হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৭৮ এবং শেষ পর্ব

0
747

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(শেষ পর্ব ১ম অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২১৩)
সাবরিনা সামনে তাকাতেই সাগরিকার পিছনে সায়মনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওনার ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। সাবরিনা উচ্চস্বরে সায়মনকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“এই বুড়িকে কা*বু করার ব্যবস্থা করো সায়মন!”

সাবরিনার মুখে এরূপ কথা শুনে সাগরিকা কিছুটা ভ*র*কে গিয়ে পিছন ফিরতে নিলে সেইসময় সায়মন তার ডান হাত মু*ষ্ঠি*ব*দ্ধ করে সাগরিকার ঘাড়ের উপর স্ব*জোড়ে আ*ঘা*ত করেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে সায়মনের মতো শ*ক্ত-পো*ক্ত পুরুষের করা আ*ঘা*তে সাগরিকা মূহূর্তের মধ্যেই কা*বু হয়ে মুখ দিয়ে ‘আহহহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে মেঝের উপর লু*টি*য়ে পড়েন। সেইসময় রায়হানুল রুমের ভিতর থেকে দরজায় জোড়ে জোড়ে কড়া নাড়তে শুরু করেন আর বললেন……

—“সায়মন…সাবরিনা…মায়ের শরীরে একটা ফুলের টো*কা দেওয়ার চেষ্টা করিস না তোরা! জীবনে অনেক অনেক পা*প করেছিস তোরা। মা-কে ছেড়ে দে তোরা। বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছেন মা। তোদের এই রূপ তিনি এমনিতেও সহ্য করতে পারবেন না। আল্লাহর ভ*য় কর একটু হলেও। তিনি তোদের অনেক ছাড় দিয়েছেন এরপর আর ছেড়ে দিবেন না। তোদের সকল পা*প কর্মের ফল তোরা ভো*গ করবি। আল্লাহ কুশলকে উছিলা হিসাবে খুব তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। তোদের প*ত*ন ঘটবে।মাকে ছেড়ে দে…মা…মা…!”

রায়হানুলের কথাগুলো শোনামাত্র সায়মন আর সাবরিনা দু’জনেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। দু’জনে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে রয়। সম্পূর্ণ হিসাবে গ*ন্ড*গো*ল লাগছে এখন ওদের। হুট করেই রায়হানুল সুস্থ হয়ে উঠবে, আর কুশলকে চিনতে পারবে এটা কি করে সম্ভব! সাবরিনা দ্রুত পায়ে সায়মনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন…..

—“সবকিছুর ভীরে এই রায়হানুলের বিষয়টা তো আমাদের মাথা থেকেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো। তারমানে রায়হানুল অনেক আগেই সুস্থ হয়ে উঠেছে। আর অতীতের সব ঘটনা সম্পর্কে কুশলকেও অবগত করেছে।”

সায়মন ভাবুক স্বরে বললেন…
—“আমারও তেমন-ই মনে হচ্ছে। শুধু যে কুশল ই পুরো বিষয় সম্পর্কে অবগত আছে তা আমার মনে হয় না। আমার তো মনে হচ্ছে ওরা সকলেই সম্পূর্ণ সত্য জানে। হুট করেই রাজবীরের এতো নৃ*শং*স মৃ*ত্যু হওয়া, পাশাপাশি আমাদের ছেলের মৃ*ত্যু হওয়া, কামিনীর এমন ক*রু*ণ পরিস্থিতি হওয়া! পরপর এতো সব দূ*র্ঘ*ট*না ঘ*টা তো কোনো নরমাল বিষয় না। আমি তুমি খুব ভালো করেই জানি আমরা বা আমাদের ছেলে কনক রাজবীরকে মা*রি নি। এতো যাবৎ কেও শ*ত্রু*তা থেকে আমাদের দিকে আঙুল উঠানোর পর্যন্ত সাহস করতে পারলো না। হুট করেই তাদের ভিতর এতো সাহসের সৃষ্টি হওয়াও যে অসম্ভব তা বুঝতেও আর বাকি নেই। তারমানে এই সবকিছুই কুশলের তৈরি কারসাজির একেকটা অংশ। আহহহ….কুশল….আহহহ! গোপনে গোপনে আমাদের হাঁটু ভে*ঙে দেওয়ার জন্য কাজ করেছে ওরা। রিজভী-কামিনীর সাথে আমাদের শ*ত্রু*তা তৈরি করাও কুশলেরই কূ*ট*নৈতিক পরিকল্পনার-ই একটা অংশ। পুরো পরিকল্পনা এমন ভাবে সাজিয়েছে ওরা যে রিজভী-কামিনী আমাদেরই ওর ছেলের হ*ত্যা*কারী ভেবে আমাদের ছেলেকে খু*ন করে প্রতি*শোধ নিয়েছে।”

সায়মনের বলা কথাগুলো বুঝতে পেরে সাবরিনা বললেন…

—“জীবনে অনেক বড় ভু*ল করেছি আমরা। ২০ বছর আগের ঐ কাল দিনে রুবিনার সাথে সাথে এই রায়হনুল আর ওদের দুই ছেলে-মেয়ে কুশল, সন্ধ্যাকেও মে*রে ফেলা উচিত ছিলো আমাদের। দুধ-কলা দিয়ে এতোকাল ধরে কা*ল সা*প পুষে এসেছি আমরা৷ সেদিন যদি একেবারেই ওদের সবার চ্যপ্টার ক্লোজ করে দিতাম তাহলে আজ আমাদের একমাত্র ছেলে কনককে হা*রা*নো*র য*ন্ত্র*ণায় এভাবে দ*গ্ধ হতে হতো না।”

—“এবার আর কোনো ভু*ল হবে না সাবরিনা। প্রথমত এই রিজভী আর কামিনীর চ্যপ্টার ক্লোজ করতে হবে আমাদের। তারপর রায়হানুল আর সাগরিকাকে টোপ বানিয়ে কুশল সহ ওর সাথে সঙ্গ দেওয়া প্রতিটি প্রাণীকে ফাঁ*দে ফেলবো। তারপর একে একে এদের সবার চ্য*প্টা*র ক্লোজ করেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবো আমি।”

সাবরিনা কামিনীর রুমের দরজার সামনে অ*চেতন, আ*হ*ত হওয়া র*ক্তা*ক্ত রিজভীর দিকে তাকিয়ে বললেন….

—“একে মা*র*বে কি করে তুমি!”

সায়মন ও রিজভীর দিকে তাকিয়ে বললেন….

—“আমাদের ছেলেকে হয়তো জীবন্ত অবস্থাতেই আ*গু*নে পু*ড়ি*য়ে মে*রে ফেলেছে এই নি*মো*খা*রা*ম টা। তাই একেও সেই একই য*ন্ত্র*ণা*র আ*গুনে দ*গ্ধ করে তিলে তিলে মা*র*বো আমি৷ তবেই আমাদের ছেলে আত্মা শান্তি লাভ করবে।”

সাবরিনা সায়মনের কথায় সায় প্রদান করে বললেন…

—“ঠিক বলেছো তুমি। তুমি এই নি*মো*খা*রা*ম-কে টেনে-হিঁ*চ*ড়ে ছাদে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ততোক্ষণে আমি ঐ কামিনীর চ্যপ্টার ক্লোজ করার ব্যবস্থা করছি।”

সাবরিনার কথানুযায়ী সায়মন রিজভীর কাছে এসে ওর দু’হাত ধরে টানতে টানতে ছাদের রাস্তার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সাবরিনা দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে এসে গ্যসের চুলার উপর একটা বড় সাইজের কড়াই বসিয়ে দিয়ে গ্যস চালু করে পাশ থেকে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলটা হাতে নিয়ে কড়াইয়ের ভিতর তেল ঢালতে ঢালতে বললেন….

—“ওদের সব পরিকল্পনা এখন চোখের সামনে স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। মাসের শেষ হওয়ায় সার্ভেন্টরাও ২দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গিয়েছে সকালেই। আর আজই ওরা সব একসাথে বাহিরে গিয়ে আমাদের কাজ আরো সহজ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র আমাদের বউমা আর আমাদের নাতী ব্যতিত একজনকেও জীবিত ছাড়বো না আজ। যদি এমন করতে না পারি তাহলে আমার নামও সাবরিনা চৌধুরী নয়।”

রায়হানুল এখনও পর্যন্ত দরজায় জোড়ে জোড়ে কড়া নেড়ে যাচ্ছেন আর সায়মন, সাবরিনাকে নিজেদের কাজ সম্পর্কে সাবধান করার কথা বলছেন। সাবরিনা রান্নাঘর থেকে রায়হানুলের প্রতিটি কথা স্পষ্ট শুনতে পারছে। সাবরিনা বি*র*ক্তি*র স্বরে বললেন….

—“ইচ্ছে তো করছে এই বুড়ো ভা*মে*র শরীরে কড়াই ভর্তি ফু*ট*ন্ত তেলগুলো ঢেলে দিয়ে এর মুখ আজীবনের জন্য বন্ধ করে দেই। চি*ৎ*কার করে করে আমার-ই মাথা ধরিয়ে দিলো। উফফহহ…!”

কিছুসময় পর চুলার আঁচ বন্ধ করে দিয়ে সাবরিনা নুচনির সাহায্যে দু’হাত দিয়ে কড়াইয়ের দু’পাশ ধরে অতি সাবধানে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে কামিনীর রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কামিনীর রুমের রাস্তার মুখোমুখি রায়হানুলের রুমের পাশেই সাগরিকা এখনও সেন্স*লে*স হয়ে পড়ে আছেন। পরক্ষণেই সাবরিনা সাগরিকার পায়ে লা*থি প্রয়োগ করে নিজের রাস্তা পরিষ্কার করে আবারও সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কামিনীর রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখে কামিনীর ঘুম ভে*ঙে গিয়েছে আর তিনি আবারও পূর্বের ন্যয় উ*ন্মা*দ*না শুরু করেছেন নিজেকে বাঁধন থেকে মুক্তি করার জন্য। সাবরিনা ফুটন্ত তেলের কড়াইটা মেঝের উপর রেখে ব্য*জ্ঞ*তার স্বরে মুখ দিয়ে ‘চ্চুচ চুচ চুচ চুচ চুহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে কামিনীকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“আহহহ…কি ক*রু*ণ দশা-ই না হয়েছে তোর ছো-ছো-ছোটওও। বিশ্বাস কর তোর এই ক*রু*ণ হাল দেখে তোর প্রতি আমার বিন্দুমাত্রও মায়া কাজ করছে না। বরং মজাই লাগছে। কিন্তু হাজার হলেও আমি মানুষ তো। একসময় তোর আর তোর স্বামীর সাথে আমাদের কতো খাতির ছিলো। যেকোনো ধরণের পা*প কর্ম আমরা মিলেমিশে করেছি। তাই আমার ভিতরে মনুষত্ব্য বোধ টা আজ গা চাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে। তুই আর তোর স্বামী দু’জনে মিলে যে আমাদের কলিজার টুকরো ছেলে কনককে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পু*ড়ি*য়ে অত্যন্ত য*ন্ত্র*ণা দিয়ে মে*রে ফেলেছিস সেই কথা তোর স্বামী নিজ মুখে স্বীকার করেছে। তাই আমার স্বামী একটু পর তোর স্বামীকেও জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পু*ড়ি*য়ে তিলে তিলে য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়ে মে*রে ফেলবে বলে ঠিক করেছে। নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামীকে এতো ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে মা*রা যেতে তো তুই দেখতে পারবি না। সহ্যই করতে পারবি না। হয়তো স্ট্রো*ক ও করে বসতে পারিস। তখন তোর মৃ*ত্যু*টা তো আর এতোটা য*ন্ত্র*ণা দায়ক হবে না। তাই আমি ঠিক করেছি তোর এই কা*টা-ছে*লা ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত শরীরের উপর ফুটন্ত তেল ঢেলে দিবো। নিজের চোখের সামনে তোকে নি*র্ম*ম ভাবে মা*রা যেতে দেখার মতো শা*ন্তি যে কতোটা হবে তা এইমূহূর্তে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আর কথায় আছে শুভ কাজে বেশি দেড়ি করা উচিত না। তুই রেডি তো নিজের ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য!”

সাবরিনার মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে কামিনীর উ*ন্মা*দ*না*র পরিমাণ আগের থেকে আরো কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। দড়ি দিয়ে বাঁ*ধা দুই হাত-পায়ের জায়গাগুলো ফে*টে অনরগল র*ক্ত বের হয়ে শুরু করেছে। কামিনী চি*ৎ*কার করে বললেন…..

