আপনিময়_তুমি 2 Part-16

0
1889

#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 16…

‘কিরে ছলনাময়ী কাল নাগিনী নিচে আসবি নাকি উপরে উঠে তোর বিষ দাঁত ভাঙমু। না সবাইরে তোর আর আমার কিউট প্রেমের সম্পর্ক বলমু। ৪৫ সেকেন্ড টাইমে নাইলে… মাইক আনছি মাইকেলাস করতাম— আপনি আমার বাচ্চার মা হওয়ার কথা বলে আমাকেই অনাথ করে দিছেন।’

মেসেজটা পড়ে অন্তি আনহাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আনহা এবারের মতো বাঁচাই দে। কসম কাইটা কইতাসি বইন ভবিষ্যতে ইহান তোরে টাইনা নিলেও আমি কিছু কমু না।’

অন্তির এ-কথায় আনহার মুখে অন্ধকার নেমে এল। এখন কী হবে? ও ভেবেছিল ইহান ওকে কিছু বলবে। কিন্তু ফাজিলটা ওর ধারণা মিথ্যে করে অন্তিকে টার্গেট করল। ইসস! কেন যে জিহামকে মারতে গেল। এর চেয়েও ওকেই দুইটা দিলে পারত। অন্তিকে তো ফ্যাসাদে পড়ত হতো না। কিন্তু এবার কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাইক গলা খাঁকারী করার আওয়াজ শুনতে পেল। তৎক্ষনাৎ অন্তি ওকে জড়িয়ে কান্না করে দিল। বলল, ‘দেখছিস হারামি গুলো আসলেই প্লেন করে সব ঠিক করেই আসছে। যা করার তাড়াতাড়ি কর। নাইলে ইন্দুর মরার বিষ খাইয়াও এ লজ্জা লুকানো যাবে না।’

‘আরে বাবা শান্ত হো না। দেখি কী করা যায়। আর ভালো লাগছে না।’

‘তোর ভালো কোনোদিনই লাগব না। যখন ইহান আমার আর ওর সম্পর্কের এনাউন্সমেন্ট করব তখন ভালো লাগব। হায়রে…’

‘অন্তি…’ ধমক দিল আনহা।

ভ্রুক্ষেপহীন অন্তি আরও জোরে কেঁদে ওঠে বলল, ‘আমার বাবা-মায়ের মান-ইজ্জত যাওয়ার জন্য তুই দায়ী থাকবি। আর আমার বিয়ে ভাঙার জন্যও।’

‘তোর বিয়ে ভাঙবে মানে?’ সন্দিহান কণ্ঠে জানতে চাইল আনহা।

অন্তি বলল, ‘বাবা-মায়ের মান-ইজ্জত গেলে। আমারটাও যাবে। তখন কী আমার বিয়ে হবে? সারাজীবন কুমারী বসে সবার টিটকারি শুনতে হবে।’

‘মানে?’ অবাক হয়ে জানতে চাইল আনহা। এবার যেন নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। এ কাদের পাল্লায় পড়েছে ও। একজন ২০বছরে বয়সে বিয়ে করার আগেই ভাবে ছেলেমেয়ে বড় কবে হবে। আরেকজন কিছু না হতেই সারাজীবন কুমারী হওয়ার ভয় পাচ্ছে। এরা মানুষ? না মানুষ কেন হবে না। কিন্তু সুস্থ নয় পাবনা ফেরত পাগল একেকটা৷

‘আনহা… কিছু বল না।’

‘ওই ফেসফেস করা বন্ধ কর। দেখি কি করা যায়।’ বিরক্তির শ্বাস ফেলল আনহা।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দোস্ত এখনো তো আসলো না। ওরা কি আদৌতেও আসবে? ৪৫সেকেন্ড তো কখন কেটে গেল।

ইহাম বিন্দাস কন্ঠে পা ঝুলাতে ঝুলাতে বলল, ‘নিজেদের মধ্যে সভা পরামর্শ করবে। ডিসিশন নেবে। তারপর অবলা ভাব নিয়ে আসবে। একটু তো টাইম লাগবে ইয়ার। জাস্ট চিল। তোকে মারার প্রতিশোধ আমি হারে হারে নিব। তুই শুধু দেখে যা।’

‘কিন্তু আসবে তো?’

