দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-১৯+২০

0
314

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরিফের এমন আচরণে ভীষণ কষ্ট পেল মুসকান। তার মনে অভিমানের পাহাড় জমতে লাগল। আর সইতে না পেরে বেচারি রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। দাঁত চেপে নিজের কান্নার আটকাতে লাগল। মুসকান সিদ্ধান্ত নিল আসে আরিফের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেবে। আরিফ তাকে চলে যেতে বলেছে তো? মুসকান এবার সত্যিই চলে যাবে। আরিফের থেকে অনেক দূরে চলে যাবে সে।

এসব ভাবনা থেকেই মুসকান এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। আসার সময় কাউকে জানিয়েও এলো না। মুসকান বাইরে এসে ভাবতে লাগল এখন কোথায় যাবে সে? কূজনদের বাড়িতে গেলে তো আরিফ খবর পেয়ে যাবে। মুসকানের হঠাৎ মনে পড়ে যায় তার এক বান্ধবীর কথা। তার বান্ধবী দোলা এই শহরে একাই থাকে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে। মুসকান সিদ্ধান্ত নিলো সেখানে গিয়েই থাকবে কিছুদিন। এরপর যা হবে দেখা যাবে। আরিফের করা খারাপ ব্যবহার গুলো সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না।

★★★
আরিফ বিছানায় বসে নিজের চুল আকড়ে ধরে বসে আছে। তার মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা সে কিছুতেই নিজের মাথা থেকে বের করতে পারছে না। ভীষণ দুশ্চিন্তা হতে লাগল আরিফের সামনের কথা ভেবে। দুচোখ বন্ধ করে সে বলল,
“খারাপ কিছু যেন না হয়। আমি চাই না খারাপ কিছু হোক। আল্লাহ তুমি সব ঠিক করে দিও।”

আরিফের ভাবনার মধ্যেই আতিকা চৌধুরী তার রুমে এলেন। আরিফকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তিনি বললেন,
“কি হয়েছে রে আরিফ? তোকে এমন লাগছে কেন? আর মুসকান কোথায়? সকাল থেকে তো ওকে দেখছি না।”

আরিফের মাথায় এতক্ষণে মুসকানের কথা আসল। সকালে তো রাগের মাথায় মেয়েটার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছিল সে। তারপর আর খোঁজ নেওয়াও হয়নি। মুসকানের কথা মাথায় আসতেই উঠে দাঁড়ালো আরিফ। উৎকন্ঠার সাথে বলে উঠল,
“তুমি সব যায়গায় দেখেছ তো আম্মু? মুসকান কি সত্যি কোথাও নেই?”

আতিকা চৌধুরী মাথা নাড়ালেন। আরিফের দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। একেই নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই তার উপর হঠাৎ মুসকানের এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া তার চিন্তাকেই বাড়িয়ে দিলো। আরিফ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। বাইরে বেরোলো মুসকানকে খোঁজার জন্য। আশেপাশে কোথাও মুসকানকে খুঁজে না পেয়ে মনে পড়লো কূজনের কথা। ত্বরিত ফোন করল তাকে। কূজন ফোন রিসিভ করতেই আরিফ তাকে জিজ্ঞেস করল,
“হ্যালো কূজন, মুসকান কি তোদের বাসায় গেছে?”

“কই নাতো।”

“ভালো করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখ না।”

“আমি তো আজ সকাল থেকে বাসাতেই আছি। মুসকান এখানে এলে তো আমি জানতেই পার‍তাম। বাই দা ওয়ে, মুসকান কি বাড়ি থেকে বেরিয়েছে?”

