#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২২
মাঝারি সাইজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আধ ভাজ হওয়া চকলেট কালারের শাড়ি গায়ে পেচিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে পুতুল।প্রায় আধ ঘন্টা হতে চলল এই শাড়িটা নিয়ে এমন লাগায় দিছে,একবার গায়ে জড়াচ্ছে তো একবার শরীর থেকে শাড়িটা ফেলে বলতেছে না পড়বোনা।তার পাশের চৌকির পায়ায় মাথা ঠেকিয়ে বসে বসে এর নাটক দেখছে মারজিয়া।সেই কখন থেকে বসে বসে এর নীর্তকালাম দেখে যাচ্ছে সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে,
এভাবে আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পুতুল শাড়িটা মারজিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-ধুর থাক আমার এইসব শাড়ি ফাড়ি পড়া লাগবেনা ভাই।আমি আমার এইসব ড্রেসেই ঠিক আছি।একটা কাজ কর শাড়িটা তুই পড়ে নে তোকে সুন্দর লাগবে,এমনিতেও শাড়িটা তো তোরই।
ধুক করে উঠে মারজিয়া, ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে পুতুলের দিকে তাকায়।এক ভ্রু উঁচু করে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-আমি রাস্তা দিয়ে এতো কষ্ট করে শাড়িটা টেনে আনলাম এখন তুই বলছিস পড়বি না?
-হুম তাই তো বললাম তুই পরে নে।এমনিতেও তো তুই শাড়ী পড়তে পছন্দ করিস।
-কেন আমি কেন পড়বো আমার বিয়ে লাগছে নাকি,আর যানি না চিনিনা কে দিয়েছে সেটারও কোনো আন্দাজ নেই তাহলে পড়বো কেনো।
পুতুল এইবার পড়ে যায় বেফাদে আর কি বলবে মুখে আসছে না।আবার একটা কিছু মাথায় আসতেই চট করে বলে ফেলে।
-চিনি না জানিনা মানে,এমনো তো হতে পারে তোর মা তোকে সারপ্রাইজটা দিয়েছে কিন্তু এখনো বলে নাই।
-আমার আম্মু কেন আমাকে সারপ্রাইজ দিবে আজকে কি বিশেষ দিন নাকি।তা ছাড়া আমার আম্মু ওসব অর্ডার ফর্ডার কিছু বুঝেনা।
-উফফ মারজিয়া কথার এতো প্যাচ ধরিস কেন।মনে কর এটা তোর কাছের কেউ দিয়েছে এইবার পড়ে নে প্লিজ বোন আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
-কখনোই না,
-তোর এই জেদ এর জন্যই আর ভালোলাগেনা।প্লিজ একটু পর অন্ধকার নেমে আসবে তখন আর বেশিক্ষণ বাহিরে থাকতে পারবোনা।
এভাবে কিছুক্ষণ অনুনয় করার পর।অবশেষে মারজিয়া কিছু একটা ভেবে শাড়িটা পরে নেয়।পুতুল তো খুশিতে একটা লাফ দেয় মারজিয়ার সন্দেহ লাগে এইসব দেখে।সামনে এসে যখনি পুতুলকে জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে স্নিগ্ধা এসে লাফাতে লাফাতে বলে,
-ফুপি ফুপি তোমরা কই যাও আমিও যাবো আমিও যাবো ফুপি।
এই সময়ে স্নিগ্ধাকে দেখে পুতুলের কপালে অটোমেটিক হাত চলে যায়।এইবার কি হবে?এখন যদি এই মেয়ে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে তাহলে তো সব ভেস্তে যাবে হায় আল্লাহ।
ভাবনার মাঝেই পুতুল দেখে মারজিয়া স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বলছে
-হ্যা যাবে তো আমাদের সাথে আমি নিয়ে যাবো তোমায়।
চোখ বড় বড় করে ফেলে পুতুল।
-মানে কি আমরা ওকে নিবো কেন?এ্যাইই না স্নিগ্ধা জিদ ধরবে না বলে দিলাম
-আরেহহ তুই চুপ থাক ও আমাদের সাথে গেলে কি হবে?যাও স্নিগ্ধা তুমি রেডি হয়ে আসো,আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
বলে স্নিগ্ধাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় মারজিয়া।স্নিগ্ধা নেমেই পুতুলের দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হেসে দৌড় দিয়ে চলে যায় রেডি হতে।পুতুল রাগি লুক নিয়ে মারজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোরে পাকনামি করতে বলছে কে?
