#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নকশিকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে থাকে মেহরাব। আর নকশি সমানে চেচাতে থাকে। মেহরাবের শার্টের কলার খামচে ধরে বলে,
“ছেড়ে দিন আমায়৷ আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।”
নকশির কথায় কর্ণপাত করার বিন্দু মাত্র প্রয়োজন বোধ করে না মেহরাব। সে এক প্রকার জোর করেই বেচারি মেয়েটাকে নিজের গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসায়। অতঃপর গাড়িতে করেই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গাড়ি থামিয়ে আবার কোলে তুলে নেয়। নকশি শুধু চোখ পাকিয়ে দেখতে থাকে।
★★★
নকশিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই তার চিকিৎসা শুরু হয়। মেহরাব বাইরে অপেক্ষমাণ আছে। এর মধ্যে কুদ্দুস চলে আসে সেখানে। কুদ্দুসের সাথে আরিফ, আতিকা চৌধুরীও চলে আসে। কুদ্দুস মেহরাবের কাছে এসে বলে,
“বস মেয়েটার কি খবর?”
” ভিতরে অপারেশন চলছে।”
এদিকে আরিফ এগিয়ে এসে মেহরাবের সামনে। ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলে,
“মেয়েটার সাথে এমন কেন করলেন আপনি? যদি ওর কিছু হয়ে যায় তো আমি ছাড়ব না আপনাকে।”
মেহরাব তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস! কি ক্ষমতা আছে তোর? এইটুকু একটা ছেলে। আমার কাছে কৈফিয়ত চাস। এই কুদ্দুস এটাকে আমার সামনে থেকে সরাতো।”
কুদ্দুস আরিফকে ঠেলে দূরে নিয়ে যায়। মেহরাব নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখতে লাগে। ওদিকে আতিকা চৌধুরী অপারেশন থিয়েটারের সামনে উপস্থিত হয়েই কান্নাকাটি শুরু করে দেন। মেহরাব প্রচুর বিরক্ত হয় এতে। চোখ মুখ কুচকে বলে,
“এই মহিলাদের কান্না একদম সহ্য করা যায় না৷ অসহ্য একেবারে।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার বেরিয়ে আসেন। ডাক্তার বেরোতেই আতিকা চৌধুরী তাকে প্রশ্ন করেন,
“কি অবস্থা ওর?”
“ভয়ের কিছু নেই। আমরা ক্ষতস্থান ভালো করে ওয়াশ করে দিয়েছি। গুলিটা বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় অনেক বেশি ব্লিডিং হয়েছে। বাট নাও সি ইজ ফাইন। সবকিছু ঠিক থাকলে দুই একদিনে বাড়িতে ফিরতে পারবেন।”
আতিকা চৌধুরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। ডাক্তার চলে যেতে নিলে প্রশ্ন করেন,
“আমি কি এখন ওর সাথে দেখা করতে পারি?”
“হ্যাঁ, ওনার জ্ঞান ফিরেছে। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।”
ডাক্তারের কথা কানে আসতেই মেহরাব একপ্রকার ছুটে চলে আসে। আতিকা চৌধুরী কে পাশ কাটিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়ে। মেহরাবকে দেখে নকশি ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেয়। মেহরাবের এটা একদম ভালো লাগে না। মেহরাব নকশির পাশে আসে। তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ফেলে বলে,
“আমাকে অনেক অপমান করেছ তুমি মেয়ে। এখন তোমাকে তার দাম দিতে হবে।”
নকশি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আপনাকে ঘৃণা করি আমি। এত বেশি ঘৃণা করি যে..আপনার প্রতি ভয়ও কাজ করে না। জানেন এখন আমার কি ইচ্ছা করছে…ইচ্ছা করছে আপনাকে শে*ষ করে দেই।”
মেহরাব নকশির কথা গুলো সহ্য করতে পারলো না। তার মনে প্রতিশোধের বাসনা আরো তীব্র ভাবে জেগে উঠল। তাই বলল,
“এবার দেখ আমি কি করি। আমাকে ঘৃণা করো তো। এবার এই আমাকেই মেনে নিতে হবে তোমায়।”
“মানে এসব কি বলছেন আপনি?”