“হ্যাঁ, কোথাও গেছে সেটাও বলে যায়নি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”

“তুই কোন চিন্তা করিস না আরিফ। মুসকান হয়তো কোন জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো ফিরবে।”

কূজনের কথা নিশ্চিত হতে পারল না আরিফ। কারণ সে তো জানে মুসকান স্বাভাবিক কোন কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়নি। অভিমান করে বেরিয়ে গেছে। না জানি কোথায় চলে গেলো মেয়েটা। যদি তার কোন বিপদ হয় তখন কি হবে? এই চিন্তাই ঘুরপাক খেতে লাগল আরিফের মনে। সে আর স্থির থাকতে না পেরে উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজে বেড়াতে লাগল মুসকানকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না! পাবে কি করে? যে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া কি এতই সোজা? আরিফও পারল না মুসকানের কোন হদিশ। অনেক খুঁজে ব্যর্থ হয়ে মলিন মুখে বাড়িতে ফিরল। আতিকা চৌধুরী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেই চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। নকশিও তার পাশে বসে আছে। আতিকা চৌধুরী নকশিকে বলল,
‘আমার খুব চিন্তা হচ্ছে রে নকশি। মেয়েটা যে এভাবে কোথায় চলে গেল! ও তো আমাদের বাড়ির বউ আমাদের দায়িত্ব। ওর কোন ভালো মন্দ কিছু হয়ে গেলে যে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।’

নকশি আতিকা চৌধুরীকে অভয় দিয়ে বলে,
“তুমি কোন চিন্তা করো না খালামনি৷ আরিফ ভাইয়া তো গেছে ভাবির খোঁজ করতে। দেখবে ভাইয়া একদম ভাবিকে নিয়েই বাড়ি ফিরবে।”

নকশির কথা শেষ হতে না হতেই আরিফ ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হলো। এখনো তার চেহারায় উদাস ভাব স্পষ্ট। আরিফকে দেখতে পেয়েই আতিকা চৌধুরী বলে উঠলেন,
“আরিফ তুই! মুসকান কোথায়?”

“আমি ওনাকে অনেক খুঁজেছি আম্মু। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।”

“হায় আল্লাহ! এ কোন বিপদে পড়া গেলো। আমার এবার খুব টেনশন হচ্ছে। মেয়েটার নিশ্চয়ই কোন বড় বিপদ হয়েছে।”

নকশি আরিফের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তুমি ভাবির বাপের বাড়িতে খোঁজ নাও। ওখানে তো উনি যেতে পারেন।”

আতিকা চৌধুরী বললেন,
“মুসকান ওখানে যাবে না। আরিফ তুই কি কূজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছিস?”

“হুম, উনি ওখানেও নেই।”

“তাহলে একটা কাজ কর আমি তোকে মুসকানের কিছু ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর খোঁজ দিচ্ছি তুই ওদের সাথে যোগাযোগ কর। হয়তোবা ওদের কারো কাছে গেছে।”

নকশিও আতিকা চৌধুরীর তালে তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, খালামনি ঠিকই বলেছে। ভাইয়া তুমি তাই করো।”

★★★
দোলার সাথে তার বাসায় একসাথে বসে আছে মুসকান। দোলা এবং মুসকান অনেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তাদের চিন্তাধারারও অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই যেমন তারা দুজনেই বেশ আত্মসম্মানী এবং মেধাবী। তবে কিছু দিক দিয়ে দোলা এগিয়ে রয়েছে। যেমন সে অনেক বেশি পরিমাণে নারীবাদী চিন্তাধারা লালন করে। মুসকানের থেকে আরিফের ব্যাপারে সব শুনেই সে পরামর্শ দিতে লেগেছে,
“তুই একটা কাজ কর। তুই তোর জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে দে। এমন ছেলের সাথে ঘর করার মানে হয় না। মেয়েরা কি এত অবলা নাকি? তুই তো মেডিকেলে চান্স পেয়েছিস। ভবিষ্যতের ডাক্তার। তোর এত কিসের চিন্তা? নিজের জন্য তুই নিজে যথেষ্ট।”

মুসকান দোলার কথার সাথে সম্মত হতে পারল না। হ্যাঁ, তার আরিফের প্রতি রাগ হয়েছে বটে কিন্তু তাই বলে ডিভোর্সের মতো এত বড় সিদ্ধান্ত সে নেবে না। সে তো এখন সম্পর্কের মূল্য বোঝে। মুসকান জানে একটা সম্পর্ক ভাঙা যতটা সহজ ভাঙা ঠিক ততোটাই কঠিন।

★★★
মুসকানের খোঁজ করতে করতে আরিফ এসে উপস্থিত হয়েছে দোলার বাড়িতে। দোলার বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজালো আরিফ। দোলা এসে রুমের দরজা খুলে আরিফকে দেখে তো চিনতে পারল না। তাই তাকে আপাদমস্তক ভালো করে পরখ করে নিয়ে বলল,
“কে আপনি? কাকে চাই?”