-তো ও বাচ্চা মানুষ যেতে চায়ছে যাক না।
-ওরে নিলে কি আর তোরে লাগতো?
-মানে?আর এই ওয়েট তুই তো আর তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাবি না যে ওকে নিলে প্রবলেম হবে।
-ধ্যাৎ ত্যাড়ি।
হঠাৎ মারজিয়া ভ্রু কুঁচকায় ভালো করে পুতুলকে লক্ষ্য করে দেখে,সবসময় সে লম্বা স্কার্ট পড়ে থাকে কিন্তু আজকে তার পড়নে লাল রঙের হাফ ফ্লাওয়ার হাতার একটা নরমাল কামিজ কালো পায়জামা আর সাদা জর্জেটের ওড়না।অবাক হয়ে বলে,
-তুই থ্রি পিস পড়েছিস?
পুতুল নিজের দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জা পেলো বধোয়।
-হুম সুন্দর লাগছেনা?
-হুম তা তো বটেই কিন্তু কামিজ এক কালার পায়জামা এক কালার আবার ওড়না?
-তুই চুপ থাক দিয়েছিস তো একটা ভেঝালে ফেলে এখন এটাই করতে হবে,
-কি??
-বেশি কথা বলবিনা একদক চুপ থাকবি,আমার সাথে চল।
বলে পুতুল মারজিয়ার হাত ধরে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।বাড়ির বাহিরে আসতেই তারা শুনতে পায় স্নিগ্ধা ফুপি ফুপি করে চিল্লাচ্ছে,পুতুল আর উপায় না পেয়ে মারজিয়াকে বলে,
-জুতা খুল?
-কেনো
-শাড়ি পড়ে রেস করতে পারবিনা জুতা খুল
-রেস করবো মানে কি?
-বেশি কথা বলছিস!
মারজিয়া ঠোঁট উলটে পা থেকে জুতা খুলে নেয়।পুতুল মারজিয়ার হাত শক্ত করে ধরে দৌড় দেয়।শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়ে কাচা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে দুজন হাপাতে থাকে,মারজিয়া পুতুলের গায়ে হালকা চাপড় দিয়ে বলে,
-মেয়েটাকে আনলে কি হতো?
-সব যেতো
-মানে?
-এতো প্রশ্ন করস কেন বোইন আয় আমার সাথে,
তারপর তাড়া আবার হাঠতে থাকে,মারজিয়া শাড়ীর কুচি ধরে হাঠছে,পুতুল এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঠছে।বার বার হাতের ফোন চেক করছে,এই প্রথম এরকম একটা উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে উপরে একদম নরমাল থাকলেও ভেতরে যে ঠিক কত নাম্বার যুদ্ধ চলছে সেটা সে নিজেও জানেনা।আচ্ছা এটা কি সে নিজের সার্থের জন্য করছে নাকি কারো খুশির জন্য?এই কয়দিনে কি ভালো করে ভেবে দেখেছে জিনিসটা?এখন মাথায় যেনো সব গোলগোল্লা খেলছে।
সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে,সাদা কালো আকাশটা হালকা লাল হলুদে আবদ্ধ হচ্ছে,হালকা হালকা বাতাসো বইছে।ব্রিজের একদম কোনা দিয়ে এই প্রাকৃতীক দৃশ্যটা অনূভুব করতে করতে আপন মনে হেটে যাচ্ছে পুতুল আর মারজিয়া।