#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,১০
❤️❤️❤️❤️❤️❤️
বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। আজ প্রিয়তা ও বিভোরের এনগেজমেন্ট। নীলিমা হোসেন আর রোশনি আহমেদ সকাল থেকে ব্যস্ত কিচেনে। ঘরোয়া ভাবেই আয়োজন করা হয়েছে।
মূলত বিভোরই ঘরোয়া ভাবে আয়োজন করতে বলেছে। নয়তো এনগেজমেন্ট ,গায়ে হলুদ, বিয়ে সবকিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে বেশি ধকল যেত সকলের। তাছাড়া প্রিয়তাও চাইছিল না বেশি জাকমজম করে এনগেজমেন্ট হোক।
________
পিয়ুস,আর আবির মিলে বিভোরকে রেডি করে। হোয়াইট শার্টের ওপর স্কাই ব্লু কালারের স্যুট, প্যান্ট,হাতে হোয়াইট কালারের রিস্ট ওয়াচ,চোখে গোল সাদা ফ্রেমের চশমা,বাম কানে ছোট্ট হোয়াইট স্টোনের ইয়ারিং,পায়ে ক্রিম কালারের লোফার সু,,সিল্কি চুল গুলো কপালের ওপর পড়ে আছে। একদম প্রিন্সচার্মিং লাগছে বিভোরকে।
পিয়ুস আজকে পুরোটাই নীল রঙে সেজেছে। সাদা শার্টের ওপর নীল স্যুট প্যান্ট। ব্ল্যাক লোফার সু,,হাতে হোয়াইট ওয়াচ। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। দারুন লাগছে পিয়ুসকে।
আবির ফুলটু ব্ল্যাক। স্যুট প্যান্ট জুতা সব কিছুই কালো রঙের। ফর্সা শরীরে কালো রঙটা যেনো একটু বেশিই সুন্দর লাগছে আবিরকে।
ড্রয়িং রুমে মেহমানরা সবাই প্রিয়তার আসার অপেক্ষায়। ঠিক সেই সময় সিড়ি বেয়ে নেমে আসে তিন বান্ধবী।
একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো পিয়ুস ,বিভোর আর আবির। প্রিয়তারা নিচে নামতেই তিন বন্ধুর চোখ পড়ে ওদের উপর। বিভরের সময় যেন থমকে গেছে প্রিয়তাকে দেখে। স্কাই ব্লু রঙের বড় ঘের ওয়ালা গাউন পড়েছে প্রিয়তা। গাউনের উপর ছোট ছোট সাদা স্টোনের কাজ করা। তারার মতো ঝলমল করছে সেগুলো। মাথায় হোয়াইট হিজাব তার ওপর হোয়াইট স্টোনের ক্রাউন।চোখে কাজল, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। একদম প্রিন্সেস লাগছে প্রিয়তাকে। নেশাক্ত মাতাল করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিভোর। হার্টবিট অসম্ভব দ্রুত চলেছে তার। চোখ ফেরাতে পারে না বিভোর।আটকে থাকে প্রিয়তাই
পিউস তাকিয়ে আছে তার নীলপরীর দিকে। বিভা অবশ্য বলেছিল সে নীল পরবে।তাইতো সে নিজেকে নীল রঙে রাঙিয়ে এসেছিলো ।কিন্তু চোখের সামনে বিভাকে নীল রঙে এত সুন্দর লাগবে এটা কখনোই ভাবিনি পিয়ুস।নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে বিভা। চুলগুলো ছাড়া ,কানে সাদা স্টোনের ঝুমকা,,গলায় এনটিকের হার। সব মিলিয়ে মোহনীয় লাগছে তাকে। পিয়ুস চোখ ভরে দেখতে থাকে তার অতি আকাঙ্ক্ষিত নারীটি কে।
আবির রিয়াকে দেখেই কয়েকটা হার্টবিট মিস করে ফেলেছে। কাকতালীয় ভাবে রিয়াও কালো রঙে নিজেকে মুড়িয়েছে। কালো রঙের গাউন পরেছে রিয়া। হাতে ব্ল্যাক চুড়ি,কানের ব্ল্যাক এনটিকেট ঝুমকো ,গলায় হার, ওড়নাটা একপাশে সেট করা, স্টেট চুল গুলো উঁচু করে পনিটেল করা। সব মিলিয়ে একদম ব্ল্যাক ডায়মন্ড লাগছে।
প্রিয়তা এসে নামতেই বিভোর প্রিয়তার হাত ধরে কাছে নিয়ে আসে। পরিবারের সকলে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু করে। বিভা আর পিয়ুস দুই টা রিং নিয়ে এগিয়ে যায় মঞ্চে।
প্রথমে বিভোর প্রিয়তার হাতে রিং পরিয়ে দেয়। তারপর প্রিয়তা বিভোরকে। একে অপরের নামে আংটি বদলের মধ্যে দিয়ে দু’জন দু’জনের বাকদত্তা হয় । বিভোরের মনে আজ প্রশান্তির ঢেউ। আজ প্রিয়তাকে অর্ধেক নিজের নামে করেই নিয়েছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই তার প্রিয় বরাবরের মতো তার।
প্রিয়তার মনেও এখন নানা রঙের প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে। অদ্ভুত অনুভুতিতে ছেয়ে আছে মন। সে বিভোরের অর্ধাঙ্গিনী হতে চলেছে। হাতের অনামিকায় বিভোরের নামে জ্বলজ্বল করতে থাকা আংটিটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রিয়তা।
