#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-১৬]
~আফিয়া আফরিন
“প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবনে”—শোনা কথা। তবুও মস্তিষ্ক যেন প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ার জন্য বিচিত্র আয়োজন করে। হুট করেই মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন এসে ডানা ঝাপটায়, ‘আচ্ছা ভালোবাসি কেন আমরা? কী দরকার খামোখা মাথা নষ্ট করে? কী আছে এই প্রেমের মধ্যে?’
পরক্ষণেই আবার মনের গহীন থেকে উত্তর আসে, ‘প্রেম শাশ্বত, চিরন্তন, স্বর্গীয় এক অনুভূতি বলেই প্রেমের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আমরা দিতে পারি না।’
প্রেমে মানুষ আসলেই দেবদাস হয়ে যায় সেটা বোধ হয় এবার জুহি প্রমাণ করেই ছাড়ল। আগের গম্ভীর মানুষটার মনে এখন হঠাৎ করেই ভালোবাসার নানান আয়োজন। আয়োজনে তার নাওয়া খাওয়া একেবারেই হারাম হয়ে গেছে। কেমন বুকের ভিতর অস্থির অনুভব হয়, হাঁসফাঁস অবস্থা হয়, বারবার মনে হয় এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে গেল। প্রেমে পড়ার মধ্যে যে কোন জটিলতা নেই এই জিনিসটা জুহি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারল। জুহি এই চরম প্রেমের অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেই অনুভব করতে লাগল। রাফি তাহলে জুহির জীবনে তার অসাধারণ কারিগরি দক্ষতাটা দেখিয়েই দিল!
“তারুণ্যর গানে গানে সংহার” অনুষ্ঠানে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই সেরা গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন রাফায়েত মাহতাব রাফি। “রোদ্দুরে দেখা” সিনেমার “বুকের বা’পাশ” গানটির জন্য এই পুরস্কার পেয়েছে সে। এছাড়াও পরপর আরো বেশ কয়েকটা গানের জন্য রাফিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে গায়কের নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাহিরেও। ভক্ত ছাড়িয়েছে বহু থেকে বহুতে।
এক অনুষ্ঠানে রাফির এক ভক্ত তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘স্যার আপনার অটোগ্রাফ না দেওয়ার রহস্যটা কি জানতে পারি? আপনার একটা অটোগ্রাফ নিতে আমরা বারবার ব্যর্থ হয়েছি, কেন? কারণ টা কী?’
রাফি তখন হেসে জবাব দিয়েছিল, ‘আজকের এই পর্যায়ে আমি তখনও এসে পৌঁছায়নি, কিন্তু একজন মানুষ সে ধরেই নিয়েছিল আমি এই পর্যায়ে একদিন আসব। সে আমাকে বলেছিল আমি যেন আমার প্রথম অটোগ্রাফটা তাকে দেই। অথচ এতগুলো দিন পেরিয়ে গেল, সাথে আমার প্রায় দেখা হয় কিন্তু অটোগ্রাফ দেওয়ার কোন সুযোগ হয়ে ওঠেনা। আগে যতদিন পর্যন্ত আমার অটোগ্রাফ দিতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত আর কাউকেই দিতে পারব না। এই কারণে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী!’
জুহি অটোগ্রাফের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল। রাফির কথা তাকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল। বারবার মনে হচ্ছিল, এই ছেলেটা প্রেমে পড়ে এত পাগল হয়ে গেল কবে?
রাফির দিন এখান থেকেই শুরু। সারাদিনে এত ব্যস্ততা, তবুও সময় রাখত নিজের জন্য। সীমায় থাকা ওই সময়টুকু শুধু তার আর জুহির। যার কথা ভাবতে ভালো লাগে, যাকে এক নজর দেখলেই মনের অজস্র গানের কথা খুঁজে পাওয়া যায়; সেই মানুষটাকে একান্তে সময় না দিলে কি চলে?
.
