প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৫

0
203

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,৫

❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

কয়েক দিন পরেই বিভার এইচএসসি পরীক্ষা। মনপ্রান লাগিয়ে পড়ছে বিভা। তাকে ভাইয়া আর প্রিয়তাপুর মতো ভালো রেজাল্ট করতে হবে।

পড়ার টেবিলে বসে বই নাড়াচাড়া করছিলো বিভা। এমন সময় পেছনে কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাই সে। অসময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কাউকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়,,, মনের ভিতর খেলে যাই শিহরণ।

বিভার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে পিয়ুস। বিভা মাথা নিচু করে মিন মিন করে বলে,,

:-পিয়ুস ভাইয়া আপনি!!

:-হ্যাঁ আমি। তুই তো দেখছি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মান সম্মান ডুবিয়ে দেয়ার প্ল্যান করছিস কি বেপার!

পিয়ুষের কথার মানে বুঝতে পারেনা বিভা।কপাল কুঁচকে বলে,,।

:-কি বলছেন এসব??

:-তো কি। আরে এইচএসসি পরীক্ষা তোর কিন্তু পড়াশোনার এমন ভাইব নিচ্ছিস যেনো সারাবছর ল্যামপোস্টের আলোই পড়াশোনা করে সিলেবাস কভার করতে পারিসনি।

পিয়ুসের কথায় লজ্জা পায় বিভা। পিয়ুস বিভার লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয়,,,

:-হাহাহা,,ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াস বিভাবতি,,মজা করছিলাম।

বিভা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে পিয়ুসের হাঁসি মাখা মুখের দিকে। মানুষটা হাসলে যে তার হাসির শব্দে কারো হৃদয়ের সমুদ্রে ঢেউ উত্তাল হয় সেটা কি আদৌ জানে এই মানুষটা!!

বিভার দৃষ্টিতে আটকে যায় পিয়ুস। হুট করেই বিভার চেয়ারটা টেনে সামনে নিয়ে এসে বিভার দু পাশের হাতলে হাত রেখে বিভার দিকে অনেকটা ঝুঁকে তাকায়।
হুট করে পিয়ুসের কাছে আসায় ভড়কে যায় বিভা।
পিয়ুসের মুখটা বিভার মুখের উপরে নিবদ্ধ। অপলকে তাকিয়ে আছে বিভার দিকে। পিয়ুসের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে বিভার মুখে। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় বিভা। পিয়ুস যেনো বাস্তবে নেই। বিভার হালকা লালচে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে আসে। শুকনো ঢোক গিলে পিয়ুস। বিভার ঠোঁট দুটো যেনো টানছে তাকে। হুস হারিয়ে বসে পিয়ুস।
পিয়ুসের ঠোঁট বিভার ঠোঁট প্রায় ছুঁই ছুঁই এমন সময় রুমে পিয়ুসের নাম ধরে ডাকতে ডাকতেই প্রবেশ করে বিভোর।
সম্বিৎ ফিরতেই ছিটকে সরে যায় পিয়ুস। শব্দ পেয়ে চোখ খোলে বিভা। আড়ষ্ঠ হয়ে বসে থাকে সে।

:- কিরে পিয়ুস তুই এখানে !!আর আমি তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

তারপর রিভার দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- তুই এখানে পড়ছিস! প্রিয়তা কোথায়??

বিভা আস্থে করে বলে ,,

:-প্রিয়তাপু নিচেই! আম্মুর কাছে।

ওহ বলে পিয়ুষকে নিয়ে বেরিয়ে যায় বিভোর
।তার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় বিভোর। পিয়ুসের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,,

:-শালা কি করতে যাচ্ছিলি তুই?? এত বছর অপেক্ষা করতে পেরেছিস আর কয়েকদিন অপেক্ষা করতে পারছিস না??

