#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#তীব্রস্রোত
#পর্ব ১২
.
.
এই বলে সুপ্তি ফোনের ডাটা অফ করে শুয়ে পড়ল। সুপ্তি তাকেই খোদা হাফেজ বলে, যার সাথে তার আর কথা বলার কোনো ইচ্ছে থাকে না, মানে তার কারো সাথে শেষ কথা হলো খোদা হাফেজ।
সুপ্তি ফোন রেখে শুয়ে পড়ল, কিন্তু আজ কী সুপ্তির ঘুম আসবে এসব ফা*লতু কথা ভেবে? সুপ্তির রা*গে ক্ষো*ভে ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে স্রোত কে একটা থা*প্পড় মা*রতে, কেনো এত বেশি বুঝতে হবে? সুপ্তি তাকে ভালো একটা বন্ধু ভেবেছিল, বাট তার তো প্রেম করার সাধ জাগছে, সুপ্তির এখন হুমায়ুন আহমেদ এর সেই কথাটা খুব করে মনে পড়ছে। ওই যে একটা ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে না। বাট সুপ্তি তো তাকে বন্ধুই ভেবে ছিলো, বাট সে তার থেকে নিচে নামতে চেয়েছিল, যার জন্য আজ এই পর্যায় সে এসে গেছে, যে সেই বন্ধু হওয়ার ও যোগ্যতা হারিয়ে ফেলল সে।
ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৫৫ মিনিট ঠিক তখনই স্রোত, তীব্র, সুপ্রিয়া এসে সুপ্তিদের দরজায় কড়া নাড়ল, সুপ্তির আম্মু গিয়ে দরজা খুলে ওদের কে দেখে চমকে উঠল। এমন সময় ওরা কেনো আসছে তাই সে বুঝতে পারছে না। সুপ্তি তো তার আম্মু কে কিছুই জানায়নি।
তোরা এখানে?
হ্যা আম্মু সুপ্তি নাকি আসতে বলেছে?
সুপ্তি কোথায় আমাকে তো কিছু বলেনি?
আচ্ছা ভেতরে তো আসতে দেবে?
না মানে হ্যা আয়।
ওরা সুপ্তির আম্মু কে ওভার করে ভেতরে চলে এলো, ওরা ভেতরে এসে আশ্চর্যজনক ভাবে চমকে উঠল। তিন জনের পা ই থেমে গেল, ওরা আর সামনে এগোতে পারছে না। ওরা ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। ওরা এসেই দেখল ওদের কিছুটা সামনেই সোপার উপর সুপ্তি বসে ছিলো একটা সুন্দর শাড়ি পরে যার জন্য সুপ্তি কে আরও সুন্দর লাগছে, সুপ্তির ঠোঁ*টে মিষ্টি একটা হাঁসি ছিলো যা ওর সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করছে খুব করে। আর সুপ্তির পাশেই বসে ছিলো একটা হ্যান্ডসাম দেখতে সুদর্শন যুবক যে সুপ্তির হাতে আংটি পড়িয়ে দিচ্ছিল, তার পড়ানো শেষে সুপ্তি ও তাকে আংটি পড়িয়ে দিলো। এরপর বড়’রা সবাই মিলে হাতে তালি দিয়ে ওদের মিষ্টি খাইয়ে দিলো। যা দেখে ওরা তিন জন একদম বোবা হয়ে গেল। এমন কিছু এখানে এসেই দেখবে ওরা ভাবতেও পারে নি। তবে হয়ত ওরা আসতো ই না।
কীরে ভেতরে কেনো যাচ্ছিস না।
আম্মু এগুলো কী? আমাকে আগে কেনো বলো নাই?
