#সাইকো লাভার❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ৮
রোজ নিজের হাত ছাড়াতে মোচরামুচরি করছে। শুভ্র ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে। তাই রোজের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। রোজ রেগে মেগে বললো।”
—-” কি হচ্ছেটা কি?”
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—-” কি হচ্ছে?”
রোজ দাত কিড়মিড় করে বললো!”
—-” আমার হাতটা ছাড়ুন,
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” যদি না ছাড়ি?”
রোজ এবার চেঁচিয়ে বললো,
—-” আমার এভাবে থাকতে বিরক্ত লাগছে। আমি চেন্জ করবো ছাড়ুন আমাকে!”
শুভ্র এবার রোজের হাত ছেড়ে বললো,
—-” সেটা আগে বলবে তো।”
রোজ ওয়াসরুমে যেতে গিয়েও। থেমে অসহায় ভাবে বললো,
—-” কিন্তুু আমি তো ড্রেস আনিনি!”
শুভ্র হেসে বললো,
—-” একবার কাবার্ড খুলে দেখো।”
কাবার্ড খুলে রোজ হা হয়ে গেলো। ওখানে সব মেয়েদের ড্রেস। এবার আরেক পার্ট খুললো। ওখানে সব ছেলেদের মানে শুভ্রর ড্রেস। রোজ লাল একটা শাড়ী নিয়ে চলে গেলো। শাওয়ার শেষ করে ১ঘন্টা পর বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুভ্র পাশে শুতেই রোজ বলে উঠলো,
—-” আপনি এখানে শুচ্ছেন কেন?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো!”
—-” তাহলে কোথায় শোবো?”
রোজ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-” আমি কি জানি? বাট আপনি আমার সাথে এক বিছানায় শোবেন না।”
শুভ্র উঠে বালিশ নিয়ে। সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। রোজও মুখটা বাঁকিয়ে শুয়ে পড়লো। সকালে আগে রোজের ঘুম ভাঙলো। সোফায় চোখ যেতেই দেখলো শুভ্র ঘুমানো। কি নিষ্পাপ লাগছে ওনাকে? এসব ভেবে রোজ উঠে বসলো। শুভ্রর অবাধ্য কিছু সিল্কি চুল ওর কপালে এসে পড়েছে। গোলাপি ঠোটটা কেন যেন কামড়ে ধরছে ঘুমের মাঝে। আবার বিরবির করে কিছু বলছেও। রোজ পা টিপে, টিপে শুভ্রর কাছে গেলো। শুভ্র কি বলছে সেটা শুনতে। কিন্তুু গিয়ে কোন লাভ হলো না। কারন রোজ কিছুই শুনতে পেলো না। রোজ ভেংচি কেটে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে আসতেই। নিজেই নিজেকে দেখে চমকে গেলো। ভাবতে লাগলো একা, একা,
—-” আসলেই আমাকে বউ, বউ লাগছে। নাকে ডায়মন্ডের ছোট নাকফুল। গলায় ডায়মন্ডের একটা চেইন। যেটাতে লাভ সেপ বসানো। হাতে চিকন দুটো ডায়মন্ড চুরি!”
রোজ কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে। আয়নার সামনে থেকে সরে। সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলো। এখান থেকে মানুষগুলোকে একদম ছোট লাগছে। কারন ওরা ৯তলার উপরে আছে। রোজ ভেবে অবাক হয়। এত বড় বাড়িতে শুভ্র একা থাকে? আবার বাড়ির কালারটাও অদ্ভুত। কেমন আজব যেন উনি। এরমাঝে রোজকে কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। এটা যে শুভ্র বুঝতে পেরেই রোজ রেগে। শুভ্রকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলে,
—-” আপনি আমাকে এভাবে ধরলেনন কেন?”
শুভ্র অবাক হয়ে বলে।”
—-” নিজের বউকে ধরতে পারি না?”
রোজ রেগে বলে,
—-” আপনি না বললেন? আপনি জোড় করে কিছু করবেন না!”
