#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১০
-‘আমি কী কিছু ভুল বলেছি জামাইবাবু?
ভদ্রলোক বিষম খেলো। আমতা আমতা করে বলল,
-‘না..না ঠিকই বলেছেন।
দিপা রাগে আগুন হয়ে গেল। ভদ্রলোকের ভুঁড়িতে গুতো মেরে, চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘ও ঠিকই বলেছে তাই না? তুমি যদি ভুলেও তোমার খচ্চর বোনগুলোকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসতে বলো না। তাহলে তোমার খবর আছে কিন্তু? দিপার ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া ছেলে দিপক বলল,
-‘পিসিরা বাড়িতে বেড়াতে আসলেই তুমি সবসময় ঝগড়া করো কেন মা? অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘জানো.. নতুন মামী? মা না আমার পিসিরা বেড়াতে আসলে ভালমন্দ কিছু রাঁধতেও চায় না৷ সারাক্ষণ পিসিদের শোনায় বাবার কাজ নেই। মা কী কষ্টে সংসার চালায়।
দিপা রাগে বেসামাল হয়ে, ঠাস করে দিপকের গালে থাপ্পড় মারল। চিড়বিড়িয়ে বলল,
-‘মায়ের নামে বদনাম করা বের করছি তোকে! বেয়াদব ছেলে। চল ঘরে চল?
অনুপমা কিছু বলার আগে দিপা , দিপককে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল।
দিপার বরের নাম সুধীর। ভদ্রলোক দেখতে খাটো মতো, ভরাট শরীর, মাথায় চুল নেই। ভদ্রলোক আরামপ্রিয় মানুষ। বউয়ের মুখের উপর উঁচু গলায় কথা বলতে পারে না। বলবেই বা কীভাবে! ছয়মাস আগেও দিপা তার বড়দাভাইয়ের কাছ থেকে লাখ তিনেক টাকা ব্যবসার কথা বলে, চেয়ে নিয়ে তাকে দিয়েছে। ভদ্রলোক বলেছে, বছরখানিক পর দিয়ে দেবে। দিপা বলল, থাক। দেওয়ার দরকার নেই। না দিলেও বড়দাভাই কিছুই মনে করবে না। ওর এত সম্পদ খাবে কে?
রূপায়ন ব্যবসায় বেশ মোটা অংকের টাকা লস খেয়েছে। দশতলা বিন্ডিং রঙ করার জন্য অনেক টাকার রঙের অর্ডার দিয়েছিল কাস্টোমার। মাত্র ফোন করে জানালো। তারা রঙ নিবে না। এতগুলো টাকা আটকা পরে গেল। এদিকে হাত একদম ফাঁকা। এই মাসটা কীভাবে সংসার খরচ চালাবে কে জানে! মুখ কালো করে দোকানে বসে বসে হিসেব কষছে রূপায়ন। গোবিন্দ এসে রূপায়নের পাশে বসল। বলল,
-‘মন খারাপ কেন বন্ধু?
-‘অনেকগুলো টাকা আটকা পরে গেল। হাতের অবস্থা ভাল না। এই মাসটা চলতে আমাকে বেশ হিমশিম খেতে হবে গোবিন্দ।
-‘তোর ছোটভাইকে সংসারে খরচ দিতে বল? একা একা আর কতদিন সংসারের ঘানি টানবি?
-‘কখনো কারো কাছ থেকে হাত পেতে টাকা চাইনি। কষ্ট হয়েছে, তবুও যেভাবে পেরেছি, সেভাবেই সংসারের হাল ধরেছি। এখন টাকা চাইতে গেলে হাজারটা কথা উঠবে।
-‘তখন শুধু তোরা তোরা ছিলি। এখন পরিবারে সদস্য বাড়ছে। তোর ভাইও ইনকাম করা শিখেছে, বিয়ে করেছে। তাহলে সংসারে খরচ দিতে সমস্যা কোথায়? তোদের খরচ না দিল। নিজেদের খরচটা তো অন্তত দিবে?
