#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৬
লিখাঃসামিয়া খান
ক্যাফে থেকে বের হয়ে ভেনিসের রাস্তার পাশ দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে চলেছে মায়া ও দিহান।দুজনেই চুপ।মৃদুমন্দ বাতাসে পরিবেশটা বেশ মুখরিত।পাশের ক্যানেল দিয়ে জলের স্রোতধারা বহমান।
“আপনি আমার সাথে কেন এসেছেন নায়কসাহেব?আপনার প্রযোজক এর কাছে যান।”
“মায়া!তুমি তো বাবু নয়।তাহলে একটু মস্তিষ্ক খাঁটাতে পারো না পুরো ব্যাপারটায়?যদি প্রি-হানিমুন করার হতো তাহলে তোমার সাথে দেখা করতাম না।”
দিহানের কথায় চুপ হয়ে গেল মায়া।দিহানও আর কিছু বললনা।আবার নিশ্চুপ হয়ে পাশাপাশি চলতে লাগলো দুজন।বেশ কিছুসময় পরে পাশ থেকে ফোঁপানির আওয়াজ শুনতে পেলো দিহান।হাঁটছে আর কাঁদছে মায়া।
“কাঁদো কেন বউ?”
কাঁদতে কাঁদতে মায়া উত্তর দিল,
“আপনি এত পালটে গিয়েছেন কেন দিহান?”
“পাল্টে গিয়েছি মানে?আমার তো সেই দুটো হাত,দুটো পা,দুটো কান,একটা নাক ও দুটো চোখ সেম আছে।কোনটা তো তিনটে হয়নি?”
“সব বিষয়ে মজা ভালো না দিহান।”
“আমি মজা কোথায় করলাম?”
“তো কি করলেন মস্করা?”
“মিসেস.বউ আপনি এত চেতেন কেন?”
“মিসেস.বউ?তার মানে আপনার নাম মিসেস?”
“উফ মায়া!ওটা আদর করে ডেকেছি তো বাবুর মা।বুঝো না কেন?”
“এই আমি না কাঁদছিলাম?”
“কাঁদছিলেন?কিন্তু আমার তো মনে হলো ক্রন্দন করছিলেন।”
“আল্লাহ! দয়া করে আমার বাবুটাকে আমার মতো বানাবে।এই বেলাজা লোকটার মতো না।”
“ইন-শাহ-আল্লাহ আমার মতো হবে।”
“কখনো না।”
হুট করে হাঁটা বাদ দিয়ে দিহান মায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো।মায়ার চোখের দিকে তাঁকিয়ে ওর গালে চারটে আঙুল স্পর্শ করলো।বেশ ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো দিহান,
“প্রায় তিনমাস হয়ে গেলো মায়া।তিনমাস!তোমার এক্সসিডেন্টের আগের রাতে শেষবারের মতো আমরা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছিলাম।মনে আছে?”
“হুম মনে আছে।হঠাৎ কি হলো যে এত চেঞ্জ হতে হলো দিহান।”
“সব শুনতে চাও?”
