প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৪

0
379

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,,৪

❤️❤️❤️❤️❤️

ভার্সিটির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে বিভোর আর প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে বিভোর। কারো দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই এখন তার। সোজা গিয়ে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দেয় প্রিয়তাকে। ফোন বের করে বিভা আর রিয়াকে নিয়ে আসার জন্য পিয়ুসকে ইনফর্ম করেই ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। স্টার্ট দিয়ে একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং করে। আড়চোখে একবার প্রিয়তার দিকে তাকায় বিভোর। এখনো জড়সড় হয়ে বসে আছে মেয়েটা। তবে মুখে ভয়ের সাথে আরো কিছু যোগ হয়েছে। সেটা হলো লজ্জা। লজ্জা রাঙ্গা মিষ্টি মুখটা নীচু করে বসে আছে। তা দেখে বিভার আড়ালে হেসে দেয়।মনে পড়ে কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,

তখন ভয়ে আর পরিস্থিতি তে জড়িয়ে ধরলেও পরে যখন হুশ আসে ছিটকে সরে যায় প্রিয়তা। লজ্জা ঘিরে ধরে তাকে। তারপর বাইরের দিকে পা বাড়াতেই ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে। সম্ভবত তখন রাকিবের থেকে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পায়ে কিছুতে আঘাত লেগেছে। সেটা বুঝতে পেরেই ফট করে কোলে তুলে নেয় বিভোর।

এই মেয়েটা যে তার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। তার রন্ধে রন্ধে বাস করে প্রিয়তার নাম। তাকে ছাড়া নিজেকে এক মুহূর্ত ভাবতে পারে না। দীর্ঘক্ষণ তাকে চোখের সামনে না দেখলে ছটফট করতে থাকে মনটা। শুধু এক পলকেই বুকের মাঝে নেমে আসে প্রশান্তি।
বিভোর একহাত বাড়িয়ে কাছে টেনে আনে প্রিয়তাকে। একপাশ থেকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে।

প্রিয়তা আজ অবাকের পর অবাক হচ্ছ। বিভোরের আচরণ বুঝে উঠতে পারছে না সে। তখন কি সব বলছিলো রাকিবকে,,,সে বিভোরের প্রিয়?? কেনো বললো এই কথা বিভোর?? তখন বিভোরের চোখে কিছু হারানোর তীব্র ভয় দেখেছিলো। প্রিয়তার জন্য এতোটা উদ্বিগ্ন হতে কখনো দেখেনি দেখেনি সে। অবশ্য এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়তে হয়নি। সব সময় বিভোরই তাকে বাজ’এর মতো তীক্ষ্ণ নজরে বন্ধি করে রেখেছে। আগলে রেখেছে সব কিছু থেকে।
আর এখন এভাবে জড়িয়েই বা আছে কেনো?এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লান্তি তে ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসে প্রিয়তার। বিভোরের কাঁধের ওপরেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় সে।
প্রিয়তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে তাকে আরেকটু কাছে এনে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁট চেপে মাথায় দীর্ঘ চুমু এঁকে দেয়। চোখের সামনে তখনকার ঘটনা ভেসে ওঠে। বুক কাঁপে তার। প্রিয়তার কিছু হলে সে কিছুতেই বাঁচতে পারবে না। নিঃস্ব হয়ে যাবে সে।

__________

চোখ খুলেই প্রিয়তা নিজেকে তার বিছানায় পায়। আসেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে চারদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। মানে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নিজের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে এখানে কি করে এলো। সে তো বিভোরের গাড়িতে ছিলো। আর হঠাৎ ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো। তারপর আর মনে করতে পারলো না সে। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো আর বিভোর তাকে কোলে নিয়ে এসেছে। ভাবতেই লজ্জা পায় সে। ইসস ফুপিও দেখেছেন নিশ্চয়। কি ভাবলো ফুপি।
সেই সময়ই রোশনি আহমেদ খাবারের প্লেট নিয়ে প্রবেশ করেন। প্রিয়তাকে উঠে বসে থাকতে দেখে বলেন,,

:-উঠে গেছিস সোনা। তা হাতমুখ ধুয়ে এসে এগুলো খেয়ে নে। শুনলাম ভার্সিটিতে নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিলি। ভাগ্যিস বিভোর ওখানে গিয়েছিলো। ও না দেখলে কি হতো বলতো।