-‘অতিরিক্ত আদর দিয়ে দিয়ে মা সব কয়টার অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছে। বাপ মরা ভাইবোনগুলো ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। সেভাবে কিছু বলতেও পারি না। মায়া লাগে!
-‘তোর ভালোবাসা, দায়িত্বকে ওরা তোর দূর্বলতা ভাবে। ওদের ভুল ভাঙা। এখন তোর নিজের একটা সংসার হয়েছে রূপায়ন। দুদিন পর চার পা থেকে ছয়পা হবি। ভাইবোনদের জন্য তো অনেক করলি। এবার নিজেদের জন্য কিছু কর।
রূপায়ন মলিন হেসে বলল,
-‘তোর বুদ্ধি শুনেই তো কাউকে না বলে, একটা ডিপোজিট করেছিলাম। জমতে জমতে লাখ বিশেক টাকা জমেছে৷ এখন ভাবছি ভেঙে ফেলব।
গোবিন্দ, রূপায়নের হাত চেপে ধরল। বলল,
-‘খবরদার না রূপায়ন। ওটা তোর আর বৌদির ভবিষ্যত। ধর তোর দুদিন পর একটা বাচ্চা হলো। ঠাকুর না করুক, তোর যদি কিছু হয়ে যায়! তোর বাচ্চাটাকে নিয়ে বৌদি কোথায় যাবে? কীভাবে চলবে? একবারও ভেবে দেখেছিস? তোর এই ভাইবোনগুলো বৌদিকে টিকতে দেবে? খারাপ সময়, টাকা পয়সার অভাব মানুষের চিরকাল থাকে না। তবে বয়সকালেই যদি নিজেদের জন্য কিছু না জমাতে পারো। বৃদ্ধ বয়সে গিয়ে আফসোস করতে হবে।
রূপায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এতটা গভীর ভাবে, ভেবে দেখা হয়নি। গোবিন্দ বলল,
-‘আমি তোদের সাজেক যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বৌদিকে নিয়ে ঘুরে আয়। হানিমুনটাও সারা হবে। বিষণ্ণ মনটাও রিফ্রেশ হবে।
-‘হাতের অবস্থা একদম ভাল না। আমি এখন কোথাও যাব না গোবিন্দ।
-‘সাজেক যাওয়ার পুরো খরচ আমি বহন করব। ধরে নে, তোর বিয়ের গিফট। তোদের বাড়িতে একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থাকে। বৌদিকে একান্ত সময়ই দিতে পারছিস না তুই। এই সময়টা অনেক বেশি স্পেশাল রূপায়ন। হেলায় ফেলায় নষ্ট না করে! দুটিতে মিলে কিছু সুন্দর স্মৃতি জমা। আমি আর তোর কোন কথাই শুনবো না রূপায়ন। ফোন করে রিসোর্ট বুকিং দিয়ে দিচ্ছি। টুকিটাকি কেনাকাটা থাকলে সেরে নিস।
-‘পাগলামি করিস না গোবিন্দ। অবশ্যই অনুপমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। তবে এখন না।
গোবিন্দ সে কথা শুনলো না। ফোন দিয়ে রুইলুই রিসোর্টের একটা রুম বুকিং দিয়ে দিল। গোবিন্দর এক নিকটাত্মীয় ওই রিসোর্টে সেয়ারে আছে। তাই দুদিনের মাঝে রুম পেতে কোন সমস্যা হবে না।
রূপায়ন রাত আটটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গেল। যাওয়ার সময় একটু মার্কেটে টু মারল। অনুপমার জন্য শাড়ি, প্লাজো, রেডিমেড লং জামা, ওড়না জুতাসহ অনেককিছুই কিনে ফেলল।
আজ বেশ গরম পরেছে। রূপায়ন ঘরে এসে ব্যাগগুলো আলমারিতে তুলে রাখল। ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে, ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে রেখে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বসল। অনুপমা জলের গ্লাস এনে রূপায়নের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর রূপায়নের ঘামে ভেজা খুলে রাখা শার্টটা বেলকনিতে ছড়িতে দিতে গেল।
এক চুমুকে জলটুকু শেষ করে রূপায়ন উঠে গেল। বেলকনিতে গিয়ে পেছন থেকে আলতো করে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে, চুলে মুখ ডুবিয়ে দিল। অনুপমা কেঁপে উঠল। আবেশে দুচোখ বুজে ফেলল। আবেগী কণ্ঠে বলল,
-‘ছাড়ো..?
