Arranged Marraige part-33(last part)

0
960

#Ayesha
#ArrangedMarraige

শেষ পর্ব

আসতে আসতে 4বছর কেটে গেলো।। আজ আমাদের হলুদ।। সবাই অনেক খুশি ফাহাদের আনন্দ কে দেখে।।

1মাস ধরে আয়োজন চলছে।। এই করা সেই করা। ফাহাদের ছুটি ম্যানেজ করা। আরো অনেক ঝামেলা পেরিয়ে আজ এই পর্যন্ত এসেছি।।

বিকেল থেকে আমাকে পার্লারে সাজানো হচ্ছে, এখন 7টা বাজে তাও চুল বাঁধা বাকি।। আমার এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে অসহ্য লাগছে।। ঐদিকে বুবুর খাদিজা আমার কাজিন গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ওরাই বউ, আমি জাস্ট ফর্মালিটির জন্য।।
ফাহাদ বার বার ফোন করছে, আমি দেখেও কেটে দিচ্ছি কারণ এখান থেকে যাওয়া এত সহজ না। আমার সাজ মুটামুটি শেষ হলেও ওদের এখন বহুত বাকি

আবার ফোন করেছে আমি বাধ্য হয়ে রিসিভ করলাম
ফাহাদ: কতবার বলবো তারাতারি আসো, কতক্ষন ধরে মশার কামড় খাচ্ছি। এখান থেকে তো আবার বাসায় যেতে হবে। দেরি হলে কাল আসতে ও দেরি হবে বুঝে রেখো।।
আমি: কে বলেছিল তোমাকে এখন আসতে? এখন আবার কথা শুনাচ্ছ। যাও যাও বাসায় যাও, কাল একেবারেই দেখবে।।
ফাহাদ: কালকের টা কাল।। এখন তোমাকে 30মিনিট সময় দিলাম এর মধ্যে না আসলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকো
আমি: উফফ আমি দেখছি।।
ফোন কেটে দিলাম

বুবুকে ডেকে সাইডে আনলাম
বুবু: কি?
আমি: তোমার সাজ complate?
বুবু: অলমোস্ট
আমি: তুমি ভাইয়াকে ফোন দাও আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে
বুবু: তোর ভাইয়া এখন অনেক বিজি, আর এই সময় বাসায় কেন যাবি? কোনো সমস্যা হচ্ছে? আই মিন পেরিয়ড…
আমি: উফফ না, এমন কিছু না।। ফাহাদ বাসার ছাদে আছে বলছে আধা ঘণ্টার মধ্যে না গেলে খবর আছে

বুবু কাকে জানি ফোন করে আবার আমার কাছে আসলো
বুবু: সায়েম আসছে
আমি: ঠিক আছে।।

এর মধ্যে একটা কথা বলে রাখি, বুবুর বিয়ে হয়ে গেছে 1বছর হবে।। রাজিব ভাইয়ার সাথে।। ভাইয়া আমাদের বড় ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে, অনেক ভালো বললেও ভুল হবে।। আর ফাহাদ তো রাজিব ভাই বলে একবার পরে, আর একবার উঠে।।

আর বুবুর কথা কি বলব, এখন সে বিশাল বড় এক পেট নিয়ে ঘুরে, মানে সে প্রেগনেন্ট।। বেচারি খুব ইচ্ছে ছিল হানিমুন যাওয়ায় ভাইয়া সেই হিসেবে কুয়াকাটা যাওয়ার টিকিট ও করে ফেলে। যাওয়ার আগের দিন রাতে জানে বুবু প্রেগনেন্ট তাই ভাইয়া আর রিস্ক নেয় নি। বলেছে বেবি হওয়ার পরে যাবে।।

আর ঐদিকে ফাহাদ তো বলেই দিয়েছে ওর মিশন নাকি রাজিব ভাইয়া সাকসেসফুল করে দিয়েছে।। তবে আমাদের টাও বাদ দিবেনা।।

সায়েম আমাকে বাসায় রেখে গিয়েছে।। আমি সবার আড়ালে ছাদে চলে গেলাম।।
দেখি আমার উকিলবাবু উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে আছে।। তার হলুদ আগের দিন হয়ে যাওয়ায় আজ আসতে পারছে।। আমি আস্তে করে ওর পাশে দাড়িয়ে, গলার স্বর নিচু করে হালকা চিৎকার দিলাম, ও স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে ঘুরে তাকালো।।