তোর আব্বু কাউকে কিছু জানাতে চায়নি, আর সুপ্তির ও হৈ-হুল্লোড় করার ইচ্ছে ছিলো না, আচ্ছা এসব কথা পড়ে বলবি, এখন চল এসেই যখন পড়েছিস সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আরিফ ভাই, ভাবী এটা আমাদের বড় মেয়ে সুপ্রিয়া, আর ওরা সুপ্রিয়ার দেবর #তীব্রস্রোত।
আসসালামু আলাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো মামুণি? তোমার কথা অনেক শুনেছি, দেখার ইচ্ছেও ছিলো, বেশ ভালোই হলো আজ দেখা হয়ে গেল।
সুপ্রিয়া হালকা হাসল, তার খুব রা*গ হচ্ছে, তার বাবা-মায়ের কী উচিৎ ছিলো না তাকে একটা বার জানানোর, সে কী এতটা দূরে চলে গেছে তাদের থেকে, যে একটা বার তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করল না কেউ? সুপ্রিয়ার লজ্জা লাগছে কারণ তার দেবর’রা কী ভাবছে তাকে নিয়ে এই ভেবে। সে এই বাড়ির বড় মেয়ে, কিন্তু তাকে তার পর্যাপ্ত সম্মান দেওয়া হলো না, এই কথা গুলোই সুপ্রিয়া ভাবছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর তখনই সুপ্তির হবু শাশুড়ি এসে সুপ্রিয়া কে মিষ্টি খাইয়ে দিলো। ওদের দু-ভাইয়ের সামনে মিষ্টির প্লেট ধরল ওরা একটা একটা করে হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে রইল মুখে নিলো না। সুপ্তির হবু শাশুড়ি এসে সুপ্তি কে খুব করে আ*দর করে দিলো। ডক্টর আরিফ আঙ্কেল ও অনেক দোয়া করল।
সুপ্তি যাও আহান (পাত্র) আর তুমি গিয়ে আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে ঘুরে আসো, আমাদের একটু কথা বলি ততক্ষণ।
জ্বি আব্বু।
সুপ্তি আহানের সাথে ছাদের দিকে পা বাড়াল।
ওরা দু’জন দরজা ওভার টেক করল। #তীব্রস্রোত দুজনেই ওদের চলে যাওয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে রইল। ওরা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে আহান সুপ্তি কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।
তোমার দুলাভাই এলো না যে?
দুলাভাই কে আসতে বলিনি তাই।
এটা কিন্তু ঠিক করো নি, আসলে সবার ছবি দেখে দেখে আমি ক্লান্ত, এবার ইচ্ছে ছিলো স-চোখে সবাইকে দেখার।
আচ্ছা তবে কাল দুলাভাই কে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
সত্যি বলছ তো?
হ্যা সত্যি। বাট আব্বু আম্মুর থেকে তোমারই পারমিশন নিতে হবে কিন্তু, আমি তাদের বলতে পারব না, আমি তোমার সাথে বের হবো বাসা থেকে।
হুম বুঝতে পারছি ম্যাডাম, ইচ্ছে যখন আমার তবে পারমিশন ও তো আমারই নিতে হবে।
কখন যাবে?
দেখি সকাল টাইমেই দেখা করে নেবো। যদি আমার হবু শশুড় শাশুড়ি মত প্রদান করেন।
হুম তবে ঠিক আছে।
কিন্তু তুমি দুলাভাই কে আগে কিছু জানাবে না।
কেনো?
হঠাৎ করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবো, যেভাবে তোমার আপু চমকে গেল, সেভাবে সেও জানো চমকে যায় তাই।
হুম খুব ভালো আইডিয়াটা, ওকে।
একটা কথা বলি?
হ্যা কেনো নয়, কথা বলার জন্য আম্মু আব্বুর থেকে পারমিশন নিতে হবে না, তারা অনেক আগেই সেই পারমিশন তোমাকে দিয়ে দিয়েছিল।
তুমিও না, আজকাল একটু বেশিই মজা করো।
কেনো ভালো লাগছে না বুঝি?
না তা নয়, কিন্তু আগের তুলনায় তুমি অনেকটা চঞ্চল হয়ে গেছ।
হুম একটু একটু।
এটা আপুর বাসায় গিয়ে হয়েছে তাই না?
হুম সেখানে আপুর দেবর দের, দুলাভাই এর সঙ্গে ইয়ার্কি মশকরা করতে করতে হয়ে গেছে।
হুম তাই এখন আমার সাথেও কথায় কথায় ইয়ার্কি করছ?
আচ্ছা এখন বলো কী বলবে বলছিলে না?
হ্যা, আসলে আজ প্রথম তোমাকে শাড়িতে দেখলাম, ভালো লাগছে কিন্তু তোমাকে।
তাই?