-‘উহুম।
-‘দরজা খোলা! কেউ দেখে ফেলবে।
-‘দেখুক।
অনুপমা হেসে দিল। রূপায়ন, অনুপমাকে ঘুরিয়ে নিজের উন্মুক্ত বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। অনুপমা, রূপায়নের বুকে মুখ গুঁজে নিঃশ্বাসে টেনে নিল, পুরুষালী বুনো মাতাল করা ঘ্রাণ।
-‘অনুপমা..?
-‘বলো?
-‘ পাহাড় না সমুদ্র ভাল লাগে?
-‘কখনো সেভাবে ঘুরতে যাইনি। বুঝতে পারছি না।
-‘যাবে আমার সাথে ঘুরতে?
অনুপমা মাথা তুলে তাকাল। রূপায়নের চোখে চোখ রেখে বলল,
-‘কোথায়?
-‘মেঘের দেশে।
অনুপমা কী বলবে বুঝতে পারল না। আচ্ছা সেখানে গেলে কী রূপায়ন সারাক্ষণ অনুপমার চোখের সামনে থাকবে? মানুষটা চোখের আড়াল হলেই অনুপমার কিছুই ভাল লাগে না। একাজ-সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আকুল হয়ে মানুষটার ফিরে আসার প্রহর গুনে অনুপমা। এই তো মানুষটা এত কাছে এসেছে, অনুপমা চোখ তুলে দেখতে পারছে, মন খুলে কথা বলতে পারছে। কী যে শান্তি লাগছে।
রূপায়ন আর একটু নিবিড় ভাবে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরল। কানের লতিতে মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-‘কাল আমরা সাজেক যাব। তোমাকে তো রাত ছাড়া সময়ই দিতে পারছি না। তিনদিনের ফুলপ্যাকেজ। এই তিনদিন আমি থাকব পাহাড়ের বুকে আর তুমি থাকবে আমার বুকে।
অনুপমার সর্বাঙ্গ জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল। নিঃশ্বাসে চঞ্চলতা। ঈশ্বর অনুপমাকে বেছে বেছে শ্রেষ্ঠ জীবনসঙ্গী দিয়েছে। এই মানুষটা এত কেন বুঝে অনুপমাকে?
রূপায়নদের ঘুরতে যাবার কথা শুনে রুপা, দিপা ক্ষেপে গেল। মায়ের ঘরে গিয়ে বলল,
-‘দেখলে তো মা? তুমি অসুস্থ। তোমাকে এভাবে একা ফেলে, তোমার বড়ছেলে বউ নিয়ে ঘুরতে যেতে চাচ্ছে! সাধেই কী আর বলি, বিয়ের পরে বড়দাভাই স্বার্থপর হয়ে গেছে!
নন্দিতাদেবী বলল,
-‘একা কোথায়? তোরা তো আছিস!
দিপা বলল,
-‘বোকার মতো কথা বলো না তো মা। তোমার বড়ছেলে বউ নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবে, ফূর্তি করবে। আমরা কী নিজেদের সংসার ফেলে সারাজীবন পরে থাকব না কী? তোমাকে দেখে রাখার জন্য?
-‘রূপায়ন তো সারাজীবনের জন্য যাচ্ছে না। মাত্র তিনদিন থাকবে। তোরাও তো বিয়ের পরে ঘুরতে গিয়েছিলি। কেউ তো আপত্তি করেনি। উল্টো রূপায়ন নিজে তোদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
-‘আমরা ঘুরতে গিয়েছি দেখে, ওকেও যেতে হবে না কী? আজব! বুড়ো বয়সে ঘুরে বেড়িয়ে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করবে।
-‘ওর টাকা ও যা খুশি তাই করুক। তোদের এত জ্বলে কেন?