পিয়ুস লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে হেসে বলে,,,

:-আরে ইয়ার কি বলবো তোকে,,তোর বোনের কাছে আসলেই আমার ধৈর্য্য সব লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ভাব একবার ওইটুকু একটা মেয়ে আমার মতো ছ’ফুটের পুরুষের মন মস্তিষ্ক সব কিছু ঘেটে রেখে দিয়েছে। হোয়াট এ পাওয়ার ব্রো!!

:-ছি ছি! এসব কী ওয়ার্ড ইউজ করছিস তুই আমার সামনে। তাও আবার আমার বোনের সম্পর্কে লজ্জা করে না তোর??
জানিস তো কয়েকদিন পরে বোনের পরীক্ষা। কটা দিন একটু ধৈর্য ধর।

:-ভাই আশিকি আব দেখায় কাহা হে আপ,,, বাই দ্যা ওয়ে তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?? আমি কিন্তু তোর প্রত্যেকটা দিওয়ানাপানের সাক্ষি। আর সেটাও কিন্তু আমার বোনকে নিয়ে।

পিউশের কথায় দমে গিয়ে গলা খাকারি দেয় বিভোর।

:-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক,,, আছে আর বলতে হবে না!! ভালোবাসার মাঝে মাঝে একটু এদিক ওদিক হয়ে যায়। আই ডোন্ট মাইন্ড!!

বলেই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে দেয়।

_________

একটা একটা করে পরীক্ষা শেষ হলো বিভার। শেষ পরীক্ষা টা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসে বিভা।
বেরিয়েই বিভোরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে। ভাইয়া কে দেখেই হাঁসি মুখে এগিয়ে আসে তার কাছে। বিভোরও বোনের কাঁধ জড়িয়ে বলে,,,

:- কেমন হলো এক্সাম??

:- খুব ভালো হয়েছে ভাইয়া।

:- হুম সে তো হওয়ারই কথা। কার বোন দেখতে হবে তো!!

ভাইয়ের বলার ধরন দেখে শব্দ করে হাসে বিভা। তারপর গাড়িতে উঠে যায়। বিভোরের গাড়ি যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে একজন। তারপর ফোন করে অপর পাশের কাউকে কিছু বলতে থাকে।

___________

অফিসে চাপ কম থাকায় একটু জলদিই বাসায় ফিরে আসে বিভোর। মায়ের সাথে বসে কিছু কথা বলে নিজের রুমে যায় সে। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিতে।

প্রিয়তা পড়ছিলো আর পাশেই বিভা বসে এটা ওটা নিয়ে গল্প করছিলো বিভা। হুট করেই বলে,,

:-প্রিয়তাপু আইসক্রিম খাবে?? প্লিজ প্লিজ চলো না ভাইয়াকে বলি আইসক্রিম খেতে নিয়ে যেতে। পরীক্ষা শেষে বাসায় বসে আছি একটু বাইরেও যাওয়া হলো না।

প্রিয়তা চোখ তুলে বিভা দিকে তাকায়। বলে,,

:- এই ভর সন্ধ্যাবেলা তোর ভাই বাইরে নিয়ে যাবে বলে তোর মনে হয়??

:- প্লিজ আপু। তুমি বললে ভাইয়া ঠিক রাজি হবে। চলো তুমি একটু বলবে ভাইয়াকে।

প্রিয়তা আৎকে উঠে বলে,,,

:- দেখ বিভা আমাকে একদম ফাঁসাবি না!! আমি পারবো না তোর ওই গোমড়া মুখো রাক্ষস ভাইয়ের সামনে গিয়ে বলতে,,,

:-কি বললে আমার ভাই রাক্ষস??😲

:-তা নয়তো কি!! রাক্ষস বললেও কম হবে। তোর ভাই তো একটা ওই কি বলে,, একটা,,,

:-থাক আর বলতে হবে না ✋বলেই কপাল চাপড়ে সাবানা স্টাইলে বলে,,,

:-এক অসহায় বোনের সামনে তার ভাইকে নিয়ে এরকম মন্তব্য করতে কি আপনার বুক একটুও কাঁপলো না মিস প্রিয়তা!!! হে খোদা !!এই দৃশ্য দেখার আগে আমার বমি কেনো হলো না,,,