শুভ্র দাতে দাত চেপে বললো,
—-” তো আমি কি কিছু করেছি? তোমার সাথে ফিজিক্যাল করেছি? জাস্ট তোমাকে টাচই তো করেছি। হাগই তো করেছি এমন করার কি আছে?”
রোজ চেঁচিয়ে বললো।”
—-” আপনি আমাকে টাচও করবেন না,
শুভ্র এবার অনেক রেগে বললো!”
—-” আমার মাথা গরম করো না রোজ। তাহলে আমি যে কি করতে পারি। সেই বিষয়ে তোমার কোন আইডিয়া নেই,
ভয় পেয়ে রোজ চুপ হয়ে যায়। শুভ্রও ওখান থেকে চলে যায়।”
_____________________
রোজ পা টিপে, টিপে নিচে চলে এলো। নিচে আসতেই রিনি ওকে দেখে বললো,
—-” গুড মর্নিং ম্যাম!”
রোজ মুচকি হেসে বললো,
—-” গুড মর্নিং।”
বলে এদিক, ওদিক তাকালো। আজকে কোন ছেলে সার্ভেন্ট বা সেফ দেখছে না। সবাই মেয়ে তাই রিনিকে বললো,
—-” রিনি কোন ছেলে দেখছি না যে?”
রিনি আমতা, আমতা করে বললো!”
—-” আসলে ম্যাম,
তারআগেই শুভ্র এসে বললো।”
—-” আমি সবাইকে বিদায় করে দিয়েছি,
রোজ অবাক হয়ে বললো!”
—-” কিন্তুু কেন? আগে তো ওনারা ছিলো,
শুভ্র শিরি দিয়ে নামতে, নামতে বললো।”
—-” কারন তখন তুমি ছিলে না,
রোজ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো!”
—-” আমি আছি তো কি হয়েছে?”
শুভ্র এবার দাত কিড়মিড় করে বললো,
—-” এতকিছু জেনে কি করবে তুমি?”
রোজ মিনমিন করে বলে উঠলো।”
—-” আমি কি এমন বললাম?” শুধু জানতে চেয়েছি ওনারা নেই কেন?”
শুভ্র রোজের হাত চেপে ধরে রুমে নিয়ে এসে বললো,
—-” ছেলেদের দেখতে ভাল লাগে তাই না? ওরা কেন নেই সেটা জেনে তুই কি করবি? আর একটা কোশ্চেনও করবি না আমাকে। আজকে আমাদের রিসেপশন। তাই আমি চাই না আজকের দিনে কোন ঝামেলা হোক!”
বলে হনহন করে চলে গেলো। ৫ঘন্টা পর রুমে কিছু মেয়েরা এলো। এই ৫ঘন্টা রোজ রুমেই ছিলো। ওরা এসেই রোজকে সাজাতে লাগলো। রোজ রোবট হয়ে সব দেখছে শুধু। রোজ এখন অন্যকিছু ভাবছে। সেটা হচ্ছে শুভ্রর মাথায় প্রবলেম নেই তো? মাঝে, মাঝে কেমন একটা করে। রোজকে সাজিয়ে একজন বললো,
—-” ম্যাম দেখুন কেমন লাগছে?”
আরেকজন বললো।”
—-” শুভ্র স্যারের বউকে তো ভাল লাগবেই,
রোজকে নিচে নিয়ে গেলো। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। শুভ্র কাদের সাথে যেন কথা বলছে। রোজকে দেখে রোজকে নিয়ে এলো। এরপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। রোজের বিরক্ত লাগছে এসব। এরমাঝে দেখলো ওর বাড়ির লোক এসেছে। রোজ একরকম দৌড়ে গিয়ে সবাইকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রাগলেও সেটা প্রকাশ করলো না। রোজের কাজিনরাও এসেছে। সাফিয়া এসেই শুভ্রর কাছে এসে বললো!”
