এই মন তোমারি পর্ব-১৩

0
267

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_১৩

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-“না না বাপু আমার চাই না আপনার ভালোবাসা। আমি ভালো মা কে কিছুই বলবো না। তবু ও আমি আপনার সাথে থাকবো না বলে সূরা খোঁড়া তে খোঁড়া তে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।যা দেখে শাফায়াত হো হো করে হেসে উঠে বললো, আচ্ছা জব্দ হয়ছে বে’য়া’দ’ব অ’স’ভ্য মেয়েটা। পরক্ষণেই শাফায়াত কিছু একটা ভেবে দৌড়ে রুমে এসে সূরা কে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ধমকের সুরে বললো, তুমি কবে বড়ো হবে বলো তো মেয়ে? নিজের ভালো মন্দ ও বুঝতে পারো না?”

-” সূরা শাফায়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, আমার বাচ্চা চাই না।আপনি দয়া করে আমার সাথে ঐ সব করবেন না পুলিশ। আমি থাকবো না আপনার সাথে।আমি ভালো মার কাছে যাবো বলে সূরা বিছানা থেকে নামতে যাওয়ার আগেই শাফায়াত তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,গা’ধা তোমার নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো। শার্টের দুই টা বোতাম খোলা রয়েছে, তারপর আবার ভেজা। শরীরের ভাঁজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তোমার। তুমি এই অবস্থায় নিচে যাচ্ছো গা’ধা?”

-” তো কি হয়ছে?”

-” নিচে বাবা আছে। তাছাড়া যখন তখন বাবার সাথে দেখা করতে তার বিজনেস পার্টনার আসতে পারে। আমাদের ড্রাইভার রহমান আঙ্কেল আসতে পারে। যখন তখন যে কোনো পুরুষ মানুষ আসতে পারে। তুমি তাদের সামনে এইভাবে যাবে গা’ধা?”

-” তো আপনি কি পুরুষ ছাড়া মহিলা? আমি আপনার সামনে এইভাবে থাকতে পারলে তাদের সামনে কেনো যেতো পারবো না?”

-” সূরা এতোটা ও অবুঝ নয় যে অন্য পুরুষের সামনে এইভাবে যাবে।সে শাফায়াতের মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলো আমি তোমার বিয়ে করা বর। আমার সামনে তোমার যেভাবে খুশি তুমি সেভাবে থাকতে পারবে। কিন্তু অন্য পুরুষের সামনে এইভাবে যেতে পারবে না ‌। কখনোই না। কিন্তু শাফায়াত সেরকম কিছু না বলে শুধু বললো,

-“আমাকে তাদের সাথে তুলনা করছো? শুধু শুধু কি তোমাকে গাধা বলি? যাক বাদ দিলাম। তোমার মতো মাথায় গোবর পুড়া কে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই।নিজে নিজের খেয়াল রাখতে পারো না আবার বাচ্চার মা হতে চাও। যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমার ড্রেস আসছে ততক্ষন এই রুম থেকে বাইরে যাবে না তুমি।আমি নুজাইফা কে পাঠিয়ে দিচ্ছি ও এসে তোমার ভেজা শার্ট চেঞ্জ করে আমার ভালো একটা শার্ট পরিয়ে দিবে।”

-” ঠিক আছে পুলিশ।ভেজা কাপড়ে আমার কেমন যানি গা চুলকাচ্ছে ।”

-” শাফায়াত নুজাইফার রুমে গিয়ে দেখে নুজাইফা তার রুমে নেই । নাজমা দেওয়ান, মাজেদা খালা তারাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত। শাফায়াত হতাশ হয়ে ফিরে এসে ফিরে এসে নিজেই সূরার শার্ট চেঞ্জ করে দিতে যায়। কিন্তু শাফায়াত সূরার শার্টের বোতামে হাত দিতেই সূরা শাফায়াতের হাতে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়। শাফায়াত সূরা কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাজমা দেওয়ান রুমে প্রবেশ করে।তাকে দেখে শাফায়াত রাগান্বিত হয়ে বললো,

-” আম্মি এই রাক্ষুসী মেয়েকে আমার রুম থেকে নিয়ে যান।ওকে যেন আর আমার চোখের সামনে না দেখি।যবে থেকে এই মেয়েটা কে আমার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন তবে থেকে আমার জীবন থেকে সুখ শান্তি বিলিন হয়ে গিয়েছে।আমি দু দন্ড শান্তি করতে পারছি না আম্মি। জ্বালিয়ে মারছে আমাকে এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটা।”

-” কেনো রে শাফি কি হয়েছে? সূরা তো অসুস্থ্য।একটা অসুস্থ্য মেয়ে তোর আবার কি ক্ষতি করলো?”

