পুতুল বউ পর্ব-১২+১৩

0
309

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১২

-হেই পিচ্চি কে তুমি?

পুতুল ভয় পেয়ে যায়,সে এখনো পেছনে ঘুরে দেখে নি লোকটা কে,কিন্তু কন্ঠ স্বর শুনে মনে হচ্ছে কোনো পুরুষ।শুক্ন একটা ঢক গিলে,তখন আবার পেছন থেকে সেই লোকটাই বলে উঠে, “হ্যালো” পুতুল এইবার ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকায়,দেখে লম্বা একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে,পুতুলকে দেখে মুখ একদম হা হয়ে যায়,পুতুলও এতো সুন্দর ছেলে দেখে অবাক হয় এটা কি এই বাড়ির গার্ড নাকি?নাহ গার্ডরা তো এমন থাকবে না,তাহলে কি এটা ইমনের লোক না তো,আমাকে ধরতে এসেছে?নিয়ে যাবে আমাকে,ওরা জানলো কিভাবে।

পুতুল প্রচন্ড রকমের ভয় পায়,চোখ ওই ছেলেটার কাছ থেকে সড়িয়ে আবার সামনে ঘুরে যায়,তখনি পুতুলের মুখের সামনে সামির এসে দাঁড়ায়,পুতুল ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে উল্টিয়ে পরে যেতে নেয়,কিন্তু সামির কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে ওই ছেলেটা পুতুলকে কমড় জরিয়ে ধরে নেয়,পুতুল পরতে পরতে বাঁচে হাত খামচে ধরে ওই ছেলেটার পরনের আকাশি রঙের শার্ট।ফলে উপরের দু বোতাম ছিড়ে যায়,সেদিকে খেয়াল নেই ওই ছেলেটার সে তো হা করে তাকিয়েই আছে পুতুলের দিকে,পুতুল এইবার নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করে,কিন্তু ছেলেটা এমন ভাবে তার কমড় চেপে ধরে না পারছে নরতে না পারছে কিছু করতে।

পুতুল ছুটাছুটি করছে কিন্তু নিজেকে ওই ছেলের কাছ থেকে ছাড়াতে পারছে না,এদিকে ওই ছেলেটা হা করে পুতুলকে দেখেই যাচ্ছে।সামির এদের এই অবস্থায় দেখে প্রচন্ড রকমের রেগে যায়,তখন তার চোখ যায় পুতুলের কমড়ের দিকে,যেখানে পুতুলকে চেপে ধরে আছে ছেলেটা।সামির পুতুলের হাত ধরে এক টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে নেয়,পুতুল যেনো হাফ ছেড়ে বাচে।সামিরের বুকে হালকা করে মাথা দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়,যেনো জান ফিরে পেয়েছে।সামির পুতুলকে সাইডে রেখে ছেলেটাকে বলতে থাকে,

-কি করছিস তুই?

ছেলেটা এইবার থতমত খেয়ে যায়,নিজের গালে নিজের থাপ্পড় দিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলে,,

-ওহহ সরি সরি,তুমি ঠিক আছো তো বার্বি গার্ল!

পুতুলের উত্তর দেওয়ার আগেই সামির বলে,

-ও ঠিক আছে,তুই আগে বল এই সময়ে এখানে কি করিস?

-ধুর এখানে সেখানে পড়ে বলা যাবে,আগে এনার সাথে পরিচয় হয়ে নি! hey I’m sizan!

বলে হাত বাড়িয়ে দেয় পুতুলের দিকে,পুতুল হাত না বাড়িয়ে নিজের হাত কচলাতে থাকে,কি করবে বুঝতে পারছে না,পুতুলের কোনো রেসপন্স না পেয়ে সিজান আবার বলে,

-And you?

পুতুল তখনো কিছু বলে না,সামির সিজানের হাতের সাথে হাত মেলায়,সিজান ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি দেয়।তখন পেছন থেকে সামিয়া পুতুল কে ডাকতে ডাকতে আসে,সামিয়া পুতুলের সামনে এসে বলে,

-কিরে পুতুল তোকে কত করে ডাকলাম শুনিস নি?

পুতুল মাথা নাড়ায়,যার অর্থ সে শুনে নি।এতক্ষণে সামিয়া সিজানকে লক্ষ করে,হাসি মুখে বলে,

-আরে সিজান বাবা কখন আসলি?

