মন কারিগর পর্ব-১৪+১৫

0
86

#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-১৪]
~আফিয়া আফরিন

মামা মামী ইদানিং ফোন করে জুহিকে বিয়ের তাগাদা দিচ্ছেন খুব করে। এতদিন তো এমন করে নাই? তাদের এত করে কারণ জিজ্ঞেস করলেও তারা কিছু বলেন নাই শুধু জানিয়েছেন, ‘ওমা! তোকে বিয়ে দেব। তুই এখন বড় হয়েছিস না? তোর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে না? এটাই তো কারণ। আর কি কারণ দরকার জুহি?’ মামীর এমন কথায় জুহি আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারল না। হুট করে এমন কী হয়ে গেল যে বিয়ের জন্য তারা উঠে পড়ে লাগছে?
অবশেষে মিমির থেকে জানতে পারল, মাহিদের জন্য পাত্রী দেখা হয়েছে এবং পাত্রী সবারই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মাহিদ জানিয়েছে, জুহির বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সে বিয়ে করবে না।
এখন সকলের চিন্তা জুহিকে নিয়ে। জুহি ছোটোবেলা থেকেই নিজের মতো করে চলেছে, কেউ কখনো নিজস্ব মতামত তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেয় নাই। জুহি ক্ষণে ক্ষণে জীবন নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। যতদিন বেঁচে আছে, একটু শান্তিতে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তার শান্তি বোধ হয় সব জায়গায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মামার সাথে এ বিষয় নিয়ে সরাসরি কথাও হয়েছে। জুহি তাকে বলে দিয়েছে, ‘আমার জন্য কেন মাহিদ ভাইয়ার বিয়ে আটকে থাকবে? আমি তো পারতপক্ষে তোমাদের পরিবারের মেয়ে না। আমাকে নিয়ে তো অনেক ভেবেছ, এইবার একটু ছাড়ো। জোর করে তো আর সম্পর্ক হয় না। যদি মন থেকে কখনো কাউকে ভালবাসতে পারি তবে সেদিনই বিয়ে করব।’
জুহির কথার প্রত্যুত্তরে তার মামা আর কিছুই বলেন নাই। তবে এই কথাটা তার মনে লেগেছে। জুহি কি তাদের আপন মনে করে না? তিনি জুহির বলা কথাগুলো মাহিদকে জানিয়েছেন।

রাফির ব্যস্ততার শেষ নাই ইদানিং। এই গানের কাজ শেষ হলে মোট ষোলোটা গানের অ্যালবাম হবে তার। এর মাঝে প্রত্যেকটা গানই বেশ ভালো রকমের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। বন্ধুমহলে আড্ডা দিতে গেলে রাফির গান ছাড়া আড্ডা জমে না। তবে, ইদানিং বড় ভাই বন্ধু-বান্ধবকে সেই ভাবে সময় দেওয়া হচ্ছে না। কাজের চাপ দিনকে দিন বাড়তেই আছে।
এরইমধ্যে একদিন স্টুডিও থেকে রাতে যখন রাফি বাড়ি ফিরছিল তখন মাহিদ ফোন করে জিজ্ঞেস করল, সে ফ্রি আছে কিনা? রাফির হাতে যেহেতু কোন কাজ ছিল না তাই সে মাহিদ রাব্বি রিয়াদের সাথে এসে আড্ডায় যোগ দিল। বেশ কিছুক্ষণ গল্প গুজব করার পর মাহিদের হঠাৎ করে মনে হল জুহির সাথে একবার দেখা করা দরকার। ও কী চায়, সেটা সামনাসামনি ওর থেকে শোনা দরকার। যেই ঐদিকে যাবে, ওমনি রাফিও বাচ্চাদের মতো বায়না ধরল সেও যাবে। অগত্যা মাহিদ রাফিকে নিয়েই রওনা হলো। রাফি তো মনে মনে উড়ছে, কতদিন পর দেখা হবে জুহির সাথে! এখন তো মেয়ের পাত্তা পাওয়া বড় মুশকিল। ফোন দিলে ফোনও ধরে না। কিসের যে এতো ব্যস্ততা কে জানে? এতো ব্যস্ততা বোধহয় শুধুমাত্র রাফির জন্য বরাদ্দ। কই? অন্য কাজে তো তার এত ব্যস্ততা নেই। নিয়মিত রুটিন মাফিক নিজের কাজ নিজে করছে, মাঝে মাঝে তো অনলাইনেও টুকটাক দেখা যায়।