জুহির উপরের খোলসটা যতই শক্ত হোক না কেন, আসল অর্থে সে খুব দুর্বল চিত্তের মানুষ। রাফির সাথে সেই কতদিন আগে দেখা হয়েছে, এরই মধ্যে ভুল করে একবারের জন্যও আর দেখা হয় নাই। পরাণ পুড়ছে, পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ভাবনারা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কাজেকর্মে মন বসছে না। রাফির উপর থেকে মন উঠানোর জন্য প্রতিনিয়ত কতো চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু যে মানুষ মৃত্যু হৃদয় ভালোবাসায় সিক্ত করে দেওয়ার মতো কারিগরি দক্ষতা দেখাতে পারে; তাকে কি ভুলে যাওয়া যায়? তাকে তো শুধুমাত্র ভালোবাসা যায়। মন, প্রাণ, হৃদয় এবং সবশেষে নিজেকে উজাড় করে ভালোবাসা যায়।
রাফি বিহীন দিনগুলো জুহির যেনতেন ভাবে কাটছিল, এরই মধ্যে সাদা কালো জীবনটাকে রঙিন রূপে রূপ দিতে রাফির আগমন ঘটল। জুহির সাথে দেখা হলো বেশ কয়েক মাস পর। এক ধরনের লজ্জা, আড়ষ্টতা, মনের কথা জেনে যাওয়ার ভীতি সৃষ্টি হয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত রাফি তার সামনে ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে একটা কথাও সে বলতে পারে নাই। চোখেমুখে কিশোরীর ন্যায় উচ্ছলতা, মনোজগতে পরিমিত অনিয়ন্ত্রণতা। তবে রাফি তো সর্বক্ষণ আড়চোখে তার প্রিয়তমার চক্ষুদর্শন করে গেছে। কোমল চোখের চাউনি নিমিষেই নির্মল করে দেয় মন প্রাণ। ওই দৃষ্টি মাঝে বারবার অন্তরের পবিত্রতা ভেসে উঠছিল। প্রথমবার বুকের বা’পাশ থমকে গিয়েছিল কপোলের গভীর ভাঁজে, আর এই মুহূর্তে জুহির নয়ন মণিতে রাফির হৃদয় আটকে গেল। জুহির চোখের দিকে তাকাতেই বারবার লজ্জা করছিল। এই চাহনি যে গভীর থেকে গভীর, এই চাহনির জন্য রাফি হাজার কোটি মাইল পাড়ি দিতে পারে নিমিষেই।
এত কিছুর মাঝেও রাফি সেদিন একটা জিনিস খুব ভালো করে আবিষ্কার করে নিয়েছে, জুহি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। চোখ যে মনের কথা বলে। জুহির মনের কথাতো চোখের ভাষাতেই স্পষ্ট লেপ্টে দেওয়া রয়েছে, সেখানে যে এক ফোঁটাও অনর্থক কথার জুড়ি নেই। সেই দৃষ্টি না বোঝার মত এতটাও নির্বোধ তো রাফি নয়!
এখন শুধু আর একটু অপেক্ষা। এই বিষন্ন অপেক্ষা আরো একটা মাস কাটিয়ে দিল। এরই মধ্যে চমকপ্রদ কিছু ঘটনা ঘটেছে জুহির জীবনে। তাদের যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য এতদিন সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, সেটা নতুন রূপে চালু করার জন্য অনুমতি পেয়ে গেছে। সবকিছু নতুন ভাবে শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে নতুন জীবন। নতুনত্বের ছোঁয়া পেয়ে জীবন আরো একবার ভালোভাবে উপভোগ করতে শিখল জুহি। এই জীবন সাত রাঙা রঙে রঙিন। শুধু কাজ নয়, জীবনের জন্য ভালোবাসারও প্রয়োজন; দিনশেষে শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য খানিকটা সময় প্রয়োজন।
জুহির অফিসে একটা বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে জাহিনের কারণে সেটা বাঁধা পড়ে যায়। সে জানায়, খুব জরুরী ভিত্তিতে তাকে তার ছোটোবোনের বিয়েতে কিছুদিনের জন্য বাড়ি যেতে হবে।
জাহিন যেহেতু থাকবে না তাই কেউ এই বিষয় নিয়ে সামনে এগুলো না। পরামর্শ হল, জাহিন যখন ফিরে আসবে তখন যা করার করবে।
এরই মধ্যে রাফির একটা গানের কনসার্টে জুহি উপস্থিত ছিল। রাফি তাকে খুব অনুরোধ করে এখানে নিয়ে এসেছে। সেখানে রাফির মায়ের সাথে জুহির প্রথম আলাপ। অবশ্য রাফি সেখানে জুহিকে বন্ধু বলেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। “ভালোবাসার মানুষ” এই শব্দে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আজ্ঞা এখনো রাফি পায় নাই। এই আজ্ঞা পেতে হলে কত পথ অতিক্রম করতে হবে, কে জানে?