আমি: শুধু শুধু আয়ু কমালাম
ফাহাদ: মাথায় কি কিছু আছে?
আমি: আমি সারপ্রাইজ দিলাম তোমার কোনো reaction নেই
ফাহাদ: 5মিনিট লেট করছ, এখন কি রকম রিএকশন দিবো তুমি বলো?
আমি: কেমন লাগছে আমাকে?
ফাহাদ: কথা ঘুরাচ্ছ
আমি: চলে যাচ্ছি, চেঞ্জ করে ফেলবো
ফাহাদ: সুন্দর লাগছে
আমি: শুধু বলার জন্য বলছ, মন থেকে বল নি

ফাহাদ আমার কাছে এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো খুব খুব সুন্দর লাগছে একেবারে হলুদ পরী।। দাড়াও কয়টা ছবি তুলি।
ও ওর পকেট থেকে ফোন বের করে আমাকে সামনে দাড়িয়ে কত গুলো ছবি তুলে নিলো। 2/3টা সেলফি ও তুললো।।

ফাহাদ: তারপর কাল থেকে তুমি আমার পার্মানেন্ট বউ হয়ে যাবে, শশুর মশাই আমাকে অনেক কষ্ট দিলো এই 4বছরে, তার একটাই কথা মেয়ের অল্প বয়স এই বয়সে বিয়ে দিলে পরে সমস্যা হবে।। আগের কালের মেয়েরা কি বিয়ে করেনি?তাদের কি বাচ্চা হয় নি? এইজন্যই আধুনিক যুগ টা আমার পছন্দ না।। শুধু শুধু 4টা বছর লস হলো, এতদিনে 2বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম।।
আমি:চুপ করবে তুমি? খালা কই?
ফাহাদ: কার কথা বলছো?
আমি: যার জন্য 4বছর আগে একা একা হসপিটাল নিয়েছিলে, বলছিলে বাসায় আনবে, এনেছ?
ফাহাদ: হ্যাঁ এনেছি, গেলেই দেখতে পাবে।।

অনেক্ষন কথা বলার পরে ও বললো
ফাহাদ: একদম কান্না কাটি করবেনা বলে দিলাম
আমি: হুমম

আরো কিছুক্ষন গল্প করে ও চলে গেলাম।। আমি ভিতরে চলে গেলাম। সবাই আমাকে দেখে ভিড় করছে, আমাকে মঞ্চে বসানো হয়েছে।। একে একে সবাই হলুদ লাগিয়ে যাচ্ছে।। এত এত ক্যামেরার আলোতে আমার চোখ জ্বলছে।।

মা কেমন মুখ লুকিয়ে চলছে, বুবু টেনে আনলো, হলুদ দিতে।।মা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো। আমার এমনি নিজেকে ভারি ভারি লাগছিল, এতক্ষনে একটু হালকা লাগছে, আমাদের দেখে বুবু চাচীও কেদে দিল।।

বুবু আমাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে, চোখ ফুলে গেছে।।
আমি খাদিজাকে নিয়ে আমার রুমে শুয়ে পরেছি, বাকি সবাই ড্রয়িং রুম ডাইনিং রুমে শুয়েছে।। ফাহাদ পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়েছিল।। কিছুক্ষন কথা বলার পর 2জনেই ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে গেলাম।।।
সকালে সবাই দরজা ভেঙে ফেলবে ঐভাবে ধাক্কাচ্ছে।। খাদিজাকে টেনে তুলে দিলাম। ও যেয়ে দরজা খুলে দিল।। দরজা খুলার সাথে সাথেই এক দল হাঁস মুরগির মতো আমার রুমে ঢুকে গেলো।।
ভেবেছিলাম একটু ঘুমাবো, ওদের কথার কারণে উঠে গেলাম।। বুবু আমাকে একটা শাড়ি দিল এটা পরে নাকি বাইরে গোসল করানো হবে আমিও পরে বাইরে চলে গেলাম।।
গোসল করিয়ে 12 টার দিকে পার্লারে নিয়ে চলে গেল।।।

একজন চুল শুকাচ্ছে অন্যজন মুখে ফাউন্ডেশন দিচ্ছে বুবু সেই আমার 4বছর আগের বিয়ের মত খাইয়ে দিচ্ছে, আমি ওর পেটে হাত বুলাচ্ছি 6মাসের পেট যতটুকু হয় ওর টা তার থেকেও বড়।। মটকা বললেও ভুল হবে।।