মারজিয়ার কিয়ৎক্ষণের জন্য মনে হলো মাথার হিজাব খুলে চুল গুলো খুলে হালকা বাতাসের সাথে দোল খেলাতে,যেটা সামনের পুতুল মেয়েটার চুলে দৃশ্যমান তার একটু সামনেই পুতুল ব্রিজের রেলিং ধরে নদী দিকে তাকিয়ে হাঠছে,ফ্রেন্ডশিপের এই প্রথম তাকে কোনো থ্রী পিস পড়তে দেখলো মারজিয়া।ফ্লাওয়ার হাতার কামিজ আর তিন রঙের এই উদ্ভদ ধরণের জামা পড়েও পুতুলটাকে অদ্ভুত ধরণের সুন্দর লাগছে,সাইজে তার থেকে একটু ছোট হলেও পেছনের চুলের গোছা তার থেকেও লম্বা,কেউ এক পলক দেখে ঠিক মতো বলতেই পারবে না এটা কি মানুষ নাকি এনিমির কোনো এক পুতুল।গুলুমুলু গালটায় একটি চাপ দিতেও যেনো হাত ডেবে যায়।
খানিকটা হাসলো মারজিয়া।আবার তাকালো সেই হলদে নীলাভ আকাশের পানে,বুক চীরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো কেনো এলো সে নিজেও হয়তো জানেনা।আবার একবার চোখ ঘুরিয়ে ব্রিজের অন্য সাইডে তাকালো যেখানে রাস্তার স্টিট ফুডের দোকান গুলো সবে চালু করা হয়েছে,এখনি প্রত্যেকটা দোকানে মানুষের লাইন লেগে আছে,যেটা সবসময় হয়ে থকে।সে জানে পুতুল এখানে হাঠতে এসেছে,কিন্তু রাস্তার পারে এতোগুলো খাবার দেখেও পুতুলের কোনো সংকেত না পেয়ে বেশ অবাক সে।তবুও কিছু বলল না।
হাঠতে হাঠতে তারা ব্রিজের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছে।তবুও পুতুল সামনের দিকে হেটেই চলেছে।আস্তে আস্তে পুতুল ব্রিজের নিচের মাঠের ঢাল দিয়ে নেমে যেতে থাকে।একেবারে নিচে নেমে উপরে তাকিয়ে দেখে মারজিয়া এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে,পুতুল হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
-আয়।
মারজিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়।ব্রিজ পর্যন্ত ঠিক ছিলো কিন্তু এই ভড় সন্ধ্যা বেলা মাঠে নামার ব্যপারটা ঠিক মানতে পারলোনা।
-আরেহহ পাগল নাকি,এই ভর সন্ধ্যা বেলা তুই এখানে নামছিস কেনো।এই যায়গাটা ভালো না উঠে আয়।ব্রিজেই ঠিক ছিলো।
পুতুল মারজিয়ার কথা শুনতে নারাজ সে জেদ ধরে মারজিয়াকে বাধ্য করে নিচে নামতে।মারজিয়া নামতেই পুতুল একটা কিউট হাসি দিয়ে তার হাতটা ধরে সামনে এগোতে থাকে,মারজিয়া অনেক বাধা দেয় কিন্তু পুতুল শুনে না মারজিয়াকে টেনে নিয়ে যায়।আস্তে আস্তে তাড়া মাঠের আরো গভীরে যেতে থাকে,এই সাইডটাতে তাও দু একজন মানুষ ছিলো কিন্তু এখানে কাকের ডাক ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।কিছুটা দূরে দুটো লম্বা তাল গাছ আছে যেটাকে সবাই জোরা গাছ বলে চিনে,আপাতত গাছ দুটি মারজিয়ার কাছে অস্পষ্ট কিন্তু সেখানে কিছু ছায়ামানব আছে সেটা স্পষ্ট। মারজিয়া শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ করে কানের সামনে পুতুল চিল্লিয়ে বলে উঠে,
Happy Birthday…!!