জুহি শুয়েই ছিল। চোখটা যেই একটু লেগে এসেছিল, ঠিক তখন কলিংবেলের বাজখাঁই শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল সে। দরজা খুলে দিয়ে মাহিদকে আর রাফিকে দেখে স্ববিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এই অসময়?’

মাহিদ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল ‘আরে আগে বসতে তো দিবি নাকি! বসি একটু, তারপর এখানে আসার কারণটা বিশ্লেষণ করছি।’

রাফি তখনও দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে। জুহি একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রাফি সেসব পাত্তা না দিয়ে জুহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। ফিসফিস করে বলল, ‘লোকে পাগল বলুক মাতাল বলুক আমি তোমার পিছু ছাড়ব না!’

‘এটা কি গানের স্টেজ পেয়েছেন? গান গাইতে গাইতে কী সবখানে গান গাওয়ার অভ্যাস হয়েছে?’ তারস্বরে খানিক চেঁচিয়ে বলল জুহি।

‘শুধু যে গান গাইলাম তা নয়, এটা আপনার উদ্দেশ্যেই বললাম। আপনি তো আমায় পাগল ছাগল কত কিছুই বলেন, দুইদিন পর হয়তো আরো দশজন বলবে। তাতে আমার কী? আমি কিন্তু আপনার পিছু ছাড়ব না, ছাড়ছিও না।’ চোখ টিপি দিয়ে বলল রাফি।

জুহি জবাব দেওয়ার আগেই মাহিদ ডেকে বলল, ‘তোর সাথে এসেছিলাম কিছু কথা বলতে। এখন রাফি বায়না ধরল সেও আসবে। চা খাওয়াতে পারবি আমাদের?’
জুহি চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে পা বাড়াল। রাফি ভেতরে এসে মাহিদের পাশে বসল। উসখুস করছে জুহির সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু মাহিদ ভাইয়ার সামনে থেকে তো উঠে যাওয়া যাবে না। আর ওইভাবে জুহির সাথে কথা বলতে গেলে সেও বিষয়টা ভালোভাবে নিবে না। তারচেয়ে মনের ইচ্ছে মনের মধ্যে চেপে বসে থাকা ভালো।
জুহি চা বানিয়ে নিয়ে আসতেই মাহিদ বলল, ‘বোস। তোর সাথে দুটো কথা বলি। তুই তো আমাদেরকে একেবারে পর’ই করে দিয়েছিস। একই সাথে একই শহরে থাকি, ভুল করে তো একবার দেখাও করিস না। খোঁজখবর নেওয়া তো দূরেই থাক। তা শুনলাম, বিয়ে শাদী নাকি করবি না?’

এভাবে হঠাৎ করে বিয়ের প্রসঙ্গ আসায় জুহি অপ্রস্তুত বোধ করল। রাফির দৃষ্টি তার দিকেই নিহিত। সে কৌতুহলী দৃষ্টিতে জুহির দিকে তাকিয়ে আছে। জুহি বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, ‘একেবারে করব না যে তা তো বলি নাই। বলেছি, পরে করব। আগে তোমার বিয়ের কাজটা শেষ হোক তারপর আমি ভেবে দেখব।’

রাফি কিশোর কণ্ঠে উচ্ছ্বাসিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আরে মাহিদ ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে নাকি? শুনলাম না কেন?’

মাহিদ ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। তারপর বলল, ‘তুই ভাবিস কী করে তোকে ছেড়ে দেব? এই দিন দেখার জন্য তোকে বড় করেছি? এভাবে পর করে দিচ্ছিস তুই?’

