তুই আমার পর্ব-১০

0
2189

#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ১০

উফফ জ্বালা তখন থেকে পিছে পিছে করছিস কি আছে কি পিছে।
কাব্য পিছু ঘুরতে,,,
দেখলো মেঘা হাত গুটিয়ে দারিয়ে আছে।
কাব্য আবার ওপাশ ঘুরলো আর ফিসফিস করে মিশুকে বললো
আমার পিছে যে তোর বোন আগে বলতে পারলি না?

অনেকক্ষণ থেকে ইশারা করছিলাম তুমি তো বললো আমার সব কিছুই সামনে।

চুপ এখন আমি কি করি?

কি করার আমার পক্ষে থেকে তোমার জন্য দুই মিনিট এর নিরবতা।

অনেক হয়েছে আপনাদের ফিসিরফিসির এখন কি আমার কথা শুনবেন দয়া করে?

মেঘার কথায় কাব্য আর মিশু সোজা হয়ে দাঁড়ালো দুইজনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘা কিছুইক্ষন চুপ থেকে বললো,
মিশু আমায় তুই এই কথা গুলো বলিসনি কেনো?? আমার থেকে তোর কাছে কাব্য ভাইয়া বেশি হয়ে গেলো।

মেঘা আসলো,, কাব্য কিছু বলতে চাইলো মেঘা থাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ব্যস আমি কি আমার বোনের সাথে কথা বলতে পারবো?? নাকি আমি এখন তাও পারবো না??

মিশু মেঘার পা জরিয়ে ধরে বললো,আপু আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ আপু ক্ষমা করে।

মিশু ছাড় আমায় উঠ বলছি,, মিশু কান্না করে যাচ্ছে মেঘা মিশুকে তুলে বললো, কান্না করছিস কেনো বোন আমার,,তোকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি তুই কি ভেবেছিস আমি তোর ভালোবাসার দাম দিতাম না?
না মিশু না আমি তোকে বলছি কবির ভাইয়া তোকে ভালোবাসবে দেখিস। তুই কান্না করিস না বোন আমার তোর কান্না আমার সহ্য হয় না।

মিশু মেঘাকে জরিয়ে ধরলো আসলে সে ভাবতে পারেনি মেঘা এতো সহজে সব মেনে নিবো তাকে সাপোর্ট করবে এসব ভেবে মিশুর আর কান্নার বাধ থামচ্ছে না।
মেঘা মিশুর চোখের পানি মুঝে দিয়ে বললো এখন থেকে তোর ভালোবাসা পেতে তোর বোনের ও ফুল সাপোর্ট থাকলো।

মিশুর খুশি দেখে কে, মেঘাকে জরিয়ে ধরে লাফাতে লাগলো।
আরে মিশু করছিস কি?

কাব্য মিনমিন করে বলতে লাগলো আমারো অনেক খুশি হচ্ছে আমি কি তোমাদের জড়িয়ে ধরতে পারি?

কিইইই, মেঘা মিশু দুইজনে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো।

আরে রাগ করছো কেনো? আমি তো তোমাদেরি সমস্যা কোথায়।

এই আপনি আমার মানে কি?

মানে আবার কি? আমি তো তোমার বর ক্যাটরিনা ক্যাইফের তো না তাহলে তোমারি তো হবে ক্যাটরিনা ক্যাইফের তো আর হবো না??

কিই, সব সময় এই বস্তা পঁচা ফালতু কথা গুলো কই থেকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসেন??

আমার সাথে রাগ হচ্ছো মেঘা।

নাহ আপনি কিছুক্ষণ আগে আমার নামে যত সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন তার জন্য তো আমি আপনাকে রীতিমতো আদর করবো।

মেঘা তুমি আমার সাথে রাগ করলে আমি খেলবো না যাও।

কিইই আপনি কি বাচ্চা আর এখানে আমরা কি খেলছি বলবেন আমায়??

এই আপু তুই থাম তো এই কাব্য ভাইয়া তুমি ও থামবা নাকি আমি কান্নাকাটি শুরু করবো।

আহারে বোন প্লিজ ভ্যাংগা ট্যাপ রের্কডের মতো আবার ভ্যা ভ্যা করতে বসিস না।

কাব্য ভাইয়া আমি কিন্তু সত্যি কান্না করবো। এক তো কবির ভাইয়া আমার সাথে কথা বলছে না আদৌ আমায় ভালোবাসবে কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই আর তোমরা তোমাদের নিজের ঝামেলা নিয়ে পড়ে আছো আমার কথা তো কেউ ও ভাবে না।

স্বামীকে ভাইয়া বললে ডাকলে ভালোবাসবে কিভাবে গাধীর আম্মা?