সামিয়া সিজানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে পুতুলের দিকে একদম হা করে তাকিয়ে আছে,আর পুতুল মাথা নিচু করে আছে,সামিয়া একবার সিজানের দিকে তাকায় আরেকবার পুতুলের দিকে,তিনি আবার বলে উঠে,

-কিরে?

সিজান এইবার পুতুলের থেকে চোখ সরিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে,মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলে,

-আ আন্টি!আসসালামু আলাইকুম।আমি ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?আসলে এইতো এখনি আসলাম আন্টি,আঙ্কেল ভালো আছে?

সিজানের এমন উল্টাপাল্টা কথা শুনে সামিয়া ফিক করে হেসে দেয়,পুতুলেরো খুব হাসি পায় কিন্তু কোনো রকম চেপে রাখে,সামিয়ার হাসি দেখে সিজান বুঝতে পারে সে কিসের মধ্যে কি কথা বলে ফেলেছে,তার মাথা পুরো গেছে।সামিয়া কিছুক্ষণ হেসে আবার সেই হাসতে হাসতেই বলে,

-ওয়ালাইকুম সালাম!আমি ভালো আছি তোর আঙ্কেলও ভালো আছে,,

সিজান হালকা হাসার চেষ্টা মাথা চুলকায় আবার পুতুলের দিকে তাকায়,সামির এইবার বিরক্তি নিয়ে সামিয়ার উদ্দেশ্য বলে,

-মা এই ফাজিলকে ভালো হতে বলো আর কিসের জন্য এখানে এসেছে সেটা জিজ্ঞেস করো।পুতুল আসো,,

পুতুল কিছু বোঝার আগেই সামির পুতুলের পেছনের কলার ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়,পুতুল ছটফট করছে পা এদিক ওদিক করছে কিন্তু সামিরর থামছে না।আবার এতো দ্রুত হাঠছে যে পুতুল তাল মেলাতে পারছে না।

এদিকে সিজান তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে,সে তো খুশি হয়ে গেছে ”her name putul,yeah i see” কথাটা বিড়বিড় করে বলে মুচকি মুচকি হাসে,সামিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

-কিরে কোন ধ্যানে গেলি?

-হে না না কিছুনা,সামির আমাকে পাত্তা দিলো না কেন?

-তোর সাথে রাগ করে আছে,

-আমি কত বার সরি বলেছি।

-আচ্ছা ভেতরে যা যেয়ে কথা বলে দেখ কি বলে,

সিজান এইবার সতর্ক ভাবে চারো দিকে তাকিয়ে সামিয়ার কাছে এসে আস্তে করে বলে,

-আচ্ছা আন্টি কেসটা কি বলো তো এই বেবি গার্লটা কে?

-হুম সেটা নায়হ তার কাছ থেকেই যেনে নিস।

-উম তোমার ছেলে যে! উলটো আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখবে,বলো না কে?

-চেয়াম্যান এর মেয়ে!

-এই পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানটা?

-হুম!

-ও মাই বার্বি ডল ওনার মেয়ের নামের অনেক প্রসংশা শুনেছি আমি।কিন্তু দেখা হয় নি কখনো,অনেক সুন্দর শুনেছিলাম।কিন্তু এতো কিউট হবে ভাবতেই পারি নি পুরো বেবি ডল!কিন্তু ও এখানে কি করে?

-সেটা পরে বলবো নি তুই এখন ভেতরে যা,আমি একটু আসছি!

-ওকে কিউটি পাই!

সিজান একবার তার শার্টের ছেড়া বোতামের অংশে তাকায় তারপর শার্টা একটু উপরে টেনে চোখে সানগ্লাস পরে সেই ভাব ভেতরে যায়।

সামির পুতুলকে টেনে তার ঘরে নিয়ে যায় পুতুলকে ছেড়ে দিতেই,পুতুল তার ঘারে হাত দিয়ে বলে,

-আহ ঘারটা গেলো রে,একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে ঘার ধরে টেনে আনতে আপনার বাঝলো না?

-ঘারের রগ বাকা থাকলে তো ব্যথা পাবেই!

-মানে?

-তোমাদের বাসায় কল দিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম বলেছিলে?

-বললাম তো পরে বলে নিবোনি।

-ওই পরে আর কখন আসবে?

-আমি বলতে বাধ্য নই!

বলে মুখ ভেংচি দিয়ে ঘুরে যেতে থাকে পুতুল,কিন্তু তখন সামির আবার পুতুলের হাত ধরে সামনে এনে দাড় করায়,

-তুমি কথা বলবা না?