তবে মায়ের মন তো, সায়রা হক রাফির ভেতরকার উৎকণ্ঠা ঠিকই বুঝে গেলেন। রাফিকে জেরা করে সবটা জানতে পারলেন। সাথে জুহির সম্পর্কেও জেনে নিল। মেয়েটাকে তার বেশ ভালই লেগেছে, কথাবার্তার মধ্যে আন্তরিকতার স্পর্শ। দেখতে শুনতেও ভালই আছে। কিন্তু রাফির কাছে যখন শুনলেন জুহির মা-বাবা নেই, এই ঢাকা শহরে একলা একলা থাকে; তখনই তার মত ঘুরে গেল। যত যাইহোক এমন মেয়েকে তো আর ঘরের বউ করে আনা যায় না। কিন্তু রাফির থেকে গোপন রাখলেন এই ব্যাপারটা, পরে বুঝে শুনে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়াই যাবে।
.
ভালোবাসা এক তীব্র অনুভূতির নাম। ভালোবাসা হচ্ছে একটি আকাংখা, জীবনের একটা বিশাল স্বপ্ন। ভালোবাসা মনের সুপ্ত বাসনা, হৃদয়ের অনুভূতি। পৃথিবী রহস্যময়, রহস্যময় মানুষের জীবন, তার চেয়েও রহস্যময় ভালোবাসা নামক অনুভূতি। ভালোবাসা নামক এই সূক্ষ্ম অনুভূতির বসবাস হৃদয়ের গহীন থেকেও গহিনে। এতটাই গহীনে যে, যে মানুষটার ভিতরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছে সেই মানুষটাও নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সংশয়ে রয়েছে। জুহির ঠিক এই অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তার অনুভূতি সম্পর্কে একবিন্দু সংশয়ও নেই। রাফি যেহেতু তার মতো একঘেয়ে মেয়েকে ভালবাসতে পেরেছে, তবে সে কেন রাফির মতো প্রাণচাঞ্চল্য একটা ছেলেকে ভালবাসতে পারবে না?
রাফি তার অসম্ভব সুন্দর ব্যবহারের ক্ষমতা দেখিয়েছে। আমরা অনেকসময় ভুলে যাই একটু আন্তরিকতার ছোঁয়া, একটা প্রাঞ্জল হাসি, কিছু সুন্দর কথার কী নিদারুণ ক্ষমতা রয়েছে একটা মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার!
.
সেদিন আবার জুহির সাথে কাকতালীয়ভাবে রাফির দেখা হয়ে গেল বড় রাস্তার মোড়ে। অবশ্য ব্যাপারটা জুহির দিক থেকে কাকতালীয় হলেও, রাফির দিক থেকে কিন্তু মোটেও নয়। সে ইচ্ছে করেই জুহির ফেরার পথে অপেক্ষা করছিল, এক নজর দর্শনের জন্য। কারণ আজকের এই দিনটাতেই রাফি জুহিকে প্রথম দেখেছিল। সময় কত দ্রুত বয়ে যায়, দেখতে দেখতে একটা বছর কেটেই গেল!
দুজনই দুজনের দেখা পেয়ে বেশ খুশি হলো। দুজনে মিলে পার্ক রোড এর পেছন দিকটায় এসে বসল।
সময়টা অপরাহ্ন গড়িয়েছে। মৃদু বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে। কিছু শুকনো ঝরা পাতা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জুহি আর রাফি দুজন দুই দিকে নির্বাক হয়ে বসে রয়েছে। মনে অনেক রচনা, কিন্তু রচনার সূচনা উভয়ের মধ্যে কেউই খুঁজে পাচ্ছে না।
রাফিই প্রথম কথা বলল, ‘দিনকাল কেমন কাটছে আপনার?’