সকালে না খেয়ে চলে গেলি। এভাবে খাওয়ার অবহেলা করিস বলেই এই অবস্থা। এখন থেকে না খেয়ে এক পাও বাইরে যেতে পারবি না। বিভোরের অর্ডার।

প্রিয়তা অসহায় মুখ করে তাকায় ফুপির দিকে। তাই দেখে রোশনি আহমেদ হেসে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলেন,,

:-এরকম অনিয়ম করে করে যদি এমন অসুস্থ হতে থাকিস তাহলে তোর বাবা মা কে আমি কি জবাব দেবো বলতো!!
মে আমরা তাদের মেয়েটার কোন খেয়ালই রাখতে পারিনি।

:-কি যে বলো ফুপি,,তোমরা আমাকে কত ভালোবাসো বলো তো। বাবা মায়ের কথা তো মনেই করতে দাও না।

:-আচ্ছা হয়েছে। ওঠ তো। ফ্রেস হয়ে আয়। খেয়ে নে। সারাদিন না খেয়ে আছিস।

:-যাচ্ছি যাচ্ছি,,বলেই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়। আবার কি ভেবে ফিরে তাকায়,,,

:-আচ্ছা ফুপি বিভা কোথায়??

:-ওকএ পিয়ুস নিয়ে গেছে তোদের ওখানে। কাল চলে আসবে সকালে। তুই যা তো আগে।

প্রিয়তা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

_________

রাতের ডিনার সেরে মামীর সাথে আডডা দিয়ে রুমে আসে বিভা। পিয়ুস তাকে নিয়ে এসেছে দুপুরে। প্রিয়তাকে না দেখে আর পিয়ুসকে নিতে দেখে প্রিয়তার কথা জিজ্ঞাসা করে বিভা। পিয়ুস আসল ঘটনা চেপে যায়। মূলত বিভোরই নিষেধ করেছে কিছু বলতে। নয়তো বিভা,রিয়া ভয় পেয়ে যাবে।তাই ওদেরকে বলা হয়েছে প্রিয়তার সামান্য মাথা ব্যথা করছিলো তাই বিভোর ওকে বাসায় নিয়ে চলে গেছে।
বাড়িতে এসেও বাবা মা কে একি কথা বলেছে।

গভীর রাতে ঘুমে আচ্ছন্ন বিভা। এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে সে। জানালা খোলা রাখায় এক টুকরো চাঁদের আলো এসে পড়েছে মুখে। পিয়ুস এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে বিভার মুখের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
অপলকে তাকিয়ে থাকে বিভার চাঁদের আলোয় রাঙা মুখের দিকে।এই মেয়েটা ঘুমালে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলেও এই মেয়ে টের পাবে না। এতো ঘুম কাতুরে।
ঘুমের মাঝে হাতের আঙ্গুল মুখে দিয়ে ঘুমাচ্ছে বিভা। তা দেখেই নিঃশব্দে হেসে দেয় পিয়ুস। একদম বাচ্চা লাগছে বিভা কে। আসলেই একটা বাচ্চা বিভা। তাইতো এখনো পিয়ুসের মনের অবস্থা টা বোঝে না। পিয়ুসের দু চোখে যে ভালোবাসার তৃষ্ণা সেটা অনুভব করতে পারে না। বুকের মাঝের দহন বাড়তে থাকে পিয়ুসের।বিভার এক হাত নিজের হাতের মাঝে বন্দী করে নেয় পিয়ুস।
আনমনে বিড়বিড় করে সে,,,

:-কবে বড় হবি তুই বিভাবতি!! কবে বুঝবি আমাকে!!
তোকে ছাড়া বাঁচা বড় যে দায় হয়ে পড়ছে দিন দিন।
মনের কথা গুলো তোকে জানাতেও পারছি না। সামনেই তোর এইচএসসি পরীক্ষা। আমি চাইনা তোর পড়াশোনার ওপর এখন কোন চাপ পড়ুক। একবার তোর এক্সাম শেষ হোক। তোকে আমার মনের মধ্যে থাকা এক সমুদ্র ভালোবাসার সাথে পরিচয় করাবো। তুই বুঝবি তো আমাকে বিভাবতি।
পিয়ুস মুখটা এগিয়ে নিয়ে বিভার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। তারপর গায়ে কাথা টা টেনে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