মুহূর্তেই সামনের সেই ছোট্ট যায়গাটা সোনালি রঙের বাতিতে আবদ্ধ হয়ে যায়।চারোদিক ঝলকাতে থাকে,তার সাথে দেখতে পায় দুজন চেনা মুখমণ্ডল ওয়ালা মানুষ। মারজিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়।চট করে মাথা ঘুড়িয়ে পুতুলের দিকে তাকায়।দেখে পুতুল খুশিতে লাফাচ্ছে,কিছুক্ষণ আগেও কিছুমূহুর্তের জন্য আন্দাজ করলেও এমন সারপ্রাইজড হবে ভাবতে পারলো না মারজিয়া।সে শুধু তার চোখ গুলো বড় বড় করে সামনের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে,
হ্যা সামনে আর কেউনা শয়ং সামির আর সিজান দাঁড়িয়ে আছে,উপস্থিত সবার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে মারজিয়ার এমন রিয়াকশন হবে তারা আগে থেকেই জানতো।তাই সামির নিজের মুখের হাসিটা আরো একটু প্রসারিত করে হালকা একটু সামনে এসে বলে,
-Happy Birthday Sister
পেছন থেকে পুতুল চনচল হয়ে বলে,
-হুম হুম বার্থডে বার্থডে সামির ভাইয়ের বোনের বান্ধুপির বার্থডে।
পেছন থেকে সিজান হেসে উঠে,এতক্ষণ খানিকটা অন্ধকার থাকলেও ছোট ছোট মরিচ বাতির আলোয় এই যায়গাটা আলোয় পরিপূর্ণ থাকায় সামনের সবকিছু স্পষ্ট!হাসির মাঝেই তার চোখ আটকে যায় শাড়ি সাথে হিজাব পরিহিত এক মেয়ের দিকে।সবসময় এর মতো নাকে বিন্দু ঘাম,যা তার গরমে লালচে হওয়া মুখ আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে।তার অবাক হওয়া মুখের পানে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো সিজান,
এদিকে পুতুলের ঘুড়িয়ে পেচিয়ে আবার ভাইয়া বলায় সামির নিজের কপালে কিছু ভাঝ টেনে এক পলক পুতুলের দিকে তাকায়।গত একদিন ধরে এই মেয়ে কত জ্বালিয়েছে শুধু মাত্র এই তিনটা ওয়ার্ড বলে,সেটা হয়তো নিজেও জানেনা।
মারজিয়া পুতুলকে টানদিয়ে নিজের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
-এইসব কি হচ্ছে পুতুল,এনারা এখানে কেনো?
পুতুল দাঁত বের করে হাসি দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিজান উলটো ঘুরে টেবিল ঠিক করছে এমন ভাব করে বলতে থাকে,
-আজকে আমার আর সামিরের এখানে ছোট খাটো একটা পার্টি করার কথা ছিলো।তাই আমরা এসেছিলাম এখানে যায়গা সিলেক্ট করতে তখন পুতুলের সাথে দেখা হয়ে যায়।সে খুব চিন্তিত ছিলো তার ফ্রেন্ডের বার্থডেতে কীভাবে সারপ্রাইজ দিবে,তখন সামির তাকে আমাদের সাথে বার্থডে সেলিব্রেট করার জন্য ইনভাইট করে।কিন্তু সেই বার্থডে গার্ল যে আপনি মিস ‘লাল টোম্যাটো ঝগড়ুয়ালি’ সেটা আমরা বিশেষ করে আমি জানতাম না।
মারজিয়ার রাগ হচ্ছে ভীষণ বড়সড় ধরণের রাগ হচ্ছে,সেটা যে এই জায়গায় আসার জন্য তা না এরকম ভাবে সেলিব্রেট করার জন্য তাও না এইযে সিজান যে তাকে ‘লাল টোম্যাটো ঝগড়ুয়ালি’ হিসেবে সমন্বয় করলো সেটার জন্যও না ওর রাগ লাগছে টানা একটা দিন পুতুলের সেকেন্ডের পর সেকেন্ড মিথ্যা বলার জন্য।কি বোকা মেয়ে হ্যা সামির ভাইয়ের কথা নাহয় মানা যায় কিন্তু জানা নেই কওয়া নেই একটা লুচু ছেলেকে তার ফ্রেন্ড বানালো সেটা তার সমস্যা না সমস্যা হচ্ছে যাকে সে দু চোখে দেখতে পারে না পুতুল তার কাছেই কেনো এইরকম এর্যাঞ্জ করলো।
মারজিয়া শুধু ফুসছে,আর ওই ফুসাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে পুতুল সিজানের কাছে গিয়ে টেবিল সাজাতে থাকে,মারজিয়া শুধু অবাক হয়ে দেখছে পুতুলের কান্ড।সামির একবার পুতুল সিজান আরেকবার মারজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আসুন প্ল্যান অনুযায়ী যখন সবকিছু হয়েই গিয়েছে তাহলে আর এতটুকু বাকি রাখবেন কেনো।