আমি: বুবু এটার ভিতর কয়টা আছে? 1টা তো অবশ্যই না
বুবু: আমারও মাঝে মাঝে তাই মনে হয়, আমি তো চিন্তায় আছি যদি 2 বের হয় 2 টাকে কিভাবে সামলাবো? শাশুড়িও নেই যে রাখবে।। আমার কপালে কষ্ট আছে
আমি: আমি তো আছি আমাকে দিয়ে দিও একটা
বুবু: এইসব পরে হিসাব করবো।।

আমি তাকিয়ে দেখি বুবুর চোখ ছল ছল করছে, আমি সায় দিলেই কেদে দিবে।। আমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাতে না পেরে কেদে দিলাম।। বুবু ও আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।।

বিকেল দিকে আমার সাজ complate এর মধ্যে ফাহাদ অনেকবার ভিডিও কল করেছিল, কিন্ত আমার বোন গুলো দেখতে দেয় নি।। বেচারা আমার সাথে কথা বলার সুযোগেই পেলো না আবার দেখবে?

বাকি সবার সাজ শেষ হতে হতে 6টা বেজে গেল।। আমাদের জন্য গাড়ি পাঠানো হয়েছে আমি বুবু খাদিজা, মিলি, প্রাপ্তি গাড়িতে করে চলে আসলাম বাকি রা সাজ শেষ হলে আসবে।।

মঞ্চ লাইটিং করা।। নানা রকমের লাইটিং করা হয়েছে।। নানা রকমের ফুল ও আছে। কাঁচা ফুলের গন্ধে মঞ্চ ভেসে যাচ্ছে।।
আমি চুপ চাপ বসে আছি একটু পরেই শুনা গেল বর আসছে।। সবাই আমাকে রেখে বর দেখতে চলে গেল।।
কিছুক্ষন পরে ব্যান্ড পার্টির সাথে এক দল যুবক নাচতে নাচতে আসছে মাঝখানে ফাহাদ ও আছে, গোল্ডেন শেরুয়ানিতে কি লাগছে।। ফাহাদ এসে আমার হাত ধরে ওই নাচা নাচি ভিড়ের মধ্যে নিলো, আমি মাঝে মাঝে হাত নাড়াচ্ছি বাকি সবাই আমাদের 2জনকে মাঝখানে রেখে নাচচ্ছে, আসলে নাচ বললে ভুল হবে লাফালাফি করছে।।

ফাহাদ আমাকে হাত ধরে নিয়ে মঞ্চে বসেছে।। এক একে বন্ধু বান্ধব আসছে, কথা বলছে, গিফট দিয়ে চললে যাচ্ছে।।

ফাহাদ অনেক্ষন আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে কিন্ত পারছে না, একজনের পরে একজন এগিয়ে আসছে হ্যান্ডসেক করছে।।

ফাহাদ: বিয়ে যে এত জ্বালা, একটু কথা বলার সুযোগ ও পাচ্ছি না।।

আবার একজন এসেছে ফাহাদ কোলাকোলি করে, আবার বসেছে।।

ফাহাদ: আর করবো না বিয়ে
আমি: ইচ্ছে ছিল নাকি আগে?
ফাহাদ: ছি তওবা এইসব কি বলো
আমি: আবার আসছে
ফাহাদ: এই শালাদের এইবার বাড়ি পাঠিয়ে দিবো দাড়াও (মুখ ঘুরিয়ে দেখে ওর বাবা, ও জিভে কামড় দিয়ে আমার দিকে রাগী লোক নিয়ে তাকালো)
আমি: আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে, নেহাত বউ বলে বিপদে আছি।।

আঙ্কেল আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন। আমাকে দেখে হালকা জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিল।। আঙ্কেল আমাকে আর ফাহাদকে 2জনকে 2টা আংটি পড়িয়ে দিচ্ছেন। সব লাইট ক্যামেরা আমাদের দিকে ঘুরানো হয়েছে।। কি কি হচ্ছে সব ক্যামেরা বন্ধী করা হচ্ছে।। আঙ্কেল দোয়া পরে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন।

ফাহাদ: এটার প্রতিসুধ রাতে নিবো মাইন্ড ইট
আমি: দেখা যাবে

হটাৎ একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।। আমার তাকে চিনা চিনা লাগলেও ঠিক চিনতে পারছি না।।