“মানেটা খুব শীঘ্রই বুঝবে। আপাতত রেস্ট নাও।”
★★★
নকশি চোখ বুজে শুয়ে ছিল বিছানায়। আজ সকালেই সে হাসপাতাল থেকে আরিফদের বাড়িতে ফিরে এসেছে। বেশ অবাকই হয়েছে সে। যখন আরিফ আর আতিকা চৌধুরী তাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসলো। পরে জানতে পারলো মেহরাব নাকি তাদের এই বাড়িতে কিছু দিন থাকার অনুমতি দিয়েছে। নকশি বুঝল না ঐ নির্দয় শয়তানটা হঠাৎ এমন দয়া কেন দেখালো। এর পেছনে কি কোন উদ্দ্যেশ্য আছে? সেটাই ভাবছিল সে। এমন সময় হঠাৎ করে নকশির রুমে প্রবেশ করল মুসকান। তাকে ভীষণ মলিন লাগছিল। নকশি মুসকানকে দেখেই বলে ওঠে,
“আরে ভাবি, তুমি এসো ভেতরে এসো।”
মুসকান রুমে প্রবেশ করেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। নকশি হতবাক হয়ে যায় মুসকানের এই কান্না দেখে৷ তাকে শুধায়,
“কি হয়েছে ভাবি? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?”
মুসকান গোঙাতে গোঙাতে বলে,
“ঐ মেহরাব হোসেন এর লোকেরা তোমার আরিফ ভাইয়াকে তুলে নিয়ে গেছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে। তোমার ভাইয়াকে সহি সালামত ফিরে পাবো তো?”
নকশির আবার ঘৃণা হয় ঐ লোকটির উপর। মুসকানকে অভয় দিয়ে বলে,
“তুমি কোন চিন্তা করো না ভাবি। আমরা আইনের সাহায্য নেব। দেখি ঐ মেহরাব হোসেন এর হাত কত লম্বা। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। তুমি দেখে নিবে আইন ওনাকে উপযুক্ত শাস্তি দেবে।”
মুসকান তড়িঘড়ি করে বলে,”নাহ। এই কাজ ভুলেও করা যাবে না। এমন করলে ওরা আরিফকে মে*রে ফেলবে।”
“তাহলে আমরা কি করবো ভাবি? ঐ জালিমদের অত্যাচার মুখ বুজে মেনে নেব?”
“এখন তুমি শুধু আমাদের সাহায্য করতে পারো। রক্ষা করতে পারো এই সমস্যা থেকে।”
“আমি কিভাবে?”
“তুমি আগে আমাকে কথা দাও তুমি আমাদের সাহায্য করবে।”
“তুমি শুধু আমাকে বলো কি করতে হবে। আরিফ ভাইকে বাঁচানোর জন্য আমি সব করতে রাজি।”
মুসকান নকশির হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলে,
“এই নাও। ঐ মেহরাব হোসেন এর লোক বলে গেছে যদি আরিফকে বাচাতে চাই তাহলে তোমাকে যেন এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই। তুমি প্লিজ ওখানে গিয়ে দেখো যদি কিছু করতে পারো।”
“আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
নকশি উঠতে যাবে এমন সময় আতিকা চৌধুরী এসে থামিয়ে দিলেন তাকে। বললেন,
“থাম নকশি। তোর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের সমস্যার মধ্যে আমরা তোকে এভাবে জড়াতে পারি না।”
“এসব তুমি কি বলছ খালামনি? আমি কি তোমাদের কেউ নই? আর তাছাড়া আমার জন্যই হয়তো তোমরা এত বড় বিপদে পড়েছ। আমি যদি সেদিন ঐ মেহরাব হোসেন এর মুখে মুখে তর্ক না করতাম তাহলে উনি তোমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন। কিন্তু আমার জন্য আজ ওরা আরিফ ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। তার জীবন হুমকির মুখে। এমন সময় আমি বসে থাকতে পারব না। তুমি আমাকে আটকিও না খালামনি। আমার জন্য দোয়া করিও। যেন আরিফ ভাইকে নিয়ে সহি সালামত ফিরতে পারবি।”
আতিকা চৌধুরী তাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেও বৃথা হলেন। নকশি জোর করেই বেরিয়ে গেলো। আতিকা চৌধুরী মুসকানকে বললেন,
“কি দরকার ছিল ওকে এসব বলার? এখন যদি মেয়েটার কোন বিপদ হয়!”