বলে মারজিয়াকে হাত দিয়ে সামনে যেতে ইশারা করে সামির।মারজিয়ার এইবার কেনো যেনো খানিকটা স্বস্তি পায়,পুতুল হয়তো তাকে খুশি করার জন্যই এদের সাথে জইন হয়েছে,এখন আর রাগ করে থাকতে পারলোনা।মারজিয়া সামনে যেতেই সিজান সোজা হয়ে দাঁড়ায়।হালকা কেশে মারজিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-সেদিনের এ’ক্সি’ডে’ন্টে’র জন্য আমি মোটেও সরি নই।কারণ আমি বলবোনা,আজকে যেহেতু কোনো আমাদের উছিলায় দেখা হয়েই গিয়েছে তাও এই বিশেষ দিনে,তাই আপনার সাথে আর কোনোরকম ঝগড়া করতে চাচ্ছিনা মিস! অন্য একদিন করবো ইনশাআল্লাহ।আর হ্যা আজকে কিন্তু আমারো শুভ দিন মানে জন্মদিন।
এতক্ষণ সিজানের মতো সেও কেনো জানি তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।এরমধ্যে কয়েকবার ঠোঁট চেপে হেসেছেও।শেষের কথাটা শুনে সে অবাক হয়।দুজনের জন্মদিন একি দিনে?খানিকটা ইতস্তবোধ নিয়ে বলে,
-হে হেপি বার্থডে।
সিজান আবারো তার সেই ঠোঁট বাকানো হাসি দেয়,যা অন্য সময় মারজিয়ার কাছে লুচু লুচু মনে হলেও আজকে খারাপ লাগছে না।সিজান নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে তার চুল কিছুটা ঝাড়া দিয়ে বলে,
-সেমটু ইউ।
-ধন্যবাদ!
এবার দুজন চুপ হয়ে যায়।কিন্তু সামির এদের দিকে খেয়াল না করে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছে,পেছন থেকে পুতুল খানিকটা বোরিং স্বর টেনে বলে,
-এইবার তো কেকটা কাটো ক্ষুদা লাগছে।
মারজিয়া নিজের অজান্তেই নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসে।
তারপর তারা কেক কাটে,প্রথমে চাকুটা মারজিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলেও পরে পুতুলে বলে,
-আরে আজকে তো সিজান আপুরও বার্থডে ওনাকেও চাকুটা ধরতে দে,আর কেক তো একটায়।
তখন মারজিয়া খেয়াল করে টেবিলে রাখা ছোট মোট একটা কেক যার পুরোটা মনে হচ্ছে চকলেট দিয়ে ভরে রেখেছে,তার উপরে লেখা,
“Happy Birthday to you”
“Marziya❤️Sizan”
সিজান আলতো করে মারজিয়ার হাত ছোয় এভাবেই তাদের কেক কাটা খাওয়া শেষ হয়।চারটা বেতের চেয়ারে চারজন বসে।মারজিয়া পুতুলের হাত ধরেই আছে,সামির তখনো ফোনের মাঝে মুখ ডুবে আছে,সিজান হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
-এখনো কিছুক্ষণ সময় আছে ততক্ষণ একটু আড্ডা দেওয়া যাক?
পুতুল মাথা দুলায় যার অর্থ “হ্যা” মারজিয়া নিশ্চুপ।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই কানে গিটারের টুং টাং আওয়াজ শুনতে পায় তারা।মারজিয়া মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সিজান বাজাচ্ছে,মারজিয়াকে তাকাতে দেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আবারো মুচকি হাসি দিয়ে গান শুরু করে।সামিরও তার পকেটে ফোনটা রেখে গান অনুভব করতে থাকে।
এভাবেই সিজানের গলার গানের সুরে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো যায়গায়টা।মারজিয়া খুব মনযোগ সহকারে শুনছিলো।এইবার পুতুলকে এতো এতো থ্যাংকিউ দিতে মন চাচ্ছে কি সুন্দর সন্ধ্যা বিলাস ছিলো। মনে হচ্ছে এই সমসয়টা থমকে যাক আবার কি কখনো এরকম ভাবে দেখা হবে আড্ডা হবে?কে জানে চাইলেই হতে পারে।
চলবে..!