:কতদিন পরে তোকে দেখলাম, শেষ স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানে লাস্ট বার দেখেছিলাম।। আর এখন 6বছর পর দেখছি তাও তোর বিয়েতে
আমি: সরি আসলে আমি আপনাকে চিনতে পারছি না
: আরে আমি রৌদ্র।। ভুলে গেলি? ঐযে রৌদ্র বৃষ্টি 2বোন ছিলাম, মনে নেই?
আমি: ও মায় গড। রৌদ্র? বলেই জড়িয়ে ধরলাম।।
রৌদ্র: অনেক খুঁজেছি তোকে, কিন্ত পাইনি অবশেষে পেলাম।। (রৌদ্র ফাহাদের দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো, ফাহাদ উত্তর দিয়ে আবার আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তুই কি কোনো ইনভিন্টেশন পেয়েছিলি? আসলে তোর কোনো অ্যাড্রেস বাবা জানতো বলে মনে হয় না।। জাস্ট আস্কিং, তুই প্লিজ খারাপ ভাবিস না।
রৌদ্র: ওয়েট (বলেই ওর ফোন বের করে কাকে জানি ফোন দিলো) একটু পরে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে কোলে একটা বাবু নিয়ে আসছে, আমি ফাহাদের দিকে তাকালাম ও আমার মতই তাকিয়ে আছে।।

রৌদ্র: (ওই ছেলের হাত ধরে বললো) হি ইজ মায় হাসব্যান্ড অ্যান্ড মায় সন।।

কাছে দেখে আমার চিনতে মুটেও ভুল হয় নি, এর মধ্যে ফাহাদ জড়িয়ে ধরে বললো

ফাহাদ: কি খবর আমান? আমি তোমাকে কার্ড পাঠিয়েছিলাম নিশ্চয়ই দেখেছ, আসলে আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই যেতে পারিনি, তোমাকে দেখে আই মিন তোমাদের দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি।।
আমান: আমি বুঝতে পেরেছি, কিছু মনে করিনি।।আমরাও খুশি আসতে পারে।। (আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল) কেমন আছো আয়েশা?
আমি: জী ভালো আপনি?
আমান: ভালো
আমি: আপনার ছেলে?
আমান: হ্যাঁ
ফাহাদ টেনে কোলে তুলে নিলো, আমি আলতো করে ওর গালে চুমু দিলাম।।

রৌদ্র আমার সাথে গল্প ঝুরে দিয়েছে।। 2বছর আগে ওদের বিয়ে হয়েছে।। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ ছিল, আর বাবুর বয়স 11 মাস চলছে। ওর কথা শুনে বুঝা গেলো ওরা খুব হ্যাপি আছে।।

রাতে সব প্রোগ্রাম শেষ এইবার বিদায় বেলা।। সবাই একে একে আমাকে গাড়ির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।। আমি আমার পরিচিত যাকেই পাচ্ছি তাকে দেখেই কেদে দিচ্ছি।। বাবা সায়েম ছাড়া সবার থেকেই বিদায় নেয়া হয়ে গেছে। বাবাকে দূরে দেখতে পেয়ে আমি বাবার কাছে গেলাম, বাবার চোখ চিক চিক করছে বাবা এইবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।। সায়েম এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে, বার আমাকে বলছে কান্না না করতে, তাও আমার চোখের পানি বাঁধা মানে না।।
সায়েম আমাকে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলো। ফাহাদ গাড়ির দরজা খুলে দিলো, আমি ভিতরে বসলাম, সায়েম আমার শাড়ীর আঁচল টা ভিতরে রেখে দরজা লাগিয়ে দিলো।।

ওইপাশে দিয়ে ফাহাদ এসে বসেছে।। সামনে একটা গাড়ি চলে গেলো আমাদের টা মাঝখানে পিছনে আরো কতগুলো আছে।।