-NO

-দড়িটা কই রাখলাম

-আমি কি ভয় পাই নাকি?

-ওহহ আচ্ছা তাই?

-জ্বী!!

সামির এইবার পুতুলের দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,পুতুল ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।সামির তার আরেক হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে প্রণয় কে কল দেয়,এদিকে পুতুল হাত ছুটানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,উল্টো আরো নিজে ব্যথা পাচ্ছে,মনে হচ্ছে এখনো হাতের হাড্ডি ভেঙে গুড়ি গুড়ি হয়ে যাবে।চেয়াল শক্ত করে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যার্থ!সামির তার কানে ফোন দিয়ে বলে,

-রিং হচ্ছে কথা বলো।

-বলবো না,

-শুধু শুধু কি তোমাকে ঘাড়ত্যাড়া বলি?এখন বেশি কথা না বলে বাড়ির প্রত্যেক মানুষের সাথে কথা বলবে,না হলে তোমাকে আজকে ছাড়ছিনা।

পুতুলের জান যায় যায় অবস্থা!অবশেষে আর না পেরে হার মানতে হয়,কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর প্রণয় কল ধরে অস্থির স্বরে বলে,

-হ্যালো সামির,পুতুল কই?ওকে বলো নাই কল দিতে,ও কেমন আছে এখন।

পুতুল চুপ করে থাকে৷ কিছু বলে না,সামির ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়।ইশারা করে কথা বলতে,কিন্তু পুতুল তাও কিছু বলে না,ওদিক দিয়ে প্রণয় হ্যালো হ্যালো করতেই থাকে।পুতুলকে কোনো রেসপন্স দিতে না দেখে সামির আরেকটু জোরে হাতে চাপ দেয়,এইবার পুতুল হ্যালো বলে ওঠে।পুতুলের কন্ঠ শুনে ওপাশ থেকে প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর কাপাকাপা স্বরে বলে,

-কাঠপুতুল!

পুতুল আবার চুপ হয়ে যায়,ভাতরের কান্না গুলো সব দলাপাকিয়ে আসছে,’যে নামটার জন্য তার ভাইয়ের প্রতি বিরক্ত হতো সেই নামটাই আজকে শুনে মনে হচ্ছে কত বছর পর শুনলাম।’মনে হচ্ছে এখনি হু হু করে কেঁদে উঠবে।সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়,কিন্তু পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে।পুতুল ভেজা চোখে একবার সামিরের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়,ওপাশ থেকে প্রণয় আবার ‘হ্যালো’ বলে উঠে।পুতুল একদম নিচু স্বরে বলে,

-হুম

-কেমন আছিস?

-হুম ভালো!!

-রাগ করেছিস?

-উহুম!!

-তোর কি ওখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে?

-না!!

আবার দু জন নিশ্চুপ হয়ে যায়,এভাবে প্রায় কয়েক মিনিট পার হয়ে যায়,আবার প্রণয় বলে,

-পুতুল!

এইবার পুতুল কান্নারত স্বরে বলে উঠে,

-ভাইয়া,ভাইয়া আই মিস ইউ ভাইয়া।

-মিস ইউ টু রে,,

এভাবে প্রায় দের ঘন্টার মতো বাড়ির সবার সাথে কথা বলে পুতুল।সারা ঘর পায়চারী করে করে কথা বলেছে,মনে হচ্ছে এক দিন হয় এক যুগ পর কথা বলছে।এদিকে সামির তো গালে হাত দিয়ে একবার সোফায় তো একবার বিছানায় বসছে,কথা বলা শেষ হলে পুতুল সামিরের সামনে এসে তার হাতে ফোন দেয়,সামির তার ফোন পকেটে রাখতে রাখতে বলে,

-কথা বলবে না বলে এখন প্রায় দের ঘন্টা কথা বললে।

-আমার হাতের তো হায়াত শেষ করেছেন।

-আমি একটু ধরেছি তাই হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে,আর ওই ছেলেটা যে কমড় ধরে শুভ দৃষ্টি করছিলো তখন বুঝি আরাম লাগছিলো?

-এই আজাইরা কথা বলবেন না তো।

-হুম সত্যি কথা বললেই আজাইরা।এখন এতো কথা বাদ দিয়ে এদিকে আসো!