বিভাগ বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলে প্রিয়তা। বলে,,

:-থাক আর নটাংকি করতে হবে না। আমি গিয়ে বলছি বিভোর ভাইয়া কে। কিন্তু একটা শর্ত,,,,রাজি না হলে কিন্তু আমি জোর করে কিছু বলতে পারবোনা।

:-ওকে ওকে। আপ কি শার্ত মানজুর হ্যায়। আই হোপ তুমি একবার বললেই ভাইয়া রাজি হবে।

প্রিয়তা বেরিয়ে যায় বিভোরের রুমের দিকে।
দরজায় টোকা দিয়ে বিভোরকে ডাকে প্রিয়তা। সাড়া না পেয়ে দরজা হালকা ফাঁক করে দেখে ভেতরে,,, কাউকে দেখতে না পেয়ে আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে পড়ে। বারান্দায় গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। আবারো রুমে আসে প্রিয়তা।

ঠিক তখনি বিভোর ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাইরে আসে।
রুমে ঢুকেই প্রিয়তাকে ব্যালকনি থেকে রুমে ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হয় বিভোর। এদিকে প্রিয়তা রুমে ঢুকেই চোখ পরে বিভোরের দিকে। অমনি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থেকে হুট করেই জোরে চিল্লিয়ে ওঠে,,

:-আআআআআআআ

বিভোর তাড়াহুড়ো করে এসে প্রিয়তার কোমরে হাত রেখে এক ঝটকায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে। আসলে বিভোর শাওয়ার নেয়ার পর শুধু একটা সাদা টাওয়েল পরেই ওয়াসরুম থেকে বাইরে এসেছিলো।

মুহুর্তেই ঘটে যাওয়া ঘটনায় হতভম্ব প্রিয়তা। সে যে বিভোরের খোলা বুকের সাথে লেপ্টে আছে সেটা বোধগম্য হতেই নিঃশ্বাস আটকে আসে তার। চোখ বড় বড় করে তাকায় বিভোরের দিকে। ওমনি বিভোরের ভেজা দু চোখে আটকে যায়। শাওয়ার নেয়ার ফলে ভেজা চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝরে পড়ছে প্রিয়তার চোখে মুখে। কিছু চুল কপালে লেপ্টে আছে। কয়েক ফোঁটা পানি গলা বেয়ে বুকের দিকে নেমে আসছে আর সেই পানিতে প্রিয়তার গলার কাছে জামা অনেকটা ভিজে যাচ্ছে। প্রিয়তা ছটফট করে ওঠে ছোটার জন্য,,,

:-উমমমমম,,,,

:-কি উমমমম?? চিৎকার দিতে যাচ্ছিলি কেনো ডাফার?
আর তুই আমার রুমেই বা কি করছিলি??

:-উমমমমম,,,

:-আবার উমমমম করছিস!! আমি কি বলছি তার উত্তর দে আগে,,,,

এবার প্রিয়তা চোখ গরম করে তাকায় বিভোরের দিকে। এতক্ষণে বিভোরের হুশ আসে সে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে আছে। সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায় বিভোর।

প্রিয়তা বুক চেপে ধরে নিচু হয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর বলে,,,

:- এভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে?? আরেকটু দেরি হলেই তো আমি ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেতাম।

বিভোর প্রিয়তার মুখে মরার কথা শুনে রেগে কিছু বলতে নিবে তার আগেই প্রিয়তা পেছন ঘুরে আবার বলে,,

:-আপনি প্লিজ আগে জামা কাপড় পরে নিন। এরকম নির্লজ্জের মতো টাওয়েল পরেই দাঁড়িয়ে আছেন কেনো এখনো??