ফাহাদ আমার হাত ধরে আছে

ফাহাদ: বলছিলাম না কান্না না করতে? একেবারে নিয়ে যাচ্ছিনা।।
আমি: তুমি কি বুঝ এইসবের? ছেলে হয়ে বেঁচে গেলে, যদি উল্টো নিয়ম হতো কেমন লাগতো?
ফাহাদ: আমি নাচতে নাচতে চলে আসতাম।।
আমি আর কথা বাড়ালাম না ওর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছি।।
ফাহাদ: এমন অদ্ভুত সুন্দর ভাবে কেন সেজেছ? বার বার দেখতে ইচ্ছে করছে
আমি: চুপ করো আমি একটু ঘুমাবো
ফাহাদ: ঘুমিয়ে নাও এই সময় টা পরে আর ঘুমানোর সুযোগ পাবেনা।।
আমি ওর বুকে কয়টা কিল ঘুষি দিলাম।।
মার খেয়ে বাধ্য ছেলের মত চুপ হয়ে গেল।।

হটাৎ মনে হচ্ছে আমি আকাশে ভাসছি, কি ভালো লাগছে।। হটাৎ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি উপরে আকাশ নিচে মাটি, পাশে ফাহাদ আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে।

আমি: এই কি করছ? সবাই তাকিয়ে আছে নামাও
ফাহাদ: (আসতে করে আমাকে নামিয়ে দিলো) এক ঘুমে শশুর বাড়ী চলে আসছ
আমি: ডাক দিতে পারতে সবার সামনে লজ্জায় ফেললে।।

দরজার কাছে আসতেই সবাই এসে ভিড় করেছে আমাকে।। মামুনি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, পিছনে দেখি ফারিয়া ক্লান্ত হয়ে ভিতরে ঢুকছিল। আমি ফাহাদকে হাতে খামচি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

আমি: ফারিয়া গিয়েছিল?
ফাহাদ: হ্যাঁ
আমি: আমি তো দেখিনি
ফাহাদ: আমিও। শুধু সাথে জেয়েছে এইটুকু জানি।।

পাশ থেকে কেউ একজন বলল, সারাদিন রাত পাবি কথা বলার জন্য এখন আমাদের কাজ গুলো করতে দে
ফাহাদ: তোমাদের নতুন বউ আমাকে বার বার খুঁজাচ্ছে, কথা বলার জন্য আমার কি দোষ? (আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিল)

ইস কেমন লজ্জায় ফেললো এত গুলো মানুষের সামনে, আমি আর কিছু বললাম না রাতে বুঝাবো।।

একটা মহিলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমি ফাহাদের দিকে তাকালাম, ও বুঝালো উনি খালা।।
আমি: কেমন আছ খালা?
খালা: ভালো মা তুমি?
আমি: ভালো
উনার সাথে আর কথা বলার সুযোগ হলো না। সবাই ভিড় করে আছে।।

যা যা নিয়ম কানুন আছে সব শেষ করে আমাকে রুমে পাঠানো হলো এই প্রথম ফাহাদের বাড়ি, ফাহাদের রুমে এসেছি।। আমার সাথে রাতে ফারিয়া থাকবে।। কাল হবে বাসর রাত।। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে, ফাহাদের এই মুহূর্তে মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে।।

ফাহাদ আমার ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছে
:::এটা মুটেও ভালো হয় নি, বিয়ে করেও শান্তি নেই।।

আমি ওর মেসেজ দেখে হাসছি, ফারিয়া আমার কাছে বসে জিজ্ঞেস করলো হাসছি কেন? আমি ওর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলাম বেচারি হেসে হেসে বিছানায় শুয়ে পরলো।।

পরের দিন বৌভাত, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।।

সকালে উঠে গোসল করিয়ে আবার পার্লারে নিয়ে গেছে, বাসায় আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেছে। আমার বাড়ির সবাই চলে আসছে।। ফাহাদ কে কাল আসার পর থেকে দেখছি না, হয়তো বিজি আছে।।

সন্ধ্যায় লোক জন আসা শুরু করে দিয়েছে।। ঐদিকে ফাহাদ সিড়ি দিয়ে নামছে।। ও নেমে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে
ফাহাদ: আবার এত সুন্দর করে সেজেছ?
আমি: আপনিও কি কম সেজেছেন?
ফাহাদ: তোমার মত আলতা লিপস্টিক দেইনি। শুনো এই লাল টুকটুকে বুলবুলির ঠোঁট, হরিণীর চোখ এইগুলা রাতে আর থাকবেনা
আমি: অসভ্য ছেলে

প্রতি সেকেন্ডের ছবি তুলা হচ্ছে ভিডিও করা হচ্ছে।।
সারাদিন বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি, সবাই বউ দেখে যাচ্ছে সাথে ছবি ও তুলে নিচ্ছে।।
3টা দিনে অনেক দুর্বল হয়ে গেছি, বিছানায় শুয়ে পরলেই ঘুম নিশ্চিত এইরকম অভ্যস্ত।।