জুহি বেশ স্থির কণ্ঠে বলল, ‘চা টা খেয়ে নাও ভাইয়া। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’
মাহিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় হেলান দিল। তারপর রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘মন মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে রে রাফি। একটা গান কর তো। দেখি তোর গানে কোন জাদুকরি শক্তি আছে কিনা, যা নিমেষেই মন ভালো করে দিতে পারে।’

রাফি জানালা ভেদ করে বিস্তর গগনের পানে দৃষ্টি স্থাপন করল। তারপর জুহির দিকে একবার আড়চোখে তাকাল। যেটা জুহিরও দৃষ্টি এড়াতে পারল না। অতঃপর সে উদাস ভঙ্গিতে খালি গলায় গান ধরল।
“ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়।।
ভুলগুলো জমিয়ে রেখে বুকের মণিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে, ভালবাসবো তোমায়
ভালবাসবো তোমায়!
তোমার চিরচেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাবো হারিয়ে
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
একবার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনোদিন,
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন, হবেনা মলিন।”

জুহি বেশ অপ্রস্তত বোধ করছিল। কারণ গান গাওয়ার পুরোটা সময় রাফি তার দিকেই তাকিয়ে ছিল— এখনো তাকিয়েই আছে। জুহি একবার মাহিদকে দেখে নিল। সে চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে আছে। যাক এই যাত্রায় ব্যাপারটা মাহিদের চোখ এড়িয়ে গেছে। তবে রাফি? সে কেন এখনো নির্নিমেষ দৃষ্টি স্থাপন করে আছে? তবে কি রাফি গানটা জুহিকে উদ্দেশ্য করে গাইল?
.
রাফির জীবনে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন একটা কাজ ছিল আজকের কাজটা। তার বহু প্রতীক্ষিত গানের সুর আজ সে দিয়েছে। যে গানের রেকর্ডিং করেছে—সেই গানের গীতিকার ও সুরকার রাফি নিজেই। এরচেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? এই বছর বেশ বড় একটা বাজেটের সিনেমা মুক্তি পাবে। এই সিনেমায় মোট চারটে গান রয়েছে, তার দুইটাই রাফির একক কন্ঠে গাওয়া এবং আরেকটি যুগলবন্দী! আর অন্য গানটি গায়িকা সোনালী দাসের গাওয়া।
পরিচালক রাফির ব্যাপারে খুব একটা এক্সাইটেড ছিলেন না কিন্তু রেকর্ডিং এর পর যখন গানটাকে এডিট করা হল, তৎক্ষণাৎ পরিচালক রাফিকে ফোন করলেন। উত্তেজিত কন্ঠে বললেন, ‘এইবার আরেকবার তৈরি হও। তুমি নিজেও জানো না তুমি কী জিনিস তৈরি করেছ। আশা করছি, তোমার এইবারের কাজ তোমায় তোমার সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে! কামাল করে দিয়েছ রাফি!’
তারপর তিনি রাফিকে গানের ভিডিওটা পাঠালেন। রাফি ততটা এক্সাইটেড ছিল না। সে শুধু জানে, সে এই গানটা জুহির জন্য লিখেছে; তাকে উৎসর্গ করে লিখেছে। প্রথম দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটা ঘটনার খুঁটিনাটি বের করে এই গান সৃষ্টি করে তাতে সুর দিয়েছে, তার কল্পনাগুলোকে সামান্য বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
