আপনিময়_তুমি 2 Part-18

0
1688

#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 18…

দেখতে দেখতে বছর গড়িয়ে গেছে। আনহার মনের কোণে জমা অনুভূতি ভয় গুলো ধীরে ধীরে চাপা পড়েছে। কারণ ও জানে ইহানের সাথে আত্মার সম্পর্ক হলেও দু’জন মানব-মানবীর চিরয়ত সম্পর্ক হওয়া সম্ভব নয়। অন্তির ধারণাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইহানের মনে ওর জন্য তেমন কোনো অনুভূতি নেই। ও শুধু ইহানের ‘আপনি’। কিন্তু তা তুমিময়তায় কোনোদিন ছাইবে না।আনহা ইহানের তুমি কোনোদিন হতে পারেবে না। কারণ ইহানের মনে দুষ্টমির আড়ালে ওর জন্য অগাধ শ্রদ্ধার প্রণয় চুপিয়ে আছে। প্রেমের নয়। তার চেয়েও বড় কথা ইহান রাইসাকে ভালোবাসে। সত্যি সত্যি ও রাইসাকে ভালোবাসে। রাইসার প্রতি ওর আচরণ, কথা, কেয়ার সবকিছুতেই তা স্পষ্ট। তাছাড়া রাইসার তুলনা কোনোদিক দিয়েই ওর সাথে হয় না। তবুও কেন জানি আনহার বড্ড ইচ্ছে হয় রাইসার সাথে নিজেকে তুলনা করতে। ওকে হিংসা করতে। হয়তো করতে পারে না। কিন্তু ইচ্ছে হয়।

আনহার মাস্টার্স শেষ হয়ে গেছে। ওর এখন ইহানের জীবন থেকে অনেক দূরে নিজের মতো করে বাঁচার পালা। কোথাও না কোথাও এটাই মনে হয় ভালো থাকতে হলে ওকে দূরে যেতে হবে। তাই ও তার ব্যবস্থাও করে রেখেছে। আজ ভার্সিটির প্রোগ্রামের পর ও চলে যাবে ঢাকা ছেড়ে। ঢাকার বাইরে একটা প্রাইভেট ফার্মে নিজের জবের ব্যবস্থা করেছে। স্যালারি ভালোই। একা মানুষের জন্য যথেষ্ট। হ্যাঁ, একা। আনহা সম্পূর্ণ একা। সেদিন ওর মাকে নিয়ে যাওয়ার পর আর দেখা হয়নি তাঁর সাথে। তাঁর আদেশ পালনেই তাঁর সাথে কোনোদিন যোগাযোগ করেনি। চেষ্টা যে করেনি বললে ভুল হবে। করেছ কিন্তু অগোচরে। মাঝে মাঝে বড্ড কষ্ট হয়। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুরতার কাছে ও যে বিবশ। কিছুই করার নেই।

রেজাল্টের শেষে অনুষ্ঠান। তবে আনহা নিজের চেয়েও বেশী এক্সসাইটেড ইহানের রেজাল্টের জন্য। ইহানের এবার অনার্সের রেজাল্ট বের হবে। ভাবতেও হাস্যকর লাগে ওর চেয়ে তিন বছরের জুনিয়র ছেলেটা মাত্র ওর এক ক্লাস নিচে। ইহান যে দুষ্ট, তাঁর চেয়েও বেশী ঘোড়েল। তাই তো ক্লাস ফাইভের পর দু ক্লাস টপকে এইটে ভর্তি হয়েছে। দুষ্ট হলেও পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই সচেতন। এদিকে ওর কোনো ছাড় নেই। প্রত্যেক পরীক্ষায় রেজাল্ট ঈর্ষনীয়। আনহা ভেবে পায় না—যে ছেলে সারাদিন লাফাঙ্গাগিরি করে বেরায় সে এমন পড়ে কখন। সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে প্রশ্নটা করেছিল আনহা। কিন্তু ইহান টপ সিক্রেট বলে উড়িয়ে দিয়েছল। তাতে আনহার বদ্ধ ধারণা হয়েছিল ইহান নিশ্চয় নকল করে। ও যা ছেলে সবই সম্ভব। কিন্তু বিগত রেজাল্ট গুলো দেখে সে ধারণা মিথ্যে হয়ে যায়।

যদিও এতে কোনো সন্দেহ নেই ইহানের রেজাল্ট ভালো নয় দুর্দান্ত হবে। কিন্তু তবুও আনহা স্বস্তি পাচ্ছে না। যার জন্য নিজের রেজাল্টের চিন্তাই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।

‘কিরে কী এত চিন্তা করছিস?’ রিক্সায় বসে আনহাকে ধাক্কা দিয়ে জানতে চাইল অন্তি।

আনহা কিছুটা চমকায়। প্রশ্ন না শুনেই উত্তর দেয়, ‘এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যে…’

‘ক্যা!? মাথার স্ক্রু-ড্রাইভার কী ঢিলা হয়ে গেছে। আমি বলি কি আমার সারেন্দা বাজায় কী? আমি বলছি কী ভাবছিস?’