এর মানে আমায় ভালোবাসবে না কখনো?

ভালোবাসবে আগে ভাইয়া ভাইয়া করা ছাড় দেখিবি এমনি বাসবে আর দেখ এতো তাড়াহুড়োর কিছুই নেই বর টা তো তোর পালিয়ে তো যাচ্ছে না দেখি এতো সুন্দর কিউট বউ কে না ভালোবেসে পারে কিভাবে?

আপনার মতো ক্রিমিনালকে তো জেলে চার দোয়ালে রাখা উচিৎ আপনি খোলা হাওয়া কি করছেন আমি তা সেটাই বুঝতেই পারছি না।

এই তুমি চুপ করো তো।

কাব্যর এই কথা বলতে এক মিনিট না দারিয়ে মেঘা হনহন করে চলে গেলো।
ইশ রে তোর জন্য আমার সংসারে আগুন লাগছে।

আমি কি করেছি বলতো?

যাহ নিজের বরের কাছে যা তো আমায় জ্বালাস না আমার বউ টা রেগে চলে গেলো।
কাব্য মেঘার পিছুই ছুটলো আর মিশু হাসতে হাসতে নিজের রুমে দিকে গেলো।
!
!
!
একদম নাইনটি নাইন ডিগ্রি সেলসিয়াসে টগবগ করে রাগে মেঘা ফুসসে।
কাব্য আসতে, তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
আপনি আমায় চুপ করতে বললেন কেনো??

না মেঘ আমি তো এমনি এমনি বলছিলাম।

কি এমনি এমনি বলছিলেন? আপনি আমার উপর দাপট দেখাতে চেয়েছেন কেনো বলুন কেনো।

আমি তোমার উপর কিসের দাপট দেখাবো মেঘ কি সব বলছো?

এখন আমি কিসব বলছি? আমি নিজের চেহারা বেআক্কেল এর মতো করে নিয়ে ঘুরে বেরাই, পাঁচ বছরের বাচ্চা আমি কিছুই বুঝি না??

আমি এমনি বলেছি মেঘ,,সোহাগি স্বরে বললো কাব্য।

আপনি আমার সাথে হুট করে যে বিহেভিয়ার করছেন তার জন্য আমার উচিৎ ছিলো কিছুই করার কিন্তু আপনায় কিছুই বলেছি আমি বলুন বলেছি কিনা?? অন্য মেয়ে হলে কি করতে জানেন?? আপনার গালে টাশ টাশ করে থাপ্পড় মারতো তারপর আপনার নামে কেস করতো। আপনার মতো সাইকো লাভারের বারোটা বাজিয়ে দিতো।

তুমি আমার উপর কত বড় মেহেরবানি করেছো মেঘ তার জন্য আমি তোমার সব হকুম মানতে রাজি মেরা রানী।

হুউ যে আমার নামে এতো কিছুই আমারি বোনের কাছে বলতে পারে তার কাছে আর কিছুই আশা করা যায় না।

মেঘ মাপ করে দেও না প্লিজ আর হবে না।

প্রতিবার আপনি ভুল করবেন আর মাপ চাবেন তাতো হয় না।

প্লিজ মেঘ শুনো না প্লিজ।

আর একটা কথা বলবেন না আপনি।
বলে মেঘা রুম থেকে বেড় হতেই কাব্য পিছুই থেকে মেঘার শাড়ির আঁচল ধরে নিলো। মেঘা যাচ্ছে আর কাব্য মেঘার আঁচল ধরে পিছুই পিছুই যাচ্ছে আর বলছে সরি মেঘ শুনা না আমার কথা আর মেঘা রাগবিরাগ হয়ে বলছে ছাড়ুন আমার আঁচল ছাড়ুন।
!
!
!
!
!
কবির সেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেছে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো তার শার্ট টা লন্ড্রি করে বিছানার উপর রেখে দিয়েছে পাশে টাই পারফিউম ঘড়ি আর মানিব্যাগ সব সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখে দিয়েছে। কবির ভাবনাচিন্তা ঝেরে ফেলে চটপট রেডি হয়ে নিলো।
ডেসিনটেবিলের সামবে দারিয়ে কবির ভাবছে কিছুই একটা কম কম মনে হচ্ছে পিছোন থেকে মিশু এসে বললো তোমার কোর্ট টা তো পড়ে নেও।
কবির কোর্টটা নিতে যাবে তখন মিশু বললো আমি পড়িয়ে দেই। কবির কিছুক্ষন মিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুই বললো না,মিশু কোর্টটা পড়াতে লাগলো।
কবির ভারী সুরে বললো এভাবে কখনো আমার কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে পারবে না তুমি
কবির চলে গেলো মিশু মুচকি হাসি দিয়ে নিজে নিজেকে বললো, হুম সেটা তো সময় আসলে বোঝা যাবে।
!
!
!
!
মেঘা পড়েছে মহা জ্বালায় এই পিশাচ কাব্য টা তার পিছুই ছাড়ছে না শুধু পিছুই না তার আঁচল ছাড়ছে না। মেঘার পিছুই পিছুই সে নেচে বেরাচ্ছো।
হুট করে মেঘা থেমে গেলো মেঘার সামনে নানী কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নানি দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
ছিই ছিই লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বসে আছো কেমন ধারা মেয়ে তুমি? বিয়ে হলো কাল আর স্বামী কে আঁচলে বেধে ঘুরে বেরাচ্ছো। ছি ছিই।