___________
পরদিন সকালে বিভা আর মা কে নিয়ে বিভোরদের বাসায় আসে পিয়ুস। মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারেননি নীলিমা হোসেন। প্রিয়তার বাবা আনোয়ার হোসেন বিজনেসের কাজে সিলেট গেছেন দুইদিন আগে। তাই নিলিমা ছেলের সাথে চলে আসে ননদের কাছে। মেয়েটাকেও একটু কাছে পাওয়া যাবে।

সকাল সকাল মা কে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয় প্রিয়তা। ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই মা কে তার বিছানায় বসে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়তা। পরক্ষনেই “মাআ” বলে নীলিমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নীলিমা হোসেন মেয়েকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে।

:- কেমন আছে আমার আম্মুটা?? শুনলাম কাল নাকি মাথা ব্যথা করছিলো।

প্রিয়তা বুঝতে পারে বিভোর কালকের আসল ঘটনা সবার থেকে লুকিয়ে গেছে। তাই মুখে কিঞ্চিৎ হাঁসি টেনে বলে,,

:- কোথায় মাথা ব্যথা আম্মু। সামান্যই একটু মাথা ব্যথা ছিলো। এখন একদম ঠিক আছি। দেখো!!!

নীলিমা মেয়েকে পাশে বসিয়ে বুকে আগলে ধরেন। তারপর নানা রকম গল্প করতে থাকেন।

চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি,,
_____________

কেবিনের ভেতরে তান্ডব চালিয়েছে নাহিদ চৌধুরী। টেবিলের ওপর থেকে সব জিনিস পত্র ঠেলে ফেলে দিয়ে রাগে ক্ষোভে ফুঁসছেন তিনি।
সকালেই খবর পেয়েছেন অবৈধ ভাবে যে বিল্ডিংয়ের কাজ তারা তারেক মির্জার থেকে নিয়েছিলেন সেই কন্ট্রাকপেপার কেউ চুরি করে পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছে।
এসব কিছুই যে বিভোর খানের কাজ তা তিনি খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।
কারন বিল্ডিংয়ের বৈধ পেপারও পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এখন যে ৯০ তলার ওপর আর বাড়ানো যাবে না সেটা পুলিশ জানতে পেরেছে। তবুও অবৈধ ভাবে কন্ট্রাক সাইন করাতে পুলিশ কমিশনার থেকে নোটিশ এসেছে।
মিস্টার লাহিড়ির ৩৫ কোটি টাকার ডিল তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে শুধু মাত্র বিভোর খানের জন্য। আবার এখন তার কাছেও দখল আন্দাজি করছে বিভোর। ক্ষোভে ফেটে পড়ে নাহিদ চৌধুরী। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,,

:- তোকে তো আমি দেখে নেবো বি.কে। নাহিদ চৌধুরী কখনো তার শত্রুর হিসেব বাকী রাখে না। নিঃশ্বেস করে দেবো তোকে। দেখে যা শুধু।

তারপর তার লোকেদের বলে বিভোর খানের গতিবিধির ওপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখ। তার প্রত্যেকটা খুঁটিনাটির ওপর কড়া নজরদারি কর। কোন না কোন দুর্বলতা তো থাকবেই বি কে’র। তারপর সে দেখবে কি করি,,,বলেই শয়তানি হাসি দেয়,,

কয়েকদিন পর
____________

পড়ার টেবিলে বসে বই নাড়াচাড়া করছিলো প্রিয়তা। তখনি বিভা এসে প্রিয়তার সামনে চানাচুরের বাটি নিয়ে বসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে বলে ওঠে,,,

:-আচ্ছা প্রিয়তাপু তুমি যে ভাইয়ার সাথে রিলেশনে আছো বলো নি তো আমাকে। আর আমিও তোমাদের কাছে থেকেও বুঝতেও পারলাম না,,, কতদিন চলছে এসব??

আচমকা বিভার এরকম কথা শুনে দারুন ভাবে চমকে ওঠে প্রিয়তা। শুকনো ঢোক গিলে বলে,,

:- কি আবোল তাবোল বলছিস বিভা!! আমি রিলেশনে আছি তাও তোর ভাইয়ের সাথে?? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোর?