নিমিষেই জুহির ভেতরকার সব গুলিয়ে গেল। রাফিকে কতো কথা বলা প্রয়োজন, অথচ কিছুই বল হবে না।
জুহি বেশ সময় নিয়ে বলল, ‘সব সময়ের মতোই। আর আপনার? পরবর্তী রের্কডিং কবে?’
‘আগামীকাল, আগামী পরশু এবং সামনের সপ্তাহে আছে।’
‘ও আচ্ছা।’ নির্বিকার চিত্তে বলল জুহি।
রাফি কয়েক মুহূর্ত কিছু ভাবল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জুহির মুখোমুখি গাছের গুঁড়ির উপর বসে পড়ল। তারপর বলল, ‘আপনাকে সামনাসামনি কিছু কথা বলতে চাই।’
জুহি সামন্য থতমত খেয়ে বলল, ‘হ্যাঁ বলুন।’
‘আমাকে দেখে কি একদম নাদান বাচ্চা মনে হয়? এটা মনে হয় যে, আমি নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না যা সিদ্ধান্ত নেই সব ঘোর অথবা আবেগ থেকে?’ কণ্ঠে বেশ ঝাঁঝ নিয়ে বলল রাফি।
‘আর যাই হোক একটা ২৪/২৫ বছরের ছেলেকে তো নাদান বাচ্চা বলতে পারি না। আর হঠাৎ এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন?’
‘আমার জিজ্ঞেস করাটা কি অযৌক্তিক? আমি তো বলেই দিয়েছি আমি আপনাকে ভালোবাসি। তবে সেটাকে আপনি আবেগ বলে বারবার কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছেন? আমি আমার জীবনে আপনাকে নিয়ে একটা সুন্দর মুহূর্ত চাই!’
জুহি কী বলবে কিছু ভেবে পেল না। জুহিকে চুপচাপ থাকতে দেখে রাফি পুনরায় বলতে শুরু করল, ‘আমার ভেতরটা দেখলে হয়তো বুঝতে পারতেন। আপনাকে নিয়ে যদি আমার বিন্দু পরিমাণ সংশয় থাকতো তাহলে তো আমি এত বড় সিদ্ধান্ত কখনোই নিতাম না। আপনি বলতেই পারেন আমি কেন এত মানুষ রেখে আপনাকে ভালবাসতে গেলাম? এর উত্তর শুনবেন? ভোর হয়েছে। অন্য রকম ভোর। বাহারি ফুল ফুটেছে বাগানে, প্রকৃতির প্রতিটা কোনায় কোনায়। অনুভূতিরা বড্ড বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। হরিণ চোখে আপনাকে প্রথম দেখেছি। এভাবে হঠাৎ করে দেখায় পরবর্তীতে কখনো দেখা হবে না; এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। হয়তো প্রকৃতি চেয়েছিল আপনার আমার আবার দেখা হোক, তাই দেখা হয়েছে। এইবার প্রকৃতি চায় আপনার আমার মিলন, আপনি কেন তা চান না?’
জুহি কিয়ৎক্ষণ নির্বাক থেকে আড়ষ্ট কন্ঠে উত্তর দিল, ‘সাহসে কুলোয় না আমার। অনুভূতি আসে না কারো জন্য, অনুভূতিহীন হয়ে গেছি। মনের কথাগুলো বহুদিন ধূলোপড়া ডায়েরির অন্তরালে ভীষণ বাজে ভাবে চাপা পড়ে আছে।’
‘আপনি চাইলে সেই ধুলো পড়া ডায়েরি অনায়াসে বের করে নিয়ে আসতে পারেন। আমি তো বেশি কিছু চাচ্ছি না, চাইছি শুধু একটু ভালোবাসা। বেশি না, আমায় একটু ভালোবাসা দিলেই চলবে। বিহঙ্গের ন্যায় মুক্ত হয়ে আপনার জীবন থেকে কখনোই সরে যেতে চাই না, একটু ভালোবাসতে চাই। পিশাচ চেনেন? রাজকুমারীর গল্পে পিশাচের প্রেমকাহিনী কখনো পড়েছেন? পিচাশের দৃষ্টি কতোটা গভীর কতটা অন্তর্ভেদি দেখেছেন?’
