট্ট চিরকুটটা,সামির চিরকুটটা হাতে নেয়,একবার লেখাগুলো পরে মুচকি হাসে, সে তো ভেবেছিলো এটা বলার পরেও এই মেয়ে গোলাপের পিছু ছাড়বে না,কিন্তু সত্যি সত্যি তাই করলো।
-বাবাহ এটা এখনো এখানে রেখে দিয়েছো?তাই তো বলি মেয়ে এখন আমার ফুল এতো সুন্দর ফুটে কেনো!এতোদিন তো কারো নজর লেগেছিলো তাই ফুলগুলো সুস্থ হয়ে ফুটছিলো না,যাক এই উছিলায় তাহলে আমার গাছটা রক্ষা পেলো।
-হু আমার কি খায়া দায়া কোনো কাজ নেই নাকি যে আমি আপনার ওই ফালতু গাছের দিকে তাকিয়ে থাকবো?আর যদি নজর দিয়েই থাকি তাহলে তো নিজের আপন আন্টির পেটের ভাইয়ার গাছেই নজর দিয়েছি এতে কারো সমস্যা।
-এই এই একদম ভাইয়া বলবে না বলে দিলাম।
-তো কি ছাইয়া বলবো নাকি?
-তাও একটু মানাবে,তবে ভাইয়া না,,,,,
পুতুল এইবার পেয়ে যায় সুযোগ তাই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মনের আনন্দের বলতে থাকে,
-আপনার মা মানে আমার সামিয়া আন্টি যদি আমার মা হয়,আপনার বাবা যদি আমার বাবা হয়,তাদের ভাই যদি আমার মামা চাচা হয়,তাদের বন্ধু বান্ধুবি মানে আমার আপন বাবা মা যদি আমার বাবা মামা হয় তাদের ছেলে মানে প্রণয় যদি আমার আপন ভাই হয়,তাহলে সে হিসেবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনি আমর ভাই সিম্পল!
সামির বুঝতে পারে পুতুল এখন তার সাথে মজা করছে,তার করা ইয়ার্কির সব ঝাল এখন সে উঠাতে যাচ্ছে,এইসব শোনার চেয়ে এখান থেকে চলে যাওয়া ভালো তাই সেই বক্সটা আবার আলমারিতে রেখে বলে,
-তোমার এইসব আজাইরা লজিকহীন বক বক শোনার আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই!
-সত্যি কথা বললে সবারি আগ্রহ চলে যায়।
-জ্বী আপনি অনেক সত্যি কথা বলেন।ধন্যবাদ!
-সেটা আবার বলতে?কার বোন দেখতে হবে না,,
পুতুলের কথা শুনে সামির আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে যায়,,সামির যেতেই পুতুল দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে,
“এখনি বাড়ির কথা মনে পড়ছে।সবাইকে কিভাবে ছেড়ে এক অচেনা বাড়িতে আসতে হয়েছে,না জানি এখন সবাই কি করছে।এখন বাসায় থাকলে এতক্ষণ ভাইয়ার সাথে কতবার ঝগড়া লেগে যেতো,আমি কেঁদে কেঁদে বাবার কাছে নালিশ করতাম বাবা ভাইকে আচ্ছা মতো বকে দিতো।আমার এই অবস্থা শুনলে ভাবি চিন্তায় আমার পাশে বসে বসে সেবা করতো।মা একটু পর পর এসে বকে গিয়ে আবার নিজেই আদর করতো।কিন্তু এখন সে একা,সেই কালকেই তো পুরো পরিবার নিয়ে কত মজা করে কেক কাটলো সবাই এক সাথে বসে খাবার খেলো।আর আজ তার কোথায় এসে মানিয়ে নিতে হচ্ছে হা!”
চলবে..!
#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১১
বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে পুতুল!পাশেই পরে আছে তার স্মার্ট ফোনটি,যার উপর জল জল করছে ছোট একটি নাম।কিন্তু পুতুল ধরছে না,এই নিয়ে প্রায় ছয় বারের মতো কল দিয়ে ফেলেছে তবুও পুতুলের কোনো হেল দোল নেই। সে জানে কলে ‘ভাবিপু’ নামটা সেভ থাকলেও এখন তাকে কল দিচ্ছে অন্য কেউ,কারণ তাদের নাম্বার থেকে কল আসলে তো জীবনেও কল ধরতো না পুতুল।কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহার করেও তারা ব্যার্থ,বড্ড বেশি অভিমান করেছে সে,সে তো ভেবেই নিয়েছে ও বাড়ির আর
কারো সাথেই কথা বলবে না।কি হতো যদি আগে তাকে সব জানানো হত!তাহলে তো কোনো না কোনো ব্যবস্থা হতোই।কিন্তু শেষ সময়ে এসে সে সব জানতে পারলো এখন কোথায় এসে থাকতে হচ্ছে।
এভাবে প্রায় দশ বার কল বাজার পর বিরক্তি হয়ে ফোন রিসিভ করে পুতুল।ওপাস থেকে কোনো কন্ঠ স্বর ভেসে আসছে না,সবাই নীরব।পুতুলোও ফোন লাউডস্পিকার দিয়ে হাটুতে থুতনি দিয়ে বসে আছে,কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ এলো,তাও পুতুল নিশ্চুপ।পুরুষালী কন্ঠে কেউ হ্যালো বলতেই পুতুল চট করে কলটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়,বিছানা ছেড়ে বেলকনির দিকে যেতে নিবে তৎক্ষনাৎ হন্তদন্ত হয়ে হাতে ফোন নিয়ে ঘরে ঢুকে সামির।পুতুল সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়,সামির পুতুলের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে বলে,
-তোমার বাড়ি থেকে এতোবার কল দিচ্ছে রিসিভ করছোনা কেনো?