রাফি সেই রাতেই জুহিকে একটা মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিল,—“আপনাকে পাওয়ার আপনি ব্যতীত কোন উপায় আমার জানা নেই। আচ্ছা থাক, জোর করে আপনাকে পেতে চাইব না। তবে জানেন, যেদিন আমার আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিনই বুকের বাঁ পাশটা থমকে গিয়েছে। এখনো থমকেই রয়েছে, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। একটু নিঃশ্বাস নিতেও আমার ভীষণ কষ্ট হয়। জানেন, আপনার নেত্র পল্লবে সেদিন নিজের সর্বনাশ দেখেছিলাম তারপর থেকে আপনার নাম দিয়েছিলাম সর্বনাশের দেবী! জানেন, আপনার রাগী গম্ভীর মুখচ্ছবির মাঝেও আমি এমন কিছু দেখতে পাই—যা সাধারণ চোখে অন্য কেউ দেখতে পায় না। একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছি, দিবেন? দিবেন না?”
কী নিঃসঙ্কোচ আবদার! এত কিছুর পরেও জুহি আর বলতে পারে না এটা রাফির সাময়িক আবেগ। কিন্তু, জুহি নিজেই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী সে কী করে অন্য কাউকে ভালবাসবে? তার কি ভালোবাসার অনুভূতি আছে? নেই তো, একেবারেই নেই। আজকাল রাফির কথায় এতো অপরাধবোধ জাগে, যা বলার মতো না। নিজেকে অপরাগ মনে হয়। বারবার মনে হয়, রাফি অপাত্রে ভালোবাসা দান করছে। রাফিকে এই কথা বলতে গিয়েও কতবার থমকে গিয়েছে জুহি। মাঝপথে আটকে গিয়েছে। কণ্ঠনালীতে কথা’রা জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে, যেন কোনোভাবেই এই কথাটা রাফি না জানতে পারে। এই নির্মম বাস্তবতা জানলে যদি রাফি আর ভালো না বাসে? মাঝে মাঝে যে বড্ড স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করে তার! পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ নিজেদের সুখের জন্য স্বার্থপর হতে পারে, তারা প্রত্যেকে অন্যের সুখের দরদাম করতে পারে, নিজেদের স্বার্থে ভালোবাসাকে ছুড়ে ফেলে। কিন্তু জুহি তোএত কিছু চায় না। সে চায় একটা সুন্দর জীবন, ভেজালমুক্ত একটা জীবন। যেই জীবনে শুধু সে থাকবে আর তার ভীষণ প্রিয় কেউ থাকবে। তার বাবা-মায়ের জীবনের মতো তার জীবনে কোন তৃতীয় পক্ষের আগমন ঘটবে না। এমন একটা জীবন কি আসলেই বেঁচে থাকতে পাওয়া সম্ভব?
.
“রৌদ্দুরে দেখা”— এই সিনেমার শুটিং এখনো চলছে। ছবি মুক্তি পেতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু সিনেমার গানগুলো একে একে আগেই রিলিজ হল। এই সিনেমাতেই রাফির নিজের সৃষ্টি করা গানের অবস্থান। গানটা যেদিন মুক্তি পেল, সেই দিন মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই ইউটিউব এবং বিভিন্ন সামাজিক সাইটে গানের ভিউস সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে টপকাল। তুমুল মাতামাতি শুরু হল। আরেকদফা নতুনত্বের ছোঁয়া পেল রাফি। সে খুশি হল…. ভীষণ খুশি হল। গানের জনপ্রিয়তার আনন্দে নয়, জুহিকে যে তার গাওয়া গানের মধ্যে আরেকবার ভালোবাসার কথাটা জানান দিতে পারবে এই আনন্দে! উৎফুল্ল হয়ে সে জুহির একটা ফোনকলের আশায় বসে রইল। কিন্তু ওই দিক থেকে কোন ফোন এল না। রাফি তবুও মন খারাপ করল না। জুহির জন্য অপেক্ষা করার ব্যাপারটা তার গা সওয়া হয়ে গেছে। সে আরোও সহস্র জনম জুহির অপেক্ষায় থাকতে পারবে।
রাফি বেলকনির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে গগনে পাখা মেলে উড়ে যাওয়া পাখিদের দিকে তাকিয়ে আপনমনে নিজেকে শুধাল, ‘জুহি, আপনি শুধুই কী আমার ভালোবাসা?’
উত্তরটাও সে নিজেই দিল, ‘না তো, আমার স্বপ্ন, আমার ভেতরে তিলে তিলে লালন করা একবুক সাধনা আপনি! আপনি আমার জীবনের একাংশ ছুঁয়ে দিতেই সুন্দরের কী নিদারুন দৃশ্য উপভোগ করছি। আর আপনি যখন পুরোপুরি আমার জীবনটাকে ছুঁয়ে দিবেন, তখন এত সুখ কী আমি সহ্য করতে পারব!’
.
.
.
চলবে….