প্রিয়তাকে লজ্জা পেতে দেখে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে বিভোরের। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দুহাতে চুল ঠিক করতে করতে বলে,,,

:-কেনো?? আমার রুম,,আমার শরীর আমি টাওয়েল পরে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি সব খুলে আলগা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো সেটা আমার বেপার। তুই কেনো নক না করে আমার রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে ছিলি?
বিভোরের লাগাম ছাড়া কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় প্রিয়তা। প্রিয়তার লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কাপড় পরে নেই বিভোর তারপর প্রিয়তার সামনে গিয়ে বলে,,

:-আমার এই চার্মিং বডির জন্য ফিদা হয়ে কতো মেয়েরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে বিয়ে করার জন্য। আর তুই কিনা না দেখেই আমাকে কথা শোনাচ্ছিস??

প্রিয়তা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,,

:- ওইসব মেয়েরা নির্লজ্জ বেহায়া তাই এরকম করে। আপনিও নির্লজ্জদের মতো ওদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে হিরো সেজে ঘুরে বেড়ান যাতে ওরা কু নজর দিতে পারে তাইনা???

প্রিয়তার রাগ দেখে হাসে বিভোর। মনের মাঝে অফুরন্ত প্রশান্তির হাওয়া ঢেউ খেলে। তার প্রিয় অন্য মেয়েদের কথা শুনে রেগে যাচ্ছে মানে সে তাকে নিয়ে জেলাস। এটাই তো অনেক বড় পাওয়া। বিভোর হাঁসি মুখে এগিয়ে এসে দু হাতের তালুতে প্রিয়তার মুখটা উঁচু করে ধরে বলে,,,

:- রাগ করছিস কেনো প্রিয়?? আমি তো মজা করছিলাম।

প্রিয়তা তাও মুখ গোমড়া করে মুখ নিচু করে থাকে। বিভোর প্রিয়তার মুখ আরেকটু উঁচু করে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেয়। সারা শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে যায় প্রিয়তার। থরথর করে কেঁপে ওঠে প্রিয়তা। বিভোরের পেটের কাছে শার্ট খামচে ধরে। প্রিয়তার রিয়্যাক্শনে মুচকি হাসে বিভোর। আস্তে করে সরে এসে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলে,,

:- তা মহারানীর আগমনের কারনটা জানতে পারি!!!

প্রিয়তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,,

:-আসলে বিভা বলছিলো বাইরে নিয়ে যেতে।

:-বাইরে কেনো??

:- আ, আইসক্রিম খেতে যাবে বলে বায়না ধরেছে বিভা। তাই,,

প্রিয়তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে,,,

:-আচ্ছা যা রেডি হয়ে নে। একটু পরেই বেরোবো।

প্রিয়তা বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বিভোর টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। রুম জুড়ে যেনো প্রিয়তার শরীরের মেহেক ছড়িয়ে আছে। নাক টেনে সেই সুবাস যেনো নিজের মধ্যে টেনে নেই বিভোর।

___________
রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা। প্রিয়তা আর বিভা অপেক্ষা করছে বিভোরের। কাছুক্ষন পর দুহাতে আইসক্রিম নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায় বিভোর। দুজনের হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে হাতে ফোন নিয়ে কাউকে ফোন লাগাই বিভোর।

কিছুক্ষণ কথা বলে আবার এগিয়ে আসে দুজনের দিকে।
বলে,,,

:- পিয়ুস আসছে!! মামি নাকি বিভা কে নিয়ে যেতে বলেছে। প্রিয়তা এখন আমার সাথে বাসায় ফিরবি। আর বিভাগ পিউসের সাথে যাবি।

পিয়ুষের নাম শুনতেই শরীরে অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় বিভার। এই মুহূর্তে পিয়ুসের আসার খবর শুনে মনে মনে খুশিতে উৎফুল্লহে বিভা। তাও আবার তাকে নাকি নিতে আসছে। যাক অনেক্ষন সময় পিয়ুসের সাথে কাটানো যাবে
ভাবতেই মুখে রক্তিম আভা ফুটে ওঠে।
কিছুক্ষণ পরে পিয়ুসও এসে হাজির হয়। সে মূলত আজকে বিভাকে প্রপোজ করবে বলে ঠিক করেছে।
সবকিছু প্ল্যান মাফিক সাজিয়ে নিতে এসেছে বিভা কে। বিভোরের সাথে কথা বলে জানতে পারে ওরা বাইরে এসেছে।এটা অবশ্য ভালো হয়েছে নয়তোবাড়িতে গিয়ে ফুপি কে বলে নিয়ে আসতে হতো।

