#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৫
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
রাজিয়া বেগমের জ্ঞান ফিরেছে।মেয়ের সাথে এতো কিছু হয়ে গেলো তিনি তা কল্পনাও করতে পারছেন না।তিনি যেনো কয়েক মিনিটের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন।শুধু কেদেই চললেন।তিনি বেড থেকে উঠে মোর্শেদ হোসেনর সামনে গিয়ে বললেন
-”সব দোষ আপনার।আগেই বলেছিলাম মেয়েকে এখন বিয়ে দিবো না। মেয়ে আমার ছোট।আজ যদি বিয়ে না ঠিক হতো তাহলে আমার মেয়ের পার্লারে যাওয়া লাগতো না।না এতো বড়ো দুর্ঘটনা হতো আমার বাচ্চা মেয়েটার সাথে।নাহ দোষ আপনাকে দিবো না।দোষ তো আমার ভাগ্যের।কেনো যে আমি বিয়েতে রাজি হলাম।প্রথমে নিহাল না বলে দিলো।আর এখন আমার মেয়েটার উপর এতো বড় ঝড় গেলো।না জানি আমার বাচ্চা মেয়েটার কত কষ্ট হয়েছে।কত বড় তুফান গিয়েছে আমার মেয়েটার উপর।”
-”শান্ত হও বোন আমার।”
রিতা বেগম রাজিয়া বেগমের কাছে গিয়ে বললেন।
-”ভবি আমি কিভাবে শান্ত হবো বলেন?আমার মেয়েটার সব শেষ।একেতো বিয়ে টা ভেঙে গেলো তার উপর আবার এতো কিছু।আমার মেয়ের সব সম্মান শেষ।কি হবে আমার মেয়েটার?”
-”তুমি শান্ত হও রাজিয়া।দেখো আমাদের সামিয়ার সাথে কিছু হয় নি।তার সম্মান আল্লাহ রক্ষা করেছেন।”
-”হুম আল্লাহর রহমতে আমার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয় নি।কিন্তু সমাজের মানুষ কি তা এতো সহজ ভাবে মেনে নিবে? তারা তো আমার মেয়ের সম্মানের উপর প্রশ্ন তুলবে।”
-”শুনো আগে আমাদের সামিয়ার কথা ভাবতে হবে।তাকে সাপোর্ট করতে হবে।সমাজের চিন্তা বাদ দিতে হবে।”
-“কিভাবে চিন্তা বাদ দিবো ভাবি?এমনি তো বিয়ের আসর থেকে বিয়ে ভেঙে গেলে মেয়েদের কতো কথা শুনতে হয়।তার উপর আবার এতো কিছু।কে করবে আমার মেয়ে কে বিয়ে?
বলেই অঝোরে কাদতে লাগলেন রাজিয়া বেগম।”
-”শুনো এখন এতো কিছু ভাবলে হবে না।তোমাকে শক্ত থাকতে হবে।তুমি ভেঙে গেলে সামিয়াকে কে সামলাবে?শুনো! যে কোনো জায়গায় মায়েদের শক্ত থাকতে হয়।তুমি যদি নিজেকে শক্ত না রাখতে পরো তবে সামিয়া আরো ভেঙে যাবে।আর রইলো বিয়ের কথা। আমাদের মেয়ে পচে গলে যায় নি যে বিয়ের জন্য টেনশন করতে হবে।যার সাথে আল্লাহ জোড়া লিখে রেখেছেন তার সাথেই হবে।তুমি নিজেকে সামলাও।”
-”তবুও ভাবি মা তো আমি ।চিন্তা হয় আমার।কেনো আমার মেয়ের সাথে এমন হলো?কি দোষ আমার এই বাচ্চা মেয়েটার?আমার মেয়েটা এতো কিছু কিভাবে নিবে?”