:-ওমা মাথা খারাপ হতে যাবে কেন। আমিই তো দেখলাম কাল নিজের চোখে।

প্রিয়তা এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল,,

:- তুই কি এমন দেখলি যে মনে হচ্ছে আমি তোর ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছি?

বিভা উৎসাহ নিয়ে বললো,,

:- জানো কাল রাতে আমি গণিতের একটা সূত্র জানার জন্য ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম ভাইয়া টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনেই একটা খোলা ডায়রি।
আর তাতে তার #প্রিয়_আসক্তি কে নিয়ে কত শত কবিতা লেখা। ভাইয়া তো তোমাকেই মাঝে মধ্যে প্রিয় বলে ডাকে তাই না!!

প্রিয়তা চমকালেও স্বাভাবিক ভাবেই বলে,,

:- তোর ভাই আর কবিতা?? তাও আবার আমাকে নিয়ে??প্রিয় আসক্তি নিয়ে লিখলেও সেটা যে আমি তার কি কোন প্রমান আছে?? এটা তার প্রিয় অভ্যাসও তো হতে পারে। তুই কিনা দেখেই আমাকে ভাবলি?? যতো আজগুবি কাজ কারবার তোর।

বিভা হতাশ কন্ঠে বলে,,

:- সকালে আমি ভাইয়ার রুমে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না ডায়রি টা। নয়তো তোমাকে দেখাতাম।
তাহলেই তুমি বিশ্বা..
কথা পুরো শেষ করতে পারলো না বিভা। নিচ থেকে মায়ের ডাক পেয়ে সেদিকে চলে গেল।

বিভা চলে যেতেই প্রিয়তা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও মাথার মধ্যে কথাটা ঘুরপাক খেতে থাকে।
(আসলেই কি সত্যি নাকি বিভা ভুল দেখেছে,যদি সত্যিই হয় তাহলে কাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে বিভোর ভাইয়া!! কে সে যে বিভোর ভাইয়ার #প্রিয়_আসক্তি। আসলেই কি সে প্রিয়তাকে নিয়ে লিখেছে নাকি অন্য কেউ),,এই অন্য কাউকে ইম্যাজিন করেই বুকের মধ্যে কেঁপে ওঠে প্রিয়তার।
হৃদযন্ত্র টা যেনো থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তবু নিজেকে সামলে ভাবে(বিভোর ভাই কাউকে নিয়ে লিখতেই পারে তাতে আমার কষ্ট পাওয়ার কি আছে,কেউ থাকতেই পারে তার জীবনে যে তার #প্রিয়_আসক্তি। মনকে মুখে বোঝালেও মন বুঝলো কিনা বোঝে না প্রিয়তা। এক অবান্তর অশান্তি ঘিরে ধরে সারা সত্ত্বা।

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে বিরক্ত হয়ে পিছে ফিরে প্রিয়তা। বিভোরকে দেখেই বিরক্তভাব কেটে যায়। সাবলীল ভাবে তাকায় বিভোরের দিকে।

:- কিরে কি করিস এখানে দাঁড়িয়ে?

:- কিছু না ভাইয়া এমনিতেই।

:- আচ্ছা শোন রেডি হয়ে নে। তোকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আমার অফিসে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। মিটিং আছে ইম্পরট্যান্ট।বিভার আজ কলেজ বন্ধ।ও যাবে না।বলেই বেরিয়ে যায় বিভোর।