-আমার ইচ্ছে!!!
-মানে,তোমার ভাই তোমাকে কত বার কল দিয়েছে খেয়াল আছে?বাড়িতে সবার টেনশন হচ্ছে নাও সবার সাথে কথা বলো।
সামির তার ফোন পুতুলেএ দিকে এগিয়ে কথা বলতে দেয়।কিন্তু পুতুল ‘আমি পরে কথা বলে নিবো নি’ বলে সামিরের পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়,পেছন থেকে সামির পুতুলের হাতের কব্জি চেপে ধরে,পুতুল থেমে যায়।সামির পুতুলকে এক টানে তার একদম কাছে এনে দাতে দাত চেপে বলে,
-এই তোমার জন্য তারা কত টেনশনে আছে জানো?আর তুমি কিনা তাদের আরো ট্রেজ এর মধ্যে ফেলছো!
পুতুল সামিরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে পায়ের উপর ভর দিয়ে হালকা উঁচু হয়ে বলে,
-টেনশন থেকে মুক্তি পেতেই তো তারা আমাকে এখানে রেখে গিয়েছে এখন আবার কিসের টেনশন?
-যেটা বুঝো না সেটা নিয়ে বারতি কথা বলো কেনো তুমি?
-হ্যা আমি তো বুঝি না,কিচ্ছু বুঝিনা আমি!এই না বোঝার সুযোগে নিয়েই তো তারা আমাকে পুতুলের মতো নাচাচ্ছে,
-দেখো মেয়ে না বুঝে এই সব বাচ্চাদের মতো পাগলামো একদম করবে না,আমার সামনে তো নাই।আর হ্যা এখন আমি বারতি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না,তুমি এখন এই মুহুর্তে আমার সামনে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে।
-বলাতাম নট!কি করবেন,দড়ি দিয়ে বাধবেন?বাধেন সমস্যা নেই আমি পুতুল কাউকে ভয় পাই না, হু!
কথা বলতে বলতে পুতুল আরো সামিরের মুখের কাছে আসছিলো,সামির মুচিকি হেসে এক আঙ্গুল দিয়ে পুতুলের কপালের মধ্যেখানি রেখে দূরে সরিয়ে বলে,
-পিচ্চি!
সামিরের পিচ্চি বলা শুনে তার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে পুতুল বলে,
-একদম ফাও কথা বলবেন না বলে দিলাম,আমি পিচ্চি হলে আপনি পিচ্চির নানা উরফে আপন আন্টি মার পেটের আপন ভাই!
-ভাই বলবে না,
-আমাকেউ পিচ্চি বলবেন না,
-তো পিচ্চিকে পিচ্চি বলবোনা তো উরফি জাভেদ বলবো?
সামিরের কথা শুনে পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায় কি লুচু বেডা তার সঙ্গে উরফি জাভেদের তুলনা করছে কি সাঙ্গাতিক!পুতুল এখনো তার দিকে ডেব ডেব করে চায়েই আছে,সামির একটা হাসি দিয়ে বলে,
-এরকম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে লাভ নেই তোমার এমনি যে ছোট চোখ তাতে কিচ্ছু হয় না।
-হু আপনার থেকে আমার চোখ বড় আছে,একদম পুতুলদের মতো।আর আপনার তো পিঁপড়া চোখ একদম চায়না দের মতো হা হা!
-তার মানে কি তুমি নিজেকে পুতুলের সাথে তুলনা করছো?
পুতুল তার পড়নের ফ্রক সহ নিজে ঘুরে ঘুরে বলে,
-এতে কোনো সন্দেহ আছে?
-তোমাকে দেখে তো একটা হাতি ছাড়া কিছুই লাগছে না আমার।
সামিরের বলা কথা শুনে পুতুল ঘোরা বন্ধ করে ফ্রক থেকে হাত ছাড়িয়ে ঝাটকা মেরে বলে,
-এমনিতেও আপনার চোখ নেই,তাও বলছি আপনার চোখের প্লাস্টিক বদলান।
-সেটা আবার কিভাবে বদলায়?