তার পাশে বসার ইশারা করে,পুতুল অবাক হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে,সামির দাঁড়িয়ে যায়।সামনের ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা স্প্রে এনে পুতুলের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় বসায়,সে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পুতুলের পায়ে স্প্রেটা করে দেয়।পুতুল হা করে আছে,’ব্যথা দিল হাতে আর স্প্রে করলো পায়ে আজিব!’

চলবে..!

#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৩

পুতুল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে,তার দৃষ্টি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা ছেলেটার দিকে,অর্থাৎ ‘সিজান’!সিজান বসে বসে ফোনে গেম খেলছে,পুতুলের আসার শব্দ শুনে সিজান সিঁড়ির দিকে তাকায়,পুতুলকে নামতে দেখেই তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কপাটি বের করে হাসি দেয়,তারপর চোখ না সরিয়ে ওভাবেই তাকিয়ে থাক।
এদিকে এক ধ্যানে এভাবে তার দিকে কাউকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ইতস্ত বোধ করে পুতুল।এখন ঘুরে যাওয়ারো কোনো উপায় নেই,পুতুল কি করবে ভেবে ভেবে সিঁড়ি দিয়ে নেমে অন্যদিকে যেতে,থাকে,সিজান তা লক্ষ করে পেছন থেকে পুতুলকে ডাক দেয়,পুতুল থেমে যায়।’এই ভয়েই আছিলো সে,ধুর এখন কি বলবে?’ পুতুল আস্তে আস্তে পেছনে ঘুরে,সিজান আবার বলে,

-হেই বার্বি গার্ল!ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?

পুতুল সিজানের দিকে ঘুরে,হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,

-ওইযে ওখানে আন্টির কাছে যাই।

-কোথাও যাওয়া দরকার নেই এখানে এসে বস গল্প করি।

-না না আমি আন্টির কাছে যাই আন্টি হয়তো আমাকে ডেকেছে,

-তোমার আন্টি এখন বাসায় নেই,তোমাকে ডাকেও নি।তুমি এইসব কথা বাদ দিয়ে এখানে আসো।

পুতুলের বাধ্য হয়ে যেতে হয়,সিজানের থেকে অনেকটা দুরত্ব নিয়ে বসে।

-আরে এতো নার্ভাস ফিল করছো কেনো।ইতস্ত হওয়ার কিচ্ছু নেই,বস এখানে দেখো আলিয়া নাস্তা দিয়ে গিয়েছে তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।বাই দা ওয়ে,আমি সিজান নাম হয়তো শুনেছো তখন!আমি সামিরের ফ্রেন্ড এ বাড়ির সবাই আমাকে চিনে,আসলে সামির আমাকে বেশি বিশ্বাস করে তাই একটা কাজ দিয়েছিলো করতে,কিন্তু আমি কাজটায় সাকসেসফুলি হতে হতেও হতে পারি নি।তাই ও আমার উপর বর্তমানে অনেক রাগ করে আছে,তার জন্য এখানে আসতে হয়েছে।কিন্তু ও তো আমকে পাত্তাই দিচ্ছে না।এখন কিভাবে রাগ ভাঙানো যায় বলো তো কিউটি।

-আপনি আমাকে উনার রাগ ভাঙানোর টিপস নেওয়ার জন্য এতো সিরিয়াস ভাবে ডেকেছেন?

-হুম!আমি জানি তুমি পারবে প্লিজ।

পুতুল অবাক হয়,পাগল টাগল হয়েছে নাকি ছেলেটা আমি এ বাড়িতে আসলামি মাত্র এক দিন আমি কিভাবে এদের রাগ সম্পর্কে জানবো?

-না না আপনি ভুল ভাবছেন আমি তো এ বাড়িতে আসলামি কিছুক্ষণ হলো আমি কাউকে তেমন চিনিও না আমি কিভাবে..!

-আচ্ছা এটা নায়হ পারবে না,আমাকে হেল্পতো করতে পারবে?

-হুম পারলে অবশ্যই করবো ভাইয়া।

-থ্যাংকস!এই ওয়েট ওয়েট কি বললে?

-কেনো,বললাম আমি আপনার হেল্প করবো।

-না না তার পরে কি বললে?

-ভা ভাইয়া!

-What??are you kidding me?একটা বয়ফ্রেন্ড এর বয়সি ছেলেকে তুমি ভাইয়া বলছো?সিরিয়াসলি!

-না মজা কেন নিবো?