হুম তাই। তুমি জানো যেদিন প্রথম আব্বু তোমার ছবি ইমেইল করেছিল, সেদিন তোমার ছবি দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম না বলে দেবো, কিন্তু আব্বু আম্মু বলল আমি জানো তোমার সাথে কথা বলি সময় নেই কিছুটা যেকোনো ডিসিশন নেওয়ার আগে, তাই তোমার সাথে কথা বললাম, আর কথা বলতে বলতে এক পর্যায় না হ্যা তে বদলে গেল।
যাক ভালো।
তোমার কথা বলবে না?
আমার কথা? আসলে সত্যি বলতে গেলে আমার তখন বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না, তোমাকে আপুর কথা তো বলেই ছিলাম, তখন এক মাস ও হয়নি আপু চলে গিয়েছিল বাড়ি থেকে, যার জন্য একদিন হঠাৎ করেই আম্মু অ*সুস্থ হয়ে যায়, তখন আব্বু তারাহুরো করে তোমাদের হসপিটালে নিয়ে আম্মুকে ভর্তি করেন, আর তখন আম্মুকে চেক করতে আসতো আঙ্কেল, আব্বু হসপিটালের ক্যাবিন নিতে চেয়েছিল বাট আমি বারণ করেছিলান কারণ একা একা বন্ধ রুমে আম্মু আরও অ*সুস্থ হয়ে যেত, তাই জেনারেল রুমে ছিলাম আম্মুকে নিয়ে, প্রায় ৮ দিন থাকতে হয়েছিল আম্মুকে নিয়ে তখন রোজ আঙ্কেল পেশেন্ট দেখতে আসতো, মাঝে মাঝে তো দুবার আসতো বাট একবার পেশেন্ট দেখতে দ্বিতীয় বার পেশেন্ট নয় আমার সাথে কথা বলতে, সে বলতো আমার সাথে নাকি কথা বলতে তার খুব ভালো লাগে, ইচ্ছে করে সারাক্ষণ আমার সাথে কথা বলতে। একদিন হঠাৎ আঙ্কেল আব্বু কে প্রস্তাব দেয় তোমার ছবি দেখিয়ে, আব্বু সবে মাত্র একটা ধাক্কা খেয়ে উঠেছিল, তাই তার সেই মন মানুষিকতাই ছিলনা, বাট আঙ্কেল এমন ভাবে ধরেছিল যে আব্বু কিছুতেই না বলতে পারছিল না, তাই সে আঙ্কেলের কাছে কিছু সময় চায়, আর এটাও বলে আমার ইচ্ছে ছাড়া কিছুই হবে না আমি না বললে না, হ্যা বললে হ্যা। এরপর আব্বু আমাকে তোমার ছবি দিয়ে ভাবতে বলে যতটা সময়ের প্রয়োজন নিতে বলে, আমিও ভেবেছিলাম না বলে দেবো, বাট তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগতে লাগল। তারপর এক পর্যায় এক সপ্তাহর মাথায় হ্যা বলে দিলাম, এই ছিলো আমার কথা, মিস্টার আহান সাহেব
হুম আব্বু আমাকে সব জানিয়েছিল, তুমি নাকি সেই জেনারেল রুমের সবার খুব খেয়াল রাখতে, সবাই নাকি নার্সদের ডাকার আগে তোমাকে ডাকতো, সবাই তোমাকে খুব পছন্দ করতো সেখানের, যা দেখে আব্বুর খুব ভালো লেগেছিল তোমাকে।
আরও কিছুক্ষণ ওরা দু’জন কথা বলল, এরপর দু’জনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। দরজা খুলে দুজন ভেতরে গিয়ে দেখল সবাই মিলে হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত।
আব্বু এখন যাওয়া যাক?
এখনি চলে যাবি? আর একটু ঘুরে আয়।
এখন কোথায় যাবো?
আরে মামনির রুম দেখে আয় যা গিয়ে।
আব্বু অনেক সময় হলো তো?
আরে সব ছেলেরা সময় কা*টাতে চায় নিজের গার্লফ্রেন্ড এর সাথে, আর আমার একটা ছেলে যে কিনা যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে আছে।
সুপ্তির আম্মু আহান তো কফি পছন্দ করে, ওর জন্য কফি নিয়ে আসো।
জ্বি যাচ্ছি।
সুপ্তি আহান কে তোর রুম দেখিয়ে নিয়ে আয়।
জ্বি আব্বু।
এক মিনিট। আপনি স্রোত আর আপনি তীব্র রাইট?