জুহি বিষন্ন দৃষ্টিতে রাফির দিকে তাকাল। নেত্রপল্লব ছলছল করে উঠল। জুহি বেশিক্ষণ তাকিয়েও থাকতে পারল না। দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে বলল, ‘ভাঙ্গাচোরা মন, বিষন্ন ভীষণ! জানেন না, পাপ হয় পিশাচপ্রেমে!’
‘তাহলে এই পাপ আমি হাজার বার করতে পারব। শুধু আপনি পাশে থাকেন সারা জীবনের জন্য, বিশ্ব জয় করার মতো দুঃসাহসও আমি দেখাতে পারব।’
জুহি বিষন্ন হাসল।
রাফি ফের বলতে আরম্ভ করল, ‘নদীর পানি দেখেছেন, এক ধারায় কীভাবে বয়ে চলে? বিশাল আকাশ তো দেখেছেন, আমি আপনাকে আকাশের মতো আর এক ধারায় বয়ে যাওয়া নদীর পানির মতোই ভালোবাসব। ওই দূর আকাশ ছুঁয়ে দেওয়ার সাধ্যি আমার নেই, কিন্তু আমি কাব্য হয়ে আপনার আকাশটা ছুঁয়ে দিতে পারি। আপনি চাইলে আপনার পাশে সারা জীবন থেকে যেতে পারি। আপনি চাইলে আমি আপনার সাম্পানের নাবিক হয়ে আপনাকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেও দিতে পারি। আপনি কি চান? একটু ভালোবাসার সুযোগ কি আমি পেতে পারি?’
জুহি জড় পদার্থের মত কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। এত ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ায় যে পাপ! এত বড় পাপ সে কিছুতেই করতে পারেনা। জীবনকে তো একটা সুযোগ দেওয়া যায়ই। সেটা কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে? মনে হয় না। জুহি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাফির দৃষ্টি বরাবর তাকাল। আবারও সে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। কী সম্মোহনী শক্তি লুকায়িত রয়েছে এ দৃষ্টিতে।
তারপর নির্নিমেষ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার রেকর্ডিং কাল এবং পরশু, তার পরদিন তাহলে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?’
.
.
.
চলবে…..
#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-১৭]
~আফিয়া আফরিন
জুহি নিজে থেকে রাফির সাথে দেখা করার কথা বলেছে। এই সুযোগ কি সহজে হাতছাড়া করা যায়? তাই জুহির কথা শুনে সে তড়িৎবেগে বলল, ‘পরদিন কেন? আমি আগামীকালই দেখা করতে পারব। রেকর্ডিং ক্যানসেল করে দেই?’
‘উহু, এত তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। অপেক্ষার ফল সব সময় মিষ্টি হয়। তাহলে দেখা করুন কাজ শেষে, আজ উঠি কেমন!’
‘তাহলে সেদিন আমার প্রশ্নের উত্তরটা পাব তো?’ উত্তরের আশায় রাফি অপেক্ষমান দৃষ্টিতে তাকায়।
‘কোন প্রশ্ন বলুন তো?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে জুহি।
‘আমাদের জীবনের গল্পটা কী এভাবে জনম জনমের জন্য আলাদা থেকে যাবে?’
‘উত্তরটা সেদিনই দিব। আগামীকালের কাজের জন্য শুভকামনা রইল। আসছি।’
জুহি আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, উঠে সোজা হেঁটে নিজ গন্তব্যে চলে গেল। রাফি ওখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। পৃথিবী এত আনন্দের, বেঁচে থাকার এত আনন্দের, ভালোবাসা এত আনন্দের; আজ সে উপলব্ধি করতে পারল। জুহির চোখে যে স্পষ্ট ভালোবাসা দেখা দিয়েছে, সেটা কখনোই মিথ্যে নয়। আজ প্রচুর আনন্দের মিছিল সমাবেশ বয়ে যাচ্ছে মনের ভিতর। এতো আনন্দ সে সেদিনও পায় নাই, যেদিন সে প্রথম গানের রেকর্ড করেছিল এবং সেই প্রথম গানটাই সুপার হিট হয়েছিল। রাফি আর পার্ক রোডে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। বেড়াতে ইচ্ছে করছে, বেঘোরে ছুটতে ইচ্ছে করছে, পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে, ভুলভাল কাজ করতে ইচ্ছে করছে। শান্তশিষ্ট মনটা হঠাৎ করেই বড্ড বেপরোয়া হয়ে গেছে। ইশশশ, ভালোবাসার এতো আনন্দ!
রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাফির একজোড়া কপোত কপোতির দিকে নজর গেল। তাদের মধ্যে সম্ভবত কথা কাটাকাটি চলছিল, দুজনের মুখই যথেষ্ট থমথমে গম্ভীর। মেয়েটা কথা বলছে, ছেলেটা আবার মাঝপথে তাকে থামিয়ে কথা বলা শুরু করছে। রাফি তাদের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আপন মনে বলল, ‘হেই মূর্খ প্রেমিক প্রেমিকারা, তোমরা কী ভালোবাসার আনন্দ উপভোগ করতে পারো না? জীবন যখন আনন্দ করার জন্য উৎকণ্ঠা হয়ে থাকে, তখন তোমরা সেই মুহূর্তগুলো ঝগড়া করে কাটাও কেন?’
.
‘আমার জীবনেও একদিন “ভালোবাসা দিবস” আর “মন ফাল্গুন” আসবে! যে আসবে সে নির্দিষ্ট কোন দিন ভালোবাসায় আটকাবে না, বরং প্রতিটা দিনকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। কেউ আমাকে নিয়ে রাতবিরেতে শহর ঘুরার আয়োজন করবে। তার কাঁধে মাথা রেখে মানুষের আনন্দ দেখব, নিজের আনন্দ উপভোগ করব। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে তার হাতে হাত রাখব। তাকে খুব ভালোবাসব, সযত্নে আগলে রাখব। বার বার মনে হবে, এমন দিনের জন্য ই বোধহয় এতোদিন একলা ছিলাম!’
কোথায় যেন পড়া এই কথাগুলো জুহির মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেতেই লজ্জায় লালরাঙ্গা হয়ে উঠল চোয়ালদ্বয়।
অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না। জুহি গম্ভীর আত্নজা হিসেবে সারা জীবন নিজেকে আখ্যায়িত করে এসেছিল, কিন্তু ভালোবাসার পরশে মুহূর্তেই যেন কিশোরী কন্যার ন্যায় উচ্ছ্বল হয়ে উঠল। অদ্ভুত ব্যাপার তার মনও বেঘোরে হারাচ্ছে। অষ্টাদশী প্রেমের আনাড়িপোনায় বেখেয়ালী হয়ে উঠল, যেন নিজেকেই নিজের চিনতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে। জুহি যখন তার অষ্টাদশী প্রেমে মাতাল, ঠিক তখনই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল।
সেদিন জুহি অনেকদিন পর মামা মামির সাথেও খুব উল্লাস নিয়ে কথা বলল। মিমি বেড়াতে এসেছে, তার সাথেও দীর্ঘক্ষণ কথা হলো। অনেক, অনেক দিন পর মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল। জীবনেও এত আনন্দ রয়েছে, জুহি আগে তা কখনোই উপলব্ধি করতে পারে নাই। কারণ, আগে তো রাফি ছিল না। ছিল না রাফির পাগলামি। এখন রাফি আছে, তার পুরো অস্তিত্ব আছে, জীবন সুন্দর না হয়ে যাবে কই?
আগামীকাল জুহি আর রাফি দেখা করার কথা। হয়তবা শেষ হবে রাফির অপেক্ষার প্রতীক্ষা। কিন্তু জুহি? সে কি বলবে? ভালোবাসা? এই চার অক্ষরের মজবুত শব্দটা প্রকাশ করার শক্তি তার আছে? কে জানে? হয়ত আছে, হয়ত নেই।
এইদিকে রাফি আর অপেক্ষা করতে পারল না, সাময়িক শান্তির জন্য জুহিকে ফোন করল। রাফির ফোন পেয়ে জুহি মুখ টিপে হাসল। যেন সে আগে থেকেই জানত রাফি এখন ফোন করবে।
দুজনে টুকটাক কিছুক্ষণ কথা বলল। কোন দরকারী কথা নয়, অপ্রয়োজনীয় যত সব কথা মাথায় ছিল তাই বলতে লাগল।
শেষ কথাটা রাফি বলল, ‘আপনার গম্ভীর বাচনভঙ্গি যে সহস্রজনম বেঁচে থাকার তাগিদ জানায় সেটা কি আপনার জানা আছে?’