‘কিছুনা। এমনি।’ দায়সারা উত্তর দিয়ে পথের দিকে তাকায় আনহা।

অন্তি এই বিহেভে কিছুটা নাক ছিটকে বলে, ‘তোর আর দোষ কী দিব বল? যার সাথে আছোস সেইটা তো ফুল মেন্টাল। তুই তো কেবল হওয়া ধরছোস।’

‘তুই আবারও ইহানকে নিয়ে বাজে কথা বলছিস?’

তখনি রিক্সা থামে। রিক্সা ওয়ালা বলে ওঠে, ‘আফা আইয়া পড়ছি।’

‘লে আইয়া পড়ছি। এবার ভাড়া দে।’ ভেংচি কেটে বলল অন্তি। আনহা নাক-মুখ একাকার করে রিক্সা ওয়ালে ভাড়া মিটিয়ে দেয়।

ভার্সিটিতে ঢুকতে ঢুকতে অন্তি বলে, ‘আজকে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে?’

বিরক্ত হয় আনহা। বলে, ‘তুই কী কোনো এস্ট্রোলোজার নাকি? সব সময় কোনো না কোনো ভবিষ্যত বাণী করিস।’

‘দেখ রেগে যাস না। কিন্তু আমার মন না কু গাইয়ে। তাছাড়া তোকে এই বেগুনি রঙের শাড়িতে যা লাগছে তাতে তো…’

‘তুই না সবসময় বেশী বুঝিস কথা না বাড়িয়ে চল। ওদিকে প্রোগ্রামের কতদূর কী হলো কে জানে? আমাকে আবার ওখানের দায়িত্ব দিছে।’ বলল আনহা। অতঃপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।

কিন্তু ভার্সিটিতে ঢোকার আগেই থেমে যায়। সামনের দিকে তাকিয়ে দু’একটা ঢোক গেলে। আনহার হঠাৎ থেমে যাওয়ারে অন্তি ভ্রু-কুঁচকে বলে, ‘কিরে আবার কী হলো?’

কিন্তু আনহা ওর কথা কানেই তুলল না। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘ওনি এখানে কিভাবে?’

‘ওনিটা কে?’ অন্তি সামনের দিকে তাকাতেই দেখে মাঝ বয়সী একজন লোকের দিকে তাকিয়ে আছে আনহা। লোকটা ফোনে কথা বলছিল। আনহাকে দেখে এগিয়ে আসে। কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলে, ‘কী মামনি বিগত এক বছর ধইরা ঘুরাইতাসো। এতদিন পর তোমার এই ভার্সিটির ঠিকানা পাইছি। বাড়ি যাবা না। তোমার মা তোমার জন্য অপেক্ষা করতাসে।’

‘মা…’ মুহূর্তে আনহার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে।

লোকটি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু তুমি না গেলে কতদিন থাকবে জানিনা।’

‘কী হয়েছে মায়ের? কী করেছেন ওনার সাথে?’ উত্তেজিত কণ্ঠে জানতে চাইল আনহা।

‘কিছুই করি নাই। কিন্তু তুমি না গেলে অনেক কিছু হবে। এবার চলো। বলেই আনহার হাত ধরে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আনহা এক ঝটকায় ওনার হাত ছাড়িয়ে বলে, ‘কোথাও যাব না আমি।’

কথাটা শোনা মাত্রই লোকটা সজোরে আনহার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। মুহূর্তে ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে। বলে, ‘বেয়াদব মেয়ে বড়দের মুখে মুখে কথা। স্বার্থপর কোথাকার? যে মা তোর জন্য এতকিছু করল তার জন্য তুই কিছু করবি না। তুই যাবি না তোর ঘার যাবে।’

ওনার কথা শেষ করার আগেই একটা মিনি মাইক্রো এসে সেখানে দাঁড়াল। আনহার ভয়ে পিছিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু পারল না। অন্তি আনহাকে ছাড়াতে গেলে তিনি অন্তিকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। জোর করে আনহাকে গাড়িতে তুলতে যায়। কিন্তু পারে না। কিছু একটায় আটকে যায়। দেখে একটা কুঁচকে ছেলে আনহার হাত ধরেছে। রেগে যান তিনি। রাগে ফেটে পড়ে বলে, ‘এই ছ্যামরা তুই একটা মাইয়ার হাত ধরস কোন সাহসে?’

