#টানাপোড়ন_তুমি
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
#পর্ব_২
অর্ষা বিদেশে যাওয়ার পর সপ্তাহে দু’একবার ফোনে কথা হয় শুধু।
রাতে ঠিক করলাম কিছুক্ষণ হাঁটবো।রাস্তায় হাঁটতে বেড় হয়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা চোখে পড়লো।এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে কখনো ভাবিনি।
আমার সামনে ছু”রি হাতে দু’জন দাঁড়ালো।মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা।রাস্তায় আর কেউ নেই।ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছি।ওদের কাছে ধারালো ছু”রি থাকায় রিস্ক নিলাম না।যদিও আমার সাথে এখন কিছু নেই।ওদের একজন এগিয়ে এসে বললো
” চিল্লাবি তো গ”লা কে’টে রেখে দেবো।ঘড়ি দে,টাকা পয়সা যা আছে দে ”
ঘড়ি খুলে দিয়ে বললাম ” ভাই আমার কাছে আর কিচ্ছু নাই।বিশ্বাস না হলে দেখতে পারেন।আমার সাথে সাথে আপনাদের ও সময় খারাপ ”
ছিনতাইকারী হকচকিয়ে গেলো।একজন অপরজনের দিকে তাকিয়ে বললো ” কেন? ”
” মন ভালো থাকলে টাকা,ফোন সব সাথে নিয়ে ঘুরি।এখন বিষণ্ন বোধ করছি, তাই সাথে কিচ্ছু নাই।আপনারা এসছেন বিষণ্ণ মনে।যেদিন আমার মন ভালো থাকবে চলে আসবেন ”
দ্বিতীয় লোকটা বললো ” এই ব্যাটা এতো কথা কস কেন,মজা লস?খারা তোর মজা বেড় করতাছি,খারা ”
কথা বেশি বলায় ওরা আমার পরনের ট্রাউজার আর টি-শার্ট দু’টোই নিয়ে গেছে।ওরা তো জানেনা মন খারাপে আমি প্রলাপ বকতে ভালোবাসি।অর্ধ উ”লঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাত গভীর হয়েছে।ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় দ্রুত পায়ে হাঁটছে পূজা।অফিসের কাজ শেষ করতে আজ বড্ড দেরি হয়ে গেছে।পূজার একটু ভয় ভয় হতে লাগলো।হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে, কি যেন একটা নড়ে উঠলো।পূজার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।ভয়ে ভয়ে বললো
” কে? কে ওখানে? ”
পূজার কথায় ঝোপের ভেতর থেকে মাথা বেড় করে তাকালো রাজ্যে।পূজার মনে হলো লোকটা উন্মাদ,পাগল বোধহয়।তাই পাশ কাটিয়ে যেতেই রাজ্যে বললো
” ম্যাডাম একটু দাঁড়াবেন?আমার সাহায্য প্রয়োজন,বিপদে পড়েছি ”
রাজ্যের কথা শুনে পূজার ভ্রান্ত ধারনা চলে গেলো।বললো ” জি বলুন,ঝোপে কেন দাঁড়িয়ে?বাইরে আসেন ”
রাজ্যে ইতস্তত বোধ করলো।বেড় হওয়া সম্ভব না পরনে শুধু একটা আ”ন্ডারওয়্যার।রাজ্যে বললো
” ম্যাডাম আপনি আমায় কিছু কাপড় দিয়ে সাহায্য করতে পারেন?ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিলাম,সব নিয়ে গেছে ”
রাজ্যের বেহাল অবস্থা দেখে পূজা হাসি চেপে রেখে নিজের গায়ের চাঁদরটা রাজ্যের দিকে এগিয়ে দিলো।রাজ্যে চাঁদরটা কো”মরে পেঁচিয়ে ঝোপ থেকে বেড়িয়ে এলো।বললো