এমন সময় রাফির ঘরে সায়রা হক ঘরে ঢুকলেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন একটা বেজে পার হয়েছে। রাফিকে জেগে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখনো এত রাত জেগে কি করছিস? ঘুমাবি কখন?’
রাফি চিৎ হয়ে শুয়েছিল। মায়ের কথায় হঠাৎ চকিত ভঙ্গিতে ফোনটা হাত থেকে বিছানায় রেখে দিল। তারপর সোজা হয়ে উঠে বসল।
রাফি স্বাগতিক্ত কন্ঠে বলল, ‘ও মা তুমি? আসো না! আমি জুহির সাথে কথা বলছিলাম।’
রাফির মুখে এই সময় জুহির কথা শুনে তিনি ভ্রুজোড়া কিঞ্চিত কুঁচকে বললেন, ‘এই সময় ওর সাথে কথা বলছিলি? কেনো? আচ্ছা শোন বাবা তোকে দুটো কথা বলি। তুই সেদিন বলেছিস তুই মেয়েটাকে ভালোবাসিস, কিন্তু তুই কি একবারও বাস্তবতা দেখবি না? মোহে পড়ে একজনকে ভালোবাসি বলে দিলেই হয়?’
জুহি তখনো ফোনে ছিল, সে রাফির মায়ের গলা শুনে ফোন কেটে দিতে চেয়েও দিল না। উৎসুক হয়ে দুজনের কথোপকথন শুনতে লাগল।
রাফি মায়ের কথায় বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘মোহে পড়ে কেন ভালবাসব? আমি তো সত্যি সত্যি ওকে ভালোবাসি।’
‘এটা তার নমুনা? একটা মেয়ে, যে এই ঢাকা শহরের মতো জায়গায় একা একা থাকে; যার মা-বাবা নেই কোন পরিচয় নেই এমন একটা মেয়েকে কি কখনো ঘরের বউ করে আনা যায়? আবেগ বাদ দে, কথাগুলো বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করে দেখ। আচ্ছা আমিও না হয়ে এসব বাদ দিলাম। কিন্তু, মেয়েটা পরিবার ছাড়া মানুষ হয়েছে। ঢাকা শহরে থেকে সে কখন কি করেছে, তার খোঁজখবর কি কেউ রেখেছে? বলা তো যায় না, বিয়ে-শাদীও হয়ত করে রেখেছে।’
রাফি থমকাল। মায়ের মুখে এসব কথা শুনে কিছু বলার অবকাশ পেল না। মা যে এরকম চিন্তা ভাবনা করবে এটা কখনো তার ভাবনাতেও আসে নাই। রাফি কিছুক্ষণ বাদে ধীর কন্ঠে বলল, ‘মা জুহি এমন মেয়ে নয়। একেবারে একঘেয়ে একটা জীবন তার, সাদামাটা মানুষ, সোজা সরল। ওর জীবনে এসব কিছু নাই। তুমি হয়ত বলবে যে, মানুষ চিনতে অনেক সময় লাগে। এত সহজে মানুষ চেনা যায় না। হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু জুহিকে চিনতে আমার খুব একটা বেশি সময় লাগে নাই। লাগবে কেন বলতো? ওর জীবনে কেউ নেই। আপনজন বলতে ওর মামা মামী আর কাছের দুই একজন। আর……।’ বলতে গিয়েও থেমে গেল রাফি। আবার পুরোদমে বলতে শুরু করল, ‘তুমি যেমন ভাবছ ও ঠিক তার উল্টোটা। নারী জনম কী অদ্ভুত জানো মা? প্রথমে ওর বিষয়ে কৌতুহলী ছিলাম, পরবর্তীতে ওর বিষন্নতার কারণ খুঁজতে খুঁজতে ওর প্রেমে পড়ে গেলাম!’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘ও ভালোবাসে তোকে?’
