টানাপোড়ন তুমি পর্ব-০৩

0
231

#টানাপোড়ন_তুমি (৩)
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

সে রাতে অর্ধন’গ্ন অবস্থায় পূজার সামনে চলে আসায় বড্ড লজ্জাবোধ করছে রাজ্য।

বিকেলের শেষ ভাগ চলছে।আধো-অন্ধকার মিশে আলোআঁধারি হয়ে গেছে চারপাশ।পূজা মিহি স্বরে বললো

” আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? তখন থেকে চুপ করে আছেন যে ”

রাজ্যে আমতা আমতা করে বললো ” না তেমন কিছু না ”

” বুঝেছি,সেদিন ওই অবস্থায় দেখে নিয়েছি জন্য লজ্জা পাচ্ছেন ”

একথা বলে পূজা খিলখিল করে হাসতে লাগলো।রাজ্যর বু’কটা হু হু করে উঠলো।চিকন স্বরের হাসিটা তার মনে যেন অন্যরকম দোলা দিয়ে গেলো।রাজ্য বললো

” আপনার সাথে আবার দেখা হবে ভাবিনি ”

” আমিও ভাবিনি।আজ হঠাৎ দেখলাম মন ম’রা হয়ে হাঁটছেন,তাই ডাকলাম।কি হয়েছে আপনার?ওভাবে হেলেদুলে হাঁটছিলেন কেন? ”

রাজ্য মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে বললো ” আমি ওভাবেই হাঁটি।সারাক্ষণ বসে থাকতে থাকতে কিভাবে হাঁটতে হয় ভুলেই গেছি।তাই হাঁটতে গেলে এখন হেলেদুলে হাঁটতে হয় ”

রাজ্যর কথায় পূজা আবারো বাচ্চা মেয়েদের মতো খিলখিল করে হাসলো।কি আশ্চর্য! মেয়েটার হাসি রাজ্যর মনে এতো বেদনার জন্ম দিচ্ছে কেন? পূজা হাসি থামিয়ে বললো

” ভারী মজার কথা বলেন তো আপনি ”

রাজ্যর কাছে সেটা সত্যি সেটা মেয়েটার কাছে হাস্যকর মনে হলো?হাস্যকর হলেও রাজ্যে সত্যিই হাঁটতে ভুলে যাচ্ছে।হাঁটতে গেলে পা প্যাঁচ খেয়ে যায়।রাজ্য বললো

” রাত হয়ে যাচ্ছে,বাসায় যাবেন না? ”

” হু যাবো ”

রাজ্য চায়ের বিল দিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।পূজা কপালের চুল সরাতে সরাতে বললো

” আপনি কোথায় যাবেন এখন? ”

” আমি কিছুক্ষণ হাঁটবো ”

” রাত হয়ে গেছে,এখন হাঁটবেন? ”

” হ্যা,হাঁটা শিখছি।নইলে কিছুদিন পর হাটার জন্য লাঠি ব্যবহার করতে হবে ”

পূজা আবারো হাসলো।বললো ” ইশশ আপনি এতো মজার মজার কথা কেন বলেন? শুধু হাসি পায় ”

রাজ্য ভেবো পায় না তার কোন কথাটা তার কোন কথা মেয়েটার কাছে এতো হাস্যকর লাগে।তবে মেয়েটার হাসি সুন্দর।যতবারই হাসে রাজ্য মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির গজদাঁতের দিকে তাকিয়ে থাকে।গজদাঁত মেয়েদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।পূজা রিকসায় উঠে অভিমানি স্বরে বললো

” তো মিষ্টার,আপনার নাম্বারটা পেতে পারি?জানেন আমার না কোনো বন্ধু নেই।মন খারাপ হলে আপনাকে কল করে ডেকে নিবো,আপনি হাসির কথা বলে আমার মন ভালো করে দিবেন ”

রাজ্য ফোন নাম্বার দিলো।রিক্সা চলতে আরম্ভ করলো
রিকসাওয়ালা বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে।একবার দরদ মাখা গলায় বললো

” আপা কি হইছে? কান্দেন কেন? ”

পূজা কিছু বললো না।শুধু ফোনে বারবার রাজ্যর নাম্বারটা দেখতে লাগলো।

বাড়ি ফিরতেই পূজার মা বললো ” কিরে মা,রোজ এতো রাত করে বাড়ি ফিরিস! শহুরে রাস্তাঘাট খারাপ,তোর বসকে বলে একটু তারাতাড়ি ছুটি নিতে পারিস না? ”

পূজা বললো ” আর দেরি হবে না মা।এতোদিন যে জন্য দেরি হতো সেটা পেয়েছি ”

একথা বলে পূজা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।পূজার কোনো বন্ধু নেই।অতি রুপবতী মেয়েদের আশপাশে অনেক মানুষ ভিড় করে থাকলেও তাদের ভালো বন্ধু থাকে না।পূজার ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে।

______________

রাতের খাওয়া শেষ করে রাজ্য অর্ষাকে কল করলো।কয়েকবার কল করার পর অর্ষা ফোন ধরে বললো

” হ্যা বলো ”

” কি করছিলে? ”

” অফিস থেকে কোয়াটারে যাচ্ছি। তুমি খেয়েছো? ”

” হু ”