‘আপনি যে সাহসে ধরেছেন। ঠিক সেই সাহসে।’

কথাটা শুনে তিনি ভ্রু কুঁচকে তাকায় আনহার দিকে। বলে, ‘বাবাহ্ নাগর নাকি তোর? এর জন্যই চইলা আসছিলি। নাকি নতুন ধরসোস?’

ওনার মুখের ভাষায় আনহা চোখ বন্ধ করে ইহানের থেকে নিজের হাতটা ছাড়াতে চাইল। এবার ইহান রেগে গেল। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ভদ্র ভাবে কথা বলুন।’

‘আরে রাক তোর ভদ্র। যে মাইয়া জামাই থুইয়া ভাইগা আসে তার জন্য আবার ভদ্রতা।’

কথাটা শুনেই ইহানের হাতটা আগলা হয়ে এল। পালিয়ে আসছে মানে? বিস্ফোরিত চোখে তাকায় আনহার দিকে৷ আনহা মাথা নিচু করে আছে। বোঝা যাচ্ছে না লোকটি সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে। অন্তি নিজেও শকড। এসবের মানে বুঝতে পারছে না।

‘এই সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার কাছে নাই। আনহা চল।’

কিন্তু বাধ সাধে ইহান। বলে, ‘আপনার কোনো কথা আমি বিশ্বাস করি না।’

‘আমার দায় ঠেকে নাই তোমারে বিশ্বাস করানোর। আমি ওরে নিতে আইসি। ওরে নিয়া যামু।’

তৎক্ষনাৎ আনহার হাত লোকটির হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় ইহান। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, ‘এসব কী হচ্ছে আনহা? কী বলছে লোকটি? আপনার কী বিয়ে?’

‘লও ঠ্যালা। নাগরে কেউ জামাইয়ের কথা কয়। আর ঐ আনহা তোর মনে কী ভয় ডর বলতে কিছু নাই। এই পোলার কথা যদি সে জানতে পারে কী করব তরে? তুই ছাড় তোর মায়ের কথা ভাব? এতদিন তো আমার জন্য কিছু বলে নাই। কিন্তু এবার?’

তৎক্ষনাৎ ইহান লোকটার কলার চেপে ধরে। কিন্তু আনহা বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে ইহানকে সরিয়ে নেয়। অবাক হয় ইহান। রাগে জর্জরিত হয়ে বলে, ‘কী বলছে লোকটা? আর এই লোকটার জন্য আপনি…’

‘এই লোকটা আমার মামা ইহান।’

বিস্মিত হয় ইহান। ‘আপনার মামা?’

‘হ্যাঁ, ওনি আমার মামা আরমান। আর মামা আমাকে নিতে এসেছ তো। ঠিক আছে আমি যাব। কিন্তু প্লিজ আর কোনো সিনক্রিয়েট করো না।’

চমকায় ইহান। ‘আনহা আপনি এই লোকটার সাথে যাবেন?’

‘হ্যাঁ, আমাকে যেতে হবে।’

‘কিন্তু…’

ইহানকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আনহা গাড়িতে উঠে বসে। আরমান বিদঘুটে হাসি দিয়ে নিজেও গাড়িতে ওঠে। চলে যায় আনহাকে নিয়ে। আনহা যাওয়ার আগে পিছন ফিরে একবার ইহানকে দেখে। মনে মনে বলে, ‘সরি ইহান। সত্যিটা তোকে আমি বলতে পারব না। এখন আমি না গেলে আমাকে বাঁচানোর জন্য তোর বিপদও হবে। ভালো থাকিস তুই। আমার আর শেষ রক্ষা হলো না। ভয়ঙ্কর অতীতটা আমার পিছু ছাড়ল না। আমি কারও সাথে অন্যায় করিনি। সব মিথ্যে। সব।

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইহান। কী করবে বা বলবে কিছুই বোধগম্য হলো না। সত্যি কি আনহার বিয়ে হয়েছে? নাকি সব মিথ্যে? তাহলে আনহা চুপচাপ চলে কেন গেল?

.
.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]