প্রিয়তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বিভাকে নিয়ে চলে যায় পিয়ুস। আর প্রিয়তাও ফিরে আসে বিভোরের সাথে।

___________

পিয়ুস ড্রাইভিংয়ের মাঝেই বিভার দিকে আড় চোখে তাকায়। নিজেকে প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে পিয়ুসের। মনে মনে ভাবে,,,(উফফ সামান্য নিজের মনের কথা বলতে হবে এতে এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে,,মোস্ট পাওয়ারফুল হ্যান্ডসাম এ্যান্ড হাই পারসোনালিটির পিয়ুস কিনা ভয় পাচ্ছে এই টুকু পুঁচকে মেয়েটাকে মনের কথা বলতে) এটা কোন কথা 🙄🙄
তবুও প্রচন্ড এক্সাইটেড পিয়ুস। তার বিভাবতি তাকে বুঝবে তো?? ঝাঁপ দিবে তো তার বুকের মাঝে গড়ে ওঠা এক সমুদ্র ভালবাসায়!!!
এদিকে বিভা চোরি ছুপকে দেখে পিয়ুস কে। আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে যেনো। ফুল ব্ল্যাক গেটআপে এসেছে পিয়ুস। সে জানে বিভার প্রিয় রঙ কালো।
ফর্সা শরীরে কালো রঙটা যেনো একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। চোখ ফেরাতে পারে না বিভা। নিজের অনুভূতির কথা কখনো এই মানুষটাকে বলতে পারবে কিনা কে জানে।

হঠাৎ খেয়াল হলো গাড়িটা পিয়ুসের বাড়ির দিকে যাচ্ছে না। বিভা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,

:-পিয়ুস ভাইয়া আপনি বাড়িতে না গিয়ে কোথায় যাচ্ছেন আমাকে নিয়ে??

:- কোথায় যাচ্ছি তা জেনে তুই কি করবি?? গেলেই তো দেখতে পাবি। এখন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাক। (এমনিতেই নার্ভাসনেসে আমি পাগল হয়ে যায় তার ওপর এই মেয়েটা প্রশ্ন করা শুরু করেছে) বিড়বিড় করে পিয়ুস।
বিভা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর একটি রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামে। পিয়ুস গাড়ি থেকে নেমে এসে ওপাশের দরজা খুলে বিভাকে বের করে নিয়ে আসে। বিভার হাত এক হাতে ধরে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। বিভা অবাক হয়ে তাকায় চারপাশে। কিছু কাপল দেখা যাচ্ছে আশেপাশে। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ অনেক সুন্দর। এরই মধ্যে একটি প্রাইভেট রুমের দিকে দেখিয়ে পিয়ুস বলে,,,

:-বিভা তুই ওই রুমে গিয়ে বোস আমি আসছি!!
বিভাও ওই রুমে চলে যায়।
রুমের মধ্যে প্রবেশ করে দেখে রুমটা পুরো অন্ধকার। আশেপাশের কোন কিছুই ভালোমতো দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরেই দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই রুমটা আলোয় ঝলমল করে ওঠে। বিভা অবাক হয়ে থাকায় চারপাশে। রজনীগন্ধা, গোলাপ দিয়ে অসাধারণ সুন্দর করে সাজানো রুমটা। ফেইরি লাইট আর কিছু মোমবাতিও জ্বলছে। তার মাঝে দেয়ালেবড় বড় করে লেখা ❤️আই লাভ ইউ বিভাবতি ❤️