-”তুমি ধৈর্য্য ধরো।নিজেকে সামলাও। ধৈর্য্য হারা হলে হবে না।আমাদের সবাইকে মিলে সামিয়াকে আগলে নিতে হবে।তাকে সাহস দিতে হবে।
বলেই রিতা বেগম রাজিয়া বেগমকে বেডে শুইয়ে দিলেন।এখনো তিনি অসুস্থ।হাতে স্লাইন চলছে।”
____________
সারাদিন কেটে গেছে। সুবাসের জ্ঞান ফিরে নি।সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছিল কিন্তু কিছু ক্ষন পর আবার সেন্স লেস হয়ে যায় ।হসপিটালে আছে বেলী,ইয়াসির,রিদিতা আর সায়েম।বাকি সবাইকে বাসায় পাঠানো হয়েছে।সবার উপর খুব বেশি ধকোল গেছে।একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।বেলীকে অনেক বার বলা হয়েছে বাড়ি যেতে কিন্তু সে যাবে না। কেউ তার স্বামীকে রেখে এভাবে বাসায় যেতে পারবে?নাহ,পারবে না। তাই বেলীও পারে নি।এক প্রকার যুদ্ধ করে হসপিটালে থেকেছে।রিদিতা ডক্টর থেকে পারমিশন নিয়ে বেলীকে পাঠালো সুবাসের কাছে।রিদিতা বুঝতে পেরেছে বেলীর মন ছটফট করছে সুবাসকে দেখার জন্য।বেলী রিদিতাকে জড়িয়ে ধরে সুবাসের কেবিনে ঢুকলো।সুবাসের পাশে চেয়ারে বসলো।সুবাসে কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চু’মু খেলো।সুবাসের হাত নিজের গালের সাথে ছোঁয়ালো।গর গর করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে বেলীর।গলার কাছে কথা গুলো কেমন আটকে যাচ্ছে।কেমন যেনো বুকে ব্যাথা হচ্ছে।সুবাসের দিকে তাকে রইলো বেলী।কেমন নিস্তেজ হয়ে আছে।মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা।এক হাতে স্লাইন চলছে অন হাতে রক্ত পুস করা হচ্ছে।পুরো ফেস কেমন হয়ে আছে।বেলী আবারও সুবাসে হাতে চুমু খেলো। সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো।
-“আপনি আমার সাথে কথা বলুন ,না?আমার ভালো লাগছে না।আপনি কবে আমার সাথে কথা বলবেন?আমি সত্যি বলছি আমি আর কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না।আপনি শুধু একবার বেলী করে ডাক দিন।আপনার সব কথা মেনে চলবো তাও আপনি এভাবে চুপ থাকবেন না।আপনাকে এভাবে আমি দেখতে পারছি না।জানেন কত কষ্ট হয়েছিল আমার যখন শুনেছি আপনার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।পুরো মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে মা*রা যাবো। মনে হচ্ছিলো বুকের মাঝে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।আমার মনে হচ্ছিলো পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে শরীর থেকে কোনো অঙ্গকে কে*টে আলাদা করা হচ্ছে।আপনি জানেন আপনাকে এভাবে দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।আমি না নিতে পারছি না এগুলো।আপনি আমার সাথে কথা বলুন।একবার বেলী বলে ডাকুন ।আপনি খুব নিষ্ঠুর।আপনি খুব পাষাণ।আপনার বেলী ফুল কান্না করছে তাও আপনি কথা বলছে না।আপনার কি আমাকে কান্না করতে দেখে ভালো লাগছে?এই যে ,আপনার বেলী ফুলের যে শ্বাস নিতে ভীষন কষ্টও হচ্ছে তা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন না?প্লিজ একবার চোখ খুলুন।দেখুন আপনার বেলী ফুল তার সুবাসকে ছাড়া ভালো নেই।ভালো নেই তার সুবাসকে ছাড়া।সুবাসকে
ছাড়া এই বেলী একদম নিঃস্ব।ভীষণ ভাবে প্রয়োজন এই সুবাসকে তার বেলীর।”
রাত ১২ টা সুবাসের কেবিন থেকে বেলীকে নিয়ে সোজা ক্যান্টিনে এসেছে রিদিতা।সকাল থেকে কিছু খায় নি বেলী।একে তো কাল রাতে সেন্স লেস হয়ে গিয়েছিল তার উপর আবার সকাল থেকে না খাওয়া।কিন্তু কি হলো এই মেয়ে খাবার না খেয়ে কান্না করেই চলছে।