“আমি যা করেছি আরিফকে রক্ষা করার জন্যই করেছি ম্যাডাম। আমার কাছে সবার আগে আমার স্বামীর জীবন।”
“সেই জন্য তুমি এমন স্বার্থপর হতে পারলে?!”
“আমি তো বরাবরই স্বার্থপর ছিলাম। ছোটবেলা থেকে আদর ভালোবাসা বঞ্চিত। এখন যখন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি তখন কোন কিছুর বিনিময়ে তাকে হারাতে পারব না।”
আতিকা চৌধুরী দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
★★★
চিরকুটে উল্লেখিত ঠিকানায় এসে উপস্থিত হলো নকশি। অতঃপর চিৎকার করে মেহরাব কে ডাকতে লাগল। মেহরাব কিছু সময়ের মধ্যে হাজির হয়ে বলল,
“এই তো আমি এসে গেছি।”
নকশি ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আরিফ ভাই কোথায়? আরিফ ভাইকে ভালোয় ভালোয় ছেড়ে দিন নয়তো আমি….”
“কাম ডাউন। মেয়েদের এত রাগলে চলে না। তোমার আরিফ ভাই একদম ঠিক আছে। আমি ওকে একদম সুস্থ অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেব। এমনকি ওদের বাড়ি ওদেরকে ফিরিয়েও দেব।”
নকশির চোখ চকচক করে উঠল। সে বলল,
“আপনি সত্যি এমন করবেন!”
“হ্যাঁ, তবে এত খুশির কিছু নেই। আমি এসব কিছু একটা শর্তেই করব।”
“বলুন কি শর্ত আপনার?”
“আমার শর্ত হলো…”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মেহরাবকে বিয়ে করতে হবে এমন কথা শুনে নকশি চূড়ান্ত পর্যায়ে হতবাক হয়ে গেল। সে জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে সেটা কল্পনাতীত ছিল। শেষ পর্যন্ত কিনা একটা গুন্ডাকে বিয়ে করবে। নাহ, আর কিছু ভাবতে পারছে না নকশি। তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। নকশি মেহরাবের মুখের উপর না করে দিয়ে বলল,
“আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবোনা। এমনকি আপনি যদি পৃথিবীর শেষ পুরুষও হন তাও না।”
নকশির এই প্রত্যাখ্যান মেহরাবের মাথায় আ*গুন জ্বালিয়ে দিল যেন। মেহরাব এখন অনেকটাই নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একদম শূন্য থেকে এত বড় একজন মাফিয়া হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে আত্মঅহমের জন্ম নিয়েছে। প্রত্যাখ্যান, অপমান এসব একদম সহ্য হয়না। মেহরাব মনে করে তার যেটা চাই সেটা যা কিছুর বিনিময়েই হোক না কেন আদায় করে নেবে।
তাই তো নকশি এভাবে মুখের উপর না বলে দেওয়ার চরম ক্ষেপে গেল। কুদ্দুসের নাম ধরে চিৎকার করতে লাগল। কুদ্দুস হাজির হতেই আদেশ দিলো,
“যাও ঐ আরিফকে এখানে নিয়ে আসো।”
কুদ্দুস দ্রুতবেগে ছুটে গেল। অতঃপর হাত-পা বাধা আহত আরিফকে নিয়ে এলো। বেচারাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাকে অনেক মা’রধর করা হয়েছে। নকশির প্রাণ কেপে উঠল আরিফকে এই অবস্থায় দেখে। শত হোক সে তো একসময় ভীষণ ভালোবাসতো এই মানুষটাকে। তাই তার এই কষ্ট সহ্য করতে পারল না যেন। পাশাপাশি মেহরাবের প্রতি ঘৃণার পরিমাণও বাড়ল।
মেহরাব আরিফকে দেখামাত্রই এগিয়ে গেলো তার কাছে। আরিফের মাথায় গিয়ে নিজের রিভা*লবার ঠেকিয়ে নকশির উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তোমার সিদ্ধান্তের উপর এর জীবন মরণ নির্ভর করছে। তাই যা সিদ্ধান্ত নিবা ভেবে চিন্তে নাও।”
