সাইকো বস পর্ব-১২

0
1964

#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১২

— ছাড়ুন আমাকে দেখে আসি দরজা লক করা নাকি।

—এই অহনা দরজা খোল সারাদিন তো কিছু মুখে দেলিনা। খেতে আয়

হঠাৎ দরজায় আম্মু নক করতেছে, এখন আমি কী করবো।

উনি এমন একটা ভাব করে আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছি যেনো কিছু ই হয়নি। উনি উনার কাজে ব্যস্ত আমি কী বলছি এটা উনার কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছে না।

আম্মুকে বলে দিলাম

— তুমি যাও আমি আসছি আম্মু।

আমার এই কথা শোনে আম্মু চলে গেলো।

—তুমি সারাদিন খাওনি কেনো। এতো সাহস পাচ্ছো কোথায়।

—আসলে ভালো লাগছিলো না, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো, এখন থেকে খাবেন ঠিক মতো। তা রেগে যাবেন না। আপনার রাগকে আমি অনেক ভয় পাই।

—আচ্ছা আমি শোয়ে আছি যাও খেয়ে আসো।

—আচ্ছা ছাড়ুন, এভাবে ধরে রাখলে আমি যাবো কী করে।

—ধুর ছাড়তে ইচ্ছে করে না, দ্রুত আসবা তুমি। আমি বউ ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারি না জানো ই তো।

পাগল একটা অবশেষে ছাড়লো, শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে, বাহির থেকে দরজা লক করে রেখে যাচ্ছি তাও ভয় করতেছে। যাদি আম্মু রুমে আসতে চায় আমার সাথে। ভয় ভয় পা বাড়ালাম।

আমি আমাকে দেখে ই জিজ্ঞেস করলো,

— কীরে এতোক্ষন লাগলো আসতে। কখন থেকে বসে আছি তোর জন্য। আর শাড়িটা খোলতেছিস না কেন।

— এমনি পরে থাকতে ভালো লাগে আম্মু।
এটা বলতে বলতে প্লেটে খাবার বাড়তেছি।

—সব খাবার এভাবে একসাথে নিচ্ছিস কেনো।

— আম্মু আমি রুমে গিয়ে খাবো।

— আগে বললে ই তো আমি রুমে নিয়ে যেতাম। চল আমি রুমে দিয়ে আসি।

—না না আম্মু লাগবে না তুমি খাও, আমি বড় হয়েছি, নিজের কাজ নিজে ই করতে পারি তুমি বসে খাও আমি যাচ্ছি।

রুমে খাবর নিয়ে গিয়ে দরজা টা আবার ভেতর থেকে লক করে দিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। কী ভয়টা যে পাচ্ছিলাম। আমকে দেখে শুভ উঠে বসলো।

—খাবার রুমে নিয়ে এলে যে।

—আপনি তো খাননি আমি জানি।

— কীভাবে জানলে আমি তো বলেনি।

— আপনার জেনে লাভ নেই

এই বলে মুখে খাবার দিয়ে দিলাম। কথা কম বলে খাবার শেষ করেন। শুভ্র কে খাইয়ে দিলাম নিজে ও খেয়েনিলাম।

—আমার বউটা অনেক কেয়ারিং বুঝতে পারিনি। যা ই হক তুমি এতো কম খাও কেনো কালকে থেকে বেশি করে খাবে। মোটা হতে হবে তোমাকে।

— হে হইছে এখন আপনি যান, আমি ঘুমাবো। গুড নাইট কালকে অফিসে দেখা হচ্ছে।

শুভ্র আমার কথা কানে না নিয়ে, বেডে শুয়ে পড়লো। বলতে লাগলো,

— বউ এর কাছে এসেছি কী যাওয়ার জন্য নাকি।

আমি তো পুরা দমে আবাক হয়ে উনার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম,

—তার মানে কী আপনি এখানে থাকবেন। না না আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার করে থাকতে পারবো না।

—কেনো আমি ছাড়া অন্য কেউ হলে বুঝি থাকতে পারতে।

— আর ব্যপারটা এমন নয়। আমি এটা বলতে চাইনি। সব সময় আমার সাথে এমন করবে।

এটা বলে পাশ ফিরে রাগ করে শুয়ে পড়লাম।

—এটা কী হলো রাগ দেখাবো আমি উল্টো উনি আমাকে দেখাচ্ছে।

আমি কোনো কথা বললাম না,
একটু পর উনি আমাকে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে, পেটে হাত দিয়ে সাইড করতে করে বলে।