রাফি সহসা জবাব দিতে পারল না। সে জুহির চোখে ভালোবাসা আবিষ্কার করেছে, কিন্তু মন অবধি তো যেতে পারে নাই। সে কী করে শিওর হবে যে জুহি তাকে ভালোবেসে! এখন মাকে কি বলবে?
মা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ছেলের দিকে। রাফি চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে বলল, ‘কী—জানি।’
সায়রা হক বোধহয় নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তাই রাফির যুক্তিগুলো তার কাছে ভিত্তিহীন লাগছিল। তিনি বললেন, ‘তোর কথাবার্তা কিছু আবার মাথায় খেলছে না। সেই মেয়ে তোকে ভালোবাসে কিনা তুই সেটা জানিস না, আর তুই আগে থেকে ভালোবেসে বসে আছিস? তোর সব যুক্তি আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু সবার আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে একটা পরিচয়, যেটা ওই মেয়েটার নেই। ওই মেয়েটাকে তো আমি কখনোই মেনে নিতে পারব না। সাধারণভাবে মেয়ের ব্যবহার ভালো, দেখতে শুনতেও ঠিকঠাক। কিন্তু তার উপরটা দেখে তো আর ভেতরকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা যাবে না। আমার মতে, তোর বাবাও এ সর্ম্পকটা কখনো মানবে না।’
রাফি অবিশ্বাসের সুরে শুধাল, ‘মা!’
সায়রা হক আর কিছু বললেন না। যত যাই হয়ে যাক না কেন, নিজের একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে তিনি ওই মেয়েকে মানতে পারবেন না কখনোই। সবার আগে দরকার একটা পরিচয়, জুহির তো সেটাই নেই। রাফির কাছে ঘটনা তো তিনি শুনেছিলেন কিছু। জুহির মামা বাড়িতে যা জেনে এসেছিল সবটাই মাকে বলেছে। সেই ধারণা অনুযায়ী, যার বাবা স্ত্রী সন্তান থাকতেও পরকীয়াতে লিপ্ত হতে পারে, সেই বাবার সন্তান কেমন হতে পারে সেটা সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারণা তো রয়েছেই তার।
মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর্যন্ত রাফি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে রইল। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে এগোচ্ছিল, আবার একটা ঝড়। কেউ কি তার ভালো থাকা দেখতে পারে না? নাকি সে ভালো থাকুক এটা কেউ চায় না? কী হয় ভালোবাসা নিয়ে ভালো থাকলে? মানুষ সবকিছুতেই নিজের লাভ ক্ষতির হিসেব খোঁজে। তাই বলে ভালোবাসাতেও? ভালোবাসার মত পবিত্র একটা জিনিসেও লাভ ক্ষতির হিসেব করতে হয় কখনো! কে জানে? এই উত্তর কি আদৌ পাওয়া যাবে কারো কাছে? কে দিবে? যে দিবে সেও হয়ত সবকিছুতে লাভ-ক্ষতির হিসেব করে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনটা হাতে তুলে নিতেই হৃদপিণ্ডটা কিয়ৎক্ষণের জন্য ধক করে উঠল। জুহি এখনো ফোনেই আছে। রাফি কাঁপা কাঁপা হস্তে ফোন কানে তুলে নিল। থেমে থেমে বেশ ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘জুহি? আছেন?’
ওপাশ থেকে পিনপতন নীরবতা। টু শব্দ পর্যন্ত ভেসে আসছে না। রাফি আরো কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করল। কোনো রেসপন্স না পেয়ে ফোন রেখে দিল। অদ্ভুতভাবে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। জুহি কি মায়ের কথা শুনতে পেয়েছে? মনের মধ্যে কু ডাকতে লাগল। সারারাত চিন্তায় বিক্ষিপ্ত ঘুম হলো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই জুহিকে একবার ফোন করল, কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে জুহির ফোন বন্ধ পেল। আবার ভেতরে অস্থিরতার জোয়ার উঠল। জুহি এখনো ঘুমাচ্ছে ভেবে নিজেকে শান্তনা দিতে লাগল রাফি। কিন্তু জুহি তো এত সকাল অবধি ঘুমায় না। এখন আটটা বাজে, অথচ সে সকল সাতটায়’ই নিজের কাজে বেরিয়ে পড়ে। তাহলে—?
.
.
.
চলবে….