“হ্যাঁ।”
“আসো আমার সাথে।”
,
,
,
ক্লান্ত শরীরটা ডিভানে এলিয়ে দিল আরিয়ান।ইদানীং বেশ ক্লান্ত লাগে তার।মানুষ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার প্রভাব শরীরের উপরেও পরে।ঘর্মাক্ত শরীর।সাদা শার্টের বাহির থেকে ভেতরের বুকের সাদা চামড়া স্পষ্টত বিদ্যমান।হাত দিয়ে শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম আলগা করে নিলো আরিয়ান।একদিকে সুবাহ অন্তঃসত্ত্বা। অন্যদিকে মায়া।সবদিক কীভাবে সামলে নিবে তা ভেবে পাচ্ছেনা সে।
বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করায় চোখ মেলে তাঁকালো আরিয়ান।সুবাহ আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।চুলগুলো ভেজা।সদ্য গোসল করে এসেছে মনে হয়।বেশ বিরক্ত হলো আরিয়ান।একে তো হসপিটাল আর মায়ার চিন্তা তারমধ্যে এই সুবাহ নামক ঝামেলা।আর সহ্য হচ্ছে না আরিয়ানের।হালকা ধাক্কা দিয়ে সুবাহকে বুক থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো আরিয়ান।গায়ের শার্টটা খুলে সুবাহার দিকে ছুঁড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেল।
আরিয়ানের এমনকাজে কিছু মনে করলো না সুবাহ।কারণ এর সাথে বেশ অভ্যস্ত সে।বরং এরকম বৈরী আচরণ না করলে বেশ অবাক হয় সুবাহ।মাঝেমধ্যে তার অনেক মনক্ষুন্ন হয় এ ব্যাপারে কিন্তু পরক্ষণে নিজের নিয়তিভেবে চুপচাপ সহ্য করে নেয়।
অথচ জীবনের কোন ধাপ পর্যন্ত সহ্যের ক্ষমতাটুকু থাকবে সে বিষয়ে অবগত নয় সুবাহ।একবার মন চায় দিহান ভাইকে সবটা জানাতে।অথচ কখনো জানানো হয়ে উঠেনা।ঘর্মাক্ত শার্টটা এক জায়গায় রেখে আলমারি থেকে আরিয়ানের জন্য কাপড় বের করে বিছানার এক পাশে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়ানো শুরু করলো সুবাহ।দুর্বাকে একটু আগে তার স্বামী এসে নিয়ে গিয়েছে।আরিয়ানের মা এতে বেশ রেগে চিৎকার চেঁচামেচি করেও কিছু করতে পারেনি।এজন্য সুবাহার উপর অনেকটা ক্ষ্যাপা।আজকে ভার্সিটিতে স্বাধীনের ঘটনাটা এখনো তাড়া করছে তাকে।সব মিলিয়ে মনটা ভেঙে আছে সুবাহার।
ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে সুবাহার বের করা কোন কাপড় পড়লো না আরিয়ান।বরং নিজে বের করে তা পরিধান করে ভেজা শরীর নিয়ে বিছানা শুয়ে পড়লো।
চিড়ুনিটা রেখে পূর্বের ন্যায় সুবাহ আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে তার উপর শুয়ে পড়লো।আর থাকতে পারলো না আরিয়ান।ধাক্কা দিয়ে সুবাহকে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর এলোপাতাড়ি কয়েকটা থাপ্পড়, ঘুষি দেওয়া শুরু করলো।যতোক্ষণ না তার মনের আঁশ মিটছে।এদিকে সুবাহ শুধু বলে যাচ্ছে তার পেটে বাবু আছে।সেকথার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো আরো কয়েকটা দিলো।একটা ঘুষি ঠোঁটে লেগে যখন রক্ত বের হওয়া শুরু করলো তখন থামলো আরিয়ান।এতসময় তার হুঁশ ছিলনা।এদিকে সুবাহ অজ্ঞান প্রায়।তড়িঘড়ি করে আরিয়ান সুবাহকে উঠিয়ে বসালো।আর সমান তালে সুবাহার কাছে মাফ চেয়ে যাচ্ছে।
“প্লিজ সুবাহ প্লিজ চোখ খুলে রাখো।আমি এখুনি তোমার ট্রিটমেন্ট করে দিচ্ছি।অজ্ঞান হয়ে না। বাবুর ক্ষতি হবে।প্লিজ বউ।আসলে একটু টেনশনে ছিলাম।তাই কি করে ফেলেছি নিজেও জানিনা।সরি প্লিজ মাফ করে দেও।”
আরিয়ানের সব কথা ভাসাভাসা ভাবে শুনতে পেলো সুবাহ।পুরো শুনতে মন চাইলো না।এর থেকে মরে যেতে মন চাচ্ছে।এমন জীবন সে চাইনি।অথচ তার নসিবে এমন একটা জীবনই ছিল।এটাই হয়তো নিয়তি!
চলবে,,