নানীর কথায় মেঘা মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।

কাব্য মেঘার পিছু থেকে শাড়ির আঁচল টা পেঁচিয়ে নিয়ে এসে মেঘার পাশে দারালো।

কাব্যর কান্ড দেখে নানী গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছে। কাব্য নানির দিকে তাকিয়ে বললো,, নানী নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই। আর আমি আমার বউ এর আঁচল ধরে ঘুরছি অন্যর বউ এর তো না। নানু তো তোমার আঁচল ধরে ঘুরেছে এ গল্প তো অনেক শুনেছি।

নানী কাব্যর কথায় লজ্জায় মুখে কাপড় দিয়ে বললো যাহ তুই যে কি বলিস?

কাব্য হাসতে হাসতে মেঘার হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলো।
মেঘা হাত মোচড়া মোচড়ি করছে। কাব্য মেঘার দিকে তাকিয়ে হেসে আরো শক্ত করে ধরে বললো চুপচাপ নিচে চলো নাহোয় নানীর কাছে রেখে আসবো তোমায়। মেঘা মুখ ভেংচি কেটে কাব্যর সাথে নিচে যেতেই দেখলো।

মামিমা আয়েশা খালাকে কঠিনভাবে বলছে,
আপা তোকে কে বলেছে আমার সংসারের বিষয়ে এতো নাক গলাতে??

আয়েশা খালা কিছুই বলছেন না তিনি চুপচাপ কথা শুনে যাচ্ছেন।
কাব্য মেঘার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো কি হয়েছে মা?

কি আর হবে? এই সংসার আমার আমার কথার কোনো মূল্যায়ন না করেই সবাই যে যার মতো যা ইচ্ছা করে চলেছে।
শুন আপা একটা কথা বলি তোর সেচ্ছাচারী মনোভব এখানে চলবে না যদি এইসব করতে হয় আমার বাড়ির বাহিরে গিয়ে কর।

আয়েশা বেগম ছলছল নয়নে তার বোনের দিকে তাকালো সারাটাজীবন খেটে আজ এই প্রতিদান দিচ্ছে।

কাব্য চিৎকার করে বললো,Shut up ma just shut up তুমি কাকে কি বলছো? যে তোমার সংসার টা এতো দিন ধরে আগলে এসেছে? যে খুঁটিনাটি সব দায়িত্ব পালন করে এসেছে তাকে? আজ সংসার বললে সংসার তোমার হয়ে গেলো? আরে ছোট থেকে মা কি জিনিশ তা হয়তো খালামনি না থাকলে বুঝতে পারতাম না। তুমি তো তোমার লাইফ নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলে তোমার যে ছোট ছোট দুই ছেলে আছে তা ভুলে গেছিলা প্রায়।সবসময় পার্টি কিটি প্যার্টি পার্লার শপিং ঘুরতে যাওয়া ফ্রেন্ড এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে তুমি কি আজো বলতে পারবা আমার আর ভাইয়ার কি কি পছন্দ? তুমি তো নিজের সন্তান কে মায়ের যে স্নেহ মমতা তা দিতে পারোনি আর সংসারের কথা বলছো মা?? জানো মা নিজের মায়ের ভালোবাসা পাবার হাহাকার আমায় বড্ড জ্বালিয়েছে এক ফোটা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছিলো এই মন টা সেটা জানো তুমি? তুমি কখনো বুঝার চেষ্টা করেছো? যে পরিবারে মা-বাবা নিজেদের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেই ছেলেমেয়ে গুলো বুঝে ভালোবাসার মানে কি কত টুকু। ছোট থেকে এই খালামনির ভালোবাসা টা পেয়েছি তাকে এভাবে তার প্রতিদান দিয়েও না।
কাব্য চোখ মুঝতে মুঝতে বেরিয়ে গেলো।
পুতুল চৌধুরী আঁচলে মুখ গুঁজে উপরে চলে গেলেন।
আয়েশার খালার পাশে মেঘা দারাতে।

চলবে________________