#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৩
একা যেতে দিও না খেয়াল রেখে ওর।
এটা বলে অহনার দিকে একবার তাকিয়ে অহনার ওরনা টা শুভ্র নিজের মাথায় বেধে নিলো, চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু কান্না করতে পারছে না। ছেলে মানুষের কান্না তো সবাইকে দেখাতে হয় না। ডুকে গেলো শুভ্র এয়ারপোর্টে এর ভিতরে। ভাবছে জ্ঞান ফিরালে কী করবে অহনা।
শুভ্র চলে যাওয়ার পরে অহনার চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হল, কিন্তু কোনো কথা বলছে না। চুপ করে আছে।
বাসায় পৌঁছেনোর পর, অহনাকে নিয়ে ভেতরে গেলো শুভ্র মা। শুভ্র মাকে আর অহনাকে এক সাথে আসতে দেখে অহনার মা দৌড়ে এলো।
অহনাকে দেখতে কেমন যেনো দেখাছে তাই জিজ্ঞেস করলো।
—কী হয়েছে মা তোর।
—আরে মা কিছু হয়নি।এমনি।
শুভ্র মা অহনাকে বলতে শুরু করলো,
—মা কে কখনো মিথ্যে বলতে হয় না অহনা, তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও। আমি তোমার আম্মু সাথে কথা বলছি।
অহনা কিছু না বলে সোজা রুমে চলে গেলো।
শুভ্র আমার সাথে কেনো এমনটা করলো। আমাকে বলে যেতে পারতো। কতদিন দেশের বাহিয়ে থাকবে, পৌঁছে কখন আমার সাথে কথা বলবে কিছু ই তো বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতে বেডের এক কোণে বসে পড়লো।
শুভ্র মা অহনার আম্মুকে সব বললো, এতে অহনার অাম্মু বেশ অবাহ হলো,
—আচ্ছা আজ তাহলে আসি আমি। আমি মাঝে মাঝে অহনাকে এসে দেখে যাবো।
— খেয়ে যান কিছু।
—আজ না অন্য দিন অবশ্য ই খাবো।
আমার মেয়েটা এমন হলো কীভাবে। অহনা তো এমন কখনো ছিলো না। কিছু ই তো আমার কাছ থেকে লুকাতো না। আমার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। যাই তো গিয়ে দেখে আসি কী করে।
উনি গিয়ে দেখে অহনা বেড সাইডে ঘুমিয়ে আছে। যেভাবে এসেছিলো এখন ও ঐভবে ই ঘুমিয়ে আছে চেঞ্জ করে নাই।
মেয়েকে এমন অবস্থা দেখে চোখের পানি যেন বাধ মানছে না। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে চোখ মুছে দরজা খুলে দেখলো, রনি এসেছে। এ দেখে তো অহনার মা আরো চমকে উঠে। এমনিতে অহনার এমন অবস্থা কী জবাব দিবে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে।
—কাকিমা বাহিরে দাড় করিয়ে রাখবা নাকি, ভেতরে আসতে দিবে না।
—তুমি এই টাইমে বাবা।
—কেনো কাকিমা আমি কী আসতে পারি না, তাহলে চলে যাই।
—আরে না তা কেনো হবে। আসো ভেতরে আসো।
রনি ভেতরে গিয়ে সোফায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো,
— কাকিমা অহনা কোথায়।
— অহনা ঘুমাচ্ছে।
–এই দুপুর টাইমে কিসের ঘুম।
–অহনা এমন ই যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ে। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও আমি খারাব রেডি করছি।
বিকেল গড়িয়ে রাত হলো, কিন্তু রনি এখনো অহনার দেখা পাচ্ছে না। মেয়েটাকে দেখার জন্য ই তো আসলাম, আমার দুই চোখ তো শুধু অহনাকে ই খুজতেছে। কিন্তু কাকিমাকে অনেক বার বললাম এতো বলতে লজ্জা ও তো করে। আর একবার বলে দেখি।
—কাকিমা অহনার কী এখনো ঘুম শেষ হয় নাই আমি কী গিয়ে দেখবো।
— যাও দেখে এসো।
খুশিতে রনির মনটা নেচে উঠছে অনেক দিন পর অহনাকে দেখবে। দরজা লক করা ছিলো না। ভেতরে যেতে ই হাসি মুখ খানা মলিন হয়ে গেলো।
ভিতরে গিয়ে দেখে বারান্দায়র এক সাইডে চুপটি করে বসে আছে সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকা মেয়েটি। রনির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে অহনার মন খারাপ। রনি ও চুপটি করে গিয়ে অহনার পাশে বসলো কিন্তু কে আসলো ঐদিকে অহনার কোনো খেয়াল ই নাই। এক মনে কী যেনো ভাবতেছে।
“”অহনা””
কারো মুখে তার নামটি শোনে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো।
