#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮
মুখোমুখি বসে আছি, আলিশা আর অভ্র।অভ্র বললো,দেখো আমি মানছি আমি যা করেছি ভুল করেছি৷ এখন যা হয়েছে সব ভুলে যাও৷ আসো নতুন করে শুরু করি।
‘মুখে হাসি টেনে আলিশা বলে, ভুলে যাও বলা যতটা সহজ, ভুলে যাওয়া ততটা সহজ না। আমি কি করে ভুলে যাবো, সেদিনের কথাটা৷ আপনি কি বিহেভ করেছিলেন! দেখুন মুভ অন করুন। আপনি আপনার পথে আমি আমার পথে। রাস্তা ভিন্ন।
‘আমি তো ভিন্ন হতে দেবো না৷ ডিয়ার রেইনবো।
‘আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আগামী সপ্তাহে। এই দেখুন আমার হাতে, অন্যজনের দেয়া অলংকার।
‘অভ্র আলিশার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,এ হাতে আমার দেয়া অলংকার থাকবে,এক্ষুনি খুলে ফেল এটা৷
‘রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে অসভ্যতা করার মানে কি! ছাড়ো হাত।
‘তোমার খুলতে হবে না। আমি খুলে দিচ্ছি।
‘স্টপ পাগলামি করা বন্ধ করো! ছাড়ো বলছি।
‘অভ্র বালাটা খুলে ছুড়ে মারবে তার আগেই আলিশা বলে, বালাটা একজন মায়ের, সেটাকে অপমান করার অধিকার তোমার নেই মিস্টার অভ্র!
‘অভ্র আলিশার হাতে বালাটা দিয়ে বলে,যা হয়েছে সব কিছুর জন্য সরি। আর কখনো এমন কিছু হবে না৷ প্লিজ ফিরে এসো।
‘ফেরার সব পথ বন্ধ। আমি তোমার কাছে কিছুতেই ফিরবো না।
‘ফিরতে তোমাকে হবেই! হয়তো তোমার ইচ্ছে তে নয়তো জোড় করে ফেরবো।
‘আলিশা রিকশা ডেকে রিকশায় উঠে বলে , মামা দশ নাম্বার সেক্টর।
অভ্র আলিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলে,ভুল করেছি আমি, আর সে ভুলের শাস্তি আমি গ্রহণ করবো! তবে তোমাকে হারিয়ে যেতে দেবো না।
✨
মানাফরা বাসায় এসে দেখে নানা রকমের খাবারের ঘ্রাণ। মানফ বলে, আম্মু আমরা তো বাসায় ছিলাম না। তবে রান্না করছে কে?
‘সেলিনা বেগম বলে, হয়তো সুহানা এসেছে। ও ছাড়া আরকে!
‘আমাদের পিচ্চি এতো বড় হয়ে গেছে! নিজের হাতে রান্না ও করতে পারে?
‘সেলিনান বেগম কোন কথা না বলে চলে গেলেন নিজের রুমে। মনির সাহেব ও পিছু পিছু গেলেন।
‘মানাফ বলল,আমাদের বাসার পরিবেশ আজকাল বড় অদ্ভুত হয়ে গেছে তাই না!একটা কথা বললাম কেউ পাত্তাই দিলো না।
‘এরপর তোর বউ এসে তোকে পাত্তা দেবে, সর সামনে থেকে, দেখি আমার কিউট আপি কি কি রান্না করেছে!
‘হুমু সত্যি সুহানা রান্না করছে!
‘তো তোকে কি আমি মিথ্যে বলছি?
‘চল আমি যাই দেখি পিচ্চিটা কত বড় হয়েছে?
সুহানা অভিল কালারের শাড়ী পড়া। শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুঁজে পাক্কা গৃহিণীর মত রান্না করছে। চুলগুলো কাটা দিয়ে উঁচু করে বাঁধা। কোমড় দৃশ্যমান। মানাফ চেয়ে সুহানার চুল খুলে দিলে।হঠাৎ চুল খুলে যাওয়ায় সুহানা এদিকে ঘুরতে চাইলে সুহানার চুল এসে মানাফের মুখশ্রীতে বাড়ি খায়৷
‘মানাফ বলে,মেয়েরা কি চুলেও পারফিউম ব্যবহার করে!
মানাফের কন্ঠ শুনে সুহনা দ্রুত নিজের শাড়ি ঠিক করে নিয়ে বলে, আপনি!
‘হায় আমার পিচ্চি কত বড় হয়ে গেছে। সত্যি তুই ওই বাঁদর সুহানা তো!
‘আমি সুহানা ভদ্র, স্বান্ত।
‘জানা আছে কেমন ভদ্র।আমার ঠোঁটে কে জেনো ক্লাস থ্রিতে থাকতে চুমু দিয়েছিলো!
‘তখন আমি ছোট ছিলাম।
‘এদিকে তাকা দেখি এখন কতটা বড় হয়েছিস৷
‘আমাকে দেখে আর কি হবে!যাকে দেখতে গেলে তাকে কেমন লাগলো?
‘খুবই ভালো তবে বুঝলি সুহানা মেয়েটা পুরো নাগা মরিচ।
‘সুহানার কথা গলায় আটকে গেলো। কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলো।
‘হুমায়রা বলল,ভাইয়া তুমি যাও তো এখান থেকে। সরো।
‘এই তোর কি সমস্যা।আর সুহা এদিকে তাকা, তোকে দেখেই চলে যাবো।
‘আমাকে দেখতে হবে না বললাম তো!