-” কি করে নি তাই জিজ্ঞেস করুন আম্মি।ওর ভেজা শার্ট আমি চেঞ্জ করে দিতে গিয়েছিলাম আর ও আমার হাত কা’মড়ে গোশত উঠিয়ে নিয়েছে। জীবনে তো কখনো গোশতের মুখ চোখে দেখে নি।তাই তো মাঝে মাঝে আমার গোশত খাওয়ার চেষ্টা করে। বেয়াদব মেয়েটা কে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান আম্মি।”

-” সূরা গলা উঁচিয়ে বললো, আমি নিজেই ভালো মার কাছে চলে যাচ্ছি।আপনার মতো খারাপ লোকের সাথে থাকার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই বলে সূরা নাজমা দেওয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো, আমাকে নিয়ে চলেন মা।ঐ লোকটা অনেক খারাপ মা।লোকটা আমার সাথে কি কি করছে আপনি জানেন না মা।”

-” জানতে চাই ও না ।স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার কথা তৃতীয় ব্যক্তির কাছে বলতে হয় না মা।তবে তুমি যখন নিজে থেকে শাফির কাছে থাকতে চায়ছো না।আমি আর তোমাকে জোর করবো না বলে নাজমা দেওয়ান সূরা কে ধরে তার রুমে নিয়ে গিয়ে সূরার গাঁয়ে থাকা ভেজা শার্ট চেঞ্জ করে দিতে গেলে সূরা বাধা দিয়ে বললো,

-” গাঁয়ে শার্ট টা থাক না মা।”

-” কোনো মা? শার্ট টা তো ভেজা। তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

-” শার্টে আমার বরের গাঁয়ের গন্ধ লেগে আছে ।ভালো লাগছে আমার এই শার্ট টা পরে থাকতে।তাই তো আমি বর কে শার্ট খুলতে দেই নি ।তার হাত কা’ম’ড়ে দিয়েছি বলে হো হো করে হাসতে লাগলো সূরা।যা দেখে নাজমা দেওয়ান সূরার কপালে চুমু দিয়ে বললো, পাগলী একটা। তুই অনেক সহজ সরল রে সূরা।কবে যে আমার শাফি তোর মনের না বলা কথা গুলো বুঝে নিতে পারবে আল্লাহ ভালো জানেন। অতঃপর তিনি সূরার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, আমার কাছে তুই আর নুজাইফা আলাদা নয়। যদি ও আমি তোকে জম্ম দেই নি তবুও মনে হয় তুই আমার কাছের কেউ, আমার পরিচিত, আমার আপনজন।তাই এখন থেকে আমি তোকে তুই তুই করে বলবো । ঠিক আছে।”

-” ঠিক আছে মা।”

-” সবাই ডাইনিং টেবিলে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সবাইকে খাবার দিয়ে এসে তোকে খাইয়ে দিবো কেমন?”

-” ঠিক আছে মা।তবে আমি কিন্তু কোনো ঔষধ খেতে পারবো না মা।”

-” ঔষধ না খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হতে পারবি না মা।তোকে যে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হতে হবে।এই মাসের এক তারিখ থেকে তোকে পড়াতে আসবে।”

-” কে মা মাস্টার মশাই?”

-“আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের আরাব নামের ছেলেটা। ছেলেটা এবার অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। দেখতে যেমন মাশাআল্লাহ তেমনি অনেক ব্রিলিয়ান্ট ও। প্রথমে পড়াতে রাজি হয় নি।পরে আমি অনেক বার বলার পরে ছেলেটা রাজি হয়েছে। তুই আরাব কে ভাইয়া বলে ডাকিস।”

-“আচ্ছা মা।”

-” আমি ছেলেটাকে বলেছি তুই আমার বোনের মেয়ে।ওর কাছে ভুলে ও তোদের বিয়ের কথা বলবি না। যতোদিন না শাফি নিজে তোকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিচ্ছে ততোদিন তুই সবার কাছে আমার বোনের মেয়ের পরিচয়ে থাকবি ।যদি আরাব কখনো জিজ্ঞেস করে তুই বলবি তুই শাফির খালাতো বোন। খালাতো বোন কথা টা শুনে নিমিষেই সূরার মন খারাপ হয়ে যায়। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। যা দেখে নাজমা দেওয়ান সূরার চোখ মুছে দিয়ে বললো, মানুষ পুড়ে পুড়ে কিন্তু খাঁটি সোনা তে পরিনত হয় মা।তোর এই চোখের পানি তোর মধ্যে সাহস জোগাবে , তোকে মানুষের মতো মানুষ হতে সাহায্য করবে। তুই সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারবি একটা মেয়ে চায়লে তার ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে। তুই পারবি না মা শাফির যোগ্য হয়ে উঠতে?পারবি না শাফির মনের না বলা কথা গুলো নিমিষেই পড়ে নিতে? যেন মনে হবে শাফির মন টা শাফির নয় , মনটা তোরি।”

-” পারবো মা। #এই_মন_তোমারি এই কথাটা বরের মুখ থেকে শোনার যে খুব ইচ্ছে আমার মা। আমাকে যে পারতেই হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।