#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৪
যখন মানুষ অপরাধ করে তখন নিজের করা অন্যায়গুলো বুঝতে পারেনা। ভাবে আমি উত্তম বাকিরা অধম। একজন মেয়ে শশুর বাড়িতে এসে যদি হাসিমুখে কাজকর্ম সামলে সন্তান পালন করে, স্বামী শাশুড়ির মন রেখে চলাফেরা করে তখন সবাই তাকে সাদু বলে বাহবা করে।অথচ মেয়েটার মনের খবর কেউ রাখতে চেষ্টা করেনা। সামান্য জ্বরে যেখানে স্বামী বা তার পরিবারের লোকজন বিছানা থেকে উঠেনা সেখানে বউটা জ্বর নিয়ে অনায়াসে হাজারটা কাজ করে আসে। শ্রাবণের সেজো চাচার ছেলে রতন, এলাকা জুড়ে ওর বেশ নামডাক আছে।মোটামোটি প্রভাবশালীদের একজন। পরিবারের পছন্দে রাকাকে তখন বিয়ে করে তখন ওর বয়স ছিল পঁচিশ। বউয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা উপর থেকে যতটা ভালো দেখা যায় ভেতর থেকে ততটা না। বউ থাকতে হয় তাই আছে এরকম। বউয়ের মন রেখে তাকে ভালোবেসে কয়েক মিনিট পাশে বসতে হয় সেটা ওর দিয়ে হয়না। তাছাড়া রতনের একটা বদ অভ্যাস আছে। বউ কোনো ভুল করলে ধুম করে গায়ে হাত তুলতে দেরী করেনা। রাকা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। স্বামীর বাসা থেকে চলে যাবে এমনটা ভাবতে পারেনা। সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে এই বাড়িতে পড়ে আছে। মুখ বুজে সারাদিন গাধার খাঁটুনি খাঁটতে হয়। আজ হঠাৎ শ্রাবণের মুখে আলোর জন্য প্রতিবাদ দেখে ওর চোখে পানি এসে গেছে। প্রতিটা মেয়ে মনে প্রাণে চাই তার স্বামী বিপদে আপদে তাঁকে আগলে রাখুক। সব সময় পাশে থেকে সাপোর্ট দিক। আফসোস এমনটা খুব কম হয়। মিতু কান্নাকাটি করছে দেখে বাকীরা ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। মিতু শ্রাবণের ফুপাতো বোন। ইকবাল মাহমুদের বোন মারা গেছে অনেক বছর আগে। সেই থেকে বোনের মেয়ে এই বাড়িতে আছে। রাকা মিতুর কান্না দেখে বলল,
> মিতু দোষটা কিন্তু পুরোপুরি তোমার। কি প্রয়োজন ছিল আলোকে অযথা কথা শোনানোর? সবাই কিন্তু তোমার রতন ভাইয়ের মতো না। এবার থেকে কিছু বলতে হলে বুঝে শুনে বলবা। শ্রাবণ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা।
রাকার কথা শুনে মিতুর ভীষণ রাগ হলো। এক সময় শ্রাবণ ওর জন্য পাগল ছিল। কতটা ভালোবাসা আর অধিকার ছিল কে না জানে। সবটা কি সময়ের অতলে হারিয়ে গেলো? মিতু সেটা ভেবে প্রতিবাদ করলো,
> তুমি এখান থেকে যাও। তোমাকে কি ডেকেছি আলোর হয়ে উকালতি করতে? শ্রাবণ আমার উপরে রাগ করেছে আমি ঠিক ওকে মানিয়ে নিব। একটা বাইরের মেয়ের জন্য ও কিছুতেই আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেনা।
রাখা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যে বুঝেও না বোঝার ভান করে তাকে বোঝানো কঠিন। তাই মিনমিন করে বলল,
> বাইরের মেয়েটা এখন শ্রাবণের বউ। এই বাড়িতে ওর যতটা অধিকার আছে তোমার তার কানাকড়িও নেই। শ্রাবণের ঘর থেকে শুরু করে পুরো শ্রাবণ মাহমুদ একমাত্র আলোর। সেখানে তুমি আমি বাইরের মানুষ। অযথা নিজেকে ছোট করোনা। তোমার ইতিহাস আবার নতুন করে ঘাটাঘাটি হলে মনে হয় তোমার খুব একটা ভালো লাগবে না।