—আরে ভাইয়া আপনি।
—হুম, কী হয়েছে রে আমার ছোট্ট পরীটার। আমার পরী টাকে এভাবে দেখে তো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
— কিছু হয়নি ভাইয়া এমনি বসে আছি এইখানে।
— কিছু হয়নি বললে তো হবে না আমি কিছুটা হলে ও বুঝি রে অহনা।
— আরে কিছু হয়নি ভাইয়া তুমি শুধু শুধু ভুল ভাবছো।
—হুম যেহেতু আমি কিছু জানি না এখন তুই যা বলবি তা ই ঠিক।
— হুম। এসব বাদ দাও। কখন আসলে ভাইয়া। আমাকে ডাকনি কেনো।
—তোকে তো আমি অনেক বার খুজলাম, তুই নাকি ঘুমাচ্ছিস কাকিমা বললো।
— হুম একটু ঘুমিয়েছিলাম।
হঠাৎ রনির ফোন বেজে উঠল।
— আচ্ছা তুই থাক আমি যাই,
— আচ্ছা।
রনি যাওয়ার পর ই অহনা দরজা লক করে দেয়। জানে রনি আবার আসতে পারি।কি হচ্ছে এসব হঠাৎ রনি ভাইয়া কেনো এলো। কী উদ্দেশ্য। এসব আর আমি নিতে পারছিনা। শুভ্র থাকলে এখন আমার এতোটা টেনশনে করতে হতো না।
বেশকিছুক্ষন পর, রনি দরজায় নক করছে।
— কী হয়েছে ভাইয়া, এভাবে নক করছেন যে।
—আরে পাগলি রেগে যাচ্ছিস কেনো। এই দেখ খাবার নিয়ে এসেছি, চল তোকে খাইয়ে দেই, ছোটবেলার মতো।
—না না ভাইয়া আমি নিজের হাতে ই খেতে পারি। দেন আমি খেয়ে নিবো।
এটা বলে প্লেট টা হাতে নিয়ে দরজা টা লক করে দিলাম। আবর দরজার ঐ পাশ থেকে রনি ভাইয়া ডাকছে।
— এই যে শোন আমি কিন্তু একটু পর খাবার প্লেট নিত আসবো।
আমি বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলাম, শুভ্র কথা বার বার মনে হচ্ছে। বার বার শুভ্র মুখ খানা ভেসে উঠছে।
তিনদিন কেটে গেলো,
এই তিন দিনের ভেতর শুভ্র একবার ও কল দেয়নি। এতে অহনা আরো ভেঙ্গে পড়ে।এতো ভালোবাসে আমাকে তাও মনে পড়লো না তিনদিনের ভেতর এক বার ও। বারান্দায় বসে বসে ভাবছে এইগুলো।
—- অহনা মা এখানে এভাবে বসে আছো কেনো।
— উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্র মা।
অহনা শুভ্র মাকে দেখে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শুভ্র মা অহনাকে বেডে নিয়ে বসিয়ে দেয় নিজে ও বসে।
অহনা চুপটি করে শুভ্র মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে আর বলতে থাকে।
—মা আপনার ছেলে আমার সাথে একবার ও কথা বলেনি কেনো।
—ভুল বুঝিস না মা, ঐখানে ওর ফুপ্পি আছে উনার কাছ থেকে জেনেছি শুভ্র কাজে অনেক ব্যস্ত তার কাছে সিম ও নাই। আমার সাথে ও কথা বলেনি রে। কষ্ট হচ্ছে খুব তাই নারে। বলতে পারিস মার কাছে। শুভ্র আমার কাছে সব কিছু বলে।
আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স মাএ ১৬। এতো অল্প বয়সে স্বামী সংসার এসে আমার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু আমার শাশুড়ী খুব ই ভালো মানুষ ছিলেন আমাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। শুভ্র যখন হয় তখন আমার বয়স ১৮। শুভ্র আর আমার মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত।
তোকে যেদিন প্রথম দেখে তখন আমাকে গিয়ে বলছিলো তোমার বউ মা পেয়ে গেছি। আর লন্ডন যাওয়ার আগেদিন রাতে আমাকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিলো জানিস তো তোর জন্য। এই ভালোবাসা কখনো মিথ্যা হতে পারে না।
মাকে রনির কথা বললাম, সব টা শোনে মা ন
বললো,
—আমি রনির সাথে কথা বলছি তুই এটা নিয়ে টেনশনে করিস না।
অন্যদিকে,
শুভ্র আসার পর খুব ব্যস্ত ছিলো কারো সাথে ই তেমন কথা হয়নি। সবার সাথে কথা বলা দরকার। এর মধ্যে নাবিলা এসে বসলো শুভ্র রুমে।
—নাবিলা তোর ফোনটা দে তো।
—কেনো কী করবি শুভ্র আমার ফোন দিয়ে।
—বউ এর সাথে কথা বলবো।
—দুষ্টমি করিস না।
–সত্যি বিয়ে করেছি তোদের কে বলা হয়নি।
একথা শোনে নাবিলার চরম পরিমানের রাগ হচ্ছে। মনে মনে বলতে লাগলো এ বিয়ে আমি টিকতে দিবো না। তুই শুধু আমার।
চলবে।