ক্ষেপে গেল ইহান। বাইক থেকে মাথা তুলে রাগী কণ্ঠে বলল, ‘ওই সালা আবুইলা ওরা পাঁচ তলার উপরে থাকে। সেখান থেকে ৪৫সেকেন্ডে আসতে হইলে লিফট লাগব—যা এখানে নাই। নাইলে ব্যালকনি দিয়ে লাফ দিয়ে হাসপাতালে যাইত হইব। যার ব্যবস্থা নাই। তাই চুপ থাক।

কিন্তু ওর উত্তরেও জিহাম সন্তুষ্ট হলো না। কয়েক মুহূর্তে যেতে না যেতেই আবার ইহানের কাছে গেল। ইহান কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল, ‘আবার কি হইছে রে?’

‘দোস্ত ধর ওরা আসলো না।’

‘আসবে না কেন?’

‘আরে বাবা আসবে না তো বলি নাই। ধর এল না। তখন কি সত্যি সত্যি মাইকিং করার কথা ভাবছিস?’

‘তোর কি মনে হয় আমি ফাঁকা আওয়াজ দিতে এত রাতে মাইক জোগাড় করে আনছি?’

‘ভেবে বলছিস তো। না মানে রাত ১২টা বাজে মাইকিং করে ভালোবাসার কথা বললে মাইয়ার বাবা-মা কী করব জানিনা। কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশী যারা আছে তাঁরা কিন্তু পচা ডিম নাইলে আলু ছুড়ে মারবে।’

এবার যেন জিহামের কথায় ইহান নড়েচড়ে বসল। শোয়া থেকে উঠে কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল, ‘তুই কি শিয়র? এরকম কিছু হওয়ার চান্স আছে?’

‘100% শুয়র না মানে শিয়র। এইসব এলাকায় না পচা ডিম, পচা আলু ছোড়ার রীতি প্রচলন আছে। আর পাড়ার ভাই ব্রাদার্সদের তো কথাই নাই। কানের নিচে আগে দুইটা দিব। তারপর জিজ্ঞেস করব কী হইছে?’

ইহান আমতা কণ্ঠে বলল, ‘সে কথা বইলা কী লাভ? আমার কাছে আসলে তো আমি আগে কয়টা দেই তারপর জিগাই।’

‘কিছু বললি অয়ন?’

‘নাঃ এসব বাদ দে। এরকম পরিস্থিতি আসলে বাইক স্টার্ট দিয়ে রাখব। ডিম ছুড়তে আসলেই… ‘

তখনি দেখে ধুতি পায়জামা ও সাদা সুতির একটা জামা পরে রাণী গোলাপিবর্ণের ওড়না জড়িয়ে গেট থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে ওদের দিকে আসছে। ইহান ভ্রু কুঁচকে মেয়েটির আসা দেখল। সিল্কি চুলগুলো দু’পাশে দেওয়া। অন্তিদের বাড়ির সামনেটা খোলামেলা। বাতাস আসে প্রচন্ড। সেই বাতাসে মেয়েটির দু’পাশের চুল উড়ছে। অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে তার মাঝে। ইহান দেখল অপলক দেখল। কী মনে করে আকাশের দিকে তাকায়। দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘নাঃ চাদের কোনো পাত্তা নেই। তাহলে মেয়েটিকে এত সুন্দর লাগছে কেন? চেহারা এত আলোকিত লাগছে কেন?’

ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে মেয়েটির দিকে তাকায়। আনহাকে দেখতে পায়। ভেংচি কেটে বলে, ‘এমনি এমনি চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। আকাশে চাঁদ না থাকলেও রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট আছে। সেখানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে আনহার মুখ।’

জিহামের এ-কথায় ইহান বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায়। এক দলা থুতু ফেলে বলে, ‘ছ্যা… সালা আবুইলা ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখতাসে। ফিলিংস বোঝ ফিলিংস। এটাকে বলে রোমান্টিক ওয়েদার। খালি হিরোইনের জায়গায় খালাম্মা।’

তখনি আনহা এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। দু’হাতে বুকে বেঁধে ভ্রু নাচিয়ে বলে, ‘সমস্যাটা কোথায়? এখানে এত রাতে কী তোদের?’