-”বেলী চুপ চাপ রাইস গুলো শেষ কর।”
– “আমি খাবো না রিদিতা আপু।”
– “তাড়াতাড়ি শেষ কর!তুই কান্না থামা।দেখিস কালকেই সুবাসের জ্ঞান ফিরবে।তখন যদি তোর এই অবস্থা দেখে সবচেয়ে বেশি ও কষ্ট পাবে।”
– “আপু আমি সত্যি খেতে পারবো না।”
– “প্লীজ বোন একটু করে খেয়ে নে।দেখ তুই অসুস্থ হয়ে গেলে সুবাসকে কে সেবা করবে?তুই একটু করে খেয়ে নিজের জন্য শক্তি তৈরি কর।দেখবি সুবাসকে সেবা করতে পারবি।আর তোর এমন শুকনো ফেস দেখলে তখন তোর বর আমাকে কোথা শুনাবে।”
রিদিটার সাথে কোথায় না পেরে একটু রাইস খেলো বেলী।
-”সুবাসকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”
রীদিটার প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল বেলী।পর পর ঢোক গিললো।খাবার গলায় আটকে গেলো।
-”আরে পানি খা।এতো হাইপার হওয়ার কি আছে?সুবাস তোর স্বামী ভালোবাসতেই পারিস। স্বামীকে ভালোবাসা কোনো গুনাহের কাজ না।
……
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, পবিত্র,স্নিগ্ধ, মধুর সম্পর্ক হলো স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্ক।তাই এই সম্পর্কে ভালোবাসাও পবিত্র।স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা থাকবে এটাই তো নিয়ম।জানিস একবার তোর ভাইয়ার বাইক অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল আমি তোর মতো কেঁদে কেটে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম যদিও তার ছোটো একটা দূঘটনা হয়েছিল।পুরো তোর মত অবস্থা হয়েছিল আমার। তাই তোকে জিজ্ঞাস করলাম।আর তুই মানিস কি না তবে আমি শিওর করে বলতে পারি যে সুবাসকে তুই নিজের থেকেও বেশি ভালবাসিস।
হুম এটা ঠিক যে,বেলীর মনে সুবাসের জন্য অন্যরকম অনুভূতি হয়।তবে কি সেই অনুভূতির নাম ভালোবাসা?
বেলী ভাবতে লাগলো – তবে কি সত্যিই বেলী সুবাসকে ভালোবাসে?সত্যি কি সে সুবাসকে মন দিয়ে ফেলেছে? সত্যি কি সে সুবাসে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে?
চলবে…….?
#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৬
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
বেশ কিছুক্ষন কথা বলে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেলো বেলী ও রিদিতা।সাথে সায়েম এবং ইয়াসিরের জন্য কফি নিলো।কফি খেলে একটু হলেও ক্লান্তি ভাব দূর হবে।হসপিটালে করিডোরে বসে কথা বলছিলো চারজন।নার্স এসে খবর দিয়ে গেলো সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।সামিয়ার সাথে দেখা করতে গেলো বেলী।সাথে গেলো রিদিতা।দুজনকে দেখেই কেঁদে উঠলো সামিয়া।
-“কিছু হয় নি সামিয়া।তুই ভয় পাশ না।আমরা আছি তোর সাথে।”
সামিয়াকে জরিরে ধরে বললো রিদিতা।
-“দেখ বোন আমার সাথে আছি।এই যে আমি আর রিদিতা আপু আছি তর সাথে।কিছু হবে না তোর।”
– “আপু তারা আমার হাত, গলা ,পিঠ সব জায়গায় ছুঁয়েছে।আমার সব শেষ।কিছু বাকি নেই আপু।আমি শেষ।আমার কিছু বাকি নেই।আমার মান সম্মান, ইজ্জত সব শেষ।আমি ম*রে যাবো আপু।”
সামিয়ার কন্যার বেগ আরো বেড়ে গেলো।হাত পা কাঁপতে লাগলো সামিয়ার।বেলী তাড়াতাড়ি করে ডক্টর ডেকে আনলো।
-“আপনারা প্লিজ বাইরে ওয়েট করুন।সামিয়ার রেস্ট এর প্রয়োজন।সামিয়ার হয়তো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়েছে তাই এমন হয়েছে।আপনারা ওকে রেস্ট করতে দিন।”