নকশির চোখ বড়বড় হয়ে যায়। তার মাথায় যেন বা-জ ভেঙে পড়ে। এই মুহুর্তে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে। নিজের জীবন নাকি আরিফের জীবন কোনটাকে রক্ষা করবে সে? যদি আজ নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরতা করে তাহলে আরিফকে হয়তো এই মেহরাব মে*রে ফেলবে। আবার যদি এই মেহরাবের প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে হয়তো আরিফ বেঁচে যাবে কিন্তু তার জীবনটা যে জ্যান্ত লা*শে পরিণত হবে। নকশি চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য।
এরইমধ্যে মেহরাব আরিফের মাথায় শক্ত করে রিভা*লভার টা ধরে বেশ জোরালো ভাবে বলে,
“আমি এক থেকে তিন গুণব। এর মধ্যে যদি তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও তো ভালো আর নাহলে…”
আরিফ নকশির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুই আমার কথা ভাবিস না নকশি। এই শ*য়তানটা যাই বলুক। তুই এর কথা শুনিস না। আমার যা হয়ে যায় যাক।”
মেহরাব কাউন্টিং করা শুরু করে দেয়,
“১, ২ এবং…”
বলেই বন্দুকে গু*লি ভড়ে নেয়। এরপর গু*লি চালাতে যাবে ঠিক সময়ই নকশি চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই বলে ওঠে,
“থামুন…আমি আপনার শর্ত টা মেনে নিলাম। করব আপনাকে বিয়ে। প্লিজ আরিফ ভাইয়ের কিছু করবেন না।”
মেহরাবের মুখে বিজয়ীর হাসি। সে ব*ন্দুকটা বিশেষ কায়দায় ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
“এই তো। আব আয়া না উট পাহাড় কি নিচে।”
আরিফ নকশির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এটা তুই কি করলি নকশি? আমার কথা ভাবতে গিয়ে নিজের এত বড় সর্বনাশ করলি!”
নকশি কিছু বলে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে আরিফের দিকে। তার অক্ষিকোটরে জমে আছে অশ্রুবিন্দু। যা হয়তো যেকোন মুহুর্তে গড়িয়ে পড়বে।
★★★★
কাজি সাহেব এসে বসে আছেন। অপেক্ষা করছেন পাত্র-পাত্রীর আসার। সময় যেন কা*টছেই না। এই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কালো রঙের একটা শেরওয়ানী পড়ে হাজির হলো মেহরাব। তার লম্বা, ফর্সা, বলিষ্ঠ সুঠাম দেহে বেশ ফুটে উঠেছে শেরওয়ানীটা। মেহরাবকে এই রূপে দেখে মুগ্ধ হয়ে কুদ্দুস বলে ওঠে,
“বস আপনাকে তো একদম হিরোদের মতো লাগছে। সত্যি,আজ আমিই আপনাকে দেখে ক্রাশ খেয়ে গেছি।”
মেহরাব গম্ভীর স্বরে বলে,
“ও কোথায়?”
এরমধ্যে কিছু মেয়ে নকশিকে এনে হাজির করে। এই মেয়েগুলোকে কুদ্দুসই এনেছে। এরাই মূলত নকশিকে সাজিয়েছে। লাল রঙের বেনারসি, অলংকার, হালকা মেকআপ সব মিলিয়ে নকশিকে অপরূপ সুন্দরী লাগছিল। তার সৌন্দর্য যে কাউকে ভুলিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। তবে মেহরাব এক পলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো। এমনিতেও সে তো নকশির প্রতি কোন মুগ্ধতা থেকে তাকে বিয়েটা করছে না, এই বিয়েটা শুধু নকশিকে উচিৎ শিক্ষা দেবার জন্যই করছে।
নকশিকে মেহরাবের একদম পাশে এনে বসানো হয়। নকশি মেহরাবের পাশে বসেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “কি দরকার ছিল এসব নাটকের?”