—রাগ করো না বউ আমার, তুমি রাগ করে থাকলে ঘুম আসবে না আমার।

আমি তখন ও কিছু বললাম না।

—এমন করে থাকলে দূরে কোথাও চলে যাবো কিন্তু। পরে আর আমাকে পাবে না তখন দেখবো রাগ করো কিভাবে।

এটা বলার সাথে সাথে আমি শুভ্রকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

—আরে পাগলি কান্না করছো কেনো এটা তো এমনি বললাম, তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য।

শুভ্র আর কথা না বাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে ঠোঁট হালকা করে চুমু খেয়ে বুকে জরিয়ে নিলো।

—এখন ঘুমিয়ে পড়ো,

আমি আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে পাখির কিচিরমিচির এর শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো, কিন্তু উঠে শুভ্র কে খুজতে লাগলাম কোথাও পেলাম না। দেখলাম টেবিলের উপর একরা চিরকুট রাখা। চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখলাম শুভ্রর চিরকুট। এতে লিখা,

সকালে উঠে টেনশনে করো না আমি বাসায় চলে আসছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে, অফিসের টাইম হলে অফিসে চলে এসো। অফিসে দেখা হচ্ছে। আর শোনো “”ভালোবাসি “”

এভাবে কেটে গেলো অনেকগুলো দিন,

হঠাৎ শুভ্রর জরুরি কাজে দেশের বাহিরে যে হবে, এতে অহনার মনটা খারাপ হবে বলে শুভ্র অহনাকে কিছু ই জানাইনি।

আগামী কাল শুভ্র চলে যাবে।আজকে অফিসে এসেছে শুধু অহনার জন্য। শুভ্র যাওয়ার ব্যপার টা অহনাকে জানাবে না।শুভ্রর ভাবনার ছেদ হলো

—কী হলো এতো কী ভাবছেন।

—ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। চলো।

—-মাএ তো আসলাম,একটু কাজ করে নেই।

না, এখন ই যাবো এই বলে শুভ্র আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসলো।আমি অবাক হলাম শুভ্র আমাকে নিয়ে শপিং মলে গেলো।

—কী হলো শপিং মলে কেনো।

—মানুষ শপিং মলে কেনো আসে। শপিং করতে তাই আমরা ও শপিং করবো।

শুভ্র আমাকে নিয়ে শপিং করছে। আমার জন্য যে কালারে শাড়ি কিনেছে, শুভ্রর জন্য সেইম কালারের শার্ট কিনেছে। ম্যাচিং করে সব নিচ্ছে। কিন্তু বুঝতেছি না এতো শপিং কেন করতেছে।

—আচ্ছা এতো শপিং কেনো করতেছেন, আপনি বা আমি তো কোথাও চলে যাচ্ছি না পরে ও তো আবার শপিং করতে পারবো।

—আমার ইচ্ছে করছে তাই শপিং করছি তুমি শুধু চেয়ে দেখো।

বিকেল বেলা,

শপিং শেষে শুভ্র আমাকে নিয়ে একটা নদীর ধারে যায়। নদীর পাশে ই কাশবন এর সমাহার। কাশবন আমার খুব ভালো লাগে। সাথে হালকা মন মুগ্ধ কর বাতাস। সব মিলিয়ে আমি প্রকৃতির এই রুপে আমি মুগ্ধ।

— শুভ্র ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।

—হুম আসো ঐ খানে বসি।

শুভ্র আমাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসলো। আমার হাত দুটো শুভ্র হাতের মধ্যে নিয়ে বললো।

— অহনা শোনো আমি যদি কখনো তোমার আশেপাশে না থাকি তাহলে তুমি মন খারাপ করো না। নিজের খেয়াল রেখো। এটা ভেবো যে আমি তোমার সাথে সব সময় আছি।

—আপনি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবেন।

—আরে পাগলি কোথাও যাবো না তুমি কান্না করতেছো কেনো। তোমাকে কতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসলা, কোথায় হাসবা তা নয় কান্না করতেছো।
চলো বাসায় নিয়ে যাই।

আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে শুভ্র কিছু না বলে ই চলে গেলো, আমি বার বার অবাক হচ্ছি শুভ্র এমন ব্যবহারে। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।

শুভ্র বাসায় যাওয়ার পর তার মায়ে রুমে গিয়ে দেখলো উনি বসে বসে কার সাথে যেনো কথা বলতেছে ফোন। শুভ্র রুমে ডুকে ই মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

আচ্ছা রাখ তো আমি তোর সাথে পরে কথা বলতেছি। এই বলে ফোনটা কেটে শুভ্রর মাথায় হাত রাখে।

—কী হইচে বাবা এভাবে কান্না করেছিস কেনো। আমি তো অনেক বছর ধরে কান্না দেখিনি তোর আজ হঠাৎ কী হলো।