—“আমায় ছেড়ে দাও…মে*রো না আমায়। আমার স্বামীকে মে*রো না তোমরা। ছেড়ে দাও আমায়। বাঁধন মুক্ত করো আমায়। রিজভী….রিজভী কোথায় তুমি? বাড়িতে কি কেও নেই। সার্ভেন্টরা সব কোথায়? আরে কেও তো আমায় বাঁচাও।”

রায়হানুল ডাকতে ডাকতে দরজায় অনরগল কড়া নাড়তে নাড়তে ক্লান্ত হয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে মেঝের উপর বসে পড়েন। তিনি স্পষ্ট কামিনীর চিৎ*কার করে বলা প্রতিটি শব্দ শুনতে পারছেন। ভিষণ খা*রা*প লাগা কাজ করছে তার ভিতর। রায়হানুল শব্দ করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন…..

—“সামান্য সম্পত্তি বেশি পাওয়ার লো*ভে কা*বু হয়ে গিয়ে যেই ভাই-ভাবীকে সজ্ঞ দিয়ে ২০ আগে তুমি আর তোমার স্বামী আমার প্রিয়তমা নিষ্পাপ স্ত্রীকে অত্যন্ত ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা দিয়ে মে*রে ফেলেছিলে আজ তাদের হাতেই তোমাদের জীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। কথায় আছে অতি লো*ভে তাঁ*তি ন*ষ্ট হয়ে যায়। তোমাদের শেষ পরিণতি যতোই ক*রু*ণ হোক না কেন এতে আমার বিন্দুমাত্র আফ*সোস নেই। আমার সব খা*রাপ লাগা, চিন্তা, ভ*য় শুধুমাত্র আমার মা, ছেলে-মেয়েদের, বউমাদের, জামাইয়ের আর আমার অনাগত নাতী/নাতনীর জন্য। ইয়া আল্লাহ আজ আপনি আর নি*ষ্ঠু*র হইয়েন না। প্রতিটি শ*য়*তা*ন কে তাদের কর্ম অনুযায়ী ক*রু*ণ ফল ভোগ করার ব্যবস্থা করুন। আমার প্রিয় মানুষগুলোকে সব রকম বি*প*দ-আ*পদ থেকে রক্ষা করুন।”

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(শেষ পর্ব ২য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২১৪)
সাবরিনা স্বশব্দে হাসতে হাসতে বললেন….
—“আহারে ছোটওওও…একটা কথা কি জানিস! তোকে আর তোর স্বামীকে এতো তাড়াতাড়ি মৃ*ত্যু*র কোলে ঢ*লে পড়তে দিতাম না বরং কুশল আর ওর সঙ্গীদের আ*ক্র*ম*ণ থেকেও তোদের দু’জনকে আমরা বাঁচিয়ে নিতাম যদি না তোরা আমাদের একমাত্র ছেলে, আমার কলিজার টুকরো কনককে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পু*ড়ি*য়ে মে*রে না ফেলতি! এখন তো তোদের কর্মফল তোদের জন্য ভো*গ করা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম*রা*র আগে কিছু চমক দায়ক সত্য কথা জেনে নে। আমাদের দু’জনের সম্মানিয় ভাসুর মশাই রায়হানুল চৌধুরী সাহেব কো*মা থেকে ফিরে এসেছেন। কবে ফিরেছেন সে কথা তো জানি না। তবে আমি আর সায়মন আঁচ করতেছি অনেক আগেই হয়তো তিনি কো*মা থেকে ফিরে এসেছেন আর ২০ বছর আগে আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের কথা তিনি পাই টু পাই কুশলকে জানিয়ে দিয়েছেন। হুট করে রাজবীরের এমন ক*রু*ণ মৃ*ত্যু হওয়ার পিছনে আমি, সায়মন বা আমাদের ছেলে আমরা কেও ই দায়ী ছিলাম না। তখনও পর্যন্ত তোদের সাথে আমাদের পথচলা এক ছিলো। পরিকল্পনা ও একই ছিলো। আমাদের টার্গেট কুশল ছিলো। আর সেই কুশল-ই আমাদের সবার চোখে ধুলো দিয়ে শান্ত মস্তিষ্কে থেকে তোদের ছেলেকে মে*রে ফেলেছে। আর বিষয়টা এমন ভাবে সাজিয়েছে এবং তোদের সামনেও এমন ভাবে তুলে ধরেছিলো যে তোরা কুশলের ফাঁ*দে খুব সহজেই পা দিয়ে ওদের কাজ আরো সহজ করে দিয়েছিলি আমাদের ছেলেকে মে*রে ফেলেছিলি। যদি তোরা এমনটা না করে আমাদের সাথে পুরো বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতি তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এতোটা হাতের বাহিরে চলে যেতো না। তোর আজ এই ক*রু*ণ অবস্থার পিছনেও যে কুশলের-ই হাত আছে সেটাও আমি শিওরিটি দিয়েই বলতে পারছি। তুই বা তোর স্বামী আমাদের কোনো কাজেই আসবি না। তোর আর তোর স্বামীর চ্যপ্টার ক্লোজ করে ভাসুর মশাই আর শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মাকে টো*প বানিয়ে কুশল সহ ওর সকল সঙ্গীদের ফাঁ*দে ফেলে সব গুলোর নসিবে ক*রু*ণ মৃ*ত্যু লিখে দিবো।”

সাবরিনার মুখে এরূপ কথাগুলো শোনার পর কামিনী যেনো দিক-বেদিক হা*রা হয়ে যায়। এই মূহূর্তে ওনার কি বলা উচিত বা কি করা উচিত তা বুঝে উঠার পূর্বেই সাবরিনা মেঝের উপর থেকে ফুটন্ত তেলের কড়াইটা দু’হাত দিয়ে উঠিয়ে কামিনীর মাথার উপর ধরে ঢেলে দিয়ে শুরু করে। আকস্মিক সাবরিনার এরূপ কাজে কামিনী ম*র*ণ য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করতে শুরু করেন। পূর্ব থেকেই ছিঁ*লে, ফে*টে যাওয়া চামড়ার উপর এখন ফুটন্ত তেল পড়ায় জায়গায় জায়গায় থেকে চামড়া ও গোস্ত খ*সে খ*সে মেঝের উপর পড়ছে। সাবরিনা কামিনীর শরীরের উপর সম্পূর্ণ তেল ঢেলে দিয়ে ওনার থেকে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওনার উপর দৃষ্টি স্থির করে স্বশব্দে হাসতে শুরু করে। কামিনীর সম্পূর্ণ মুখের গোস্ত খ*সে পড়েছে। কামিনীর মাথার উপর থেকে তেল গুলো সব ঢালার কারণে ও মাথায় একটা চুল ও অবশিষ্ট না থাকার কারণে ওনার মাথার উপর আ*স্ত*রণ গুলো ফে*টে গিয়ে মগজ পর্যন্ত গলে গলে ওনার শরীর বেয়ে পড়তে শুরু করেছে। শরীরে থাকা জামা-পাজামা গরম আঁ*চ পেয়ে জড়ো জড়ো হয়ে গিয়েছে। ঘাড় ও হাত-পায়ের র*গে*র জোড়া পর্যন্ত ছিঁ*ড়ে ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে। কামিনী মূহূর্তের মধ্যেই পুরোপুরি ভাবে মৃ*ত্যু*র কোলে ঢলে পড়ে যায়।

সাবরিনা কামিনীর কক্ষ থেকে বেড়িয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। সেদিকে যেতে যেতে তিনি এখন আর রায়হানুলের কোনো আওয়াজ শুনতে পান না।

রায়হানুল দু’হাতে নিজের চোখের দু’কর্ণিশে জমে থাকা অশ্রু কণাগুলো মুছে দরজার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুখে মলিনতার ছাপ স্পষ্ট রেখে বিছানার দিকে অগ্রসর হন। বিছানায় এসে বসে পাশ থেকে ফোনটা আবারও হাতে নিয়ে মেসেজ এপপ এ ঢুকতেই দেখেন কুশলের নাম্বারে সেন্ড করা সকল মেসেজের পাশে ডেলিভারি লেখা শো করেছে। রায়হানুল শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললেন…..

—“ইয়া আল্লাহ..আপনি আপনার রহমত বর্ষণ করতে শুরু করেছেন। আপনার লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি মাবুদ।”

এই বলে রায়হানুল তার রুমের ভিতরেই থাকা ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে এসে টেবিলের উপর থেকে টুপি নিয়ে মাথায় পড়ে চেয়ারের উপর থেকে জায়নামাজটি হাতে নিয়ে কিবলামুখি করে বিছিয়ে নফল নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে পড়েন।

সাবরিনা গেইট পেরিয়ে ছাদে পা রাখতেই দেখলেন তার থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছাদের কর্ণিশে রাখা সিমেন্টের খুঁটির সাথে দঁড়ি দিয়ে অত্যন্ত মজবুত ভাবে রিজভীকে বেঁ*ধে ফেলেছে সায়মন। সাবরিনা দ্রুত পায়ে সায়মনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন…..

—“কামিনীকে তার প্রাপ্য শা*স্তি দিয়েছি আমি। শরীরের উপর ৫লি. ফুটন্ত তেল ঢে*লে দিয়ে এতোটা এতোটা য*ন্ত্র*ণা দিয়ে মে*রে ফেলেছি ওকে এখন ওর লা*শ দেখলে তোমার মন তৃপ্তিতে জুড়িয়ে যাবে।”

সাবরিনার এরূপ কথা শুনে সায়মনের ঠোঁটে বাঁ*কা হাসির রেখা স্পষ্ট হয়। সাবরিনা আবারও বললেন…..

—“এই নি*মো*খা*রা*ম কে হুঁ*সে আনার ব্যবস্থা করো। তারপর একে সর্বপ্রথম এর বউয়ের মৃ*ত্যু সম্পর্কে অবগত করতে হবে তারপর এদের করা বো*কা*মী সম্পর্কেও অবগত করতে হবে। সব সত্য জানার পর যখন এ এর কর্মের জন্য ক*ষ্ট পাবে, আ*প*সোস করবে, তখন-ই একে মে*রে আসল মজা পাওয়া যাবে বুঝলে!”

সায়মন সাবরিনার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন….
—“সবসময়ের মতোই তোমার বুদ্ধির ও পরিকল্পনার কোনো তুলনা নেই বউ।”

অতঃপর সাবরিনার কথানুযায়ী সায়মন ছাদের থাকা হাজার লি. এর পানির ট্যংকির পাশে সেট করা পানির নল থেকে এক বালতি পানি নিয়ে রিজভীর সামনে এসে দাঁড়াতেই সাবরিনা বললেন…..

—“পানি দিও না। পানির বদলে পেট্রোল বা কেরোসিন দাও। পানি দিলে শরীর ভিজে যাবে তখন ওর শরীরে সহজে আগুন ধরতে চাইবে না।”

সায়মন পানির বালতিটা সাইডে রেখে আগে থেকে নিয়ে আসা কেরোসিন ও পেট্রোলের ৫লি. ট্যংকি দুটো থেকে অর্ধেক করে করে অন্য একটা বালতিতে ঢেলে নেয়। অতঃপর আবারও রিজভীর সামনে দাঁড়িয়ে ওনার মুখের উপর সম্পূর্ণ বালতিতে থাকা সব কেরোসিন ও পেট্রোল গুলো ছুঁ*ড়ে মা*রে। সেগুলোর প্রভাবে রিজভীর গালে ও বুকে হালকা ভাবে গেঁ*থে যাওয়া কাঁচের টুকরো গুলো ওর শরীরের ভিতর আরো গভীর ভাবে গেঁথে গেঁথে যায়। পরমূহূর্তেই রিজভীর সেন্স ফিরতেই তিনি ‘আহহহহহ আহহহহহ’ বলে য*ন্ত্র*ণা*য় কুঁ*কি*য়ে উঠেন। মাথায় গভীর ভাবে আ*ঘা*ত পাওয়ায় খুব শক্তি প্রয়োগ করে দু’চোখ মেলে তাকাতে পারছেন না রিজভী। মাথা পুরোপুরি ভাবে ঝিম ধরে আছে তার। রিজভী হালকা ভাবে চোখ মেলে ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়মন সাবরিনার কথানুযায়ী রিজভীকে সম্পূর্ণ সত্য ও তাঁদের করা বো*কা*মী সম্পর্কে অবগত করে। রিজভী শুধু মুখ দিয়ে ‘আহহহ আহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করছে। বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার মতো শক্তি ওনার শরীরে অবশিষ্ট নেই। পরক্ষণেই সায়মন নিজের পকেট থেকে দেশলাই কাঠির বক্সটা বের করে সেখান থেকে একটা কাঠি নিয়ে বক্সের সাথে ঘঁষা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তা রিজভীর দিকে ছুঁ*ড়ে মে*রে দ্রুততার সাথে ওনারা দু’জনেই পিছনের দিকে পিছিয়ে আসে। একটাই কাঠিই যেনো যথেষ্ট হলো রিজভীর সর্ব শরীরকে আ*গু*ন দ্বারা গ্রা*স করানোর জন্য। রিজভী খুব বেশি সময় ছ*ট-ফ*ট করতে পারে না। মূহূর্তের মধ্যেই ওর প্রাণ পাখি ওর শরীর ত্য*গ করে অজানায় উড়ে যায়। আগুনের প্রভাবে রিজভীকে যে দঁড়ি গুলো দিয়ে বেঁ*ধে ছিলো সায়মন তা পুরোপুরি ভাবে ছিঁ*ড়ে যায়। রিজভীর শরীর ধ*প করে ছাদের মেঝেতে পড়ে যায়। দা*উ-দা*উ করে আগুণ জ্বলছে। প*ট-প*ট করে শব্দ হচ্ছে। ছ্য*চ*ড়া-পো*ড়া কি সে বি*শ্রী গ*ন্ধ। সাবরিনা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে আলতো ভাবে নাক-মুখ ঢেকে ফেলে। সায়মন ও তার পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের নাক-মুখ ঢেকে বললো….