#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-১৫]
~আফিয়া আফরিন

রাফির গানটা জুহিও শুনল, একবার নয় বারবার শুনল। তবুও তার মন ভরল না। যখন জেনেছে এই গানের গীতিকার এবং সুরকার রাফি নিজেই; ঠিক তখনই গানের মধ্যে লুকায়িত অর্থটা সে ধরতে পেরেছে। একটু আগে পর্যন্তও মস্তিষ্ক ধরি ধরি করছিল, কিন্তু ধরতে পারছিল না। যতবার গানটা সে শুনছে ততবার মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, মন উদাস হয়ে যাচ্ছে ভীষণ অনিয়মে।
বিস্তর গগন ক্রমশই আঁধারে ছেয়ে যাচ্ছে। নিকষ কালো আঁধারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। তবে আজকে আকাশ ভরা পূর্ণিমা। নিটোল চাঁদ তার আলোর পসরা সাজিয়ে বসেছে। জুহি ছাদের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। অজানা কারণে আজ খুব কিশোর বয়সে উচ্ছল প্রাণবন্ত দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।
জীবন থেকে এতগুলো বছর কেটে গেছে, কিন্তু সে কখনোই প্রেম নামক ধরা বাঁধা বেড়াজালে নিজেকে বাঁধতে পারে নাই, বাঁধার চেষ্টাও করে নাই। তার এই সাদামাটা আটপৌরে জীবনে কেউ কখনো প্রেমের প্রস্তাব নিয়েও আসে নাই, তাই প্রেমের অনুভূতি জ্ঞান তার শূন্যের কোঠায়। হয়ত প্রেম জিনিসটাই সে বোঝেনা। তাইতো রাফির এত অনুরোধের পরেও তাকে শূণ্য হাতে ফিরিয়ে দেয় বারবার। জুহি এখনো পর্যন্ত তার আর্জম্ম আরাধ্য প্রেমিককে খুঁজে পায় নাই। কখনো খুঁজে পাবে কি না তাও জানেনা। কিন্তু জুহির এই মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের পাঠ চুকিয়ে সে খুঁজে পেল তার অনুভূতির প্রকৃত মালিককে। হৃদয়ের গহীন থেকে গহীনে জমিয়ে রাখা সেই অচেনা অনুভূতিকে গভীরভাবে সাহারা মরুভূমির তৃষ্ণায় ফেলে দিল রাফির একটি গান। এই নিঃসঙ্গ একাকিত্ব রাতের আঁধারে গানটি আরেকবার মনে মনে আওড়াল—
“স্টেশনের মুঠো রোদের ভীড়ে,
তার প্রথম দেখা মিলে
মৃদু হাওয়ায় ভেসে এলোকেশি চুলে
মন হারিয়েছে তার কপোলের গভীর ভাঁজে।
প্রথম থমকালো বুকের বা’পাশ
পেরিয়ে গেল দিন, দিন থেকে পক্ষ, পক্ষ থেকে মাস!
তার মুখ দর্শন মন আনচানের কারণ,
একটু ভালোবাসো না? কে করেছে বারণ!
স্টেশন শেষে ফের আরেক স্টেশনে
কিছু কথা হল মনের গহীনে,
প্রতিধ্বনি বাজে তার আজও নিঃশ্বাসের বাঁকে,
মিশে গেছ গভীর ভাবে হৃদয়ের অন্তরালে!
তুমি ভালো না বাসলেও আমি ভালোবাসি,
দিনের শুরুতে ভালোবাসি, দিনের শেষে ভালোবাসি!
মাঝেমাঝে বেহায়া মনে একটু কাছে আসি,
ভালোবাসি, সর্বনাশের দেবী!”