রাকা কথাগুলো বলে অপেক্ষা করলোনা। এখানে থাকলে কথায় কথা বাড়বে তারপর রতন এসে আচ্ছা করে ধোলাই করবে। দোষ গুণ বিচার করবে না। বোনের সঙ্গে তর্ক করার মতো অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। মিতু রাগে ফুলছে। কান্না থেমে গেছে কিন্তু চোখের পানি থামেনি। জিদ চিড়বিড় করে সারা শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানে নিজেকে তামাশার পাত্রী বানানো। মিতু নিজের কক্ষের দিকে ছুটলো।
*****
আলো চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। শ্রাবণ তীক্ষ্ণ নজরে ওকে দেখেছে। আলো ভদ্র বাড়ির ভদ্র বউয়ের রোল প্লে করতে গিয়ে চুপচাপ থাকতে হয়েছে যেটা শ্রাবণের পছন্দ না। অপরাধীর আবার আপন পর কি? যেই অন্যায় করবে উপযুক্ত শাস্তি সে পাবে। আলো নিচু কণ্ঠে বলল,
> পরিবারের মধ্যে ঝামেলা করা উচিত না। এতে অশান্তি বৃদ্ধি হয়। আমি দেখেছি বাবা যথেষ্ট ভালো মানুষ ছিলেন। সব সময় আমাদের আগলে রাখতেন তবুও একটা অভ্যাস উনার যথেষ্ট খারাপ ছিল। রাগ উঠলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না। আম্মার গায়ে হাত উঠাতেন। বাবা মারা যাওয়ার দিন আমিও থাপ্পর খেয়েছি। তাই আমার মনে হয় অযথা অশান্তি ডেকে আনা উচিত না।
শ্রাবণের জ্বরটা আবারও ফিরছে। মাথা দপদপ করে জ্বলছে। এই মূহুর্তে আলোর একটা কথাও ওর ভালো লাগছে না। নিজের পরিবার সম্পর্কে ওর যথেষ্ট ধারণা আছে। এই যে মিতুর সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল যেটা পরিবারের সকলে জানতো। অথচ সেই মিতুকে মেজো চাচির ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে কেউ সামান্যতম দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। বরং আনন্দ অনুষ্ঠান করে লিজার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়েটা হয়েছিল। সেসব ভাবলে নিজেকে ওর ভীষণ ছোট লাগে। নিজের উপরে রাগ আসে। তখন কি দেখে মিতুর মতো মেয়েকে ভালোবেসেছিলো এখন আফসোস হয়। মেয়েটা চরম পর্যায়ের লোভী আর অকর্মণ্য। কিভাবে মানুষের কষ্টগুলোকে খুচিয়ে ঘা করতে হয় বেশ ভালো পারে। উঠতি বয়সে তখন চোখে রঙিন চশমা ছিল। ভালো খারাপ বোঝার বুদ্ধি অতটা পরিপক্ক ছিল না। শ্রাবণ ঠোঁট চেপে বলল,
> আমি ফিরে যাচ্ছি। তোমার ইচ্ছে হলে যেতে পারো। মিতুর ছু*রির মতো মুখ চলে। ওর থেকে যত এড়িয়ে চলবে ও তোমাকে ততই আঘাত করতে আসবে। ইশাকে নিয়ে আসো। যেতে হবে।
শ্রাবণ নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। আলো কি করবে বুঝতে পারছে না। শ্রাবণের কাজিন সোনিয়ার বিয়ে উপলক্ষে ওরা এখানে এসেছে। আগামীকাল থেকে গায়ে হলুদ। এখন ফিরে গেলে কথা হবে। আলো কিছু বলতে চাইলো তার আগেই লিমা বেগম এসে হাজির হলেন। উনি হন্তদন্ত হয়ে শ্রাবণের কপালে হাত রেখে চমকে উঠলেন। চোখ রাঙিয়ে বললেন,
> এতোটা জ্বর নিয়ে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। পাগলামি বন্ধ করে রাহিনকে আসতে বল। আলো বাইরে রেবেকা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে নিয়ে আসো। সব রান্না আমি করেছি।
আলো অপেক্ষা করলোনা। বাইরে বের হলো। ওকে যেতে দেখে শ্রাবণ মায়ের কাঁধে মাথা রাখলো। মা মানেই শান্তির উৎস। লিমা বেগম ছেলের মাথায় হাত রেখে পূণরায় বললেন,
> মাথা ঠাণ্ডা কর বাবা। এভাবে পুরাতন কথা মনে রেখে ঝামেলা করলে মানুষে নানারকম কথা বলবে। তাছাড়া আলোর খারাপ লাগবে। ও ভাববে তুই মিতুর জন্য এখনো পাগল আছিস। বিয়ে করেছিস ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে হবে তাইনা?