” ধন্যবাদ।কষ্ট করে আমার বাড়ি অব্ধি পৌঁছে দিলে ভালো হয়।চাঁদরটাও পেয়ে যাবেন তাহলে ”
অচেনা একটা লোকের সাথে যাওয়ার মতো সাহস হলো না পূজার।বললে
” সমস্যা নেই,আপনি পরে ফেরত দিয়েন।আপনার বাসা তো এখানেই তাই না? ”
” হ্যা,সামনেই।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।চাঁদরটা না পেলে লজ্জায় পড়ে যেতাম।আপনাকে পাবো কোথায়? ”
” আমি জে.কে কোম্পানিতে জব করি ”
” এতো রাতে রোজ বাড়ি ফেরেন?ভয় করে না? ”
” আজ মিটিং ছিলো,তাই দেরি হয়েছে।প্রতিদিন বিকেল,সন্ধাতেই কাজ শেষ হয়।কাল সন্ধায় এখানে আসলেই দেখা পাবেন ”
” আচ্ছা ”
পরেরদিন সন্ধ্যায় রাজ্যে গিয়ে সেই রাস্তার কাছে দাঁড়ালো।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মেয়েটার সাথে দেখা হলো।মেয়েটা হাসি মুখে বললো
” কেমন আছেন ”
” জি ভালো।এই যে আপনার চাঁদরটা।অনেক ধন্যবাদ ”
” সামান্য বিষয়ে এতোবার ধন্যবাদ দিতে হবে না। কাল আপনার কাছে টাকা-পয়সা কিছু ছিলো কি? ”
” না ”
” ওদের সাথে ঝামেলায় যাবেন না।যা চাইবে দিয়ে দিবেন।খু”ন করতে ওদের হাত কাপে না।বেঁচে থাকাটা জরুরি ”
” হু ঠিক বলছেন।চা খাবেন?এখানে অনেক ভালো চা বানায় ”
” জি না,এখন চা খেলে রাতে আর ঘুম হবে না ”
বলেই মেয়েটা মিষ্টি হাসি দিলো।হাসিতে মেয়েটাকে বড্ড বাচ্চা স্বভাবের মতো লাগলো।রাজ্যে বললো
” আপনি আমার উপকার করলেন,বিনিময়ে চা ও খেলেন না ”
মেয়েটা লাজুক হেসে ” অন্য একদিন ” বলে চলে গেলো।
রাজ্য বাড়িতে আসলো।অর্ষা কোনো মেসেজ দিয়েছে কিনা চেক করলো।প্রতিবারের মতো এবারেও মুখ ভারী করে বসে রইলো,অর্ষা তার মেসেজ সিন পর্যন্ত করেনি।রাজ্যের মা ঘরে এসে বললো
” বউমা ওখানে থাকবে কতদিন? ”
” জানিনা ”
” কবে ফিরবে বলেছে? ”
” বলেছে ফেরার কোনো সুযোগ নেই”
” সংসার রেখে সে বিদেশ ঘুরবে?আমাদের নাতি নাতনির মুখ দেখতে মন চায় না? ”
রেগে বললাম ” মা ও গেছে ক্যারিয়ার গোছাতে।এমন ভাগ্য ক’জনের হয় বলো তো? ”
মা চলে গেলো।অর্ষাকে ফোন করলাম।ফোন ধরে অর্ষা বললো
” জানো আজ স্টলেন হাইসে গেছি ঘুরতে।ছবির মতো এত্তো সুন্দর যায়গা ”
” খুব মজা করেছো নিশ্চয়ই ”
” হ্যা তো।আচ্ছা এসব বাদ দাও কেমন আছো? ”
বিষণ্ণ মন নিয়েই বললাম ” ভালো আছি। তবে ভয় হয় ”
” ওমা, কিসের ভয়? ”
” সম্পর্কটার ভয়।তুমি দেশে ফিরবে কবে?না মানে মা জানতে চেয়েছে ”
” দেশে ফেরার কোনো প্লান নেই বললাম তো ”
” ও আচ্ছা ”
” একটু গুছিয়ে নিই তারপর তোমাকেও নিয়ে আসবো ”
” আমি গিয়ে কি করবো।তুমি থাকবে অফিস,কাজে ব্যস্ত।আমাকে কোয়ার্টারে একাই থাকতে হবে। কি দরকার ”
” আচ্ছা রাখি।কোয়ার্টারে চলে এসছি।গাড়ি থেকে নামবো ”
” আচ্ছা ”
আমি বোঝার চেষ্টা করলাম স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র এইধরনের কথাই কি সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে?
চলবে?