—“নিচে চলো এখন। বড় ভাই আর মাকে নিজেদের কা*বু তে আনতে হবে। তারপর এখান থেকে বেড়িয়ে নারায়নগঞ্জের সেই ফ্যক্টোরিতে যেতে হবে যেখানে কুশল আমাদের ছেলেকে পুড়িয়ে মে*রে ফেলেছিলো। ওদের সবার চ্য*প্টা*র ও ঐ জায়গাতেই ক্লোজ করবো আমরা। আমার কিছু বিশ্বস্ত গার্ডসদের ডেকে নিয়েছি আমি সেখানে। এখন এই পুরো বিষয়টাকে হ্যন্ডেল করতে সুবিধা হবে।”

—“হুম চলো…!”

অতঃপর ওনারা দু’জনেই ছাদ থেকে নেমে নিচে আসে। নিচে এসে রায়হানুলের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ায়। পাশেই এখনও সাগরিকা সেন্স লে*স হয়ে পরে আছে। সাবরিনা সাগরিকার দিকে তাকিয়ে বললেন….

—“এই সামান্য আ*ঘা*তে*ই কি বুড়ি ট*প*কে গেলো নাকি গো!”

সায়মন বললেন….
—“যাও চেক করে দেখো নিঃশ্বাস পড়ছে কি না। আমি বড় ভাইয়ার রুমের এই তালটা ভা*ঙা*র ব্যবস্থা করছি।”

সাবরিনা সাগরিকার মাথার পাশে বসে তার নাকের উপর হাত রাখে নিঃশ্বাস খুবই ধীর গতিতে পড়ছে। সাবরিনা বললেন….

—“ট*প*কে যান নি দেখছি এখনও। তবে খুব বেশি সময় বাকি নেই আপনার ট*প*কা*নোর শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মা।”

কিয়ৎ ক্ষণ কর সায়মন দরজার যে অংশে তালা ঝুলানো আছে সেই লোহার অংশ টুকু গলানোর জন্য একটা গ্যস জাতীয় কিছু নিয়ে আসে। যার তাপেই লোহাটি গলে যেতে সক্ষম হবে। সায়মন লোহাটির উপর গ্যসের তাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। বেশকিছুসময়ের চেষ্টার পর তিনি লোহাটি গলিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। সঙ্গে সঙ্গে তালাটি লক অবস্থাতেই খুলে মেঝের উপর পড়ে যায়। অতঃপর সাবরিনা দরজার পাশে ছোট কাভার্ডের উপর থেকে কাঁচের ছোট সাইজের ফুলদানিটা উঠিয়ে সায়মনকে দেয়। সায়মন ফুলদানী হাতে নিয়ে দরজায় হাত দিয়ে হালকা চাপ প্রয়োগ করতেই দরজা খুলে যায়। সায়মন আর সাবরিনা রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখেন রায়হানুল নামাজ পড়তেছেন। সায়মন বাঁ*কা হেসে বললেন….

—“নামাজে দাঁড়িয়ে তো আমাদের কাজ সহজ করে দিয়েছেন বড় ভাইজান। এতো সহজে আপনাকে আজ আবারও কা*বু করে ফেলতে পারবো ভাবি নি৷”

—“কথা বলে সময় ন*ষ্ট না করে তাড়াতাড়ি এনাকে সেন্স লে*স করার ব্যবস্থা করো। এনাদের দু’জনকে নিয়ে এখান থেকে জলদী বেড়িয়ে যেতে হবে আমাদের।”

সায়মন মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ সূচক জবাব দিয়ে রায়হানুলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রায়হানুল যখন সেজদা দেওয়ার জন্য নিচু হতে নিলেন সেইসময় সায়মন তার হাতে থাকা ফুলদানীটা দিয়ে কিছুটা জোড়েই রায়হানুলের ঘাড়ের উপর বা*রি দেন। রায়হানুল সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে ‘আল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করে মেঝের উপর লু*টি*য়ে পড়ে দু’চোখ বুঝে ফেলেন। অতঃপর সায়মন আর সাবরিনা দু’জনে মিলে রায়হানুল ও সাগরিকাকে টেনে-হিঁ*চ*ড়ে বাড়ির বাহিরে দাঁড় করানো নিজেদের গাড়ির কাছে আনেন। পরক্ষণেই গাড়ির পিছনের দরজা খুলে সিটে উপর সাগরিকাকে শুইয়ে দেন আর গাড়ির ডিকিতে রায়হানুলকে শুইয়ে দেন। অতঃপর সায়মন ড্রাইভিং সিটে বসেন আর সাবরিনা তার পাশের সিটে। সায়মন গাড়ি স্টার্ট করে চৌধুরী মেনশন এর মেইন গেইট দিয়ে বেড়িয়ে যান।

ওনারা বেড়িয়ে যাওয়ার মিনেট ১০ পরই কুশল ও গাড়ি নিয়ে মেইন গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেন। পরক্ষণেই গাড়ি থামাতেই ওরা সকলেই দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নামে। সেইসময় পো*ড়া গন্ধ নাকে এসে বাজতেই ওদের সকলের বুকের ভিতরটা যেনো ধ*ক করে উঠে। সন্ধ্যা মাথা তুলে ছাদের দিকে লক্ষ্য করতেই ধোয়া উরতে দেখতে পেয়ে কিছুটা ভী*ত হয়ে বললো….

—“ঐতো ধোঁয়া উড়ছে। ছাদেই কিছু পুড়ছে মনে হয়। তাই পোঁড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”

সন্ধ্যার এরূপ কথা শুনে সকলেই ছাদের দিকে লক্ষ্য করে আর ওরাও সেই ধোঁয়া উড়তে দেখতে পায়। পরক্ষণেই ওরা সকলেই দৌড়ের সাথে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িং প্লেসে এসে দাঁড়াতেই রায়হানুলের রুমের দরজা খোলা ও দরজার থেকে কিছুটা দূরে মেঝের উপর র*ক্ত লেগে থাকতে দেখতে পায় ওরা সকলেই। তরুনিমা সামনে তাকাতেই কামিনীর রুমের দরজার সামনেও অনেকটুকু জায়গা জুড়ে র*ক্ত আর ভা*ঙা কাঁচের টুকরো পড়ে থাকতে দেখতে পায়। কুশল দ্রুত পায়ে রায়হানুলের রুমের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে পুরো রুম ফাঁকা। কুশল একহাত দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ মুখ মুছে নিয়ে ধ*প করে বিছানার উপর বসে পড়ে। সেইসময় তরুনিমাও রায়হানুলের রুমের ভিতর প্রবেশ করে রুমের চারপাশ চোখ বুলিয়ে নিয়ে কুশলের পাশে গিয়ে বসে বললো…..

—“কুশল আপনি ঠিক আছেন!”

—“আমরা দেড়ি করে ফেলেছি তরুনিমা। ওরা বাবা আর দাদীমাকে নিয়ে চলে গিয়েছে।”

—“আপনি ভে*ঙে পড়বেন না কুশল। আমাদের সবার শক্তি আপনি। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। শ*ত্রু*রা এবার আর জিততে পারবে না। শ*ত্রু*দের প*ত*ন এবার নিশ্চয়ই হবে।”

নিলাদ্র বললেন…..
—“আমি ছাদ থেকে আসতেছি।”

এই বলে নিলাদ্র রায়হানুলের রুম থেকে বের হয়। সন্ধ্যা রায়হানুলের দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। নিলাদ্র কামিনীর রুমের দিকে এগোয়। কামিনীর রুমের দরজার সামনে জমাট বেঁধে থাকা র*ক্ত গুলো দেখতে পেয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করতেই কামিনীর চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় চামড়া ও গোস্ত গ*লে পড়ে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স অবস্থা দেখে নিলাদ্র চোখ-মুখে কুঁ*চ*কে ফেলে। পরমুহূর্তেই রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে। কিয়ৎক্ষণ পর ছাদে প্রবেশ করতেই নিলাদ্র ছাদের একপাশের কর্ণিশে কারোর পু*ড়*তে থাকা লা*শ দেখতে পায়। কামিনীর এরূপ পরিণতি দেখে নিলাদ্র আন্দাজ করে এই লাশ হয়তো রিজভীর আর এই কাজ গুলো সায়মন আর সাবরিনা ছাড়া ৩য় কারোর হতে পারে না। অতঃপর নিলাদ্র ছাদ থেকে নেমে নিচে আসে। কুশল, তরুনিমা আর সন্ধ্যা ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে। নিলাদ্র ওদের কাছে এসে কামিনী আর আন্দাজ করা রিজভীর লা*শে*র কথা ওদের জানায়। নিলাদ্র চি*ন্তি*ত স্বরে বললো…..

—“বাবা আর দাদীমা ঐ অ*মানুষ গুলোর ক*ব্জা*য় ব*ন্দী। তাদের জীবন ঝুঁ*কি*র মাঝে। এখন আমাদের করণীয় কি কুশল!”

কুশল দু’হাতের নিজের মাথার দু’পাশ চেপে ধরে দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে রেখেছে। নিলাদ্রের কথার কোনো প্রতিত্তুর সে করছে না। সন্ধ্যা নিরবে নিজের দু’চোখ দিয়ে নোনাজল বি*স*র্জ*ন করছে। কি হবে, পরিস্থিতি কোথায় থেকে কেমন মোড় নিবে তা ভেবেই কূল-কিনারা পাচ্ছে না সে। নিলাদ্র একহাতে সন্ধ্যাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

বেশ কিছুসময় পর………
টি-টেবিলের উপর রাখা কুশল এর ফোনটা বেজে উঠে। সকলেই ফোনের দিকে লক্ষ্য করে। স্ক্রিণে জ্বল জ্বল করে ভাসছে সায়মনের নাম ও নাম্বার। কুশল শান্ত স্বরে বললো….

—“এই কলের অপেক্ষাতেই ছিলাম এতোসময়।”

কুশল ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করে। ফোনের ওপাশ থেকে সায়মনের বি*দ*ঘু*টে হাসির উচ্চশব্দ ভেসে আসছে। কুশল সহ বাকিরা শান্ত, নিশ্চুপ। সায়মন ওর হাসি থামিয়ে বললেন….

—“রওনাক আজমাইন কুশল চৌধুরীর এতো সুন্দর গোছালো ও নিঁ*খু*ত খেলা এভাবে ভে*স্তে গেলো ইসসস কি আফসোস কি আফসোস।”

নিলাদ্র কিছু বলতে নিলে কুশল হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয়। সায়মন আবারও বললো….

—“আগামীকাল সকালে প্রথম আলো থেকে শুরু করে নামি-দামি খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে চৌধুরী পরিবারের ২জন সিনিয়র সদস্য মি.রায়হানুল চৌধুরী ও তার মা মিসেস.সাগরিকা চৌধুরী সহ মি.রওনাক আজমাইন কুশল চৌধুরী, তার স্ত্রী মিসেস. তরুনিমা চৌধুরী, ননদ মিসেস. সন্ধ্যা তালুকদার, নন্দাই মি. সৌহার্দ্য তালুকদারের নৃ*শং*স মৃ*ত্যু ঘটেছে। মি. সায়মন চৌধুরী ও মিসেস. সাবরিনা চৌধুরী তাঁদের সকলের আ*ক*স্মি*ক মৃ*ত্যু*র কারণে গভীর ভাবে শো*কা*হত। তাঁদের সকলের এই আকস্মিক মৃ*ত্যু*র আসল কারণ কি তা জানা যায় নি।”

এই বলে সায়মন আবারও বি*দ*ঘু*টে স্বরে হাসতে শুরু করলেন। কুশল এর রাগে কপালের র*গ গুলো হালকা ফুলে উঠেছে। বাম হাত বেশ শক্ত ভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে সে। নিলাদ্র অনেক ক*ষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। কুশল নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে শান্ত স্বরে বললো…

—“খবর কাগজের হেডলাইন হতে কোথায় আসতে হবে সেটা তো বলুন মি.সায়মন চৌধুরী।”

কুশলের শান্ত স্বরে এরূপ কথা শুনে সায়মনের হাসি মুহূর্তের মধ্যেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কুশলের কন্ঠ এখনও বরাবরের মতো শান্ত দেখে সায়মনের মনে চি*ন্তা ও ভ*য় কাজ করতে শুরু করে। সায়মন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো…..