জ্বি কিন্তু আপনি কীভাবে?
আমি সবাইকে চিনি। আচ্ছা চলেন আমাদের সাথে বলছি সব, আপনারা নাকি খুব সুন্দর করে কথা বলেন। আমিও দেখি আপনারা কেমন কথা বলেন? আর মিস্টার স্রোত আপনার কিন্তু কবিতা শোনাতে হবে আমাকে।
কিন্তু?
হ্যা বাবা যাও তোমরাও।
জ্বি আঙ্কেল।
ওরাও গেল সুপ্তির রুমে, সেখানে গিয়ে সবাই সুপ্তির রুমের সোফায় বসে পড়ল।
সুপ্তি তুমিও বসো।
তোমরা বসো আমি কফি নিয়ে আসছি।
তোমার যেতে হবে না তুমি বসো, কারণ কফি হতে সময় তো লাগবেই, ততক্ষণ তুমি গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কী হবে?
হুম ঠিক আছে।
সুপ্তি ও বসে পড়ল। যা দেখে আহান বলে উঠল।
আচ্ছা মিস্টার স্রোত একটা কবিতা বলেন না।
কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন আমি কবিতা বলি?
সুপ্তি তুমি তাদের জানাও নি আমার কথা তাইনা?
হুম, আসলে আব্বুর কড়া অর্ডার ছিলো, কাউকে জানো তোমার বিষয় না জানাই। বাট আমার উচিৎ ছিলো এই দুটো মানুষকে জানানো যা এখন বুঝতে পারছি।
কেনো?
এমনই ভাবলাম, যেহেতু বন্ধু ভেবেছি তাদের, তাই কথা লুকানো ঠিক হয়নি। বাদ দাও তুমি বলো বেয়াই যা তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে?
আসলে আমিও বেয়াই বলছি আপনাদের ওকে? বেয়াই আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে প্রায় দের বছরের কাছাকাছি সময় হয়ে গেছে। আমি তখন বাহিরে ছিলাম, না হয় এতদিনে সুপ্তি মিস থেকে মিসেস হয়ে যেত। আসলে ফ্যামিলি গত ভাবেই আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছিল। সেই থেকেই আমরা দু’জন ফোনে কথা বলতাম, সুপ্তি তার সাথে ঘটে যাওয়া সব কথা আমার সাথে শেয়ার করত, আর আমিও আমার মনের সব কথা তার সাথে শেয়ার করতাম, তো সুপ্তি যখন আপনাদের ওখানে ছিলো তখন আমাকে আপনাদের সবার কথাই সে বলেছে ছবি দিয়েছে সব কিছুর, কখনো ম্যাসেজে, কখনো আবার ভিডিও কলে বা ওডিও কলে, তার মুখে আপনাদের দুজনের এত এত প্রশংসা শুনে আমিতো মাঝে মাঝেই জেলার্স ফিল করতাম, তাই যাও দেরি করতাম তাও জলদি চলে এলাম, ভাবলাম যদি সে আমার হাত ফসকে উড়ে যায়? তাই আমি নিজেই উড়াল দিয়ে চলে এলাম।
তুমি আমাকে সন্দেহ করছিলে?
একদম নয়, আমি ভয় পাচ্ছিলাম, যদি তুমি রে*গে যাও তাই। আমি কিন্তু একদম তোমাকে সন্দেহ করিনি।
হুম সন্দেহ যদি করেও থাকো তবে তা ঝেড়ে ফেলে দাও, না হয় সন্দেহ কীভাবে সত্যি করতে হয় তা এই সুপ্তি খুব ভালো করেই জানে।
এই না না এই তো এখনি আমি তোমার দুই বেয়াইর সাথে সন্ধি করে নিচ্ছি।
এই বলে আহান ওদের সাথে হাত মিলিয়ে নিলো। ওরা দু-ভাই আহান কে হঠাৎ করে দেখে জেনো পাথর হয়ে গেছে, কী বলবে না বলবে বুঝতেই পারছে না ওরা।
সুপ্তিদের বাড়ির কাজের মেয়েটা এসে কফি দিয়ে চলে গেল। সুপ্তি কফি এগিয়ে দিতেই আহান কফি হাতে নিয়ে সোফার সাথে এলিয়ে দিলো নিজেকে। কফির কাপে চুমুক বসিয়ে দিলো আহান।
কী হলো বেয়াইরা নিচ্ছেন না কেনো?