-আমি করে দেখাবো?
পুতুলের শয়তানি মার্কা হাসি দেখে সামিরের সন্দেহ হয় তাই সে কথা কাটার জন্য বলে,
-যাই হোক এমনি তেও অনেক লেট হয়ে গিয়েছে নাও এখন তোমার ভাইকে কল দিয়ে কথা বলো ওরা টেনশন করছে,
কিন্তু পুতুল সামিরের কথা শুনে না,’কথা বলতাম নট’ বলে দৌড়ে ঘর থেকে চলে যায়।সামির পুতুলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে,সে বুঝে যায় এই মেয়ে এখন কারো কথা শুনবে না,একে অন্য পদ্ধতিতে কথা বলাতে হবে তবে এখন তা সম্ভব না।
সামির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে যায়,ঘরে এসে শুধু পুতুলের অবিধান চোখে ভাসছে,
“আচ্ছা আসলেই কি ওই মেয়েটা পুতুলের মতো?প্রণয়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম যখন পুতুল জন্ম নেয় তখন নাকি সে ঠিক বেবি পুতুলের মতো দেখতে হয় একদম গুলুমুলু।সবাই বেশ অবাক হয়েছিলো একটা বাচ্চার একরম মহনীয় সৈন্দর্য দেখে,তখন সবাই মিলে তার নাম ‘পুতুল বিনতে আরাফ’রাখে,সবাই ভেবেছিলো বড় হয়ে হয়তো একটু পরিবর্তন ঘটবে,কিন্তু আস্তে আস্তে যত বড় হয় তত যেনো তার সৈন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।আসলেই তো তার চোখ গাল নাক নরম নরম হাত এমন কি পা সব তো তার দেখা একটা পুতুলের মতোই।”
এগুলো ভাবতে ভাবতেই সামির আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তখন তার চোখ যায় তার চোখের দিকে,সে ভাবতে থাকে
‘আসলেই কি তার চোখ বেশি ছোট,চায়নাদের মতো?কই আমার চোখ তো আমার আম্মুর মতো হয়েছে,শুনেছি আব্বু নাকি আম্মুর চোখ দেখে প্রেমে পড়েছে।কই আমি তো এই চোখ দিয়ে বড় বড় জিনিস ও দেখতে পারি তাহলে এই মেয়ে এটা কেনো বলল যে আমার চোখ নাই?’
হঠাৎ করে এইসব আজগুবি কথা মাথায় আসায় নিজে নিজেই খুব বিরক্ত হচ্ছে সামির।এতো কেন ভাবাচ্ছে ওই মেয়ের আজাইরা কথা গুলো।সামির সব চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলে শাওয়ার নিতে চলে যায়।
🌼
পুরো ড্রয়িং রুম ফাঁকা।একটা স্টাফ তো কি কোনো গার্ডের ও দেখা নেই আজ,বাড়ির ভেতরের কথা তো বাদি দিলাম বাহিরেও দু একজন গার্ড ছাড়া কেউ নেই,যেখানে সে সারাদিনে দেখে আসছে প্রায় ত্রিশ জনের মতো মানুষ থাকে আজকে সব কই গেলো?পুতুল একা একা ঘুরে খুব বোর হচ্ছিলো,এখন ঘরে যেতেও মন চাচ্ছে না,ঠোঁট উল্টিয়ে ধপাস করে পাশের সোফায় বসে পরে,কি করবে বুঝতে পারছে না,টিভি দেখবে কিন্তু রিমোট কই?চারোদিকে চোখ ঘুরিয়ে কোনো যায়গায় রিমোটের অস্তিত্ব না দেখে সেখানেয় গালে হাত দিয়ে বসে থাকে,একটু পর সেখানে সামিয়া আসে পুতুলকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে তার কাছে এসে বলে,
-একি পুতুল তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেনো?আমাকে বা আলিয়াকে ডাকতে পারতে আর সামিরকে তো তোমার কাছে পাঠালাম।
-না না সমস্যা নেই আমি এমনি নিচে আসলাম।
-ও আচ্ছা বিকেল তো হয়েছে আমাদের বাগানে যাবি?তোদের মতো হয়তো এতো বড় বাগান না তবে আমার ছেলে খুব যত্ন করে সেটা বানিয়েছি চল ঘুরে আসি।
বাগানের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে,কিয়ৎক্ষণ বাদ রাজি হয়ে যায়।সামিয়া পুতুলকে সাথে করে বাগানের দিকে যায়,বাগানে ঢুকতেই সবার আগে পুতুলের কালো গোলাপ গাছের দিকে নজর যায়।’আসলেই তো গাছটা তো আগের থেকে অনেক সচ্ছ হয়েছে আবার ফুল গুলো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।’