— মা আমার অহনাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। অহনা আজকে আমার জন্য কান্না করতেছে আগে ও আমার জন্য অনেক কান্না করেছে কিন্তু আজকের মতো মায়া কখনো হয় নি। আজকে অহনাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়ার পর আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমি চলে গেলে অহনা অনেক কষ্ট পাবে তাই না মা।

—আরে পাগল ছেলে কান্না করে না, আমি অহনাকে দুদিন পর গিয়ে অহনাকে দেখে আসবো তুই চিন্তা করিস না, কাজটা তো আমাদের কোম্পানির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই তো যেতে বলছি নয়তো যেতে বলতাম না। তাই তোকে যেতে হবে লন্ডন। আর ঐখানে তোর ফুপ্পি আর নাবিলা তো আছে ই।

—নাবিলাকে নিয়ে ই তো ভয় ও তো আমাকে পছন্দ করে বিয়ের ব্যপারটা কীবাবে নিবে।

—আচ্ছা শোন তুই তোর ফুপ্পিকে আর নাবিলাকে কিছু বলিস না বিয়ের ব্যপারে।

শুভ্র মাথা নাড়িয়ে চলে আসলো রুমে।

পরদিন সকাল দশটায়,

সকালে অহনা অফিসে এসে জানতে পারলো শুভ্র আজকে লন্ডন চলে যাবে। অহনা একমুহূর্তে ও দেরি না করে রাসেলকে বললো এয়ারপোর্টে এ নিয়ে যেতে।

—কিন্তু ম্যাম, কোথাও গেলে স্যার তো বলে গেছে স্যারকে জিজ্ঞেস করে যেতে।

—তোমার স্যারকে কিছু জানাতে হবে না নিয়ে যাও আমাকে যেটা বলছি ঐটা করো।

রাসেল আর কোনো কথা বললো না, দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্য বললো অহনা।

শুভ্র পৌছানোর সাথে সাথে শুভ্র ফোনে অহনার নম্বর থেকে কল আসে। শুভ্র দেখে ভয় পেয়ে যায়, তাহলে কর জেনে গেলো অহনা, কলটা রিসিভ করলো না।

সাথে সাথে শুভ্র ফোনে আবার রাসেলের নম্বর থেকে কল আসলো। শুভ কল রিসিভ করলো

—বস একটু গাড়ি পার্কিং যেখানে করা আছে ঐখানে আসেন তো।

—কেনো কি হয়েছে।

—বস আপনি আসেন তারপর বলছি।

শুভ্র সাথে শুভ্র মা এসেছে। মাকে দাড় করিয়ে শুভ্র গেলো। যাওয়ার সাথে সাথে অহনা এসে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আশে পাশের মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই শুভ্র অহনাকে নিয়ে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দিলো।
অহনা কান্না করে ই যাচ্ছে।

—তুমি কী করে পারলে আমাকে না বলে চলে যেতে।

—আসলে আমি চাইনি তুমি কষ্ট পাও কিন্তু দেখে ঐটা ই হলো। আমি বেশিদিন থাকবো না চলে আসবো। তুমি চিন্তা করো না।

—না তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।

—আরে পাগলি বুঝো আমার কথা। এটা বলে বুকে জরিয়ে নিলো কপালে ঠোঁট জোড়া ছুয়ে দিলো।

শুভ্র অনেক বুঝালো কিন্তু অহনা কিছুতে ই বুঝতে পরতেছে না। শুভ্রর হাতে সময় ও কম। হঠাৎ দেখলো অহনা কথা বলছে না, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
এর মধ্যে শুভ্র মা চলে আসলো,

— বাবা সময় হয়ে গেছে তুই যা আমি অহনাকে দেখছি।

শুভ্র অহনা স্কাফ পরা ছিলো এক সাইডে ওরনা ঝুলিয়ে রাখা ছিলো। শুভ্র যাওয়ার সময় ওরনা টা নিয়ে যায় অহনার কাছ থেকে।

—মা আমি যাই তুমি অহনাকে বাড়ি পৌঁছে দিও, একা যেতে দিও না খেয়াল রেখে ওর।

এটা বলে অহনার দিকে একবার তাকিয়ে অহনার ওরনা টা শুভ্র নিজের মাথায় বেধে নিলো, চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু কান্না করতে পারছে না। ছেলে মানুষের কান্না তো সবাইকে দেখাতে হয় না। ডুকে গেলো শুভ্র এয়ারপোর্টে এর ভিতরে। ভাবছে জ্ঞান ফিরালে কী করবে অহনা।

চলবে