হুম জ্বি নিচ্ছি।
সুপ্তি আড়চোখে স্রোত কে পর্যবেক্ষণ করছিল, আর স্রোত নিচের দিকে তাকিয়েই বসে ছিলো, যখন আহান কফির কথা বলল, তখন কফির কাপ হাতে নিয়ে কফি সাধ নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল #তীব্রস্রোত।
বেশ কিছুক্ষণ পরে ওরা আরও অনেক কথা বলার পরে সবাই উঠে বসার রুমে চলে এলো। সেখানে এসে দেখল এখনও সবাই হাসি-ঠাট্টা করছিল, তীব্র চারিদিকে তাকিয়ে তার ভাবী কে দেখতে না পেয়ে বলে উঠল।
আন্টি ভাবী কোথায়?
ওহ সুপ্রিয়া তো ওর রুমে আছে, মেয়ে কাঁদছিল তাই রুমে গেল।
ওহ আচ্ছা, বেয়াইন ভাবী কে একটু ডেকে নিয়ে আসেন আমাদের বের হতে হবে।
কেনো বাবা আর একটু সময় থাকো?
না আন্টি রাত হয়ে গেছে বাবুকে নিয়ে যেতে হবে রাত বেশি হলে সমস্যা হতে পারে। আর ভাই ও চলে আসছে এতক্ষণে।
জ্বি যাচ্ছি।
সুপ্তি এগিয়ে গেল তার বোনের রুমে সেখানে গিয়ে দেখল তার বোন মন ম*রা হয়ে বসে আছে। তাই সুপ্তি এগিয়ে গেল রুমের ভেতর।
কী রে বাবু ঘুমিয়ে গেছে?
হ্যা।
তোর দেবর’রা যাবে বলছিল, তাই তোকে ডাকছে।
সুপ্তি আমি তোর বড় বোন, আমাকে আগে কী এই বিষয় জানানো যেত না?
স্যরি আপু, আব্বুর কথা অমান্য করার ইচ্ছে ছিলো না আমার। কিন্তু আমি তোকে সেদিন বলে ছিলাম কিন্তু, সম্ভব না তোর চিন্তা ধারা মেনে নেওয়া।
কিন্তু এটা কী বলা যেত না তোর জীবনে অন্য কেউ আছে?
সম্ভব হলে তো বলেই দিতাম। আপু এখন বাড়ি ভর্তি মেহেমান রয়েছে তাই কথা বাড়াতে চাচ্ছি না, তুই বাবুকে নিয়ে বাহিরে আয় ওরা অপেক্ষা করছে।
বুঝতে পারছি আমাকে আব্বু আম্মু মেনে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু উপর থেকে মন থেকে আজ অব্দি মেনে নিতে পারে নি।
আপু সব কথা চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। আর তুই যার জন্য সব ভুলে গিয়েছিলি, সে তো তোর আছে এটা ভেবেই শান্তি পেয়ে নিশ। তুই তো জেনে বুঝেই গিয়েছিলি তার সাথে যে কেউ তোকে মেনে নিবে না। তবে এখন কীভাবে আশা রাখছিস যে সবাই তোকে আগের মতো করেই মেনে নিবে? আপু তুই জানিস তোর জন্য আম্মু এতটাই অ*সুস্থ হয়ে পড়েছিল যে ৮ দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলো, এগুলো কী চাইলেই ভুলে যাওয়া যায়? যায় না, আর আম্মু আব্বু সবার কাছে যেভাবে অপমানিত হয়েছিল তাও ভুলে যাওয়া যায়না। তাই তুই এই আশা গুলো মনে রাখা ছেড়ে দে এতে কষ্ট কম পাবি।
এই বলে সুপ্তি চলে আসলো। সুপ্তির ইচ্ছে ছিলো আরও কিছু বলার, বাট বসার রুমে আছে সবাই, এসব কথা শুনলে সবাই কী ভাববে? তাই সুপ্তি অল্প কথা বলেই চলে এলো বসার রুমে।
।
।
।
চলবে……….।