পুতুল হা করে তাকিয়ে থাকে গাছের দিকে,সামিয়া সেটা খেয়াল করে মুচমি হেসে পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-সুন্দর না গাছটা?এই কয়দিনে যেনো আরো তাজা হয়ে গেছে ফুল গুল,সামির কাউকে এই ফুল ছিড়তে তো দূর ছুতেও দেয় না,এমনি আমাকেউ না।কেনো দেয় না সব আমার অজানা।ছোট বেলায় সামির এবং আমার আরেক মেয়ে সাজি আর তার দাদু মানে আমার শশুর তার বন্ধুর কাছ থেকে এই গাছের চারা কিনে লাগায়,সাজি আর তার দাদুকে সামির খুব ভালোবাসতো।কিন্তু নির্বাচন এর সময় আকস্মিক সামিরের দাদু আর আমার মেয়ে সাজি কার এক্সিডেন্টে মারা যায়।তখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো আমার ছেলেটা,খুব একা হয়ে উঠেছিলো।তার জন্য অনেক খেলার সাথী দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলো তোর আঙ্কেল কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয় নি তাদের ফেরত যেতে হয়েছে।তার ভালোবাসার দুটো মানুষকে যেনো সে ভুলতে পারে নি,তখন থেকেই এই গাছটা তার সঙ্গী হয়ে উঠে।সে মনে করতো এই গাছের সাথেই সাজি আর তার দাদুর অস্তিত্ব মিশে আছে,সারাদিন এই গাছের সাথে বসে একা একা কথা বলতো।সামির যখন স্টাডির জন্য ইতালি যায়,তখন আমাকে পই পই করে বলে রেখেছিলো বাগান মরে গেলেও এই গাছটার যেনো কিচ্ছুটি না হয়,এবং এই গাছের যত্ন নেওয়ার সম্পুর্ণ দায়িত্ব আমাকে দেয়।অনেকজন এই গাছের ফুল চুরি করতে এসেছিলো কিন্তু কেউ তা পারে নি।আরেকটা কথা কি জানিস তুই এখন যে ঘরে থাকিস সেটা আমার মেয়ে সাজির ঘর ছিলো খুব শখ করে সে তার ঘর সুন্দর করে সাজিয়েছিলো কিন্তু আফসোস একদিনো সে ওই ঘরে ঘুমোতে পারে নি তার আগেই আমার মেয়েটা না ফেরার দেশে চলে গেলো।
‘পুতুল সামিয়ার কথা শুনে বেশ অবাক হয়,তার মানে ওনাদের আরেকটা মেয়েও ছিলো?এর জন্য সামির এই গাছটাকে এতো ভালোবাসে।’পুতুলেরো কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগে পুতুল মাথা নিচু করে থাকে কি বলবে বুঝতে পারে না।সামিয়া তার চোখের পানি মুছে হালকা হেসে পুতুলের হাত ধরে বলে,
-বাদ দে আল্লাহ যা ভাগ্যে লিখেছিলো তাই হয়েছে,এখন চল তোকে পুরো বাগান ঘুরে দেখাই।
সামিয়া পুতুলের হাত ধরে পুরো বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাতে থাকে পুতুলেরো খুব ভালো লাগে,কিন্তু বাগানের গেইটের সামনে আসতেই পতুল হাতে লাঠি নিয়ে গেইটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দারোয়ানকে দেখতে পায়,দারোয়ান ও পুতুলকে তাদের মেম এর সাথে দেখে বেশ চমকে যায়,হাতের লাঠি পুতুলের দিকে তাক করে বলে,
-এই মেয়ে তুমি আবার ফুল চুরি করতে এসে গেছো।ওইদিন না ধরা খেলে,মেম মেম এই তো সেই ফুল চুরি করতে আসা মেয়ে।
দারোয়ানের কথা শুনে সামিয়া অবাক হয়ে পুতুলের দিকে তাকায় পুতুল ভয়ে চুপসে যায়।সামিয়া কিছু একটা ভেবে দারোয়ান কে বকা ঝকা দিয়ে ভুল ধারনা বলে পুতুলকে সেখান থেকে নিয়ে আসে,পুতুল হাফ ছেড়ে বাচে,সামিয়া পুতুলকে কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে বাড়ির গেইটের সামনে এনে বলে,
-পুতুল তুই দাড়া।আমি বাসা থেকে পানি নিয়ে আসি বাগানে পানি দিতে হবে।
পুতুল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়,সামিয়া ভেতরে চলে যায়,পুতুল এদিক ওদিক তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে,তখন পেছন থেকে কে যেনো ডেকে উঠে।পুতুল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে অচেনা কেউ সে তাকে চিনেনা।
চলবে..!