“আপনি কি দোলা ইসলাম?”

“জ্বি, আমিই দোলা ইসলাম। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?”

“আমি আরিফ, মুসকানের স্বামী।”

দোলা এবার ভালো করে আরিফের দিকে তাকালো। এই লোকটাই তার বান্ধবীকে এত বেশি কষ্ট দিয়েছে ভাবতেই ভীষণ রাগ হচ্ছে। দোলা গমগম আওয়াজে বলল,
“আপনার কি চাই বলুন। কেন এসেছেন এখানে?”

“আমি আসলে মুসকানের খোঁজ করতে এখানে এসেছি।”

দোলা মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে,
“মুসকান তো আপনার স্ত্রী। হিসাব মতো ওর তো আপনার বাড়িতে থাকার কথা। তাহলে আপনি ওকে এখানে কেন খুঁজতে এসেছেন?”

“আসলে মুসকান হঠাৎ বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছে। আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। তাই..”

“কেমন হাজবেন্ড আপনি যে নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে পারেন না? মুসকানের কোন খবর আমি জানি না। আপনি এখন আসতে পারেন।”

কথাটা বলেই আরিফের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো দোলা। আরিফ অপমানিত বোধ করল ভীষণ। মুসকান আরিফের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে পাশেই এসে দাঁড়িয়েছিল। দোলা ও আরিফের কথোপকথন ও সে শুনেছে। দোলা মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই একদম এত সহজে ওনার কাছে ধরা দিবি না। আগে কিছুদিন ওনাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরা। তোর মূল্যটা ওনাকে বুঝতে দে।”

মুসকানও দৃঢ় কন্ঠে বলে,
“হ্যাঁ, এতদিন আমি অনেক স্যাক্রিফাইস করেছি কিন্তু আর না। আবার আরিফকেও এই সম্পর্কের মূল্য বুঝতে হবে। একটি সম্পর্কে মানিয়ে নেয়া শুধুমাত্র একটি মেয়েরই দায়িত্ব নয়। সম্পর্কে দুজনকেই মানিয়ে নিতে হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরিফ হতাশ হয়ে তার বাড়িতে ফিরে গেলো। মুসকানের সব বন্ধু, আত্মীয় স্বজন, চেনা পরিচিতদের কাছে খোঁজ নিয়েছে সে। কিন্তু কোন লাভের লাভ হয়নি। কোথাও মুসকানের হদিস মেলে নি। বাড়িতে ফিরতেই আরিফ সবার আগে দেখতে পেল আতিকা চৌধুরীর উদ্বিগ্ন চেহারা। সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন তিনি। আরিফকে দেখামাত্রই তিনি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“কিরে? তুই মুসকানের কোন খোঁজ পাস নি?”

“নাহ। আমি সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি কিন্তু…”

আতিকা চৌধুরী হতাশ হয়ে পুনরায় সোফায় বসে পড়লেন। আরিফের মনেও শান্তি নেই। এরমধ্যেই নকশি সেখানে উপস্থিত হলো। আরিফকে দেখে নকশি শরবত নিয়ে এলো তার জন্য। আরিফকে শরবত এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এই নাও ভাইয়া। এই শরবতটুকু খেয়ে নাও। ভাবির খোঁজ পাওনি এখনো?”

“না রে।”

“আচ্ছা ভাইয়া তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো..তোমার সাথে কি ভাবির কোন ঝামেলা হয়েছিল? ভাবি কি রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন?”