অনুষ্ঠান জমজমাট। গেস্টরা নিজেদের মতো এনজয় করেছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নানা ধরনের গল্পে মেতে উঠেছে সবাই। বিভা একপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। হুট করেই কেউ তাকে হ্যাঁচকা টানে একটা রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। আচমকা ঘটে যাওয়ায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ তাকে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে ঘাড়ের নিচে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
বিভা চোখ মেলে তাকায়। চোখ বন্ধ করে বিভার ঠোঁটে নিজেকে বিলীন করতে ব্যাস্ত পিয়ুস। বিভা ছটফট করে ছাড়তে নিলে আরো জোর বাড়িয়ে দেয় পিয়ুস। এবার জোরে কামড় দিতে থাকে। কোমরে এমন ভাবে চেপে ধরে যেনো নখ বসে যাবে। যেনো কোন রাগ ঝাড়ছে বিভার কোমর আর ঠোঁটের উপর। পিয়ুসের এই আচরণটার মানে বুঝতে পারে না বিভা। কি কারনে রেগে আছে পিয়ুস ভাবতে থাকে বিভা।
সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দেয় বিভা। বিভার কান্নার আওয়াজ পেতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পিয়ুস।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তারপর বিভার দিকে এগিয়ে যায়। পিয়ুসকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যায় বিভা। বিভাকে ভয় পেতে দেখে বুকের মধ্যে মুচড়ে ওঠে।
পিয়ুস দ্রুত এগিয়ে এসে বিভাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে ,,,,
:-আই এম সরি!! আই এম সো সরি বিভাবতি!! আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আসলে কেউ তোমার দিকে বাজে নজরে তাকালে আমার সহ্য হয় না। শুধু বড়ই হয়েছো বুদ্ধি তো একটুও হয়নি। লেহেঙ্গা পড়েছো ওড়না তো ঠিক রাখতে পারো না। কোমর দেখা যাচ্ছিলো তোমার আর পার্টিতে একটা ছেলে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। এটা দেখেই আমার রাগ উঠে গেছিলো। আই নো আমার রূড বিহেভ করা ঠিক হয়নি।তোমাকে আড়ালে ডেকে জানানো উচিত ছিলো। আই এম সরি জান। আই এম সো সরি!!
বলে বিভার মাথার চুলের ভাঁজে চুমু এঁকে দেয়।
বিভা কোন কথা বলে না। পিয়ুসকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
_______
অনেকক্ষণ ধরে রিয়া একা একা বসে আছে। বিভা টা যে কোথায় যায় কে জানে। এখানে সিনিয়র সিটিজেন দের মাঝে ভীষণ বোরিং ফিল করে সে। এদিকে ওদিক তাকিয়ে হেলতে দুলতে প্রিয়তার রুমের দিকে হাঁটতে থাকে রিয়া।
রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে পেছন ফিরতেই আচমকা আবিরকে ওর একদম মুখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে রিয়া,,,
:-আআআআআআআ,,,
রিয়াকে ভয়ে চিৎকার করতে দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আবির,, হাসতে হাসতে বলে,,,
:-কি রিয়া টিয়া,,,সব হাওয়া ফুসসস,,, আপনি ভীতু জানতাম কিন্তু এতটা ভীতু আমার জানা ছিল না!
:-এভাবে আচমকা সামনে ভূতের মতো খাম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে আমি কেন যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে। এই আপনাকে ডাক্তার কে হতে বলেছিল হ্যাঁ ??টুকলি করা বাজে ডাক্তার!! অসভ্য লোক!!
রিয়ার রাগ দেখে আবির আরো হাসতে হাসতে পেট ধরে বিছানায় হেলে পড়ে। এদিকে রিয়ার রাগে মাথা গরম হয়ে যায়,, এগিয়ে এসে আবিরের ওপর উঠে কিল ঘুষি মারতে থাকে। আবির হাসতে হাসতে হাত দিয়ে বাঁধা দিতে থাকে কিন্তু রিয়ার কোন হুঁশ নেই। সে আবিরকে জব্দ করতে ব্যাস্ত।
আচমকা আবির রিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে টান দেয়,রিয়া ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আবিরের বুকের উপর পড়ে যায় আর তখনি ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা। রিয়ার ঠোঁট গিয়ে পড়ে আবিরের ঠোঁটের উপর। আকস্মিক ঘটনায় বিমুড় হয়ে যায় দুজনেই। বেপারটা বোধগম্য হতেই রিয়া আবিরের বুক থেকে উঠে ভো দৌড়,,,,
এদিকে আবির যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। রিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে জমে গেছে আবির। বুকের ভেতরের ধক ধক করে ওঠে আবিরের। বুকের ভিতরে প্রলয় শুরু হয়ে যায়। অজানা এক অনুভূতিতে এলোমেলো হয়ে যায় মনের গভীরে থাকা এতোদিনের গুছিয়ে রাখা এক খন্ড হৃদপিণ্ড।
To be continue,,,,