এটা দেখেই পা দুটো থমকে যায় বিভাব বুকের ভিতরে অদ্ভুত ভাবে মোচড় দিয়ে ওঠে এক্সাইটিংয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে বিভা। অনাকাঙ্ক্ষিত খুশিতে চোখ দুটো ভরে যায় অশ্রুতে। তখনই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেউ। বিভা না তাকিয়েও বুঝতে পারে মানুষটা কে। তার গায়ের গন্ধটা যে তার খুব পরিচিত।

পিয়ুস বিভা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে ফিসফিস করে বলে ,,,,

:- আজ তোমাকে কিছু বলবো বিভাবতি। বলবো আমার বুকে জমানো এক সমুদ্র ভালোবাসার কথা। একটা ছোট্ট পরীকে ভালোবেসে উদ্মাদ হওয়ার কথা,, তার গভীর ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার কথা,,শুনবে তো তুমি??

পিয়ুসের ফিসফিসিয়ে কথা বলা আর তুমি ডাকে অনুভূতি গুলো দলা পাকিয়ে যায় গলায়। পেটের ভেতর অন্যরকম এক কাঁপানো যন্ত্রনায় মুচড়ে ওঠে। বুকটা ধুকধুক করে,,দ্রুত ওঠা নামা করে বুকটা।

পিয়ুস বিভাকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
আমার জীবনের ঝড়ো হাওয়ার মতো এসেছিলে তুমি। এক আচমকা ঝড়ে বুকের ভেতরে টা লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গিয়েছিলে। যেদিন আমি কানাডা থেকে দেশে এসেছিলাম।
সেদিন বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজন ছিলো ।কিন্তু আমার চোখ আটকে গেছিলো একটি কাজল কালো চোখে।
একটি লালচে ঠোঁটে। একটা চাঁদ মাখা মুখে। এক ছোট্ট পরী তে আসক্ত হয়ে গেছিলাম তখন থেকে। সেই ছোট্ট পরী টা তুমি। আমার জীবনের একটাই পরী। আমার বিভাবতি ❤️
আমার আসক্তি।
আর কিছু বলতে পারে না পিয়ুস। আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে পিয়ুসকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় বিভা।
বিভাকে কাঁদতে দেখে বিচলিত হয়ে যায় পিয়ুস। (ডোজ টা একটু বেশি হয়ে গেলো নাকি 🙄)মনে একটা আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিভা যদি রাজি না হয়!! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে পিয়ুসের। বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো তার।
বিভার মুখটা দু হাতের আজলে তুলে ধরে আদুরে গলায় বলে,,,
:- এই বিভাবতি ❤️ কাঁদছো কেনো? আমার কথায় খারাপ লেগেছে? আ’ম সরি। আর কিছু বলবো না কিন্তু কেঁদো না প্লিজ। তোমাকে আমার জন্য কাঁদতে হলে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
বিভার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,
:-আমি জানি তোমার খারাপ লাগছে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। ভালোবাসি তোমায়। আমি তোমাকে জোর করবো না। তুমি না চাইলে আমি এখনি চলে,,,
আর কিছু বলতে পারলো না পিয়ুস। বিভা আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,

:-ভালোবাসি। আমিও আপনাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।
বিভার মুখে “ভালোবাসি” শুনে বুকে চাপা পাথরটা যেনো নিমিষেই সরে যায়। প্রশান্তিতে ভরে যায় মন। চোখের কোণ বেয়ে ঝরে পড়ে একবুক সুখের অশ্রু।
বিভার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,,

:-হুসস,,,আর কান্না নয়। চুপ একদম চুপ। বলেই কপালে চুমু এঁকে দেয়। আবেশে চোখ বন্ধ করে বিভা।
পিয়ুস এক হাতে বিভার কোমর জড়িয়ে ধরে একটু উঁচু করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরেক হাত বিভার চুলের ভাঁজে গলিয়ে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। এতো দিনে
এক বুক ভালোবাসার সমুদ্রের ঢেউ যেনো একটু শান্ত হয়।

To be continue,,,,,,