—-” হেই শুভ্র কেমন আছো?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” আমি তোমার বোন জামাই। সো আমাকে জিজু বলো।”
সাফিয়া এদিক, ওদিক তাকিয়ে বললো,
—-” আমি রোজের বড় তাই শুভ্রই বলবো!”
বলতে, বলতে শুভ্রর সাথে মিশে গেলো। শুভ্র ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
—-” এসব কি হ্যা? এরকম চিপকাচ্ছো কেন?”
সাফিয়া আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” সরি কিছু মনে করো না,
________________________
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে আরেকপাশে চলে গেলো। এদিকে সাফিয়া মনে, মনে হাসলো। রোজ সবার সাথে কথা বলছে। তখন শুভ্র সেখানে গিয়ে বললো!”
—-” আরে রোদ কেমন আছিস?”
রোদ মুচকি হেসে বললো,
—-” একদম ফিট, তুই কেমন আছিস?”
তামান্না হালকা হেসে বললো।”
—-” রোদ তোমরা কিভাবে আগে থেকে পরিচিত?”
রোদ তো কিছু বলতে পারবে না। রোদকে বলতে না দিয়ে শুভ্র বললো,
—-” সে অনেক কাহিনী। আরেকদিক বলবো। একটা কথা বলার ছিলো!”
রোজের বাবা বললো,
—-” কি কথা?”
শুভ্র মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।”
—-” আজকে তো আমাদের যাওয়ার কথা। আই মিন আপনাদের সাথে। বাট আমার একটু দরকারী কাজ আছে। তাই আজকে আমি বা রোজ আমরা যেতে পারবো না,
রোজ রেগে বললো!”
—-” এসব কি বলছেন আপনি?”
শুভ্র রোজের বাবাকে বললো,
—-” বাবাই আপনি বুঝতে পারছেন তো?”
রোজের বাবা বললো।”
—-” তাহলে কবে যেতে পারবে?”
শুভ্র হাসি দিয়ে বললো,
—-” কয়েকদিন পর!”
রোজের বাবাও বললো,
—-” আচ্ছা ঠিক আছে।”
রোজ কিছু বলতে যাবে। শুভ্র রোজকে নিয়ে চলে এলো। দেখতে, দেখতে রিসেপশন শেষ হয়ে গেলো। সবাই এক এক করে চলে গেলো। রাতে রোজ শুভ্রকে বললো,
—-” আপনার কি কাজ আছে হ্যা?”
শুভ্র বুড়ো আঙুল কপালে ঘষতে, ঘষতে বললো!”
—-” পার্টিতে সবার সামনে দৌড় দিলে কেন?”
রোজ কিছু না বুঝে বললো,
—-” মানে?”
শুভ্র এবার হুংকার ছেড়ে বললো।”
—-” আমি বাংলায় বলেছি। তুই কেন বুঝতে পারছিস না? ওভাবে দৌড় দিলি কেন?”
রোজ ভয় পেয়ে বললো,
—-” বাড়ির সবাইকে দেখে। নিজেকে আটকাতে পারিনি!”
শুভ্র রোজের মুখ চেপে ধরে বললো,
—-” তুই জানিস? পার্টিতে সবাই তোকে নিয়ে বলাবলি করছিলো? আমার বউ নাকি ম্যানার্স জানে না?”
রোজ এবার কেঁদেই দিলো। সেটা দেখে শুভ্র রোজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বললো।”
—-” এবার থেকে তুই মনে রাখবি। যে তুই এই শহরের ইনফ্যাক্ট। অন্যান্য দেশেরও নাম্বার ওয়ান বিজনেস টাইকুন শুভ্র চৌধুরীর ওয়াইফ,
বলে সামনে থাকা মিনি টেবিলটায় লাথি দিলো। রাগে শুভ্রর কপাল আর ঘাড়ের রগ ফুলে গিয়েছে। আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে। আর অনবরত ঠোট কামড়াচ্ছে। শুভ্রকে এভাবে দেখে রোজ ভয়ে কাঁপছে। বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে!”
#চলবে…