আরিফ মুসকানের সাথে করা সব খারাপ ব্যবহারের কথা মনে করলো। অতঃপর নিচু সুরে বলল,
“হুম। আসলে আমার মাথাটা খুব গরম ছিল। তাই আজ সকালে মুসকানের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছিলাম।”

আতিকা চৌধুরী হঠাৎ করে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। আরিফের কথা শুনেই তার উত্তেজনা বেড়ে গেল। তিনি রাগী স্বরে বলে উঠলেন,
“আমি এখন বুঝতে পারলাম মুসকান কেন বাড়ি থেকে চলে গেছে। সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। আমি শুরু থেকেই দেখে আসছি এই সম্পর্ক নিয়ে তোর কোন আগ্রহই নেই। তুই বড্ড উদাসীন। মানছি অতীতের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তোর মনে বিয়ে নিয়ে খারাপ ধারণার তৈরি হয়েছে কিন্তু তাই বলে তুই একটা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করবি? মেয়েটা তো তোর সাথে মানিয়ে নিতে চেয়েছিল। নিজের আত্মসম্মান স্যাক্রিফাইস করে তোর সাথে সংসার করতে চেয়েছে। বিনিময়ে তুই ওকে কি দিয়েছিস? হ্যাঁ, আমি মানছি ও মাঝখানে একটা ভুল করে ফেলেছিল কিন্তু ও তো নিজের ভুলটাও বুঝতে পেরেছে। আমি কিছু জানতে চাই না। তুই যেখান থেকে পারবি মুসকানকে নিয়ে আয়।”

আরিফ যেন দিশেহারা হয়ে পড়লো। সে অসহায় চোখে নিজের মায়ের দিকে তাকালো। নকশি আরিফের কাধে হাত রেখে বলল,
“তুমি কোন চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি আছি তোমার সাথে। আমরা দুজনে মিলে ঠিকই ভাবিকে ফিরিয়ে আনব। তুমি দেখে নিও।”

নকশির থেকে সমর্থন পেয়ে আরিফের মনে একটু হলেও ভরসা জাগ্রত হলো। একই সাথে তাকে আরো একটি কথা ভাবাচ্ছে। এখনো যে তার সামনে অনেক বড় একটি বিপদ অপেক্ষা করছে। সে কি পারবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে? সেসব কথা নিয়ে পরে ভাবা যাবে আগে যে করেই হোক মুসকানকে খুঁজে বের করতে হবে তাকে। কারণ মুসকানের কিছু হয়ে গেলে যে সে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না!

★★★
মুসকান দোলার সাথে শপিং করতে বেরিয়েছে। দোলার বাবা গ্রামের একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তার দাদা-পরদাদারা নাকি জমিদারও ছিল। দোলাদের পরিবারের মধ্যে দোলাই একমাত্র মেয়ে যে এতদূর পড়াশোনা করতে পারছে। তাই তাকে নিয়ে তার বাবার গর্বেরও শেষ। দোলাকে বড্ড স্নেহও করেন তিনি। প্রতি মাসেই দোলার একাউন্টে অনেক অনেক টাকা পাঠান।

মুসকান তো আসার সময় এক কাপড়েই বেরিয়ে এসেছে। নিজের জামা-কাপড়ও সাথে করে আনে নি। তাই দোলা মুসকানকে নিয়ে চলে এসেছে শপিং করতে। মুসকানকে নিজের পছন্দমতো ড্রেস চয়েজ করতে দিয়ে সে নিজেও নিজের মতো কিছু ড্রেস কিনতে লাগল।

শপিং করে বাড়িতে ফিরে দোলা শাওয়ার নিয়ে নিলো। শাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই দেখতে পেলো মুসকান বিষন্ন চিত্তের জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যা দেখামাত্র দোলার ভ্রু কুচকে গেল। দোলা মুসকানের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“কিরে মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?”

মুসকান নমনীয় কন্ঠে বলল,
“আমার বাড়ির সবার কথা খুব মনে পড়ছে রে। রুহি, ম্যাডাম ওদেরকে খুব মিস করছি।”

“আর তোর স্বামীকে মিস করছিস না?”