—“চালাকি করার চেষ্টা করো না কুশল। তোমার বাবা আর দাদীমা যে আমার জি*ম্মা*য় সেটা তো বুঝতে পেরেছোই। তোমার একটা হু*শি*য়া*রী কিন্তু তাদের মৃ*ত্যু*র ঘ*ন্টি বাজিয়ে দিবে।”

কুশল আবারও শান্ত কন্ঠে বললো….
—“ঠিকানাটা বলুন।”

সায়মন আর কথা না বাড়িয়ে বলে দেয় তারা নারায়ণগঞ্জের ফ্যক্টোরিতে আছে। কুশল তা শোনামাত্র নিজ থেকে কল কে*টে দেয়। কুশলের এরূপ কাজে সায়মনের চেহারায় হ*য়*রা*নীর ছাপ জ্বল জ্বল করে ফুটে উঠে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(শেষ পর্ব ৩য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২১৫)
নারায়নগঞ্জের ফ্যক্টোরির যেই রুম থেকে কনকের ঝ*ল*সে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স লা*শ উদ্ধার করেছিলো সায়মন সেই রুমের মাঝ বরাবর মেঝের উপর পাশাপাশি দুটো খুঁটির সাথে রায়হানুল আর সাগরিকাকে বেঁ*ধে রাখার ব্যবস্থা করেছে সায়মন। দু’জনের গলায় দু’টো দড়িও বাঁ*ধা আছে। ফাঁ*সি*র আ*সা*মী দের মতো। ওদের সামনা-সামনি কিছুটা দূরে চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সাবরিনা। সেইসময় সায়মন রাগ নিয়ে সাবরিনার পাশে চেয়ার টেনে ধ*প করে বসে পড়েন। সাবরিনা এক ধ্যনে রায়হানুল আর সাগরিকাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আকস্মিক সায়মনের এমন কাজে তিনি কিছুটা ভ*র*কে যান। সাবরিনা সায়মনের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন….

—“কি গো কি হলো আবার তোমার? এতো হাইপার হয়ে গেলে কেনো মূহূর্তের ভিতরেই?”

সায়মন রাগে ফোঁ*স ফোঁ*স করতে করতে বললেন….
—“কুশলের মতি-গতি আমার কাছে মোটেও সুবিধার ঠেকছে না। ওর জন্মদাতা পিতা, দাদীমা আমাদের জি*ম্মা*য় এটা জানার পরেও ও শান্ত থাকতে পারে কি কে এই বিষয়টা আমাকে হ*য়*রা*ন করে তুলছে।”

সাবরিনা হাসতে হাসতে বললেন…..
—“এই সামান্য কারণে এতো হাইপার হয়ে উঠবে তুমি! আজব ব্যপার। কুশল যে সবসময়ই শান্ত থেকে শান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহন করে এটা আমরা বহু বছর আগে থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু এবার ওর চিন্তা-ভাবনা কোনো কাজে দিবে না। আগে ওদের সবাইকে এখানে আসতে তো দাও। তারপর ওর চোখের সামনে ওর স্ত্রীকে ক*রু*ণ ভাবে মা*র*বো। যেভাবে ২০ বছর আগে ওর বাবার সামনে ওর মাকে মে*রে ফেলেছিলাম ঠিক সেভাবেই। পুনরাবৃত্তি বলতে তো একটা বিষয় আছে। নিজের স্ত্রীকে নিজের চোখের সামনে মারা যেতে দেখার পর যখন একে একে নিজের বোন, বোন জামাই, বাবা, দাদীকেও ম*র*তে দেখবে তখন ওর সব দম আপনা-আপনি ফুস হয়ে যাবে। তখন আমাদের প্রতি*শো*ধ নেওয়ার বিষয়টা আরো মজাদার হয়ে উঠবে। সবশেষে কুশলকে মে*রে ফেলে পুরো চ্যপ্টার ই ক্লোজ করে ফেলবো।”

সাবরিনার এরূপ কথায় সায়মনের রাগ অনেকটা পড়ে যায়।

(২১৬)
চৌধুরী মেনশনে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে কুশল ওর দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে হাতে থাকা ফোনটা হাত দিয়ে ঘুরাতে থাকে। কান্না করে বর্তমানে সন্ধ্যার অবস্থা নাজেহাল। নিলাদ্রের পাশাপাশি তরুনিমাও সন্ধ্যাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিয়ৎক্ষণ পর কুশল ওর ফোন থেকে কাওকে একটা লম্বা মেসেজ সেন্ড করে। মেসেজটি সঙ্গে সঙ্গেই ডেলিভারি হয়ে যায়। পরক্ষণেই ওপাশ থেকে আসা রিপ্লাই টা দেখা মাত্র কুশলের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা স্পষ্ট হয়। কুশল ওদের উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“এবার আমাদের উঠতে হবে। সন্ধ্যা আর তরুনিমা তোমরা এখানে নিরাপদ নও। ফ্যক্টোরিতে যাওয়ার পথে তোমাদের দু’জনকে তাহিরদের বাসায় নামিয়ে দিবো। তোমরা দু’জন পুরো সময় ওখানেই থাকবে। ওখান থেকে ভুলেও বেড়োনোর কথা চিন্তা করবে না। আমি আর নিলাদ্র শুধু ফ্যক্টোরিতে যাবো। আর পুরো বিষয়টা আমরাই হ্য*ন্ডে*ল করে নিতে পারবো।”

কুশলের মুখে এরূপ কথা শুনে তরুনিমা দ্রুততার স্বরে বললো…
—“না এ হয় না। আপনি আর নিলাদ্র ভাইয়া একলা ঐ শ*য়*তা*ন*দের কাছে যেতে পারেন না। আমি আর সন্ধ্যাও যাবো আপনাদের সাথে।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“পাগলামো বন্ধ করো তরুনিমা। এমনিতেই বাবা আর দাদীমাকে ওনারা নিজেদের জি*ম্মা*য় ব*ন্দী করে রেখেছেন। এর ভিতর তোমাদের দু’জনকে ওখানে নিয়ে যাওয়া মানে চরম বো*কা*মী করা হবে। শ*ত্রু*পক্ষদের সামনে আমাদের হাঁটু ভে*ঙে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না তখন। তোমাদের জীবন ঝুঁ*কি*র মাঝে ফেলতে পারি না আমরা।”

তরুনিমা কুশলের একহাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে বললো….
—“আপনার মাঝেই আমার জীবন বিদ্যমান আছে কুশল। আমাদের ওখানে রেখে আপনারা চলে গেলে আপনাদের সাথে যে আমাদের জীবন ও নিয়ে চলে যাবেন। শুধু আমাদের শরীরটাই ওখানে পরে থাকবে। জীবনসঙ্গী তো তাঁকেই বলে যে তার সঙ্গীর ভালো-খারাপ সবধরণের পরিস্থিতিতে তার পাশে ছায়ার মতো হয়ে থাকবে। নিয়ে যান না আমাদের আপনাদের সাথে। বাঁচলে একসাথে বাঁচবো আর মা*রা যাওয়া যদি নিয়তিতে আল্লাহ তায়ালা লিখে রাখেন তবে একসাথেই মা*রা যাবো। তবুও একে-অপরের থেকে আলাদা হয়ে জীবন্ত লা*শে*র মতো বাঁচতে পারবো না।”

কুশল শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“ঠিক আছে যাবে তোমরা আমাদের সাথে।”

সন্ধ্যার কান্না এখন পুরোপুরি ভাবে থেমে গিয়েছে। অতঃপর ওরা চারজন চৌধুরী মেনশন থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে নারায়নগঞ্জের সেই ফ্যক্টোরিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

বেশ কিছুসময় ধরে ড্রাইভিং এর পর অবশেষে কুশল ওদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফ্যক্টোরিতে পৌঁছায়। ফ্যক্টোরির সামনে গাড়ি ব্রেক কষা মাত্র ৬-৭ জন গার্ডস বন্দুক হাতে গাড়ির কাছে এগিয়ে আসে। কুশল ওদের সকলকে অভয় দিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“শান্ত ভাবে গাড়ি থেকে নামো সবাই।”

কুশলের কথানুযায়ী একে একে ওরা তিনজন গাড়ি থেকে নামা মাত্র গার্ডসরা সঙ্গে সঙ্গে ওদের দু’হাত কমোরের উপর নিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁ*ধে ফেলে। কুশল গাড়ি থেকে নামলে একই কাজ ওর সাথেও করে গার্ডসরা। কুশল নিজের চারপাশ একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। ফ্যক্টোরির আনাচে কানাচে বন্দুক হাতে আরো ১০ জন এর বেশি গার্ডসরা দাঁড়িয়ে আছে। কুশলের ঠোঁটে শুকনো হাসির হালকা রেখা বিদ্যমান। গার্ডসরা ওদের ৪জনকে নিয়ে ফ্যক্টোরির মূল দরজা দিয়ে ভিতরে সেই রুমের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে যেখানে রায়হানুল, সাগরিকা বেঁ*ধে রেখেছে সায়মন, সাবরিনা।

(২১৭)
ফ্যক্টোরি থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভিতরে বসে আছে তাহির আর হুমায়রা। হুমায়রার পরণে গ্রামীণ, সহজ-সরল মেয়েদের মতো অত্যন্ত সস্তা মূল্যের বেশ পুরোনো, কয়েক জায়গায় তালি লাগানো বাঙালী পদ্ধতিতে সবুজ পাড়ের লাল শাড়ি রয়েছে। আর তাহিরের শরীরে একটা পুরোনো লুঙ্গী আর তালি লাগানো ফ্যসফ্যসে রংয়ের ফতুয়া পড়া রয়েছে। ওদের দু’জনের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ ফুটিয়ে তোলার জন্য জায়গায় জায়গায় খুব হালকা করে কালি লাগানো রয়েছে। যেনো ওদের প্রথম বার দেখার পর যে কেও বিশ্বাস করে নেয় যে ওরা অত্যন্ত গরীব। গাড়ির স্টেয়ারিং পাশে থাকা খালি জায়গায় ল্যপটপ বসিয়ে রেখেছে তাহির। আর ওদের দু’জনের দৃষ্টি ল্যপটপের পর্দার উপরেই স্থির হয়ে আছে৷ যেখানে ওরা কুশলদের গাড়ি থেকে নামার পর থেকে ফ্যক্টোরির ভিতরে যাওয়ার পর পর্যন্ত পুরো বিষয়টা দেখতে পেয়েছে। তাহির আর হুমায়রার উপস্থিতি, হুমায়রার এমন বেশ ধারণ কুশলের পরিকল্পনারই একটা অংশ মাত্র। হুমায়রা রাগী স্বরে বললো….

—“এই শ*য়*তা*ন, অ*মানুষ গুলোর নি*ষ্ঠু*র থেকে নি*ষ্ঠু*র পরিণতি নিজ চোখে দেখার জন্য আমার ধৈর্য আর কুলাচ্ছে না তাহির। ইচ্ছে করছে এক্ষুণি দু’টো রি*ভ*ল*ভার দু’হাতে নিয়ে ওখানে গিয়ে রি*ভ*ল*ভারে থাকা সব গুলো গু*লি ব্যয় করে ওদের শরীরে এতো গুলো এতো গুলো ফু*টো তৈরি করে দেই যেনো ওদের অবস্থা দেখে যেকোনো সাধারণ মানুষের ভ*য়ে শরীর শি*উ*রে উঠে।”

তাহির শান্ত স্বরে বললো…
—“এমন ইচ্ছে তো আমারও করছে হিমু। কিন্তু এইমূহূর্তে আমরা এমন কিছুই করতে পারবো না। কুশল ভাই আর ওর পরিবারের সবাই এখন শ*য়*তা*ন দের জি*ম্মা*য় ব*ন্দী আছে। আর পুরো ফ্যক্টোরি জুড়ে অগনিত গার্ডসরা ব*ন্দু*ক হাতে পাহাড়া দিচ্ছে। আমরা মাত্র দু’জন এভাবে গিয়ে ওদের সাথে ল*ড়া*ইয়ে পেরে উঠবো না। তাই কুশল ভাই আমাদের যেমনটা বলে দিয়েছে আমরা ঠিক তেমনটাই করবো। এই কঠিন সময়ে শারিরীক শক্তির থেকে আমাদের বুদ্ধির শক্তিকে কাজে লাগানো জরুরী। অপেক্ষা করো আর কিছু সময়। কুশল ভাইয়ের ইশারা পাওয়া মাত্র আমরা আমাদের কাজ শুরু করবো।”

তাহিরের কথার ভাঁজ বুঝতে পেরে হুমায়রা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো….