-‘জ্বলবে না কেন মা? সেদিন বললাম বড়দাভাই আমাকে হাজার দশেক টাকা দে। একটা শাড়ি কিনব। তোমার ছেলে নয়/ছয় বুঝিয়ে বলল, পরে দিবে। আজও দিল না। এখন বউ নিয়ে ঘুরতে যাবে। তখন বুঝি টাকা খরচ হবে না?
দিপা বলল,
-‘যাচ্ছে যাক। সাথে যেন আমার দিপককে নিয়ে যায়। বড়দাভাইকে বলে দিও মা তুমি। ছেলেটার স্কুল বন্ধ। একটু ঘুরে বেড়ালে মনটা রিফ্রেশ হবে।
নন্দিতাদেবী বলল,
-‘ওরা জামাই-বউ ঘুরতে যাবে। ওদের সাথে তোর অত বড় ছেলেকে পাঠাবি কেন? তোর বোধবুদ্ধি কী দিন দিন লোপ পাচ্ছে?
রুপা বলল,
-‘শুধু ঘুরতেই তো যাবে মা। দিপক গেলে সমস্যা কী?
নন্দিতাদেবী হতাশ বোধ করল। বলল,
-‘তুই যখন প্রথম ঘুরতে গেলি। তোর শাশুড়ীও তো তোদের সাথে তার ছোটমেয়েকে পাঠাতে চেয়েছিল। তুই কেন সাথে নিলি না রুপা? উল্টো রাগ করে নতুন বউ হয়েও একা একা বাপের বাড়ি চলে এলি। সেবার কত বুঝিয়ে সুঝিয়ে জামাই তোকে ঘুরতে নিয়ে গেল।
-‘আজব। তুমি আমার সাথে বড়দাভাইয়ের তুলনা দিচ্ছো কেন? আমার ননদ আর দিপক কী এক হলো তোমার কাছে?
-‘আমার কাছে এক না হলেও বড়বৌমার কাছে একই হবে।
-‘আমি বলে দিলাম মা, তোমার আহ্লাদে ওই মেয়েটা দুদিন পর সবার মাথায় চড়ে নাচবে। মিলিয়ে নিও।
নন্দিতাদেবী সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
-‘দিপা তুই কিন্তু আবার হ্যাংলার মতো দিপককে রূপায়নের সাথে পাঠাতে যাস না।
দিপা সেকথা শুনলো না। ত্যাড়ামী করে দিপককে রূপায়নের কাছে পাঠিয়ে দিল।
রূপায়ন বেলকনিতে বসে বসে মাথায় কালার লাগিয়ে, দাড়ি শেভ করছে। অনুপমা খুশিমনে ব্যস্ত হাতে ব্যাগ গোছাচ্ছে। দিপক ছুটে এসে বলল,
-‘মামী.. মামা কোথায়?
অনুপমা ইশারায় দেখিয়ে দিল। দিপক, রূপায়নের গলায় ঝুলে পরে বলল,
-‘শুনলাম তোমরা না কী বেড়াতে যাচ্ছো? আমার স্কুল বন্ধ। আমায় সাথে নিবে মামা?
রূপায়ন কী বলবে ভেবে পেল না। অনুপমা এগিয়ে এলো। দিপকের হাত ধরে, মিষ্টি করে হেসে বলল,
-‘আজকে তো দিপক বাবুকে নেওয়া যাবে না।
দিপক অবাক হয়ে বলল,
-‘কেন মামী?
অনুপমা একটু ভেবে বলল,
-‘উমমম…ওইখানে জোড়ায় জোড়ায় ঘুরতে যেতে হয় সোনা। তোমার মামার জোড়া আমি, তোমার তো জোড়া নেই। তুমি কীভাবে যাবে? এককাজ করো.. আগে বেশি বেশি খেয়ে, তোমার মামার মতো বড় হও, তারপর তোমাকে সুন্দর একটা মেয়ে দেখে, বিয়ে দিয়ে দেব। তখন বউ নিয়ে ঘুরতে যাবে কেমন?