এত অস্থিরতা জুহি কখনোই অনুভব করে নাই। বুকের মধ্যে কী ভীষণ তীব্র ব্যথা! এ ব্যথার উপসর্গ সে ধরবে ধরবে করেও যে ধরতে পারছে না। ভয় হয় প্রচন্ড, মানুষ হারানোর ভয়। তার অধিক প্রিয় কিছু কোন দিনও তার জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। হয়ত নিজেরা চলে যায় নয়ত জুহিকে চলে যেতে বাধ্য করে। এই এলোমেলো জীবনের বহিঃপ্রকাশে কী করে রাফিকে বরণ করবে সে? তার যে বহুত দুঃখ! এই বেলায় হিসেব-নিকেশ সব চুলোয় দিয়ে, দুঃখের সঙ্গে আড়ি নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করলে কী খুব বেশি ক্ষতি হবে? ভেবেও উত্তর মিলে না জুহির।
.
আচমকা মাঝরাতে রাফির ফোন বেজে উঠল বড্ড কনে লাগা আওয়াজে। আজ একটু রাত করেই বাড়ি ফিরেছিল রাফি, তাই ঘুমাতেও দেরি হয়েছে। হঠাৎ করে ফোন বেজে ওঠায় কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল।
ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ফোনটা তুলল। জড়ানো কন্ঠে কে ফোন করেছে সেটা পরখ না করেই জিজ্ঞেস করল, ‘কে বলছেন?’
ওই পাশ থেকে দীর্ঘ নীরবতা। নীরবতা নিরবই থেকে গেল, ধরা দিল না। রাফিও পুনর্বার ঘুমের ঘোরে আটকে গেল।
সকালে ঝটপট ঘুম থেকে উঠে গোসল সেড়ে নিজের মনটাকে একদম রিফ্রেশমেন্ট করে নিল। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল রাফি। তারপর হঠাৎ করে মনে পড়ল গত রাতে কে যেন ফোন করেছিল। হাতের তোয়ালে বেলকনির গ্রিলে ঝুলিয়ে ঘরে এসে ফোন হাতে নিল।
ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্ট চেক করতেই তার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। গতকাল রাতে জুহি তাকে ফোন করেছে? এটা কী করে সম্ভব? রাফির যেমন আনন্দ হচ্ছিল অন্যদিকে দুশ্চিন্তাও ভর করছিল। এত রাতে হঠাৎ করে মেয়েটা কেন ফোন করল? কোন বিপদ আপদ? সে কেন ওমন মরার মত ঘুমাল? কেন ঠিকভাবে কথা বলল না তখন?
তৎক্ষণাৎ সে জুহিকে কল ব্যাক করল। জুহি প্রায় সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে বলল, ‘পড়াচ্ছি পরে ফোন করব।’
রাফিও আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল না কারণ জুহি এটুকু বলেই ফোন রেখে দিল। কিন্তু এতো রাতে কেন ফোন করেছিল সেই রহস্যটা উদঘাটন করতে পারল না রাফি।
জুহি ঠিক আছে, আপতত এই ভেবেই স্বস্তি। মায়ের ডাকে রাফি ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে এতো সকাল সকাল ডাকাডাকি করছ কেন?’

‘ঘুম ভেঙ্গেছে?’ টেবিলে নাশতা সাজাতে সাজাতে বললেন সায়রা।

‘হ্যাঁ।’ হাই তুলতে তুলতে বলল রাফি।

‘আজ কোনো রের্কডিং আছে?’

‘না, কেন?’

‘এমনি জিজ্ঞেস করলাম রে বাবা। আয় খেতে আয়। আর ঘর থেকে তোর বাবাকে আগে গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়। কাল রাতে আবার বাড়ি ফিরতে দেরি করেছিস, তোর বাবা কত চিন্তা করছিল জানিস? ফোন দিলে ফোনও ধরিস না।’

‘ফোন সাইলেন্ট ছিল মা।’
রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। রাফি দৌঁড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিল। জুহি ফোন করেছে নাকি? কিন্তু নাহ, হতাশ হতে হল রাফিকে। জুহি না, তার বন্ধু ফোন করেছে। কিছুক্ষণ কথা বলে বাবাকে ডাকতে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল। কিন্তু যেতে হল না, আহসানুল হক নিজেই বেড়িয়ে এলেন।
রাফিকে দেখে গম্ভীর মুখে শুধালেন, ‘কি ব্যাপার তোমার বলতো? ইদানিং দেখছি হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছ আবার হঠাৎ করেই চলে আসছ। বড় হয়ে গেছ দেখে কী মা-বাবাকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করো না?’