“মানে কি বলতে চাইছ তুমি?”
“আপনি কেন এভাবে পার্লার থেকে মেয়ে এনে আমাকে সাজালেন? এসবের কি খুব দরকার ছিল?”
“তুমি চুপ করো। আমি হলাম এই শহরের এক নম্বর মাফিয়া। তোমার কি মনে হয় আমি সাধারণ ভাবে বিয়ে করব? একেবারেই না। যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকতো তো মহাসমোরোহে..”
“এত আড়ম্বর দিয়ে কি হবে? এই বিয়েটা কি কোন বিয়ে নাকি?”
“ঠিক বলেছ তুমি। এটা কোন বিয়ে নয়৷ এটা হলো তোমার জন্য শাস্তি।”
“কে কাকে শাস্তি দেয় সেটা তো পরেই দেখা যাবে। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি ৬ মাসের মধ্যে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হবেন।”
“চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টটেড। আর আমিও এটা চ্যালঞ্জ করে বলছি তোমাকে আজীবন এই ভালোবাসা হীন অনুভূতি নিয়ে আমার সাথেই জীবন যাপন করতে হবে। এটাই তোমার শাস্তি।”
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। অতঃপর নকশিকে কবুল বলতে বলেন। নকশির এই মুহুর্তে ভীষণ কান্না পায়। নিজের মা-বাবার কথা মনে পড়ে ভীষণ। চোখ বন্ধ করে নেয় সে। অতঃপর কান্নামিশ্রিত গলায় বলে ওঠে,
“কবুল।”
★★★
আতিফা বেগম আরিফদের বাড়িতে এসে বসে আছেন। আতিফা বেগমের থেকে সব কিছু শুনে তিনি আহাজারি করা শুরু করে দিয়েছেন। বলছেন,
“এটা কি হলো আপা? আমি তো আমার মেয়েকে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছিলাম। আর এসব কি হয়ে গেল…আচ্ছা ঐ গুণ্ডাটা আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করে দেবে না তো?”
“তুই চিন্তা করিস না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এমন সময় আরিফ বাড়িতে প্রবেশ করলো। তাকে দেখেই পাগলের মতো ছুটে গেলেন আতিফা বেগম। অস্থির গলায় বললেন,
“আমার মেয়ে..আমার নকশি কোথায় আরিফ?”
“আম্মু…”
নকশির স্বর শুনে সামনে তাকান আতিফা বেগম। ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,”তুই ঠিক আছিস মা? আমি তো তোর জন্য চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু তোর এই অবস্থা কেন? এই বেনারসি,গহনা এসব কেন পড়েছিস তুই?”
পিছন থেকে মেহরাব বলে ওঠে,
“এখন থেকে নকশি আমার স্ত্রী। আমি বিয়ে করেছি ওকে।”
আতিফা বেগম একেবারে বিস্মিত হয়ে যান। নকশিকে নিশ্চুপ দেখে বলে,
“এসবের মানে কি?”
“আমাদের জন্য দোয়া করবেন শাশুড়ী আম্মা। আমরা যেন সুখী হই।”
“আমি এই বিয়ে মানি না। আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করো না তুমি।”
মেহরাব নকশির হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“আমার সাথে নকশির বিয়ে হয়েছে। আপনি মানুন বা না মানুন তাতে কিছু আসে যায় না। নকশি আমার সাথে চলো।”
“ছাড়ুন আমায়। আমি যাবো না।”
মেহরাব একপ্রকার টানতে টানতে নকশিকে নিয়ে যেতে থাকে। নকশি হাজার চেষ্টা করেও আটকাতে পারে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