দিপক লজ্জা পেল। বিড়বিড় করে বলল,
-‘আচ্ছা। তাহলে আমি এখন যাব না। বড় হয়ে, মামার মতো বউ নিয়ে তবেই যাব।
রূপায়ন মুখ টিপে হেসে দিল। মনে মনে অনুপমার বুদ্ধির প্রশংসা করল।
দিপককে দেখে রুপা নিজের ঘরে টেনে নিয়ে গেল। বলল,
-‘কী রে চলে এলি কেন? মামার সাথে যাবি না?
-‘আমি এখন যাব না।
-‘অনেক সুন্দর জায়গা কিন্তু। মামার সাথে গেলে, ঘুরতে পারতি, অনেক অনেক মজা করতে পারতি।
দিপক বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘ধেৎ..বউ ছাড়া একা গিয়ে কী করব? তোমার ইচ্ছে হলে, তুমি যাও মাসিমণি। আমি বড় হয়ে যাব।
রুপা বোকার মতো হা করে বসে রইল। দিপক ছুটতে ছুটতে খেলতে চলে গেল।
সকাল এগারোটার দিকে রূপায়ন, অনুপমাকে নিয়ে সাভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। সাভার থেকে খাগড়াছড়ির বাসে উঠবে। সাভার যেতেও তো ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। জ্যাম হলে তো কোন কথাই নেই। অনুপমা লাল ব্লাউজের সাথে, বাসন্তী কালারের শাড়ি পরেছে, গলায় রূপায়নের দেওয়া মোটা চেইন, কানে দুল, হাতে স্বর্ণের পলা পরেছে। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর পরে, কপালে একটা লাল টিপ পরেছে। ব্যস এতটুকু সাজেই দেখতে কী যে সুন্দর লাগছে। দুচোখ জুড়িয়ে যায়। অনুপমার গায়ের ফর্সা রঙের সাথে বাসন্তী রঙটা ঠিকঠাক বসে গেছে। রূপায়ন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,
-‘অপরুপ সুন্দর।
অনুপমা লাজুক হেসে বলল,
-‘এবার কিন্তু সত্যি সত্যিই দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ চলো!
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, অনুপমাকে নিয়ে সিএনজিতে চেপে বসল রূপায়ন। ধুলোবালি উঁড়িয়ে গাড়িটা সাঁইসাঁই করে ছুটছে। রাস্তার পাশেই বিশাল বিশাল শিমুল গাছ। গাছে অজস্র লাল রঙা শিমুলফুল ফুটে আছে। দেখতে কী যে ভাল লাগছে।
বিকালবেলা, নিপা কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এসে ঢুকলো। মাকে বলল,
-‘বড়দাভাই কোথায় মা?
নন্দিতাদেবী উত্তেজিত হয়ে গেল। বলল,
-‘কেন কী হয়েছে?
নিপা বলল,
-‘আমি আর ওর সংসার করব না। ওকে ডিভোর্স দেব। বড়দাভাইকে ব্যবস্থা করতে বলো? কোথায় বড়দাভাই? দোকানে গেছে? ওকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে বলো!
রুপা বলল,
-‘কী হয়েছে নিপা? ঘটনা কী! খুলে বল?
-‘ওই লম্পটটা লুকিয়ে বিয়ে করেছে। আমরা কেউ কিছুই জানতাম না।
সবাই আঁতকে উঠল। দিপা বলল,
-‘সৌরভ এই কাজ করতে পারল? কবে করেছে?
নিপা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘মাস ছয়েক। আমরা কেউ জানতাম না। গতকাল মেয়েটা গর্ভবতী অবস্থায় বাড়িতে এসে উঠেছে।
-‘সৌরভ কিছু বলেনি?
-‘ও কী বলবে? বলে আমার দুজনকেই লাগবে। তোমাদের কাউকেই ছাড়তে পারব না আমি। লম্পটটা দুজনকে নিয়েই সংসার করতে চায়। বড়দাভাই কোথায়? ফোন দিয়ে আসতে বল না?
(চলবে)