মুসকান কিছু বলল না। আসলে তার আরিফের কথাও মনে পড়ছে। এই ক’দিনে যে আরিফের প্রতি তার একটা টান তৈরি হয়েছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সে। হয়তো এটাকেই সম্পর্কের বন্ধন বলে।

এদিকে দীর্ঘ সময় মুসকানকে চুপ থাকতে দেখে দোলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“বিয়ের পর তুই বদলে গেছিস রে মুসকান। তুই আগে কতো কথা বলতি আত্মসম্মান নিয়ে আর এখন..”

“আমি মোটেই আত্মসম্মানহীন হয়ে যাই নি দোলা। আমি নিজের আত্মসম্মান সবসময় বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। হয়তো কিছু সময় আমাকে ছ্যাচড়া মনে হয়েছে কিন্তু আমি যা করেছি নিজের একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার গঠনের জন্যই করেছি। যেদিন তোর বিয়ে হবে সেদিন তুই বুঝতে পারবি সম্পর্কের মূল্য।”

দোলা গাছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
“থাক। আমার আর এত সম্পর্কের মূল্য বুঝে লাভ নেই। আমি যেমন আছি সেটার বেটার। এইসব সংসার আমাকে দিয়ে হবে না। কারণ বিয়ের পর মেয়েদের আর নিজেদের বলে কিছু থাকে না। অন্যের মর্জি মতো চলতে হয়। আমি এমন লাইফ চাই না। আমি স্বাধীনচেতা হয়ে বাঁচতে চাই।”

★★★
নকশি ও আরিফ দুজনে একসাথে বসে আলোচনা করছে মুসকান কোথায় থাকতে পারে সেই বিষয় নিয়ে। নকশি আরিফকে অনেক খুটিনাটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। যেমন সে কোথায় কোথায় খুঁজেছে, কারো ব্যবহারে কোন সন্দেহ হয়েছে কিনা ইত্যাদি। কারণ নকশি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে। আরিফ দোলার অসংলগ্ন ব্যবহারের কথা বলে। দোলার ব্যাপারে শুনতেই নকশির মনে সন্দেহ জাগে। নকশি বলে,
” আমার মনে হয় ঐ দোলার মধ্যেই কোন ঘাপলা আছে। নাহলে এত জনের মধ্যে ঐ একজনই কেন তোমার সাথে এমন ব্যবহার করল?”

“আমারও যে সন্দেহ হয়নি এমনটা নয়।”

“হুম। তুমি একটা কাজ করো। আবার ঐ দোলার বাসায় যাও। গিয়ে ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখ। আমার মন বলছে ভাবি ওখানে থাকলেও থাকতে পারে।”

★★★
নকশির কথা মতো দোলার ফ্ল্যাটের পাশেই এসে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ। চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে মুসকানের দেখা পাওয়ার জন্য। এখন কেন জানি তারও মনে হচ্ছে মুসকান এখানে থাকলেও থাকতে পারে। আরিফ দুচোখ বন্ধ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে বলে,
“আল্লাহ, আমি যেন এখানেই মুসকানের খোঁজ পেয়ে যাই। ওনার সব রাগ-অভিমান মিটিয়ে যেন ওনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি।”

অন্যদিকে, মুসকান চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে। সর্বক্ষণ রুমে থাকতে থাকতে তার মনে বিতৃষ্ণার জন্ম হয়েছে। তাই ভাবল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসবে। দোলাকে কথাটা বলতেই দোলাও মুসকানের সাথে বাইরে একটু ঘুরে আসতে চাইল। অতঃপর দুই বান্ধবী বাইরে বের হলো।

আরিফ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতেই যাবে এমন সময় তার চোখ পড়লো মুসকানের দিকে। মুসকানকে দেখামাত্রই তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠল। আরিফ একপ্রকার দৌড়ে চলে এলো মুসকান ও দোলার সামনে। আরিফকে দেখে তো দুজনেই থমকে তাকিয়ে রইল। আরিফ হাফাতে হাফাতে বলল,
“আর আমার থেকে আপনি লুকিয়ে বেরাতে পারবেন না মুসকান। আমি আপনাকে ধরে ফেলেছি।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