আনহার মুখে তুই শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ইহানের। কারণ এই তুইয়ে ভালোবাসা নেই। কিছুটা অপমান বোধ হলো ইহানের। বলল, ‘মুখ সামলে কথা বলুন আনহা। আমি… ‘

ইহান আর কিছু বলার আগেই আনহা ইহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। ইহান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই আনহা বলল, ‘আমার লকেট।’

‘যদি না দেই।’ বলল ইহান।

‘না দেই। না দিলে আর কী জোর করে তো নিতে পারব না। এমনিতেও সামান্য একটা লকেটের জন্য অনেক বেশী শ্রম দিয়ে ফেলেছি। তাছাড়া লকেটটা তেমন স্পেশাল নয় যে আগলে রাখতে হবে। দেখতে সুন্দর ছিল তাই গলায় পরে থাকতাম। কিন্তু তার জন্য এত প্যারা নিতে পারব না। তুমি ওটাকে নিয়েই যাও।’ বলেই চলে যেতে নেয়।

কথাটা শুনে আগুন জ্বলে উঠল ইহানের মাথায়। ওর লকেট আনহা শুধু সৌন্দর্যের জন্য পরে। আর কোনো বিশেষত্ব নেই এর মাঝে। ও গিয়ে আনহার হাত ধরে। আনহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। ইহান তাতে ভ্রু-ক্ষেপ না করে বলে, ‘সত্যি এই লকেটটা আপনার কাছে মূল্যহীন।’

আনহা ওর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। বলে, ‘আমার কাছে কোনটা মূল্যহীন, আর কোনটা অদরকারী আশা করি তোমাকে বলতে যাব না। আর এমনিতেও তোমাকে আমি এসব বলছি কেন?’

‘আনহা…’

‘আর হ্যাঁ, সরি তোমার বন্ধুকে মারার জন্য। ওর কোনো দোষ নেই। জিহাম সরি। কিছু মনে করো না। প্লিজ অন্তিকে জ্বালিও না।’

বলেই চলে যেতে নেয়। কিন্তু এবারেও বাধ সাধে ইহান। ওর সম্মুখে গিয়ে বলে, ‘আনহা আপনি সত্যি বলছেন লকেট টা আপনার চাই না।’

‘এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না অয়ন। যাও তো তুমি। আর বার বার এভাবে আমার পিছে পড়ে থেক না। এখানে আমি ফ্যামিলি ছাড়া থাকি। আর তোমার জন্য রাত-বিরেতে আমাকে আসতে হলো। কেউ দেখলে কী ভাব্বে? তোমার হয়তো কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু আমার যাবে। দয়া করে প্লিজ আমাকে জ্বালিও না। আমাদের মধ্যে যা ঝামেলা হয়েছে তার জন্য হাত জোড় করে আমি ক্ষমা চাইছি।’

বলেই হন্তদন্ত পায়ে বাড়ির দিকে হেঁটে চলল আনহা। চোখের কোণে পানি জমেছে। কিন্তু কারণ তার অজানা। ইহানের প্রতি কোন মায়া ওকে এমন করতে বাধ্য করল। অন্তির বলা কথায়? কিন্তু কেন? তবে কী ওর মনেও এমন ভয় সৃষ্টি হয়েছে যে ও না চাইতেও ইহানের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে? না না এটা ভাবাও অন্যায়। ওরা দুজন সবটাই আলাদা। কোনদিন সেটা সম্ভব নয়।

আনহা চলে যেতে জিহাম নীরস মুখে বলল, ‘চল ইহান।’

ইহান নির্বিকার। জিহাম আবার বলল, ‘চল।’

ইহান পকেট থেকে লকেটটা বের করল।

‘এটার কী করবি?’ নীরস গলায় জানতে চাইল জিহাম।

‘দেখতেই পাবি।’ আনহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, ‘এত বছরের উপহার হাত থেকে চলে গেল বলে আপনার কাছে তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেল বাহ! আনহা। তবে তাই হোক।’
.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]।??