রাফি আমতা আমতা করে বলল, ‘না মানে কাল রাতে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। আর তোমরা ফোন দিচ্ছিলে, কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকার কারনে আমি বুঝতে পারি নাই। আই প্রমিস বাবা, নেক্সটে এমন ভুল আর কখনোই হবে না।’
আহসানুল হক ইশারায় রাফিকে খেতে বসতে বলে নিজেও বসে পড়লেন। আহসানুল হক ছেলেকে বেশ শাসনে বড়ো করেছেন। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ হাতে কলমে বুঝতে শিখিয়েছেন। জীবনের সকল টানাপোড়েন, দুঃখ কষ্ট প্রতিরোধ করার মাধ্যম চিনিয়েছেন। একমাত্র ছেলে বলে অতিরিক্ত আদর দিয়ে বিপথে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। ছেলের জীবনে এতো বড়ো সফলতা, তিনি কিন্তু মুখ ফুটে রাফির প্রশংসা করেন নাই। রাফি যেদিন নিজের প্রথম ইনকামের টাকাটা বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল, তখন তিনি কী যে খুশি হয়েছিলেন তা বলার বাহিরে। রাফি তাকে যেই টাকা’টা দিয়েছিল, তিনি সেই টাকা’টা ওই ভাবেই রেখে দিয়েছেন। একটুও নড়চড় হতে দেন নাই। মাঝেসাঝে সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় হাত বোলায় বড্ড অদেখলার মত। তার বাউন্ডুলে ছেলেটার প্রথম রোজগার— আর তার প্রথম সুখ! মনে মনে দোয়া করেছেন এবং নিজের ভিতরে গর্ববোধ করেছেন। রাফি নিজেও জানে তার বাবা কেমন! সে বাবাকে মন থেকে শ্রদ্ধা করে, কখনো মুখে মুখে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায় না।
রাফি খাওয়ার সময় বেশ তাড়াহুড়ো করছিল। এটা দেখে আহসানুল হক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথাও যাবে নাকি? এমন ভাবে খাচ্ছ মনে হচ্ছে তোমার ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে? রেকর্ডিং আছে নাকি আজকে?’

‘না বাবা, তবে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।’
ঠিক এমন সময় রাফির ফোন বাজখাঁই শব্দে বেজে উঠল। রাফি এক পলক ফোনের স্ক্রিনে তাকাল, বুকের মধ্যে ড্রিম ড্রিম আওয়াজ হচ্ছে। জুহি ফোন করেছে। রাফি বাবা মার চোখের আড়ালে ফোন সাইলেন্ট করে রাখল। বাকি খাবারটুকু তাড়াহুড়োর উপর দিয়ে শেষ করে ঘরে এসে বসল। কেমন যেনো কিশোর বয়সের প্রেমের মতো উন্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে। এতো উন্মাদনার কারণ কী? জুহি তো তাকে ভালোবাসে না, এই নির্মম বাস্তবতা তাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু না, ভালোবাসবে না কেন? ভালোবাসতেই হবে, যে করেই হোক। এই এক জীবন যার নামে উৎসর্গ করে দিয়েছে, তার দিক থেকেই তো সামান্য একটু ভালোবাসা পাওয়া রাফির প্রাপ্য!
ফোন করেই রাফি প্রথম জিজ্ঞেস করল, ‘হ্যালো ম্যাডাম! হঠাৎ করে এত রাতে ফোন করেছিলেন যে?’

জুহি নির্বিকার ভাবে বলল, ‘আসলে ভুল করে ফোন চলে গেছিল, আমি খেয়াল করি নাই। সো সরি!’

রাফি যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে ফোন করেছিল এখন ততটাই হতাশ হল। জুহির সাথে যতবার কথা বলে ততবারই তার উচ্ছ্বাসে এইরকম ভাবেই ভাটা পড়ে।
রাফিকে চুপচাপ থাকতে দেখে জুহি ফের বলল, ‘আপনার গানটা শুনলাম, অন্যান্য গানের তুলনায় এটা বেশ ভালো গেয়েছেন।’

‘ধন্যবাদ। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, সে বিশেষ কিছুই বলল না। অথচ আমি তার কাছ থেকে বিশেষ কিছু শোনার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলাম।’ নিজেকেই যেন শ্রাগ করে বলল রাফি।

‘সব সময় এত আশা নিয়ে থাকতে হয় না। সব আশা যে পূরণ হবে, এমনতো কোনো নিশ্চয়তা নেই তাইনা?’