> তুমি সবটা জেনেও চুপ থাকতে বলছো? ওই মেয়েটা আমার সঙ্গে কি করেছে সবটা ভুলে গেলে? ওকে দেখলেই আমার মাথা দপ করে জ্বলে উঠছে। আমি কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলিনা তুমি ভালো করে জানো। আগ বাড়িয়ে কিছু বলবোনা। কিন্তু কেউ আমার লেজে পা ফেলছে আমি তাকে ছাড় দিব না। ওদেরকে বলে দিবা পাঁচ বছর আগেকার শ্রাবণের সঙ্গে যেনো আমাকে মেলাতে না আসে। বাড়িতে ফিরে চলো মা। এখানে ভালো লাগছে না।
লিমা বেগমের মুখটা চুপসে গেলো। ছেলের কষ্ট উনি বুঝতে পারেন কিন্তু কিছুতো করার ছিল না। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে ছিল। একমাত্র ছেলেটাকে এভাবে দেখতে কোনো মায়ের কি ভালো লাগে? শ্রাবণ সহজে নিজের কষ্টটা কাউকে বলে না। আজ জ্বরের ঘোরে উগরে দিচ্ছে। উনি কোমল কণ্ঠে বললেন,
> বাবা সোনিয়ার বিয়েতে আমরা যদি না থাকি কেমন হয়? মেয়েটা শশুর বাড়িতে চলে যাচ্ছে। লোকজনের কথা বাদ দিলাম নিজেদের কাছেই কেমন লাগবে না? বাচ্চা মেয়েটাকে ছোট থেকে বড় হতে দেখলাম। ওর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে আমরা থাকবোনা। স্বার্থপরের মতো পালিয়ে যাবো?
শ্রাবণ চোখ বন্ধ করলো। মায়ের কথা ফেলে দেওয়া যায়না। সোনিয়া রতনের বোন। শ্রাবণকে চুপ থাকতে দেখে লিমা বেগম নিঃশব্দে হাসলেন। ছেলে অবশেষে হার মেনে নিয়েছে। কয়েকদিন এখানে থাকতে আর অসুবিধা নেই।
*******
বিয়ে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনা লেগেছে। আলোর সঙ্গে কয়েকজনের চেনাশোনা হয়েছে। আলো শাড়ি পড়তে খুব একটা দক্ষ না তাই শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে থ্রিপিচ পড়েছে। যদিও কয়েকজন নিষেধ করেছিল আলো শোনেনি। শ্রাবণ ঘরে আছে। রাহিন এসেছে ওর সঙ্গে কাজকর্ম করছে। ঘরটাকে অফিস বানিয়ে ফেলেছে। আলো সেদিকে পা রাখেনি। আজকাল শ্রাবণ ওকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। আলোর সেটা পছন্দ হচ্ছে না। একই বাড়িতে স্বামীর প্রাক্তনের সঙ্গে থাকাটা সহজ না তবুও আলো ওসব পাত্তা দিচ্ছে না। পড়ন্ত বিকেল বাড়ির ছেলেমেয়েরা ছাদে আড্ডা জমিয়েছে। তুলি আলোকে জোর করে সেখানে নিয়ে আসলো। বেশ কিছু নতুন মানুষ দেখে আলো বেশ লজ্জা পাচ্ছে। তুলি ওদের সঙ্গে ওর আলাপ করিয়ে দিলো। শ্রাবণের চাচাতো ভাই অভিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার জনপ্রিয় মুখ। চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করে সঙ্গে নাচ আর থিয়েটারে ওর দিন যায়। ছেলেটা দেখতে ভীষণ সুদর্শন তবে চেহারায় মেয়েলি মেয়েলি একটা ভাব আছে। নিয়মিত টিকটক করে। অনলাইনের ফেমাস সেলিব্রেটি বলা যায়। অভিক আলোকে দেখে বলল,
> এইটুকু বাচ্চা মেয়েকে ভাবি বলতে হবে? আমি ঠিকঠাক সময়ে বিয়ে করলে ওর মতো একটা বাচ্চা হতো জানিস?