—“ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই সফল হবো।”

—“ইনশাআল্লাহ।”

(২১৮)
গার্ডসরা কুশল, তরু, সন্ধ্যা আর নিলাদ্রকে নিয়ে সায়মন, সাবরিনার থেকে কিছুটা দূরে এনে দাঁড় করায়। ওদের দেখামাত্র সায়মন আর সাবরিনা চেয়ার ছেড়ে উঠে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা নিজের সামনে বাবা আর দাদীমা বে*হু*শ ও বাঁধা অবস্থায় দেখে অশান্ত হয়ে উঠে বললো…..

—“অ*মানুষের দল…অ*মানুষ সায়মন…নিজের জন্মদায়িনী বৃদ্ধা মাকে পর্যন্ত নিজের অ*মানবিক আচারণ থেকে বাদ রাখিস নি তুই। তোর মতো অ*মানুষকে ২০ বছর ধরে বাবা বলে ডেকে এসেছিলাম আমি। নিজের প্রতি চরম ঘৃ*ণা কাজ করছে আমার। থু*তু ফেলি তোদের মুখের উপর। থুহহহহহহহহহ…!”

সন্ধ্যার থু*তু সরাসরি সায়মনের মুখের উপর গিয়ে পড়ে। সায়মন সঙ্গে সঙ্গে চরম বি*র*ক্তি*তে নিজের চোখ-মুখ কুঁ*চ*কে ফেলেন। সন্ধ্যার এরূপ কাজে সাবরিনা যেনো রাগে ফেঁ*টে পড়েন। হনহনিয়ে সন্ধ্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বজোরে ওর ডান গালে একবার থা*প্প*ড় প্রয়োগ করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মেঝের উপর ছিটকে পড়ে গিয়ে ব্য*থা*য় মুখ দিয়ে ‘আহহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে আ*র্ত*না*দ করে উঠে। নিলাদ্র নিজের রাগকে সংযত রাখতে ব্য*র্থ হয়। দ্রুত কদমে ওদের দিকে অগ্রসর হতে নিলে দু’জন গার্ডস এসে নিলাদ্রকে আটকে নিয়ে ওর দুই হাঁটুর পিছন পার্শে পা দিয়ে লা*থি প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে নিলাদ্র হাঁটু ভে*ঙে সেখানেই মেঝের উপর বসে পরে। কুশল মেঝের উপর দৃষ্টি স্থির রেখে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে মাত্র। প্রতি*বাদ করার সঠিক সময় এখনও আসে নি। তরুনিমা কুশলের দিকে তাকিয়ে থেকে নিরবে দু’চোখ দিয়ে নোনাজল বি*স*র্জ*ন দিচ্ছে। কুশল এখনও কেনো নিরব হয়ে আছে, কেনোই বা কিছু করছে না তা সে বুঝে উঠতে পারছে না। নিলাদ্র চি*ল্লি*য়ে বললো…..

—“তোদের দু’জনের প*ত*ন আজ নি*শ্চি*ত ঘটবে। জা*হা*ন্না*মে*র লে*লি*হান শিখায় জ্ব*লে-পু*ড়ে খাঁ*ক হয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে তৈরি করে নে তোরা অ*মানুষের দল।”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথা শুনে সায়মন রাগ নিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওর নাক বরাবর পর পর দু’টো ঘু*ষি প্রয়োগ করে হি*স*হি*সি*য়ে বললেন…

—“কুশল আর সন্ধ্যার জন্মদায়িনী মাকে আমরা মে*রে ফেলেছিলাম তাই আমাদের উপর ওদের ক্ষো*ভ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তোর এতো ক্ষো*ভ কিসের আমাদের প্রতি! দু’দিন হলো তো এদের সাথে পরিচয় হয়েছে তোর। তারপর সন্ধ্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আ*ব*দ্ধ হলি। বউয়ের মায়ের ক*রু*ণ মৃ*ত্যু*র জন্যই কি তোর ভিতর এই ক্ষো*ভে*র সৃষ্টি হয়েছে?”

নিলাদ্রের নাক থেকে র*ক্ত ঝরতে শুরু করেছে। নিলাদ্র ওর হাতের বামপার্শে থু*তু ফেলে হাসতে হাসতে বললো….

—“ওদের সাথে আমার দু’দিনের পরিচয় নয় মি. সায়মন চৌধুরী। নতুন রূপে নতুন পরিচয়ে তোদের সামনে হাজির হয়েছি জন্য তোরা আমাকে চিনতে পারিস নি।”

নিলাদ্রের এরূপ কথায় সায়মন আর সাবরিনা বেশ অবাক হয়ে একে-অপরের দিকে চায়। সাবরিনা চি*ল্লি*য়ে প্রশ্ন করলেন….

—“কে তুই?”

—“নিলাদ্র…নিলাদ্র আহমেদ। যে তোদের সব সত্য জেনে যাওয়ায় কয়েকমাস আগে তাঁকে মে*রে ফেলতে চেয়েছিলি। এ*ক্সি*ডে*ন্ট করিয়ে যার চেহারা থে*ত*লে দিয়েছিলি তোরা। কথায় আছে রাখে আল্লাহ মা*রে কে। আজ এই বাক্যটার অর্থ খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছিস নিশ্চয়ই তোরা! আমার আল্লাহ আমায় বাঁচিয়েছেন। উছিলা হিসেবে সেদিন সঠিক সময় কুশলকে তিনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর তারই বদৌলতে আজ আমি জীবিত আছি, নতুন চেহারা, নতুন পরিচয় নিয়ে।”

সাবরিনা আর সায়মন ইতিমধ্যেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন যেনো।

(২১৯)
তাহির আর হুমায়রা এক দৃষ্টিতে ল্যপটপ স্ক্রিণে তাকিয়ে আছে। সেইসময় কুশল শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে। এতেই তাহির আর হুমায়রা কুশলের ইশারা বুঝতে পারে। তাহির বললো….

—“সঠিক সময় হয়ে গিয়েছে হিমু। এবার আমাদের কাজ শুরু করতে হবে।”

হুমায়রা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দেয়। পরক্ষণেই ওরা দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পিছন দরজা খুলে সেখান থেকে দু’টো আলাদা আলাদা বেতের তৈরি মাঝারি আকারের ঝুড়ি বের করে। একটা ঝুড়িতে ছোট সাইজের বোতলে জুস রাখা আছে আরেকটা ঝুড়িতে কলা, পেয়ারা, কূল বড়ই থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ফলমূল রাখা আছে। হুমায়রা জুসের ঝুড়িটা নিজের কমোরের সাথে ঠেকিয়ে নেয়। আর তাহির ফলের ঝুড়িটা নিজের মাথায় তুলে নেয়। অতঃপর ওরা দু’জনেই একসাথে ফ্যক্টোরির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ফ্যক্টোরির একেবারে কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে হুমায়রা ‘এই গরমে শীতল পানীয় দ্বারা গলা ভিজাতে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে তৈরি ফলের রস খাবেন কে’
বলে হাঁক ছাড়ে। আর তাহির ‘এছাড়াও ভে*জা*ল মুক্ত টাটকা ফলমূল খাবেন কে’ বলে হাঁক ছাড়তে শুরু করে।

ফ্যক্টোরির বাহিরের অংশে পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকা গার্ডসরা ওদের হাঁক শুনে একে-অপরের সাথে আলোচনা করতে শুরু করে। প্রথম গার্ডস বাকি গার্ডসদের উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“দুপুর পেরিয়ে বিকেল হতে চললো। খোলা আকাশের নিচে লম্বা সময় ধরে একস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভিষণ পানি তেষ্টা ও ক্ষুধা বোধ হচ্ছে আমার। তোমাদের কারোর কি তেমন বোধ হচ্ছে না ভাইয়েরা!”

দ্বিতীয় গার্ডস প্রথম গার্ডসের কথায় সায় প্রদান করে বললেন…
—“হ্যা ভাই, ক্ষুধা ও পানি তেষ্টা তো সমান তালে আমারও পেয়েছে। এখানে আসার পথে তো দেখলাম এখান থেকে অনেকটা দূরে বিভিন্ন খাবার ও পানীয় এর দোকান রয়েছে। কিন্তু এই মূহূর্তে আমরা যে কাজে আছি সেই কাজ ফেলে তো সেখানে খাওয়ার জন্য যেতে পারি না। বস আমাদের খা*ম খেয়ালী পনার কথা জানতে পারলে জীবিত রাখবেন না কাওকে।”

তৃতীয় গার্ডস বললেন….
—“ঠিক বলেছো তুমি। অনেক সময় ধরেই গেইটের বাহির থেকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার কন্ঠ ভেসে আসছে শুনতে পারছি। তারা ফলের রস ও বিভিন্ন ফলমূল বিক্রির কথা বলছেন।”

চতুর্থ গার্ডস বললেন….
—“হুম আমিও শুনতে পারছি। একটা কাজ করলে ভালো হয় না!”

পন্ঞ্চম গার্ডস বললেন…..
—“কি কাজ করার কথা বলছো তুমি ভাই!”

চতুর্থ গার্ডস বললেন….
—“আমরা ঐ পুরুষ আর মহিলার থেকে তাদের আনা যাবতীয় জুস ও ফলমূল নিয়ে এখানে থেকেই আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি।”

প্রথম গার্ডস বললেন…
—“হুম..আমিও তেমনটাই চিন্তা করছিলাম। এতে আমাদের সবার ক্ষুধাও নিবারণ হবে আর দায়িত্বতেও কোনো খা*ম খেয়ালী পনা খুঁজে পাবেন না বস।”

তৃতীয় গার্ডস বললেন….
—“কিন্তু আমাদের কাছে তো কোনো টাকা-পয়সা নেই। ওদের থেকে খাবার আর পানীয় আমরা নিবো কি করে ভাই?”

চতুর্থ গার্ডস বাঁকা হেসে বললেন….
—“আমাদের সবার হাতে এতো এতো ব*ন্দু*ক গুলো আছে কি করতে! এগুলা দেখিয়ে ভ*য় দেখালেই সুর সুর করে সব খাবার-পানীয় আমাদের হাতে তুলে দিবে ওরা। গরীবদের নিজেদের জীবনের প্রতি মায়া প্রচুর। বুঝলে ভাই!”

চতুর্থ গার্ডস এর এরূপ কথায় উচিত সকলেই স্বশব্দে হেসে উঠেন। পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে দু’জন গার্ডস গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাহির আর হুমায়রাকে ডাকে। কিছুটা দূরে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলো তাহির আর হুমায়রা দু’জনেই। গার্ডসের ডাক শোনামাত্র ওদের দু’জনের ঠোঁটে হাসির রেখা স্পষ্ট হয়। নিজেদের সামলে নিয়ে ওরা দু’জনে গেইটের কাছে ঐ গার্ডস দু’জনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। তাহির বোকা বোকা স্বরে বললো….

—“জ্বে সাহেব…আমাগো ডাক দিলেন আপনে! ফল আর জুস কি কিনা লইবেন আমাগো থাইকা!”

গার্ডসরা একে-অপরের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বললেন….
—“হ্যা নিবো। এখানে কয়জনের জন্য জুস আর ফল রাখা আছে শুনি!”

হুমায়রা হাসিমুখে বোকা বোকা স্বরে বললো…
—“সাহেব এক্কেরে ২০ খান শিশি আছে এইখানে। অনায়াসেই ২০ জন মানুষ আপনারা তৃপ্তির সাথে খাইতে পারবেন।”

—“আচ্ছা..এই সবগুলোই লাগবে আমাদের। এখানে ভিতরে মাটির উপর রাখো ঝুড়ি দু’টো।”

তাহির আর হুমায়রা হাসিমুখে গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে মাটির উপর ঝুড়ি দু’টো রেখে দিয়ে আবারও গেইটের বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে পরে। একজন গার্ডস ওদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন….

—“কি হলো এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা এখানে? যাও এখান থেকে।”

তাহির বললো…..
—“সাহেব আমাগো জিনিস লইলেন কিন্তু টাকা তো দিলেন না।”

তাহিরের এরূপ কথায় গার্ডসরা স্বশব্দে হেসে উঠলেন। পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে নিজেদের হাতে থাকা ব*ন্দু*ক গুলো ওদের দু’জনের দিকে তাঁক করে বললেন….

—“এই যে ইয়া বড় বড় ব*ন্দু*ক গুলো এখন তোমাদের দিকে তাঁক করা অবস্থায় দেখতে পারছো এগুলো থেকে মাত্র দু’টো বু*লে*ট বের করবো আমরা। সেই দু’টো বু*লে*ট-ই যথেষ্ট হবে তোমাদের দু’জনের নিঃশ্বাস আজীবনের জন্য বন্ধ করে ফেলতে। তাই যদি জীবনের প্রতি বিন্দুমাত্র মায়া-দয়া থাকে তোমাদের তাহলে এই মূহূর্তে দু’জনেই স্থান ত্যগ করো।”

তাহির আর হুমায়রা নিজেদের চেহারায় মি*থ্যে ভ*য় আর অসহায়ত্বের ছাপ ফুটিয়ে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যগ করে আবারও নিজেদের গাড়িতে এসে বসে পরে। হুমায়রা গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে হাসতে হাসতে বললো….