#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২৩
কথায় আছে,যখন সুখ আসে তখন যেনো চারোদিক দিয়ে একদম চম্মুকের মতো টেনে টেনে আসে।তখন যেমন খুশি আর থামানো যায়না আর চোখের বিন্দু বিন্দু পানিও আটকে রাখা যায়না।ঠিক সেই ভাবেই আজ মারজিয়ার দিন।একের পর এক সারপ্রাইজ পেতে পেতে শেষেরটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।অবাক হয়ে হা করতে করতে কখন যে মুখ হা হয়ে প্যারালাইজড হয়ে যায় বোঝা বড় দায়।
তখন তারা সন্ধ্যা বিলাসের সাথে কিছু স্মৃতি বিলাস নিয়ে বাসায় ফিরে পুতুল মারজিয়া।কিন্তু বাসায় এসেই যে আরো একটা চমৎকার ধরনের সারপ্রাইজ পাবে ভাবতেও পারে নি সে।প্রথমে মারজিয়া পুতুলকে বাসার সামনে রেখে নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই পুতুল তাকে জোর করে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়।নিচের রুমটা পুরো কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে আছে,মারজিয়া ভ্রু কুঁচকে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-কিরে এরকম অন্ধকার কেন বাসার সবাই কই?
তখনি আবার কে যেনো বলে উঠে, ‘মা মশা’ মারজিয়া চট করে মাথা এদিক ওদিক ঘুরায় কিন্তু কিছু দেখতে পারে না।আবারো জিজ্ঞেস করে,
-স্নিগ্ধার গলার আওয়াজ না?
তখনি চট করে বাড়ির সব লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই এক সাথে চিল্লিয়ে উঠলো।মারজিয়া আৎকে উঠে,চোখ মুখ খিঁচে কান হাত দিয়ে চেপে ধরে।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পর আওয়াজটা একটু কমে,পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে সামনে,পুতুলের বাবা মা ভাই ভাবি স্নিগ্ধা সহ তার মা দাঁড়িয়ে আছে।আবার হা হয়ে যায় সে,পাশ ফিরে পুতুলের দিকে তাকায় পুতুল চোখ টিপ দেয়।মারজিয়া বুঝে যায়।এই না তার জন্মদিন মনে রাখে নি বলে সারাদিন মন খারাপ করে বসে ছিলো আর আজকেই এতো এতো সারপ্রাইজ পেয়ে সে সত্যি অবাক।হা করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায় তার মায়ের কাছে,উনি ছলছল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে,মুখে এক ঝলাকা হাসি।চোখে পানিতে টুইটুম্বুর সে যানে এটা খুশির কান্না,আসলেই এদের মতো একটা পরিবার পেয়ে তারা মা মেয়ে খুবই ঋণী!ঠিক তাদের দুর্ভিক্ষর সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এখনো যেনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।মারজিয়া আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না,চোখের এক কোন দিয়ে টুপ করে পানি পরে যায়।পুতুল মা মেয়ের এমন ইমোশনাল অবস্থা দেখে,স্নিগ্ধার কাছে গিয়ে ওকে ধমকের স্বরে বলে,
-এখনি তোর মশা মশা করতে হলো?
স্নিগ্ধা তার মায়ের কোলে বসেই হাত নারিয়ে নারিয়ে পুতুলকে জবাব দেয়,
-দেকো তোমরা তখন আমর কাচ তেকে লুকিয়ে চলে গেছো তাতে আমি কিচু মনে করিনি পাপা বলেছে আমাকে চকলেট দিবে তাই এখনো চুপ আচি,নাহলে দেখতা তোমাদের প্ল্যান আমি কীভাবে নষ্ট করতাম।
-ওরে পুষকুনির পানিরে তোকে নিয়ে গেলে কি আমরা শান্তিতে ঘুরতে পারতাম?