ডক্টর মিতালীর কথা মতো তারা বেরিয়ে গেলো।ডক্টর মিতালী সামিয়াকে চেক আপ করে ঘুমের ওষধ দিয়ে দিলেন যেনো একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারে।
এতক্ষণ ইয়াসির বাইরে থেকে সামিয়াকে দেখছিলো।সে চাইলেও কিছু করতে পারছে না।যদি সম্ভব হতো তাহলে সামিয়ার সকল কষ্ট দুর করে দিতো।সামিয়ার মস্তিষ্ক থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মুছে দিতো।সামিয়াকে আবার আগের সামিয়ার রূপে নিয়ে আসতো।কিন্তু চাইলেও টা সম্ভব নয়।
নতুন আরো একটি দিনের সূচনা হলো।ইয়াসির বেলী কে নিয়ে বাসায় গিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে বেলী চলে আসলে রিদিতা যাবে ফ্রেশ হতে।বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে একটু কিছু খেয়ে নিলো বেলী। রুমে বসে প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছিলো তখন রুমে আসে রিদিতা বেগম।
-“বেলী তুই নাহলে এখন বাসায় থাক।আমি আর তোর আব্বু হসপিটালে যাচ্ছি।”
– “নাহ আম্মু আমি যাবো।আমার বাসায় মন টিকবে না।”
– “আমি বলছিলাম যে ,তুই সারাদিন কালকে হসপিটালে ছিলি।আজকে তুই বাসায় রেস্ট কর।”
– “নাহ আম্মু আমি বাসায় থাকলে আরো খারাপ লাগবে।আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাবো।উনার যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান না ফিরবে আমার শান্তি লাগবে না।”
– “বউ মা বেলীরে যাইতে দাও।বউ লাগে উই সুবাসের।সুবাসে পাশে থাকা ওর দায়িত্ব ও কর্তব্য।”
বিলকিস বেগম বেলীর কাছে এসে বললে
-“জ্বী আম্মা।আমি শুধু বেলীর জন্য বলেছি।বেলী যেতে চাইলে আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
– “আমি খুশি হইলাম বইন তুমি সুবাসের জন্য চিন্তা করো।এটাই স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ।তুমি স্বামীর খারাপ সময়ে পাশে থাকবা দেখবা আল্লাহ সংসারে সুখ শান্তি ও বরকত দিবো। মহোব্বত বাড়বো।”
– “হুম দাদী। দোয়া করো।”
– “তুই ইয়াসিরের সাথে যা।আমি এর তোর বড়ো চাচী একটি পর আসছি।”
– “আচ্ছা আম্মু।আমি যাই।ছোট চাচী কে দেখে রেখো।”
বলেই বেলী চলে গেলো।
বেশি কিছু ক্ষন আগে সুবাসের জ্ঞান ফিরেছে। সুবাসের কেবিনে একে একে সবাই প্রবেশ করে দেখে নিলো।মনিরা বেগম তো কেঁদেই দিলেন।
-“আম্মু দেখো আমি আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে।তুমি কান্না থামাও।”
-“বাবা তুই ঠিক মতো বাইক চালাবি না।দেখতো কি অবস্থা ।আমি শুধু আল্লাহ কাছে দোয়া করেছি যেনো আল্লাহ তোরে সুস্থতা দান করে।”
-“আম্মু আমি আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ আছি।দেখে নিও সামনে আরো সুস্থ হয়ে যাবো।”
একে একে সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে নিলো সুবাস।ডক্টর বারণ করেছে বেশি কথা বলতে।সকলের সাথে কথা বললেও কথা হয় নি বেলীর সাথে।মেয়েটার মুখ কেমন শুকিয়ে আছে।
সবাই তাদের স্পেস দিয়ে বাইরে চলে গেলো।
-“কাছে এসো বেলী!”
সুবাসের ডাকে কাছে গিয়ে বসলো বেলী।টুপ টুপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আরে তুমি কান্না করছো কেনো?”
– “এমনি!আমার অন্য একটা স্বামী আছে না তার জন্য কান্না করছি।”
খানিকটা রাগী গলায় বললো বেলী।
– “তাহলে আমার ম*রে গেলেই ভালো হতো।তুমি তোমার ঐ…..