—“খা খা..সবগুলো জন্মের খাওয়া খেয়ে নে। খুব বেশি সময় লাগবে না তোদের সবার শরীর পুরোপুরি ভাবে নি*স্তে*জ হয়ে পড়তে।”

হুমায়রার এরূপ কথায় তাহির ও হাসি দেয়।

গার্ডসরা সবাই একে একে জুস ও ফল নিয়ে খেতে শুরু করে। বেছে যাওয়া আরো জুসের বোতল ও ফলমূলগুলো ফ্যক্টোরির ভিতরে পাহাড়ায় নিয়োজিত থাকা গার্ডসদের পাঠিয়ে দেয় ওরা। তারাও তৃপ্তির সাথে জুস ও ফল খেতে শুরু করে।

(২২০)
সায়মন ওদের থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ার টেনে সেখানে বসতে বসতে বললেন….

—“মানতে হবে, কৈ মাছের প্রাণ তোর। কতো আগে থেকেই কি নিখুঁত পরিকল্পনানুযায়ী চলেছিস তোরা সবাই। আমরা তো রিতীমত অবাক না হয়ে পারছি না। তবে ভালোই করলি আজ নিজের আসল পরিচয়টা আমাদের জানিয়ে দিয়ে। নয়তো তোকে মা*র*তে আমাদের কিন্ঞ্চিত পরিমাণ হলেও মায়া কাজ করতো। এখন আর সেসব কিছুই কাজ করবে না।”

সাবরিনা সায়মনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“শুভ কাজে কেনো এতো দেড়ি করছো তুমি বলো তো! যতো তাড়াতাড়ি এদের সব কয়টার চ্যপ্টার ক্লোজ করে এখান থেকে বেড়োনো যায় ততোই ভালো হয়। এখানে থাকার কারণে আমার ভিষণ দম বন্ধ কর অনুভূতি হচ্ছে। এখানেই তো ওরা আমাদের ছেলেকে জ্বা*লি*য়ে মে*রে ফেলেছিলো। তাই আমি এখানে আর বেশি সময় থাকতে চাই না।”

—“হুম সেই একই অনুভূতি তো আমারও হচ্ছে। তাই আর কোনো দেড়ি নয়। গার্ডস মি. রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশলের প্রিয়তমা স্ত্রীকে রেখে বাকি তিনজনকে আলাদা আলাদা তিনটে খুঁ*টিতে বেঁ*ধে ফেলার ব্যবস্থা করো দ্রুত।”

নিলাদ্র, সন্ধ্যা আর তরুনিমা কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ঘাড় বাঁকিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় শান্ত থাকতে বলে। কুশলের ইশারা ওরা বুঝতে পেরে ওর কথা মেনে নিয়ে শান্ত থাকে। গার্ডসরা সায়মনের কথানুযায়ী কুশল, নিলাদ্র আর সন্ধ্যাকে ধরে রায়হানুল আর সাগরিকার হাতের বাম পার্শের সারিতে আলাদা আলাদা তিনটে খুঁটির সাথে বাঁধতে শুরু করে। সায়মন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে রায়হানুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পাশে রাখা পানির ছোট বালতিটা উঠিয়ে তার মুখের উপর ছুঁ*ড়ে মা*রে। পানির ঝ*ট*কা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রায়হানুলের সেন্স ফিরে আসে। একই কাজ সায়মন নিজের মা সাগরিকার সাথেও করেন। আর এতে তারও সেন্স ফিরে আসে। দু’জনেই চোখ মেলে তাকায়। সায়মন ওদের সামনে থেকে সরে আসতে আসতে বললেন….

—“২০ বছর আগে রায়হানুল চৌধুরী তার প্রিয়তমা নি*র্দোষ স্ত্রীকে আমাদের হাতে ক*রু*ণ ভাবে মা*রা যেতে দেখেছিলো আর হৃদয় খা*ন খা*ন হওয়া য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করেছিলো। আজ আবারও সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আজ রায়হানুল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে একই ভাবে ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা স*হ্য করে মা*রা যেতে দেখবে। আজও কেও কিছুই করতে পারবে না। বাবার মতো ছেলেও আজ সেই একই য*ন্ত্র*ণা*র আগুনে কেবল দ*গ্ধ হবে।”

এই বলে সায়মন তরুনিমার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সায়মনের পিছন থেকে রায়হানুল চি*ৎ*কার করে বললেন….

—“খবরদার সায়মন…আমার বউমার শরীরে একটা ফুলের টোকাও লাগাবি তুই। ছেড়ে আমার সন্তাদের।”

তরুনিমা কুশলের দিকে ছলছল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এখনও কুশল কি করে এতো শান্ত আছে! কি করে?

#চলবে ইনশাআল্লাহ………

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(শেষ পর্ব শেষ অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২২১)
১৫মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাহির আর হুমায়রা আবারও গাড়ি থেকে নেমে সাবধানে ফ্যক্টোরির গেইটের আড়ালে দাঁড়িয়ে ভিতর উঁকি দেয়। ইতিমধ্যেই সেখানে ডিউটিতে নিয়জিত থাকা সকল গার্ডসরা যারা তাহিরদের দেওয়া ফল ও জুস খেয়েছিলো তারা সবাই মাটির উপর লু*টি*য়ে পরে আছে। তাহির হুমায়রার দিকে ফিরে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো….

—“আমাদের কাজ সাকসেস হয়েছে।”

এই বলে তাহির ওর পকেট থেকে ফোন বের করে কুশলের কথানুযায়ী কনককে কল করে। কিয়ৎক্ষণ পরই কনক দুই গাড়ি ভর্তি করে ২০ জন গার্ডস নিয়ে ওদের সামনে উপস্থিত হয়। কনক আর গার্ডসরা সবাই সাবধানে নিঃশব্দে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। ওদের সকলের হাতেই একটা একটা করে ব*ন্দু*ক রাখা আছে। কোনো রকম বাড়তি খু*ন-খা*রা*বা যেনো না হয় তাই সায়মনের ঠিক করা গার্ডদের অচেতন করার পরিকল্পনাই করেছিলো কুশল। কনক তাহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—“আমাদের এক্ষুণি ভিতরে যাওয়া উচিত। ভিতরে যদি আরো দুই-চার জন গার্ডস সচেতন থাকেন নিঃশব্দে তাদের ও অচেতন করে ফেলতে হবে। কুশল আর বাকিরা ঠিক কি পরিস্থিতিতে আছে আল্লাহ মালুম।”

তাহির ও কনকের কথায় সায় প্রদান করে। অতঃপর গার্ডসদের নিয়ে ওরা তিনজন ফ্যক্টোরির গেইট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ফ্যক্টোরির মূল দরজার সামনে থেকে শুরু করে যতো ভিতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ওরা ততোই এমন জায়গায় জায়গায় অচেতন অবস্থায় গার্ডসদের পড়ে থাকতে দেখতে পারছে।

(২২২)
সায়মন তরুনিমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“ঠিক আছে তোমার কথাই মানছি আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মি.রায়হানুল চৌধুরী। আমি তোমার ছেলের বউয়ের শরীরে একটা ফুলের টোকাও লাগাবো না। কিন্তু আমার স্ত্রী তো আমার বদলে সেই কাজটা করতে পারে। অবশ্য ২০ বছর আগে তোমার স্ত্রীকে তো কামিনী মে*রে ফেলেছিলো। আজ যেহেতু কামিনী আমাদের সামনে উপস্থিত নেই তাই এই শুভ কাজ টা আমার স্ত্রী মিসেস.সাবরিনা চৌধুরী-ই সম্পন্ন করুক। এতে নিশ্চয়ই তোমার কোনো আপত্তি নেই!”

রায়হানুল বললেন….
—“না…দূরে সরে দ্বারা তোরা আমার বউমার থেকে। আমার সন্তানদের থেকে দূরে সরে দ্বারা তোরা।”

সায়মন রায়হানুলের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“এটা কিন্তু একদমই ঠিক নাই বড় ভাইয়া। একবার বললে আমি যেনো তোমার বউমার কোনো ক্ষ*তি না করি। এখন তোমার কথা মেনে নিয়ে সেই দায়িত্ব যখন আমার স্ত্রীর উপর দিলাম তাতেও তোমার স*ম*স্যা হচ্ছে। এতো স*ম*স্যা হলে চলে কি করে বলো তো?”

সাগরিকা কান্না মিশ্রিত স্বরে বললেন….
—“সায়মন…তোকে তো আমি জন্ম দিয়েছি বাপ। তোর জন্মদায়িনী এই মায়ের কসম লাগে ছেড়ে দে তুই আমার নাতী, নাত-বউ, নাত জামাইকে। ওদের মা*রি*স না। আল্লাহ তোদের এতো অ*ন্যা*য় এতো পা*প যে সহ্য করবেন না। গ*জ*ব নাজিল হবে তোদের উপর। এমন করিস না বাপ।”

সায়মন রাগী স্বরে বললেন…
—“এই বুড়ি চুপ..একদম চুপ। কোনো কথা বলবি না তুই। আজ এই যে এতো কিছু হচ্ছে এই সবকিছুর জন্য দায়ী তুই আর তোর স্বামী বুঝলি! একই বংশের একই মায়ের পেটের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও যে ১ম সন্তান সে পাবে সম্পত্তির সিংহ ভাগ অংশ। আর তার পর যারা জন্ম নিবে তারা পাবে কোনো রকমে বেছে যাওয়া অংশ টুকু। এমন ফা*ল*তু নিয়ম তৈরি করার সময় তোদের চিন্তা হয় নি ভবিষ্যতে এক ভাই-আরেক ভাইয়ের জানে দু*শ*ম*ন হয়ে উঠতে পারে! আল্লাহর ভয় দেখাচ্ছিস যে এখন। তোরা ইসলামের নিয়ম মেনেছিস কতোটুকু হ্যা? ইসলামের কোন স্থানে এমন নিয়ম লেখা ছিলো শুনি! আসছে কসম আর আল্লাহর ভ*য় দেখাতে।”

সায়মনের এরূপ কথার কোনো প্রতিত্তুর নেই সাগরিকার কাছে। সায়মন যে ভু*ল কিছু বলে নি এখন তা তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু এই নিয়ম যে তিনি বা তার স্বামী তৈরি করেন নি। বংশের পূর্ব পুরুষ যারা ছিলেন তারাই এই নিয়ম তৈরি করে রেখে গিয়েছেন। আর এরপর থেকে বাকিরা শুধু নিয়মটাকে অনুসরণ করে চলে এসেছেন।

রায়হানুল বললেন……
—“সম্পত্তির জন্যই তো তোদের এতো কিছু করা তাই না! নিয়ে নে তুই আর তোর স্ত্রী চৌধুরী বংশের যাবতীয় সয়-সম্পত্তি। আমি বা আমার সন্তানরা এক শতাংশ অংশ ভাগের জন্যও দাবি পেষ করবো না তোদের সামনে। তবুও ছেড়ে দে তুই ওদের। মা*রি*স না ওদের।”

সাবরিনা বললেন….
—“এখন সব সম্পত্তি নিয়ে আমরা কি করবো হ্যা! আমাদের একমাত্র সন্তানকে তো আপনার ছেলে মে*রে*ই ফেলেছে। তার জীবনের মূল্য তো আপনার সন্তান, বউমা আর জামাইয়ের জীবন দিয়েই চু*কি*য়ে দিতে হবে। এ থেকে কিছুতেই আর রেহাই পাবে না ওরা কেও।”

এই বলে সাবরিনা তরুনিমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর বাম গালে স্বজোরে একটা থা*প্প*ড় প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে তরু ব্যথায় আ*র্ত*না*দ করে মেঝের উপর ছি*ট*কে পরে যায়। সাবরিনা ওর পা দিয়ে তরুনিমাকে চিৎ করিয়ে শুইয়ে দিয়ে যেই না ওর পেটের উপর লা*থি প্রয়োগ করতে নিবে ওমনি সময় কনক, তাহির, হুমায়রা সহ গার্ডসরা সকলে সেই রুমের ভিতর প্রবেশ করে। কনক সরাসরি সাবরিনার পায়ের উপর গু*লি নি*ক্ষে*প করে। আর তাহির সায়মনের কাঁধ বরাবর একটা গু*লি নি*ক্ষে*প করে। সায়মন ‘আহহহ’ বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠে গু*লি লাগা স্থানে হাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে কনককে ব*ন্দু*ক হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হ*ত*ভ*ম্ব হয়ে যায়। হাটু ভে*ঙে মেঝের উপর বসে পরে। সাবরিনার অবস্থায় একই হয়ে দাড়ায়। সে নিজের গু*লি বি*দ্ধ পা নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয় না। ধ*প করে মেঝের উপর বসে পড়ে সামনে তাকিয়ে রয়। তরুনিমা শোয়াবস্থা থেকে উঠে দাড়ায়। কনকের আনা গার্ডসরা দ্রুততার সাথে রুমে থাকা সায়মনের ঠিক করা গার্ডসগুলোর উপর হা*ম*লা করে হাতে থাকা ব*ন্দু*কের পিছন অংশ দিয়ে ওদের মাথায় ও ঘাড়ের উপর আ*ঘা*ত করে। সঙ্গে সঙ্গে গার্ডসরা সব সে*ন্স লেস হয়ে মেঝের উপর একে একে লু*টি*য়ে পড়তে শুরু করে। রায়হানুল আর সাগরিকাকে বেঁ*ধে স্থানের পাশেই সুইচ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন গার্ডস আ*ত*ঙ্কে সুইচ এ চাপ প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে সাগরিকা আর রায়হানুলের পায়ের নিচে থাকা আলগা মেঝে সরে যেতে শুরু করে। যার ফলে রায়হানুল আর সাগরিকার গলায় ফাঁ*স লেগে যায়। এমনটা হতে দেখে কুশল উচ্চস্বরে বললো….