” অফিসের এতো কাজ একা একা করতে হবে ভেবে প্রথমে মন খারাপ হয়েছিলো।কিন্তু এখন দেখি সবাই অনেক হেল্পফুল।মিলেমিশে কাজ করে।কি যে ভালো ব্যবহার এদের ”

” তা তো হবেই।বিদেশিদের মনে তো আর বাঙ্গালির মতো এতো প্যাচ নেই ”

” যা বলেছো ”

” তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে না? ”

” পড়ে তো।কিন্তু অফিস টাইমে কথা বলা নিষেধ তাই ফোন করা হয় না।আর তুমি তো করোই,তাই আমি করিনা।জানি তুমি ফোন দিবে ”

” ও আচ্ছা ”

” আচ্ছা মন খারাপ করিও না।আমি এইদিকটা একটু গুছিয়ে নিই তারপর তোমাকেও নিয়ে আসবো ”

” আমি দেশে থাকতে চাই অর্ষা।বিদেশে মন টিকবে না ”

” এখন রাখি।পরে কথা হবে।লাভ ইউ ”

এটা বলে অর্ষা ফোন কে’টে দিলো।রাজ্য খেয়াল করলো অর্ষার প্রতি তার আকর্ষনটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা আবার বেজে উঠলো।অচেনা নাম্বার।ফোন রিসিভ করে রাজ্য বললো

” হ্যালো, কে? ”

” আমি পূজা।ওইযে সন্ধায় নাম্বার নিলাম ”

” ও হ্যা।বলুন ”

” এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন? ওয়েটিং দেখাচ্ছিলো ”

” অর্ষার সাথে।আমার স্ত্রী ”

” ও আচ্ছা।আপনার স্ত্রী কি বাড়িতে নেই? ”

” না।ও ইউ.এস গেছে।বেশ ভালো একটা জবের অফার পেয়েছে ”

” ও আচ্ছা।আপনিও কি সেখানে স্যাটেল হবেন? ”

” বিদেশে যাওয়ার আমার ইচ্ছে নেই ”

” ওহহ আচ্ছা ”

পূজার সাথে রাজ্যর দেখা হলো সাতদিন পর।রাজ্য লক্ষ্য করলো পূজার মধ্যে অনেকটা চেঞ্জড চলে এসছে।মেয়েটা আগের মতো শব্দ করে হাসে না।চোখের নিচটা হালকা কালো হয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে কিছুদিন যাবৎ ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে না।রাজ্য জিগ্যেস করলো

” আপনি অসুস্থ? ”

” কই না তো,আমি তো দিব্যি আছি ”

এরপর দু’জনই নিশ্চুপ রইলো।খানিকটা সময় যাওয়ার পর পূজা বললো

” কেন মনে হলো আমি অসুস্থ? ”

” চুপচাপ হয়ে গেছেন, তাই মনে হলো ”

” আমার চঞ্চলতা আপনার ভালোলাগে? ”

রাজ্য দ্বিধাদন্ডে পড়ে গেলো।ইতস্তত করে বললো ” আপনার চুপ থাকা দেখে এখন মনে হচ্ছে চঞ্চলতাই ভালোই ছিলো ”

” যাক বাদ দিন।আপনার স্ত্রীর সাথে কি রোজ কথা হয়? ”

” না।ও কাজে ব্যস্ত থাকে।সপ্তাহে দু একবার কলে কথা হয় ”

” সে কি,এতোদিন পর পর! ”

” হু ”

” সম্পর্কতে তো টান পড়ে যাচ্ছে।সুতো যখন তখন ছিঁড়ে যাবে।আমায় তো বন্ধু মনে করেন তাই না? ”

” হ্যা।”

” বন্ধু ভাবলে একটা কথা বলবো। রাখবেন? ”

” কি কথা? ”

” আপনার স্ত্রীকে আজকে একটা মেসেজ দিবেন।বেশ গুছিয়ে সেখানে লিখবেন আমার কথা ”

” আপনার কথা? ”

” হু।আমার কথা।আমার সাথে আপনার বন্ধুত্ব হয়েছে এসব লিখবেন।ফোনে বলবেন না।এইসব লিখে জানাবেন ”

” লিখে জানালে কি হবে? ”

” দেখুন ই না কি হয়। ”

রাজ্য কথামতো বেশ গুছিয়ে একটা মেইল লিখলো।সেখানে পূজার বিষয়ে সব লিখলো।তার গজদাঁত,শব্দ করে হাসা,সেই সব কিছু লিখলো।পূজা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেছে সেই কথাটাও মেইলে উল্লেখ করলো।

মেইলটা পাঠানোর ঠিক পাঁচ মিনিট পর অর্ষার ফোন এলো।কি আশ্চর্য! এটা তো অর্ষার অফিস সময়।রাজ্য ফোন রিসিভ করতেই অর্ষা ওপাশ থেকে বললো

” ফোন ধরতে এতোক্ষণ লাগে কেন? ”

” তুমি ফোন করবে ভাবিনি।এখন না তোমার অফিস সময় ”

” ওয়াসরুমে এসে ফোন দিছি ”

” কি এমন বলবে যে ওয়াসরুমে গিয়ে ফোন করলে! ”

অর্ষা কঠিন গলায় কিছু কথা বললো।রাজ্য হকচকিয়ে গেলো।ঘটনা কি কিছুই বুঝতে পারলো না।অর্ষার হঠাৎ কি হলো?

চলবে?