তুলি হেসে ফেললো। অভিকের মুখে কিছু আটকে না। হাসিখুশি আর আনন্দ করতে ভালোবাসে। তুলি চোখ রাঙিয়ে বলল,
> আলো প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। তুই যতটা মনে করছিস ও অতটাও ছোট না। ভাবি না বলার কৌশল তাইনা? ওকে নাম ধরলে ভাইয়া তোর হাড্ডি ভাঙবে।
তুলির কথা শুনে পাশ থেকে মিতু ফোড়ন কাঁটলো,
> তোর ভাই আজকাল বউ পাগলা হয়ে গেছে। কিছু বললে মনে হয় ফোসকা নিয়েছে। কিভাবে পারে মানুষ এমন ন্যাকামি করতে?
ওর কথা শুনে আলো হাসলো। এতোক্ষন মাথা নিচু করে ছিল এবার মাথা তুলে মিতুর চোখে চোখ রেখে বলল,
> উনি আমার অর্ধাঙ্গী। মৃত্যু অবধি আমরা এক সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেছি তাহলে আমার ভালো অথবা খারাপ সময়ে উনি পাশে থাকবেন না কেনো? ফোসকা তো আনেকের পড়ছে আপু শুধু মলম লাগানোর কেউ নেই এই যা আফসোস। আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় নেই অথচ সকালে যেই ব্যবহারটা করলেন আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম।একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়েকে যদি সম্মান করতে না পারেন তাহলে পুরুষেরা কিভাবে আমাদের সম্মান করবে বলুন? আপনার সঙ্গে কি আমার জন্ম থেকে শত্রুতা আছে? নেইতো তাহলে ওগুলো বলার মানে কি?
আলোর কথা শুনে উপস্থিত সকলে চুপ হয়ে গেলো। বিষয়টা কারো অজানা নেই। মিতুর চোখ জ্বলছে। পুরাতন রাগ আবারও ফিরে এসেছে। ঠোঁট কামড়ে বলল,
> যাকে অর্ধাঙ্গী বলে ঢোল পিটাতে বসেছো এক সময় ওই পুরুষটা আমার নিজের ছিল। আমি বললে খরস্রতা নদীতে লাফিয়ে পড়তে দুবার ভাবতো না। আমার একটুখানি সঙ্গ পেতে মাসের পর মাস এখানে পড়ে থাকতো। আমার মুখের একটা কথা বেদবাক্যের মতো মান্য করে চলতো। উড়ে এসে জুড়ে বসে এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছো মেয়ে?
আড্ডার পরিবেশ গরম হয়ে উঠলো। আলো কিছু বলতে পারছে না। কিছু বললে এখন ঝগড়ায় রূপ নিবে। পাশ থেকে তুলি উত্তর দিলো,
> পচা শামুকে পা কাঁটলে কি মানুষ চিকিৎসা করেনা আপু? মনে করো ভাইয়া ভুল করে নর্দমার পানিতে পড়ে গিয়েছিল এখন সঠিক জায়গায় ফিরে এসেছে। মানুষ ভুল করবে এটাতো সাধারণ বিষয়। তোমাকে ভাবি হিসেবে আমার একটুও পছন্দ ছিল না। নিজের দোষ ঢাকার জন্য তুমি কতোটা মিথ্যা বলতে পারো সেকথা এখানের কারো অজানা নেই। নতুন করে বলতে চাইছি না। ভাইয়ার মুখের গালি না শুনতে চাইলে চুপ থাকো। বেচারাকে নিয়ে আর টানাটানি করোনা।
পরিবেশটা জটিল হয়ে উঠলো। কারো মুখে কথা নেই। অভিক পাশ থেকে বলল,
> সোনিয়ার বিয়েতে কোনো অশান্তি করোনা। যে যার লাইফে ভালো থাকার চেষ্টা করো। মিতু আপু তুমি অযথা আলো ভাবির পিছু লাগতে যাও কেনো? বাচ্চা একটা মেয়ে আমাদের বাড়ির নতুন সদস্য। ওর সঙ্গে কঠোর না হয়ে কোমল ব্যবহার করতে পারোনা?তুমি যেমন ব্যবহার করবে তেমনটা ফেরত পাবে। আশাকরি মনে রাখবে? এখন ঝগড়া বাদ,আমাদের আড্ডার বিষয় হচ্ছে আগামীকাল গায়ে হলুদে আমরা সকলে এক রকমের ড্রেস পরবো ঠিক আছে?