‘বুঝেছি বলেই মানাফ সুহানার বাহুতে হাত রেখে সামনের দিকে ঘুরালো। সুহানা নিচের দিকে তাকিয়ে আছের,মানাফ বলে মাশা আল্লাহ। তাড়াতাড়ি তোর জন্য জামাই খুঁজতে হবে।
‘এমন ভাবে মাশা আল্লাহ বললা, মনে হচ্ছে নিজের বউকে দেখছ,তোমার লজ্জা লাগে না। আরেক বেডার বউকে এভাবে দেখছো!
‘তুই জানিস ছোট বেলায় সুহানা আমাদের বাসায় আাসলে ঘুরতো আর বলতো আমি মানাফ ভাইয়ার বউ। আমি মানাফ ভাইয়ার বউ। সে হিসেবে একবার দেখলাম।
‘দেখেছো যখন এবার আমাকে বখশিশ দাও।
‘কিসের বখশিশ রে। দেখেছি এটাই বেশি কোন বখশিশ দিতে পারবো না। আমি দেখেছি এটাই তোর বখশিশ।
‘হুমু তোর ভাইকে বল আমাকে বখশিশ দিকে! আমি কি এতোই সস্তা নাকি কেউ খালি হাতে আমাকে দেখবে।
মানাফ একহাতে সুহানার চোখ আটকে ধরে বলে,চল তোকে বখশিশ দেবো। তোকে কি ফ্রীতে দেখা যায়!
হুমায়রাও পিছু পিছু আসলো। মানাফ এক হাতে চোখ আটকে রেখে অপর হাত দিয়ে কাভার্ড থেকে একটা প্যাকেট বের করে বলে, এবার চোখ খোল।
‘চোখ খুলে প্যাকেট থেকে বলে এরমধ্যে কি?
‘যাহহ যেয়ে খুলে দেখ।
হুমারার রুমে এনে, গিফট প্যাকেট খুলে আবাক হয়ে গেলে দু’জনেই।
‘সুহানার চোখের কোনে অশ্রু টলমল করছে, সুহানা বলে,আচ্ছা সত্যি কি মানাফ ভাই আমাকে ভালোবাসে না! যদি ভালো নাই বাসবে, তাহলে সেই ক্লাস সেভেন থাকতে বলেছিলাম, আমার জন্য বার্বি গাউন আর সু আনবে। আর সাথে সুন্দর একটা মাথার তাজ সাথে আরো এত্তো এত্তো চকলেট। দেখ যা যান বলেছি সব এনেছে। সব। তবুও দিনশেষে এই মানুষটা নাকি আমার হবে না!
‘মন খারাপ করিস না। আমি নিজেও বুঝলাম না। ভাইয়া হুট করে, আলিশাকে কেন বিয়ে করার জন্য পাগর হলো?
‘আলিশাকে! মানে আমাদের আলুকে?
‘হুম।
‘দেখলি আবার প্রমাণিত হলো, পুরুষ মানুষ রুপের পূজারি।
‘তুই কি দেখতে কম সুন্দর নাকি!
‘আমার চেয়ে একগুণ হলেও আলিশা বেশি সুন্দর। কিন্তু আলিশার তো একটা রিলেশন ছিলো!
‘সেটাতো ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
‘আলিশা রাজি হলো?
‘ও তো রাজি না কিন্তু ওর বাবা, মা কেমন জানিসতো। জোড় করে হলেও দিবে৷
‘থাক আফসোস করে লাভ নেই, কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর।
‘পেছন থেকে মানাফ বলে,এসব বললে তো হবে না৷ এতো কষ্ট করে এনেছি। আমাকে পরে দেখা৷
‘মনে করে আনার জন্য ধন্যবাদ।
আর কিছু বলবে, তার আগেই মানাফের ফোনটা বেহে উঠলো৷ মানাফ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে,নাম্বার তুই দিয়েছিস হুমু!
‘হুম আলিশা চাইলো।
‘এখন আসছি, এই ভালো কাজের জন্য ডতোকে ট্রিট দেবো।
সুহানা বললো,আলিশা কল করেছে!
‘হুম তাইতো,মনে হচ্ছে।
✨আমি বিয়েটা করবো না কতবার বলছি, জোড় করে বিয়ে কেন দিচ্ছো।
‘নাহার বেগম বললেন, দেখো তোমার হ্যা না তে কবছু এসে যায় না। যা মানসম্মান নষ্ট করার করেছো! এবার আমরা যা করবো তাই করতে হবে।
‘কিসের মানসম্মান নষ্ট করেছি! আম্মু ওইটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট, সেটার খেসারত আমি কেন দেবো!
‘তুমি আমাকে বোকা ভাবো! বৃষ্টির মধ্যে রোমান্টিক মোমেন্ট ক্যামেরা বন্দী করে বলো এক্সিডেন্ট! সে যাই হোক আমি যা বলছি তাই হবে। এখন তর্ক না করে এখান থেকে যাও।
‘আম্মু আমার কথাটা তো শুনো।
‘যা বলেছি তাই যাও এখান থেকে।
রুমে এসে হুমায়রার থেকে মানাফের নাম্বার নিয়ে কল করলো মানাফকে।
‘ওপাস থেকে রিসিভ হতেই, আলিশা কর্কশ কন্ঠে বলে,আপরাকে কি বলেছিলাম!
‘কে আপনি?
‘একদম নাটক করবেন না। আপনি ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন আমি কে?
‘ওহহ মিস নাগা মরিচ। তা হবু জামাইকে এতো মিস করছিলেন বুঝি?
‘আলিশা খট করে কলটা কে’টে দিয়ে বলে অসভ্য লোক!
#চলবে