সুবাসের কথা শেষ হওয়ার আগে বেলী সুবাসের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো।সুবাস ব্যাথা পেলো কিন্তু আওয়াজ করলো না।
-“আরে তোমার কান্নার গতি দেখি বেড়ে গেলো।কান্না থামাও দেখো আমি ঠিক আছি।”
বেলীর কান্না তো থামলোই না উল্টো বেড়ে গেলো।সুবাস আর কিছু বললো না।বেলীকে নিজের হাতে জড়িয়ে নিলো।বেশ কিছু ক্ষন পর বেলী মুখ তুললো।সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চু’মু খেল।কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো।সুবাস মুচকি হাসলো বেলীর কাণ্ড দেখে।
-“আজ দেখি বউ আমাকে আদর করছে।বউ মনে হয় আজ রোমান্টিক মুডে আছে।”
– “আপনি চুপ করুন।অসুস্থ তাও মুখ থেকে এমন কথা যায় না।”
– “আচ্ছা বেশি কথা বলবো না।তোমার এই অবস্থা কেনো পুরো ফেস শুকিয়ে গেছে।”
– “আপনার চিন্তায় এমন হয়েছে।”
– “সাধারণ অ্যাকসিডেন্ট হওয়ায় নিজের এমন করেছি না জানি ম*রে গেলে কি হতো?”
– “আপনি চুপ করুন দয়া করে।আপনি জনেন আমার কতো কষ্ট হয়েছে যখন শুনেছি আপনার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।মনে হচ্ছিলো আমি সব কিছু হারিয়ে ফেলবো।আমার মনে হয়েছে পুরো দুনিয়া থমকে দিয়েছে।আপনাকে যখন নিস্তেজ অবস্থা দেখেছি তখন শুধু আপনাকে হারানোর ভয় হচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো সব শেষ আমার।আপনি প্লিজ আর এভাবে বাইক চালাবেন না।আজ আপনার যদি কিছু হয়ে যেত তখন বড় চাচী, চাচ্চুর কি হতো ভেবেছেন একবার?”
– “আর তোমার কিছু হতো না?”
সুবাসের প্রশ্নে বেলী চুপ হয়ে গেলো।সুবাসের বুকে মাথা রেখে সুবাসকে জড়িয়ে ধরলো একদম শক্ত করে।
সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।এখন খানিকটা সুস্থ তবে চুপ হয়ে আছে। কেমন যেনো নিস্তব্ধ।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।শুধু চোখ দিয়ে গর গর করে পানি পড়ছে।নিজেকে ধরে রাখা কষ্টে হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে চিৎকার করে কাদতে পারলে হয়তো ভালো হতো।যেহুতু সামিয়ার কিডন্যাপ হয়েছিল তাই এটা পুলিশ কেস হয়েছে।সামিয়ার সামনে বসে আছে সিনিয়র অফিসার সিরাজ আহমেদ এবং সুস্মিতা সিনহা।
-“আপনি কি আমাদের একটু সাহায্য করতে পারবেন মিস সামিয়া?”
……..
-“দেখুন আপনি একটু আমাদের সাহায্য করলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে।একটু আমাদের সাথে নরমাল হওয়ার চেষ্টা করুন।”
– “ঐই দিন আমি বউ সেজে বের হই। তারপর তা তা রা
কথা বলতে বলতে আরো হাইপার হয়ে গেলো সামিয়া।সাথে সাথে রাজিয়া বেগম সামিয়াকে জড়িয়ে ধরলেন
– “কুল ডাউন মিস সামিয়া। টেক আ ডিপ ব্রিথ।আপনি শান্ত হন।”
এবার সামিয়া একটু শান্ত হলো।
-“দেখুন মিস সামিয়া আপনি একটু সাহস করে তাদের পরিচয় বললে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আজ তারা আপনার সাথে এরকম করেছে কাল অন্য মেয়ের সাথে করবে।আমরা আপনার পাশে আছি।আপনি আমাদের একটু সাহায্য করুন।আপনি সাহায্য করলে আমরা তাকে ধরতে পারবো।আপনি আমাদের উপর বিশ্বাস রেখে একটু তাদের ব্যাপারে বলুন”
এবার সামিয়া ঠান্ডা মাথায় তাদের সব কিছু বলতে লাগলো।
চলবে………?