-অবশ্যই মজা নিচ্ছো!আর যাই হোক ভাইয়া ডাকবে না ওকে,তোমার মতো একটা বার্বি ডলের মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা এই দিলে লাগে দিলে।

নিজের বুকে হাত দিয়ে যন্ত্রণার মতো এক্টিন করে বলল সিজান!(ওভার এক্টিং এর দোকানদার)

-তাহলে কি ডাকবো?

-তোমার ইচ্ছে,’But without vaiyaa’

-আপু ডাকি?

-মজা নিচ্ছো!

-অবশ্যই না।

-না অন্য কিছু ট্রাই করো।

-না আপুই ঠিক আছে,,

-আমি কি মেয়ে নাকি যে আপু ডাকবে?

-কেন কোথাও কি এগ্রিমেন্ট সাইন করে লিখে দিছে নাকি যে মেয়ে হলেই শুধু আপু ডাকা লাগবে ছেলেদের না?

-না তেমন কিছু না,তবুও!

-কোনো তবুও টবুও না আমি আপনাকে আপু বলবো না হয় ভাইয়া,এখন আপনার ডিসিশন!

-আচ্ছা থাক আপুই ডেকো,তবুও ভাইয়া না।

-ওকে,আপুউউউউউ!

-ইজ্জতের ফালুদা!

সিজানের কথা শুনে পুতুল খিল খিল করে হেসে দেয়,সিজান পুতুলের হাসি দেখে বুঝতে পারে সে খুব মজা পেয়েছে,সিজানো কিছুটা হেসে বলে?

-হেপি?

-হুম!

সিজান এইবার আবার এক্টিং করতে করতে পুতুলের কাছে এসে বলল,

-তুম খুশ তো মেভি খুশ মেরি জান।

পুতুল সিজানের হুট করে এগিয়ে আসা দেখে ভরকে যায়,তারপর সিজানের কথা শুনে আবার হেসে দেয়।সিজানো হাসে,এমন সময় সামির নিচে নামে,তার চোখের দৃষ্টি এদের দু জনের দিকেই,কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে,সামিরকে দেখে সিজান আবার তার যায়গায় এসে পরে।পুতুলো চুপসে যায়,এখন বুঝতে পারে অন্য বাড়িতে এসে এরকম শব্দ করে হাসাটা ঠিক হয় নি।সামির এসে তাদের পাশের সিঙ্গেল সোফাটায় বসে,দুজোনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,সিজান নির্বিকায় সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে,পুতুল তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সামির কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর পুতুলকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর স্বরে বলে,

-তোমাদের বাসা থেকে তোমার সব বই খাতা এনেছি,কালকে থেকে স্কুলে যাবে।

পুতুল কোনো উত্তর দেয় না শুধু মাথা দুলায়,সামির ফোন চালাতে থাকে।আবার সব নীরব হয়ে যায়,কিছুক্ষণ পর সিজান পুতুলের দিকে তাকায় পুতুলও সিজানের দিকে তাকিয়ে সামিরের সাথে কথা বলতে বলে,,সিজান সোজা হয়ে বসে,হালকা কেশে ধীর স্বরে বলে,

-সামির!

সামির সিজানকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে উচ্চ স্বরে আলিয়াকে ডেকে বলে,

-আলিয়া কফি নিয়ে আয়।

ওপাশ থেকে আলিয়া ‘আসতেছি’ বলে।এদিকে সিজানকে এমন সরাসরি ইগনোর করা দেখে পুতুলের খুব হাসি পায়,কিন্তু বহু কষ্টে তা চেপে রাখে,হাসি লুকানোর জন্য পুতুল ঠোঁট কামরে ধরে।সিজান প্রথম বার কিছু মনে করে না সে জানতো এমনটাই হবে,সে আবার বলে,

-সামির!

এইবারো সামির আলিয়াকে ডেকে উঠে,

-আলিয়া জলদি নিয়ে আয়।

এখন যেনো পুতুল আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না ফস করে হেসে দিলো,ফলে সামির সিজান দুজনেই তার দিকে তাকায়।পুতুল সেটা খেয়াল করে নিজের দু হাত দিয়ে নিজের মুখ আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে রাখে,সামির চোখ ঘুরিয়ে নেয়।সিজান পুতুলের দিকে করুন চোখে তাকায়,পুতুল আবার চুপ হয়ে যায়।আলিয়া সামির আর সিজানের হাতে কফির মগ দিতে দিতে বলে,

-পুতুল তোমাকে খালা ডাকতেছে,

পুতুল যেনো জান ফিরে পায়,এতক্ষণ এই দুই ছেলের মাঝ খানে থেকে প্রাণ যেতে যেতে এসে পরেছে।পুতুল সিজানকে “আমি যাই” বলেই দেয় দৌড়।পুতুল যাওয়ার পর সামির কফি খেতে থাকে,সিজান বলে,

-ওর সামনে এরকম না করলেও পারতি।

-কেন আমি এসে কি তোদের ডিস্টার্ব করলাম?