প্রিয়তাও একবারে রেডি হয়ে নিচে যায়। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে যায় বিভোরের সাথে।
গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট লাগাতে ভুলে যায় প্রিয়তা। বিভোর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে থাকে। চলতে চলতে প্রিয়তার দিকে তাকায় বিভোর। জানালা খোলা রেখে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যাস্ত সে। কালো রঙের থ্রি কোয়ার্টার হাতার গাউন পরেছে প্রিয়তা। ফর্সা শরীরে কালো রঙটা যেনো একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। মাথায় ওড়না টেনে দেওয়া। কাজল কালো চোখ,, ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। সব মিলিয়ে মোহনীয় লাগছে।
হঠাৎ গাড়ি থামতেই আসেপাশে তাকায় প্রিয়তা। ভার্সিটিতে তো এখনো আসেনি তাহলে গাড়ি থামালো কেনো? ঘুরে বিভোরের দিকে তাকাতেই বিভোর কে তার দিকে ঝুঁকতে দেখে হতচকিয়ে যায় প্রিয়তা। হুট করেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।
বিভোর প্রিয়তার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়ে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের ওপর হালকা ফুঁ দিয়ে মুচকি হেসে সরে আসে।
এদিকে চোখে ফুঁ দিতে প্রিয়তার শরীরে অন্যরকম অনুভূতির শিহরণ বয়ে যায়।
চোখ খুলে সিটবেল্ট বাধা দেখে বিভোরের তার দিকে ঝুঁকে আসার কারন বুঝতে পারে। মনে মনে নিজের মাথায় চাটি মেরে ভাবে(উফফ প্রিয়তা নিজের ভাবনাকে লাগাম দে। কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছিলি তুই। ধ্যাত)

প্রিয়তাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায় বিভোর।

______

দুপুরে মিটিং ফিক্স হয়েছে। ঠিক এমন সময় যখন প্রিয়তাকে ভার্সিটি থেকে পিক করতে হবে। পিয়ুস মিটিং অ্যারেন্জ করতে ব্যাস্ত নয়তো ওকেই বলতো প্রিয়তাকে বাসায় দিয়ে আসতে। পরে কিছু একটা ভেবে বিভোরের পিএ অয়নকে ফাইলগুলো রেডি করতে বলে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে আসে অফিস থেকে।

প্রিয়তার ভার্সিটির সামনে আসতেই ওকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখে। বিভোর গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে প্রিয়তাকে রাস্তা পার করে নিয়ে আসে। গাড়িতে বসিয়ে একটা পানির বোতল হাতে দেয়।

:- চোখে মুখে পানি দিয়ে নে। আর একটু পানি খেয়ে নে ভালো লাগবে।

বিভোরের এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো ভীষণ ভালো লাগে তার। মনের মাঝে অফুরন্ত অনুভূতির জন্ম দেয়।যে অনুভূতিতে অনেক আগেই আচ্ছন্ন হয়ে গেছে সে। ডুবে গেছে এক জোড়া বিড়াল চোখের মায়ায়।
গাড়ি উল্টো পথে যেতে দেখে অবাক হয় প্রিয়তা। জিজ্ঞাসা করে বিভোরকে,,,

:- বাসায় যাবো না?? কোথায় যাচ্ছি আমরা ??

:- অফিসে আজকে ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং আছে। এখন বাসায় যেতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই অফিসে যাচ্ছি। ওখানে একটু বসবি। মিটিং শেষ করেই বাসায় যাবো।
প্রিয়তা আর কোন কথা বলে না,, এর আগে সে কখনো বিভোরের অফিসে যায়নি।

______
অফিসের সবাই বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিভোরের দিকে। যেন সবাই ভুত দেখেছে। বিভোরের সাথে একটা মেয়েকে দেখে তারা বিস্ময়ের চরম শিখায় পৌঁছে গেছে। এর আগে বিভোরের সাথে কখনো কোন মেয়েকে দেখেনি তারা। আর না বিভোরকে কোন মেয়েকে পাত্তা দিতে দেখেছে। কত কত মেয়েরা বিভোরের পিছে লাইন দিয়ে থাকে কিন্তু বিভোর সেদিকে ফিরেও তাকায় না।
অথচ আজকে একটা মেয়েকে নিয়ে অফিসে এনেছে। তাও আবার মেয়েটার কাঁধে কলেজ ব্যাগ। তার থেকেও বড় আশ্চর্যের কথা বিভোর মেয়েটার হাত ধরে আছে।

এই মেয়েটা বিভোরের ফোন নয় সে বেপারে সবাই নিশ্চিত কেননা অফিসের সবাই টুকটাক বিভাকে চেনে। তাহলে এই মেয়েটা কে??

সবাইকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয় প্রিয়তা। দুহাতে আঁকড়ে ধরে বিভোরের বাহু। বিভোরও তাকে আগলে নিয়ে নিজেকে কেবিনে ঢুকে যায়। কাউকে কোন কিছু বোঝানো বা কৈফিয়ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।
প্রিয় তাকে কেবিনে বসিয়ে রেখে মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করতে যায় বিভোর প্রিয়তা যাতে বোরিং ফিল না করে তার জন্য প্রিয়তার ফোনে অফিসের ওয়াইফাই কানেক্ট করে দিয়ে যায়। আর একজন মেয়ে এমপ্লয় কে দায়িত্ব দিয়ে যায় প্রিয়তার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে সেটা মেটাতে যেনো কোন ত্রুটি না হয়।

এদিকে সেই মেয়েটা এতক্ষণ বিভোরের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। অস্থিরতা আর কৌতুহলে সে আর অপেক্ষা করতে পারছে না। বিভোরের সাথে এই মেয়েটা কে সেটা তাকে জানতেই হবে। কে আবার তার আর বিভোরের মাঝখানে থাবা দিচ্ছে দেখতে হবে।
মেয়েটার নাম মিশকা। প্রচন্ড স্টাইলিশ আর সুন্দরীও বটে। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ভীষণ অহংকার মিশকার। অফিসে মেয়ে এমপ্লয়ইদের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব সবটা মিশকার ওপরেই। তাই অফিসে সব মেয়েদের মধ্যে তার চলাফেরা একটু বেশি উগ্র। অহংকারে মাটিতে যেন পায়ে পড়ে না। মনে মনে বিভোর কে ভীষণ পছন্দ করে সে। বিভোর কে নিজের করে পেতে যা কিছু করতে পারে মিশকা।
বিভোরের নজরে আসতে সে নিজের কাজ খুব দায়িত্বশীলতার সাথে করে। এবং নিজেকেও খুব পরিপাটি করে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে সেজেগুজে অফিসে আসে। বিভোরের অবশ্য সেদিকে কোন ইন্টারেস্ট নেই। সে মিশকার কাজের পারফরমেন্সে অনেকটাই খুশি।বাকি তার মনে কি আছে সেসব ভাবার কোন সময় নেই বিভোরের।

বিভোর কেবিন থেকে চলে যেতেই প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসে মিসকা। মনে মনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় সে। অন্য একটা মেয়ের দায়িত্ব কিনা তার উপর দিয়ে গেল বিভোর। এত কিসের টান মেয়েটার উপরে,,,

:- নাম কি তোমার?? আর বিভোরের সাথে তোমার কি সম্পর্ক??

মিশকার আচমকা প্রশ্নে থতমত খায় প্রিয়তা। সামলে নিয়ে বলে।

:- আমি প্রিয়তা। বিভোর ভাইয়ার কাজিন।

মিশকা অনেকটা ঠোঁট বেঁকিয়ে অনেকটা তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে,,,,

:- ওহ কাজিন মানে তো নিজের বোনের মতো। তো ওভাবে হাত ধরে রাখার কি ছিলো। নাকি বিভোরকে দেখেই কাছে আসার ইচ্ছা করে!!

মিশকার কুটিল কথাগুলো ভীষণভাবে আঘাত করে প্রিয়তাকে!! এভাবে কেন কথা বলছে মেয়েটা!! দেখে তো অফিসের এমপ্লয় মনে হচ্ছে। বিভোরকে স্যার না বলে নাম ধরে ডাকছে কেন??

প্রিয়তাকে চুপ থাকতে দেখে আরও মনে মনে রেগে যায় মিশকা।
আরো কিছু বলতে নিবে তখনই পিয়ুস কেবিনে প্রবেশ করে। প্রিয়তাকে কেবিনে বসে থাকতে দেখেই অনেকটা অবাক হয় সে।পরক্ষণেই প্রিয়তার কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বলে,,
:- আরে বোনু তুই এখানে!! বিভোর নিয়ে আসলো নাকি!

নিজের ভাইকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় প্রিয়তা।
মিশকাও ততক্ষণে বুঝতে পারে প্রিয়তা পিয়ুসের বোন।
মনে মনে একটু ভয় ও পাই। প্রিয়তা যদি বলে দেয় তার ভাইকে যে মিশকা তাকে কি প্রশ্ন করছিলো। তাহলে কি হবে!! কিন্তু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও প্রিয়তাকে সেরকম কোন কিছু বলতে না দেখে স্বস্তি পায়।

চলবে,,,,,,,,