-উপফ ফুপ্পি ওটা পুষকুনির পানিনা পুচকির নানি হবে।
পেছন থেকে প্রণয় স্নিগ্ধাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-ওইসব নানি টানি পরে দেখা যাবে,এখন তুই বার্থডে সেলিব্রেট কর তোর বান্দুবির।
তারপর তারা আবার কেক কাটে,এইবার পরিবারের সবার সাথে সুন্দর মুহুর্ত কাটায় মারজিয়া।এই দিনটা যেনো এক স্মৃতির পাতায় আটকে থাকবে,যেখানে তাদের মতো মেয়েদের এগুলো আশা করাটাও হাস্যকর সেখানে সে না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছে।
রাতে মারজিয়া পুতুলদের বাসায় থেকে যায়।এখন প্রায় এগারোটা নাগাদ।পুতুল আর মারজিয়া শুয়ে শুয়ে গল্প করছে,এরই মধ্যে মারজিয়া অনেকবার পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,সে কিভাবে তাদের সাথে এতো প্ল্যান করে না কি!কিন্তু পুতুল কিছু বলে না।তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলে,একটু পর মারজিয়া ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু পুতুলের চোখে ঘুমের কোনো নাম গন্ধ নেই,সে শুধু একটা কথা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ স্টোনে গিয়ে একটা মেসেজ দেখে আবার হাসে।এইটা তার দেওয়া দ্বিতীয় মেসেজ।
“এই অদ্ভুত ধরণের থ্রি পিসে পুতুলকে অদ্ভুত ধরণের সুন্দর লাগছে”
এই ছোট এক লাইনের কথাটাযে তাকে কি আনন্দ দিয়েছে সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।
সেখান থেকে বেরিয়ে পুতুল তার গ্যালারিতে যায় যেখানে আজকের মারজিয়া,সিজান,আর তার কিছু সংখ্যাক ছবি আছে।যেগুলো সিজান তাকে দিয়েছিলো।মোট সাতটা ছবির মধ্যে একটা ছবিতে সামিরকে দেখা যাচ্ছে,আর ওইটাই বার বার জুম করে দেখছে পুতুল।সেদিন মারজিয়া তাকে একা রেখে না গেলে আজকের মতো এতো সুন্দর মুহুর্ত আর অনুভূতিময় দিন কখনোই হয়তো পেতোনা।
সেদিন,মারজিয়া যখন জিদ করে পুতুলকে একাই মাঠে রেখে চলে যায়।তখন সেখানে পুতুলের সাথে দেখা হয় সিজানের,সাথে সামিরও ছিলো।তাকে এখানে একা দেখে সিজান জিজ্ঞেস করে,
-হেই বার্বি ডল তুমি এখানে একা!Why?
পুতুল একবার তাদের দুজনের মুখের দিকে তাকালো,দ্বিধায় পরে গেলো বলবে কি বলবে না।সিজান ভ্রু কুঁচকে আবার জিজ্ঞেস করে?
-কি হয়েছে তোমার সাথে কেউ আসে নি?
পুতুল মাথা দুলায়,যার অর্থ ‘হ্যা’ চারোদিকে তাকিয়ে বলে,
-কই তোমাদের বাসার কাউকে তো দেখছি না।
পুতুল মাথা নিচু করে বলে,
-এসেছিলো!মারজিয়া,কিন্তু ও চলে গেছে।
-চলে গেছে মানে,ওর কি কোনো কমনসেন্স নেই তোমাকে একা এখানে রেখে চলে গেলো।এই যায়গাটা তেমন একটা ভালোনা সেকি জানেনা?
-আসলে আপু কথাটা সেটা না।
-তাহলে কোনটা?
পুতুল আমতা আমতা করে মারজিয়ার জিন্মদিনের ব্যপারটা বলে।সে মারজিয়াকে না জানিয়ে তাকে বার্থডে সারপ্রাইজ দিতে চায়।চাইলে ফেমিলির সাথে দিতে পারবে,তাও একটু অন্যরকম ভাবে খুশি করতে চায়।
কথাটা শুনে সিজান কিছুক্ষণ ভাবে,মুহুর্তেই খুশি
হয়ে যায়।তারপর তাকে এই বুদ্ধিটা দেয় পুতুলের ভয় হয় কিভাবে কি করবে,তখন সিজান তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-আরে প্যারা নাই লিটল বার্বি ডল তোমার ওই লাল মরিচ চকলেট ফ্রেন্ডের জন্য এইটুকু তো আমরা করতেই পারি তাই না বল সামির।
এইবার পুতুল সামিরের দিকে তাকায়।এতক্ষণ সে চুপ করেই ছিলো।পুতুলের তাকানোর সাথে সাথে তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।পুতুল চট করে চোখ নামিয়ে নেয়।সামির বলে,
-ঠিক আছে।
-তোমার ফোন টা দাও আমি আমাদের দু জনের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি।
পুতুল তার ফোন এগিয়ে দেয়। সিজান পুতুলের ফোনে তার আর সামিরের নাম্বার সেভ করে দিয়ে বলে,
সব কিছুর প্ল্যান আমরা মেসেজে করবো ঠিক আছে?