-ধ্যাত!দোস্ত প্লিজ এইবার লাস্ট চান্স এইবার যদি ওদেকে আমি না বের করতে পেরেছি তাহলে তুই আমাকে ত্যা’জ্য বন্ধু করে দিস তাও এখন রাগ করে থাকিস না।শুধু আমার একটা ভুলের জন্য আমি তাদের ধরতে পারলাম না,এখন তো আমি কিছুটা হিন পেয়েছি এখন আমি খুব শীগ্রই তাদেরকে ধরে তোর কাছে এনে দিবো।প্লিজ লাস্ট চান্স!

-আমি এই বিষয় নিয়ে এখন কথা বলতে চাচ্ছি না।নাও এখন তুই যেতে পারিস।

-প্লিজ দোস্ত এমন করিস না।

-আচ্ছা!তবে এটাই লাস্ট এইবার যদি না পারিস তাহলে তর খবর আছে।

-Thanks a lot.!

-আরেকটা কথা ভেবে দেখেছিস?

-কি?

সিজান একটু সতর্ক হয়ে চারো দিকে তাকিয়ে সামিরের একটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

-এই বার্বি ডলটাকে কিন্তু আমাদের কাজে লাগতে পারে।

সামিরের চেয়াল শক্ত হয়ে যায় চোখ রাঙিয়ে সিজানের দিকে তাকায়,

-ওকে নিয়ে একটা বাজে চিন্তা ভাবনা করবি তো জ্য’ন্ত পু’তে দিবো তোকে আমি।নিজে পারলে করবি না হয় হাতে চুরি পরে ঘরে চুপটি মেরে বসে থাকবি।দরকার নেই আমার কারো আমি নিজেই সব পারবো।

-আহা রেগে যাচ্ছিস কেনো,আচ্ছা বাবা ওটা বাদ,এখন নতুন কিছু ভাবতে হবে।

কফি খেয়ে সামির টেবিলে মগটা রাখে,পরনের টি শার্ট হালকা একটু সোজা করে সিজানকে ওয়ার্নিং এর মতো করে বলে,

-আর হ্যা পুতুলের সাথে বেশি মিশবিনা।

সিজানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সামির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।সিজান ভাবতে থাকে কি করা যায় এই ব্যডার জন্য তো সে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে,কিন্তু সেটা আদৌকি সবাই মেনে নিবে?

________
-ঠিক মতো নজর দারি করছো তো?

-হ সার আমি তো আপনারে সব বার্তা দেই

-হুম ঠিক আছে,

-তবে সার আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে কখন কি হইয়া যায় কইতে পারবো না।দুই দিক দিয়া আক্রমণ করলে করার কিছু থাকবো না।

-আরে তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না,আমি এমনভাবে প্ল্যান সাজিয়েছি কেউ আমাদের হাত ছাড়া হতে পারবে না।আচ্ছা এখন রাখো,,

-আচ্ছা।

ওপাশ থেকে আগেই ফোনটা কেটে গেলো।পাতলা ছাপ ওয়ালা শার্ট যার অধিকাংশ বোতাম খোলা।চেক ওয়ালা লুঙ্গী পরিহিত লোকটি আরাম করে বসলেন তার চেয়ারটিতে,তখন একজন মহিলা হাতে পানের ডিব্বা এনে সামনে রাখতে রাখতে বলল,

-আজ খুব খুশি মনে হচ্ছে সাহেবকে।

-বুঝলে আজ আমি সত্যি খুব খুশি।আর মাত্র কিছু দিন তারপর আমার এতো দিনের সপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

-বাহহ ভালো তো।

-হুম!ওকে সব বুঝিয়ে দিয়েছো তো?

-ও তুমি চিন্তা করো ওদিকের কাজ হয়ে যাবে।

-হুম কাকে পাঠিয়েছি দেখতে হবে না।

বলেই তারা দু জন হেসে উঠলো।

চলবে..!