—“ভাই…বাবা আর দাদীমাকে বাঁচাও।”

কুশলের এরূপ কথা শোনামাত্র কনক রায়হানুল আর সাগরিকার দিকে লক্ষ করে। ওনাদের গলায় ফাঁ*স লেগে গিয়েছে দেখে এক ছুটে সেই সুইচ ধরে থাকা গার্ডসটির কাছে গিয়ে তার হাত থেকে সুইচটা নিয়ে এক হাত দিয়ে তার নাক বরাবর একটা ঘু*ষি প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি কয়েকহাত দূরে গিয়ে মেঝের উপর পড়ে যায়। কনক পুনঃরায় সুইচটিতে চাপ প্রয়োগ করলে রায়হানুল আর সাগরিকার পায়ের নিচে সেই সাপোর্টিভ মেঝেটা আবারও আগের ন্যয় হয়ে যায়। ওনারা দু’জনেই কাশতে শুরু করেন। তাহির ও ওনাদের কাছে এগিয়ে আসে। অতঃপর ওরা দু’জনে মিলে রায়হানুল আর সাগরিকাকে বাঁ*ধ*ণ মুক্ত করে তাদের ধরে সেখানে রাখা চেয়ার দু’টো তে তাদের দু’জনকে বসিয়ে দেয়। গার্ডসরা কুশল, নিলাদ্র আর সন্ধ্যাকেও ইতিমধ্যে বাঁ*ধ*ন মুক্ত করে ফেলেন। সায়মন আর সাবরিনা কনককে জিবীত দেখে আর ওদের এমন আকস্মিক আ*ক্র*ম*ণের বিষয়টাকে হজম করে নিতে পারছে না। কি থেকে নি হয়ে গেলো তা ভেবে যেনো ওরা কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না। কুশল কয়েকজন গার্ডসকে অর্ডার করে যেই স্থানে রায়হানুল আর সাবরিনাকে বেঁ*ধে রাখা হয়েছিলো সেই স্থানে একই ভাবে সায়মন আর সাবরিনাকে বেঁ*ধে ফেলে যেনো তারা। গার্ডসরা কুশলের হুকুম পাওয়া মাত্র দ্রুততার সাথে সেই কাজ সম্পন্ন করে। বাকি গার্ডসরা সেখানে মেঝের উপর পরে থাকা সায়মনের ঠিক করা গার্ডসদের টেনে-হিঁ*চড়ে বাহিরে নিয়ে যেতে শুরু করেন।

পরক্ষণেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“সন্ধ্যা, তরুনিমা, হুমায়রা তোমরা বাবা আর দাদীমাকে নিয়ে বাসায় চলে যাও। বড় ভাবীকে তো এখানে আসার পথে তাহিরদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় ওখান থেকে তাকে সাথে নিও। বাবা-দাদীমার উপর ও অনেক ধ*ক*ল গিয়েছে। এখন ওনাদের-ও বিশ্রামের প্রয়োজন। আমি, নিলাদ্র আর কনক ভাই পরে ফিরছি।”

কুশলের কথার পিঠে বাকিরা আর কথা বাড়ায় না। সন্ধ্যা, তরুনিমা আর হুমায়রা রায়হানুল আর সাগরিকাকে ধরে ফ্যক্টোরির বাহিরে এসে সেখানে ওদের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়িতে সকলেই উঠে বসে। অতঃপর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে। উদ্দেশ্য চৌধুরী মেনশন।

কুশল, কনক আর নিলাদ্র সায়মন আর সাবরিনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। সায়মন আর সাবরিনা স্ত*ব্ধ দৃষ্টি নিয়ে কনকের দিকে তাকিয়ে আছে। কিয়ৎক্ষণ পর কনক বললো….

—“দূ*র্ভা*গ্য বশত আজ তোমাদের সামনে তোমাদের ছেলে দাড়িয়ে নেই। যে দাঁড়িয়ে আছে সে রায়হানুল চৌধুরী ও মরহুমা রুবিনা চৌধুরী বড় ছেলে রওশান আজমাইন কনক চৌধুরী। তোমাদের সন্তান আজ থেকে ৩০ বছর আগেই দুনিয়ার আলো দেখার পূর্বেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ছিলেন।”

কনকের কথা যে ওনারা দু’জনের কেও-ই বুঝতে সক্ষম হয় নি তা ওনাদের চেহারার ধরণ দেখেই বুঝতে পারছে ওরা। কনক আবারও বললো….

—“এভাবে বলাতে বুঝতে পারছো না তোমরা তাই তো! আরেকটু সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি তাহলে।”

এই বলে কনক ওদের দু’জনকে অতীতের সেই কঠিন সত্য সম্পর্কে অবগত করিয়ে বললো…

—“সম্পত্তির লো*ভে পরে যেই বড় ভাইকে কো*মা*র পেশেন্ট বানিয়ে রেখেছিলে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আর যেই ভাবীকে তোমরা ক*রু*ণ ভাবে মে*রে ফেলেছিলে তাঁদের-ই বদৌলতে ৩০ বছর ধরে আমার মুখ থেকে মা-বাবা ডাক শুনতে পেরেছিলে। তারা তোমাদের খুশির জন্য নিজেদের প্রথম সন্তানকে তোমাদের হাতে হাসিমুখে তুলে দিয়েছিলেন। আর তোমাদের মৃ*ত সন্তানকে নিজেদের সন্তান হিসেবে সকলের সামনে পরিচয় দিয়েছিলেন। এতো বড় সত্যটাকে ভু*লে*ও কখনও তোমাদের সামনে প্রকাশ হতে দেন নি তারা। তাদের ত্য*গে*র কতো সুন্দর প্রতিদান-ই না দিয়েছো তোমরা। প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কি তোমাদের এই প্রতিদান? বলো?”

সাবরিনা আর সায়মন সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাথায় নিচের দিকে নুইয়ে ফেললেন। কোনো প্রতিত্তুর করার ভাষা তাদের জানা নেই। হয়তো সম্পূর্ণ সত্য জানার পর এখন তাদের মনে সামান্য পরিমাণ হলেও নিজেদের কর্মের জন্য অনু*শো*চ*না বোধ হচ্ছে। কিন্তু সেই বোধ প্রকাশ করার মতো মুখ তাদের নেই জন্যই তারা পুরোপুরি ভাবে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে। কনক আবারও বললো…

—“এই অ*মানুষ গুলোর নিঃশ্বাস যতো সময় ধরে পড়বে ততো বেশি বাতাসে এদের ভিতরে থাকা বি*ষ গুলো ছড়িয়ে যাবে। এক্ষুণি এদের মে*রে ফেলার কাজ সম্পন্ন কর ভাই। আমি এদের সহ্য করতে পারছি না।”

অতঃপর কনক ওদের সামনে থেকে সরে আসে। কুশল শান্ত স্বরে বললো….

—“কেমন লাগছে এখন আপনাদের মি. ও মিসেস. চৌধুরী? আজকের এই মূহূর্তের মতো বি*শ্রী ও য*ন্ত্র*ণা দায়ক অনুভূতির হয়তো আর কোনো কিছুর জন্য হতে পারে না তাই না? ৩০ বছর ধরে যাকে নিজেদের সন্তান বলে মনে করে এসেছিলেন আপনারা। যার ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য নিজের আপন ভাই-ভাবীর সাথে প্র*তা*রণা পর্যন্ত করলেন আজ বুঝতে পারছেন সে আসলে আপনাদের ছেলেই না। আর সে চায় খুব তাড়াতাড়ি যেনো আপনাদের মে*রে ফেলা হয়। খুবই ইন্টারেস্টিং লাগছে পুরো বিষয়টা।”

কুশলের এরূপ কথা শুনেও কোনো রূপ প্রতিত্তুর করে না সায়মন, সাবরিনা। অতঃপর কুশল আর নিলাদ্র ও ওদের সামনে থেকে সরে আসে। কনক ওর হাতে থাকা সুইচটাতে চাপ প্রয়োগ করতেই সায়মন আর সাবরিনার পায়ের নিচ থেকে আলগা মেঝেটা সরে যেতে শুরু করে। কনক, কুশল আর নিলাদ্র ‘আলবিদা’ শব্দ উচ্চারণ করে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে শুরু করে। পায়ের নিচে সাপোর্টিভ কিছু না থাকায় সায়মন আর সাবরিনার গলায় থাকা দড়ির কারণে ফাঁ*স লেগে যায়। উ*ন্মা*দের মতো ছট-ফট করতে শুরু করে ওরা। একটু একটু করে নিজেদের মৃ*ত্যু*কে নিজেদের সন্নিকটে আসতে দেখছে ওরা। ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা দায়ক সেই অনুভূতি। বেশ কিছু সময় পর সায়মন আর সাবরিনার শরীর পুরোপুরি ভাবে নি*স্তে*জ হয়ে যায়। সমস্ত ছ*ট-ফ*ট বন্ধ হয়ে যায় ওদের। মৃ*ত্যু তাদের পুরোপুরি ভাবে গ্রা*স করে ফেলে।

ওরা তিনজন ফ্যক্টোরি থেকে বের হয়ে আসে। কনকের নির্ধারণ করা গার্ডসরাও গাড়ি নিয়ে আ*স্তা*নায় চলে যায়। আর ওরা তিনজন গাড়ি নিয়ে রওনা হয় চৌধুরী মেনশন এর উদ্দেশ্যে। অবশেষে সব শ*ত্রু*দের প*ত*ন ঘটেছে। স্বস্তির শীতল নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে ওরা সবাই। বেশ কিছুসময় ড্রাইভ করার পর অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছায় ওরা। গাড়ি থেকে নেমে একসাথে চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ওরা। সাগরিকা আর রায়হানুল ব্যতিত বাকিরা সবাই ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে। কুশলরা এসে ওদের সবাইকে পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে ওরা সবাই ও স্বস্তি পায়। সন্ধ্যা বললো….

—“এখনও দু’জন আবর্জনাকে আ*স্তা*কুঁড়ে ফেলে দেওয়া বাকি মেজো ভাইয়া। ওদের শরীরের পঁ*চা গ*ন্ধে শরীর উল্টে আসছে।”

সন্ধ্যার কথার ভাঁজ বুঝতে পারে কুশল সহ বাকিরা। অতঃপর গার্ডসদের দ্বারা ছাদ থেকে রিজভীর লা*শ আর কামিনীর রুম থেকে কামিনীর লা*শ বের করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাদের দা*ফ*ন কার্য সম্পন্ন করতে বলে। গার্ডসরা কুশলের কথা অনুযায়ী কাজ করে। তরুনিমা সকল সার্ভেন্টদের কল করে আসতে বলেছিলো অনেক পূর্বেই। ঘন্টাখানেক পর সার্ভেন্টরা সব চলে আসলে তরুনিমা পুরো বাড়ি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করার কাজ তাদের বুঝিয়ে দেয়। আর রান্নার জন্য নিয়োজিত সার্ভেন্টদের রান্নার কাজ ও বুঝিয়ে দেয়।

সন্ধ্যার পর…..
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সকলেই ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে। সেইসময় নিলাদ্র কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“কুশল…এবার আমি আমার নিজের বাসায় ফিরতে চাই। অনেক মাস পেরিয়ে গেলো বাবা-মায়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয় নি। শ*ত্রু*দের জন্য বেঁচে থেকেও নিজেকে মৃ*ত প্রমাণ করতে হয়েছে সকলের সামনে। এবার আমি আমার আসল পরিচয়ে ফিরে যেতে চাই। বাবা-মা’কে আর ক*ষ্ট দিতে চাই না।”

কুশল হাসিমুখে বললো…..
—“অবশ্যই। আমরা সবাই একসাথে যাবো আঙ্কেল-আন্টির কাছে। এতো বড় একটা সত্য তাদের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য আমি তাদের থেকে ক্ষমা চাইবো। আজ সবাই বিশ্রাম করো। আগামীকাল থেকে সব কাজ করা হবে।”

আরো কিছুসময় গল্প-গুজব করার পর রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে ওরা সকলে নিজ নিজ রুমে চলে যায়।

(২২৩)
পরেরদিন সকালে….
কুশল-তরুনিমা, তাহির-হুমায়রা, নিলাদ্র-সন্ধ্যা নিলাদ্রের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ঘন্টা খানেক ড্রাইভিং এর পর ওদের গাড়ি আহমেদ ভিলার মূল গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। পার্কিং সাইডে গাড়ি থামাতেই ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামে। অতঃপর ওরা সবাই একসাথে হাঁটতে হাঁটতে আহমেদ ভিলার মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। কুশল নিলাদ্রকে কলিং বেল বাজানোর জন্য ইশারা করে। নিলাদ্র লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে কাপান্বিত হাত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দেয়। ভিতর থেকে একজন মহিলা সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিতেই ওদের সবাইকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয়। দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই ওরা সবাই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। নিলাদ্র নিজের বাড়ির চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে সেই মহিলা সার্ভেন্টটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

—“সায়মা চাচী…আম্মা আর বাবাকে ডেকে আনুন।”

সার্ভেন্ট সায়মা নিলাদ্রের এমন কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। হা করে তাকিয়ে আছে নিলাদ্রের দিকে। কুশল বললো…

—“সায়মা চাচাী…আপনার বড় সাহেব আর বড় আপাকে ডেকে আনুন। বলবেন কুশল এসেছে।”

সায়মা ‘আচ্ছা’ বলে নিলাদ্রের বাবা-মায়ের রুমের দিকে যেতে শুরু করেন। আর একটু পর পর পিছন ঘুরে নিলাদ্রের দিকে তাকান। এখনও পর্যন্ত নিলাদ্রের ওমন কথার মানে তিনি বুঝতে পারেন নি। কুশল নিলাদ্রের মাথার পিছনে আস্তে করে চা*টি মে*রে বললো….