সব ফর্মালিটি শেষ করে সবাই একে একে চলে গেলো।। আমাদের বাড়ির সবাই বললো কাল যেন চলে যাই, ফাহাদ ও না করলো না, কাল যাবে এমন আশ্বাস দিয়েছে, কোনো ভাবে হয় তো বুঝতে পেরেছে আমি এটাই চাই।।

12 টার দিকে আমাকে ফাহাদের ঘরে রেখে সবাই বের হয়ে গেলো।।
ফাহাদের ঘরটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।। আমি বেডের মাঝখানে লেহেঙ্গা বিছিয়ে বসে আছি।।
দরজা খুলার আওয়াজ শুনে বুকের ভিতর কেমন করে উঠলো।।
ফাহাদ রুমে ঢুকলো, আমি নেমে কদমবুসি করলাম।। ফাহাদ এইবার আমাকে একটা চেইন পড়িয়ে দিয়েছে।। ঐটার মাঝখানে আমার নাম লিখা, ভিতরে আবার খুলার অপশন আছে, ওইটা খুলে দেখি আমার আর ফাহাদের ছবি।।।

অনেক আগে অনলাইনে দেখে পছন্দ করে রেখেছিলাম, কিন্ত এইভাবে এত সহজে পাবো ভাবিনি।।

ফাহাদ: অনেক্ষন ধরে বাইরে ধর খোষাখোষি করে আসছি
আমি: কিসের?
ফাহাদ: এইযে দরজার সামনে 2টা ফিতা ধরে বলে টাকা না দিলে ভিতরে আসতে দিবে না, নগদ 5হাজার দিয়ে আসছি বাকি 10হাজার বাকি
আমি: ভালো হয়েছে।।

ও ওর পাঞ্জাবি খুলতে খুলতে বললো,
ফাহাদ: বলো তো এখন কি হবে?
আমি: কিচ্ছু হবেনা, 3দিন অনেক কষ্ট করেছি এখন ঘুমাবো।।

আমি চলে যাচ্ছিলাম ও একটানে আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেছে, আমার লেহেঙ্গা ভিতর দিয়ে আমার পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করছে, আমি ছাড়াতে চাচ্ছি ও কিছুতেই ছাড়ছে না।।
ও আমাকে কোলে তুলে নিল, আমার নাকে নাক ঘষছে।।
আমি: ছাড়ো বললাম তো কষ্ট হয়েছে
ফাহাদ: কষ্ট কি তুমি একা করেছ? আমি করিনি?
আমি: তুমি তো গায়ে হাওয়া লাগাতে বাইরে যেতে পারছ, আমি তো 3দিন ধরে এক জায়গায় ।।
ফাহাদ: বিয়ে করলে এইসব একটু হয়েই।।

ও আমাকে বেডের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, ও আসতে করে রুমের লাইট অফ করে দিলো, আমাকে বেডে শুয়ে দিয়েছে, ও আমার উপর শুয়ে আছে, আমার একদম কাছে চলে আসছে।।
আসতে করে আমার কানের দুল, গহনা সব খুলে নিয়েছে, ও আমার কপালে চুমু দিয়ে আমার ঠোঁটে এগিয়ে গেলো।।
আমি মুখ পাশ ফিরিয়ে নিলাম, ও আমার মুখ সোজা করে কানে কানে বলছে
ফাহাদ: এত লজ্জা কেন পাচ্ছো বউ?
আমি জবাব দিলাম না, ও বুঝেও না বুঝার ভান করলে কি জবাব দিবো।।
ফাহাদ: তোমার কি কিছু মনে আছে?
আমি: কি?
ফাহাদ: বলছিলাম 1 বিয়ের বছরের মধ্যে আমার বাচ্চা চাই
আমি: অসভ্য, তুমি কোনোদিন ঠিক হবেনা
ফাহাদ: এখন থেকে তো শুরু হবে অসভ্যতা কি।
আমি কিছু বলতে চেয়ে ও পারলাম না ও এর আগেই আমার মুখ বন্ধ করে দেয়, ঠোঁট জোড়া ওর দখলে নিয়ে নিয়েছে।।

2জনেই ভালোবাসার সাগরে পারি দিলাম।।

সমাপ্ত💔💔