পুতুল মাথা দুলায়। আবার চিন্তত স্বরে বলে,
-কিন্তু সবাইকে ম্যানেজ করবো কীভাবে?
-আরে বার্বি ডল তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করছো লাইক সিয়াসলি?আরেহ আমি জানি তুমি পারবে সব ম্যানেজ করতে,আর আমরা তো আছিই।সো নো টেনশন ওনলি চিল ওকে?
বলে সিজান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে হাত এগিয়ে দেয় পাঞ্চ করার জন্য।পুতুল খিলখিল করে হেসে সিজানের সাথে পাঞ্চ করে।
-তাহলে চলো সামিরের গাড়ি দিয়ে তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আসি।
বলে সিজান পুতুলের হাত ধরে সামনে এগুতে থাকে,আর সামির তাদের পেছন পেছন।ডাল দিয়ে উঠার সময় সিজান পুতুলের হাত শক্ত করে ধরলেও পুতুলের তার লম্বা স্কার্টের সাথে পা বেঝে পড়ে নিতে যায়।কিন্তু পেছনে সামির থাকায় তাকে ধরে নেয়।পুতুলের বুক ধুক করে উঠে,মনে হয় এখনি এখান থেকে পরে হাড্ডি সব ভেঙে যাবে।যখন মনে হলো পেছন থেকে কেউ ধরে আছে,তখন আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়।খানিকটা লজ্জা পায় হয়তো।তারপর সামির তার গাড়ি দিয়ে পুতুলকে তাদের বাসার সামনে নামিয়ে দেয়।এছাড়া সারা রাস্তায় গাড়িতে বসে সিজান আর পুতুল ননস্টপ বকবক করতে থাকে।বাড়ির সামনে আসতেই পুতুল নেমে যায়।পুতুল যাওয়ার একবার তাদের বাসায় আসতে বলে কিন্তু কেউ আসে না।
বাসায় ভেতরে এসে পুতুল চিন্তায় পরে যায় কি করবে,হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই ভাবির কাছে দৌড়ে গিয়ে বলে,
-ও ভাবিপু কিউটি ভাবিপু কি করো।
-আসলি তাহলে,তোদের ঘুরা শেষ হলো?
-হুম,শুনোনা।
-হুম বল
-কালকে মারজিয়ার জন্মদিন।
-ও তাই নাকি,ভালো তো কালকে ওকে আমাদের বাসায় আসতে বলিস।
-আরেহহ সেটার জন্যই তো তোমার কাছে আসলাম।চলো না কালকে আমরা সবাই মিলে মারজিয়াকে সারপ্রাইজ দেই।
-সারপ্রাইজ কিসের সারপ্রাইজ?
-আরে কালকে আমি মারজিয়াকে নিয়ে বাহিরে যাবো ঘুরার কথা বলে,ওকে বুঝতে দিবোনা।তোমরা ওর জন্য কেক আনবা রুম ডেকোরেশন করবা,দেন আমরা বাসায় আসলে সবাই মিলে সারপ্রাইজ দিবো ও অনেক খুশি হবে দেখিয়ো।
-সত্যি?আচ্ছা ঠিক আছে।
পুতুল খুশিতে লাফিয়ে উঠে,”লাভিউ ভাবিপু” বলে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ,পুতুল সিজান ভেবে তারাতাড়ি অ্যাপে ঢুকে দেখে সামির!অবাক হয় পুতুল তারাতাড়ি করে ম্যাসেজ চেক করে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়,ছোট্ট একটা ম্যাসেজ যেখানে লেখা ছিলো।
“পুতুলদের সবসময় পুতুল ড্রেস পড়তে হয় না। মাঝে মাঝে অন্য কিছুও ট্রায় করতে হয়।”
চলবে..!