—“এভাবে সরাসরি আঙ্কেল-আন্টিকে মা-বাবা বলে সম্বন্ধ করলে লোকে তো পা*গ*ল মনে করবে ব্যডা। তোর চোহারা যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা কি ভুলে গিয়েছিস!”

নিলাদ্র নিজের বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো….
—“কিছুসময়ের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিলো নিজের ভিতর। তাই আগের মতোই সায়মা চাচীকে ওভাবে বলে ফেলেছি।”

কিয়ৎক্ষণ পর নিলাদ্রের মা-বাবা তাদের রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং প্লেসের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। নিলাদ্র একদৃষ্টিতে নিজের মা-বাবাকে নিজের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসতে দেখতে পারছে। নিলাদ্র লক্ষ্য করে তার মায়ের চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। চেহারায় আগের মতো খুশি বা উজ্জ্বলতার ছাপ ফুটে নেই। আর নিলাদ্রের বাবার অর্ধ মুখশ্রী পাঁকা দাঁড়ির আড়ালে ঢেকে গিয়েছে। যেই বাবা কখনও নিজের মাথার একটা চুল কিংবা দাঁড়ি সাদা রাখতেন না। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে দাঁড়িতে গাছের মেহেদী পাতা বেঁটে লাগাতেন। আজ তার চেহারার এ কি অবস্থা। নিলাদ্রের বুকের ভিতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠে। দু’চোখ নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। নিলাদ্রের বাবা-মা ড্রয়িং প্লেসে এসে দাঁড়াতেই নিলাদ্র আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। দ্রুত পায়ে তাদের সামনে গিয়ে হাঁটু ভে*ঙে মেঝের উপর বসে পরে। বাবার পায়ের উপর একহাত আর মায়ের পায়ের উপর আরেকহাত রেখে মাথা নুইয়ে অঝোর ধারায় দু’চোখ দিয়ে নোনাজল ফেলতে শুরু করে। নিলাদ্রের এমন কাজে ওর বাবা-মা অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তারা কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর কুশল তাদের বিগত মাসে ঘটে যাওয়া প্রতিটি সত্যঘটনা খুলে বলে। সম্পূর্ণ সত্য জানার পর নিলাদ্রের বাবা-মায়ের’ও দু’চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নিলাদ্রের মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন….

—“ও-ও আমার ছেলে…আমার ছেলে নি-নিলাদ্র! সত্যিই ও আমার ছেলে! আমার কলিজার ধন!”

নিলাদ্র ডুকরে কেঁদে উঠে। নিলাদ্রের বাবা নিলাদ্রের দু’কাঁধে দু’হাত রেখে ওকে নিজেদের পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়। নিলাদ্র কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

—“আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা আম্মা-বাবা। পরিস্থিতির বি*পা*কে পরে আমাকে এমন করতে হয়েছে। তোমাদের অতন্ত্য ক*ষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি। আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দাও।”

নিলাদ্রের বাবা-মা একসাথে বললেন…
—“বুকে আয় বাপ আমাদের।”

নিলাদ্র একসাথে ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে। ওদের এমন সুখকর মূহূর্ত দেখে বাকিদের ঠোঁটের প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছুসময়। নিলাদ্র সন্ধ্যাকে ওর বাবা-মায়ের সামনে এনে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বললো….

—“তোমাদের বউ-মা আম্মা-বাবা। এই সময়ের ভিতর সন্ধ্যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।”

নিলাদ্রের মা সন্ধ্যার থুঁ*তনি স্পর্শ করে নিজের ঠোঁটে সেই হাত ছুঁইয়ে হাসি মুখে বললেন….

—“মাশআল্লাহ, এক টুকরো চাঁদ নিয়ে এসেছে আমাদের ছেলে এই বাড়িতে। সন্ধ্যা মায়ের জন্য এখন থেকে আমাদের পুরো বাড়ি খুশির আমেজে টইটুম্বুর হয়ে থাকবে সবসময়।”

নিলাদ্রের বাবা বললেন….
—“আমি চাই আমাদের বউমাকে পুনঃরায় আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সসম্মানে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে।”

সন্ধ্যা মাথা নুইয়ে লজ্জাজনক হাসি দেয়। কুশল হাসিমুখে বললো….
—“ঠিক আছে আঙ্কেল। আপনাদের এই ইচ্ছেকে আমরা সবাই সম্মান জানাচ্ছি।”

৭দিন পর…..
কুশল-তরুনিমা, তাহির-হুমায়রা আর নিলাদ্র-সন্ধ্যা ওদের সকলের বিয়েই হুট করে হয়ে গিয়েছিলো জন্য পুনঃরায় একইদিনে একই সাথে ধুমধাম করে ওদের তিন জুটির বিবাহকার্য সম্পন্ন করে ওদের গার্জিয়ানরা। অতঃপর নিলাদ্র-সন্ধ্যাকে নিয়ে নিজ বাসায় চলে আসে। তাহির-হুমায়রাকে নিয়ে আর কুশল তরুনিমাকে নিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে আসে। পুনঃরায় ওদের বাসরও সম্পন্ন হয়।
.
.
.
২বছর পর……….
শীতের রাতে নিলাদ্র বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ পূর্ণিমা। আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ বিরাজ করছে আর চাঁদকে ঘিরে অসংখ্য তারারা মেলা জুড়েছে। সেইসময় সন্ধ্যা নিলাদ্রের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ওর গেঞ্জির ভিতর দিয়ে বুকের উপর নিজের ঠান্ডা হাত দু’টো রেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে। এই শীতের রাতে সন্ধ্যার এমন কাজে নিলাদ্রের সর্বশরীর যেনো ঠান্ডায় শির শির করে উঠে। পরক্ষণেি নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে ওর দিকে ঘুরে ওকে নিজের বুকের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যা এখনও খিল খিল শব্দে হাসছে। চাঁদের আলো সন্ধ্যার মুখের উপর এসে আঁচরে পড়েছে। সন্ধ্যার সৌন্দর্য এতে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। নিলাদ্র সন্ধ্যার মুখের উপর হালকা ভাবে ফুঁ দিতে শুরু করে। নিলাদ্রের এমন কাজে সন্ধ্যা হাসি থেমে যায়। সে উপলব্ধি করে সে নিলাদ্রের ঠিক কতোটা কাছাকাছি রয়েছে। নিলাদ্র সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“ঠান্ডা হাত লাগিয়ে আমার উষ্ণ শরীরকে শীতল করে দিয়েছো এবার তোমার শরীরের উষ্ণতা দিয়ে আমার শীতল শরীরকে পুনঃরায় উষ্ণ করিয়ে দাও বউ।”

নিলাদ্রের এরূপ কথায় সন্ধ্যা কিছুটা কেঁপে উঠে। সন্ধ্যা লজ্জায় নিজেকে নিলাদ্রের থেকে ছাড়াতে নিলে নিলাদ্র সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যাকে পাঁজা-কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো…..

—“আজ ছাড়ছি না।”

সন্ধ্যা লজ্জায় নিলাদ্রের বুকে মুখ লুকায়।

(২২৪)
কুশল নিজ রুমে বিছানায় বসে আছে। সেইসময় তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে সরাসরি কুশলের কোলের উপর বসে পরে দু’হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকের উপর মাথা রাখে। আকস্মিক তরুর এমন কাজে কুশল কিছুটা অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে একহাত তরুর আঁচলের নিচ দিয়ে ওর পেটের উপর রেখে আদুরে স্বরে বললো….

—“আজ আমার বউয়ের হলো টা কি শুনি! আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। সেই খুশিতে তারার চাঁদকে ঘিরে মেলা বসিয়েছে। আর আমার ঘরের পূর্ণিমার চাঁদ এর মুখ এমন মলিন কেনো শুনি?”

তরুনিমা বললো….
—“আপনার ঘরের পূর্ণিমার চাঁদের ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসার ভাগ নিতে নতুন অতিথি আসতেছে। তাই আমার মুখ মলিন।”

তরুনিমার এরূপ কথা শুনে কিছু সময়ের জন্য কুশল না বোঝা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়। পরক্ষণেই তরুর কথার ভাঁজ বুঝতে পেরে কুশল এতো বেশি খুশি হয়ে যায় যে তরুকে ওভাবেই পাঁজা কোলে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে পুরো রুম গোল গোল ঘুরতে শুরু করে। আর হাসতে হাসতে উচ্চস্বরে বলে…..

—“আল্লাহ…. আল্লাহ….আপনার অশেষ রহমত। আপনার লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। শুনছো সবাই আমি বাবা হতে চলেছি। বাবা হতে চলেছি আমি। ইয়া আল্লাহ এতো খুশি আমি রাখবো কোথায়।”

কুশলের এমন পা*গ*লা*মী দেখে তরুর মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। তরু বললো…..

—“কুশল কি করছেন কি! পরে যাবো তো। আরে পরে যাবো যে।”

কিন্তু কুশল থামে না। মনে হয় আজ পৃথিবীর সবথেকে বড় সুখময় কিছু সে পেয়ে গিয়েছে।

(২২৫)
স্থির মাঝ নদীতে একটা ছাদ ওয়ালা নৌকায় করে খোলা আকাশের নিচে নিরিবিলি পরিবেশের মাঝে হুমায়রার কোলের উপর মাথা রেখে পূর্ণিমার সৌন্দর্য উপভোগ করছে তাহির। হুমায়রা তাহিরের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাহির হাসিমুখে বললো…..

—“জানো বউ…আমার খুব শখ ছিলো নৌকায় করে পূর্ণিমার রাতে খোলা আকাশের নিচে নিজের প্রিয় মানুষটার কোলে মাথা রেখে পূর্ণিমার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করার। আজ সেই ইচ্ছেটা আমার পূর্ণতা লাভ করলো। এই শীতল হাওয়া যখন শরীরে এসে লাগছে আর একটু পর পর শরীরে শিহরণ তুলছে মনের ভিতী কি যে শান্তি কাজ করছে বলে বুঝাতে পারবো।”

হুমায়রা কিছুটা ঝুঁকে তাহিরের কপালের উপর নিজের নরম ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিয়ে বললো…..
—“তোমার জন্য প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আমিও উপভোগ করতে পারলাম তাহির। অনেক ভালোবাসি তোমায়। সারাজীবন ধরে তোমার প্রতিটি ইচ্ছের সাথে তুমি আমাকেও রেখো। কখনও তোমার ভালোবাসা থেকে আমায় বন্ঞ্চিত করো না।”

তাহির হুমায়রার কোল থেকে উঠে বসে হুমায়রাকে টেনে নিজের একেবারের কাছাকাছি নিয়ে এসে ওর নাকের সাথে নাক ছুঁইয়ে দিতে দিতে বললো….

—“তুমি হীনা আমি কিছুই না। মরে যাবো কিন্তু কখনও তোমাকে দূরে সরে যেতে দিবো না।”

হুমায়রা তাহিরকের বুকে মাথা রাখে। তাহির দু’হাতে হুমায়রাকে নিজের বুকের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।

#সমাপ্ত…………………