#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৩
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
কনভেনশন সেন্টারের চারও পাশে মানুষের ছড়াছড়ি।বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।ছেলেরা মেহমানদের বরণ করে নিচ্ছে। সব আত্মীয় স্বজন ছিল আসছে।কিন্তু এর মাঝেই সকলের মুখে চিন্তার চাপ নিহাল বলেছিল তার যেনো কি কাজ এসেছে তাই তো বের হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু অনেক ক্ষন যাবৎ কল করার পর কল রিসিভ করছে না।এতো বার করে কাল করা হচ্ছে কিন্তু প্রতিবার কল রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে।অবশেষে নিহালের নম্বর থেকে বেলীর কাছে ম্যাসেজ এলো।বেলী ম্যাসেজ পড়া শুরু করলো।
-“আম্মু আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আমি অন্যজনকে ভালোবাসি।আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না।সামিয়াকে বিয়ে করলে আমাদের তিন জনের জীবন নষ্ট হবে।না আমি নিজে ফিহাকে ছাড়া ভালো থাকবো না সামিয়াকে ভালো রাখতে পারবো।তোমরা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।তোমরা বলতে পরো যে কেনো আমি আগে না করি নি বিয়ের জন্য?তুমি আমার আর সামিয়ার বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি ছিলে তাই ভেবেছিলাম বিয়েটা করে নিবো।কিন্তু না আম্মু, এই বিয়ে করলে আমরা কেউ ভালো থাকতে পারবো না।ফিহা সুসাইড করেছে। আমাকে তার ফ্রেন্ড কল করে বলেছে।আমি সেখানেই আছি।একজন তো আমার জন্য মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আমি চাই না সামিয়া আমার জন্য তার প্রাপ্য সুখ থেকে বঞ্চিত হোক।তোমরা সবাই আমাকে মাফ করে দিও।বিশেষ করে সামিয়া আমাকে মাফ করে দিও।আমি তোমাকে এভাবে হার্ট করতে চাই নি।বিশ্বাস করো এই বিয়েটা হেয়ে গেলো আমরা ধুকে ধুকে ম*রবো।মামা মামী আপনারা সবাই আমাকে মাফ করে দিয়েন। দয়া করে আপনারা আমাকে মাফ করে দিয়েন।সবার কাছে অপরাধী আমি।হয়তো আমি এই অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রাপ্য নয় তবুও আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি সত্যি দুঃখিত।”
সম্পূর্ণ ম্যাসেজ পড়ার পর সবাই একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো।মোর্শেদ হোসেন ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন।কি হবে এবার সামিয়ার?কিভাবে সব কিছু ঠিক করবেন?।রাজিয়া বেগম রেগে লাল হয়ে গেলেন।
-”আমি আগেই বলেছিলাম আত্মীয়র মধ্যে সম্পর্ক আমার ভালো লাগে না।এখন কি হবে আমার মেয়েটার?কিভাবে তাকে মুখ দেখাবো?এই বিয়ের আসরে কোথা থেকে ছেলে নিয়ে আসবো?”
-”শান্ত হও রাজিয়া।মাথা ঠাণ্ডা করো।”(মনিরা বেগম)
-”কিভাবে শান্ত হবো ভবি?আমার মেয়েটার কি হবে এখন?তার সন্মান কি থাকবে এখন?”
কাদতে কাদতে বললেন রাজিয়া বেগম।
-”আমাকে মাফ করে দাও রাজিয়া।আমি নিজেও জানতাম না যে,নিহাল অন্য কেউকে ভালোবাসে।আমি জানলে কখনও এই বিষয়ে কথা বলতাম না।আমাকে মাফ করে দাও বোন।”
মিতা বেগম রাজিয়া বেগমকে বলেন।”
-”এখন মাফ চেয়ে কি হবে আপা?আপনি নিহালকে ভালোভাবে সব কিছু জিজ্ঞাস করলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।আমার মেয়েটার অবস্থা কি হবে যখন ও জানবে এ সব কথা।”
-”মাথা ঠাণ্ডা করো বউ মা”(বিলকিস বেগম)
-”কি ভাবে ঠান্ডা করবো? যেখানে আমার মেয়ের সম্মান নিয়ে টানাটানি।আপনাদের কাছে কি বিষয় টা এতো তাই সহজ?”