রাফি খুব শান্ত গলায় জুহিকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনাকে আমি ভালোবাসি, আপনাকে পাওয়ার এই আশাটাও কী কখনো পূরণ হবে না?’

জুহি অনুরাগ বিহীন কণ্ঠে জবাব দিল, ‘সেটা যে সম্ভব নয়। আমি যে বিশ্বাস নামক জিনিসটাকে খুব বেশি ভয় পাই।’

‘আমি জানি বিশ্বাস ভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। আমি কিন্তু আমার প্রতি শতভাগ বিশ্বাস স্থাপন করতে বলব না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আপনার হাতে। আমার হাতে যেটা রয়েছে, সেটা হচ্ছে কোনো অজুহাত ছাড়া ভালোবাসা।’

জুহি ওষ্ঠ্যদ্বয়ে অবজ্ঞার হাসি ফুটিয়ে তুলল। তারপর বলল, ‘আপনি কি ভাবছেন আমি আপনার প্রতারণার কথা বলছি?’

‘তাহলে?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রাফি।

‘বলছিলাম তো নিজের কথা। ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, আমার বাবার প্রতারনার রক্ত নাকি আমার শরীরেও বইছে। ভয় হয়, সেই রক্তের সূত্রপাত ধরে আমিও যদি কারো সাথে ভয়াবহ নির্মম প্রতারণা করে ফেলি!’
রাফি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। জীবনে কতটা তিক্ততা এসে গেলে একটা মানুষের চিন্তা ভাবনা এমন পর্যায়ে চলে যায়, ভেবে ভেবেই অবাক হতে লাগল।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর ক্ষীণকণ্ঠে বলল, ‘সবাই এক হয়? আপনার বাবা একজন মানুষ এবং আপনিও আলাদা।’

‘তা হলাম। কিন্তু আমি এসব সম্পর্ক নিয়ে কখনোই বিশেষ কিছু ভাবিনাই। ভাবার জন্য কোন সোর্সও খুঁজে পাইনাই। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি, নিজেকে ফিনান্সিয়ালি ইনডিপেনডেন্ট করব। নিজের পায়ে দাঁড়াব, নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোকে আগলে রাখব। দেখেন, আমার এই স্বপ্ন কিন্তু আমি পূরণ করেছি। নিজেকে সমাজে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার একটা পরিচয় রয়েছে। আমার কেউ নাই, এটা ছাড়াও আমি আমার একটা পরিচয় গড়ে তুলতে পেরেছি। আর সম্পর্ক, এই জিনিসটা থেকে সারা জীবন আমি দূরে ছিলাম।’

‘এখনো দূরেই থাকবেন? সম্পর্কটাকে কাছ থেকে দেখেন, জীবনকে আরেকটু কাছ থেকে উপভোগ করেন।’ নিচু কণ্ঠস্বর শোনা গেল রাফির।

‘আপাতত ইচ্ছে নেই। আচ্ছা রাখছি এখন, ভালো থাকবেন।’

রাফি নির্নিমেষ কণ্ঠে শুধাল, ‘আমাদের জীবনের গল্পটা কী এভাবে জনম জনমের জন্য আলাদা থেকে যাবে?’

‘এর উত্তর অন্য কোন সময় দিব। আজ রাখছি।’
জুহি ফোন রেখে দিল। এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কাল রাতে তো ইচ্ছে করেই ফোন করেছিল, কিন্তু কোন খেয়ালে করেছিল এটা আর বুঝতে পারছে না সে এখন। আর বুঝতে পারছে না বলেই নিজের উপর বিরক্তবোধ করছে। বর্তমানে রাফির কথা শুনে কিছু অগোছালো ভাবনা মস্তিষ্ক জুরে বিরাজ করছে। এই ভাবনা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া খুব একটা সহজ নয়, এটা জুহি বেশ বুঝেছে।
.
.
.
চলবে…..

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]