আবারও হৈচৈ পড়ে গেলো। আলো চুপচাপ ওদের কথাবার্তা শুনছে। মিতু কথার ফাঁকে আলোর পা হতে মাথা অবধি লক্ষ করছে। মেয়েটাকে যত দেখছে নিজের বোকামির কথা ভেবে শরীর জ্বলছে। শ্রাবণের উপরে অধিকার নেই বিষয়টা ভাবলে সবটা এলোমেলো লাগছে। আলো উঠে আসতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। রাকা অনেক আগেই উঠে গেছে। রান্নার দায়িত্ব পুরোপুরি ওর। অভিক গিটার এনেছে সঙ্গে। রাতে জমিয়ে আড্ডা হবে। নাচ গান আর কিছু ইউনিক খাবারের পার্টি। আলো সেখানে বিশেষ অতিথি। দু’ একজন বাদে বাকীদের ব্যবহার অমায়িক।
****
গভীর রাত পুরাতন বাড়ির ছাদে অনুষ্ঠান চলছে। গান বাজনার মাঝে মাঝে মিষ্টি পানিয় যেমন কোক, ফলের জুস বিতরণ হচ্ছে। আলো সাদা রঙের গাউন পরেছে। এখানে আসার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু রুমে গিয়ে করবেটা কি? শ্রাবণের কাজ চলছে পুরোদস্তুর। কখন শেষ হবে বলা কঠিন। গ্রামের এমন পরিবেশে আড্ডার আসরে আসার লোভটা সামলানো কঠিন। আলো একপাশে চুপচাপ বসে ছিল হঠাৎ লিজা এসে ওকে কোকের অফার করলো। আলো না বলতে পারলোনা। নিয়ে নিলো। কয়েক ঢোক খাওয়ার পর মাথা হঠাৎ করে ঝিমঝিম করতে শুরু করলো। পুরোপুরি আর খাওয়া হলোনা। মুখ টিপে বসে আছে। অভিক দুর থেকে বলল,
> ভাবি আপনি ঠিক আছেন? এমনে ঝিমুনি দিলে চলবে না আজ। আমার সঙ্গে সবাইকে গাইতে হবে কিন্তু।
আলো মৃদু হাসলো। শরীর ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। এর মধ্যে সাউন্ড বক্স বাজতে শুরু করলো। আলো না পেরে উঠে পড়লো। আশেপাশে খেয়াল করে টলতে টলতে যখন সিঁড়ি কাছাকাছি আসলো। শ্রাবণ দ্রুত এসে ওকে নিজের সঙ্গে আগলে নিলো। মেয়েটা আর একটু হলে নিচে পড়তো। শ্রাবণ ওর মুখের দিকে চেয়ে বলল,
> ঠিক আছো?
আলো মিনমিন করে বলল,
> মাথা টলছে। কোকটা ভালো ছিল না। শরীর খারাপ লাগছে। অশান্তি হচ্ছে প্রচুর।
শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে ভাবলো। তারপর আলোর মাথাটা খানিকটা উঁচু করে ধমক দিলো,
> কিসের কোক? যা খেতে পারোনা তা খাও কেনো?
আলো উত্তর করতে পারলোনা। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শ্রাবণ তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নিচের দিকে ছুটলো। একটু একটু করে মেয়েটা ওর কোলের মধ্যে শান্ত হয়ে গেলো। রুম পযর্ন্ত আসতে আসতে পুরোপুরি অচেতন। শ্রাবণ ঘাবড়ে গেলো। হন্তদন্ত হয়ে মাকে ডাকলো। ফোন বের করে বাবাকে ফোন করলো। শ্রাবণ ভাবলো, কোকের মধ্যে কি এমন ছিল যে আলোর শরীর এতোটা খারাপ হলো? কি থাকতে পারে? বিষাক্ত কিছু?
চলবে