-”বউ মা তুমি রাগ কমাও।সামিয়া তোমার মেয়ে হইলেও আমার নাতনি। কাউর কাছেই বিষয়টা সহজ না।আমরা সবাই বিষয় টা নিয়া চিন্তায় আছি।”
-“আচ্ছা আপনারা সবাই চুপ করুন।দেখি ব্যাপার টা কি করা যায়।”
বলেই আমজাদ হোসেন চিন্তা করতে লাগলেন কি করা যায়।
কনভেনশন সেন্টারে উপস্থিত হয় সাজিয়া।পার্লার গিয়েছিল সাজিয়া,নিশি,রিদিতা আর সামিয়া। রিদিতার মেয়ে চাঁদের প্রচুর জর থাকায় নিশি ও রিদিতা আগে আগে চলে আসে।সাজিয়া ও সামিয়াকে বলে, এক সাথে তৈরি হয়ে সেন্টারে আসতে।সাজিয়া আর সামিয়ার সাজ হয়ে গেলে আগে সামিয়া বেরিয়ে পরে।পিছে সাজিয়া সব কিছু গুছিয়ে বের হয়।বাইরে বের হতেই দেখতে পায় সামিয়া নেই।কয়েকবার সামিয়ার ফোনে কল করে কিন্তু ফোন সুইচ অফ।ড্রাইভারকে কল করে জানতে পারে ড্রাইভার তো তাদের নিতে আসতে পারে নাই কারণ মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।পড়ে সাজিয়া বেশ অনেক ক্ষন সামিয়ার জন্য অপেক্ষা করে নিজেই সেন্টারে চলে আসে।এতো গুলো কথা শুনে সকলের মুখে চিন্তার রেশ আরো বেড়ে যায় ।সকলের কাছে বিষয় টা জানাজানি হয়। মেহোমানরা যে যার মতো চলে যায়।
-”আমার মেয়েটা কোথায় গেলো? কোনো বিপদে এবার পড়লো নাকি?
বলেই কাদতে লাগলেন রাজিয়া বেগম।
-”এগুলা বইলো না রাজিয়া।ভালো ভালো চিন্তা করো।”(রিতা বেগম)
-”কি চিন্তা করবো ভবি?প্রথমে নিহাল বললো বিয়ে করবে না এখন আবার সমিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?”(রাজিয়া বেগম)
-”চাচী তুমি চিন্তা করো না l।দেখে নিও সামিয়া ঠিক ভাবে ফিরে আসবে।” (বেলী)
-”আল্লাহ যেনো তোর কথা কবুল করে রে মা।আমার মেয়েটার যেন কিছু না হয়।দিন কাল কত খারাপ। চার পাশে মেয়েদের সাথে কত খারাপ কিছু……
আবারো কাদতে লাগলেন রাজিয়া বেগম।
-“চাচী তুমি চিন্তা করো না।আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।তুমি দিশে হারা না হয়ে দোয়া করো আল্লাহর কাছে আল্লাহ যেন সামিয়াকে ঠিক ভাবে বাসায় পৌঁছায় দেয়।।আম্মু চাচীকে বাসায় নিয়ে যাও।”
বলেই সুবাস বেরিয়ে গেলো।সাথে গেলো ইয়াসির আর মিহির।পার্লারে আসে পাশে সব জায়গায় ছবি দিয়ে খুঁজলো তারা কিন্তু কেউ সামিয়াকে চিনলো না।যে যার মতো আলাদা হয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কেউ কোনো খবর পেলো না।এদিক সেদিক সব জায়গায় খোঁজা শেষ হয়ে গেলে তারা বাসায় ফিরলো খালি হাতে।
-”সুবাস সামিয়াকে পাও নি? কোথায় আমার সামিয়া।কোথায় আমার মেয়ে?”
মোর্শেদ হোসেন সুবাসকে উদ্দেশ করে বললেন।
এবার রাজিয়া বেগমের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেলো।কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ।সকলেই কান্না করছে।
-”আল্লাহ আপনে সহায় হন।আমার মেয়েকে সহি সালামত বাসায় পৌছে দেন।কোনো বড় বিপদ দিয়েন না।আল্লাহ সাহায্য করেন আপনি।”
এবার কথা গুলো বলেই কাদতে কাদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন রাজিয়া বেগম।তাকে নিজের ঘরে নেয়া হলো।সকলের মুখে চিন্তার স্পষ্ট।কোথায় গেলো সামিয়া?তার সাথে কি কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলো?
-”তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।সব ঠিক হবে।”
বলেই সুবাস নিজের রুমে চলে গেলো।সবাইকে তো চিন্তা করতে বারণ করলো কিন্তু মেয়েটা এভাবে গেলো কোথায়?।আল্লাহ যেনো সামিয়াকে ঠিক রাখে। রুমে ঢুকেই দেখলো বেলী কান্না করছে।চোখ মুখ পুরা লাল হয়ে আছে।
-”বেলী আমার দিকে তাকাও।কান্না থামাও।দেখে নিও সামিয়ার কিছু হবে না”
এবার বেলী নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। সুবাসকে জড়িয়ে ধরলো।সুবাসকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-”সামিয়া মিলে তো যাবে তাই না? কিছু খারাপ হবে না তো মেয়েটার সাথে?কোথায় গেলো ও?এতো রাতে কোথায় সে?একা একা কোথায় গেলো?ও তো একা কোথাও যায় না।তাহলে আজ কোথায় সে?কিছু খারাপ তো আবার ঘটে গেলো না তার সাথে?
-“আহা মাথায় খারাপ চিন্তা কেনো আনছো? কিছু খারাপ হবে না।”
বেলী সাবাসকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেলো।সুবাস বেলীর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।শুধু মনে মনে দোয়া করছিলো যেনো সামিয়া মিলে যায় মেয়েটার কোনো ক্ষতি না হয়।আল্লাহ যেনো সহি সালামত ভাবে সামিয়াকে বাসায় ফিরিয়ে দেয়।
রাত তিনটা বেলীর ফোনে কল আসে ।এতো রাতে কল আসায় বেলী হকচকিয়ে যায়। পুরো রুমে সে সুবাসকে খুঁজলো।বেলীর পাশে রিদিতা তার মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে।ফোনের স্ক্রিনে দেখে সুবাসের নম্বর ভেসে উঠেছে।কল রিসিভ করতে যা শুনলো তাতে বেলীর পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলো। মস্তিষ্ক শূন্য মনে হতে লাগলো।হাত পা কাঁপতে লাগলো। শ্বাস প্রশ্বাস যেনো আটকে গেলো।
চলবে……..?
#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব ২৪
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
বেলীর এক চিৎকারে রিদিতা উঠে যায়।বাড়ির সকলকে ডাক দেয়।বেলী সেন্স লেস হয়ে যায়।রিদিতা সুবাসের নম্বর কাল দিয়ে জানতে পরে সুবাসের অ্যাকসিডেন্ট হয়ে খুব গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে।সকলেই দ্রুত হসপিটালে চলে যায় ।এক দিকে মনিরা বেগম কান্না করছেন অন্য দিকে রাজিয়া বেগম।বাড়ির সকলে একদম ভেঙে পড়েছে।এক বাড়ির দুই দুই টা ছেলে মেয়ে আজ বেহাল অবস্থা।হুম সামিয়াকে পাওয়া গিয়েছে।সাজিয়া আর ইয়াসির যখন বাড়ি ফিরছিল ঠিক তখন তাদের গাড়িতে কারো ধাক্কা লাগে।ইয়াসির বের হয়ে দেখতে পায় সামিয়া।তখন সুবাসকে কল করে হসপিটালে আসতে বলে।তার পরেই সুবাসের সাথে দুর্ঘটনা হয়।
_______
হসপিটালে অপরেশন থেটারে অপরেশন চলছে সুবাসের।মাথায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছে।অতিরিক্ত রক্ত খরণের ফলে অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।বাইরে থেকে বেলী দাড়িয়ে মনে মনে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেল।ভাবনার মাঝে শুনতে পায়।
-”বেলী তুই ভেঙে পড়িস না।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বেলীর কাধে হাত রেখে বলে উঠে সাজিয়া।বেলী সাজিয়াকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।সুবাসের এই অবস্থা দেখে বেলীর দিন দুনিয়া সব কিছু উল্টো পাল্টা লাগছে।মনে হচ্ছে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যাবে।এক দিনে বেলীর দুই দুই টা প্রিয় মানুষ হসপিটালের বেডে নিস্তেজ হয়ে আছে।হুম সুবাসের এক দিকে অপরেশন চলছে অন্য দিকে সামিয়ার স্লাইন চলছে।বেশ অনেক ক্ষন পর ডক্টর অপরেশন থিয়েটার থেকে বের হয়।বেলী ডক্টর কে দেখেই বলে।
-”ডক্টর উনি কেমন আছে?উনি ঠিক হয়ে যাবে তো?অপরেশন ঠিক মত হয়েছে তো?আমি তার সাথে দেখা করতে পারবো তো?”
-”আপনি আগে শান্ত হোন।আল্লাহর রহমতে অপরেশন সাকসেস হয়েছে।চব্বিশ ঘণ্টা সময় লাগবে উনার জ্ঞান ফিরতে।”
ডক্টর ফারদিন বলেন
-”আমি উনাকে দেখতে পারবো?”
-”জ্ঞান ফিরলে দেখতে পারবেন।এখন সুবাসকে আইসিইউ তে রাখা হয়েছে।”
বলেই ডক্টর ফারদিন চলে গেলেন।ডক্টর ফারদিন হলো আমজাদ হোসেনের বন্ধুর ছেলে।
বেলী আর দেরি করলো না।চলে গেলো নামাজ পড়তে।এই সময়ে আল্লাহর রহমতের অনেক প্রয়োজন ছিল।আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে অপারেশন ঠিক ভাবে হয়েছে।নামাজের ঘরে নামাজ পরে নিলো বেলী।
ডক্টর মিতালীর কেবিনে বসে আছেন মোর্শেদ হোসেন এবং মিতা বেগম। ডক্টর মিতালী একজন গাইনোকলজিস্ট।তিনি মূলত সামিয়ার চেক আপ করেছেন।রাজিয়া বেগমের অবস্থা অনেক খারাপ।প্রেসার একদম লো।কথা বলতে পারছেন না।তিনি অতিরিক্ত টেনশনে সেন্স লেস হয়ে গেছে ।তাকে স্লাইন দেয়া হচ্ছে।তাই ডক্টর কেবিনে দুই জন এসেছে।
-”দেখুন আমি সামিয়ার চেক আপ করেছি।আমি যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবেন।”
-”কি হয়েছে আমার মেয়ের ডক্টর?সে ঠিক হয়ে যাবে তো?”(চিন্তিত সুরে বললেন মোর্শেদ হোসেন)
-আমার কথা আগে শুনুন।সামিয়ার সাথে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যেতো কিন্তু আল্লাহর রহমতে তেমন কিছুই হয় নি।তার সাথে অনেক জড়াজড়ি করা হয়েছে কিন্তু ভাগ্য ভালো তেমন কিছু হয়নি।তার পুরো শরীর জুড়ে বিভিন্ন চিন্হ। তবে হতে পারে এই বিষয় গুলো তার মস্তিষ্কে অনেক প্রভাব ফেলবে।সামিয়া সহজে এই বিষয় গুলো হয়তো সাভাবিক ভাবে নিতে পড়বে না আমি মনে করি তবে আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব।আপনাদের তাকে সাহায্য করতে হবে।তাকে এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে।তাকে কোনো প্রেসার দেয়া যাবে না।তাকে ফুল সাপোর্ট করতে হবে। আশা করি বঝতে পেরেছেন।”
-”জ্বী ডক্টর।আমরা খেয়াল রাখবো।আপনারা শুধু আমার বাচ্চা টাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যা যা করার করবেন।”(মোর্শেদ হোসেন)
-”জ্বী আমরা আমাদের বেস্ট দিবো কিন্তু ফ্যামিলি সাপোর্ট ফার্স্ট।”
মিতা আর মোর্শেদ হোসেন দুজনেই কাবিন থেকে বের হলেন।সকলকে সব কিছু জানালেন।তবে এই বিষয় খেয়াল রাখতে বললেন যেনো সামিয়ার সামনে এমন কিছু যেনো না বলা হয় যা তার উপর প্রেসার তৈরি করবে।
_________
হসপিটালে বাইরে চেয়ারে বসে আছে ইয়াসির।পর পর দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।হুম, ছেলে মানুষের কাদতে হয় না।কিন্তু সে কি করবে?গভীর রাতে যখন সে ও সাজিয়া বাসায় ফিরছিলো তখন তার গাড়ি চালানোর সময় কেউ একজন চলে আসে গাড়ির মাজখানে ।।গাড়ির ব্রেক করতে যেয়েও গায়ে লেগে যায় সেই মানব ছায়ার উপর।বের হয়ে দেখতে পায় সামিয়া।সাজিয়া তো সামিয়ার এই অবস্থা দেখে কেঁদে দেয়।ইয়াসিরের চোখ যখন সামিয়ার উপর পড়ে তখন দেখতে পায় এক বিদ্ধস্ত সামিয়াকে।ব্লাউজ ছেরা। গলায়,পিঠে ,হাতে,খামছির দাক।লিপস্টিক লেপ্টে আছে।চোখের নিচে কাজল লেপ্টে একদম বাজে অবস্থা।হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে।পা দিয়েও রক্ত পরছে। ছেড়া শাড়ি কোনো রকম গায়ে জড়ানো।কোনো কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না সামিয়ার মুখ দিয়ে।কেমন অপলক ফেলে ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।কয়েক সেকেন্ড পর দু চোখ বন্ধ করে ফেলে সামিয়া।সামিয়াকে কোলে নিতে গেলেই শাড়ি সরে গিয়ে পেতে নখের খামচির ডাক দৃশ্যমান হয়।ইয়াসিরের ভিতর ধক করে উঠে।মনে হচ্ছে ইয়াসিরের বুকে বা পাশে কেউ হাতুড়ি দিয়ে ইচ্ছা মতো এলো পাথারি ভাবে পেটাচ্ছে।বুকের মাঝে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। চোখ মুখ সব কিছু ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।হাত পা বেসামাল ভাবে কাপছে।সামিয়াকে গড়িতে বসিয়ে সুবাসকে কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে। কারো পক্ষে কি সম্ভব নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা?ইয়াসির এর পক্ষেও সম্ভব ছিল না সামিয়াকে এভাবে দেখা।তাই তো টুপ টুপ করে চোখের জল গুলো গড়িয়ে পড়ছে।এই প্রথম ইয়াসির এতো বছর পর কান্না করছে।শেষ মনে হয় বাবা মা* রা যাওয়ার সময় কেঁদেছে। আর আজ এত গুলো বছর পর কাদঁছে।এতো বছরে গড়ে তোলা শক্ত মন আজ হার মেনেছে। মনও আজ কাদতে চাইছে।চোখের জল গুলো আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
-”ইয়াসির তুই ঠিক আছিস তো বাবা?”
মিতু চৌধুরী পাশে বসতে বসতে বললেন।
ইয়াসির মা কে দেখে চোখের জল মুছে বললো
-”হুম মা আমি ঠিক আছি। জাস্ট সুবাসের চিন্তা হচ্ছে।”
-”আর সামিয়ার?”
……..
-”দেখ বাবা আমি জানি তুই সামিয়াকে ভালোবাসিস।আর কতো নিজেকে কষ্ট দিবি?আমি মেয়েটার চোখেও তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।কেনো নিজে কষ্ট পাচ্ছিস আর মেয়েটাকে দিচ্ছিস ?”
-”সব সময় চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না।”
– “ভুল!আমরা চাইলে অনেক কিছু পেতে পারি।নিজেকে চেষ্টা করতে হবে।এবার আমি ভেবে রেখেছি সামিয়া সুস্থ হলে তোমার জন্য সামিয়ার হাত চাইবো।”
-”মা দেখো….
-”শুনো এখানে আর কিছু বলার নেই।সামিয়া সুস্থ হলেই তোমার আর সামিয়ার বিয়ে কথা আমি বলবো।সামিয়াকে নিজের বউ করে নিয়ে আসবো।”
-”তবে আমার একটা শর্ত আছে।”
-”কি শর্ত?”
-”তুমি এখন কেউকে কিছু বলবে না।সামিয়া সুস্থ হওয়ার পর যা বলার বলবে।”
-”আচ্ছা ঠিক আছে।”
চলবে…….?
হ্যাপি রিডিং